#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র,সূচনা_পর্ব
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
বিয়ের প্রথম রাতেই শাশুড়ী চুলের মুঠি ধরে অপমান অপদস্ত করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সকলের সামনে বললেন,‘তোর মতো নষ্টা চরিত্রের মেয়ে কখনো আমার ছেলে বউ হতে পারে না। আমার ছেলের বউ হওয়ার কোনো যোগ্যতা তোর নেই। কাগজ কলমে, কালেমা পড়ে বিয়ে হলেও আমি এই বিয়ে মানি না। আর না এই কলঙ্কিত মেয়েকে আমি আমার ছেলের সাথে এক ঘরে থাকতে দেবো। আমি বেঁচে থাকতে এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।’
ছেলের সদ্য বিয়ে করে নিয়ে আসা বউকে অপমান করতে ছাড়লেন না শ্যামলতা বেগম। তিনি কর্কশকন্ঠে উনার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,‘ খবরদার বাবাই এখনই ওই মেয়ের হাত ছেড়ে দাও! এমন অপয়া চরিত্রহীন মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে একমাত্র ছেলের বউ হিসাবে মানি না।’
তার এমন কম্পিত কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে সকলের দৃষ্টি তার উপরে স্থির হয়। শ্যামলতা বেগম হচ্ছেন চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির মহাপরিচালক। আঠারো বছর আগে তার স্বামী হঠাৎ করে বাথরুমে পরে যান তারপরেই তিনি প্যারালাইস হয়ে বিছানায় অবগত হন। ছোট্ট আঁট বছরের ছেলেকে নিয়ে আশাহত হন শ্যামলতা। সে তার স্বামীর বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু তিনি সুস্থ হননি। সবই আল্লাহর ইচ্ছে মনে করেন। স্বামীর এমন অবস্থায় আত্মীয় স্বজন সান্ত্বনা দিবে উল্টো তারা এসে ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলেন শ্যামলতার স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে। শ্যামলতা ছোট থেকেই সাহসী মেয়ে। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস তার আছে। ওতগুলো মানুষের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেন শ্যামলতা, তার কঠিনবাক্য শুনে তারা সকলে আস্তে আস্তে পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত স্বামীর সম্পত্তি টুকু তিনি রক্ষা করতে পারেন। তার স্বামী আহাদ মুসাফ হুইলচেয়ারে বসে দুই চোখ দিয়ে শুধু দেখছিলেন আর চোখের জল ফেলছিলেন। মনে মনে হয়তো ভাবছে, সে এখনো বেঁচে আছে অথচ তার পরিবারের লোকজন এমন নিচু কাজ কিভাবে করতে পারলেন?
নিজের সাহসিকতার জন্য তাদের সব কিছু তাদেরই রয়। তখন অনেক চিন্তা করে শ্যামলতা এই ভাবে বসে থাকলে তার সংসার ব্যবস্থা কোনো কিছুই চলবে না। বসে না থেকে তার নিজেরই কিছু করতে হবে। সে থেকে ব্যবসা বানিজ্য নিজে সামলাতে লাগল সে। এক বছর না ঘুরতেই খুব উন্নতি করলেন। তারপর থেকে আর পিছু ফিরতে হয়নি তার। স্বামী অসুস্থ বলেও সে কখনো স্বামীকে অবজ্ঞা করেননি। না কখনো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন সর্বদা আদর যত্নে রেখেছেন। সারাদিন অফিস করে বাড়িতে এসে ছেলে ও স্বামীকে সময় দিতেন।
শ্যামলতার নামটা তার দাদীর দেওয়া কারণ, তার জন্মের পর তার দাদী তাকে প্রথম দেখেই কপাল কুঁচকে ছিলেন গায়ের রং শ্যামলা বলে।
শ্যামলতার গায়ের রং শ্যামলা হলে কি হবে, তার চেহারা গোলগাল খুবই মায়াবী। শ্যামলতার দাদী ফর্সা রঙের ছিলেন তাই তিনি চেয়েছিলেন তার মতো ফর্সা রঙের জেনো নাতি হয়। কিন্তু হলো উল্টো শ্যামলা বর্ণের মেয়েকে দেখে তিনি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেন, এবং নাম রাখে শ্যামলতা। শ্যামলতা আহ্লাদী স্বরে দাদী দাদী বলে তার কাছে গেলেও তিনি কখনো ওকে কোলে নিতেন না। কালো বলে অবজ্ঞা করতেন। শ্যামলতার তখন ৯বছর, রাতে তার দাদি রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে একা একা ঘুমাতে গেলেন। প্রতিদিন রাতে তার সাথে ঘুমাতেন শ্যামলতার ছোট ভাই। সেদিন রাতে তার ভাই যেতে চাইলো না আবদার করল বোনের সাথে ঘুমাবে। এতে বেশ বিরক্ত বোধ করেন আকলিমা খাতুন। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,‘ কাইল্লা চামড়ার মাইয়ার লগে তোমার হুইতে ওইবো না। তাইলে তুমিও কাইল্লা হইয়া যাইবা দাদুভাই।’
সেকথা দরজার আড়াল থেকে শুনে ফেলে রশিদ মিয়া, তিনি মায়ের সামনে এসে ধাতস্থ কন্ঠে বললেন,‘ চুপ করো আম্মা! তুমি আমার ছোট্ট পোলাডারে কি পাঠ পড়াইতাছো? আমার মাইয়া কালা তো কি হইছে মনের দিক দিয়া শতগুণে ভালা। ওর মত উদার মনের মাইয়া এই গ্রামে আর একটাও পাইবা না। হুদা আমার মাইয়াডার গতরের রঙডা কালা বইলা তুমি ওরে জন্মের পর থেকে দেখতারো না। আর এহন আমার পোলাডার মনেও ওর বড় আপারে লইয়া বিষ ঢুহাইতাছো। হুইন্না রাহো আম্মা, সাদা চামড়া হলা বছর থাকতো না। তোমার গায়ের রং সাদা বইলা এত অহংকার কইরো না। অহংকার পতনের মূল আম্মা। আর একটা কতা আজকের পর থেহা আমার পুলা আর তোমার লগে থাকতো না। ’
বলে রশিদ মিয়া ছেলের হাত শক্ত করে ধরে টেনে তার মায়ের রুম থেকে বের করে নিয়ে চলে যায়। ছেলের যেতেই আকলিমা খাতুন তিনি অস্ফুটে বলল, ‘ মাইয়ার লাইগা মায়ের লগে এমন করতারলি পুত? দেহিস মা মরলে বুঝবি। ’
বলে তিনি বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরেন। পরের দিন আর সে ঘুম ভাঙ্গে না। আর উঠেননি আকলিমা খাতুন। তার মৃত্যুতে সব থেকে বেশি যদি কেউ কান্না করে থাকে তাহলে সে একান্তই শ্যামলতা। কারণ, একমাত্র শ্যামলতাই তার দাদীর আদর ভালোবাসা কখনে পায়নি।
নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নেয় সে। তারপর থেকে সে জীবনেও কখনো কাউকে অপমান করেননি আর না কাউকে অবজ্ঞা করছেন। তাহলে আজ কি হলো তার পুত্রবধূর সাথে এমন সূলক তিনি কেনো করলেন? কিসের তাগিদে?
শ্যামলতার কম্পিত গলার কথা কর্নপাত হতে রাগী গলায় রিসার্ভ সাইড থেকে কিছু বলার জন্য শাহাদাত আঙুল উপরে তুলল। অন্য দিকে তাকে স্তব্ধ নির্বাক করে দিলেন উনার’ই সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। শ্যামলতার দুইপা জড়িয়ে ধরে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ আমাকে যা বলার বলেন কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলবেন না দয়া করে।আমি কলঙ্কিনী নই। ‘
মাত্রারিতিক্ত রাগে ক্রোধিত হয়ে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী’র হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির উঠানে এনে ছুঁড়ে ফেলল শ্যামলতা।
নতুন বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে নিলে পথ রুধে দাঁড়ালো রিসার্ভ। মায়ের হাতের মুঠি থেকে বউয়ের হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠে বলল,‘আমার বউ ফুলের মতো পবিত্র। ওর গায়ে কোনো চরিত্রহীনার দাগ লাগাতে এসো না মা।’
রিসার্ভ বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে শুনে পাড়া প্রতিবেশীরা বউ দেখতে বাড়ি বয়ে আসে। আর এসেই চোখের সামনে এমন এক মর্মান্তক দৃশ্য দেখে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরেন। সকলে দেখলেন উনার ছেলের বিয়ে করা বউকে, উনি (শ্যামলতা) বাড়ির বাহিরে ছুঁড়ে ফেলছে তখন উনারা সকলে এগিয়ে আসলেন। শ্যামলতার কর্কশকন্ঠের সামনে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। কারণ শ্যামলতা কোনো কথাই ছাড় দেননা।
বিছানার উপর চার-পাঁচটা হিসাবের খাতা সামনে রেখে চোখে চশমা পরিধান করে হিসাব কষছেন দেলোয়ার খান। ছোট মেয়ের ভয়াত কন্ঠে ‘আব্বা’ ডাক শুনে তিনি সম্বিত কন্ঠে বললেন, ‘ কি হয়েছে শায়েলা এত উত্তেজিত হয়ে উঠছিস কেন? ’
১৩বছরের মেয়ে শায়েলা চেঁচিয়ে বলল,’ রিসার্ভ মামা বিয়ে করে বউ নিয়ে আসছে আর তোমার মেয়ে নতুন বউকে বাড়ির উঠানে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তুমি তারাতাড়ি আসো আব্বা। ‘
“ বউকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে মানে কি শায়েলা? ইয়ার্কি পেয়েছে নাকি শ্যামলতায়?তোর ভাই কোই? ” বলল দেলোয়ার খান।
“জানি না আব্বা তুমি তারাতাড়ি চলো।” বলল শায়েলা।
রাগে অগ্নিশর্মা রূপ নিয়ে এলোপাথাড়ি পা ফেলে এগিয়ে আসল দেলোয়ার খান।
বাড়ির বাহিরে এসে দেখলেন সত্যি সত্যি তাদের নাতিবউ মাটিতে উপুড় হয়ে পরে আছে। রাগে দুইহাত মুঠ করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলেন দেলোয়ার। বড় মেয়ের হাত ধরে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সজোড়ে গালে কষে এক থাপ্পড় মারলেন। রাগী গলায় বললেন, ‘ কি হচ্ছে এইসব শ্যামা? তুই আমার বড় মেয়ে ও সবার থেকে বুদ্ধিমতি মেয়ে।আর সে তুই কিভাবে এমন কাজ করলি? ‘
চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে ফেললো শ্যামলতা। পরক্ষণে চেচিয়ে বলতে লাগলো, ‘ আমার ছেলেকে আমি বিদেশ পাঠিয়ে পড়া শোনা করিয়েছি কি? এক চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে? ’
তীক্ষ্ণ কন্ঠে মুখে যা আসছে বলে অপমান করছে শ্যামলতা মেয়েটাকে। মুখের উপর ইয়া বড় এক ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়ে কেঁদে কেঁদে উঠছে সে। রিসার্ভকে সামনাসামনি সে দেখেনি। আজই বিয়ের ঠিক আগ মূহুর্তে দেখেছে।
গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে বলাবলি করছিল,‘হলুদের অনুষ্ঠানের পরে নাকি এই মেয়েকে অন্য একটা ছেলের সাথে জড়াজড়ি অবস্থায় দেখেছে তারই হবু বর।’
কথাগুলো কর্ণপাত হতেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না শ্যামলতা। আর সেই মেয়েকে সহানুভূতি দেখিয়ে তারই ছেলে বিবাহ করে নিয়ে আসছে তারই বাড়িতে।
মেয়েটা শ্যামলতার পা ধরে কাঁদছে। পাশান হৃদয়ের ব্যক্তির একটু মায়া জাগছে না অন্তরে। সে পা সরিয়ে লাণ্থি মারলো মেয়েটার বাম হাতের কব্জির উপরে। ছিটকে গিয়ে কিছুটা দূরে সরে পরল। অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসল, ‘ আল্লাহ গো’
রিসার্ভ সকলের সামনে চেঁচিয়ে বলে, ‘মা! তুমি কিন্তু এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছো। এসব ঠিক হচ্ছে না। ‘
তখনই সেখানে উপস্থিত হয় কল্পনা বেগম (শ্যামলতার মা) একটা মেয়েকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে ছুটে যান মেয়েটার কাছে। দুইহাত দিয়ে মেয়েকে ধরে দাঁড় করান। কল্পনা তার মেয়ের উদ্দেশ্য শানিতকন্ঠে বলল, ‘ বউ যখন মানবিই না তাহলে যখন বিয়ে করছিল তোর ছেলে তখন বাঁধা দিসনি কেনো? ‘
শ্যামলতা গর্জন করে বলল, ‘ তখন আমি জানতাম না মেয়ের চরিত্রে দোষ আছে। ‘
কল্পনা নিরব ও নির্বাক্য স্তব্ধ স্থির তাকিয়ে রয় শ্যামলতার মুখটির দিকে। তিনি ভেবে পাচ্ছে না কি বলছে তার মেয়ে। এটা কি সত্যি তারই মেয়ে নাকি তার মেয়ের মতো দেখতে অন্য কেউ?
শ্যামলতা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আমি এই মেয়েকে কখনো পুত্রবধূর মর্যাদা দেবো না। আর না কখনো ওকে মেনে নেবো। এই মেয়ের সাথে সারাজীবন এক ছাঁদের নিচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি চাই রিসার্ভ তুমি ওকে ডিভোর্স দাও। আমি বাবা তোমাকে আবারও বিয়ে করাবো। ’
শ্যামলতাকে থামিয়ে ধমকের স্বরে দেলোয়ার খান বলল, ‘চুপ করো তুমি অসভ্য মেয়ে। ব্যবসা বানিজ্য সামলিয়ে কয়েকটা বাড়ি গাড়ি কি বানিয়ে ফেলেছো তাই বলে কি নিজের আদবকায়দা সব ভুলে গেছো? এই শিখেছো তুমি? মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সব ভুলে গেছো?’
শ্যামলতা রাগী গলায় বলল, ‘ এই মেয়েকে আমি কখনো মানবো না দরকার পরলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে___’
শ্যামলতা আর কিছু বলার আগেই হন্তদন্ত হয়ে দেলোয়ার সামনে এগিয়ে আসল। কোনো কিছু না বলেই ঠাসস করে মেয়ের গালে আরও একটা চড় বসায় তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, ‘ এই থাপ্পড় টা তোমাকে আরও আগে মারা উচিত ছিলো। অহংকারী হয়ে উঠেছো তুমি শ্যামা। তোমাকে এখন আমার নিজের মেয়ে বলতেও ঘৃণা করছে। সখ করে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। ভাবিনি মেয়ের এমন রূপ দেখতে পারবো। ছি ছি ছি কিভাবে পারলে তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের চরিত্র নিয়ে আজে বাজে মন্তব্য করতে? ছি ছি ছি লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। ‘
রিসার্ভ রাগে গজগজ করছে। অন্য কেউ হলে আজ তাকে মার্ডার করে ফেলতো কিন্তু নিজের মাকে কি বলবে? শ্যামলতা খুবই শান্ত সৃষ্ট ভদ্র মহিলা ছোট বড় সবাইকে বেশ সম্মান করে চলে কিন্তু আজ তার কি হয়েছে? আল্লাহ মালুম!
নতুন বউ ছুটে এসে দেলোয়ার খানের পা ঝাপ্টে ধরলো কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ মারবেন না দাদা আপনি আমার শাশুড়ি মাকে মারবেন না। উনার আমাকে পছন্দ নয় এতে উনার কোনো দোষ নেই। হয়তো আমারই কোনো খুত আছে। আপনি দয়া করে শান্ত হন। ‘
দেলোয়ার খান চুপ হয়ে গেলেন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালেন। মাটির উপর হাঁটু গেঁড়ে বসে ক্ষীনকন্ঠে মেয়েটি বলল, ‘ শুনতে কি পাও? আমার প্রিয়তম! আজ আমার এতকিছু সহ্য করতে হচ্ছে
শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি বলে। তুমি হয়তো আমার সীমাহীন ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারোনি। বা কারো ভালোবাসা উপলব্ধি করার ক্ষমতা আল্লাহ তোমার মধ্যে দেয়নি। আজ এক আকাশ অভিমান নিয়ে আমি তোমার পথ থেকে সরে গিয়েছি। কিন্তু মনে রেখো তুমিও একদিন কাউকে না কাউকে মন দিয়ে ভালোবাসবে। হয়তো সেদিন আমার অনূভুতি টা তুমি বুঝতে পারবে। এত অপমান অপদস্ত হচ্ছি এতে আমার সামান্য টুকু আক্ষেপ নেই। আজ আমার যা পরিনতি হয়েছে তার পেছনে শুধু তুমি দ্বায়ী। আমি নির্দোষ তবুও আমার চরিত্র নিয়ে তুমি ও সবাই অনেক আজেবাজে মন্তব্য করেছো। আল্লাহ সব দেখেছেন। তিনি জানেন আমি কোনো পাপ করিনি৷ তবে হ্যাঁ একটা পাপ আমার দ্বারা হয়ে গেছে সেটা হচ্ছে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসা। তার শাস্তিই পাচ্ছি।কোনো এক খোলা মাঠে স্বচ্ছ আকাশের নিচে বসে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে।
তুমি শুনতে কি পাও? আমি আমার সব টুকু ভালোবাসা ওই বিয়ের আসরে ওই বাড়িতে ওই উঠানের ঠিক সেই জায়গাতে যেখানেতে তুমি আমাকে সকলের সামনে বলেছিলে,‘ আমি নষ্টা, ব্যা**শ্যা ছেলেদের সাথে শরীর গষাগষি করাই আমার পেশা। বলেছিলে আমি চরিত্রহীন আমার চরিত্রের কোনো ঠিক নেই। পেছন থেকে একটা ছবি তুলে সকলকে দেখিয়ে সবার চোখে আমাকে খারাপ বানিয়ে ছিলে। এতে তোমার লাভ টা কি হয়েছে? আমার চোখের জলের মূল্য তোমাকে দিতে হবে। আমি নির্দোষ ছিলাম। তুমি একদিন ঠিক বুঝবে। সেদিন খুব দেরি হয়ে যাবে। তোমার প্রতি আমি আমার ভালোবাসা অদ্ভুত অনূভুতি সব কিছু সেখানেই কবর দিয়ে এসেছি।’
চলবে