বজ্জাত বউ,পর্ব ৪৪

0
1633

বজ্জাত বউ,পর্ব ৪৪
লেখিকা বিলকিস

সকালে
অথৈর ঘুম ভাঙ্গতে দেখে তার পাশে পঁচা কুমড়ো খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত পঁচা কুমড়ো কে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে । ইচ্ছে করছে গালে একটা চুমো দেই। গতো কাল আমার পঁচা কুমড়োটা হিরো মতো হিরো না আমার সালমান খানের মতো এসে আমাকে ওই শয়তানটার হাত থেকে বাঁচালো। না না আমি আর ওসব কথা মনে করতে চাই না ওটা অতীত। অতীত ভুলে যাওয়া ভালো ( বলে পরশের গালে আলতো করে একটা চুমো খেলো। চুমো খাওয়াতে পরশ একটু নড়ে ওঠলে) হায় আল্লাহ পঁচা কুমড়োটা জেগে যাবে নাতে। যদি জেগে প্রশ্ন করে কেনো করলে এটা তখন। না বাবা তার আগে আমি এখান থেকে কেটে পড়ি ( বলে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসলো। নিচে আসতে মামনি বললো)
মামনি: অথৈ মা আমার আমার কাছে আয় ( বলে আমাকে কাছে নিয়ে কপালে একটা চুমো খেলো। আর বললো যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওটা নিয়ে আর চিন্তা করিস না কেমন। তুই এখন টেবিলে গিয়ে বস আমি একটু পর খাবার দিচ্ছি।
অথৈ: হ্যা মামনি ( বলে মাথা নাড়ালাম)
মামনি: হ্যা মা পরশ ওঠেনি
অথৈ: না মামনি ওনি ঘুমাচ্ছেন।
মামনি: ও ( বলে মামনি রান্না ঘরে চলে গেলেন)
দিশা: আম্মু আমার তাড়া আছে একটু জলদি খাবার দাও।
আম্মু: বস দিচ্ছি
পরশ: আ মাথাটা খুব ঝিম ঝিম করছে ( চোখ খুলে বললো) এই রে অনেক বেজে গেছে আফিসে দেরি হয়ে যাবে ( বলে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসলো)
দিশা: আম্মু দাও বলছি
আম্মু: দিচ্ছি এই নে খাবার ( বলেসবাইকে খাবার দিলো। সবাই খাবার খাচ্ছে এমন অথৈ বমি বমি ভাব হতেই অথৈ হাত দিয়ে মুখ চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো।
মামনি: কি হলো মেয়েটার শরীর খারাপ হয়নি তো এমব ভাবে মুখ চেপে চলে গেলো।
দিশা: আম্মু আমি আসছি ( বলে দিশা চলে গেলো)
পরশ: আম্মু ঠিক বলেছে কি হয়েছে ওর গতে রাতেও এভাবে বমি করলো আবার এখনো শরীর খারাপ। দিশা আসলে বলবো ওকে একবার ডাক্তার দিয়ে চেকাপ করাতে ( মনে মনে বললো) আম্মু আমার হয়ে গেছে আমি আসছি ( বলে পরশ আফিসে চলে গেলো)
অথৈ: এতো বমি হচ্ছে কেনো আমার। কয়দিন হলো এমন হচ্ছে। শরীরটাও কেমন যেনো মেস মেস করছে। আচ্ছা আম্মুকেএকবার বলতে শুনেছিলাম যাদের পেটে বাচ্চা হয় তাদের নাকি বমি বমি হয় তাহলে কি আমার ( বলে থেমে গেলো) আচ্ছা দিশা আপু তো ডাক্তার নিশ্চায় দিশা আপু রুমে বেবি চেক থাকবে ( বলে দিশার রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে অনেক খোজা খুজি পরএকটা বেবি চেক পেলো) এইতো বেবি চেক( বলে নিজেররুমে এসে ওয়াশ রুমে গিয়ে বেবি চেকে দিয়ে টেষ্ট করলো) ওটাতো দুটে দাগ লাল হয়ে ওঠেছে তারমনে আমি ( বলতে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো। তারপর অজেড়ে কাঁদতে লাগলো।) একটা মেয়ে যখন জানতে পারে সে মা হবে তখন আন্দন সিমা থাকে না কিন্তু আমি বুঝি এমন মেয়ে যে সে জানলে মা হবে কিন্তু খুশি বদলে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে ( বলতে ওয়াশরুমে ও পাশে থেকে মামনি ডাকতে লাগলো)
মামনি: অথৈ অথৈ মা
অথৈ: আমি ওয়াশরুমে মামনি ( বলে মুখে পানি ওয়াশরুম থেকে বের হলো) মামনিডাকছিলে
মামনি: শরীর ঠিক আছে তো মা। দেখি জ্বর আসেনি ( বলে কপলে হাত দিলো) না আসে নাই তাহলে এভাবে ওঠে আসলি কেনো।
অথৈ: মামনি আমি একদম ঠিক আছি। আসলে মাথায় মধ্য কেমন যে লাহলে তাই চলে আসলাম। একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।
মামনি: ঠিক আছে মা তুই একটু ঘুমানো চেষ্টা কর আমি আসছি ( বলে চলে গেলো)
অথৈ: মামনি আমি যেদি তোমাকে বলতে পারতাম যে তুমি দাদি মা হচ্ছে ( বলে কাঁদতে লাগলো। তারপর ঘুমিয়ে গেলো। এভাবে শুয়ে বসে সারাদিন কেটে গেলো। রাত ৮ দিকে পরশ বাড়িতে আসলে। বাড়িতে এসে ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো। সাওয়ার নিচে দাড়াতে হঠ্যৎ করে ওয়াশরুমে এক পাশে পড়ে থাকা বেবি চেকের উপর চোখ পড়লোো পরশে মাথা বাজ পড়লো। সাওয়ার বন্ধ করে বেবি চেকটা হাতে তুলে নিলো আর বললো) এটা কার। দেখে মনে হচ্ছে সে পেগন্ট্যান। তাহলে দিশা। না দিশা তো আমার ওয়াশরুমে কখনো আসে না। আর ও সাকলে আমার আগে বের হয়েছে আর ফিরেছে আমার সাথে। তাহলে অথৈ। এ আমি কি ভাবছি অথৈ কি করে হবে। আমার যতো দুর মনে পড়ে আমি তো অথৈ ট্যার্স করেনি তাহলে কি অন্য। না এটা হতে পারে না ও আমি যতোদুর চিনি ও বাকি পাঁচটা মেয়েদের মতে নয়। হাসবে খেলবে কিন্তু এটা এসব আমি কি ভাবছে ( বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে ডিনার সেরে বিছানায় উপর বেবি চেকটা নিয়ে বসে। আর আজে বাজে চিন্তা করছে কিছু বুজতে পারছেনা। এমন সময় রুমে আসতে পরশ বললো) এটা কার অথৈ ( বেবি চেক টা দেখিয়ে বললো)
অথৈ: তখন মামনি ডাকতে বেবি চেক ওয়াশরুমে রেখে চলে এসেছিলাম ওঠানো কথা মনে ছিলো না। এখন কি উওর দেবো ওনাকে আমি। সবটা বললে কি ওনি বিশ্বাস করবে না আমাকে ভুল ভাববে ( মনে মনে বললো)
পরশ: আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি অথৈ এটা কার।
অথৈ: না মানে আসলে আ
পরশ: আমতা আমতা করছো কেনো সরাসরি উওর দাও এটা কার। কি হলো বলো ( ধমক সুরে)
অথৈ: আ আ আ মা মা মানে
পরশ: আ মা মনে এগুলো শুনতে চাই না এটা কার বলো( আবার ধমক দিয়ে বললো)
অথৈ: আমার ( কাঁদতে কাঁদতে বললো)
পরশ: অথৈ তুমি আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা তুমি। আমার যতো দুর মনে আমার সাথে তোমার তেমন কেনো সম্পক হয়নি। এমন কি আমি তোমাকে সেভাবে ছুয়ে দেখিনি। আর তুমি
অথৈ: আসলে সেই দিন রাতে ( কাপতে কাপতে লাগলো)
পরশ: চুপ একদম চুপ ( ধমক দিয়ে বললো) একদম মিথ্যা কথা বলবে না।
অথৈ: হে আল্লাহ এ কোন পরীক্ষা নিচ্ছো আমার তুমি। ওনি তো আমাকে ( বলে অজেড়ে চোখে পানি ফেলতে লাগলো)
পরশ: ছি অথৈ ছি শেষমেষ তুমি এটা করতে পাড়লে। কিসের অভাব ছিলে এখানে তোমার। আরে তুমি যদি কাউকে পছন্দ করে সেটা আমার বলতে পাড়তে আমি তার হাতে তোমাকে তুলে দিয়ে আসতাম। কিন্তু তুমি আর পাড়ছিনা
অথৈ: আমার কথাটা একবার শুনুন আমি
পরশ: চুপ আমি তোমার কেনো কথা শুনতে চাই না এমনি তোমাকে আমি দেখতো চাই না চলে যাও আমার সামনে থেকে চলে যাও।
অথৈ: আপনি ভুল ভাবছেন আমি সে রকম মেয়ে
পরশ: আমার যা ভাবার হয়ে গেছে তুমি যাও বলছি ( বলতে অথৈ কান্না করতে করতে দৌড়ে চিলিকোঠার রুমে গিয়ে বসলো)
অথৈ: কেনো হচ্ছে ওসব আমার সাথে ওনিআমাকে ভুল বুঝছেন। আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছে। ভাবছে আমি অন্য কারো। ওনিতো আমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছে না এখন আমি কি করবো খোদা মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার ( বলছে আর দুচোখে পানি যেনো বাধ ভেঙ্গে চোখ বেড়ে পড়ছে)
পরশ: কেনো করলে এটা অথৈ কেনো করলে ( বলতে পরশের চোখ কোনার পানি ছলছল করছে) আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম এই মর্যাদা দিলে বিশ্বাসে জানি না কেমন যেনো তোমার প্রতি আমার একটা বিশ্বাস ছিলো টান তোমাকে না দেখলে তোমার প্রতি এক অজানা ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছিলো আমার আর তুমি সবটা ভেঙ্গে দিলে অথৈ কেনো করলে এরকম কেনো করলে এই বাড়ি প্রতিটা সদস্য তোমাকে এতো ভালোবাসতো তাদের ভালোবাসা মর্যদাটুকু রাখলে না ( এরকম অনেক কথা বলতে বলতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। অপর দিকে চিলিকোঠাররুমে চোখে পানিতে রাত কেটে যাই অথৈর)
সকালে
পরশ: এতো দরজায় ধাক্কাছে কে। খুলছি ( বলে বিছানা থেকে ওঠে দরজা খুলেতে পরশের আম্মু পরশের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিলো)
পরশ: আম্মু তুমি আমাকে
আম্মু: হ্যা আমি তোকে থাপ্পর মারলাম। ভাবছিস কেনো থাপ্পর মারলাম। অথৈ কউ পরশ।
পরশ: আম্মু ওর কথা তুমি বলবে যানে ও অন্য জন( বলায় আগে পরশের বলায় আগে পরশের গালে আর একটা থাপ্পর দিলো) চুপ একদম ওর মানে বাজে কথা বলবি না। সেই অন্য জন আর কেউ না তুই নিজে
পরশ: what
দিশা: হ্যা ভাইয়া আম্মু ঠিক বলছে সেই অন্য জন তুই।
পরশ:আমি কিছু বুঝতে পারছিনা কি বলছো তোমরা
দিশা: আমি বলছি ভাইয়া। মিষ্টি ভাবি জম্মদিন পালন করাজন্য সেই রাতে একটা শাড়ি আর কিছু গয়না নিয়ে এসেছিলোো আমার কাছে মিষ্টি ভাবি মতো করে সাজবে আর তোর সাথে মিলে জম্মদিন পালন করবে আমি অথৈ কে মিষ্টি মতো করে সাজিয়ে দিয়েছিলাম ও গিয়েছিলো ঘরে কিন্তু তুই সেদিন অনেক মদ খাওয়ার করনে মাতাল হয়েছিলি আর অথৈকে মিষ্টি ভেবে তোর ওর আর তোর মধ্য একটা সম্পকো হয় তর ফল অথৈ পেগন্ট্যান। ভাইয়া মিষ্টির জয়গা নিতে চাই ওচাই তোর মধ্য ওর জন্য নতুন একটু জয়গা করে নিতে। ওকে তোকে খুব ভালোবাসে ভাইয়া তুই পরবেনি ওকে একটু ভালোবাসতে। পারবিনা
পরশ: oh God অথৈ কোথায়
দিশা: এই চিরকুট টা রেখা চলে গেছে কোথায় গেছে বলেনি।
পরশ: আমি আসছি আর হ্যা অথৈকে নিয়ে ফিরবো( বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো)
অথৈ: কোথায় যাবো আমি এই শহরে মামু ছাড়া পরিচিত কেউ নোই কিন্তু মামু এখনতো দেশেই নেই। বাড়িতে গেলে আম্মুকো কি বললো আমি ( রাস্তা দিয়ে হাটছে আর বলছে। সারাদিন পর সন্ধ্য দিকে অথৈ নিজের বাড়ির সামনে এসে কলিং বেল বাজালো। কলিং বেল বাজাতে অথৈ আম্মু দরজা খুলে দিলো)
অথৈর আম্মু: অথৈ মা আমার তুই। দেখো মুখ রা শুকিয়ে গেছে। আয় ভিতরে আয় ক্ষিধে পেয়েছে না য়া নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয় আজ সবাই মিলে একসাথে খাবো যা মা
অথৈ: আম্মু আমাকে কেনো জানতে চাইলো না কেনো এখানে এসেছি না ভালো হয়েছে এখন জানতে চাইনি পরে সবটা বলবো( বলে নিজে রুমে গিয়ে বললো) আর কখনো য়াবেনা ওই পঁচা কুমড়ো বাড়িতে। আমার বাচ্চাকে আমি মানুষ করবে তোকে বাবাই খুব পঁচা আমাকে অনেক বকেছে ( বলতে লাগলো হঠ্যৎ করে জানালা ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠলো তাই বুজি ওদের বাবাই খুব পঁচা)
অথৈ: কে
পরশ: আমি ( জানালা ওপাশ থেকে রুমে আসলো)
অথৈ: আপনি এখানে
পরশ: কেনো এটা আমার শশুড়বাড়ি আমি আসতে পারি। এই মেয়ে কি ভাবেছে হ্যা আমাকে ফেলে রেখে আমার বাচ্চাকে নিয়ে চলে আসলে তোমারসাহসতো কম নয় ( বলে ধমক দিলো)
অথৈ: ধমক দিচ্ছেন কোনো আপনি শুধু ধমক দেন।
পরশ: এখন থেকে আরো দেবো এই গতোরাতে যখন আমি ওতোগুলো কথা বললাম তখন কেনো বলোনি আমাকে হ্যা কেনো ( বলে অথৈকে জরিয়ে ধরলো)
অথৈ: আমি তো বলতে চেয়েছিলাম তারআগে আপনি এতোগুলো কথা শুনালেন
পরশ: sorry এখন যাও ফ্রেস হয়ে নাও আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে ( বলে অথৈ কপালো একটা চুমো খেলো)
অথৈ: শুধু একটা sorry আর একটা চুমো
পরশ: কি বললে
অথৈ: আমি ফ্রেস হয়ে আসছি
পরশ: আরে এটাতো নিয়ে যাও( বলে একটা ব্যাগহাতে দিলো। তারপর দুটোজনে ফ্রেস হয়ে একসাথে ডিনার করলো অথৈ আম্মু অনুরোধে আজকে রাতটা এখানে থেকেগেলো পরশ। রাতে অথৈ পরশের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। পরেদিন সকালে বাড়ি চলে আসলো।এভাবে কেটে গেলো এক, দুই তিন দিনকরে পুরা নয় মাস। এই নয়মাসে অথৈ পরশকে জ্বলিয়ে তেজপাতা বানিয়ে। সারাদিন আফিস করার পর মেটাতে হয়েছে অথৈর বায়না। কখনো মাঝরাতে আইসক্রিম খাবে। কখনে রাতে রাস্তা দিয়ে হাটেবে কখনো ঝালমুড়ি এভাবে পুরা নয়মাস একটা করে বায়না পূরন করতে হয়েছে পরশের। কখনো রাগ হয়ে কখনো হাসি মুখে সব বায়না পূরন করেছে।নয় মাস পর সকালে
মামনি: অথৈ সর্বধানে দেখেশুনে হাটবি কিন্তু আর এই ফলগুলো খেয়ে নাও।
অথৈ: না মামনি
মামনি:খেয়ে নাও না হলে কিন্তু পরশ বকবে
অথৈ: বকবে না ( বলে সিড়ি দিয়ে ওঠতে বসে পা মুচকে সিড়ি থেকে নিচে পড়ে যেতে অথৈ চিৎকার দিয়ে বললো পঁচা কুমড়ো আ….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here