বধুয়া পর্ব -৭

0
1702

বধুয়া
পর্ব -৭

বিয়ের পর কয়েকদিন মাহির নিজেই একটা দুরত্ব রেখে চলেছে। কিন্তু সেটা কয়েক দিনের জন্য মাত্র।সেদিন রাতে বেডে আসলাম, ঘুমে চোখ জ্বালা করছে। ঘুম লেগে আসছে, তখন অনুভব করলাম আমার উপর কারো হাত।এক লাফ দিয়ে উঠে বসছি।কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি আমি কোথায় আছি! আমার পাশে এটা কে?
চোখ বড় বড় করে ড্রিম লাইটের আলোয় দেখার চেষ্টা করছি। কিছুসময় স্থির হয়ে- পরে মনে পড়লো।
ঝাটকা দিয়ে মাহিরের হাত সরিয়ে দিয়ে কোলবালিশটা টেনে নিলাম মধ্যে। ভেবেছিলাম ও ঘুমে।আবার শুয়ে পড়ি।
ওমা! কই বালিশ কই কি! এই লোক সব ফেলে আরও কাছে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে!
আমি উঠে বসার সাথে সাথে মাহিরও উঠে যায়।

– সমস্যা কি তোমার?
– তোর কি সমস্যা?
– হাত দিবে না আমার শরীরে। এইযে বালিশ এটা এখান থেকে সরাবে না।
আমি আবার কোলবালিশটা মধ্যে রাখলাম।
মাহির বালিশ সরিয়ে নেয় এক টানে।
– একশো বার দিবো।আমার বউ আমি ধরবো তোর সমস্যা হচ্ছে কেন?
– অসহ্য লোক একটা! আর একবার এমন করলে আমি আন্টিকে ডাক দিবো।
– তুই গলা ফাটিয়ে ডাকলেও আসবে না। আম্মুকে পাগলা কুকুরে কামড়ায় নাই যে মাঝরাতে ছেলে আর ছেলের বউয়ের রুমে আসবে। আর শোন কুহু,একটা কথা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি – আমি তোকে জড়িয়ে ধরেই প্রতিদিন ঘুমাবো।তুই ঘুমাইলে ঘুমা না ঘুমালে নাই।

একথা বলেই আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আমি যত ছাড়াবার চেষ্টা করছি তত শক্ত করে ধরছে।
আল্লাহ! উঠায়া নেও আমারে!বাঁচাও এই লোকটা হাত থেকে!!

মাহির হেলান দিয়েই ঝিমাচ্ছে তবুও শুতে যায় না। আমার পড়া শেষ কিন্তু মাথায় একটু শয়তানি বুদ্ধি নাড়া দিলো। আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না বাছা!
বসেই ঘুমাও! আমি আরও তিন ঘন্টা পড়বো।দেখি কত সময় বসে থাকতে পারে!
আবার বই খুলে বসি। বই নাড়াচাড়া করছি ঠিকই কিন্তু মন দিতে পারছিনা।
ধ্যাত! কিছুই পড়া হচ্ছে না। ঘুমাতে হবে সকালে পরীক্ষা আছে। চেয়ার ছেড়ে উঠার সময় একটু শব্দ করে উঠলাম।
মাহিরের নড়াচড়া নেই।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করলাম।
‘ ঘুমের গাধা!’নড়েও না।
মাহিরের কোল থেকে ল্যাপটপটা সরিয়ে রেখে আমি আমার যায়গায় শুয়ে পড়লাম।
শুতে দেরি হলেও পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে দেরি হয়নি!
– এতো শব্দ না করে মুখ দিয়ে বললেই তো হতো!’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলে গেলাম। এতো নাটক ক্যামনে করে! শব্দ করার কারণ টা মাহির ধরতে পারায় আমি লজ্জা পড়লাম! তাই আর কথা বাড়াইনি।চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লাম।

এভাবেই দিন যায়। আমার এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। এখন একদম ফ্রি টাইম। যতদিন এক্সাম ছিলো মাহির তেমন বিরক্ত করেনি।ভালো ভাবেই সব শেষ হয়েছে। এখন সারাদিন মামণি আর নীরার সাথে আমার সময় ভালোই কাটছে।

এর মধ্যে আমার শ্বশুর একদিন বাসায় এসে বলছেন যে, একটা প্রজেক্টের কাজে উনি আর মাহির চট্টগ্রাম যাবেন।
মামণিও তখন বায়না ধরলো যে আমাদের সবাইকে নিয়ে যেতে হবে।।
আব্বুও রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু নীরা বললো, নীরার ভার্সিটিতে কি পরীক্ষা আছে যেতে পারবেনা। মামণির মন খারাপ হয়ে গেছে। উনার ভাইয়ের বাসা চট্টগ্রাম। অনেক দিন যাওয়া হয় না, ভেবেছিলেন এই সুযোগে যাবেন। কিন্তু নীরাকে একা রেখে তো যাওয়া যাবে না।
নীরার কোনো পরীক্ষা নেই সেটা আমি জানি। তবে নীরা কেন যেতে চাইছেনা সেটা বুঝতে পারছি না।
নীরা ইশারায় বারণ করলো কিছু বলতে।
আমি মামণিকে বললাম – মামণি আমি আর নীরা থাকি আর রাহেলা খালা তো আছেন।
– না না, মাহির যাবে আর তুই এখানে থাকবি সেটা কিভাবে হয়!

নীরা তখন বলে – আম্মু, তুমিও না! ভাবি আমার সাথেই থাকুক। ভাইয়া কাজে যাচ্ছে কাজ শেষ করে আসুক, পরে না হয় ভাবিকে নিয়ে যাবে!
মামণি আপত্তি করতে গিয়েও করলো না।
মা মেয়ের মধ্যে ইশারায় কিছু একটা বলা হয়ে গেছে। মামণি মুচকি মুচকি হাসছে!

পরের দিন মামণি-মাহির তারা চলে যায়। নীরা কোথাও যায়নি সারাদিন বাসায় আমার সাথে আড্ডা দিয়েছে। নীরা আমার দুই বছরের ছোট তবুও ওর সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব।
তবে মাহিরকে নিয়ে কোনো কথা হয় না আমাদের মধ্যে। অনেক আগে নীরা একবার জিজ্ঞেস করেছিলো,তখন ওকে বলেছিলাম –
‘ দেখ নীরা, এই বিষয়ে প্লিজ তুই কিছু জিজ্ঞেস করিস না। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা।’
নীরা বুদ্ধিমতী মেয়ে তাই এসব প্রসঙ্গ আর কখনোই তুলেনি।
নীরা কেন চট্টগ্রাম যায়নি সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি এখনো।
– কি ব্যাপার বলতো?
– কিসের ব্যাপার ভাবি?
নীরা আগে আপু ডাকলেও এমন ভাবি ডাকে!! ওর নাকি হেব্বি মজা লাগে!
– তুই মামণিকে মিথ্যে বললি কেন? তোর তো পরীক্ষা ছিলো না!
– হিহিহি……. কারণ তো একটা আছেই।
– কি কারণ?
– ওয়েট ওয়েট দেখতেই পাবে। কালকেই দেখতে পাবে।
– উফফ! বল না!
অপেক্ষা করতে ভালো লাগে না। প্লিজ বল।
– আচ্ছা, আসো আমার সাথে।
ডিনার করে নীরার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।দরজার কাছে এসে নীরা বললো –
‘ বাকি অংশ আগামীকাল দেখবেন মেডাম, গুড নাইট! ‘ বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো!!
নীরা আমাকে রহস্যের সাগরে ডুবিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো!
– মনে রাখিস! মামণি আসলে বলে দিবো কিন্তু!
নীরা দরজা খুলবে না সেটা ভালোই বুঝেছি।কি আর করা! কাল পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতে হবে।
আমি নিজের রুমে চলে আসলাম।

চলবে…..# বধুয়া
# পর্ব -৭

বিয়ের পর কয়েকদিন মাহির নিজেই একটা দুরত্ব রেখে চলেছে। কিন্তু সেটা কয়েক দিনের জন্য মাত্র।সেদিন রাতে বেডে আসলাম, ঘুমে চোখ জ্বালা করছে। ঘুম লেগে আসছে, তখন অনুভব করলাম আমার উপর কারো হাত।এক লাফ দিয়ে উঠে বসছি।কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি আমি কোথায় আছি! আমার পাশে এটা কে?
চোখ বড় বড় করে ড্রিম লাইটের আলোয় দেখার চেষ্টা করছি। কিছুসময় স্থির হয়ে- পরে মনে পড়লো।
ঝাটকা দিয়ে মাহিরের হাত সরিয়ে দিয়ে কোলবালিশটা টেনে নিলাম মধ্যে। ভেবেছিলাম ও ঘুমে।আবার শুয়ে পড়ি।
ওমা! কই বালিশ কই কি! এই লোক সব ফেলে আরও কাছে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে!
আমি উঠে বসার সাথে সাথে মাহিরও উঠে যায়।

– সমস্যা কি তোমার?
– তোর কি সমস্যা?
– হাত দিবে না আমার শরীরে। এইযে বালিশ এটা এখান থেকে সরাবে না।
আমি আবার কোলবালিশটা মধ্যে রাখলাম।
মাহির বালিশ সরিয়ে নেয় এক টানে।
– একশো বার দিবো।আমার বউ আমি ধরবো তোর সমস্যা হচ্ছে কেন?
– অসহ্য লোক একটা! আর একবার এমন করলে আমি আন্টিকে ডাক দিবো।
– তুই গলা ফাটিয়ে ডাকলেও আসবে না। আম্মুকে পাগলা কুকুরে কামড়ায় নাই যে মাঝরাতে ছেলে আর ছেলের বউয়ের রুমে আসবে। আর শোন কুহু,একটা কথা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি – আমি তোকে জড়িয়ে ধরেই প্রতিদিন ঘুমাবো।তুই ঘুমাইলে ঘুমা না ঘুমালে নাই।

একথা বলেই আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আমি যত ছাড়াবার চেষ্টা করছি তত শক্ত করে ধরছে।
আল্লাহ! উঠায়া নেও আমারে!বাঁচাও এই লোকটা হাত থেকে!!

মাহির হেলান দিয়েই ঝিমাচ্ছে তবুও শুতে যায় না। আমার পড়া শেষ কিন্তু মাথায় একটু শয়তানি বুদ্ধি নাড়া দিলো। আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না বাছা!
বসেই ঘুমাও! আমি আরও তিন ঘন্টা পড়বো।দেখি কত সময় বসে থাকতে পারে!
আবার বই খুলে বসি। বই নাড়াচাড়া করছি ঠিকই কিন্তু মন দিতে পারছিনা।
ধ্যাত! কিছুই পড়া হচ্ছে না। ঘুমাতে হবে সকালে পরীক্ষা আছে। চেয়ার ছেড়ে উঠার সময় একটু শব্দ করে উঠলাম।
মাহিরের নড়াচড়া নেই।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করলাম।
‘ ঘুমের গাধা!’নড়েও না।
মাহিরের কোল থেকে ল্যাপটপটা সরিয়ে রেখে আমি আমার যায়গায় শুয়ে পড়লাম।
শুতে দেরি হলেও পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে দেরি হয়নি!
– এতো শব্দ না করে মুখ দিয়ে বললেই তো হতো!’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলে গেলাম। এতো নাটক ক্যামনে করে! শব্দ করার কারণ টা মাহির ধরতে পারায় আমি লজ্জা পড়লাম! তাই আর কথা বাড়াইনি।চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লাম।

এভাবেই দিন যায়। আমার এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। এখন একদম ফ্রি টাইম। যতদিন এক্সাম ছিলো মাহির তেমন বিরক্ত করেনি।ভালো ভাবেই সব শেষ হয়েছে। এখন সারাদিন মামণি আর নীরার সাথে আমার সময় ভালোই কাটছে।

এর মধ্যে আমার শ্বশুর একদিন বাসায় এসে বলছেন যে, একটা প্রজেক্টের কাজে উনি আর মাহির চট্টগ্রাম যাবেন।
মামণিও তখন বায়না ধরলো যে আমাদের সবাইকে নিয়ে যেতে হবে।।
আব্বুও রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু নীরা বললো, নীরার ভার্সিটিতে কি পরীক্ষা আছে যেতে পারবেনা। মামণির মন খারাপ হয়ে গেছে। উনার ভাইয়ের বাসা চট্টগ্রাম। অনেক দিন যাওয়া হয় না, ভেবেছিলেন এই সুযোগে যাবেন। কিন্তু নীরাকে একা রেখে তো যাওয়া যাবে না।
নীরার কোনো পরীক্ষা নেই সেটা আমি জানি। তবে নীরা কেন যেতে চাইছেনা সেটা বুঝতে পারছি না।
নীরা ইশারায় বারণ করলো কিছু বলতে।
আমি মামণিকে বললাম – মামণি আমি আর নীরা থাকি আর রাহেলা খালা তো আছেন।
– না না, মাহির যাবে আর তুই এখানে থাকবি সেটা কিভাবে হয়!

নীরা তখন বলে – আম্মু, তুমিও না! ভাবি আমার সাথেই থাকুক। ভাইয়া কাজে যাচ্ছে কাজ শেষ করে আসুক, পরে না হয় ভাবিকে নিয়ে যাবে!
মামণি আপত্তি করতে গিয়েও করলো না।
মা মেয়ের মধ্যে ইশারায় কিছু একটা বলা হয়ে গেছে। মামণি মুচকি মুচকি হাসছে!

পরের দিন মামণি-মাহির তারা চলে যায়। নীরা কোথাও যায়নি সারাদিন বাসায় আমার সাথে আড্ডা দিয়েছে। নীরা আমার দুই বছরের ছোট তবুও ওর সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব।
তবে মাহিরকে নিয়ে কোনো কথা হয় না আমাদের মধ্যে। অনেক আগে নীরা একবার জিজ্ঞেস করেছিলো,তখন ওকে বলেছিলাম –
‘ দেখ নীরা, এই বিষয়ে প্লিজ তুই কিছু জিজ্ঞেস করিস না। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা।’
নীরা বুদ্ধিমতী মেয়ে তাই এসব প্রসঙ্গ আর কখনোই তুলেনি।
নীরা কেন চট্টগ্রাম যায়নি সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি এখনো।
– কি ব্যাপার বলতো?
– কিসের ব্যাপার ভাবি?
নীরা আগে আপু ডাকলেও এমন ভাবি ডাকে!! ওর নাকি হেব্বি মজা লাগে!
– তুই মামণিকে মিথ্যে বললি কেন? তোর তো পরীক্ষা ছিলো না!
– হিহিহি……. কারণ তো একটা আছেই।
– কি কারণ?
– ওয়েট ওয়েট দেখতেই পাবে। কালকেই দেখতে পাবে।
– উফফ! বল না!
অপেক্ষা করতে ভালো লাগে না। প্লিজ বল।
– আচ্ছা, আসো আমার সাথে।
ডিনার করে নীরার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।দরজার কাছে এসে নীরা বললো –
‘ বাকি অংশ আগামীকাল দেখবেন মেডাম, গুড নাইট! ‘ বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো!!
নীরা আমাকে রহস্যের সাগরে ডুবিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো!
– মনে রাখিস! মামণি আসলে বলে দিবো কিন্তু!
নীরা দরজা খুলবে না সেটা ভালোই বুঝেছি।কি আর করা! কাল পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতে হবে।
আমি নিজের রুমে চলে আসলাম।

চলবে…..

#Munni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here