বজ্জাত বউ,পর্ব ৪৫ শেষ
লেখিকা বিলকিস
অথৈ: বকবে না ( সিড়ি দিয়ে ওঠতে বসে পা মুচকে সিড়ি থেকে নিচে পড়ে যেতেই অথৈ চিৎকার দিয়ে বললো পঁচা কুমড়ো আ বলতে সিড়ি থেকে নিচে পড়ে গেলো অথৈ পড়ে যেতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো)
মামনি: অথৈ মা ( বলে দৌড়ে অথৈর কাছে আসলো)
পরশ: অথৈর গলায় মনে হলো কিছু হয়নি তো ( ড্রেসিং টেবিলে সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিলো অথৈর গলায় পেয়ে রুম থেকে নিচে নামতে বললো) অথৈ আম্মু কি হয়েছে অথৈ কি হলো বলছো কেনো।
মামনি: আমি রান্না ঘরে ছিলাম ওর চিৎকার শুনে এসে দেখি ও নিচে পড়ে রয়েছে।
পরশ: অথৈ এই অথৈ ( মুখে হাত দিয়ে বললো) কথা বলছো না কেনো অথৈ আম্মু অথৈ কথা বলছেনা কেনো অথৈ এই অথৈ
মামনি: ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।
পরশ: তুমি ঠিক বলেছো আম্মু ওকে হাসপাতালে নিতে হবে ( বলে অথৈকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলো তারপর নিজের গাড়িতে বসে গাড়িতে দুতোগতিতে চালাতে লাগলো। ১৫ মিনিট পর হাসপাতালে পৌছাতে পরশ দিশাকে ডাকতে লাগলো।)
পরশ: দিশা দিশা এই যে শুনছেন ডাক্তার দিশা কোথায়।
দিশা: ভাইয়া( পেছন থেকে বললো) ভাইয়া কি হয়েছে তুই এরকম করছিস কেনো।
পরশ: দিশা অথৈ
দিশা: কি হয়েছে অথৈর
পরশ: তুই ওকে বাঁচা বোন তুই ওকে বাঁচা
দিশা: নার্স ওনাকে আপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ( বলতে দুজন নার্স অথৈকে নিয়ে গেলো) আর আপনি ডাক্তার আহাদ আর ডাক্তার দিলরুবাকে খবর দিন জলদি।
পরশ: দিশা আমি মিষ্টি কে হারিয়ে ফেলেছি অথৈকে হারাতে চাই না।
দিশা: আমি আসছি ভাইয়া( বলে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলো)
পরশ: হে আল্লাহ বারবার আমার কেনো পরীক্ষা নেও। তুমি মিষ্টিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আমার জীবনে পাঠালে এই মেয়েটাকে ওকে তুমি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে না please খোদা কেড়ে নিয়ে না ( বলতে দুচোখ ভেসে পানি পড়তে লাগলো। পেছন থেকে অথৈর আম্মু পরশের কাধের হাত রাখতে পরশ বললো কে)
অথৈর আম্মু: আমি বাবা।
পরশ: আ আপনারা এসেছেন।
অথৈর বাবা: হ্যা আমরা এসেছি।
পরশ: স্যার আপনি ( বলে অথৈর মামুকে জরিয়ে ধরলো) স্যার আপনি তো সবটা জানেন। স্যার বলুন তো উপর আল্লাহ কেনো বারবার আমার পরীক্ষা নিচ্ছে।
আবির: ভাইয়া অথৈ আপি কিছু হবে তুমি দেখে নিও।
পরশ: তাই যেনো হয় ( বলে পরশ আবির কে জরিয়ে ধরলো। এক ঘন্টা দুই ঘন্টা কেটে কিন্তু কেনো খবর পাচ্ছে। সময় সাথে য়েনো হারিয়ে ফেলার ভয় টা কাজ করছে পরশের। কখনো বসছে কখনো পাইচারি করছি। তিন ঘন্টা পর দিশা আপারেশন থিয়েটার বের হতেই পরশ দৌড় দিয়ে দিশার কাছে গিয়ে বললো)
পরশ: দিশা কি হয়েছে। তুই কথা বলছিস না কেনো।
অথৈর আম্মু: কি হলো মা কিছু বলছো না কেনো আমার অথৈ ঠিক আছে তো।
পরশের আম্মু: কি হলো কিছু বলছিস না কেনো।
দিশা: ভাইয়া
পরশ: কি
দিশা: ভাইয়া তুই দু দুটো বাচ্চার বাবা হয়েছিস। আর বাচ্চা দুটো সুস্থ্য আছে।
পরশ: আর অথৈ
দিশা: অথৈ ঠিক আছে তবে জ্ঞান ফিরতে দেরি হবে।
পরশ: thanks God . ( বলে একটা নিশ্বাসফেললো) আমি আমার বাচ্চাকে দেখতে পারি।
দিশা: পারিস তবে এখন না একটু অপেক্ষা করতে হবে ভাইয়া।
পরশ: আম্মু তোমারা এখানে থাকো আমি আসছি ( বলে পরশ হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলো)
অথৈর আম্মু: বিয়ান আমরা কিন্তু দাদী নানী হয়ে গেলাম।
অথৈর আব্বু: আর আমি নানু
আবির : তাহলে আমি কি হবে
অথৈর আম্মু: তুমি মামু। ( বলে সাবাই হাসতে লাহলো। এক ঘন্টা পর নার্স এসে বললো)
নার্স: আপনাদের রোগী কে কেবিনে দেওয়া হয়েছে আপনারা দেখা করতে পারেন।
পরশের আম্মু : হ্যা চলুন বিয়ান ( বলে সবাই কেবিনে ভেতরে গেলো)।
অথৈর আম্মু: আমার এটুকু মেয়েটা এখন দু দুটো বাচ্চা মা। ( বলে অথৈর কপালে চুমো খেলো)
পরশের আম্মু: বিয়ান আমি কিন্তু একসাথে নাতি নাতনী দুটো পেয়েছি।
অথৈর আব্বু: আমরা ও বিয়ান। ( বলে অথৈর আম্মু আর আব্বু দুজন দুটো বাচ্চাকে কোলে তুলে নিলো)
অথৈ: সবাই তো এখানে তাহলে পঁচা কুমড়ো কোথায়। ( মন খারাপ করে মনে মনে বললো)
দিশা: কাকে খুজছিস তোর পঁচা কুমড়োকে
অথৈ: হ্যা
দিশা: তোর পঁচা কুমড়ো বাইরে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে ( বলতেই পরশ কেবিনের ভেতর আসলো) ওই যে এসে গেছে তোমার পঁচা কুমড়ো।
অথৈ: দিশা আপু তুমিও না।
অথৈর আম্মু: এই নাও বাবা তোমার রাজকন্যা ( বলে অথৈর আম্মু পরশের কোলে তুলে দিলো। মেয়েকে দেখে পরশ চোখে পানি ধরে রাখতে পাড়লো না চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো। মেয়ের কপালে একটা চুমো খেয়ে দিশা কোলে দিলো তারপর ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করলো। একটু পর আবির বলে ওঠলো)
আবির : আপি আপি বেবি নাম কি হবে।
অথৈ: অন্তু আর পরি।( বলে পরশের দিকে তাকালো)
মামনি:খুব সুন্দর নাম আমার নাতনি পরি আর নাতি অন্তু
দিশা: আন্টি আঙ্কেল আমাদের বাইরে যাওয়া উচিত।
পরশের আম্মু: হ্যা চলো সবাই বিয়াই চলুন ( বলে সবাই কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলো। সবাই বের হতেই পরশ অথৈর কাছে গিয়ে বসলো)
পরশ: এখন কেমন আছো।
অথৈ: ভালো। আমি আপনাকে না দেখে ভেবেছিলাম আপনি আসেন নি। আচ্ছা আপনার চোখ এতো লাল হয়েছে কেনো।
পরশ: তোমার জন্য। যানো অথৈ তোমারকে যখন মেজেতে পড়ে থাকতে দেখলাম তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। মিষ্টির মতো তুমিও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। ( বলতে চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগলো)
অথৈ : আপনার চোখে আবার পানি। দেখুন আমার কিছু হয়নি আমি একদম ঠিক আছে ( বলে পরশের চোখে পানি মুছে দিলো)
পরশ: একটা কথা বললো
অথৈ: কি
পরশ: তুমি পরি নামটা
অথৈ: মিষ্টি আপু খুব ইচ্ছে ছিলো না যদি তার একটা মেয়ে হয় তার নাম রাখবে পরি কি তাইতো।
পরশ: তুমি এতো কথা কি করে জানলে।
অথৈ: আপনাকে আজ একটা সত্য কথা বলি আমাদের বিয়ে পরেদিন যখন আমি জানতে পারলাম আপনি এর আগে একটা বিয়ে করেছিলেন তখনি আমার আব্বু আর আম্মু প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো।আর খুব কান্না পাচ্ছিলো তাই ছাদে গিয়েছিলাম। ছাদে মামনি যখন যখন খুজতে গিয়েছিলো তখন চিলেকোঠার রুমে লুকিয়ে ছিলাম। মামনি চলে যাওয়ার পর চিলেকোঠার রুমে একটা আলমারি সাথে ধাক্কা লাগতে সামনে একটা ডায়রি পড়লো। ডায়রিটা খুলে দেখলাম ডায়রিটা মিষ্টি আপু। ডায়রি পরে বুঝতে পারলাম মিষ্টি আপু আপনাকে খুব ভালোবাসতো আর আপু খুব ইচ্ছে ছিলো আপনার বজ্জাত বউ হওয়ার কিন্তু নিয়োতি কাছে হেরে য়াও তাই ডায়রিতে লেখা ছিলো আমার পর যে পরশের বউ হবে সে যেনো আপনার বজ্জাত বউ হয়ে ওঠে। তারপর থেকে আমি আপনাকে ইচ্ছে করে জ্বালাতাম।আর ডায়রিতে জেনে ছিলাম য়ে মিষ্টি আপু যদি একটা মেয়ে হয় তাগলে নাম রাখবে পরি। এর জন্য মেয়ে নাম পরি।
পরশ: মেয়ের নামের কারনটা বুঝলাম কিন্তু ছেলে।
অথৈ: ওটা আমি অনেক আগে রেখে ছিলাম।
পরশ: অনেক আগে মানে
অথৈ: বিয়ে আগে ভেবেছিলাম আমার বিয়ে পর ছেলে হলে নাম রাখবো অন্তু। আরে আপনি হাসছেন কেনো।
পরশ: তোমার কথা শুনে।
অথৈ: আচ্ছা আমি কি আপনার বজ্জাত বউ হতে পেরেছি।
পরশ: শুধু বজ্জাত বউ না আরো অনেক কিছু হয়েছো ( বলে পরশ অথৈর কপালে চুমো দিলো। পাঁচদিন পর অথৈকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলো। বাড়িতে আসার পর থেকে বাড়িতে যেনো আনন্দ ভরে ওঠলো। অথৈ সারাদিন দুটো বাচ্চা পেছনে থাকতেই দিন চলে।পরশের আফিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলেও অন্তু আর পরি।কেটে গেলো সাত সাতটা বছর।)
সাত বছর পর
অথৈ: পরি ( চিৎকার দিয়ে বললো) আজ ওর একদিন না আমার একদিন। বদমাইশ মেয়ে কোথায় কর।
পরি: ওযে শুরু হয়েগেছে। যানো মিষ্টি মা মাম্মাম না খালি চিৎকার করে বাবাই যে কি জন্য বিয়ে করছিলো। শুরু পড়তে বলে পরতে বসো পড়তে বসো বলে পাগল করে দেই। তুমি বলো মিষ্টি মা এতো পড়ে কি হবে আমার না একটু পড়তে ইচ্ছা করেনা আমার ছবি আঁকতে আর গিন্টার বাজতে ইচ্ছে করে। তুমি একটু বলে দিয়েতো(মিষ্টি ছবির সামনে দাড়িয়ে বলল)
অথৈ:আমার নামে মিষ্টির মা কাছে নালিশ করা হচ্ছে না। তবে রে
পরি: বাবাই বাঁচাও তোমার বউ ক্ষেপেছে (বলে পরশের পেছনে গিয়ে লুকালো)
অথৈ:বের হয় বলছি
পরশ:কি করছো তুমি
অথৈ:তোমার মেয়ে দিন দিন পেকে যাচ্ছে।যানে কি বলে ওর পড়শুনা করে কি করবে।আর এবার রেজাল্ট দেখেছো সবগুলো বিষয়ে ফেল একজন ১০০ মধ্য১০০ পায় আর অন্য ১০০ মধ্য বড় বড়০০পায়
পরি:বাবাই তুমি বলে পড়াশুনা করে হবেটা কি এই তোমার সামনে দাড়িয়ে আছে তোমার বউ আমাদের মাম্মাম।ওনি পড়াশুনা করে কি করেছেন।সেই তো তোমার ঘাড় বসে খাচ্ছে আমিও তাই করবো আমার বরের ঘাড়ে বসে খাবে।আর ভাই ও তো বিয়েকরে বউ আনবে তাই পড়াশুনা করুন।
অথৈ:কি মেয়েরে বাবা।আপনি হাসছেন কিছু বলবেন নাওকে
পরশ:কি বলবে আমি
অথৈ:বাবাই মেয়েদুটো একরকম।আমার ছেলের ভালো (বলে চলে গেলো)
পরি:বাবাই তোমার বউ ক্ষেপেছে।
পরশ:দেখছি তো তাই তুমি এখন দাদিমার কাছে কেমন
পরি:okবাবাই (বলে চলে গেলো)
রাত ১০টার দিকে পরশ ছাদে একা দাড়িয়ে আছে।পেছন পরশের কাধে উপর হাতরাখলো অথৈ
অথৈ:কি ভাবছেন মিষ্টি আপুর কথা। অনেকগুলো বছর চলেগেছে অথচ আপনি আপনার মিষ্টি প্রতি ভালোবাসা একটু কমেনি।প্রতিদিন আফির যাওয়া আগে আর আফিস থেকে ফেরার পর আপনি মিষ্টিআপু ছবি সামনে দাড়িয়ে মিষ্টিআপুকে দেখেন। লোকে ঠিক বলে মানুষ তার প্রথম ভালোবাসাকে কখনো ভুলতে পারেনা যেমন আপনি আমার প্রথমভালোবাসা তাই আমি আপনাকে ভুলতে পারিনা আর আপনি মিষ্টি আপুকে(বলে পরশকে জরিয়ে ধরলো)
পরশ:তুমি ঠিক বলেছে মানুষ কখনো প্রথম ভালোবাসাকেভুলতে পারেনা।আমি কখনে ভুলতে পারবোনা মিষ্টিকে (বলে অথৈকে জরিয়ে ধরে দুর আকাশে মিষ্টি চাঁদকে।
“”এভাবেই তেরি হয়েছিলো পরশের জীবনে মিষ্টির পর অথৈর বজ্জাত বউ হয়ে ওঠার গল্প””
সমাপ্ত