বধুয়া পর্ব- ৬

0
1503

বধুয়া
পর্ব- ৬
#munni

মাহিরের মুখটা লাল হয়ে গেছে। এগিয়ে ঠাস করে একটা চড় দেয়। আমি সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে যাই।
– ছিঃ কুহু! আমাকে এতো টা নিচ ভেবেছিস! আরে জীবনে একটা ভুল করেছিলাম! সেই জন্য তুই আমাকে…
আমি তোকে ভালবাসি। তুই কি বুঝবি? একটা বার তুই বুঝতে চেষ্টা করেছিস আমাকে?

রাগে গরগর করতে করতে মাহির বিছানায় বসে পড়ে। আমি বিছানায় পড়েই কাঁদছি।
আমার জীবনটা এমন হলো কেন? কি হচ্ছে আমার সাথে?
মাহির দু’হাতে মুখ চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। বেশ কিছু সময় কেটে যায়।
মাহির বিছানায় উঠে আমার কাছে আসে।
– কুহু?
আমি সাড়া দেইনি।
মাহির কপালে হাত রাখতেই আমি উঠে বসি।
– তোকে আজ আমি মেরেছি! খুব কষ্ট হয়েছে তোর? তোকে কিভাবে বুঝাবো তার থেকে বেশি কষ্ট আমার ভেতরে হচ্ছে!
আমার মুখটা টেনে সারামুখে চুমু খেতে থাকে।
– সরি সোনা।আর কোনো দিন তোকে কষ্ট দিবোনা। কোনোদিন না।
জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে মুখ লুকায়।মাহিরের কান্ড দেখে আমি পুতুলের মতো বসে আছি। সারাদিনের এতো ধকল মানসিক চাপ আমি আর নিতে পারছিনা।।
মাহির এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আস্তে আস্তে বলে – তুই কেন বুঝিস না!
তারপর আমাকে শুয়িয়ে দেয়।
– তুই ঘুমা।
আমিও চুপচাপ শুয়ে আছি চোখ বন্ধ করে। মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনে হয় দুই মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছি ।

পরদিন নীরার ডাকে ঘুম ভাঙলো। নয়টা বেজে গেছে। তারপর সারাদিন অনেক ব্যস্ততায় কেটে যায়।
মাহির সারাদিনে একবারও সামনে আসেনি। রাতের বেলায় ডিনার করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
এভাবেই কিছু দিন যায়। অনেকটা স্বাভাবিক হই আমি। ভাবলাম মাহির চেঞ্জ হবে।
কিসের কি!
আবারও আমার পিছনে লাগা শুরু করে।
আজ একমাস হয়ে গেছে বিয়ের। আজ ক্যাম্পাসে যে কান্ড করলো তাতে রাগে ইচ্ছে করছিলো কি যে করতে!

তিনটি মাস কেটে গেছে। দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা চলে এলো। সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি পড়ায় মন দিলাম।মামণি আমাকে নিয়ে আমার সব বইপত্র নিয়ে আসে আমাদের বাসা থেকে। আন্টিকে এখন আমি মামণি ডাকি,আন্টি ডাকলে উনি কষ্ট পান।উনি যদি আমার এই ডাকে খুশি হন তবে কেন তাকে অখুশি রাখবো? তাছাড়া উনি আমার অনেক পছন্দের, অনেক প্রিয় একজন মানুষ।

রাতে পড়তে বসছি টেবিলে। মাহির বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পায়ের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে। আমি আমার মতো পড়ে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো মাহির আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। কয়েকবার আড়চোখে খেয়াল করলাম সে আমার দিকেই তাকিয়ে দেখছে।
আমি আবার সরাসরি তাকাতেই ধরা পড়ে গেল। অপরাধীর মতো লাজুক হেসে বলে,
– ঘুমাবি না?
– না, আরও পড়বো।তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন?
– তুই পড়া শেষ কর এক সাথে ঘুমাবো।

বিয়ের পর একটা রাত আমাকে ছাড়া ঘুমায়নি।কয়েকবার আমাদের বাসায় গেলেও মাত্র দুবার থেকে ছিলাম। প্রথম বার যখন গেলাম মাহির সাথেই ছিলো। দুদিন থেকে চলে আসছি।
তারপর আব্বু এসে একদিন নিয়ে যায় আমাকে।
রাতে কাকলি আমার কাছে ঘুমাতে আসে।কাকলি শুয়ে আছে, আমিও রেডি ঘুমাবো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বেনি করছি।
– আহহ,ভাইয়া ছাড়ো! লাগছে। কাকলির গলা শুনে তাকিয়ে দেখি মাহির কাকলির কানে ধরে টেনে তুলে বলে
– নিজের রুমে যা,ভাগ।
কাকলি আমার দিকে তাকিয়ে মুখটিপে হেসে বলে – আহারে প্রেম!!
আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেছে। একটা দিন নিজের বাড়িতেও শান্তিতে থাকতে পারবো না!
এই লোকটা মাঝরাতেও হাজির!
ছিঃ ছিঃ সবাই কি না কি ভাবছে। সকালে তো আম্মুর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।

চলবে…

#Munni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here