বউ,Part- 4

0
834

বউ,Part- 4
writer: Nur_Nafisa
.
.
৩য় দিন….
সকালে রুবিনা চৌধুরী নামাজ পড়ার জন্য সবাইকে ডেকে উঠিয়ে দিলেন। সবাই নামাজ পড়ে নিলো। তারপর রায়হান চৌধুরী জগিং করার জন্য নিচে চলে এলেন, বাগানের পাশেই হাটাহাটি করছেন। নাফিসা ও এলো, সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে তার। সে দেখতে পেল রায়হান চৌধুরী অল্প কিছুক্ষণ হাটার পর পর ই দোলনায় বসে পড়ে।
.
নাফিসা- শশুর আব্বু, এভাবে ব্যায়াম করলে তো সারাজীবনেও মেদ কমবে না?
.
রায়হান- আচ্ছা! তাহলে কি করা যায়! একটানা ১ঘন্টা হাটলে তো আর তোমার শশুর আব্বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ?
.
নাফিসা- wait, I’m coming.
.
(নাফিসা দৌড়ে বাসায় এসে আবার দ্রুত নিচে নেমে এলো। হাতে ২টা কাপ। একটা রায়হান চৌধুরীকে দিলো। আর একটা সে নিজে রাখলো।)
.
রায়হান- গ্রিন টি!
.
নাফিসা- হুম, প্রতিদিন সকালে ১কাপ ও বিকেলে ১কাপ গ্রিন টি খেতে হবে আর টানা ১ঘন্টা হাটাহাটি করলেই এনাফ! অবশ্য এই বাসাটা ২বার রাউন্ড করলেই হয়।
.
রায়হান- হাহাহা…..? তুমি প্রতিদিন জগিং করো?
.
নাফিসা- হুম, আব্বুর সাথে আমার প্রতিযোগিতা চলে ?
.
রায়হান- আচ্ছা! তাহলে আজ আমার সাথে হয়ে যাক…
.
নাফিসা- ?ওকে….
.
( নাফিসা আর রায়হান চৌধুরী কাপ রেখে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ২বার বাসাটা রাউন্ড দিয়ে রায়হান চৌধুরী বললো…)
.
রায়হান- চলো এবার আমাদের ব্যায়ামাগার এ….
.
নাফিসা- কোথায়?
.
রায়হান- রেহানের পাশের রুমটাই তো।
.
নাফিসা- দেখিনি তো! আচ্ছা চলো…
.
(রায়হান ও নাফিসা ব্যায়ামাগার এ এসে দেখলো রেহান আর রিয়াদ এখানে ব্যায়াম করছে। রেহান যা করছে রিয়াদ তাকে দেখে তাই করছে। রিয়াদের ব্যায়াম করা দেখে রেহান হাসছে। রেহান হুট করেই রিয়াদকে কোলে তুলে নিয়ে ডাম্বেলের ন্যায় উপর নিচ করতে লাগলো।)
.
রেহান- তুই ই তো আমার ডাম্বেল ?
.
রিয়াদ- আয়ায়া…. ভাইয়া নামাও আমি ব্যায়াম করবো।
.
নাফিসা- এই মটো, তুমি তো এমনিতেই মটো, ব্যায়াম করলে তো আরো বেশি মটো হয়ে যাবে ?
.
(রায়হান চৌধুরী হাসতে লাগলো। রেহান নাফিসা ও তার বাবাকে দেখে রিয়াদকে নামিয়ে দিল।)
.
রিয়াদ- আব্বু দেখো তো ভাবি আমাকে মটো বলে, আমি কি মোটা! অন্যদিকে আমার ফ্রেন্ডস আমাকে শুটকি বলে ?
.
রায়হান- হাহাহা….. যারা তোমাকে শুটকি বলবে তুমি তাদের মটো বলবে, আর যারা তোমাকে মটো বলবে তাকে তুমি তাদের শুটকি বলে দিবে…. ব্যাস?
.
রেহান- এগুলো ই শিখিয়ে দাও, তারপর মারামারি করে আসুক?
.
নাফিসা- মটো আমার দেয়া কিছু রুলস ফলো করবে তাহলেই পারফেক্ট হয়ে যাবে….
.
রিয়াদ- আচ্ছা বলো কি করতে হবে….
.
নাফিসা- বেশি বেশি ভাত খেতে হবে আর প্রতিদিন বিকেলে একটু খেলাধুলা ? এখন চলো স্কুলে যাবে না! HW রেডি করতে হবে…
.
রিয়াদ- ওকে।
.
(নাফিসা ও রিয়াদ চলে গেলো।)
রায়হান- একটু পাগলী টাইপের হলেও মেয়েটি খুব ভালো রেহান।
.
রেহান- (হুহ! ২দিনেই একেবারে মাথায় তুলে নিয়েছে! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একে বিদায় করলেই বাচি।) আব্বু পত্রিকায় তো কিছু পেলাম না।
.
রায়হান- মাত্র তো একদিন গেল। আরও ২টা দিন দেখি।
.
রেহান- আচ্ছা।
.
(রেহান রুমে এসে দেখলো নাফিসা তার রুম থেকে বের হচ্ছে হাতে হলুদ টিশার্ট।)
.
রেহান- ? এই তুমি আমার টিশার্ট নিয়ে কোথায় যাচ্ছো!
.
নাফিসা- এটা আমি রাতে পড়বো।
.
রেহান- কেন তোমাকে ড্রেস এনে দিয়েছি না। আমার টা কেন নিচ্ছো? আর কার কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছো!
.
নাফিসা- হাসব্যান্ড এর ড্রেস নিতে আবার পারমিশনের প্রয়োজন হয়!?
.
রেহান- হোয়াট!!!!! ? কে তোমার হাসব্যান্ড?
.
নাফিসা- কেন, তুমি ?
.
রেহান- এই ষ্টুপিড মেয়ে, আমি তোমার হাসব্যান্ড হলাম কবে! টিশার্ট দাও বলছি….
.
নাফিসা- না দিবো না…. এটা আমার ভালো লেগেছে, আমি পড়বো।
.
রেহান- দিতে বলেছি দাও?
.
(টানাটানি শুরু করে দিলো রেহান।)
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মু……..! .
.
রুবিনা- (কিচেন থেকে) কি হয়েছে…?
.
নাফিসা- আমাকে টিশার্ট দেয় না তোমার বড় ছেলে….
.
রুবিনা- রেহান দিয়ে দে….
.
রেহান- আম্মু এটা আমার। আমি কেন দিবো!
.
নাফিসা- এএএএএ…..?
.
রুবিনা- রেহান দিয়ে দে….
.
(রেহান, রেগে ছেড়ে দিলো।)
রেহান- আউট…. ? নেক্সট টাইম আমার রুমের আশেপাশে যেন না দেখি….
.
নাফিসা- ? বললেই হলো! আমার রুম! যখন ইচ্ছে তখন আসবো। তোমার কি!
.
(নাফিসা আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।)
.
রেহান- আসলেই একটা পাগল! পাবনার পাগলাগার থেকে পালিয়ে আসেনি তো! ? আবার আমার ফ্যামিলিকে পাগল করে দিবে নাতো!
.
নাফিসা- ( রিয়াদের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে) মটো আজও আমরা গার্ডেনে গোসল করবো, ওকে?
.
রিয়াদ- ওকে?।
.
নাফিসা আজ রুবিনার সাথে রান্না করেছে। রিয়াদ স্কুল থেকে ফিরলে তারা আজও গার্ডেনে পানি দিয়েছে ও গোসল করেছে। লাঞ্চ করে বাগানে চলে গেলো রিয়াদের সাথে। অনেক ফুল আছে বাগানে, পুরো বাগান ফুলে ভরে আছে।
.
নাফিসা- মটো, শাশুড়ী আম্মুর ফোন নিয়ে আসো ছবি তুলবো।
.
রিয়াদ- ওকে….
.
( রিয়াদ দৌড়ে গিয়ে ফোন নিয়ে এলো। তারপর নাফিসার কাছে দিলো।)
.
নাফিসা- এটা তো শাশুড়ী আম্মুর না! কার টা নিয়ে এসেছো?
.
রিয়াদ- ভাইয়ার টা। আম্মুর কাছে যেতেই দেখলাম সেন্টার টেবিলে ভাইয়ার ফোন। মনে হয় ভুলে বাসায় রেখে গেছে। তাই এটাই নিয়ে এসেছি।
.
নাফিসা- ওকে, যার ই হোক ছবি তুলতে পারলেই হলো….
.
(তারপর বিভিন্ন স্টাইলে নাফিসা ও রিয়াদ অনেক ছবি তুললো। আবার বিকেলে ক্রিকেট খেলেছে। সন্ধ্যায় রিয়াদকে পড়াচ্ছে। রেহান এসেছিলো পড়াতে, আজও নাফিসাকে দেখে রেগে নিজের রুমে চলে গেলো। সবার সময় নাফিসার সাথে ভালো কাটে। রেহানের সময় যেন কাটছেই না। অন্যান্য দিন এ সময়টা পার করতো নেহার সাথে ফোনে কথা বলে, রিয়াদের সাথে দুষ্টুমি করে, রিয়াদকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে। রিয়াদ নাফিসাকে পেয়ে যেন তার ভাইকে ভুলেই গিয়েছে। আব্বু আম্মুর সাথেও কত দুষ্টুমি করতো, এখন আব্বু আম্মুও যেন নাফিসাকে পেয়ে রেহানকে ভুলে গেছে। সবাই নাফিসার সাপোর্ট করে। মেয়েটা আসার পর রেহানের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। ভালো লাগছে না কিছু তার।)
.
নাফিসা- মটো, ফ্যামিলি সম্পর্কে ফ্রেন্ডের কাছে চিঠি লিখতে বলেছে। পারবে না?
.
রিয়াদ- হুম। তুমিও কিছু লিখো না। তোমার লেখা দেখি কতো সুন্দর।
.
নাফিসা- আমার ইংলিশ লেখা একটু সুন্দর হলেও বাংলা লেখা একদম বাজে…
.
রিয়াদ- হোক বাজে, তাও লিখো।
.
নাফিসা- কি লিখবো!
.
রিয়াদ- তুমিও এরকম চিঠি লিখো, একটা রেস হয়ে যাক কার লেখা আগে শেষ হয় ?
.
নাফিসা- ?ওকে… স্টার্ট নাও…..
.
( দুজনেই লেখা শেষ করে নিলো। রুবিনা ডিনার করার জন্য ডাকলে সবাই একসাথে ডিনার করে নিলো। নাফিসা ডিনার শেষে সোজা রেহানের রুমে এসে রেহানের ফোন নিয়ে বিকেলে তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগলো। রেহান নিজের রুমে ফিরে দেখে নাফিসা তার খাটে হেলান দিয়ে রেহানের ফোন নিয়ে বসে আছে। )
.
রেহান- তুমি এখানে কেন?
.
নাফিসা- ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি।
.
রেহান- নিজের রুমে যাও… আমি ঘুমাবো।
.

নাফিসা- who is she?
.
(রেহানের সামনে ফোন ধরে জিজ্ঞেস করলো। রেহান দেখলো নেহার ছবি দেখছে! )
রেহান- আমার ফোন ধরেছো কেন? ফোন দাও?
.
নাফিসা- না দিবো না, আগে বলো কে? তোমার গার্লফ্রেন্ড?
.
রেহান- ফোন দিতে বলেছি….
.
নাফিসা- আগে বলতে হবে….
.
রেহান- (চিৎকার করে) এই মেয়ে, তোমার কাছে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে! ? কি পেয়েছো কি! হ্যাঁ! কখনো আমার রুম দখল করে নিচ্ছো, কখনো আমার টিশার্ট, আমার আব্বু আম্মুকে ও নিজের সাপোর্টার বানিয়ে নিয়েছো, আমার ভাইটাকেও আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছো। একে একে সব দখল করে নিচ্ছো। এখন আমার ফোন ও দখল করে নিতে চাইছ। কি চাইছো কি তুমি! আমার সকল আনন্দ শেষ করে দিয়েছো! রাস্তা থেকে আমি ঘরে কালসাপ তুলে এনে ঠাই দিয়েছি! বের হও আমার চোখের সামনে থেকে ?
.
(রেহানের আচরণে নাফিসা খুব কষ্ট পেয়েছে। রেহানের হাতে ফোন দিয়ে কান্না করতে করতে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।রেহানের খুব বিরক্ত লাগছে সব।)
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here