বজ্জাত বউ,পর্ব ১৭,১৮
লেখিকা বিলকিস
পর্ব ১৭
পরশ: না আমি আমার মিষ্টিকে কোথাও যেতে দেবো না বলে পরশ ছাদ থেকে উঠে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে পরশ পা পিচলে নিচে পড়ে যাই। পরশে পড়ে যেতে দিশা চিৎকার দিয়ে উঠে
দিশা: ভাইয়া বলে দিশা দৌড়ে এসে পরশ কে ধরে। ভাইয়া একি ভাইয়া কাপাল কেটে রক্ত পড়ছে।
পরশ: আমার মিষ্টি বলতে পরশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে
দিশা: এই ভাইয়া কথা বলছিস না কেনো। আমাকে আগে কপালে রক্ত পড়া বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ভাইয়া কে আগে ঘরে নিতে হবে। বলে দিশা দুজন লোককে ডেকে এনে পরশকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরে নিয়ে মাথায় রক্ত মুছে ব্যান্ডিস করে দিলো।
এদিকে মিষ্টিকে সামাধি করা জন্য যবতীয় আয়োজন করা হচ্ছে। বাড়ির সবাই কাঁদছে।
আহাদ: মিষ্টিকে নিয়ে যেতে হবে। পরশ কোথায়। ও মিষ্টিকে শেষ একবার দেখবে না।
দিশা: ভাইয়া সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। আমি ভাইয়া বিছানাতে শুয়ে এসেছে। কখন জ্ঞান ফিরবে জানি না।
পরশের আম্মু: এটা তোমার কেমন বিচার খোদা। একজন কে নিয়ে গেলে আর একজন কে না নিয়ে শেষ করে দিয়ে গেলে।
আহাদ: ছোটো বাবা চলো মিষ্টিকে নিয়ে যেতে হবে।বলে কাঁদতে লাগলে
মিষ্টির বাবা: আমাকে আর কেউ বাবা বলে গলা জরিয়ে ধরবে না। চকলেট চাইবে না। মা রে মা আমার
মিষ্টির আম্মু: আমার মিষ্টিকে নিয়ে যেও না তোমরা বলে মিষ্টির আম্মু জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
আহাদ: আম্মু ছোটে মা। ছোটে মা কথা বলে ছোটো মা। দিশা পানি নিয়ে এসো।
দিশা: হ্যা আনছি বলে দিশা পানি নিয়ে আসলো।
আহাদ: ছোটো মা চোখ খুলো ( মুখে পানি ছিটিয়ে বললো)
মিষ্টির আম্মু: মিষ্টি
আহাদ: আম্মু আর দিশা তোমরা ছোটো মা আর পরশকে দেখো আমরা আসছি বলে আহাদ মিষ্টির বাবা কে ধরে নিয়ে গেলো মিষ্টির কাছে। তারপর মিষ্টিকে নিয়ে গেলো সমাধি করা জন্য
রাত ২ টা
পরশ: মিষ্টি মিষ্টি আমাকে ছেড়ে যেও না
দিশা: ভাইা জ্ঞান ফিরেছে
পরশ: মিষ্টি বলে বিছানায় উঠে বসলো। মিষ্টি আমার মিষ্টির। আমি মিষ্টির কাছে যাবো । কোথায় আমার মিষ্টি। বলে সারা ঘরে চোখ বুলাতে থাকলো। রুমেতো মিষ্টি নেই। নিশ্চয় লুকিয়ে আছে। আমি খুজে আনছি বলে বিছানা থেকে নামতে আবার বিছানাতে পরে গেলো।
পরশের আম্মু: পরশবলে পরশে ধরলো
পরশ: ছাড়ো আমাকে আমি মিষ্টিকে খুজবো বলে হাতটা ছারিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সারা বাড়ি পাগলো মতো করে মিষ্টিকে ডাকতে লাগলো আর খুজতে লাগলে।
দিশা: ভাইয়া আমার কথা শোন। তোর শরীলটা ভালো না। তুই মাথায় আঘাত পেয়েছিস।
পরশ: মিষ্টিকে খুজতে হবে
দিশা: ভাইয়া মিষ্টি সামাধি করতে নিয়ে গেছে। মিষ্টিকে আর কোথায় খুজে পাবি না তুই ( চিৎকার করে বলতে লাগলো)
পরশ: না আমি ঠিক ফিরে আনবো মিষ্টিকে বলে পরশ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
পরশের আম্মু: দিশা তোর ভাইয়াকে আটকা
দিশা: ভাইয়া য়াস না
পরশ: আমি আমার মিষ্টিকে কোথাও যেতে দেবো বলে রাস্তা দিয়ে পাগলো দৌড়াতে লাগলো আর মিষ্টিকে ডাকতো লাগলো।
আহাদ: দিশা তুমি এখানে
দিশা: স্যার ভাইয়া ভাবিকে খুজতে বলে কাঁদতে লাগলো।
আহাদ: দিশা বাবা আর ছোটো বাবাকে বাড়িতে নিয়ে য়াও আমি পরশকে খুজে নিয়ে আসছি বলে আহাদ গাড়ি নিয়ে রাস্তার বের হলো
পরশ: কোথাও খুজে পারছিনা কেনো বলে পরশ রাস্তার মাঝ খানে হাটু গেরে বসে মিষ্টির বলে চিৎকার করতে লাগলো
আহাদ: কোথায় গেলো পরশ রাস্তায় তো দেখা যাচ্ছে না।
পরশ: মিষ্টি । ও ছেড়ে তুমি যেতে পারো না ফিরে এসো বলছি। ও আসবে না। আমার কোনো আপরাধ হয়েছে না। এই দেখো আমি বলছি কান ধরছি আর কোনো আপরাধ হবে না। তুমি ফিরে এসো মিষ্টি বলে কাঁদতে লাগলো
আহাদ: এতো রাস্তা আসলাম তবুও পরশকে দেখতে পারছিনা
পরশ: ও মজা করা হচ্ছে না আমার সাথে। আমাকে কষ্ট দিতে মজা লাগছে। আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া না। এই বেইমান আমাকে ছেড়ে যাবি যখন তখন আমার কাছে আসলি কেনো। বেইমান তুই একটা। আমাকে ফিলে রেখে চলে যাওয়া না। ঠিক আছে যা তুই কিন্তু আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেতো পারতি। আরে আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো বল। দাড়া আমি তোর কাছে আসছি তুই তো নিলি না আমি নিজে তোর কাছে আসছি কারন মিষ্টি ছাড়া পরশ অধুরা। বলে পরশ রাস্তার সাথে মাথা খুটাতে লাগলো।
আহাদ: রাস্তার মাঝখানে কে ওটা পরশ নয়তো হ্যা পরশ তো বলে আহাদ গাড়ি থামিয়ে পরশের কাছে পরশকে ধরলো।
পরশ: ছারো আমাকে আমিও ওই বেইমানটার কাছে যাবো। আমাকে সাথে নেই নি তাই আমি একাই যাবো ছারো। আমি আসছি মিষ্টি আমি আসছি
আহাদ: পাগল হলে নাকি পরশ
পরশ: হ্যা হয়েছি পাগল। ও আমাকে পাগল করেছে। ওর ভালোবাসা আমাকে পাগলবলতে পরশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আহাদ: পরশ তো জ্ঞান হারিয়ে ফেললো বলে পরশকে তুলে গাড়িতে বাসালো। তারপর গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে এসে পরশের মাথায় ব্যান্ডিস করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলো।
দুপুর ২ টা
দিশা : আন্টি আপনি কিছু খেয়ে নিন। কাল থেকে কিছু খান নি
মিষ্টির আম্মু: আমার খেতে ইচ্ছে করছে না তুমি বরং তোমার আঙেল আর বাকি দের খাবার দাও।
দিশা : আন্টি এভাবে না খেলে শরীল খারাপ করবে কিচু একটা মুখে দিন।
পরশের আম্মু: বিয়ান কিছু মুখে দিন।
আহাদ: কিছু পোড়ার গন্ধ আসছে না
দিশা : হ্যা তো পুড়া গন্ধ। চুলাতো কিছু নেই তাহলে কি পড়ছে
আহাদের আম্মু: আহাদ এই উপর ঘর থেকে ধোয়া বের হচ্ছে দেখ
দিশা: ওটা ভাইয়া ঘর। বলে আহাদের দিকে তাকালে
পরশের আম্মু: আমার ছেলে টা ভেতরে আছে
দিশা: ভাইয়া বলে দিশা উপরে পরশের ঘরে দরজায় সামনে এসে পরশকে ডাকতে লাগলে।
আহাদ: পরশ দরজায় খোলো
দিশা: স্যার ভাইয়া ভেতরে কিছু
আহাদ: দরজাটা যেভাবে হক খুলতে হবে বলে আহাদ দরজা জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো। ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজায় খুলে গেলো।
দিশা: স্যার দরজায় খুলে গেছে বলে আহাদ আর দিশা ঘরে ভেতরে ঢুকতে দিশা বললো
দিশা: এটা কি করছে ভাইয়া স্যার বলে কাঁদতে লাগলো ….
(চলবে)
বজ্জাত বউ
লেখিকা বিলকিস
পর্ব ১৮
দিশা: স্যার দরজায় খুলে গেছে বলতে দিশা আর আহাদ রুমে ভেতরে ঢুকতে
দিশা: স্যার ভাইয়া এগুলো কি করছে বলে কাঁদতে লাগলো
আহাদ: পরশ তুমি কি করছো। মিষ্টির জিনিস গুলো পুড়াছো কেনো।
পরশ:…..
আহাদ: কি হলো কথা বলছো না। পরশ তুমি পাগল হয়ে গেলে নাকি। রাখো এগুলো
পরশ: হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছে। ওই বেইমানটা আমাকে পাগল করে দিয়ে গেছে। ও আমার ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওর কেনো জিনিস রাখবো না। তোমরা যাও এখন থেকে। যাও
আহাদ: পরশ আমি জানি তুমি মিষ্টিকে খুব ভালোবাসো মিষ্টি তোমাকে খুব ভালো বাসতো।
পরশ: না ভালোবাসে না। ও যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও একা আমাকে রেখে যেতো না
আহাদ: দেখে আমরা পৃথিবী চিরজীবনে জন্য আসি না। আমাদেরকে এক সময় এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয়। বিধি নিয়ম অনুসারে কেউ আগে যাই কেউ পারে। মিষ্টি নয় আমাদের ছেড়ে আগে চলে গেছে।
পরশ: বলা হয়েছে এখন যাও
দিশা: ভাইয়া তুই
পরশ: আমাকে আমার মতো করে থাকতে দে। তোদের নতুন বিয়ে হয়েছে তোরা আনন্দ কর যা এখান থেকে। আর হ্যা আমাকে নিয়ে এতো ভাবনা কিছু নেই।
আহাদ: আমি জানি তুমি কখনো মিষ্টিকে ভাুলতে পারবে না। যে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবে না। তাই বলে নিজেকে এভাবে শেষ করে দিয়ে না। নতুন করে নিজেকে সাজানো চেষ্টা করো। দিশা চলো
দিশা: হ্যা স্যার চলেন বলে দিশা আর আহাদ নিচে নেমে আসলো।
দিশার আম্মু: কি করছে পরশ রুমে ভেতর
দিশা: ভাইয়া ভাবির জিনিস গুলো পড়াচ্ছে
আম্মু: কি বলছিস বলে কাঁদতে লাগলো।
কিছু সময় পর
হঠ্যৎ পরশ রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে দরজায় দিকে যেতে পরশের আম্মু পেছন থেকে বললো
আম্মু: কোথায় যাচ্ছিস বাবা
পরশ: জানি না বলে পরশ গাড়ির নিয়ে বের হয়ে গেলো।
এদিকে বাড়ির থেকে আত্নীয় স্বাজন আস্তে আস্তে সবাই চলে গেছে। মিষ্টির আম্মু বাবা সন্ধ্যায় পর চলে গেছে। আহাদ দিশাকে যেতে বারং করাতে দিশা থেকে যাই বাড়িতে
আম্মু: দিশা এতো রাত হয়ে গেলো তোর ভাইয়া তো বাড়ি ফিরলো না কোথায় গেছে কে জানে। হে আল্লাহ তুমি আমার ছেলে দেখো
দিশা: আম্মু আমি একবার ফোন করে দেখি বলে ফোন নিয়ে পরশের কাছে ফোন দিলো। কিন্তু পরশের ফোন বারবার বন্ধ বলছে
ওয়েটার: ভাইয়া আর কতো খাবেন। অনেক খেয়েছেন। এখন বাড়ি যান। আপনার জন্য আপনার পরিবার চিন্তা করবে। অনেক রাত হয়েছে।এখন রাত ২:৪৫ বাজে
পরশ: তোর পরিবার আছে।
ওয়েটার: হ্যা ভাই আছে। মা বউ আর একটা মেয়ে আছে।
পরশ: বউ বলতে পরশ হাসতে লাগলো
ওয়েটার: হাসছেন কেনো।
পরশ: আর এক গ্লাস মদ না পুরা বোতল দে।
ওয়েটার: ভাই আপনি এর আগে দুটো বোতল খেয়েছেন।
পরশ: তোর বউ আছে না। জানিস আমারো বউ ছিলো। খুব ভালোবাসি বউকে। কিন্তু আমার বউ আমাকে একা রেখে চলে গেছে অনেক দুরে বলে বোতলে পুরা মদ খেয়ে ফেললো। আর পাগলে মতো হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে ৫ টার দিকে বাড়ি ফিরে আসলো।
২ বছর পর
দিশা: আম্মু আম্মু কোথায় তুমি। আমি ঠিক ভেবে ছিলাম তুমি কাঁদছো। আম্মু তোমার শরীলটা ভালো না। ডাক্তার তোমাকে কাঁদতে বারং করছে
আম্মু: আজ দু বছর হয়ে গেলো মিষ্টি চলে যাওয়া। এই দু বছরে বদলে গেছে আমার ছেলে টা। সেই পরশ আর এখন কার পরশের মধ্য কোনো মিল নেই। কোনে হলো এমন টা
দিশা: আমি জানি আম্মু এই দুবছরে ভাইয়া সূর্য আলো দেখতে ভুলে গেছে। রাতভর মদের নেশার ডুবে থাকে। শেষ রাতে বাড়ি ফিরে। আফিস যাই না। নিজের দিকে খেয়াল নেই। কারো সাথে কথা বলে না। কথা বলতে গেলো রাগ দেখিয়ে চলে যাই।
আম্মু: কি থেকে কি হয়ে গেলো।
দিশা: আম্মু তুমি এভাবে কেদো না। আমি ভাইয়া সাথে কথা বলায় চেষ্টা করবো। বলতে পরশ নিজের রুমে থেকে নিচে নামতে দিশা
দিশা: দাড়া ভাইয়া।
পরশ: কি বলবি বল( রাগ দেখিয়ে)
দিশা: দেখ ভাইয়া দু বছর হয়ে গেছে তুই না নিজের খেয়াল নিস না আম্মু: ভাইয়া আম্মু শরীলটা ভালো না। আমি আগে মতো এই বাড়িতে আসতে পারি না। শশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এই দু বাড়ি সংসার আমি আর পারছিনা। তুই এবার নিজেকে নিয়ে ভাব। ভাইয়া আমি যতোদুর জানি এখনো তোর চাকরিটা যাই নি। তোর সিটে কেউ বসেনি তোররি আসে। আচ্ছা ভাইয়া তুই আগে মতো আফিস যা না বলতে পরশ দিশা দিকে রাগী লুকে তাকালো। পরশের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে
দিশা: দেখ ভাইয়া বলতে পরশ ওখন থেকে চলে গেলো তারপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো
দিশা: ভাইয়া শোন
আম্মু: এমন কেউ কি নেই যে আমার পরশকে আগে হাসিখুশি পরশসে ফিরিয়ে আনবে
দিশা: হয়তো আছে কোথাও। দেখবে আম্মু তোমার উপর আল্লাহ ঠিক ভাইয়া জন্য তাকে পাঠাবে। এবার চলো কিছু খাবে। তারপর আমরা একটু বের হবো চলো আম্মু খাবে
এ রান নে রান নে। আমাদের জিততে হবে। আমরা জিতবো দেখেনিস বলে হাসতো লাগলো………
(চলবে)