বধুয়া পর্ব-৫

0
1929

বধুয়া
পর্ব-৫
#munni

না,না এতো কিছু ভেবে কাজ নেই।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো ‘ বলেই আব্বু সোফায় বসে পড়লেন।
– কি হয়েছে তোমার? আম্মু আতঙ্কের সুরে বলেন।
– একটু পানি দাও আমাকে।
আন্টি তাড়াতাড়ি পানি এনে দিলেন।
আব্বুর ঘাড়ে বুকে নাকি ব্যথা করতেছে।নিশ্চয়ই আব্বুর বি.পি বেড়ে গেছে।
আব্বুর হাই- প্রেসার, মাঝেমধ্যে বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।একবার তো মাঝরাতে আম্মু আমাকে ডেকে তুলে বলে তোর আব্বুর অবস্থা ভালো না।তাড়াতাড়ি আয়।
গিয়ে দেখি আব্বুর মুখ থেকে ফেনার মতো বের হচ্ছে!আম্মু কাঁদছে। সেদিন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়ার সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন।
ভাবলেই শরীরে কাটা দেয়!
এখন যা পরিস্থিতি টেনশনে উনার এই অবস্থা।
আম্মু আমার কাছে এসে বললেন,’ আমার খুব ভয় করছে কুহু। তোর বাবার শরীরের যা অবস্থা তাতে ডাক্তার কোনো প্রকার মানসিক চাপ নিতে মানা করেছে।এখন কি করবো আমি। তোর বিয়ে নিয়ে কত খুশি ছিলো। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।
পাড়াপ্রতিবেশিরা নানান কথা তুলবে, তোর বাবা কিভাবে সহ্য করবে?
মা রে জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা আসবেই, সেই ঝড় মোকাবিলা করে বাঁচতে হয়,বাঁচাতে হয়।সমাজে বাস করতে গেলে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয়।তোর বাবা হয়তো তোর মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করার কথা ভাবছে। কিন্তু জীবনটা এতোটা সহজ নয়।আজ যা সিদ্ধান্ত নিবি সেটাই বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তুই হয়তো ডিভোর্স এর কথা ভাববি, তবে মনে রাখিস ডিভোর্স ই শেষ নয়! আর সমাজ এটাকে কিভাবে দেখে সেটা তুইও জানিস। তাই এতোটুকুই বলবো এমন কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নিস না যার জন্য সারাজীবন ভুগতে হয়! এখন তুই কি করবি তুই ঠিক কর।তোর আব্বুকে আর টেনশন দিস না।যদি কিছু হয়ে যায়! ‘

আব্বু বললেন, আমি ঠিক আছি,কুহু মা চল। ‘
– আব্বু!
– কি মা? চল আর দেরি করে লাভ নেই।শরীর ভালো লাগছেনা।
– আব্বু, তোমরা চলে যাও।আমি এখানেই থাকবো!
– কি বলছিস মা? না না তোর থাকতে হবে না।
– না, আব্বু। বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর ফিরে যাবো না। তোমরা শুধু আমার জন্য দোয়া করো।
– এইতো কথার মতো কথা! কুহুর বিবেচনা আছে, তোমরা যতটা অবুঝ মনে করো, ও কিন্তু অবুঝ না।সব পরিস্থিতি ও সামলে নিতে পারে।’
ফুপ্পি আমাকে জড়িয়ে ধরেন।

-তাহলে তুই সত্যিই যাবিনা?
– না আব্বু,তোমরা যাও।
– ভেবে বলছিস তো মা?
– হা আব্বু।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে, কুহুর আম্মু চলো আমরা এখন যাই।
– আরে যাবেন মানে?
সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে আর আপনারা চলে যাবেন? এখন তো নতুন আত্মীয়!
খাওয়াদাওয়া না করে কোথায় যেতে পারবেন না।’ জামান আঙ্কেল এসে আব্বুর হাত ধরে বললেন।
সবার মুখে হাসি ফুটেছে। আন্টি নীরাকে বললেন আমাকে রুমে নিয়ে যেতে।
নীরা, দিয়া ভাবি,কাকলি, অবনী, তানহা সবাই মিলে আমাকে নীরার রুমে নিয়ে গেল।পুরো বাড়ি মানুষে ভরে আছে।বিয়ে বাড়ির আনন্দ যেন ফিরে এসেছে।

রাত প্রায় বারোটা।
আব্বু- আম্মু তারা চলে গেছে। অবনী, তানহা,ভাবি তারা যায়নি।আন্টি ওদের যেতে দেয়নি। দিয়া ভাবি আর নীরা আমাকে মাহিরের রুমে দিয়ে যায়। ফুল দিয়ে সারাটা ঘর সাজানো। এতো ফুলের ভেতরেও আমি হাসনাহেনার গন্ধটা পাচ্ছি। বিছানার পাশে এক ঝুড়ি ভর্তি হাসনাহেনা! এতোগুলো হাসনাহেনা একসাথে পেয়ে আমি খুশিতে নেচে উঠতাম, কিন্তু এখন আমার কিছুই হচ্ছে না।
আব্বু- আম্মুর কথা ভেবে ফিরে যেতে পারিনি।কিন্তু মাহিরকে আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা আর পারবোও না।
এখন তো তার হাতের পুতুল হয়ে যাবো!
এসব ভাবতেই আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। মাহির রুমে ঢুকে। দরজা বন্ধ করে দেয়।
মাহির আমার কাছে এসে বসে।
আমি তার দিকে তাকিয়েও দেখিনি। মাথানিচু করে বসে আছি।

‘বাসর রাতে স্বামীকে সালাম করতে হয়, সেটাও দেখি জানিস না!’
একথা বলে মাহির নিজের পা বাড়িয়ে দেয়। আমি বাধ্য মেয়ের মতো সালাম করলাম।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কুহু,তোকে বউয়ের সাজে কি যে সুন্দর লাগছে!
ইসসস!! যেন নজর না লাগে।

আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। মাহির এবার একটু গম্ভীর হয়ে যায়।
– তুই সত্যিই আমাকে সহ্য করতে পারিস না? কেন? কি করেছি আমি?…
যাই করে থাকি বেশ করেছি! এখন থেকে আমাকেই তোর সহ্য করতে হবে ২৪ ঘন্টা! ‘

এই লোকটা এমন কেন?

মাহির উঠে যায়, ‘ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়,সারাদিন অনেক ধকল গেছে। ‘
একথা শুনে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। অনেক দিনের জমানো ক্ষোভ, এখন ভয়ের কিছু বাকি নেই।ভয় করে এখন কি হবে!??
বললাম –
ঘুমাবে কেন? আমিতো তোমার সামনে, এখন যা ইচ্ছে করতে পারো।আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ! এই শরীরটাই তো চেয়েছিলে!!’
এক টানে শাড়ির আঁচল ছুঁড়ে ফেলেছি।
মাহির স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।
– কই আসো! এখন তো এই শরীর তোমার নামেই উইল করা! আসো!

চলবে….

# Munni #

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here