বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৫

0
2113

বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৫
writter_সোহানুর_রহমান_সোহান

—আচ্ছা ভাইয়া কল গার্লরা তো প্রতিদিন কতজনের সাথে রাত কাটাই।তাহলে ওদের কেন বাচ্চা হয়না?

চারুর এইকথাটা শুনে সোহানের মাথাটা বনবন করে উঠলো।চারুর দিকে সে হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।এখন সে চারুকে কি জবাব দিবে?এই মেয়েকে কে বোঝাবে বাবা এসব ভাবতে নেই,,
—চারু আসলে ওদেরকে এমন একটা মেডিসিন দেওয়া হয়।যেটার মাধ্যমে ওদের বাচ্চা হবার কোনো সম্ভবনা থাকে না।
—ওহ এই ব্যাপার?তাহলে আমাকে তো এমন কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি ভাইয়া?
—এজন্যই তোমাকে হসপিতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
—ও ও ও।আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন……
—চারু একটু চুপ থাকতে পারোনা?সেই কখন থেকে বলেই যাচ্ছো একটু রাস্তাঘাট দেখে চললে হতোনা?
সোহানের কথাই চারু চুপ হয়ে রইলো।চারু ভাবতে লাগলো,,তাহলে আজকে হসপিতালে আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।উফ খারাপ হতেও দেখি অনেক ঝামেলার ব্যাপার।
ওদিকে সোহান চারু নিয়ে হসপিতালে পৌছে গিয়েছে।ডাক্তারের কেবিনে ঢুকতেই,,
—কি ব্যাপার সোহান সাহেব হটাৎ করেই চলে এলেন?
—হ্যা বন্ধু একটা জরুরি কাজে আসতে হলো।
—হটাৎ তোর এমন কি কাজ পড়লো?আর তোর সাথে মেয়েটি কে?
সোহান আর কিছু বললো না।চুপিচুপি ইশারাই ডাক্তার শাকিল কে

ইশারাই কি যেন বুঝাতেই শাকিল কিছুটা চিন্তিত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন।কোন কথা না বলেই সে চারুকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
—চারু তোমার অপারেশনের সময় হয়ে এসেছে।যাও ঔনি তোমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে।
কথাটা শোনার পর চারু ভয়ে ভয়ে ডাক্তারের পিছন পিছন যেতে লাগলো।চারুর খুব ভয় হচ্ছিলো।যদি তার কিছু হয়ে যাই?কিন্তু সোহান চারুর চোখে স্পষ্ট জল দেখতে পেয়েছে।সে বুঝতে পেরেছে চারুর কষ্ট হচ্ছে।তবে চারুর থেকে তার বেশি চিন্তা হচ্ছে।রিপোর্ট না দেখা পর্যন্ত তার ভিতরের ব্যথাটা দুর হবেনা।
.

দু ঘন্টা পেড়িয়ে গিয়েছে।এখনো সোহান কেবিনে চুপচাপ বসে রয়েছে।এই শীতেও তার কপালে ঘাম জমে রয়েছে।একটু পর হটাৎ সে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো।সে আর বসে রইলো না।দাড়িয়ে সে শাকিলকে দেখেই,,
—কি রিপোর্ট আসছে চারুর?
শাকিলকে বেশ ঘর্মাক্ত দেখাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে তার সামনে ফাইলটা রেখে,,
—সোহান তুই বাবা হতে চলেছিছ।
কথাটা শোনার পরেই সোহানের মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলো না।ফাইলটা খুলে খুজতে লাগলো।তার বিষ্ষাশ চারু একদম ঠিক আছে।হটাৎ করেই রিপোর্টটা বের করে তাকিয়ে দেখার পর গম্ভিরভাবে সে শাকিলের দিকে তাকাতেই দেখে শাকিল হাসছে,,

—তোকে দেখে আমার খুব লালসা হচ্ছে।শালা তুই বাবা হলি কেমনে?(হাসতে হাসতে)
—শাকিল তুই ও না?বল আর কি কোনো সমস্যা আছে?
—চারুর অপারেশন নেগেটিভ।সে একদম ঠিক আছে।এমন কি তার শরীরে একফোটা আচড় ও লাগেনি।
—আহ তুই আমাকে বাচালি।
—সোহান আমি যেটা ভাবছি সেটা কি ঠিক?
কথাটা বলতেই চারু রুমে ঢুকে পড়লো।চারুকে দেখামাত্র সোহান দৌড়ে গিয়ে চারুকে জড়িয়ে ধরলো।চারু কিছু ভাবার আগেই এসব ঘটতেই তার শরীর কিছুটা কেপে উঠলো।এভাবে লোকজনের ভিতর এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরাতে চারু লজ্জাই লাল হয়ে গেলো।সোহান আর সেখানে এক মুহূর্ত দাড়ালো না।চারুর হাতটা ধরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলো।শুধু পিছনে এক পলক ফিরিয়ে শাকিলের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে এলো।
রাস্তাই দুজন হাটছে।কিন্তু এখনো চারুর বুক ধরফর করছে।চুপচাপ পাশাপাশি দুজন হাটছে কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই।তবে চারুর মনে একটা প্রশ্ন জাগছে,,
—আপনি আমাকে ওতো লোকের ভিতর জড়িয়ে ধরলেন কেন?(চারু)
—তুমি সঠিক ভাবে অপারেশন করতে পেরেছো।(কিছুক্ষন পর)
—তাহলে জড়িয়ে ধরবার কি প্রয়োজন?
—চারু তুমি একটু বেশী বেশি কথা বলো।শুনো এই যে তোমার আজকে অপারেশ হলো ঠিক তেমনি আজ থেকে তূমি দু একটা ছেলের সাথে রাত কাটাতে পারবে।

চারু কথাগুলো শুনে খুব একটা খুশি হলোনা।হইতো সে চাইনি এতো তাড়াতাড়ি সোহানকে ছেড়ে যেতে।কারন সোহান কাছে থাকলে তার খুব ভালো লাগে।
সে সোহানের কথাই কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ তার সাথে বাসাই ফিরে আসলো।

এশার পর নামাজ শেষ করে চারু রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।এভাবে সারাদিন রুমে থাকতে তার একদম ভালো লাগেনা।একটু আগে সোহান তাকে নামাজ পড়তে বলেছে।আচ্ছা তাহলে কি আমাকে প্রতি ঔয়াক্তে নামাজ আদাই করতে হবে?কথাগুলো ভাবতে চারু কোনো জবাব না পেয়ে ভাবলো একবার ভাইয়ার রুম থেকে একবার শুনে আসি।
সে চুপিচুপি সোহানের রুমের দিকে এগোতে লাগলো।খেয়াল করলো রুমটা খোলা রয়েছে।একটু উকিঝুকি দিয়ে দেখলো ভিতরে কেউ নেই।ভিতরে গিয়ে সোহানকে না পেয়ে সে রান্নাঘরে চলে গেলো।গিয়ে দেখে সোহান রান্নাঘরে বসে রয়েছে।চারু সোহানকে রান্না করতে দেখে বেশ অবাক হলো।ছেলেরাও রান্না করতে পারে?
এদিকে চারুকে রান্নাঘরে আসতে দেখে,,
—কি ব্যাপার এতো রাতে তূমি এখানে?
কথাটা শুনে চারু কিছুটা ভয় পেলো।হটাৎ করে কিছু শুনলে তার বেশ ভয় লাগে,,
—ইয়ে মানে কিছুনা এই একটু চারপাশটা দেখছি।
—ওহ।তাহলে ভিতরে আসো।
চারু ভিতরে গিয়ে চুপিচুপি সোহানের পাশে দাড়ালো।এভাবে রাতের বেলাই একটা ছেলের কাছে দাড়াতে তার কিছুটা

সংকোচ বোধ হলো।
—চারু?
—হ্যা বলুন?
—রান্না করতে পারো?
—জি।
—কি কি রান্না করতে পারো?
—আমাদের তো নিজেদের পরিশ্রম করে খাবার জোগাড় করতে হতো।তাই রান্নার জগতের সবকিছুই তৈরি করতে পারি।
—বাহ।তাহলে তোমাকে বউ বানালে ভালোই হবে।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
—কি বললেন?
—বলছি আমাকে একটু সাহায্য কর।আজকে ভুয়াটা ছুটিতে আছে তাই রান্নাটা করার কেউ নেই।
—তবে যে, আপনি রান্না করছেন?
—বাইরের খাবার আমার ততোটা ভালো লাগে না।তাই সবসময় এই বিষয়টা মাথাই রেখে রাধুনি হয়ে গিয়েছি।
—হ্যা সব ঠিক আছে তবে আপনি তরকারিতে কিন্তু ওইটা লবনের জাইগা চিনি ঢালছেন।
কথাটা শুনে সোহান কৌটার দিকে তাকিয়ে একটু মুখে দিতেই দেখে চারুর কথাটাই একদম সঠিক।কি করবে আর কি বা বলার আছে তার,,
—ইয়ে মানে এই তোমাকে যাচাই করছিলাম যে তুমি বুঝতে পারো নাকি?(আমতা আমতা করে)
—হ্যা হ্যা আমি আসার আগে থেকেই তো আপনার হাতে কৌটাটা দেখছি তাহলে আপনি সপ্নের ভিতর আমাকে যাচাই করছিলেন বুঝি?
ধরা খেয়ে আর কিছু বলতে পারলো সোহান।চুপিচুপি সেখান থেকে সরে পড়লো।কিন্তু রান্নার জিনিসের ড্রয়ারের সামনে বোতলের গায়ে তো লবন লেখা ছিলো।তারমানে রাধুনি তার থেকে কি একটা লুকিয়ে রাখে।

কিন্তু চারুর কাছে তো লজ্জাটা শেষ করেই ফেলেছে।চারুর দিকে তাকাতে খেয়াল করলো চারু একনো মিটিমিটি করে হাসছে।কি আর করবে,
শালার চিনি তুই আমারে করিয়া দিলি নুন
মনে মনে বলতে কথাগুলো বলতে বলতে লজ্জাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সোহান।
.
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here