বধুয়া পর্ব-১২

0
1640

বধুয়া
পর্ব-১২

দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছে। সম্পর্কটা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। আমি মাহিরের ব্যবহারে তার সব পাগলামিতে আরও বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কটা হয়ে ওঠেনি। মাহির যতই দুষ্টুমি করুক, সে কখনো এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি।মাহির আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে যাতে আমি নিজে মেনে নিতে পারি।একটা কাজ সে জোর করে করতো – আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো।আমিও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।মাহির সব সময় একটা কথা বলে –
কুহু, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই জড়িয়ে ধরবো তোকে।
আমিও চাইছি নতুন করে ভাবতে, কিন্তু বারবার
একটা যায়গায় এসে আবারও থমকে যাই!হয়তো আমি নিজের জেদকেই আকঁড়ে ধরে আছি।
তবুও চেষ্টা করছি, মনের দ্বন্দ্ব দূর করতে। মানুষটা এতোটা খারাপ নয়!
শুধু আমার বেলায় তার যত পাগলামি!!

আমি আর নীরা শপিং করতে আসছি।নীরা কিছু ড্রেস ট্রায়াল দিচ্ছিলো, আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি। দেখি একটা ৪-৫ বছরের মেয়ে ওর বাবাকে বলছে –
“পাপা! আমিও আম্মু মতো শাড়ি কিনবো!’
মেয়েটা খুব আদরে! ভালো লাগছিলো কথা শুনতে। হঠাৎ খেয়াল করলাম মেয়েটার বাবাকে চেনা চেনা লাগছে।
এটা আনিস না! ৬-৭ মাস আগে দেখলেও চিনতে ভুল করিনি।
এটা আনিসই। আনিস না ইউকে প্রবাসী? হয়তো দেশে আসতে পারে কিন্তু এই বাচ্চা ওকে আব্বু ডাকছে!!
আনিস কি ম্যারিড?
বাচ্চা মেয়েটি দৌড়ে একজন মহিলার কাছে চলে যায়।ভদ্রমহিলা কেনাকাটায় ব্যস্ত।খুব সম্ভবত মেয়েটির আম্মু।।
আমি এগিয়ে গেলাম।
– এক্সকিউজ মি!
– জি? আমাকে বলছেন।
– জি।আপনি কি ওর আম্মু? মেয়েটা তখনো মহিলার হাত ধরে আছে।
– জি।ও আমার মেয়ে।কেন বলুন তো, কিছু করেছে আমার মেয়ে?
– আরে না, না। খুবই সুইট একটা মেয়ে।তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– আমি হিয়া।মেয়েটি নিজেই নিজের নাম বললো।।
– বাহ! খুব সুন্দর তো তোমার নাম। ঠিক তোমার মতো।
কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
– জি বলুন।
– হিয়া একজন ভদ্রলোকের সাথে ছিলো। উনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে।উনি কি আপনার হাজবেন্ড?
ছোট্ট মেয়েটা আব্বু বলতেই ভদ্রমহিলা চালাকি করে মেয়েটির মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে বললেন- না না।উনি আমার কাজিন।
আর কিছু বলবেন?
ভদ্রমহিলা আর কথা বলতে চাইছেন না সেটাই বুঝিয়ে দিলেন।
– জি না।ধন্যবাদ।

এমন সময় নীরার ফোন।
– ভাবি,তুমি কোথায় গেছো খুঁজে পাচ্ছিনা।নীরা একটু সামনেই ছিলো, আমাকে না দেখলেও আমি দেখছি নীরাকে,তাই বললাম –
আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি। তুই দাঁড়া আসছি আমি।
নীরা বললো ওর আরও কিছু বাকি আছে কেনার।
– তুই নিয়ে নে,আমি এক্ষুনি আসছি।
আগের যায়গায় এসে দেখি মহিলা নেই।
আশেপাশে খুঁজেও পেলাম না। আরও এগিয়ে গিয়ে দেখি ভদ্রমহিলা আর আনিস হিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু খটকা তো লাগছে প্রথম থেকেই।মেয়েটি আব্বু বলতে নিজের চোখে দেখলাম আর মহিলা বাচ্চা মেয়েটিকে থামিয়ে কাজিন পরিচয় দিলো কেন?

স্পষ্ট বুঝতে পারছি ভদ্রমহিলা কিছু লুকিয়েছেন।প্রশ্ন হলো কি লুকিয়েছেন?
কেন লুকিয়েছেন?
আনিস যদি বিবাহিত এক বাচ্চার বাবা হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিল কেন?
নিশ্চয়ই আনিস চিট করতে চেয়েছিলেন। আমার পরিবারের সাথে চিট করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিলো প্রায়!
নাহ! পুরো বিষয়টি জানতে হবে,প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।
আর আনিস যদি এমন চিট করতে চেয়ে থাকে তবে উনার এরজন্য শাস্তি পাওয়া উচিত।

এসব ভাবতে ভাবতে আনিস তারা একটা গাড়িতে উঠে যায়। আমিও দৌড়ে বের হয়ে আসি।তাড়াতাড়ি আমিও একটা গাড়ি নিয়ে আনিসের গাড়ি ফলো করতে বলি।
আনিসদের গাড়ি একটা আবাসিক এলাকায় ঢুকে। আমিও ঢুকি গাড়ি নিয়ে। কিছুদূর গিয়ে একটা গেইটের সামনে দাঁড়ায়। গেইট খুলতেই ভেতরে ঢুকে পড়ে।
আমি গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি তখন আবার নীরার ফোন
– তুমি কোথায় হারিয়ে যাও বলতো?
– নীরা তুই বাসায় চলে যা।আমি একটা জরুরি কাজে চলে আসছি।
– জরুরি কাজে মানে? কোথায় তুমি বলো আমি আসছি এক্ষুনি।
– তোর আসতে হবে না। তুই চলে যা।
– আম্মু জিজ্ঞেস করলে?
– মামণিকে আমি যা বলিছি তা ই বলিস।এখন রাখছি।
ফোন কেটে দিয়ে গেইটের সামনে আসি।
সিকিউরিটি গার্ড – আপনি কার কাছে যাবেন?

এইমাত্র যে গাড়ি করে আসলেন উনি আনিস সাহেব না?
– জি,উনি আনিস স্যার।
– উনার সাথে কারা ছিলো বলতে পারবেন?
– উনার স্ত্রী আর মেয়ে।কেন বলুন তো?
– না মানে উনি না ইউকে থাকেন মানে বিদেশে থাকেন?
– কই নাতো উনি তো দেশেই থাকেন।।
আমি অবাক হয়ে গেছি।একটা লোক এতো মিথ্যা কিভাবে বলে? এমন সময় আবার ফোন।ফোনের জ্বালায় মরে যাবো একদিন!
– হে আম্মু বলো।
– তুই কোথায় রে?
– বাহিরে আছি।কিছু বলবে?
– মাহির কি তোর সাথে? মাহির কেমন আছে?
মেজাজ গরম হয়ে গেছে। আব্বু আম্মু এতো মাহির মাহির করে মনে হয় মাহির উনাদের ছেলে আর আমি কেউ না!.
– সারাক্ষণ এতো মাহির মাহির করো কেন বলতো? মাহির খোঁজ নিতে হলে ওকে ফোন করো আমাকে ফোন করার দরকার নাই তো!
রাগ করে ফোন কেটে দিলাম।
গার্ড জিজ্ঞেস করলো – আপনি মাহির স্যারের কে হন?
– আপনি মাহিরকে চিনেন?
– জি চিনবো না কেন? উনিতো আনিস স্যারের বন্ধু।এখানে তো কতবার এসেছেন। খুবই হাসিখুশি আর ভালো মনের মানুষ।।
একথা শোনার পর মনে হলো এটা কিভাবে সম্ভব মাহির বিয়ে করেছে ঠিক আছে কিন্তু এতো বড় ধোকা দিলো!
আমাকে, আমার পরিবারকে সবাইকে!! আমার মাথা ভনভন করছে। রাগে ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে!
আপনি কি মাহির স্যারের কে হন?
– আমি উনার স্ত্রী। আনিস সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই।
গার্ড এন্ট্রি করে ফ্ল্যাট নাম্বার বলে দিলো।
চলবে…

# Munni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here