বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৮
writter_সোহানুর_রহমান_সোহান
কথাগুলো চারুর কানে বাজতে লাগলো।সে কিভাবে বোঝাবে, সোহান আমি শুধু তোমাকেই চাই।
রাতের ঠান্ডা হাওয়াটা তার শরীরে লাগছে।শরীরটা তার বারবার কাপুনি দিয়ে উঠছে।
হাতদুটো গুটিয়ে সে রুমে গিয়ে বালিশে মাথা রাখলো।আজকে তাকে আর বসে থাকলে হবেনা?এ কদিনে সে সোহানকে যে ভালোবেসে ফেলেছে তার ভালোবাসা কথাগুলো কালকে তাকে জানাতেই হবে।
রাতটা গভির হয়ে এসেছে।চারু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে।আর সোহান চুপটি করে সোফাই ঘুমিয়ে রয়েছে।রাতের এই সময়গুলো তার সোফাতেই কাটাতে ভালোলাগে।
–
সকাল হতেই চারু ঘুম থেকে উঠে পড়লো।চুপিচুপি ফ্রেশ হয়ে এসে চারপাশে উকি দিয়ে সে সোহানকে খুজতে লাগলো।কিন্তু তাকে যে পাওয়াই যাচ্ছে না।তাই চুপিচুপি চারু সোহানের রুমে গিয়ে উকি দিলো।
রুমের ভিতর তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।সে চুপিচুপি রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।রুমে যেতেই সে বেশ অবাক হলো।বাহ রুমটা তো বেশ সুন্দর।
চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে হটাৎ তার টেবিলের উপর নজর পড়লো।টেবিলের উপর রাখা আছে বিভিন্ন ধরনের বই আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কিছু কাগজ।চারু সেখান থেকে একটা কাগজ উঠাতে খেয়াল করলো সেটা তার নামেই রেজিস্টার আছে।কথাটা ভাবতেই খেয়াল হলো সেদিনের সেই অপারেশনের কথা।
কাগজটা খুলে সে বেশ অবাক হলো।কাগজে তো অন্যকিছু দেখাচ্ছে।তাহলে সোহান যে বললো,,তাকে একটা মেডিসিন দেওয়া হবে?
কাগজটা ভালো করে পড়ে সে বিষ্শাশ করতে পারছিলো না এই রিপোর্টটা সত্য?তাহলে সোহান আগে থেকেই জানতো সে একদম ঠিকঠাক আছে।
পাশ থেকে একটা আওয়াজ পেতেই সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো।বেলকনিতে দাড়িয়ে সে খুশিতে হাসতে লাগলো।সে যে কতোটা খুশি ছিলো?সেটা কাউকেই বোঝাতে পারছে না।
এখন তার নিজেকে বলতে ইচ্ছে করছিলো,,
—চারু তুই পারবি।আজ তোকে কথাটা বলতেই হবে।
রুমে এসে সুন্দর করে একটা চিঠি লিখলো।সে এখন বুঝতে পারছে সোহান কেন তাকে কখনো একলা ছাড়েনি।
চিঠিটা হাতে নিয়ে বাইরে যেতেই দেখে সোহান দাড়িয়ে রয়েছে।সে এক দৌড়ে গিয়ে সোহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
—আরে আরে চারু তুমি এসব কি করছো?(চারুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
—আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করেছে তাই ধরেছি।আপনি একদম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন।
—কিন্তু এভাবে ঝাপিয়ে পড়ার কারনটাতো বলবে?
—এর আগে আপনিও আমাকে অনেক বার জড়িয়ে ধরেছিলেন।তখন আমি কিছুই বলেনি তাই এখন আপনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন।
সোহান চুপ করে দাড়িয়ে একটু রোমান্টিকভাবে চারুর কোমরে আলতো করে ছুয়ে দিলো।চারুকে দেখলেই শুধু তার এই একটাই দুষ্টুমি
মাথাই ভর করে।
চারু একটু নড়েচড়ে উঠলো।সে বুঝতে পারছে এটা সোহান ইচ্ছা করে তার সাথে মজা করছে।বেয়াদব ছেলেটা একটুও ফিলিংস বোঝেনা।সবসময় শুধু তার সাথে দুষ্টামি করে।
—এই শুনছেন?
—হ্যা বলো?
—কোমর থেকে একটু হাতটা সরানো যাবে?
—ইয়ে মানে?(তারাতারি করে হাতটা সড়িয়ে)
—একটা কথা বলার আছে?
—কথা বলবা নাকি কিছু করবে?যেরকম জড়িয়ে রেখেছো, তাতে আমারতো কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না।একটু ঘুমানোর শখ জাগছে।
চারু সোহানকে এক ধাক্কাই সড়িয়ে দিয়ে লজ্জাই মুখটা লুকিয়ে নিলো।
—একটু একটু ফিলিংস হচ্ছে।যাইহোক চারু তুমি কিছু একটা বলতে চাইছিলে?
—হ্যা।আচ্ছা আমি যে আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছি।এতে আপনার কষ্ট হবেনা?(মুখটা নিচু করে)
—চারু মুখ থেকে কখনো এমন কথা বের করবা না।তুমি কখনো আমার থেকে যাবেই না।
—কেন?
—আমিতো তোমার সাথেই সবসময় থাকবো।
—ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলার আছে?
—হ্যা বলো।
চারু পিছন থেকে যেই চিঠিটা বের করতে যাবে?ঠিক তখনি সোহানের ফোন বেজে উঠলো।সোহান ফোন হাতে নিয়ে খেয়াল করলো বাসা থেকে বাবা ফোন করেছে।চারু চোখটা বন্ধ করে চিঠিটা সোহানের সামনে রাখতেই সে ফোনটা কানে নিয়ে পিছন ফিরে একটা দুরে চলে গেলো।
অনেক্ষন হতে চারু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সোহান তার পাশে নেই।খেয়াল করলো একটু দূরে সোহান কার সাথে যেন কথা বলছে।
চারুর মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো।চিঠিটা তার আর দেওয়া হবেনা দেখে চিঠিটা লুকিয়ে নিলো।
বেশ অভিমানের দৃষ্টিতে সে সোহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর সোহান কথা শেষ করে খেয়াল করলো চারু তার দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।চারুর পাশে এসে,,
—কিছু মনে করোনা।বাসা থেকে বাবা ফোন করেছিলো।
—কি জন্য?
—সবসময় বাসার বাইরে থাকি।সেজন্য বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে চাইছে।(মুচকি হেসে)
—বাহ তাহলে তো আপনাকে শুভেচ্ছা জানাতেই হচ্ছে।
—হুম।চারু তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে?
—কই নাতো।
—মিথ্যা বলবে না?
—যেটা বলতে এসেছিলাম সেটা এখন মনে নেই।পরে মনে পড়লে তখন জানাবো।(মুখ চাপা দিয়ে)
—চারু তুমিও না?একদম বোকা একটা মেয়ে।
—হ্যা পাগল ছেলের বোকা পাগলি।(আসতে আসতে)
—পাগল বললে মনে হলো?
—আরে বললাম যে, খাবার সময় হয়ে গিয়েছে।চলুন আপনার খাবারটা বেড়ে দিতে হবেতো।
সোহান চারুর কথাই বোকা হয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
চারু চুপিচুপি হাসছে।ছেলেটা বুদ্ধিমান হলেও একসের পাগল।একটা কথাও একটু ভালো করে শুনেনা।
চারু মনে মনে ভাবছে,,সোহানকে তার বাবা বিয়ের চাপ দিচ্ছে।তাহলে সোহান অবশ্যই একটু চাপে থাকবে।এই সুযোগেই আমি সোহানকে আমার করে নিবো।যেভাবেই হোক সোহানকে আমার মনের কথা জানাতেই হবে।কারন আমি জানি,,ছেলেটা মেয়েদের থেকেও লজ্জা বেশী পায়।তাই সে বুড়া হয়ে গেলেও আমাকে তার ভালোবাসার কথাটা বলবে না।
–
–
অনেক্ষন ধরে হোটেলে একা একা বসে রয়েছে।সেই যে কখন সোহান তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছে।চারপাশের সবাই তারদিকে তাকাচ্ছে।তার খুব ভয় করছে।এখানে সোহান তাকে এনেছে কারো সাথে দেখা করার জন্য।
পানির বোতল হাতে নিতেই খেয়াল করলো সোহান তার পাশে বসলো।
—ওই আপনি তো বেশ অদ্ভুত?আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলেন?
—চারু আমি দুঃখিত।কিন্তু একটা কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম।(চারদিকে তাকিয়ে)
—এভাবে হবে না?মাফ চান।
—ঠিক আ আ আ….
সোহানের কথা থেমে যেতেই চারু অবাক হয়ে সোহানের চোখের দৃষ্টিটা লক্ষ্য করলো।বাইরের দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো একটা ছোট্ট ৪ বছরের বাচ্চা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।বাচ্চাটা এগিয়ে আসতেই সোহান দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলো।সোহানে এর কোলে বাচ্চা দেখে চারু অবাক হয়ে গেলো।
সোহান চারুর পাশে এসে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বসলো।সোহানের মুখে ফুটে উঠেছে ভালোবাসার হাসি।যেটা চারুকে চিন্তার অঘোরে ফেলে দিলো।হটাৎ পাশ থেকে শুনছো…কথাটা শুনে চারু মুখ তুলে তাকাতেই দেখে একটা যুবতী মেয়ে।তবে মেয়েটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি বিবাহিত।
চারুর আর বুঝতে বাকি রইলো না এদের কাহীনিটা।নিজের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এলো।সোহান তার সাথে প্রতারনা করেছে।সে তাকে মিথ্যা বলেছে।নিজের চোখের জলটা লুকিয়ে নিলো।
—চারু তোমাকে ওদের জন্যই বসিয়ে রেখেছিলাম।এই যে এটি হলো আমার ছোট্ট খোকা আর ও হলো রিতু।
রিতু হাতটা বাড়াতেই চারুর বুকটা ধক করে উঠলো।নিজের ভালোবাসাটা অন্যর কাছে এটা ভাবতেই হাতদুটো কাপতে লাগলো।পরিচিত হওয়ার পর খেয়াল করলো সোহান শুধু রিতুর সাথেই কথা বলে যাচ্ছে।একটা আহাকার তার ভিতর কাজ করতে শুরু করলো।কান্নাটা আর তার পক্ষে চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না।সোহানকে একটু ওয়াশরুমে যাবার কথা বলে হোটেল থেকে বেড়িয়ে এলো।
চুপ করে একটা ফাকা যাইগা দিয়ে সে হাটছে।টপটপ করে তার চোখ থেকে জল পড়ছে।নিজেকে তার খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো।গরীব বলে সোহান তার সাথে এতোটা নোংরামি করতে পারলো?একটা মেয়েকে বিয়ে করে আরেকটা মেয়ের দিকে লালসার হাত বাড়িয়ে দিলো?
.
রাস্তার লোকজন হইতো তাকে পাগল ভাবছে।কিন্তু চারু ঠিক করে নিয়েছে।আর সে এখানে থাকবে না।একটা প্রতারকের সাথে সে কিছুতেই থাকতে পারবে না।
কান্না করতে করতে সে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য রওনা দিতে আরম্ভ করলো।
.
চলবে,,