বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৬

0
2350

বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৬
writter_সোহানুর_রহমান_সোহান

রাতের খাবার খেতে বসে সোহান আর কিছু বলতে পারলো না।রান্নাটার কোন তুলনাই হইনা।এমন একটা মেয়ে যদি তার সবসময়ের রাধুনি হয়ে থাকতো।তাহলে কতোই না ভালো হতো।খাবার গুলো খেয়ে দুজনেই ঘুমানোর জন্য নিজেদের রুমে চলে গেলো।রাতটা এভাবেই দুজনেই কেটে যেতে লাগলো।

-দেখতে দেখতে তিন দিন পার হয়ে গেলো।রাত ঠিক 2 টা বাজে।হটাৎ চারুর রুমের দরজাই কে যেন ঠকঠক করতে লাগলো।এতো রাতে কে তার দরজার সামনে এসে তাকে ডাকবে।চারুর মুহুর্তেই গলাটা শুকিয়ে গেলো।সন্ধাই সোহান বলেছিলো,,তাকে নাকি সকালে কিছু কাজ করতে হবে।তাহলে কি রাত না হতেই কেউ চলে এসেছে?
কথাগুলো ভাবছে আর চুপিচুপি দরজার দিকে এগোচ্ছে।খুলবে কী খুলবে না?এসব ভাবতে ভাবতেই দরজাটা খুলে ফেললো।
—ভাইয়া আপনি এতো রাতে?
—চারু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও?
—এতো রাতে আবার কি মহা কাজ পড়লো যে, এই শীতে উঠতে হবে?
কথাগুলো বলতেই রুমের বাল্বটা জ্বালিয়ে দিলো চারু।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে তার কাধ থেকে নেমে পড়েছে।রাতের এমন দৃশ্য দেখে সোহান কি করবে বুঝতে পারছে না।ঠোটগুলো এত্ত গোলাপি যে লিপিস্টিকের তার কোনো প্রয়োজন এই পড়েনা।শরিরে একটা রেশমি কালারের পোশাক।সব মিলিয়ে তার কেমধ যেন

একটা অনুভূতি তৈরি হলো।হটাৎ চারুর ডাকে সে বাস্তবে ফিরে এলো,,
—এই যে, ভাইয়া এমন ভাবে চুপ হয়ে আছেন কেন?
—তাড়াতাড়ি সবকিছু খুলে ফেলো?
—কিহ?(চোখ বড় বড় করে)
—সরি সরি বলছি যে, তাড়াতাড়ি পোশাক পাল্টে নাও(নিজের মুখ চেপে ধরে)
—ভাইয়া আপনি মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথাগুলো বলেন।মনে হয় আপনি যেন আগে থেকেই সেগুলো মুখস্ত করে আসেনা।কিন্তু…..
—কিন্তু কি?
—এই ঠান্ডাই এমন কি কাজ পড়লো?
—যাও তাড়াতাড়ি ওযু করে আসো।
—ভাইয়া বুঝিনা নষ্ট হতে এসবের কি দরকার?
—বেশি কথা নয়।তোমাকে রাত জাগতে শিখতে হবে তাই তোমার জন্য এটি খুব দরকার।
—ঠিক আছে কিন্তু আমাকে তো খারাপ কিছুর ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে না।
—পতিতালয়ে বেশীরভাগ দাড়িওয়ালাই যাই।যখন তোমাকে তারা প্রশ্ন করবে তখন যাতে তুমি সহজেই উত্তর দিতে পারো সেজন্য এই কাজটা তোমাকে করতে হবে।
—ও ও।এইজন্য ভাবি হুজুরটা এতো বাটপার হয় কেন?
—যখন বুঝতে পেরেছো তখন আর দাড়িয়ে থাকার কোনো দরকার নেই।
—তাহলে ওই যে লোকজন বলে, জামাকাপড় আর কতকিছু খুলে ফেলে।এসব বিষয়ে কখন শিখাবেন?
এবারের কথাটা শুনে সোহান কিছুক্ষন নিরবতা পাল৭ করতে থাকলো।সে এই মেয়েটাকে কিভাবে বোঝাবে যে,,
চারু তুমি এখনো বাচ্চা।

তোমাকে দিয়ে এসব একদম হবেনা।
—চারু যদি তোমাকে ক্লাস ফাইবে পড়ার সময় দশম শ্রেনির প্রশ্ন দেওয়া হয় তাহলে তুমি কি করবে?
—আমিতো তখন সেটা পারবো না।কারন আমার পড়াশোনা তখনো অনেক বাকি।
—ঠিক তেমনি তোমাকে যদি একবারে শেষ প্রান্তের ট্রেনিং দেওয়া হয় তাহলে তুমি সেটা নিতে পারবে না।
কথাটা শোনাই চারু ভীষন লজ্জা পেলো।সে নিজের মাথাই আঘাত করে নিজেকে বলতে লাগলো,,
—চারু তুই একটা গাধা।তুই কেন নিজেই নিজেকে ছোট করছিছ।
সোহান কথাগুলো বলেই চলে যাবার জন্য অগ্রসর হতেই,.
—ভাইয়া নামাজটা না হয় পড়ে নিবো।তবে কালকের কাজটা যদি আজকেই একটু দেখিয়ে দিতেন?
কি মেয়ে এটা?এতো উতোলা কেন হয় মেয়েটা?সোহান ইচ্ছা করেই আবারো চারুর কাছে ফিরে গিয়ে,,
—ঠিক আছে তবে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে।আর কোনো কথা বলবে না কেমন?
—ঠিক আছে।(মাথা নিচু করে)

সোহান এবার চারুর কিছুটা কাছে চলে আসলো।এতো রাতে চারু এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা ভড়কে গেলো।চারু সরে যাবার আগেই নিমিষেই চারুর গোলাপি ঠোটদুটো আলতো করে চেপে ধরলো।চারু সাথে সাথে সোহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই সোহান চারুকে পিছন থেকে আবারো আটকে ধরলো,,
—ছি ছি ভাইয়া এটা কি করছেন?প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না।

—একদম চুপ করে থাকবে।আমি যেটা করবো সেটা একদম মনোযোগ দিয়ে শিখবে।
চারু হটাৎ করে জোরাজুরি বন্ধ করে ফেললো।পিছন ফিরে সে সোহানে চোখে চোখ রাখলো।দুজনের মাঝেই কেমন যেন একটা ভালোবাসা কাজ করছিলো।চারু সোহানের ভিতর অতলেই হারিয়ে যেতে থাকলো।তার চোখেমুখে লজ্জার স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।বুকের ভিতরটা কেমন যেন ধরফর করছে।সোহান তার কাছে যেতেই এই শীতে তার কেমন যেন একটা শিহরন জাগলো।সোহান যখন তার কাধে হাত দুটো রাখলো তখন সে বুঝতে পারছিলো।কেন সোহান তাকে সবকিছু ধীরে ধীরে শিখাচ্ছিলো।চোখটা তার হটাৎ করেই বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।কিছুক্ষন পর সে সোহানের নিষ্শাশটা তার নাকের কাছে অনুভব করলো।আলতো করে তার ঠোটটা সোহান চেপে ধরতেই তার ভিতর একটা জোড়ালো নিষ্শাশ বয়ে গেলো।তার মনে হলো সে এর আগে কখনো এমন অনূভুতি টের পাইনি।ঠান্ডা ঠোটের স্পর্শটা তার কথাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।সে বুঝতে পেরেছে এটা কোনো শিখানোর ট্রেনিং না।এটা তার ভালোবাসার একটা অংশ।
কিছুক্ষন পর চারুকে সোহান নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।চারুর ঠোঠগুলো থরথর করে কাপছিলো।সে বুঝতে পেরেছে জিবনে প্রথম কোনো স্পর্শ কতোটা ভুলিয়ে দিতে পারে সবাইকে।চোখদুটো বন্ধ করে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।হটাৎ তার কানের পাশে কে যেন বললো,,

—চারু এটা কোনো ট্রেনিং ছিলোনা।এটা ছিলো আমাদের ভালোবাসার একটা মুহুর্ত।
কথাগুলো শোনামাত্র চারুর ঠোঠগুলোতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।কিন্তু কথাগুলো একটু ভালোভাবে বোঝার পর চারু চোখটা বড় বড় করে চারদিকে তাকিয়ে সোহানকে খুজতে লাগলো।
কিহ তার সাথে চালাকি?ট্রেনিং এর নাম করে তাকে ব্যবহার করা?কিন্তু চারু চারপাশে কাউকে দেখতে পেলোনা।মনে মনে বলতে লাগলো,,
—কিপটে বদমাইশ ছেলে কোথাকার।যখন এতো ভালোবাসার শখ?তখন আমাকে বললেই পারতি।
পরক্ষনেই সে আবারো হেসে উঠলো।যেভাবেই হোক না কেন?প্রকাশ্যে ভালোবাসার চেয়ে চুপিচুপি প্রেম বিনিময়টাই ভালো।আর যাইহোক ছেলেটা খারাপ হলেও বেশ রোমান্টিক।হইতো এজন্য ছেলেটা এতো ফেমাস।তবে একটু পাগল টাইপের।তবে সেটা কোনো সমস্যা না।পাগল ছেলেরাই একটু বেশি রোমান্টিক হয়।তারাই শুধু ভালোবাসাটা পাগলামির মাঝে নিজের করে নেই।
হাসতে হাসতে সে ওযুখানাই বসে পড়লো।আর যাইহোক না কেন?সে এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে, সোহান তাকে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছে।আর সে নিজেই তো সেই ছেলেটাকেই ভালোবাসে।

ওযুখানা থেকে এসে ফ্লোরে জাইনামাজ পেড়ে নিলো।বোরখাটা পড়ে আয়নার সামনে থেকে জায়নামাজের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।তাকে আজকে এই ছেলেটাকে পাবার জন্য এই খোদার কাছে

মিনতি করতে হবে।
.
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here