বউ,Part- 9,10
writer: Nur_Nafisa
Part- 9
.
বাবা ছেলে দুজনেই রিজোয়ান আহমেদ এর কাছে জানতে পারলো…
বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে এসেছিলো তারা। নাফিসাও কনের সাথে পার্লারে যেতে ও বউ সাজতে বায়না করে। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান, মেয়ের যে কোন ইচ্ছে পূরণ করতে তারা বাধ্য। কিন্তু পার্লার থেকে ফেরার পথে কনে এক গাড়িতে ছিল আর নাফিসা এক গাড়িতে ছিল অই বাড়ির ই অন্যান্য মেয়েদের সাথে। কনের বাবার সাথে পুরোনো শত্রুতার কারনে কিডন্যাপাররা কনেকে কিডন্যাপ করতে এসে ভুল করে নাফিসাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর কিডন্যাপারদের পুলিশ ধরতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু নাফিসার কোন সন্ধান তারা দিতে পারেনি!
তারপর রিজোয়ান আহমেদ রেহানের খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন নাফিসাকে বাসায় ঠাই দেয়ার জন্য । মেয়েকে দেখার জন্য তিনি ব্যকুল হয়ে পড়লেন। দুপুরের দিকেই রেহানসহ তারা সবাই বাসায় এসে পড়লো।)
.
(নাফিসা রুবিনার সাথে টিভি দেখছিল ড্রয়িং রুমে। রুবিনা দরজা খুলার পর নাফিসা রিজোয়ান আহমেদ কে দেখে “আব্বু…… ” বলে জোরে চিৎকার দিয়ে হাত থেকে রিমোট ফেলে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আয়েশা আহমেদ ও রিজোয়ান আহমেদ মেয়েকে পেয়ে খুশিতে আর ক্ষোভে নিরবে চোখের পানি ফেললো। যেন তাদের কলিজাটা ফিরে পেয়েছে আজ। বাকিরা ও তাদের দেখে খুব খুশি। রেহান অপরাধবোধ করছে খুব। সে নিউজ না দিয়ে, খুব বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো। বাবা-মা, আর মেয়েটার খুশি কেড়ে নিতে যাচ্ছিলো। সে আর এখানে দাড়িয়ে না থেকে তার রুমে চলে গেলো। রুবিনা চৌধুরী মেহমানের আপ্যায়ন করছে। আর মি. & মিসেস আহমেদ বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে চৌধুরী পরিবারের। তারপর বেশ কিছুক্ষণ তারা কথা বললো। রেহান ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শুনতে পেলো আগামীকালের ফ্লাইটে তারা লন্ডন ফিরে যাবে। নাফিসা ও বেশ খুশি লন্ডন ফিরে যাবার কথা শুনে। সে রেহানের সামনে দিয়ে দৌড়ে ব্যাগ গুছাতে চলে গেলো, কারো বলার অপেক্ষায় থাকেনি। রুবিনা ও রায়হান চৌধুরী রিজোয়ান আহমেদ কে বললেন কাল যেহেতু চলেই যাবে আজ নাফিসা তাদের কাছেই থাকুক। রিজোয়ান আহমেদ আর মানা করতে পারলো না। কয়েক মিনিটে ব্যাগ গুছিয়ে চলে এলো আবার। সবাই নাফিসার কান্ড দেখে অবাক! রেহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে আর দেখছে। কাউকে কিছু বলতে পারছে না।)
.
রুবিনা- শাশুড়ী আম্মুকে ছেড়ে এতো দ্রুত চলে যাওয়া হচ্ছে! আমার তো ছাড়তে ইচ্ছে করছে না, তোমার কষ্ট হচ্ছে না একটুও?
.
নাফিসা- তোমরাও আমাদের বাসায় যেও?
.
রুবিনা- আচ্ছা! কিন্তু আজ যে আপনি যেতে পারবেন না।
.
নাফিসা- কেন!
.
রায়হান- আর এক দিন ই তো আছো বাংলাদেশে, কাল এখান থেকে এয়ারপোর্টে যাবে।
.
নাফিসা- আব্বু, আমাকে রেখে আবার চলে যাবে না তো!
.
রিজোয়ান- ইম্পসিবল! আমার পাগলী মেয়েকে রেখে আমি কোথায় যাবো! তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো!
.
নাফিসা- ওকে।
.
আয়েশা- আমার মেয়েটা একটু পাগলী টাইপের। নিশ্চয়ই পাগলামি করে খুব জালিয়েছে আপনাদের।
.
রায়হান- ওর পাগলামী গুলোইতো আমাদের আনন্দে মাতিয়ে রেখেছে। খুব মিস করবো পাগলীটাকে।
.
(বিকেলে নাফিসাকে এ বাড়িতে রেখে মেহমানরা চলে গেলো। তাদের থাকার জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু কাল চলে যাবে তাই বন্দোবস্ত করতে তারা বন্ধুর বাসায় চলে গেলো। সন্ধ্যায় নাফিসা রিয়াদকে পড়িয়েছে, রায়হান চৌধুরীর সাথে দাবা খেলেছে। সবাই একসাথে ডিনার করে তারপর ঘুমাতে চলে গেছে। এর মাঝে রেহানের সাথে নাফিসার কোন কথা হয়নি।
সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর রেহান রিয়াদের রুমে এলো। নাফিসা ও রিয়াদ দুজনেই ঘুমিয়ে আছে। রেহান নাফিসার পাশে খাটে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই চেহারা দেখে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে তার। নেহার সাথে ৩মাসের রিলেশন রেখে ব্রেকাপের সময়ও এতোটা কষ্ট হয়নি।)
.
(বুকে চাপা কষ্ট রেখে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো)
রেহান- এসেছিলে কেন! আবার চলেই বা যাচ্ছো কেন! কি প্রয়োজন ছিলো এতো অল্প সময়ে এমন মায়ায় জড়ানোর! কিভাবে আজ নিশ্চিন্তে এখানে ঘুমাতে পারছো তুমি! ভয় পাচ্ছো না আজ! আমার সাথে কি ঘুমানোর বায়না আর করবে না! বারবার আমার সামনে এসে বলবে না, তুমি আমার #বউ। এই পাগলী #বউ, একটু কথা বলো না তোমার বরের সাথে।
.
(নাফিসা গভীর ঘুমে মগ্ন। রেহান আরও কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর নাফিসার কপালে গভীরভাবে একটা চুমু খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ঘুম আসছে না তার চোখে। )
.
(ছুটির দিন হওয়ায় সবাই আজ বাসায় আছে। রুবিনা সকাল থেকেই অনেক খাবার বানিয়েছেন নাফিসাকে দেয়ার জন্য। সকাল ৮টার দিকে নাফিসার বাবা-মা চলে এসেছে। ১১ টায় ফ্লাইট। নাফিসাও সব কিছু গুছিয়ে তৈরি। রেহান আজ তার রুম থেকে বের হচ্ছে না। শুধু ব্রেকফাস্ট করার জন্য একবার বেরিয়েছিল। নাফিসা তার আম্মুর কাছ থেকে পার্স নিয়ে রিয়াদকে কিছু গিফট দিয়েছে। ৯টার দিকে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে, রিয়াদ কান্না করছিলো তার ভাবি চলে যাচ্ছে। রুবিনা চৌধুরী অনেক্ক্ষণ বুকে জড়িয়ে রেখেছে নাফিসাকে। রায়হান ও রুবিনা চৌধুরীর ও খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। মেয়েটা বাসায় এসে তাদের মেয়ের অভাব পূরণ করে দিয়েছিলো। আজ আবার সেই মেয়ের অভাব টা তারা অনুভব করছে। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বের হতে যাবে তখন নাফিসা বললো..)
.
নাফিসা- আব্বু আম্মু তোমরা গাড়িতে যাও আমি আসছি…
.
রিজোয়ান- ok, hurry up…
.
নাফিসা- ওকে
.
(নাফিসা দৌড়ে রেহানের রুমে এলো। রেহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। নাফিসা রেহানের পাশে এসে দাড়ালো। রেহান তাকে একবার দেখে আবার বাইরে তাকিয়ে আছে।)
.
নাফিসা- hey, handsome boy… Look at me.
.
(রেহান কোন রেসপন্স করলো না। নাফিসা জোর করেই তাকে ঘুরিয়ে দিলো তার দিকে।)
.
নাফিসা- Wanna hug me….plz…
.
(রেহান কয়েক সেকেন্ড পলকবিহীন তাকিয়ে এক ঝটকায় নাফিসাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো, যতটা শক্ত করে ধরা যায়। ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবে রেখে দিতে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। আটকাতে পারছে না কেন সে! আচ্ছা, এটা কি ভালোবাসা! তাহলে নেহার সাথে কি সম্পর্ক ছিলো! রেহান ভেবে পাচ্ছে না কিছু! ২/৩ মিনিট পর নাফিসা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে রেহান তাকে ছেড়ে দিলো। নাফিসা রেহানের গালে আলতো করে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
রেহান স্তব্ধ হয়ে গেল নাফিসার কর্মে! সে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে…. দোতলা থেকে দেখতে পেল তারা গাড়ি দিয়ে চলে গেছে।
নাফিসার গিফট যে আর দেয়া হলো না! আজই তো লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা ছিলো, নাফিসা তো রেহানকে ছেড়ে দেশ ছেড়েই একা একা চলে গেলো। বারবার তার সাথে কেন এমন হয়! যাকে ভালোবাসে সে ই কেন দূরে চলে যায়! তাকে কি বুঝার মতো কেউ নেই! সবাই ধোকা দেয় কেন তাকে! ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ছেলেরা চাইলেও সেটা পারে না কেন!
সারাদিন বাসায় এক প্রকার নিরবতা কেটে গেলো। যেন কত দিনের সম্পর্ক এই মেয়েটার সাথে। আজ সবার আনন্দ কেড়ে নিয়ে তাদের থেকে দূরে চলে গেছে! রেহানও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গেছে, আর কাউকে ভালোবাসবে না, কারো জন্য তার মনে জায়গা নেই। খুব কঠিন বানিয়ে ফেলবে নিজেকে।
.
.
চলবে….
Story: #বউ
Part- 10
writer: #Nur_Nafisa
.
.
২ বছর পর….
(অফিস থেকে ফেরার সময় রায়হান চৌধুরী রেহানকে নিয়ে একটি ফ্ল্যাট দেখতে গেলো।)
.
রায়হান- রেহান, ফ্ল্যাট টা কেমন?
.
রেহান- আব্বু, এটা দেখে কি করবে? আবার কেনার প্ল্যান করছো?
.
রায়হান- হুম।
.
রেহান- এতো বড় বাড়ি রেখে আবার ফ্ল্যাট কিনবে কেন?
.
রায়হান- আমার জন্য না, আমার ফ্রেন্ডের জন্য। আগামী শুক্রবার তারা দেশে আসবে। ফ্যামিলি ছোটই। বলেছে একটা ফ্ল্যাট দেখতে। ৪দিনের মধ্যে ফ্ল্যাট কিনার ব্যবস্থা করলে ভালো হবে।
.
রেহান- মগের মুল্লুক নাকি! ৪দিনে সব ব্যবস্থা করা যায় কিভাবে! আমাদের বাসায় থাকতে বলো, পরে ব্যবস্থা হলে চলে আসবে।
.
রায়হান- তা না হয় বললাম, কিন্তু এখন দেখবি তো…
.
রেহান- ছোট ফ্যামিলি হলে, খারাপ না, এটাই ভালো হবে। ওনারের সাথে কথা বলেছো?
.
রায়হান- হুম, পছন্দ হলে জাস্ট কিনে নিবো।
.
রেহান- যিনি কিনবে ওনাকে ছবি পাঠাও। দেখো কি বলে…
.
রায়হান- পাঠিয়েছি, বলল ভালো লেগেছে, তাও আমি যাতে ভালো ভাবে দেখে নেই।
.
রেহান- সব ব্যবস্থা তো করেই রেখেছো। তাহলে আর কি! কনফার্ম করে দাও।
.
রায়হান- ওকে….
.
.
শুক্রবার সকালে..
রেহান- এতো আয়োজন কেন, আম্মু?
.
রুবিনা- তোর আব্বুর ফ্রেন্ড আসবে আজ, দুপুর ২টার দিকে তারা আসবে। তোর আব্বু বলেছে এয়ারপোর্ট থেকে তোকে রিসিভ করতে।
.
রেহান- আমি কেন! আব্বু কোথায়!
.
রুবিনা- তোর আব্বু ভোরে একটা কাজে বেরিয়েছে। তোকে বলেছে, যেতে তুই যাবি ব্যাস…
.
রেহান- আমি তো তাদের চিনিও না। কিভাবে রিসিভ করবো?
.
রুবিনা- উনারা তোকে চিনে, ছবি দেখেছে তোর। তোর খুজতে হবে না।
.
রেহান- আচ্ছা।
.
রিয়াদ- আম্মু এই অর্ধেক নারিকেল আমার, আমি যাই….
.
রুবিনা- এই রিয়াদ… সকাল সকাল নারিকেল খেলে পেট খারাপ করবে, নিয়ে আয় বলছি…..
.
রিয়াদ- নায়ায়ায়া…
.
(রেহান দৌড়ে গিয়ে রিয়াদের কাছ থেকে নারিকেল নিয়ে রুবিনার কাছে দিয়ে দিলো। ওদিকে রিয়াদ কান্না করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে)
.
রুবিনা- মেরেছিস?
.
রেহান- তোমার ছেলেকে মারতে হয় আবার!
.
(এমনি ফোনটা বেজে উঠে)
রেহান- হ্যালো আব্বু…
.
রায়হান- রেহান ওরা ২টার দিকে আসবে। তুই একটু আগেই চলে যাস।
.
রেহান- আচ্ছা।
.
(১২টায় রেহান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ১.৫ ঘন্টা জেমে ই আটকে থাকতে হলো। ১:৪২ মিনিটে এয়ারপোর্টে পৌছালো। সেখানে আরো ৩০মিনিটের মতো বসে আছে। কেউ তো আসছে না তার কাছে, আবার বেরিয়ে গেলো না তো! রেহান আবার রায়হান চৌধুরীকে কল করতে যাবে তখনি ফোন পকেট থেকে নিয়েও আবার রেখে দিলো!
এ কাকে দেখছে সে! ভুল দেখছে না তো! রিজোয়ান আহমেদ এসে জড়িয়ে ধরলো রেহানকে। পেছনে আয়েশা আহমেদ ও নাফিসা ও আছে।)
.
রিজোয়ান- হেই ইয়াং ম্যান…. কেমন আছো?
.
রেহান- আসসালামু আলাইকুম।
.
রিজোয়ান- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
রেহান- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
.
রিজোয়ান- আলহামদুলিল্লাহ।
.
রেহান- আসসালামু আলাইকুম আন্টি…
.
আয়েশা- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো রেহান?
.
রেহান- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
.
আয়েশা- আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
.
নাফিসা- আম্মু, হু ইজ হি?
.
আয়েশা- হি ইজ রেহান। ২বছর আগে তুমি তাদের বাসায় ছিলে।
.
নাফিসা- হ্যালো…
.
(রেহানের শরীরের রক্ত সব জমাট বেধে যাচ্ছে রাগে। এতো তারাতাড়ি কিভাবে ভুলে গেছে তাকে! কই সে তো ভুলে যায়নি! মন চাচ্ছে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগাতে। কিন্তু কোন অধিকারে! তার তো কোন অধিকার নেই! তাই সে নাফিসার কথায় কোন রেসপন্স করলো না। আংকেল আন্টি কে গাড়িতে উঠার জন্য বললো। নাফিসা রেহানের কাছ থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে একটু অবাক হলেও তা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না। সারা রাস্তা নাফিসা বকবক করেই যাচ্ছে তার বাবা মায়ের সাথে। রেহান খুব বিরক্ত বোধ করছে। রিজোয়ান আহমেদ রেহানকে কোন প্রশ্ন করলে শুধু তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে রেহান। বাসায় আসার পর….)
.
রিয়াদ- ভাবিইইই!
.
নাফিসা- হু আর ইউ কিউট বয়?
.
রিয়াদ- আই এম রিয়াদ চৌধুরী।
.
নাফিসা- ইন্টেলিজেন্ট বয়। আব্বু আমরা কাদের বাসায় এসেছি?
.
রিজোয়ান- আমার ফ্রেন্ডের বাসায়,
.
নাফিসা- দুবছর আগে কি এ বাসায় এসেছিলাম?
.
রিজোয়ান- হুম।যাও আংকেল আন্টির সাথে কথা বলো….
.
নাফিসা- ওকে।
.
(নাফিসা ও তার বাবা-মা রেহানের বাবা মায়ের সাথে কথা বললো বেশ কিছুক্ষণ।)
রেহান- ( নাফিসার কর্মকাণ্ড দেখে রেহানের মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র দুবছরে মানুষ এতোটা বদলে যায় কিভাবে! সবকিছু এতো তারাতাড়ি ভুলে যায় কিভাবে! আগে তো শশুর আব্বু, শাশুড়ী আম্মু বলে ডাকতো, এখন আংকেল আন্টি! বাহ! আব্বু আম্মু কিভাবে এই মেয়ের সাথে নরমাল বিহেভ করছে! আমাদের কাউকে তো চিনতেই পারছে না। আগে জানলে কখনো বলতাম না আব্বুকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে! প্রয়োজনে হোটেলে ব্যবস্থা করে দিতাম। আল্লাহ জানে এইসব কতদিন দেখতে হয়! এখন তো ইচ্ছে করছে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। হ্যাঁ আমিই কোথাও চলে যাবো আব্বুকে বলে। তাদের ফ্ল্যাট ঠিক হলে এ বাসা ছেড়ে গেলে আসবো।)
.
(দুপুরের পর থেকে রেহান বাড়ির বাইরেই ছিলো। লাঞ্চ ও করেনি বাসায়। বন্ধুদের উছিলায় বেরিয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতে হলো। বাবার আদেশ, সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা যাবে না। এসে দেখেছে নাফিসা ড্রয়িং রুমে রিয়াদের সাথে বসে লুডু খেলছে, আর রিয়াদকে নাম ধরেই ডাকছে, আগে তো মটো ছাড়া কথাই বলতো না! রেহানের এসব একটুও ভালো লাগছে না। সে রুমে এসে লাইট অফ করে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। আর ভাবছে কালই ঢাকার বাইরে কোথাও চলে যাবে।
নাফিসা আস্তে আস্তে রেহানের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর খুব সাবধানে রেহানের খাটের পাশে এসে রেহানের বুকে মাথা রেখে ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়লো। রেহান হকচকিয়ে গেল এমন কান্ডে! সে দ্রুত উঠতে গেলো কিন্তু সম্ভব হলো না। হাতটা বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জালালো। নাফিসাকে দেখে তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইছে কিন্তু পারছে না)
.
রেহান- একি! আপনি এখানে কেন?
.
নাফিসা- দুবছর আগে কি আমি এখানে এভাবে শুয়ে ছিলাম!
.
রেহান- কি হচ্ছে কি এসব! ছাড়ুন…
.
(নাফিসা মাথা তুলে রেহানের দিকে তাকালো)
নাফিসা- ছাড়বো না…. আপনার কি!
.
(রেহান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নাফিসার চেহারা দেখে ইমোশনাল হয়ে গেছে সে। অজান্তে হাত দুটো দিয়ে নাফিসার মুখটা ধরে বলতে লাগলো….)
.
রেহান- নাফিসা, সত্যিই কি তোমার কিছু মনে নেই? এতো সহজে সব ভুলে গেলে কিভাবে!
.
(নাফিসা রেহানকে আরও অবাক করে দিয়ে রেহানের নাকটা টেনে দিয়ে বললো….)
.
নাফিসা- সব মনে আছে রে পাগল…. তোর জন্যই তো আমি এখনো কুমারী।
.
(রেহান স্তম্ভিত হয়ে গেছে, এটা কি বললো নাফিসা! সে ঠিক শুনেছে তো! তার গলা ধাধিয়ে আসছে…মুহূর্তে পাশ ফিরে নাফিসাকে নিচে ফেলে রেহান নাফিসার উপর উঠে পড়লো। )
.
রেহান- কি বলেছো? আবার বলো…
.
নাফিসা- কেন একবারে শুনতে পাও না!
.
রেহান- না, শুনতে পাই না।
.
নাফিসা- ডাক্তার দেখাও…. হিহিহিহি…
.
রেহান- আচ্ছা দেখাবো, আগে বলো আমাকে রেখে চলে গিয়েছিলে কেন?
.
নাফিসা- বা রে! আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে না!
.
রেহান- এখন এসেছো কেন?
.
নাফিসা- বিয়ে করতে আর আমার বরের সাথে থাকতে।
.
রেহান- আমাকে কেন বিয়ে করবে?
.
নাফিসা- ভালোবাসি বলে…
.
রেহান- আগে বলোনি কেন? যদি আমি বিয়ে করে ফেলতাম অন্য কাউকে!
.
নাফিসা- সেই সুযোগ তোমাকে দিলে তো!
.
রেহান- তুমি কিভাবে জানতে?
.
নাফিসা- আব্বুর সাথে কি শশুর আব্বুর এমনিতেই ফ্রেন্ডশিপ! দুবছর আগেই তো আব্বু আম্মু শশুর আব্বু আর শাশুড়ী আম্মুর সাথে কথা বলে বিয়ে পাকা করে রেখেছে…. আর আমি তোমার সব খবরই রেখেছি। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট থাকলে তখনই বিয়ে হয়ে যেত…. হিহিহিহি….
.
রেহান- হোয়াট!! তার মানে আমি ছাড়া সবাই সব জানতো!
.
নাফিসা- তুমি আর রিয়াদ ছাড়া সবাই…
.
(নাফিসার গালে রেহান তার গাল ঘষতে ঘষতে)
.
রেহান- এই পাগলী তুমি কতো দুষ্টু তা কি জানো….
.
নাফিসা- আহ!
.
(রেহান মাথা তুলে তাকালো নাফিসার দিকে)
রেহান- কি হলো!
.
নাফিসা- দাড়ির ঘষাতে আমার গালটা মনে হয় ছিলে গেছে! ফেসের কি অবস্থা করেছো! বুড়ো একটা! দেখে মনে হয় দুই বাচ্চার আব্বু হয়ে গেছে!
.
রেহান- হাহাহা…. আমার বয়স মাত্র আটাশ বছর। বুড়ি তো তুমি, মেয়েদের টিনএজ শেষ হয়ে গেলে বুড়ি হয়ে যায়। তোমার তো বিশ হবেই….
.
নাফিসা- হুহ!
.
রেহান- তাছাড়া তুমি দুবছর আগে চলে না গেলে হয়তো আজ দুই বাচ্চার আব্বু থাকতাম।
.
নাফিসা- ইশ! স্টুপিড একটা, যেন বছরে বছরে বাচ্চা জন্ম দিতো….
.
(রেহান “হুম” বলে আবার নাফিসার গলায় মুখ গুজে দিলো। নাফিসা শিউরে উঠলো। নাফিসা আস্তে আস্তে বলতে লাগলো… )
.
নাফিসা- এই কি করছো!আমাদের কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি….
.
(রেহান দ্রুত মাথা তুলে নাফিসাকে বললো…)
.
রেহান- এই #বউ পালিয়ে বিয়ে করবে…?
.
.
চলবে……