বউ,Part- 7,8

0
798

বউ,Part- 7,8
writer:Nur_Nafisa
Part- 7,
.
৫ম দিন
(সকালে রেহানের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলেই নাফিসার চেহারাটা দেখলো, কারণ রেহান ও নাফিসা পাশ ফিরে মুখোমুখি শুয়ে আছে । নাফিসা ১ হাতে রেহানের গলা জড়িয়ে আছে। আর রিয়াদ পেছন থেকে হাত পা সব রেহানের উপর তুলে দিয়েছে। একটু নড়াচড়া করার সুযোগ নেই রেহানের। নাফিসার মুখটা রেহানের খুব কাছে। ঘুমন্ত মুখটা খুবই মায়াবী দেখাচ্ছে। ফর্সা মুখের ঠোঁট গোলাপি, চোখের পাপড়ি ও ব্রু ঘন কালো। রেহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাকে। আর মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা সত্যি সত্যি তার #বউ হলে সমস্যা কি! না কোনো সমস্যা নেই! এখন তো আর নেহার সাথে বা অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই রেহানের ! আর মেয়েটা নিজেই তো রেহানের #বউ বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। নাফিসার দিকে তাকিয়ে ভাবনার মুহুর্তেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর মুখ ফসকে অস্ফুট স্বরে একটি শব্দ বেরিয়ে এলো “#বউ ” ?।
রেহান বেশ কিছুক্ষণ নাফিসার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর জানালার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাইরে আলো ফুটতে শুরু করেছে, নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সে কোন মতো নিজের ১টা হাত মুক্ত করে নাফিসার হাতটা সরিয়ে রিয়াদের হাত পা ও সরালো। তারপর রিয়াদ ও নাফিসাকে ডাকতে শুরু করলো। নাফিসা ঘুমের মধ্যেই রেহানের গলা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে বলতে লাগলো, “আম্মু ঘুমাতে দাও তো। এখন উঠবো না।” রেহান হাসলো তার কথা শুনে। আবার নাফিসার হাত সরিয়ে রিয়াদকে ঠেলে বিছানা থেকে নেমে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো দুজনকে। দুজনেই লাফিয়ে উঠে।)
.
রিয়াদ- ওফ! ভাইয়া সকাল সকাল কি শুরু করেছো!
.
রেহান- দ্রুত উঠে নামাজ পড়, না হলে আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসবো এখন।
.
(সবাই উঠে নামাজ পড়ে নিলো। রেহান ব্যায়ামাগার থেকে জানালা দিয়ে দেখতে পেল রায়হান চৌধুরী, রুবিনা চৌধুরী ও নাফিসা নিচে হাটাহাটি শুরু করেছে। রেহানও রিয়াদকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে যোগ দিলো সাথে একটা ফুটবল নিয়ে গেলো।)
.
রায়হান- সকাল সকাল ফুটবল!
.
রেহান- ফুটবল খেলাটা ও অন্যরকম একটা ব্যায়াম ?
.
রুবিনা- ? তোদের ব্যায়ামের আর কতো কৌশল দেখবো!
.
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মু, তুমি ব্যায়াম খুব কম করো কেন ! ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে।
.
রুবিনা- আল্লাহর রহমতে আমি এমনিতেই পারফেক্ট। আর তোমার শশুর আব্বুকে দেখো এতো ব্যায়ামের পরও মেদ বাড়িয়ে নিয়েছে! ? ?
.
রায়হান- ?(রুবিনাকে) সারাটাজীবন আমার সাথে এভাবে লেগে থাকো কেন বলতো!
.
নাফিসা- বেশি ভালোবাসে বলে ?
.
(রুবিনা কিছু বলার আগেই নাফিসা উত্তর দিয়ে পা দিয়ে বল ঠেলতে ঠেলতে তাদের থেকে সামনে এগিয়ে গেলো, পিছু পিছু রিয়াদ ও ছুটলো। আর বাকিরা সবাই ই মুচকি হাসলো। কারণ ভুল বলেনি তো নাফিসা। সত্যি কথাটাই বলে গেছে। বাবা মায়ের মুখে প্রশান্তির হাসি দেখে রেহানের ও খুব ভালো লাগলো তারপর রেহানও দৌড়ে নাফিসা ও রিয়াদের কাছে গিয়ে ৩জনে ফুটবল খেলতে লাগলো। মি. ও মিসেস চৌধুরী দোলনায় বসে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা তাদের বাড়িতে এসে সবাইকে আনন্দিত করে রাখছে। রিয়াদ খেলার সাথি পেয়েছে, রেহান ছেলেটা নেহার সাথে ব্রেকাপের পর একদম বিষন্ন থাকতো এখন সে ও কতো আনন্দিত। দুজনেই সন্তানদের কথা ভেবে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এই পরিবারের সবাই সবার সাথে ফ্রী। রেহান নেহার কথাও বাবা মায়ের কাছে লুকায়নি। প্রত্যেকেই বন্ধুসুলভ আচরণ করে একে অপরের সাথে।)
.
(ব্রেকফাস্টের পর রিয়াদ স্কুলে চলে গেছে, রেহান ও রায়হান চৌধুরী অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। আর নাফিসা ও রুবিনা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় কলিং বেল বাজলে রুবিনা উঠে দরজা খুলে দেখলো নেহা এসেছে।)
নেহা- কেমন আছেন আন্টি? ?
.
রুবিনা- আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
.
নেহা- এইতো ভালো। রেহান বাসায় নেই?
.
রুবিনা- হ্যাঁ, আছে। অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। আসো ভেতরে এসে বসো।
.
(নেহা রুবিনার সাথে ড্রইং রুমে এসে বসলো। সোফায় বসতেই নাফিসার দিকে চোখ পড়লো। এর আগে ২বার এসেছে এ বাড়িতে, কখনো এই মেয়েকে দেখেনি। আর নেহার জানামতে রেহানের কোন বোন নেই। তাহলে ও কে! নাফিসা একবার নেহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিল।)
.
রুবিনা- নেহা ব্রেকফাস্ট করে নাও…
.
নেহা- না, আন্টি। আমি ব্রেকফাস্ট করে এসেছি। রেহানের সাথে একটু কথা আছে তাই এসেছি।
.
রুবিনা- ওহ আচ্ছা, বসো ও এখনি আসবে।
.
নেহা- আন্টি ও কে?
.
(রুবিনা কিছু বলার আগেই নাফিসা জবাব দিলো….)
নাফিসা- #বউ।
.
নেহা- সরি? বউ মানে?
.
রুবিনা- এ বাড়ির বউ।?
.
নেহা- ? এ বাড়ির বউ মানে!!! কার বউ?
.
(পেছন থেকে)
রেহান- আমার #বউ।
.
নেহা- ?whatt!!! কি বলছো এসব!
.
রেহান- ? yes… যা শুনেছো তাই বলেছি। ও আমার #বউ।
.
নেহা- রেহান, কি যা তা বলছো এসব! তুমি না আমাকে ভালোবাসো!
.
রেহান- ব্রেকাপ করে দিয়েছি তো…. মিস নেহা।
.
নেহা- ? এবার বুঝেছি কেন ব্রেকাপ করেছো! তুমি আমাকে বলো আমি দুশ্চরিত্রা! এদিকে তুমি যে ঘরে মেয়ে নিয়ে বসে আছো সেসব কিছু না! আরে দুশ্চরিত্রতা তো তুমি নিজেই।
.
(কথা বলে শেষ করতে পারে নি নেহা, এদিকে নাফিসা নেহার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। নেহার গলা চেপে ধরেছে…! নেহা ছুটার জন্য হাত পা ছুড়ছে! রুবিনা আর রেহান রীতিমতো শকড নাফিসার আচরণে !? তারা দুজনেই নাফিসাকে টেনে সরাতে চাইছে, নাফিসা ছাড়ছেই না কিছুতে।)
.
নাফিসা- তুই এভাবে কথা বলেছিস কেন! আমার হাসব্যান্ড এর দুশ্চরিত্র, শাশুড়ী আম্মু ছাড়ো আজ ওর খবর নিয়ে ছাড়বো…. ?
.
রুবিনা- আরে ও মরে যাবে তো।
.
রেহান- নাফিসা, ছাড়ো বলছি…..
.
( রেহান হেচকা টান দিয়ে নাফিসাকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইল। নাফিসা রেহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রেহানের শক্তির কাছে পারছে না। নেহা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। রুবিনা ১গ্লাস পানি এনে নেহাকে খাওয়ালেন।)
.
নাফিসা- ছাড়ো আমাকে… ?
.
রেহান- নাফিসা শান্ত হও…
.
নেহা- ?এসেছিলাম সবকিছু মিটিয়ে নতুনভাবে সম্পর্কটা গুছাতে, এখন বুঝতে পারছি এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। আগে জানলে কখনো আসতাম না…. গুড বাই….
.
রেহান- আরে যাও না… কে বলেছিল তোমাকে আসতে…. যত্তসব ফালতু ?
.
( নেহা চলে গেলো আর এদিকে নাফিসা এতোক্ষণ ছুটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলো না, অবশেষে কেরাতি স্টাইলে রেহানের পা মেরে ছাড়া পেল।)
.
রেহান- আউচ….!
.
রুবিনা- ?
.
নাফিসা- ?
.
(নাফিসা রেগে রুমে চলে গেলো। আর রেহান সোফায় বসে পা মালিশ করতে শুরু করলো। ব্যাথা পেয়েছে খুব। অবশ্য রেহান তাকে এখন এমনিতেই ছেড়ে দিতো, বেচারা একটু লেট করে ফেলেছে ?)
.
রুবিনা- ব্যাথা পেয়েছিস?
.
রেহান- না, ঠিক আছি। দেখো আব্বু রেডি হয়েছে কিনা! লেট হয়ে যাচ্ছে…
.
রুবিনা- আচ্ছা দেখছি। আরেকজন যে কি! মনে হচ্ছে মেয়েদের মতো মেকাপ করা শুরু করেছে…..
.
রেহান- ?
.
(রুবিনা চলে গেলে দারোয়ান দরজার কাছে এলো পত্রিকা নিয়ে)
রেহান- রেখে যাও। আজ এতো লেট করে পত্রিকা দিলো কেন?
.
দারোয়ান- কি জানি !
.
(দারোয়ান টেবিলে পেপার রেখে চলে গেলো। রেহানের চোখ পত্রিকার উপর পড়তেই দেখলো কর্ণারে নাফিসার ছবি! ? সে দ্রুত হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো ভালো ভাবে। হ্যাঁ এটা নাফিসা ই। ২টা ছবি দেয়া পত্রিকায়। ১টা তে শুধু হাসিমাখা ফেসটা দেয়া, আর ১টা তে নাফিসা অনেক গুলো লাল বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালো জিন্স ও সাদা টিশার্ট, সাদা-কালো মিশ্রিত কেডস সো পড়ে…! রেহান পত্রিকা নিয়ে দ্রুত তার রুমে চলে গেলো। খুব ভয় হচ্ছে তার। সে কি নাফিসাকে হারিয়ে ফেলবে!!! ?)
.
.
চলবে….

Story: #বউ
Part- 8
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(রেহান তার রুমে দরজা বন্ধ করে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি পড়লো। সেখানে লেখা আছে,
লন্ডন প্রবাসী রিজোয়ান আহমেদের একমাত্র মেয়ে নূর নাফিসা পরিবার সহ বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাংলাদেশে বন্ধুর বাড়িতে। গত শনিবার থেকে মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের কোন জায়গা তার পরিচিত না। মেয়েটির পড়নে ছিলো বিয়ের পোশাক। কেউ যদি কোন সন্ধান পেয়ে থাকেন তাহলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো।
রেহান- তারমানে নাফিসা সেদিন যা বলেছে সব সত্যি ছিল! তার বাসা লন্ডন! এখন কি নাফিসা তার বাবা মায়ের সাথে চলে যাবে লন্ডনে! না! ও তো আমার #বউ! আমি ওকে যেতে দিবো না। আমাদের কাছে থাকবে ও। ওর সন্ধান কাউকে পেতে দেব না।
.
রায়হান- রেহান, অফিসে যাবি না? দ্রুত আয়…
.
রেহান- হ্যাঁ আব্বু আমি আসছি। তুমি গাড়িতে যাও…
নিউজ পেপার আব্বু পড়লে আব্বু নাফিসাকে ফিরিয়ে দিবে! আব্বুকে পেপার পড়তে দিব না…
.
( তারপর রেহান পত্রিকা তার আলমারিতে রেখে বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো। অফিসের নিউজ পেপার ও লুকিয়ে ফেলেছে। অফিসে আজ রেহান তার বাবাকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রেখেছে যাতে নিউজ পেপার না পড়তে পারে। বিকেলে বাসায় একটু তারাতাড়ি ফেরায় দেখতে পেল রিয়াদ ও নাফিসা মাত্র বল ব্যাট নিয়ে বেরিয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য। তারা দুজন ফ্রেশ হয়ে রেহান তার বাবাকে ও নিচে নিয়ে এলো ক্রিকেট খেলবে বলে। রুবিনা ও এলো। )
.
রেহান- আমরাও খেলবো…
.
রিয়াদ- ইয়েএএএ,
.
নাফিসা- ওকে, একটা আমার টিম আর একটা তোমার টিম। জিতলে গিফট…
.
রেহান- ওকে ডান..
.
রায়হান- আমি নাফিসার টিমে।
.
রিয়াদ- আমিও ভাবির টিমে।
.
রেহান- ?তাহলে আমার টিমে কে! আমি একা!!
.
নাফিসা- ? শাশুড়ী আম্মু যাও অই টিমে…
.
রুবিনা- না, আমি খেলবো না।
.
নাফিসা- তাহলে! ? দারোয়ান ভাইয়াকে নিয়ে আসো।
.
(তারপর রেহান দারোয়ানকে ডেকে নিয়ে এলো। আর রুবিনা হলো আম্পায়ার ?।নাফিসা বরাবরই পাক্কা খেলোয়াড় আবার সাথে আছে রায়হান চৌধুরী। অন্যদিকে রেহান পাক্কা খেলোয়াড় হলেও দারোয়ান একেবারেই অধম। সুতরাং জয়ী হলো নাফিসা টিম ?। নাফিসা ও রিয়াদ তো খুশিতে লাফাচ্ছে আর সাথে বাকিরাও আত্মহারা। রেহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে নাফিসা এ বাড়ির সবার সাথে কত সহজে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখছে, না রেহান কিছুতেই নাফিসাকে যেতে দিবে না। সে নাফিসাকে সত্যিই তার #বউ বানাবে।)
.
নাফিসা- ইয়েএএ… নাফিসা টিম ইজ উইনার? গিফট দিতে হবে রেহান চৌধুরী ?
.
রেহান- ?ওকে বলো কি চাও?
.
নাফিসা- ছয় তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে হবে…. ?
.
রেহান- হোয়াট!!!!! ?
.
সবাই- ?
.
নাফিসা- হিহিহিহি ?, আই’ম জাস্ট জোকিং ইয়ার….. লং ড্রাইভে নিয়ে যেতে হবে ?
.
রেহান- ?ওকে….. বাট আজ না, পরশু দিন অফিস অফ আছে, সেদিন নিয়ে যাবো।
.
নাফিসা- ওকে।
.
রিয়াদ- আমিও যাবো…..
.
নাফিসা- ওকে মটো….?
.
রাতে ডিনারের সময়,
রিয়াদ- ভাইয়া, আমার কালার বক্স এনেছো?
.
রেহান- হুম।
.
রিয়াদ- কোথায়?
.
রেহান- আমার বেড সাইড টেবিলে রাখা আছে।
.
রিয়াদ- ওকে। ভাবি আজ কিন্তু বাকি পেইন্টিং শেষ করবা।
.
নাফিসা- ওকে, দ্রুত ডিনার শেষ করো। এখনি শেষ করবো।
.
রিয়াদ- ওকে?
.
(নাফিসা ও রিয়াদ দ্রুত ডিনার শেষ করে চলে গেলো রিয়াদের রুমে। বাকিদের খাবার ও শেষ।)
রায়হান- রেহান, তোকে না বলেছিলাম ছাপাখানায় যেতে। যাসনি কেন?
.
রেহান- ? মনে ছিলো না।
.
(চেয়ার থেকে উঠে যেতে যেতে কথাটা বলে সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো। রায়হান চৌধুরী ও রুবিনা চৌধুরী বেশ বুঝতে পেরেছেন রেহান নিশ্চই এখন মিথ্যে কথাটি বলে গেলো তাদের। রেহান নিশ্চয়ই চাইছে না নিউজটা পত্রিকায় দিতে।)
.
(৬ষ্ঠ দিন……
নামাজ পড়ে সকালে ব্যায়ামের পর রেহান বাগানের পাশে সুইমিং পুলে সাতার কাটছে। নাফিসা রিয়াদের রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেল রেহানকে।)
.
নাফিসা- রিয়াদ, ফুটবল কোথায়?
.
রিয়াদ- কেন? এখন ফুটবল খেলবে?
.
নাফিসা- না, তারাতাড়ি ফুটবল দাও।
.
রিয়াদ- এই যে, নাও….
.
নাফিসা- ? চলো চলো….
.
রিয়াদ- কোথায়?
.
নাফিসা- আমার পিছু পিছু চলো…
.
(নাফিসা ফুটবল ও রিয়াদকে সাথে নিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে গেলো। তারপর কর্ণারে রেলিং এর পাশে এসে ছয় তলার ওপর থেকে ফুটবল দিয়ে রেহানকে ঢিল মারলো। সোজা রেহানের মাথায়! ? রেহান অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। আর রেহানের অবস্থা দেখে ছাদে দাড়িয়ে রিয়াদ ও নাফিসা হাসতে লাগলো ?। এদিকে রেহান আশেপাশে খুজেই যাচ্ছে, বল তো আর নিজে নিজে আসেনি, কেউ তাকে ঢিল মেরেছে! কিন্তু কে! তারপর রিয়াদ চিৎকার করে রেহানকে ডাকলো..)
.
রিয়াদ- ভাইয়ায়ায়ায়ায়া…..
.
( এবার রেহান উপরে তাকিয়ে দেখলো ছাদে দাড়িয়ে নাফিসা আর রিয়াদ হাসছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই এটা নাফিসা ঢিল মেরেছে। রেহান পানিতে থেকে ফুটবল এ ভড় করে সাতার কাটছে আর নাফিসাকে দেখছে। সে হাতে ইশারা করে দুজনকে ডাকলো সুইমিং পুলে আসার জন্য। রিয়াদ দ্রুত ছাদ থেকে নেমে এসে পুলে নেমে পড়লো রেহানের সাথে গোসল করতে । আর নাফিসা দোতলায় রিয়াদের রুমে বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। রেহান আবারো ইশারায় ডাকলো তাকে পুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নাফিসা না করলো সে যাবে না। রেহান রিয়াদ পানিতে ফুটবল খেলে বাসায় চলে এলো। রেহান বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো তার বাবা-মা তার রুমে দরজা লক করে খাটে বসে আছে।)
.
রেহান- (মাথা মুছতে মুছতে) আব্বু আম্মু তোমরা এখানে?
.
রায়হান- বস এখানে। কথা আছে তোর সাথে।
.
রেহান- (সোফায় বসে) বলো…
.
রুবিনা- এই পত্রিকা তোর আলমারিতে কেন?
.
রেহান- ?!
.
রুবিনা- দিন দিন বড় হচ্ছিস আর তোর বুদ্ধি কি লোপ পাচ্ছে নাকি! ? ভাগ্যিস, জামাকাপড় ময়লা হয়েছে কিনা দেখতে আলমারি খুলেছিলাম। তা না হলে তো এটা পেতাম ই না কখনো!
.
রেহান- ওফফ!?
.
রায়হান- রুবিনা শান্ত হও, আমি বলছি….
রেহান, তুই কি চাইছিস তা আমরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা কি আদও সম্ভব!
.
রেহান- আব্বু, কেন সম্ভব নয়! নাফিসা আমাদের এখানে বেশ ভালো আছে। তার তো কোন প্রব্লেম হচ্ছে না। আমরা তার সন্ধান কাউকে না দিলেই হয়। সে তো একবারও বলছে না এখান থেকে যাবার কথা!
.
রায়হান- বাবা মায়ের কাছ থেকে সন্তান হারিয়ে গেলে তারা কত কষ্ট পায় তা কি একটুও বুঝতে পারছিস! তার উপর নাফিসা রিজোয়ান আহমেদের একমাত্র সন্তান। তারা কতটা কষ্টে আছে মেয়েকে না পেয়ে সেটা কি একবারও ভেবে দেখেছিস! আমার ছেলে দয়ালু সেটা জানতাম কিন্তু এতোটা পাষাণ হতে পারে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি!
দেখ বাবা, সন্তান সামান্য জ্বরে ভুগলে বাবা-মা ছটফট করে তার সন্তানকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য। কোনো বাবা মা ই চায় না তার সন্তান চোখের আড়াল হোক। তোকে সবসময়ই বলি সারাদিন বাইরে থাকলেও সন্ধ্যার পর যেন ঘরে দেখি। তোর মা কিছুক্ষণ পর পর ফোন করে খোঁজ নেয়। কারণ অন্ধকার নেমে এলেই মন ছটফট করে ছেলে কোথায় আছে, কি করছে! আর মেয়েটি ৬দিন ধরে বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে আছে, তাহলে তাদের কি হাল হতে পারে! আজ হয়তো বুঝতে তোর বিবেক বাধা পাচ্ছে। কিন্তু যেদিন তুই বাবা হবি সেদিন বুঝবি সন্তান কি জিনিস।
.
(বাবার কথাগুলো শুনে রেহানের চোখ লাল হয়ে গেছে। বুকের ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। এক নাফিসাকে হারাতে হবে, আর অন্যদিকে সে কোন এক বাবা-মা কে কষ্ট দিতে যাচ্ছিলো। সে ও তো তার বাবা-মা কে, ভাইকে খুব ভালোবাসে। তাহলে নাফিসাও নিশ্চয়ই তার বাবা মাকে খুব ভালোবাসে। এজন্যই তো বারবার কান্না করলে বলতো “আমি আব্বু আম্মুর কাছে যাবো “।)
রেহান- পত্রিকায় ফোন নম্বর ও এড্রেস দেয়া আছে, কল করে বলে দাও।
.
(কথাটি বলে রেহান অফিসের জন্য তৈরি হতে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট করার সময় রেহান অল্প কিছু খেয়েই উঠে পড়লো। তারপর বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো। এইটুকু সময়ে সে কারো সাথে তেমন একটা কথা বলেনি। রায়হান চৌধুরী রিজোয়ান আহমেদ কে কল করে তাদের অফিসের ঠিকানা দিলেন। তার বন্ধুসহিত রিজোয়ান আহমেদ ও তার স্ত্রী আয়েশা আহমেদ তাদের অফিসে এলো। বাবা ছেলে দুজনেই রিজোয়ান আহমেদ এর কাছে জানতে পারলো…)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here