বধুয়া পর্ব-১১
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। আবার দেখি খিদেও পাচ্ছে! এতোক্ষন কি খাইলাম! মনে হচ্ছে আমার ব্রেইন ভুল সংকেত দিচ্ছে। সিস্টেমে গোলমাল দেখা দিয়েছে।
আমি সামনে গেলাম।
– বস।
আমি সোফায় বসতে যাচ্ছিলাম,তখন উনি বললেন –
এখানে না,নিচে বস! ওদের সাথে।
কি আর করা আমিও ওদের পার্টনার তাই শাস্তি তো পেতেই হবে।
– নে, এটা আগে দেখ।
মাহির ওর মোবাইল টা আমার হাতে দিলো একটা ভিডিও প্লে করে –
ও আল্লাহ! এতো আমরা! আমি, নীরা আর তানহা! তানহার জামাই নেই বলে কান্না করছে! আমাদের নেশা হয়নি! ভেজাল পানির সাথে যুদ্ধ করতে যুদ্ধ বিমান পর্যন্ত কিনেছি!
আর রক্ষা নেই!!
মামণি দেখল…. ডিলিট করে দেই! যা আছে কপালে! মুখে বলা আর চোখের দেয়ায় বেশকম আছে। মাহির বললেও আমরা একটু কমিয়ে বলবো! ভিডিও দেখলে তো উপায় নেই!
মাহির চিলের মতো ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে যায়। ‘ ডিলিট করে লাভ নেই।আমার ল্যাপটপে রেখেছি কপি।তোদের কুকর্মের প্রমাণ।’
বাঁচার কোনো রাস্তা নেই বুঝে গেছি।
– বসে আছিস কেন? কান ধরার কথা কি দাওয়াত করে বলতে হবে?
কান ধরে আমিও বসে আছি।
– ৪ ঘন্টা এভাবে বসে থাকবি,নড়বিও না।
১৫ মিনিট পরেই হাতে টনটন ব্যথা করছে। হাতটা একটু ঝাড়া দিয়ে আবার ধরলাম
– খবরদার হাত নামাবি না।
নীরা আর তানহার চোখে পানি টলমল করছে! করবে না কেন? কতক্ষন এভাবে কান ধরে রাখা যায়?১ ঘন্টা পরে নীরা বললো – ভাইয়া, আর জীবনে এমন কাজ করবো না। মাফ করে দাও।আমি আর কোনো দিন চা ও খাবো না।
মাফ করে দাও না।
– আমি মাফ করে দেবার কে? আব্বু- আম্মু আসলে তখন আসল বিচার হবে। মামা-মামিকেও
ডেকে আনবো তখন।
তানহা ভেউ ভেউ করে কাঁদছে।
আরও আধা ঘণ্টা কেটে যায়। আমার চোখ দিয়েও পানি ঝরছে।
নীরা আর তানহা গিয়ে মাহিরের পায়ে পড়ে
– ও ভাইয়া হাত ফুলে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। তুমি যা বলবা তাই করবো আব্বু- আম্মুরে বলো না।
আরও কতকিছু বললো। অনেক কান্নাকাটির পরে মাহির এবারের মতো ক্ষমা করে দিলো।তবে মামণিকে বলবে কিনা তা গ্যারান্টি নাকি দিতে পারবে না!
আমিও নীরার রুমে চলে গেলাম ওদের সাথে।
কেঁদে চোখ ফুলে গেছে একেকজনের।
– তোকে আগেই নিষেধ করে ছিলাম,নীরা।
– আমি কি জানতাম নাকি ভাইয়া চলে আসবে! বউ রেখে থাকতে পারে না! প্রেমের ঠেলায় চলে আসছে!
– চুপ থাক! বাজে কথা বলবি না।
তানহা আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে – বাজে কথা না, সত্যি কথা। তোকে কান ধরিয়েই মাফ করে দিলো! এবারো তুই ছাড় পেলি বউ বলে!
– তোর ভাইয়া কখন আসছিলোরে?
– ভাইয়া নাকি ১১ টার পরে আসছে। তারপর এখানে আসে আমাদের চেঁচামেচি শুনে।
– তুই না দরজা বন্ধ করেছিলি খুললো কে?
তানহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে – উত্তেজনার বসে উনি দরজা লক করতে ভুলে গেছেন!!
আর ভাইয়া সুযোগে ভিডিও করেছে। এখন এই ভিডিও দেখিয়ে কতদিন যে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করবে আল্লাহ ই জানেন।
মাহিরই আমাকে রুমে নিয়ে যায়।যখন কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আমি নাকি মনে করছি উড়ছি! তাও চেঁচিয়ে বলছিলাম – আমি উড়ছি।
তেতুল গুলিয়ে টক খাওয়ায় নেশা কাটার জন্য। তারপর নাকি বমিও করছি!!
প্রথমে মাথায় পানি দেয়,তাতেও কাজ হয়নি।মাহির তখন রাগ করে পুরো বালতি ঢেলে দেয় মাথায়। আর আমি নাকি ডুবে যাচ্ছি বলে কি চিৎকার!
আর নীরা, তানহাকে টক খাওয়ায়, মাথায় পানি দেয়। ওরা ঘুমিয়ে পড়ে।
আসলে ওরা পানি বেশি মিশিয়ে খেয়েছিলো আর আমি শুধু বরফ দিয়েছিলাম। সেই বরফ আবার চুষে চকলেটের মতো খেয়ে ফেলেছি। ফলাফল আমাকেই ধরেছে বেশি!
ওরা দুজন বারোটা দিকে ঘুম থেকে উঠে। খাওয়াদাওয়া করার পর ওদের ডেকে নেয় মাহির। তারপর ভিডিও টা দেখায়।
এতটুকু বলে নীরা থেমে যায়।
– তারপর? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
তানহা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো – ভাইয়া কত্তগুলা চড় দিছে গুনতে পারিনি। বলেই ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমি আর কি বলবো? চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে আমার রুমে চলে যাই।
রুমে এসে দেখি মাহির চুপচাপ শুয়ে আছে। আমাকে দেখেও কিছু বলেনি।আমিই গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – কখন আসছো তুমি?
তুমি না দুদিন পরে আসবে বললে?
– তোরা যখন যুদ্ধ কতছিলি তখন আসছি!
আমি আর কিছু বললাম না।
– প্ল্যান টা কার ছিলো?
– নীরা আর তানহার। আমি জানতাম না কিছু,যখন জেনেছি নিষেধ করেছিলাম।
– নিষেধের নমুনা তো দেখলাম। নিষেধ করতে গিয়ে নিজেও একটু খাবার লোভ হলো! তাই না?
কাজটা তোরা মোটেও ঠিক করিসনি।আব্বু-আম্মু জানতে পারলে কি হবে?
– প্লিজ! উনাদের বলো না।বেচারিরা এমনই মাইর খেলো!
– ওরা তো মাইর খেয়েছে। তোর টা বাকি আছে।
বলেই মাহির বেরিয়ে যায়।
রাতে যখন ঘুমাতে আসলাম দেখি – মাহির মিটিমিটি হাসছে।
আমি আমার মতো শুয়ে পড়লাম।
– কুহু?
– কি?
– একটা চুমু দে!
– কি? আমি উঠে মাহিরের সামনে বসলাম।
– চুমু দিতে বলেছি।
– হাহ! আমি তোমাকে দিবো? সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ো।
– কেন? তুই কি দিবিনা?
– জীবনেও না! মরে গেলেও না!
– তাহলে কাল যে দিলি?
– আমি? কি দিলাম? কখন দিলাম?
– রাতে ঠোঁটে কিস করেছিস।
– মিথ্যে কথা। রাতের কথা মনে নেই বলে তুমি সুযোগ বুঝে এই কথাটা বললে!
– বিশ্বাস কর দিয়েছিস।
এ কথা শুনে আমার মুখ শুকিয়ে গেছে।
– দেখবি?
– কি?
– দাঁড়া দেখাচ্ছি।
কাল রাতে নীরার রুমে ভিডিও করার পর অফ করতে ভুলে আমাকে নিয়ে আসে।তখন অজান্তেই ভিডিও হয়ে গেছে। যদিও ভিডিওটি ভালো হয়নি অনেক নড়াচড়ায় ক্যামেরা বারবার সরে গেছে।
মাহিরের হাত থেকে মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে আসি।
ও আল্লাহ! এটা আমি কি করলাম?সত্যিই চুমু খেয়েছি! আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না! লজ্জায় আমার…
– কি বিশ্বাস হলো? এখন তো দে..
– সব ভুয়া! বলে আমি ছুটে চলে যেতে চাইলাম।
– সব সত্যি! পালাতে পারবি না।তুই না দিলে আমি দিবো।
জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খায় কপালে।
– উহ! ছাড়ো।ঘুমাবো আমি।
– হুমম চল ঘুমাই।
মাহির আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমার ঘুম সহজে আসলো না।ছিঃ কি লজ্জা! কিভাবে এমন করলাম?
চলবে…
# Munni