বজ্জাত বউ,পর্ব ২৬,২৭
লেখিকা বিলকিস
পর্ব ২৬
দিশা: ভাইয়া আমি আর আম্মু কালকে তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি ( চোখ বন্ধ করে) কি ব্যাপার ভাইয়া কোনো রিয়ার্ট করছে না কেনো। তারমানে ভাইয়া কি বিয়েতে রাজি। ভাইয়া ( চোখ খুলে) ভাইয়া ভাইয়া এই যা ভাইয়া কোথায় গেলো। ভাইয়া তাহলে কি আমার কথা শুনেনি। ভাইয়া এই ভাইয়া গেলো কোথায়। দুর এতো কষ্ট করে বললাম তাও শুনলো না। আম্মু আম্মু ( পরশের রুম থেকে বের হয়ে)
আম্মু: কি দিশা বলছিস পরশকে
দিশা: বলেছি কিন্তু তোমার ছেলে শুনতে পাইনি।
আম্মু: শুনতে পাইনি মানে আমার ছেলে কানে খুব শুনে।
দিশা: আরে আম্মু আমি চোখ বুজে ভাইয়াকে মেয়ে দেখায় কথা বললাম। কিন্তু যখন চোখ খুললাম তখন দেখি তোমার ছেলে নেই।
আম্মু: নেই মানে কোথায় গেলো পরশ।
দিশা: আমি জানবে কি করে। আম্মু তুমি কাল সকালে ব্রেক – ফ্রাস্টের সময় কথাটা বলো।
আম্মু: ঠিক আছে। তুই যা গিয়ে ঘুমা
দিশা: ঠিক আছে আম্মু ( বলে চলে গেলো)
পরেদিন সকালে
অথৈ: good morning আব্বু.
আব্বু: good morning অথৈ।
অথৈ: আব্বু আমাকে ৩০০০ টাকা দাও না।
আব্বু: কি করবে টাকা দিয়ে।
অথৈ: আব্বু আমি না দোকানে একটা জুতো দেখেছি অনেক সুন্দর।
আম্মু: তুমি যা দেখো তাই তো অনেক সুন্দর হয় মা।
অথৈ: আম্মু তুমি যদি দেখতে জুতো জোড়া
আম্মু: চুপ করো। আর ব্রেক- ফ্রাস্ট করে নিজের রুমে যাও।
অথৈ: আম্মু
আম্মু: যেটা বলছি সেটা করো।
দিশা: আম্মু ভাইয়া আসছে।
পরশ: good morning every one. ( ড্রাইনিং টেবিলে বসতে বসতে বললো)
দিশা: good morning ভাইয়া।
পরশ: দিশা তুই গতোকাল কিছু বলতে চাইছিলো। আসলে তুই যখন বলতে শুরু করলি তখন আমার important ফোন এসেছিলো ফোন রিসিভ করার করনে তোর কথা শুনতে পাইনি। এখন বল কি বলতে চাইছিলি।
দিশা: আমি না আম্মু বলবে।
পরশ: আম্মু
আম্মু: না মানে আসলে দিশা তুই বল
পরশ: আম্মু যা বলায় বলো।
আম্মু: বলছিলাম তুই আফিস থেকে ফিরবি কয়টায়।
পরশ: রোজ যে সময় আসি সেই সময়। এই কথা বলায় জন্য এতো সময় নিচ্ছো। আম্মু আমি আসছি ( বলে উঠে চলে গেলো)
দিশা: এটা কি বললে আম্মু।
আম্মু: বাদ দে আগে মেয়েটাকে দেখে আসি তারপর যা বলায় আমি বলবো। ও তুই চুড়ি জোড়া এনেছিস।
দিশা : হ্যা আম্মু।
অথৈ: দুর এভাবে রুমে থাকা যাই। আম্মু হয়েছে একটা আমার। আর ভালো লাগে না। রেজাল্ট তো দিচ্ছে না।
অথৈর আম্মু: অথৈ এই অথৈ( ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকলো)
অথৈ: হ্যা আম্মু কিছু বলবে।
অথৈর আম্মু: অথৈ তুই আজ এই শাড়িটা পড়বি।
অথৈ: শাড়ি কিন্তু আম্মু আমি শাড়ি পড়বো কেনো।
অথৈর আম্মু: কারন আছে তাই পড়বি। আমি তোকে একঘন্টা সময় দিচ্ছি এর মধ্য পড়ে রেডি হয়ে নাও। একঘন্টা মানে একঘন্টা। ( বলে চলে গেলো)
অথৈ: দুর আমার শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না। আম্মুর মাথায় যে কি চলছে কে যানে। বাইরে যেতে দিচ্ছে না আবার শাড়ির পড়তে বলছে। পড়বো না শাড়ি( শাড়িটা বিছানায় ফেলে দিয়ে বললো)
পরশ: আসলাম সাহেব আজ স্যার আফিসে আসেনি কেনো।
আসলাম সাহেব: স্যার ভাগ্নীকে আজ দেখতে আসছে তাই স্যার আফিসে আসে নি।
পরশ: স্যারের ভাগ্নী মানে অথৈ। অথৈকে দেখতে আসছে।
আসলাম সাহেব: জি স্যার
পরশ: ওই অসভ্য কে করছে বিয়ে। ( ল্যাপটপের কাজ করতে করতে)
আসলাম সাহেব: তা জানি না স্যার।
পরশ: ও ঠিক আছে আপনি আপনার কাজ করুন
আসলাম সাহেব: জি স্যার ( বলে কাজে মনোযোগ দিলো)
অথৈর আম্মু: অথৈর আব্বু শুনছো।
অথৈর আব্বু: হ্যা বলো।
অথৈর আম্মু ওনাতো আসার সময় হয়ে গেলো। আমার তো তোমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
অথৈর আব্বু: আমার মেয়ে খুব লক্ষী দেখবে ও কোনো ভুল করবে না লক্ষী মেয়ে মতো থাকবে। বলতে বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠলো।
অথৈর আম্মু’ : কলিং বেল বাজছে। ওনারা এসে গেছে যাও দরজায় খুলে গিয়ে।
অথৈর আব্বু: হ্যা খুলছি বলে দরজায় খুলে দিয়ে বললো আরে আপনারা আসুন ভেতরে আসুন। আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো।
পরশের আম্মু: না হয়নি। আপনারা সবাই ভালো আছেন।
অথৈর মামু: সালমা ওনারা হচ্ছেন ছেলের মা, ছেলের বোন।
অথৈর আম্মু: আমরা ভালো আছি আপনারা ভালো আছেন তো।
পরশের আম্মু: আল্লাহ রহমতে ভালো আছি।
অথৈর আব্বু: আপনারা দাড়িয়ে কেনো বসুন।
পরশের আম্মু: হ্যা বসি।
অথৈর আব্বু: অথৈর আম্মু ওনাদের চা মিষ্টি দাও।
অথৈর আম্মু : হ্যা দিচ্ছি বলে রান্নাঘরে চলে গেলো।
অথৈর আম্মু: আপনার তো সব শুনেছন আমার ছেলে সম্পর্কে।
অথৈর আব্বু: হ্যা ভাইজান সবটায় বলেছে আমাদের।
অথৈর আম্মু: এই যে চা মিষ্টি। আপনারা চা মিষ্টি নিন।
দিশা: আপনারা এতো ব্যস্তো হবেন না। আন্টি আপনি বরং অথৈকে নিয়ে আসুন।
অথৈর আব্বু: যাও অথৈকে নিয়ে আসো।
অথৈর আম্মু: আপনারা চা মিষ্টি খান আমি অথৈকে নিয়ে আসছি ( বলে অথৈর রুমে চলে গেলো)
অথৈ: আমি শাড়ি কিছুতে পড়বো না
অথৈর আম্মু: অথৈ তুই এখনে শাড়ি পরিসনি।
অথৈ: আম্মু তুমি আগে সত্যি করে বলো ওনারা কেনো এসেছন। আর তুমি তো আগে কখনো শাড়ি পড়তে বলোনি তাহলে আজ কেনো বলে আম্মু বলো।
অথৈর আম্মু: তুই শাড়ি পড়বি কিনা।
অথৈ: না পড়বো না।
অথৈর আম্মু: ঠিক আছে তাহলে আমি তোর আব্বু বললো তুমি ওর পছন্দ করে রাখা জুতো জোড়া কেনার কোনো দরকার নেই।
অথৈ: জুতো। আমি জুতো জোড়া জন্য একটা শাড়ি পড়তে পারবো না। আম্মু আমি পড়বো। আমি শাড়ি পড়ছি তুমি কুচিটা ধরে দাও ( বলে শাড়ি পড়তে লাগলো)
অথৈর আম্মু: দাও কুচি ধরে দিচ্ছি ( বলে কুচি ঠিক করতে লাগলো)
অথৈর: আম্মু শাড়ি পড়া শেষ। তুমি আব্বুকে বলো জুতো জোড়া।
অথৈর আম্মু: বলবো এখন আমার সাথে নিচে চলো। আর হ্যা নিচে গিয়ে কোনো দুষ্টমি নয়। যদি দুষ্টমি করিস তাহলে জুতা
অথৈ: তোমার কান ধরছি না না আমার কানধরে বলছি কোনো দুষ্টমী নয়।
অথৈর আম্মু : এবার চলো
অথৈ: জুতো তোর কতোকিছু করতে হচ্ছে।
অথৈর আম্মু: কি হলো চলো
অথৈ: হ্যা আম্মু চলো ( বলে আম্মুর সাথে নিচে নামতে আবাক)……………….
(চলবে)
বজ্জাত বউ
লেখিকা বিলকিস
পর্ব ২৭
অথৈ: হ্যা আম্মু চলো (বলে আমি আম্মু সাথে নিচে নামতেই আবাক ) একি দেখছি আমি এ তো সেই আন্টি। যার রাস্তায় একটা ব্যাগ পড়ে গিয়েছিলো। সাথে ওনার মেয়ে আছো দেখছি। আন্টি টা কতো সুন্দর যেখানে যাই ওনার মেয়েকে নিয়ে যাই আর আমার আম্মু আমাকে কোথায়ও নিয়ে যাই না। যাই হোক ওনারা আমাদের বাড়িতে কেনো এসেছে। ( বিড়বিড় করে বললো)
অথৈর আম্মু : দাড়িয়ে পড়লি কেনো। নিচে চল।
অথৈ: আম্মু আমি না ওনাকে
অথৈর আম্মু: তোর সব কথা শুনবো তবে এখন না।
অথৈ: শুনবে না ছাই ( মনে মনে বললো)
অথৈর আম্মু: আমার মেয়ে অবন্তী ইসলাম অথৈ। অথৈ ওনাকে সালাম করো।
অথৈ: আসসালামু ওলাইকুম আন্টি।
পরশের আম্মু: ওলাইকুম আসসালাম। আরে তুমি সেই মেয়ে না। হ্যা তো তুমি সেই মেয়ে। এদিকে এসো মা আমার কাছে এসো।
অথৈ আম্মু: যাও কাছে যাও
অথৈ: ঠিক আছে আম্মু বলে আমি ওনার কাছে গিয়ে বসলাম।
পরশের আম্মু: বাহ্ বেশ সুন্দর লাগছে তোমাকে মা। উপর আল্লাহ তোমাকে আমার ছেলে জন্য পাঠিয়েছে।
অথৈ: আরে আন্টি আপনি ভুল করছেন আমাকে আপনার ছেলে জন্য পাঠাবে কেনো আমাকে তো সালমান খানের জন্য পাঠিয়েছে।
অথৈর আম্মু: অথৈ তোমাকে না বলেছি কেনো বাড়তি কথা বলবে না। আসলে আমার মেয়ে টা একটু এ রকমি।
পরশের আম্মু: আরে আপনি ওকে বকছেন কেনো। আমার কিন্তু ওর কথা বেশ ভালো লেগেছে। তুমি বলো মা আর কি বলবে।
অথৈ: আন্টি আপনি না খুব ভালো।
পরশের আম্মু: তুমি ও খুব ভালো মা। ( বলে কপালে একটা চুমো খেলো)
অথৈ: আন্টি (বলে ডাকতেই আম্মু আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই। কিন্তু মাথায় মধ্য প্রশ্ন ঘুরছে ওনারা কেনো এসেছে।)
পরশের আম্মু : কিছু বলবে মা।
অথৈ: না কিছু বলবো না।
পরশের আম্মু: দিশা চুড়ি জোরা বের কর।
দিশা : হ্যা এই নাও চুড়ি বলে আম্মু হাতে চুড়ি দিলো।
অথৈ: ওনি চুড়ি বের করলো কেনো। তারমানে ওনি আমাকে ওনার ছেলের জন্য দেখতে এসেছে। কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি যে সালমান খান কে ভালোবাসি ( মনে মনে বললো)
পরশের আম্মু: দেখি মা হাত টা (বলে ওনি আমার হাতটা ওনার কাছে নিয়ে চুড়ি পড়তে লাগলো আর বলতে লাগলো) শোনো মা তোমাকে কিন্তু আমার ছেলেকে ঠিক করতে হবে। আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।
অথৈ: আপনার ছেলে পাগল নাকি যে ওনাকে ঠিক করতে হবে। পাগল ঠিক করার জন্য তো পাগলা গারত আছে।
পরশের আম্মু: না মা আমার ছেলে পাগল না তবে তোমাকে আমার ছেলেটাকে পাগল বানাতে হবে।
অথৈ: আমি তো শুনেছি মানুষ পাগলকে ঠিক করতে বলে আর আপনি দেখছে সুস্থ্য মানুষকে পাগল করতে বলছেন।
পরশের আম্মু: হ্যা মা বলছি। কারন এ পাগল সেই পাগল করতে হবে না। তোমার ভালোবাসার পাগল করতে হবে। পারবে না মা তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমার ছেলেকে পাগল করতে। আমার ছেলে যে ভালোবাসা প্রায়োজন।
অথৈ: ওনি কি বলছে কিছু বুঝতে পারছিনা। একবার বলছে পাগল করতে হবে। আর একবার বলছে ভালোবাসার পাগল করতে হবে। ভালোবাসা কি হাটের মুয়া যে কিনে এনে খাইয়ে দিয়ে পাগল করবো ( মনে মনে বললো)
পরশের আম্মু: আপনার মেয়েকে আমার খুব পছন্দ। আমি চাই শুভ কাজ তাড়াতাড়ি করতে। আর অথৈকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে। কি মা যাবি তো আমার বাড়ি।
অথৈর আম্মু: হ্যা যাবে তো। তাই না অথৈ।
অথৈ: এ্যা না মানে
পরশের আম্মু: আজ তাহলে ওঠি। আর আমরা বাড়ির গিয়ে কথা বলে বিয়ের তারিখ টা ঠিক করে জানাবে। দিশা চল মা।
অথৈর আব্বু: কিছু মুখে দিলেন না।
পরশের আম্মু : আজ না আর একদিন ছেলে বউ সাথে করে নিয়ে এসে পেট ভরে খেয়ে যাবো। আস আসি ( বলে ওনারা চলে গেলো)
অথৈ: আম্মু তুমি কেনো আগে আমাকে বলোনি যে ওনারা এসছেন আমাকে দেখতে কেনো বলোনি।
আম্মু: কারন বললে তুই রুম থাকতি না তাই।
অথৈ: আম্মু আমি বিয়ে করবো না।
আম্মু: বিয়ে তো তোমাকে করতে হবে আর এই বিয়ে করতে হবে।
অথৈ: আব্বু তুমি আম্মু সাথে এক হলে।
আব্বু: দেখ মা ছেলে খুব ভালো।
অথৈ: আমার ভালো ছেলে চাই না। আমি সালমান খানকে চাই। বলে আমি নিজের রুমে এসে রুমের দরজায় বন্ধ করে দিলাম। না আমি কিছুতে ই বিয়ে করবো না। আমি সালমান খানকে বিয়ে করবো। এছাড়া ওই ছেলেটা কেমন হবে জানি না। না না না আমি কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি বাড়ির থেকে পালাবো হ্যা পালাবো কিন্তু পালিয়ে যাবো কোথায়। দুর এখন মাথায় বুদ্ধি আসছে না।
অপর দিকে সন্ধ্যায় পরশ আফিস থেকে বাড়ির ফিরে নিজের রুমে যেতেই পেছন থেকে পরশের আম্মু ডাকলো।
পরশ: কিছু বলবে আম্মু
পরশের আম্মু: হ্যা বলবো।
পরশ: কি বলবে বলো
পরশের আম্মু: আমি আজ তোর জন্য মেয়ে দেখে এসেছি। আর মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
পরশ: what? আম্মু আমি তোমাকে অনেক বার বলেছি আমি আর বিয়ে করবো না। তারপরে তুমি কেনো মেয়ে দেখতে গেলে।( রাগী গলায়)
পরশের আম্মু: কারন আমি আমার চোখের সামনে আমার ছেলেকে তিল তিল শেষ হয়ে যেতে দেখতে পারছিনা।
পরশ: তুমি কি ভেবেছো আম্মুঅন্য একটা মেয়ে এসে আমার সব কষ্ট দুর করে দেবো ভুল ভেবেছো আম্মু। আমি কখনো আর বিয়ে করবো না করখনো শুনতে পেয়েছো। না মানে না।
দিশা: কেনো বিয়ে করবি না তুই ভাইয়া। তোর জন্য আম্মু চিন্তা করতে করতে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি। তাছাড়া আম্মু শরীলটা ভালো নয়। আমি কিছুদিন পর ওই বাড়িতে চলে যাবে। দেখ ভাইয়া আমি আর আম্মু চাই তুই বিয়ে কর।
পরশ: আমি কাউকে বলিনি আমার জন্য চিন্তা করতে। আর হ্যা ভালো করে শুনে রাখ আমি বিয়ে করবো না। ok বলে সিড়ি দিয়ে উপরে যেতেই দিশা আম্মু বলে চিৎকার দিতেই পরশ ঘুরে তাকাতেই দেখলো…
( চলবে)