বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৯(শেষ)
writter_সোহানুর_রহমান_সোহান
এদিকে সোহান চারুর জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে বেশ চিন্তাই পড়ে গেলো।সে চারুর ভিতর কিছু একটার আন্দাজ করতে পেরেছে।
চারু রুমে ঢুকে তার সবকিছু গুছিয়ে নিলো।নিজের গা থেকে সোহানের দেওয়া শাড়িটা খুলে ফেললো।একটা প্রতারকের শাড়ি তার শরীরটাকে নোংরা করে দিবে।
নিজের সবকিছু চারু ব্যাগে ভরে টেবিলের উপর রেখে দিলো।চোখটা মুছে সোহানের রুমে চলে গেলো।তার সেই চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে সোহানের ডাইরির উপর রেখে দিলো।ড্রয়ার থেকে তার অপারেশনের রিপোর্টটা বের করে নিলো।
রিপোর্টা বুকে জড়িয়ে ধরলো।সোহানকে সে একটা ধন্যবাদ জানালো।প্রতারনা করলেও তাকে সে সঠিক পথে ফেরাতে পেরেছে।নিজেকে পবিত্র রাখতে শিখেয়েছে।একটা মিত্যুর হাত থেকে তাকে বাচিয়েছে।
সে আর একটুও সোহানের রুমে দাড়ালো না।চুপটি করে নিজের রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে রুমটা আটকে দিলো।কিছুদুর সামনে এগোতেই হটাৎ তার পা দুটো থেমে গেলো।খেয়াল করলো তার সামনে সোহান দাড়িয়ে রয়েছে।কিন্তু চারু সোহানের দিকে তাকালো না।
সোহান ঘেমে গিয়েছে।সারাটা পথ হইতো দৌড়ে এসেছে সেজন্য এই ঠান্ডার ভিতর তার কপালটা ঘেমে গিয়েছে।চারুকে দেখে দৌড়ে সে চারুর কাছে চলে গেলো।চারুর দিকে তাকিয়ে দেখে চারু কান্না করছে।
চারুর কাধে সোহান হাত রেখে,,
—আমাকে না জানিয়ে হটাৎ হোটেল থেকে চলে এলে কেন?আর তুমি এভাবে কাদছো কেন?
— ………..??
—কি হলো?কিছু বলছো না যে?কেউ কি তোমাকে মেরেছে?
— ………??
চারুর কোনো আওয়াজ না পেয়ে সোহান চারুর মুখটা উচু করতেই। ঠাস ঠাস ঠাস।
সোহান নিরবে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।সে ভাবতেও পারছে না চারু কেন তার গায়ে হাত তুললো?
—ওই মেয়েটাকে আনতে পারেন নি?যান গিয়ে আপনার বউ আর বাচ্চাটাকে আদর করুন।আপনার লজ্জা করেনা একটা বাচ্চা থাকতে আপনি অন্য আরেকটা মেয়ের সুযোগ নিতে চান।
কথাগুলো বলে ধাক্কা দিয়ে সোহানকে সড়িয়ে দিলো।বাইরে যেতেই হটাৎ পিছন থেকে সোহান চারুর হাতটা চেপে ধরলো।সোহানের চোখদুটো জলে টলমল করছে।
—চারু তুমি আমার পুরো কথাটা এক…..
—আপনি যদি আরেকটা কথা বলেন?তাহলে আপনি আমার লাশ দেখবেন।হাতটা ছাড়ুন বলছি?
কথাটা আর তার বলা হলোনা।হাতটা হটাৎ করেই চারুর হাত থেকে পড়ে গেলো।সোহান আর কিছু বলতে পারলো না।না পারলো কাদতে আর না পারলো কিছু বলতে?একদিকে চারু কান্না করতে করতে চলে গেলো।অন্যদিকে সোহান চুপচাপ রুমে চলে গেলো।
দুজনের ভিতরই রয়ে গেলো তাদের লুকোনো কথাগুলো।হইতো এরা আশা করেনি আর তাদের কোনদিন দেখা হবে?সোহানকে আর সেদিনের পর কোথাও দেখা যাইনি।চারদিকে সবকিছু চুপচাপ ভাবে ঘটেই চলেছে।কেউ আর বাইরে কখনো একটা ছেলেকে দেখতেই পাইনা।ধীরেধীরে চারদিকে আবার সেই পুরোনো খারাপ কাজগুলো শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই তখন শুধু একজনের পথের দিকেই তাকিয়ে থাকে।কিন্তু তাকে যে আর দেখা যায়না।ছেলেটা কি তাহলে আগের মতো নেই?নাকি অনেক আগেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে কোনো এক একাকিত্বের দুরের দেশে পাড় জমিয়েছে?
–
কুয়াশা বেশ ঘন হয়ে গিয়েছে।এই ঠান্ডাটা হইতো গরিবের জন্য খুব বেদনাদায়ক।একটা মেয়ে কাপতে কাপতে বাজারের দিকে এগোচ্ছে।শরীরে রয়েছে হালকা একটা কাপড়।শরীর দেখে মনে হচ্ছে কয়েকদিন পেটে কিছু পড়েনি।চোখের নিচটা কালো রঙে ছেপে গিয়েছে।একা একা চুপি চুপি মেয়েটাকে ধীরে ধীরে বাজারের ভিতর ঢুকতে দেখা যাচ্ছে।
বাজারের এক প্রান্তে চলে গেলো মেয়েটা।মনে হচ্ছে মেয়েটার কাছে টাকা নেই।তাই নষ্ট সবজির দিকেই তার পা দুটোকে এগোতে দেখা যাচ্ছে।
সবজির দোকানে গিয়ে কিছু সবজি নিয়ে আবারো হেটে চললো।মুখদুটো শুকনো হয়ে গিয়েছে।ঠোটদুটো ফেটে একাকার।চোখে একটা চশমা দেখা যাচ্ছে।
হটাৎ হাটার পথে কে যেন মেয়েটির গায়ে একটা চাদর জরিয়ে দিলো।পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো,,
—এই তুমি চারু না?
কথাটা শুনে মেয়েটি দাড়িয়ে পড়লো।পাশ থেকে চারু তাকাতেই খেয়াল করলো মেয়েটি আর কেউ না?মেয়েটি রিতু।পাশেই রয়েছে রিতুর ছেলে।চারু একটা মুচকি হাসি দিয়ে রিতুর ছেলেকে কোলে তুলে নিলো।
—রিতু তোমাদের ছেলেটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
—হুম।তুমি হটাৎ এই শীতের ভিতর এভাবে পাগলের মতো কোথাই যাচ্ছো?
—এইতো বাসার দিকে।(একটা ঘোর নিষ্শাষ ছেড়ে দিয়ে)
—সেদিন তোমাকে আর দেখতে না পেয়ে খুব খারাপ লেগেছিলো।তুমি না অনেক ভাগ্যবান সোহানের মতো একটা ছেলেকে পেয়ে।তো তুমি একা কেন?সোহান কোথাই?
—সোহান?ওর তো তোমার সাথে থাকার কথা?(অবাক হয়ে)
—চারু তুমি এসব কি বলছো?সোহান কেন আমার সাথে থাকবে?
এবারের কথাটা শুনে চারু থেমে গেলো।
—তুমি সোহানের বিবাহিত বউ না?
—কিসব বাজে কথা বলছো??সোহান তো আমার খুব ভালো বন্ধু।
রিতুর কথা শুনে চারু অবাক হয়ে যাই।১ বছর পরেও কথাটা শুনে চারু চমকে উঠলো।
—তাহলে যে সেদিন ও তোমার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বাবা বললো?
—চারু তুমিও না??সোহান কখনো আমাকে একটুও কষ্ট দেয়নি।সবসময় আমাকে এক চোখেই দেখেছে।ও সবসময় আমার বাচ্চাকে নিজের মনে করতো।
কথাগুলো চারুর কাছে সপ্নের মতো মনে হলো।ভুল তো তার নিজেরই ছিলো।কেন সে শেষবারের কথাটা শুনেনি?
—রিতু সোহান এখন কোথাই আছে সেটা বলতে পারবে?
—ওই যে সেদিনের পর থেকে আর সোহানকে দেখতে পায়নি।জানিনা ও এখন কোথাই আছে?
—সেদিন সোহান কিছু বলেছিলো?
—জন্মদিনের গিফ্ট হিসেবে ও তোমাকেই আমার কাছে নিয়ে এসেছিলো।বেশিকিছু বলেনি শুদু এ টুকু বলেছিলো যে, তোমাকেই ও বিয়ে করতে চলেছে।
—কিন্তু ও তো একটা পতিতালয়ের ট্রেইনার ছিলো?
—কিহ?সোহান কে তুমি এমন অপবাদ দিতে পারোনা?
ধীরে ধীরে চারুকে রিতু সব খুলে বলতে শুরু করলো।
এখন আর চারু সেখানে দাড়িয়ে নেই।একটা বাড়ির পাশের বাগানের দিকে হাটতে শুরু করেছে।রিতু তাকে এই ঠিকানাটাই দিয়েছে।
ঠান্ডার ভিতর এতোটা রাস্তা হাটতে হাটতে সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সে জানেনা এখন সোহান তাকে মেনে নিবে কি না?তবে তাকে যে ছেলেটার কাছে যেতেই হবে।তার না বলা কথাটা যে তাকে বলতেই হবে।
বাগানে ঢুকতেই সে থমকে দাড়ালো।চারপাশে প্রচন্ড বাতাস বইছে।কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।চোখ থেকে জল মুছে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
কিছুদূর যাবার পর খেয়াল করলো তার কিছুদূরেই অনেকগুলো বাচ্চা খেলাধুলা করছে।
তার পাশেই রয়েছে রয়েছে একটা বসার জাইগা।চারপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা শুধু সেই বসার জাইগাই একজনকে চাদর মুরি দিয়ে বসে থাকতে দেখছে সে।লোকটির মুখভর্তি দাড়ি আর চুপচাপ বসে থাকাটা চারুর বুকে একটা আঘাত করে বসলো।চুপিচুপি সে গিয়ে লোকটির পাশে বসে রইলো।খেয়াল করলো লোকটির পাশে একটা চিঠি পড়ে রয়েছে।আরে ছেলেটাকে বৃদ্ধ বলছি কেন?
চারু লোকটির পাশে বসে চুপিচুপি কাদতে থাকলো।কান্না দেখে পাশ থেকে লোকটি চাদরটা সড়িয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বেড় করে চারুর সামনে ধরলো।চারু ছেলেটার দিকে এক পলক ও ফেললো না।আড়ালে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে।
রুমালটা ছেলেটার হাত থেকে নিয়ে পাশে রেখে দিলো।চারুর কান্নাটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।
চারদিকের চুপচাপ পরিবেশে এমন কান্নাটা হইতো পাশের লোকটির পছন্দ হচ্ছেনা।কিন্তু লোকটির চোখেও জল দেখা যাচ্ছে।তাহলে পাশের ছেলেটা অন্যকারো কান্না সহ্য করতে পারেনা??
শীতের কনকনে বাতাসটা চারুর শরীরে লাগছে আর থরথর করে কাপছে তার শরীর।তার কান্নাটাও জমে আসছে।
হটাৎ পাশ থেকে ছেলেটা উঠে তার গায়ের চাদরটা খুলে চারুর শরীরে জড়িয়ে দিলো।হইতো ছেলেটার এমন করে উপকার করতে ভালো লাগে।
পাশ থেকে চিঠিটা উঠিয়ে খুলে সেটা বুকে জড়িয়ে রাখলো।চোখটা বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু তার চোখটা থামছেই না।
কেন সে কাদছে আর এখানে তো কাউকেই দেখা যাচ্ছে না?তাহলে সে কি সোহানের সাথে দেখা করবে না?
কথাটা শেষ না হতেই পাশের ছেলেটা চুপচাপ এসে চারুর থেকে চাদরটা একটু সরিয়ে সেখানে জাইগা করে বসে রইলো।
কি বেপার?এই ছেলেটা চারুর কাছে এভাবে বসলো কেন?একি চারু ছেলেটার বুকে মাথা লুকালো কেন?আর চিঠিটে কি এমন লেখা ছিলো যেটাটে এতো কান্না করতে হবে??
চুপচাপ চারদিকে শুনশান বাতাস বইছে।দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।চারু চুপিচুপি কান্না করছে।চিঠিটা তো পড়ে গেলো?তাহলে দেখি কি লেখা রয়েছে সেখানে?ওমা এখানে তো লেখা রয়েছে,,,
—এই যে তুমি কি আমার বউ হবে।
তারিখটা ঠিক ১ বছর আগের।
চিঠাটা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এটাই চারু সেই পাগল ছেলে।
হটাৎ চারদিকের বাতাসটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলো।হইতো আর ওদের ভালোবাসাটার অধিকার আমাকে আর দিবেনা।
তবে থাকনা এরা এদের মতো।যদি চারু কান্না করে তার ভালোবাসাটা নিজের করতে পারে?তাহলে কান্না করুক।তবে এটুকু তো বুঝতেই পেরেছি ছেলেটি সোহানি ছিলো।
হইতো এদের ভালোবাসাটা নিরবে প্রকাশ পাবে।
চারদিকে থেকে এলোমেলো সুরগুলো আর কিছু শুনতে দিলোনা।পাশ থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম,,
তোর বর্ষা চোখে ঝড়তে দেবোনা বৃষ্টি,,
তুই থাকবি
টু টু টুটু টু টুটু টু…..
বাহ আওয়াজ টা বেশ দারুন।
এই যে দুইজন পাগল আর পাগলী?তাহলে গানের সুরে সুরে তোমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি।
.
সমাপ্ত
.