বউ,Part- 5,6

0
844

বউ,Part- 5,6
writer:Nur_Nafisa
পার্ট-5
.
কিছুক্ষণ পর,
রিয়াদ- আম্মু ভাবি কোথায়? ভাবি ঘুমাবে না?
.
রুবিনা- দেখ রেহানের রুমে না হয় নাফিসার রুমে হবে হয়তো।
.
রিয়াদ- রেহান ভাইয়ার রুমে ভাইয়া একা, আর বাকি সব রুমে দেখেছি ভাবি নেই। আমি ভাবলাম ভাবি তোমাদের রুমে এসেছে।
.
রায়হান- এখানে আসেনি তো। ড্রইং রুমে ও নেই?
.
রিয়াদ- না।
.
রায়হান- কি বলিস! কোথায় গেছে তাহলে?
.
( রুবিনা, কিচেনে দেখে এলো সেখানে নেই। কিচেন থেকে বের হতেই দেখলো মেইন দরজা খোলা। সবাই তো বাসায় ই আছে তাহলে মেইন দরজা খুললো কে! নাফিসা আবার এতো রাতে বাইরে বেরিয়ে যায়নি তো! এদিকে রিয়াদ আর রায়হান চৌধুরী রেহানের কাছে গেলো।)
.
রায়হান- রেহান, নাফিসা কোথায়?
.
রেহান- জানিনা।
.
রায়হান- সেকি! তাহলে কোথায় গেছে মেয়েটা!
.
রেহান- ? কোথায় গেছে মানে! ঘরে নেই?
.
রিয়াদ- না..
.
(রুবিনা রেহানের রুমে এলো দৌড়ে)
রুবিনা- মেইন দরজা খোলা কেন? নাফিসা কি বাইরে বের হয়েছে!
.
(কথাটা শুনে রেহানের মনে ছ্যাত করে উঠে! রেহান তো নাফিসাকে চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে! সে কি এতো রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে! রেহান দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো।)
রেহান- ঘরে দেখেছো তো ভালো করে?
রিয়াদ- হ্যা আমি সব দেখেছি। ভাবি আবার ছাদে চলে যায়নি তো!
.
রেহান- আব্বু তুমি ছাদে দেখে আসো আমি নিচে যাই…
.
(কথা বলে রেহান ফোন নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে এলো। গেইট তো তালা দেয়া। ইকবাল ভাই(দারোয়ান) তো এখনেই ঘুমাচ্ছে! দারোয়ান কে ডেকে তুললো রেহান)
রেহান- ভাইয়া, নাফিসাকে দেখেছো?
.
দারোয়ান- নাফিসা আবার কেডা?
.
রেহান- আরে আমাদের বাসায় যে মেয়ে থাকে, তাকে দেখেছো?
.
দারোয়ান- অ… বড় ভাবি?
.
রেহান- ( এই লোক ও ভেবে নিয়েছে আমার #বউ !) হ্যাঁ…. এখন দেখেছো তাকে?
.

দারোয়ান- না তো। বিকালে দেখছিলাম।
.
রেহান- গেইটে তালা লাগিয়েছো কখন?
.
দারোয়ান- সন্ধ্যায়। আপনারা ইশার নামাজ পড়ে আইছেন পরে।
.
রেহান- (তাহলে তো বাইরে বের হতে পারবে না! কোথায় গেছে! ঘরেই কোথাও লুকিয়ে আছে হয়তো! কিন্তু আম্মু যে বললো মেইন দরজা খোলা ছিলো! আবার ঘরের দিকে যেতে নিলে এমনি ফোন টা বেজে উঠে )
হ্যালো আব্বু, পেয়েছো?
.
রায়হান- না, ছাদে নেই।
.
রেহান- আচ্ছা আমি আস….
(ফোনে কথা বলতে বলতে গেইট থেকে বাসার দিকে পা বাড়াতেই বাগানের সাইডে চোখ আটকে গেল। মনে হচ্ছে দোলনা টা দুলছে। হালকা আলোতে কাউকে দেখা যাচ্ছে, নিশ্চয়ই নাফিসা ছাড়া কেউ না!)
আব্বু তুমি রুমে যাও, নাফিসাকে পেয়েছি। আমি ওকে নিয়ে আসছি….
.
রায়হান- ওকে।
.
(রেহান দোলনার কাছে গেল। দেখলো নাফিসা হাত পা দোলনায় তুলে হাটুতে মুখ গুজে কাচুমাচু হয়ে বসে কান্না করছে।)
.
রেহান- এখানে বসে আছো কেন? সবাই এদিকে খুঁজে হয়রান! চলো বাসায় চলো….
.
(নাফিসা মুখ তুলে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান তার চেহারা দেখে খুব কষ্ট পেল! কান্না করে চোখ মুখ ফুলে গেছে! রেহানের এখন নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে! কেন সে বকা দিতে গেলো! অন্যদের মতো সে ও তো বুঝতে পেরেছিল মেয়েটির আচরণ একটু আলাদা!কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে রেহান! )
রেহান- নাফিসা, বাসায় চলো। আব্বু আম্মু সবাই টেনশন করছে…
.
নাফিসা- যাবো না আমি। আ.. আমি আব্বু আম্মুর কাছে যাবো… ?
.
রেহান- (নাফিসার কাছে দোলনায় বসে) sorry ওসব বলার জন্য….
.
(নাফিসা লাফ দিয়ে দোলনা থেকে নেমে গেলো। ডুকরে কান্না করতে করতে… )
.
নাফিসা- আমার কাছে আসবে না… আমি মরে যাবো…. একটুও কাছে আসবে না। আব্বু আমাকে নিয়ে যাওওওও ?
.
রেহান- ?
.
(রেহান দোলনা থেকে উঠে দাড়ালে নাফিসা আরও ২পা পিছিয়ে গেলো। তারপর রেহান রায়হান চৌধুরীকে কল করে বললো নিচে আসতে… রায়হান চৌধুরী এসে নাফিসাকে অনেক কৌশলে মানিয়ে বাসায় নিয়ে এলো। রেহান ও নিজের রুমে চলে এলো। সে শুধু ভাবছে নাফিসার সাথে এমন ব্যবহার করা একদম উচিত হয়নি তার। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে নেহার ছবিগুলো সব কাটতে লাগলো। আগেই কেটে দিতো, কিন্তু মনে ছিলো না।নেহার ছবি কেটে অন্য ফাইলে দেখলো নাফিসার ছবি!? নাফিসার ছবি এখানে কিভাবে! রেহান বাকি সব ছবি দেখতে লাগলো। এবার বুঝতে পেরেছে, আজ বাসায় ফোন রেখে যাওয়ায় নাফিসা আর রিয়াদ ছবিগুলো তুলেছে! বিভিন্ন ভঙ্গিতে অনেক ছবিই তুলেছে। অজান্তেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো ?)
.
৪র্থ দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নাফিসা একদম চুপচাপ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কোনো কথা বলছে না। কোনো দুষ্টুমি ও করছে না। রেহানের দিকে তো তাকাচ্ছে ও না! রুবিনা ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডেকে নিয়ে এসেছে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে গেলো। সবাই ই একটু আপসেট। চঞ্চল মেয়েটার নিরবতা কারো কাছে ভালো লাগছে না। রেহান বসে টিভি দেখছিল, রিয়াদ ব্যাগে টিফিন রাখতে গিয়ে দেখলো নাফিসার চিঠিটা ও তার ব্যাগে!
.
রিয়াদ- ওফ! ভাবির চিঠিও আমার ব্যাগে! ভাইয়া এটা ভাবির কাছে দিয়ে দিও তো আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই….
.
রেহান- ওকে। নাফিসার চিঠি মানে!
.
রেহান কাগজ টা খুলে চিঠিটা পড়তে লাগলো….. প্রাপকের নামটা দেখেই হাসি পেল – এলেক্স!?। এবার উৎসাহ নিয়ে বাকিটা পড়তে লাগলো…..
.
ডিয়ার এলেক্স,
আশা করি ভালো আছিস। আমিও ভালো আছি আমার হাসব্যান্ড, দেবর, শশুর আব্বু, শাশুড়ী আম্মুকে নিয়ে। আব্বু আম্মু কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! জানিস, আমার হাসব্যান্ড রেহান চৌধুরী অনেক হ্যান্ডসাম, ছোট ভাইটা রিয়াদ চৌধুরীও অনেক কিউট। দুই ভাই ই কিউটের ডিব্বা। অনেক ফর্সা। চুল গুলো সিল্কি সিল্কি। পারফেক্ট বডি। দুই ভাই লাল টিশার্ট পড়লে একদম হিরো হিরো লাগে! হবেই না কেন! আমার শশুর আব্বু ও শাশুড়ী আম্মুও অনেক ফর্সা ও কিউট। আমিও আমার হাসব্যান্ড এর লাল টিশার্ট পড়ে ঘুমাই, আবার একটা হলুদ ও নিয়েছি। রিয়াদের সাথে তো আমি প্রতিদিন ই ক্রিকেট খেলি আবার গার্ডেনে পানি দিতে গিয়ে গোসল করি রিয়াদ ই বললো আজ আমাকে ফ্যামিলি সম্পর্কে ফ্রেন্ডের কাছে চিঠি লিখতে।
অনেক কিছু লিখে ফেলেছি। আর জানতে দিবো না তোকে। বাংলা বুঝতে কষ্ট হলে ইংলিশে ট্রান্সলেশন করে নিস। বাই বাই বেবি….
.
( চিঠিটা পড়ে রেহান হাসতে লাগলো। ভাবছে পাগলী মেয়েটা সত্যিই রেহানকে তার বর ভেবে নিয়েছে। আর তার পরিবারকে নিজের পরিবার হিসেবে নিয়েছে! রেহানের কাছে নাফিসাকে অন্যরকম ভাবে ভালো লাগতে শুরু করেছে।
রেহান চিঠিটা নিয়েই নাফিসার কাছে গেলো। রিয়াদের রুমের দরজার সামনে যেতেই নাফিসা রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিল, রেহান পথ আটকালো। নাফিসা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, রেহানকে একবার ও দেখছে না।)
.
রেহান- নাফিসা, সরি…..
.
(নাফিসা কিছু না বলে ডান দিক দিয়ে আসতে চাইলে রেহান ডানদিকে চেপে পথ আটকে আবার বললো “সরি” এবার বাম দিকে পাশ কাটাতে চাইলে রেহান বামদিকে চেপে পথ আটকে আবার বললো “সরি”। এবার নাফিসা পেছনে সরে গিয়ে ধপাসস করে দরজা লাগিয়ে রুমে বসে রইলো! রেহান হতাশ হয়ে ফিরে এলো ড্রয়িং রুমে ?)
.
রায়হান- অফিস যাবি না?
.
রেহান- হুম।
.
রায়হান- ৩দিন কেটে গেছে, পত্রিকায় তো তেমন কোনো নিউজ পেলাম না। এবার আমরাই নিউজ টা দেই। আজ অফিস থেকে তুই ছাপাখানায় নিউজ দিয়ে আসিস….
.
রেহান- ?!
.
.
চলবে…..

বউ
Part- 6
writer: Nur_Nafisa
.
.
বিকেলে রেহান ও তার বাবা একসাথে বাসায় ফিরলো। প্রতিদিন এসময় বাসায় ফিরে দেখে নাফিসা আর রিয়াদ বাসার সামনে ফাকা জায়গায় ক্রিকেট খেলে কিন্তু আজ খেলছে না।
.
রায়হান- আজ খেলোয়াড়রা কোথায়!
.
রেহান- মুড অফ!
.
রায়হান- কি বলেছিস এমন মুড অফ হয়ে গেছে!
.
রেহান- উচু গলায় কথা বলাতেই এমন।
.
রায়হান- মেয়েটা একটু অন্যরকম। হয়তো ছোট থেকে বেশি আদরে লালিত পালিত হয়েছে। এমন বিহেভ করিস না ওর সাথে।
.
রেহান- তোমাদের মতো তো এতো সহজে সব বুঝতে পারি না!?
.
রায়হান- ছাপাখানায় গিয়েছিস?
.
রেহান- ☹️ না, মনে ছিল না।
.
রায়হান- আচ্ছা কাল যাবি….. এখন তো কিছু একটা করে মুড টা অন করতে হবে, ?
.
রেহান- হুম?.
.
(কথা বলতে বলতে বাবা ছেলে গাড়ি পার্কিং করে দোতলায় চলে এলো। রুবিনা দরজা খুলে দিলো)
.
রায়হান- বউ মা কোথায়?
.
(রেহান বাবার কথা শুনে ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো।)
.
রুবিনা- বাব্বাহ! এসেই বউ মায়ের খোজ! রিয়াদের রুমে আছে। পেইন্টিং করছে রিয়াদের সাথে।
.
রায়হান- মুড কি অন হয়েছে?
.
রুবিনা- মনে হয় ২০%….
.
রেহান- সারাদিন বাসায় থেকে মাত্র ২০% ঠিক করেছো!?
.
রায়হান- হাহাহা….. ? তোর মায়ের জন্য এটাই অনেক!
.
রুবিনা- চুপ থাক, তুই কোন কথা বলবি না। তোর জন্যই তো সারাদিন মেয়েটা মুড অফ করে রেখেছে! ভাগ্যিস কাল গেইট খোলা ছিলো না। সবসময় না বুঝে বেশি বেশি করে ফেলিস?
.
রেহান- আচ্ছা, বললাম না কোন কথা।
.
(তারপর রেহান রিয়াদের রুমে একবার উকি দিয়ে আবার নিজের রুমে চলে এসে ফ্রেশ হলো। তোয়াল নিয়ে চুল মুছছে এমনি রিয়াদ এসে হাজির)
.
রেহান- তুই এখানে কেন?
.
রিয়াদ- তোমার ফোন দাও।
.
রেহান- কেন?
.
রিয়াদ- ভাবি বলেছে।
.
(রেহান নাফিসার কথা শুনে আর কিছু না বলে ফোন দিয়ে দিলো রিয়াদের কাছে। কিন্তু রিয়াদ ফোন নিয়ে নাফিসার কাছে যায়নি। এই রুমে দাড়িয়েই কিছু করছে।)
.
রেহান- কি করছিস তুই? এখন না বললি নাফিসা বলেছে ফোন নিয়ে যেতে?
.
রিয়াদ- ভাবি ফোন নিয়ে যেতে বলেনি ফোন থেকে ভাবির সব ছবি ডিলিট কিরে যেতে বলেছে। আমি সেটাই করছি।
.
রেহান- ?
.
(রেহান দ্রুত রিয়াদের হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলো)
.
রেহান- যা বের হ এখান থেকে ?
.
রিয়াদ- তুমি এমন করছো কেন! যার ছবি সে ই তো বলেছে ডিলিট করতে।
.
রেহান- যেতে বলেছি এখান থেকে ?
.
(রিয়াদ চলে গেলো। রেহানের প্রচুর রাগ হচ্ছে রিয়াদের উপর। ছবি গুলো চেক করে দেখলো কয়েকটি ডিলিট করে ফেলেছে এখনও অনেক বাকি আছে। তারপর ফোনের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিলো। এবার রেহান রিয়াদের রুমে এসে দেখলো নাফিসা আর রিয়াদ খাটে বসে পেইন্টিং করছে জল রঙ দিয়ে। রেহান ও তাদের পাশে বসলো। নাফিসা দেখেও না দেখার মতো নিজের কাজ করতে লাগলো। রেহান লক্ষ করলো নাফিসা চমৎকার একটা দৃশ্য অঙ্কন করছে। দৃশ্যটা রাতের। বিশাল সমুদ্রের তীরে একসাথ ৩টি নারিকেল গাছ, আকাশে চাঁদ, চাদের ঠিক বরাবর পানিতে কিছু একটা আকছে, নৌকা হবে হয়তো। এখনো এটা কমপ্লিট হয়নি। )
.
রেহান- রিয়াদ, আম্মু তোকে ডাকছে।
.
রিয়াদ- কেন?
.
.
রেহান- আমি কি জানি! গিয়ে দেখ, কিছু দিবে হয়তো তোকে…
.
(রিয়াদ দৌড়ে চলে গেলো।)
রেহান- নাফিসা, সরি বলেছি তো! এমন চুপচাপ থাকলে তোমাকে একদম ভালো দেখায় না।
.
(নাফিসা তার কথায় কোন রেসপন্স করছে না। নিজের কাজ করতে ব্যস্ত)
.
রেহান- সরি, #বউ….
.
নাফিসা- ?
.
(এবার নাফিসা রেহানের দিকে তাকালো শুধু, কিন্তু কিছু বললো না। রেহান একটু মুচকি হাসলো। তারপর রঙের কোটা থেকে আঙুল দিয়ে একটু নীল রঙ নিয়ে নাফিসার নাকে লাগিয়ে দিয়ে আবার বললো…..)
.
রেহান- সরি বউ….?
.
নাফিসা- ??
.
(ব্যাস দিলো রাগিয়ে…. নাফিসা তার আর্ট পেপার টা সাইডে রেখে এক হাত পুরো রঙে মেখে রেহানের মুখে মেখে দিলো তারপর নাফিসা খিলখিল শব্দ করে হাসতে লাগলো। রেহানকে পুরো বেড়ালের মতো দেখাচ্ছে । রেহান এবার রঙের ব্রাশটা নিয়ে নাফিসার গালে রঙ লাগিয়ে দৌড় দিতে গেলে রিয়াদ দরজার সামনে আটকিয়ে ধরলো, টেনে রেহানের টিশার্ট ধরে রইল। তারপর নাফিসা রঙের ট্রে নিয়ে সব রঙ রেহানের গায়ে ঢেলে দিলো। তার সাদা টিশার্ট বিভিন্ন রঙে রঙিন হয়ে উঠলো। রিয়াদ আর নাফিসা এবার প্রাণ খুলে হাসতে লাগলো। রেহান কিছুটা তৃপ্তি পেল নাফিসার হাসি দেখে।?তারপর রেহান বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ড্রয়িং রুমে রুবিনা ও রায়হান চৌধুরী ছেলেকে দেখে অবাক!?)
.
রুবিনা- একি অবস্থা তোর!
.
রায়হান- রঙের পুকুরে ঝাপিয়ে এসেছিস নাকি!?
.
রেহান- রঙের পুকুরে ঝাপাইনি, তোমার বউ মায়ের মুড ১০০% অন করে এলাম।।
.
রুবিনা- হাহাহা….. ?
.
(এরই মাঝে রিয়াদ এসে কান্না করতে করতে রেহানকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিতে লাগলো। রেহান দৌড়ে গিয়ে বাবার পেছনে লুকালো। রিয়াদ তাকে ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। )
.
নাফিসা- হিহিহিহি….. ?
.
রুবিনা- এই কি শুরু করলি!?
.
রেহান- (এই ছেলের আবার কি হলো! এখন ই না হাসছিল!) এই তুই আমাকে মারছিস কেন?
.
রায়হান- (রিয়াদকে কোলে নিয়ে) আরে! আরে! কি হয়েছে?
.
রিয়াদ- আব্বু, ভাইয়া আমাকে মিথ্যে বলে আম্মুর কাছে পাঠিয়ে ওইদিকে আমার সব রঙ নষ্ট করে দিয়েছে ???
.
রুবিনা- তোদের নিয়ে আর পারিনা!?
.
রেহান- এই রঙ তো আমিই এনে দিয়েছি?
.
রায়হান- নষ্ট করেছে তো কি হয়েছে! জরিমানা স্বরূপ রেহান রিয়াদকে আবার এনে দিবে। ?
.
রিয়াদ- কালকের মধ্যে আমার নিউ কালার বক্স চাই। ?
.

রেহান- এএএএ!?
.
(রাতে রায়হান চৌধুরী নাফিসাকে কেরাম খেলার প্রস্তাব দিলো। নাফিসার মুড এখন সম্পূর্ণ ঠিক হয়েছে। রিয়াদের ছোট কেরাম বোর্ডে খেলছে নাফিসা, রেহান, রিয়াদ ও রায়হান চৌধুরী। রুবিনা তাদের পাশে বসে খেলা দেখছে। সবাই লক্ষ করলো নাফিসা খুব দক্ষতার সাথে খেলছে।)
.
রায়হান- নাফিসা তো দেখছি একদম পাক্কা খেলোয়াড়!
.
নাফিসা- ?হুম, আমি সব খেলাতে ই চ্যাম্পিয়ন। আব্বু আমাকে শিখিয়েছে সব। আব্বুর সাথে প্রায়ই খেলি।
.
(বাবার কথা মনে করে যাতে আবার কান্না না করে সেজন্য রায়হান চৌধুরী কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন)
রায়হান- আচ্ছা! কি কি খেলা খেলতে পারো তুমি?
.
নাফিসা- ক্রিকেট, হকিস্টিক, ফুটবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, কেরাম, দাবা, লুডু, কার রেস, ফাইটিং।
.
রেহান- ?
.
রুবিনা- ওয়াও, লুডু আমার প্রিয় খেলা?
.
রায়হান- তুমি লুডু ছাড়া আর পারোই কি!?
.
রুবিনা- ?
.
সবাই- হাহাহা…… ?
.
রায়হান- তাহলে তো তোমার সাথে একদিন দাবা খেলে দেখতেই হয়!
.
রেহান- হুহ! এখন আমি বাদ?
.
রায়হান- হিংসুটে ছেলে ?
.
(তারপর সবাই ডিনার করে যার যার রুমে চলে গেলো। নাফিসা রিয়াদের সাথে বিছানায় শুয়ে গল্পের বই পড়ছে ভুতের গল্প। সম্পূর্ণ গল্পটি নাফিসা পড়ে শুনালো। দুজনেরই এখন ভয় লাগছে।)
(রেহান লাইট অফ করে শুয়ে ছিলো। হঠাৎ কেউ দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললো। রেহান টেবিল ল্যাম্প টা জালিয়ে দেখিলো রিয়াদ ও নাফিসা দুজনেই বালিশ নিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।)
.
রেহান- কি হয়েছে? তোমরা এখানে কেন?
.
(নাফিসা ও রিয়াদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রেহানকে কোন উত্তর না দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে দৌড়ে এসে রেহানের দুপাশে দুজনে রেহানকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়লো!)
.
রেহান- আরে আরে! কি হচ্ছে এসব!
.
নাফিসা- ভুত….!???
.
রেহান- কিসের ভুত! কোথায় ভুত!
.
রিয়াদ- ভাইয়া, ওই রুমে ভুত আছে, ভয় করছে। আজ তোমার সাথে থাকবো।
.
রেহান- ভুত বলতে কিছু নেই। যা ওই রুমে যা….
.
নাফিসা- নো নো, ভয় লাগছে খুব। প্লিজ আজ এখানে থাকবো ?
.
(রেহান আর কিছু বললো না। একসাথেই ৩ জন ঘুমিয়ে পড়লো।)
.
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here