বউ,Part- 1
writer: Nur_Nafisa
.
.
নেহার সাথে ব্রেকাপের দুদিন পর সন্ধ্যায় রেহান একা রাস্তায় হাটছে। ফুরফুরে বাতাস, জনশূন্য পথ, রাস্তার লাইটগুলো জ্বালানো । অন্ধকার ও আলোর মিশ্রনে দেখতে ভালোই লাগছে। শহরের রাস্তা। যানবাহন অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু কম।
৩মাসের রিলেশন ছিল নেহার সাথে। মেয়েটাকে ভালোবাসতো খুব। কিন্তু মেয়েটা তাকে ঠকিয়েছে। অবশ্য রেহান নিজেই ব্রেকআপ করেছে। কারণ নেহা মেয়েটা ছেলেদের সাথে মেলামেশা বেশিই করতো যা রেহানের একদমই পছন্দ না। কয়েকবার না করা সত্ত্বেও শুনেনি। তারপর সে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে নেহা একটা লোভী মেয়ে। রেহানের টাকার জন্যই তার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।
রেহানের বাবা শহরের একজন নামকরা বিজনেসম্যান। মা, বাবা, রেহান ও তার ছোট ভাই রিয়াদ ছাড়া তার পরিবারে আর কোন সদস্য নেই।
রেহান একদম মনমরা হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগেই মাত্র মাস্টার্স শেষ করে বাবার বিজনেসের দিকে একটু মনযোগ দিয়েছে। অফিস থেকে ফেরার পর কিছু ভালো লাগছিল না তার। সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ততা। তাই সন্ধ্যায় একা একটু বাইরে বেরিয়েছে।
রেহান কিছুটা দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছে সে যে পথে হাটছে সে পথ দিয়েই একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে। এক বার হোচট খেয়ে পড়ে ও গেছে। আবার উঠে দৌড়ে এসে রেহানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। রেহান ও মেয়েটিকে ধরে ফেললো। মেয়েটির পড়নে লাল শাড়ি, সাথে গহনা। বিয়ের সাজ। মেয়েটি হাপাচ্ছে খুব। কোনো কথা বলতে পারছে না।
।
রেহান- এই মেয়ে, কে তুমি? দৌড়াচ্ছো কেন এভাবে!
।
– ও.. ওরা… আ আমাকে নিয়ে য যাবে…
।
(রেহান পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না।)
রেহান- কোথায়! কেউ তো নেই! কোথা থেকে এসেছো তুমি? তোমার পরিচয় কি?
।
– #বউ ….
।
(মেয়েটি আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের সমস্ত ভাড় রেহানের উপর ছেড়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লো। রেহান ভয় পেয়ে গেছে। ডাকাডাকি করছে কিন্তু কোন সারা পাওয়া যাচ্ছে না। এই মাঝ রাস্তায় এখন এই মেয়েকে নিয়ে কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে কি মেয়েটিকে ফেলে রেখে যেতে পারবে! না না তা অন্যায় হয়ে যাবে। এখন কি করবে সে! এদিকে কোন মানুষ ও নেই যে সাহায্য চাইবে! বেশ কিছুটা দূরে একটা দোকান দেখা যাচ্ছে। সে মেয়েটিকে ফুটপাতের একপাশে ছাউনিতে বেঞ্চে বসিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রেখে দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে এক বোতল পানি নিয়ে এলো। তারপর মেয়েটির মুখে ছিটিয়ে দিলো। মেয়েটির হাত ঘষে তাকে ডাকতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়েটি চোখ খুলে তাকালো। মেয়েটি রেহানকে এতো কাছে দেখে ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে আর কাউকে দেখতে পেল না। )
।
রেহান- ভয় পেও না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। পানি খাও।
।
– মেয়েটি চুপচাপ কিছুটা পানি খেয়ে নিলো।
।
রেহান- বাসা থেকে পালিয়ে এসেছো?
।
– মেয়েটি মাথা দু দিকে নাড়িয়ে না করলো।
।
রাহান- তাহলে দৌড়াচ্ছিলে কেন?
।
– (মেয়েটি কিছু না বলে রেহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।)
ও.. ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। নাইফ দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে। হেল্প মি প্লিজ।
।
(জড়িয়ে ধরাতে রেহান কিছুটা অসস্তিবোধ করছে। নেহার সাথে ৩মাস রিলেশন থাকলেও কখনো নেহাকে জড়িয়ে ধরেনি। সে মেয়েটিকে সোজা করে বসালো।)
রেহান- কেউ তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে না। কান্না থামাও।
।
( মেয়েটির কান্না থামছেই না। রেহান পকেট থেকে রুমাল বের করে দিলো।)
।
মেয়েটি- ইউজ করেছেন?
একে তো হেল্প করছে এখন আবার জিজ্ঞেস করছে রুমাল ইউজ করা নাকি! অবাক হলেও স্বাভাবিকভাবেই বললো,
ক্লিন, ইউজ করতে পারো।
।
( মেয়েটি রুমাল নিয়ে সাথে সাথে চোখের পানি নাকের পানি সব মুছে নিলো। রেহানের রুমাল নষ্ট করে দিলো। রেহান এদিক ওদিক একটু পায়চারি করে আবার মেয়েটির পাশে এসে বসলো। )
রেহান- নাম কি তোমার?
।
– #বউ
।
রেহান- এটা আবার কারো নাম হয়! তোমার আজ বিয়ে ছিলো?
।
– না।
।
( এবার রেহানের মনে হলো মেয়েটি নিশ্চয়ই তাকে মিথ্যে বলছে। হয়তো বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে।)
রেহান- দেখো আমাকে মিথ্যে বলো না। সত্যি করে বলো। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না।
।
– আমি মিথ্যে বলছি না।
।
রেহান- তোমার বাসা কোথায়?
।
– লন্ডন।
।
( এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল মিথ্যে বলছে, এখন তো মনে হচ্ছে এই মেয়ে পাগল! সে ধমকের সুরে বললো…. )
এই মেয়ে! কি যা তা বলছো! বাসা লন্ডন হলে ঢাকায় কি করছো!
।
– এএএএএএ….
।
রেহান- এই একদম চুপ। এখন কোথায় যাবে, সেটা বলো। পারলে হেল্প করবো।
।
– জানিনা।
।
রেহান- জানোনা মানে! বাসা থেকে বের হয়েছো কেন!
নিজের বাসার ঠিকানা বলো, আর না হয় কোনো রিলেটিভি এর ঠিকানা বলো।
।
– জানিনা।
।
রেহান- কারো ফোন নং?
।
– জানিনা।
।
রেহান- আশ্চর্য! জানো কি তাহলে! আমার যতটুকু সম্ভব হেল্প করেছি। নিজের পথ নিজে দেখো এবার। আমি যাই….
।
– কোথায় যাবো?
।
রেহান- আমি কি জানি।!….
।
(রেহান বাসায় ফেরার জন্য চলে গেলো সেখান থেকে। কিছুটা পথ আসতেই তার খারাপ লাগলো। এভাবে একটা মেয়েকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া কি তার উচিত হচ্ছে! তার ই বা কি করনীয়! সে তো চাইছিল সাহায্য করতে, কিন্তু মেয়েটি তো কিছুই বলছে না! সে আবার ছাউনিতে গেল। এসে দেখলো মেয়েটি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে ছাউনিতেই বসে আছে।)
।
রেহান- আমাদের বাসায় যাবে?
।
সে জবাবহীন চুপ করে তাকিয়ে থাকলে রেহান বললো,
।
রেহান- ভয় নেই, যেতে পারো। আমার পরিবার আছে। আম্মু, আব্বু, ছোট ভাই। আজ রাত থেকে কাল নিজের বাসায় চলে যেও।
।
(রেহান দেখতে পেল মেয়েটি এক হাতে পেট চেপে বসে আছে।)
।
রেহান- কোন সমস্যা?
।
– ক্ষুধা লেগেছে
।
(রেহান নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসলো! একে তো পালিয়ে এসেছে, এখন আবার ক্ষুধা নিয়ে পড়ে আছে! মেয়েটির যেন কোন চিন্তাই নেই! থাকবে কিভাবে! চিন্তা তো সব অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়ে বসে আছে।)
রেহান- আমার বাসা সামনেই, ১০মি লাগবে হেটে যেতে। বাসায় গিয়ে খেয়ে নিও।
।
– খুব ক্ষুধা লেগেছে, আমি উঠতেই পারছি না।
।
রেহান- ওকে বসো, আমি আসছি….
।
(কি আর করার, সামনের দোকান থেকে ১টা কলা, ১টা পানির বোতল আর ২টা কেক নিয়ে এলো। মেয়েটির হাতে দিতেই সে একের পর এক সব খাবার খেয়ে নিলো। হয়তো খুব ক্ষুধার্ত, সারাদিন না খেয়ে ছিলো।)
রেহান- হয়েছে এবার। উঠো।
।
– হুম…
।
(রেহান কয়েক পা এগিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি এক জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে।)
রেহান- কি হয়েছে? যাবে না?
।
– আমি হাটতে পারছি না। পা ব্যাথা করছে।
।
রেহান- এবার কি তোমাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে যাবো!
।
– (ফিসফিসিয়ে) আমি কি সেটা বলেছি!
।
রেহান- তাহলে কিভাবে যাবে!
।
– একটা অটো নিলেই তো হয়।
।
রেহান- এখানে আবার অটো পাবো কোথায়! গ্রাম থেকে এসেছো নাকি! দেখতে পাচ্ছো না বড় বড় বাস ট্রাক চলছে।
পরক্ষণে ঠান্ডা মেজাজে বলল,
রেহান- দাড়াও একটু, দেখি রিকশা পাওয়া যায় কিনা!
।
(রেহান রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে দোকানের ওপাশে দেখতে পেল একটা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। সে সেখানে গেলো রিকশা নেয়ার জন্য। কিন্তু রিকশাওয়ালা বলছে যাবে না। সে অনেক বলে দিগুণ ভাড়া দিয়ে তারপর রিকশা নিয়ে এলো। মেয়েটিকে ডেকে বললো উঠতে। রিকশা ওয়ালা মেয়েটিকে দেখে হা হয়ে আছে যা রেহানের চোখ এড়ায়নি। রিকশাওয়ালা হয়তো ভাবছে হয়তো এই ছেলে বিয়ে বাড়ি থেকে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। যে কেউ দেখলে তো তাই ভাববে। রেহান কিছু না বলে মেয়েটিকে নিয়ে রিকশায় উঠলো। তারপর তার বাসার পাশে এসে মেয়েটিকে নিয়ে নামলো। মেয়েটি বাইরে থেকে বাড়িটা দেখলো ৫/৬ তলা হবে বাড়িটা। পুরো বাড়িতেই লাইট জ্বলছে।)
রেহান- দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে চলো। তোমার তো আবার পা ব্যাথা, আমার হাতে ভর দিয়ে হাটো।
।
(গেইটের কাছে এলে দাড়োয়ান গেইট খুলে হা করে আছে! ” বড় ভাইজান কি বিয়ে কইরা ফেললো নাকি!)
।
রেহান- হা করে আছো কেন!
।
দাড়োয়ান- না কিছুনা।
।
(মেয়েটি রেহানের হাতে ভর দিয়ে হাটছে। গেইটের ভেতরে অনেকটা পথ হাটতে হবে। বাড়ির সামনে বিশাল ফাকা জায়গা আছে। রাত হওয়ায় আশেপাশে পরিবেশটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। নিচ তলায় অর্ধেক ভবন ফাকা। ২টা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। মেয়েটিকে নিয়ে রেহান ২য় তলায় মেইনডোরের সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজালো।)
চলবে