বউ,Part- 11,12

0
816

বউ,Part- 11,12
writer: Nur_Nafisa
Part- 11

নাফিসা- হোয়াট! পালিয়ে কেন বিয়ে করবো। আব্বু আম্মু তো আমাদের এমনিতেই বিয়ে দিবে। প্ল্যান ও চলছে সব কিছুর।
.
রেহান- পালিয়ে বিয়ে করার মজাই আলাদা। চলো আজই বিয়ে করবো…
.
নাফিসা- ইম্পসিবল ! বিয়ের শপিং ও করি নি! এই ড্রেসাপে বিয়ে! বউ না সেজে বিয়ে করবো না।
.
(রেহান নাফিসার উপর থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে সোজা আলমারি খুললো। নাফিসা ও শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর ১টা লাল শাড়ি সাথে গহনা এনে নাফিসার সামনে রাখলো রেহান। নাফিসা শাড়ি দেখে রীতিমতো শকড!)
.
রেহান- আপাতত এটা পড়ো, পরে না হয় আবার শপিং করে নিবে…
.
নাফিসা- তুমি এই শাড়ি এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছো!
.
রেহান- আমার বউয়ের শাড়ি আমি রাখবো না!
.
নাফিসা- এটা কিন্তু তুমি দাও নি, দুবছর আগে আব্বু কিনে দিয়েছিলো।
.
রেহান- আজ এটা পড়ো, পরে আমি কিনে দিবো। সেম ওইদিনের মতো সাজবে…
.
নাফিসা- ওইদিন পার্লারে সেজেছি…
.
রেহান- মেকাপ লাগবে না, শুধু শাড়ি আর গহনা পড়ার কথা বলেছি…. চলো চলো….
.
নাফিসা- এই আব্বু আম্মু সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে… কিভাবে যাবো!
.
রেহান- দাড়াও আমি আসছি….
.
রেহান- চলো, কেউ নেই। আব্বু আংকেল এর সাথে রিয়াদের রুমে দাবা খেলছে। আর আন্টি আর আম্মু কিচেনে।
.
নাফিসা- ওকে…
.
(দুজনেই চলে গেলো বিয়ে করতে। রাত ১০টার দিকে বাসায় এসেছে । আজও রুবিনা দরজা খুলেছে, তিনি সেই দুবছর আগের পরিস্থিতি ই দেখলেন আজ। কিন্তু একটু ও অবাক হলেন না বরং মুচকি একটা হাসি দিলেন…)
.
রুবিনা- আবার সেই দুবছর আগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিস।
.
রেহান- আম্মু বরন করবে না?
.
রুবিনা- ১৫দিন পর আনুষ্ঠানিক ভাবেই বরন করে নিবো। ফাজলামো বাদ দিয়ে এখন ভেতরে আয়…
.
রেহান- আম্মু আজ সত্যিই বিয়ে করে এসেছি কাজী অফিস থেকে।
.
রুবিনা- কিইইইই!
.
রেহান- হুম। কাজীর ফোন নং ও এনেছি, জিজ্ঞেস করতে পারো কল করে..
.
(ব্যাস! শুরু হয়ে গেল তুমুল কান্ড। সবাই দৌড়ে এলো চিৎকার শুনে।)
.
রিয়াদ- ভাইয়া আবার বিয়ে কিরেছো! আব্বু আমিও কিন্তু ২বার বিয়ে করবো…
.
রায়হান- বেটা, তোর মা আমাকে সহ বাসা থেকে বের করবে।
.
রেহান- আম্মু প্রব্লেম কি! তোমরা তো আমাদের বিয়েই ঠিক করছিলে, আমি অন্য কাউকে তো আর বিয়ে করিনি!
.
রুবিনা- বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। তুই আমার ছেলে না।
.
(সবাই অবাক হয়ে দাড়িয়ে দেখছে শুধু, কেউ কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না!)
.
নাফিসা- (রেহানকে খোচা দিয়ে) এই এখন কোথায় যাবো? শাশুড়ী আম্মু তো বেরিয়ে যেতে বললো…
.
রেহান- আম্মু চলে যাবো? বউ নিয়ে কিন্তু কারো বাসায় যাবো না, রাস্তায় ই থাকবো….
.
রুবিনা- একটা থাপ্পড় দিয়ে সব দাত ফেলে দিবো, একে তো পালিয়ে বিয়ে করে এসেছে এখন আবার বউ নিয়ে রাস্তায় থাকবে! চৌধুরী পরিবারের মানসম্মান কি রাখবি না কিছু!
.
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মু, পানি পান করার জন্য একটা দাত রেখে দিও তোমার ছেলের।
.
রুবিনা- পাজি মেয়ে একটা। পানি পান করতে দাতের প্রয়োজন হয় না, ভেতরে আয়।
.
(নাফিসার কথা শুনে এবার সবাই হেসে দিলো, রুবিনা আর রাগারাগি না করে ভেতরে আসতে বললো। দুজনেই সবাইকে সালাম করলো। তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান ১৫ দিন না রেখে ১সপ্তাহ পর ফাইনাল করলো। একসাথে ডিনার করে তারপর নাফিসা রেহানের রুমের সামনে আসতেই পেছন থেকে ডেকে রেহান নাফিসাকে থামিয়ে দিলো। নাফিসা “কি” জিজ্ঞেস করতেই রেহান আশেপাশে তাকিয়ে চট করে নাফিসাকে কোলে তুলে নিলো, তারপর রুমে প্রবেশ করলো।)
.
নাফিসা- স্টুপিড একটা, কেউ দেখে ফেললে কি হতো এখন!
.
রেহান- কিছুই হতো না। সবাই তো জানে আমরা এখন ম্যারিড। দরজা লক করো……
.
নাফিসা- পারবো না। নামাও আমাকে….
.
রেহান- নো, লক করতে বলেছি লক করো….
.
নাফিসা- আরে আমি বাইরে যাবো, নামাও।
.
রেহান- কেন?
.
নাফিসা- আমার লাগেজ ওই রুমে, শাড়ি পড়ে আমি ঘুমাতে পারবো না।
.
রেহান- পালানোর চেষ্টা করছো, খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।
.
নাফিসা- পালাবো না, সত্যি বলছি।
.
রেহান- ওকে, তাহলে আমি নিয়ে আসছি।
.
নাফিসা- এই না, তুমি চিনবে না আমি যাবো।
.
(রেহান আর কিছু না বলে নাফিসাকে নামিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে পাশের রুম থেকে নাফিসার লাগেজ নিয়ে এলো। নাফিসা লাগেজ থেকে লাল টিশার্ট বের করলো।)
.
রেহান- এই, এটা কোথায় পেলে! আমি খুজেছিলাম হলুদটা পেয়েছি কিন্তু এটা পাই নি!
.
নাফিসা- হিহিহিহি পাবে কিভাবে! লন্ডন খুজেছো?
এটা আমি সাথে করে নিয়ে গেছি, আর প্রতিটি রাতে আমি এটা পড়ে ঘুমিয়েছি।
.
(নাফিসাকে কাছে টেনে নিয়ে)
রেহান- আমিও কিন্তু হলুদ টিশার্ট পড়ে প্রতি রাতে ঘুমিয়েছি। একটি বার বলে গেলে কি হতো, আমাকে ভালোবাসো। ২টা বছর না হয় আমরা প্রেম করেই কাটিয়ে দিতাম।
.
নাফিসা- সারপ্রাইজ টা তো দিতে পারতাম না!
.
(রেহান নাফিসার হাত থেকে টিশার্ট নিয়ে ঢিল মেরে সোফায় ফেলে দিয়ে আবার নাফিসাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানার দিকে যেতে লাগলো… )
.
নাফিসা- কি হচ্ছে এসব! নামাও আমি চেঞ্জ করবো।
.
রেহান- আমি তো ভালো করে দেখলাম ও না, এখনি চেঞ্জ!
.
নাফিসা- এতোক্ষণ কি চোখ বুজে ছিলে!
.
রেহান- হুম, এখন দেখবো। জানো তো, আজ আমাদের স্পেশাল নাইট, বাংলায় যাকে বলে বাসর রাত।
.
নাফিসা- যাহ!
.
(রেহান নাফিসাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সেও পাশে হাতে মাথা ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো। পলকহীন নাফিসার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাফিসা চোখ বন্ধ করে ফেললো।)
.
নাফিসা- এভাবে তাকালে আমার লজ্জা লাগে।
.
রেহান- আমি তোমার লজ্জাময়ী সুন্দরের পূজারী।
.
নাফিসা- (রেহানের দিকে তাকিয়ে) এই, ওই ডাইনীটা পরে আর কোনো প্রব্লেম করেনি তো!
.
রেহান- কার কথা বলছো?
.
নাফিসা- নেহা
.
রেহান- এসব ভাষা কোথায় শিখো? লন্ডন নিশ্চয়ই কেউ ডাইনী বলে না।
.
নাফিসা- গুগোলে সার্চ করে শিখেছি। আরো অনেক কিছু জানি বাংলায়।
.
রেহান- আর কিছু খুঁজে পেলে না, এসব ভাষা শিখতে গিয়েছো!
.
নাফিসা- ধ্যাৎ! বলো না….
.
রেহান- না, ওর সাথে আর দেখা হয়নি।
.
(নাফিসার এক হাত নিয়ে খেলা করতে করতে)
.
রেহান- #বউ..
.
নাফিসা- হুম?
.
রেহান- সরাসরি উত্তর দিবে। আমাকে ভালোবাসো কবে থেকে?
.
নাফিসা- যেদিন শশুর আব্বু বলেছিল তুমি আমার বর সেদিন থেকে।
.
রেহান- আমি তোমাকে ভালোবাসি কবে থেকে জানো?
.
নাফিসা- না।
.
রেহান- যেদিন তুমি রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলে সেদিন থেকে আজও ভালোবাসি বউ।
.
নাফিসা- আমিও ভীষণ ভালোবাসি মাই হ্যান্ডসাম বর।
.
রেহান- (নাফিসার কপালে চুমু দিয়ে) এখন থেকে আর টিশার্ট জিন্স পড়বে না।
.
নাফিসা- আমি কামিজ পড়ে থাকতে পারি না।
.
রেহান- শাড়ি তো পড়তে পারো।
.
নাফিসা- হুম।
.
রেহান- সবসময় শাড়ি পড়বে। কিন্তু শরীর দেখা যায় এমন পাতলা শাড়ি পড়বে না । আমি শাড়ি এনে দিবো ওগুলো পড়বে।
.
নাফিসা- ওকে, আমিও যাবো শপিংমল এ।
.
রেহান- ওকে। ঘুমানোর সময় টিশার্ট পড়তে পারবে শুধু আমি দেখবো, অন্যকেউ যেন না দেখতে পারে। প্রতিদিন রাতে লাল আর হলুদ টিশার্ট দুটো পড়ে আমরা ঘুমাবো। ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। কোনো বাহানা চলবে না। কুরআন পড়তে পারো?
.
নাফিসা- হুম, বাট পিউর না……
.
রেহান- যখনি সম্ভব হবে, কুরআন পড়বে। আম্মুর কাজে হেল্প করবে। সবসময় বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলবে। দুষ্টুমি করলেও লিমিটেশন রাখবে। কেউ অসন্তুষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে। তোমার যত উল্টাপাল্টা দুষ্টুমি আছে, সব আমার সাথে করবে। আমার কাছে কোন কিছু লুকাবে না। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে ডিরেক্টলি আমাকে বলবে। পারবে না আমার দেয়া রুলস গুলো মানতে?
.
নাফিসা- ইনশাআল্লাহ। আরও কিছু?
.
রেহান- (নাফিসার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে) আর আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসবে….
.
(রেহান লাইট অফ করে কাথাটা টেনে নাফিসাকে নিয়ে শুয়ে পড়লো)
নাফিসা- এই আমি চেঞ্জ করবো।
.
রেহান- সেই সুযোগ আর আজ হচ্ছে না মিসেস। আজ সবটা আমি করিয়ে দিবো…
.
(ছোট নৌকায় রেহান তার ভালোবাসা #বউ কে নিয়ে ভালোবাসার বিশাল সমুদ্র পারি দিতে চলে গেলো।)
.
চলবে….

Story: #বউ
Part- 12
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(সকালে নাফিসার ঘুম ভাঙতেই দেখলো রেহান পাশ ফিরে ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা ফুটিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব লজ্জা লাগছে নাফিসার। সে রেহানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। রেহান তার লজ্জামাখা ফেস দেখে হাসির রেখা আরো প্রশস্ত করলো। তারপর নাফিসার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো…)
.
রেহান- হেভ এ সুইট মর্নিং ডিয়ার। ওয়েলকাম টু ম্যারিড লাইফ বউ।
.
(নাফিসা লজ্জায় রেহানকেই ঝাপটিয়ে ধরে রেহানের বুকে মুখ লুকালো। রেহান কাথাটা আর একটু টেনে দুজনের মাথাসহ ঢেকে দিলো।)
.
নাফিসা- ওঠো… দুষ্টুমি করবে না একদম…
.
কে শুনে কার কথা!
.
নাফিসাকে আজ রুবিনা তার একটা শাড়ি দিয়েছে পড়ার জন্য। নাফিসা শাড়ি পড়ে রান্নাঘরে আছে আয়েশা ও রুবিনার সাথে। রুবিনাকে টুকটাক হেল্প করছে আর আয়েশা ও রুবিনার গল্প শুনছে। রেহান ভোরে নামাজ পড়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো। বাসায় ফিরে নাফিসাকে রুমে দেখতে না পেয়ে কিচেনে উকি দিয়ে হা হয়ে আছে! নাফিসা আজ তার আম্মুর নীল রঙের কাতান শাড়ি পড়েছে! তার উপর ভেজা চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে! খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ডাকবে কিভাবে! তার শাশুড়ী আর আম্মু এখানে! পানি পান করার অজুহাতে কিচেনে ঢুকলো। রুবিনা একটু অবাক ই হলো, কারণ পানি পান করার জন্য কিচেনে আসার কি দরকার! ড্রয়িং রুমেই তো পানি রাখা আছে! তা ও কিছু বললো না। নাফিসা একবার তাকিয়েছিলো তার দিকে, রেহান রুমে যাওয়ার ইশারা করলে নাফিসা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। রেহান পানি পান করে বেরিয়ে গেলো। রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার কিচেনে এলো।)
.
রেহান- নাফিসা, আমার ফোনের চার্জার দেখেছো?
.
নাফিসা- না।
.
রেহান- আম্মু, আব্বু কোথায় গেছে?
.
রুবিনা- বেয়াই সাহেবের সাথে বেরিয়েছে।
.
রেহান- রিয়াদ?
.
রুবিনা- রিয়াদও
.
রেহান রুমে ফিরে এলো। রুবিনা নিরবে হাসলো। সে বেশ বুঝতে পারছে রেহান বারবার কেন আসছে! নাফিসাও হাসলো কিন্তু তা প্রকাশিত হয়নি। রেহানের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে! এই মেয়ে কি তার ইশারা বুঝতে পারছে না! এবার রুম থেকে জোরে চিৎকার করেই বলতে লাগলো….
.
রেহান- আম্মু, পারলে ১কাপ কফি করো…
.
রুবিনা ৪কাপ কফি বানিয়ে ইচ্ছে করেই ২কাপ নাফিসার কাছে দিলো রেহানকে দেওয়ার জন্য। নাফিসাকে এবার নিরুপায় হয়ে রুমে যেতেই হলো। রেহান টিশার্ট খুলে সোফায় বসে ফোন দেখছে। নাফিসা এসে বেডসাইড টেবিলে ১কাপ কফি রেখে ঘুরে দাড়াতেই দেখল রেহান তার খুব কাছে এসে দাড়িয়েছে। এইটুকু সময়ে রেহান দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তারপর নাফিসার হাত থেকে অন্য কাপটা নিয়ে রেহান টেবিলে রেখে দিলো।
.
নাফিসা- রেখে দিলে কেন! এটা আমার। আমি খাবো না!
.
রেহান- রাখো তোমার কফি খাওয়া! কতোক্ষণ আগে ডেকে এসেছি, এতো লেট করেছো কেন! আগে তার মাশুল দাও….
.
বলেই নাফিসাকে নিয়ে খাটে ঝাপিয়ে পড়লো। দু’হাতে নাফিসার হাত চেপে ধরলো বিছানায়।
.
নাফিসা- কি হচ্ছে কি এসব! সরো…
.
রেহান- (নাফিসার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে) এই শাড়ি পড়েছো কেন! আমার মাথা হ্যাং করার জন্য!
.
নাফিসা- তুমিই তো বলেছো শাড়ি পড়তে।
.
রেহান- নীল রঙ টা তোমাকে মানিয়েছে বেশ। ম্যাচিং ব্লাউজ কোথায় পেলে!
.
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মুর টা ই। দেখছো না কেমন ঢিলা! সরো, কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
.
রেহান- হোক, আমার কাজ আগে।
.
রেহান ১০-১৫ মিনিট পর নাফিসাকে ছাড়লো। তারপর টেবিল থেকে কফি কাপ নিয়ে একটা সে খেতে লাগলো আর একটা নাফিসার হাতে দিলো। নাফিসা কাপ নিয়ে দেখলো কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। সে রেগে রেহানের হাতেই কাপ ধরিয়ে দিলো।
.
রেহান- খাবে না?
.
নাফিসা- তুমিই খাও তোমার কফি
.
রেহান- হাহাহা…. ওকে আমিই খাই। বের হওয়ার আগে শাড়ির আচলটা মাথায় দাও। ঘাড়ের স্পট দেখা যাচ্ছে।
.
নাফিসা দরজার সামনে থেকে দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দেখলো সত্যিই ঘাড়ে স্পট দেখা যাচ্ছে। গলার দিকটাও লাল হয়ে আছে। আবার রেহানের দিকে রেগে তাকিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে রিয়াদের রুমে চলে গেলো।
.
রায়হান চৌধুরী বাসায় ফিরলে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।
.
রেহান- আব্বু আজ অফিস যেতে হবে?
.
(সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে! ছেলে বাবার কাছে সরাসরি কেমন প্রশ্ন তুলছে! আর রায়হান চৌধুরী মনে মনে ভাবছে ” নতুন বিয়ে করেছিস, অফিস যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে তো কৌশলেও ছুটি নিতি। সবার সামনে ছুটি চাওয়ার কি দরকার ছিল, ব্যাক্কল!”
রেহান সবার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে আবার বলতে শুরু করলো….)
.
রেহান- না, মানে নাফিসাকে নিয়ে শপিং এ যেতাম। তাই বলছিলাম…
.
রায়হান- তোমার ইচ্ছে।
.
রিয়াদ- আমিও যাবো শপিং করতে…
.
রেহান- স্কুলে যাবে কে? আমি….?
.
রিয়াদ- ১দিন অফ করলে কিছু হবে না। টিচারকে বলে দিবো ভাইয়ার বিয়ে ছিলো তাই আসিনি….
.
রায়হান- হাহাহা….. বুঝলেন বেয়াই সাহেব, আমার বড় ছেলের চেয়ে বেশি ইন্টেলিজেন্ট ছোট ছেলে।
.
রিজোয়ান- হাহাহা….
.
রেহান রুমে এসে দেখলো নাফিসা খাটে বসে পা ঝোলাচ্ছে। রেহান দরজা লক করে নাফিসার কাছে এসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বসলো।
.
নাফিসা- রেডি হয়ে অফিস যাও শশুর আব্বুর সাথে। বিকেলে যাবো শপিং এ।
.
রেহান- না, আজ ছুটি নিয়েছি।
.
নাফিসা- নো… কোনো ছুটি নেই। এখনই অফিস যাবে। যাও…
.
রেহান- কি হয়েছে তোমার? আমরা মাত্র কাল বিয়ে করলাম, আমাদের তো একটু আলাদাভাবে সময় কাটানো প্রয়োজন। হুম?
.
নাফিসা- বাকিরা কি ভাববে বলো তো। আর আমাদের বিয়ে নেক্সট উইকে আবার হবে। তাছাড়া বিয়ে হলেও অন্যকাজ রেখে বসে থাকবে এটা কেমন হলো! সব কাজ নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে, আর এর মাঝে যে সময়টুকু বাকি থাকবে সেটা ই আমরা ২জন মিলে উপভোগ করবো।
.
রেহান অবাক! বাচ্চা মেয়েটা এতো সিরিয়াস হয়ে গেছে কিভাবে! মাত্র এক দিনেই ওর মধ্যে বাচ্চাভাবটা হারিয়ে ম্যাচিউর ভাব এসে পড়েছে।
.
নাফিসা- কি হলো?
.
রেহান- ওকে মিসেস। যাচ্ছি অফিস।
.
রেহান বসা থেকে উঠতে যাবে নাফিসা আবার হাত ধরে বসিয়ে দিলো…
.
নাফিসা- রাগ করেছো?
.
রেহান মুচকি হেসে নাফিসার কপালে চুমু দিলো…
.
রেহান- না, রাগ করিনি। ভাবছি আমার বউ একদিনে কতটা ম্যাচিউর হয়ে গেছে। পাগলামী একেবারেই কমে গেছে। কিন্তু আমার সাথে পাগলামী করতে হবে অলটাইম। এটা বাদ দেয়া যাবে না।
.
নাফিসা উত্তরে শুধু মুচকি হাসলো।
.
রেহান গোসল করে এলে নাফিসা আলমারি থেকে শার্ট বের করে রেহানকে দিলো কিন্তু রেহান শার্ট নিলো না। এবার নাফিসা রেহানের দিকে চোখ পাকিয়ে শার্ট পড়িয়ে দিলো। রেহান হেসে নাফিসার কোমড় জড়িয়ে ধরে দাড়ালো আর নাফিসা কলার ঠিক করে শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে।
.
রেহান- বউ…
.
নাফিসা- হুম?
.
রেহান- আজ আম্মুর ফোন টা সাথে রাখবা। অফিসে থেকে কল করবো। বিকেলে শপিং এ গেলে তোমাকে ফোন কিনে দিবো।
.
নাফিসা- নো…. অফিসে কাজ করতে যাবে প্রেম করতে না। সো নো কল… আর ফোন আমার ই আছে, বিডি সিমকার্ড নেই ।
.
রেহান- কোথায় তোমার ফোন? একবারও তো দেখলাম না।
.
নাফিসা- আমার পার্সে।
.
রেহান- এমন করো কেন! কাজ তো করবোই, ফাকে ফাকে বউ এর সাথে প্রেম ও করবো।
.
নাফিসা- এমন করলে তুমি কাজ করতে পারবে না।
.
রেহান- পারবো…. কোথায় তোমার ফোন? দেখাও…
.
নাফিসাকে ছেড়ে আলমারি থেকে মোবাইলের বক্স নিয়ে সেখান থেকে একটা সিমকার্ড বের করলো আর নাফিসা লাগেজ থেকে পার্স বের করে ফোন দিলো রেহানের কাছে। রেহান সিম লাগিয়ে দিলো….
.
নাফিসা- তুমি আমি মিলে ১জন, সো ১বারের বেশি কল দিবে না।
.
রেহান- তুমি ১, আমি ১ এবং আমরা দুজন মিলে ১। টোটাল ৩টা দিবো। ওকে…..
.
নাফিসা- স্টুপিড।
.
রেহান- হাহাহা….. তোমার ড্রেস গুলো আলমারি তে জায়গা করে রেখে দিও। না পারলে আমি ফিরে রাখবো।
.
নাফিসা- ওকে
.
রেহান নাফিসার মুখটা ধরে ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো।
.
রেহান- আমার টা দিবে না?
.
নাফিসা- ইশ! আমার লজ্জা লাগে।
.
রেহান- লন্ডন যাওয়ার সময় দিয়েছিলে কেন! ওদিন লজ্জা লাগে নি! না দিলে অফিস যাবো না।
.
নাফিসা- স্টুপিড, চোখ বন্ধ করো….
.
রেহান- না….
.
নাফিসা এক সেকেন্ড সময় নিয়ে রেহানের গালে চুমু দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রেহান ও হাসতে লাগলো। তারপর বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো।
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here