#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র
#অন্তিম_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________________
সূর্যের কড়া রশ্মি জানালা ভেদ করে চোখে মুখে উপচে পরতে নড়েচড়ে উঠল বর্ষা। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন কিভাবে চলে আসলো বুঝাই দ্বায়। সময় সত্যিই কারো জন্য থেমে থাকে না। এক মাস, (ত্রিশটা দিন) কিভাবে কেটে গেলো। গতকাল রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় দুইটা তিনটা বেজে গিয়েছিল। হলুদের অনুষ্ঠান রাত বারোটা পর্যন্ত চলে। তারপর বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয় হাতের মেহেদী শুকাতেও এক্সট্রা সময় লাগে। সব মিলিয়ে ঘুমায় অনেক রাতে। বিয়ে বলে কথা আত্মীয় স্বজনে ঘর বাড়ি গিজগিজ করছে কোথাও পা ফেলার এই টুকি জায়গা নেই। রাতে যে যেথায় জায়গা পেয়েছে সেথায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
কোনো মতে পা ফেলে বিছানা পর্যন্ত আসল বর্ষার মা। গায়ের উপর থেকে চাদরটি টান দিয়ে সরিয়ে নির্মূলকন্ঠে বলে উঠল,‘ বর্ষা উঠ মা। আর কত ঘুমাবি আজ তো তোর বিয়ে?’
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বর্ষা বলল,‘ থাক না আম্মু আর একটু ঘুমাই বিয়ে কাল পরশু করে নিবো।’
মেয়ের কথা শুনে মায়ের কপালে হাত। মেয়েকে বিছানা থেকে টেনে তুলে বসিয়ে রাগী গলায় বলল,‘ তুই উঠবি নাকি আমি অভ্রকে ডেকে নিয়ে আসবো?’
বর্ষা চট করে চোখ মেলে তাকালো। অস্ফুটে বলল,‘ এই তো আমি উঠে গেছি। কাউকে ডাকার প্রয়োজন নেই।’
‘তারাতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। খাবার খেয়ে পার্লার যেতে হবে।’
বলে বর্ষার মা রুম থেকে চলে যায়। যাওয়ার পূর্বে বাকিদের ও ঘুম থেকে তুলে দেয়। বিরক্তিতে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বসে রয় বর্ষা।
সকালের নাস্তা করার পর নাহিদ, মৌমি ও আহিতা, নিশি বর্ষাকে নিয়ে পার্লারে চলে যায়।
বিয়ে বাড়ি বলে কথা সব কিছুতে শুধু তারাহুরা। সবাই একেক কাজে ব্যস্ত। মস্ত বড় বাড়ি সাজানো হয়েছে ফুল ও ঝাড়বাতি দিয়ে। দেখতেও বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।
প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে কিনা দেখা, বাবুর্চিদের রান্নার ওখানে গিয়ে চক্কর লাগানো। এই নিয়ে বহুত ব্যস্ততার মাঝে সময় কাটছে সবার।
_____________________________
ঘরের চার দেয়ালের মাঝে চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁচের একটা গ্লাস একহাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছে এক আগন্তুক। পাশ থেকে একজন সন্ধিহান কন্ঠে বলল,‘ তুই তো কিছুই করতে পারলি না৷
না পারলি মনের কথা বলতে, আর না পারলি মেয়েটাকে নিজের করতে।’
পেছন থেকে আরেকজন বলল,‘ পাখি খাঁচায় বন্ধি হওয়ার আগেই উড়ে গেছে বস।’
হাতের গ্লাসটা শব্দ করে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলল সে। কাঁচের তৈরি গ্লাস ঠাসঠুস শব্দ তুলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
রাগে ঝাঁঝকণ্ঠে বলল,‘ বিয়ে এখনও হয়নি৷ হাতে এখনও বহু সময় আছে।’
চতুর্থ নাম্বার ছেলেটি বলল,‘ তুই কি করতে চাচ্ছিস একবার বলবি?’
‘সময় হলেই দেখতে পারবি।’ বলেই ঠোঁট বাঁকা করে ডেভিল হাসি দেয় ছেলেটা।
_________________________
পার্লার থেকে সেজেগুজে বাড়ি ফিরার পর। বর্ষাকে দেখে সকলের চোখ কপালে। কেউ চোখই সরাতে পারছে না৷ বিয়ের ফুল ফুটলে নাকি মেয়েদের রূপ খুলে বর্ষার বেলাও তাই হয়েছে। আগের দিনের মুরব্বিরা বলা বলি করছে।
বর্ষা লজ্জায় কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
চোখ তুলে একনজর সামনে তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে নিলো বর্ষা। কি জেনো দেখলো? মনে হচ্ছে। আবারও দেখার জন্য আগের ন্যায় তাকায়। লাল ও গোল্ডেন কালারের মিশ্রণে বর বেসে শেরওয়ানি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। কেউ কারো উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না। মনে হচ্ছে এই প্রথম তারা নিজেদের দেখছে।
বর্ষাকে ধরে ওর কাজিনমহল উপরে বর্ষার রুমে নিয়ে যায়। কাজী এখনও আসেনি তিনি আসলেই বিয়ে পড়ানো হবে। বর বাড়িতেই আছে তাই বর এসেছে বর এসেছে এই টাইপের আনন্দ এই মূহুর্তে নেই। ১১ বছরের একটি মেয়ে রুমে প্রবেশ করলো। নতুন বউ কে খুঁজে তার পাশে গিয়ে বসে কানে কানে বলল,‘ তোমার জন্য ভাইয়া ছাঁদে অপেক্ষা করছে এখনই যাও। নয়তো সে রাগ করবে।’
কথাটি বলে মেয়েটা দৌঁড়ে চলে যায়।
মিনিট দশেক পর, ছাঁদে চলে আসে বর্ষা। নিচ থেকে সকলের হৈ-হুল্লোড় শোনা যাচ্ছে গান বাজনা তো রয়েছেই। ঝাড়বাতির আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পায় না বলে বিড়বিড় করে বলল,‘ আমাকে আসতে বলে নিজে কোথায় চলে গেছে?’
পেছন থেকে কেউ একজন শব্দ করে হেঁটে বর্ষার পেছনে দাঁড়ায়। মৃদু হেসে পেছনে ঘুরতেই বর্ষার চোখ জোড়া চড়কগাছের মাথায় উঠে যায়। অচেনা একটা ছেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল,‘ কে আপনি? এখানে কি করছেন?’
ছেলেটি এক পা বর্ষার দিকে এগিয়ে যায়। ধীরকন্ঠে বলে,‘ নতুন বউকে খুব কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা জাগছে।’
বর্ষা ভয় পেয়ে যায়। নিচে গানের শব্দে তার চিৎকার কেউ শুনতে পায় না। হাজার চিৎকার করেও কোনো লাভ নেই কেউ শুনতে পাবে না। ছাঁদে বর্ষা ও ছেলেটা ছাড়া আর কেউ নেই। আর না কেউ বর্ষাকে ছাঁদে আসতে দেখেছে। সুযোগ বুঝে চুরি করে আসছে সে। ছেলেটার সামনে থেকে পালানোর জন্য দৌঁড় দেয় বর্ষা। কিন্তু তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয় না। ছেলেটা বর্ষার হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে খানিক বর্ষার দিকে ঝুঁকে পরে।
পেছন থেকে দেখে বুঝা যাচ্ছে ছেলেটা বর্ষাকে চুমু খাচ্ছে। রাগী গলায় ধমক দিয়ে কেউ বলল,‘ কি হচ্ছে এখানে?’
কাজী আসছে বিয়ে পড়ানোর জন্য কিন্তু সারা বাড়ি খুঁজেও বর্ষাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন ওই মেয়েটা অভ্রকে বলে বর্ষা আপু ছাঁদে। বিয়ের কনেকে নিজেই ডাকতে আসে অভ্র। তার সাথে আসে তার বন্ধুরা। এখানে এসেই এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে ভাবতে পারেনি অভ্র। স্তব্ধ হয়ে যায় বাকিরা। অভ্রর কণ্ঠস্বর শুনে আঁতকে উঠে বর্ষা। এতক্ষণ যে ছেলেটা তার সাথে অসভ্যতামি করছিল সে অভ্র আসতেই বর্ষার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। অতিরিক্ত রাগে হাত মুঠ করে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র। ইচ্ছে করছে নিজ হাতে ছেলেটাকে খুন করতে। ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে ঘুরে হাঁটতে শুরু করল অভ্র। বর্ষাকে নিজের তরফ থেকে বলার সুযোগ অব্ধি দিল না। বর্ষা ‘অভ্র’ বলে ডাকতে লাগল। পেছনে ছুটতে ছুটতে নিচে চলে যায়। ওই দিকে ছেলেটা ভিড়ের মধ্যে সুযোগে পালিয়ে যায়। অভ্র সকলের সামনে দাঁড়িয়ে কর্কশকন্ঠে বলে,‘ আমি বর্ষাকে বিয়ে করতে পারবো না।’
অভ্রর উক্ত কথাটি শুনে থমথমে হয়ে যায় সমস্ত পরিবার। বর্ষা সকলের সামনে দিয়ে এগিয়ে যায় অভ্রর কাছে তার হাত দুটি ধরে অনুনয়-বিনয় করে বলল,‘ আমি জানি না তুমি কি দেখেছো। কিন্তু বিশ্বাস করো যা ভাবছো সবটা ভুল।’
বর্ষার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে অভ্র। এক ছিটকায় ফ্লোরে উপচে পরে যায় সে। হঠাৎ এমন আচরণের কারণ জানতে চায় সবাই। নিরবদ্য নির্বাক্য দাঁড়িয়ে রয় অভ্র। পাশ থেকে তার বন্ধুরা অভ্রর পরিবার ও মেহমান দের সামনেই বলল ওরা ছাঁদে যা দেখেছে। লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো বর্ষার পরিবারের সবাই। বর্ষা সবার কাছে গেলো হাত ধরে বলল, আমি কিছু করি। ওরা যা বলছে সব মিথ্যে।
বর্ষার বাবা কর্কশকণ্ঠে বলল,‘ তুমি ছাঁদে গিয়েছিলে?’
‘আব্বু তুমি অন্তত আমাকে বিশ্বাস করো।’
সাগর খান চেঁচিয়ে উঠল,‘ তুমি ছাঁদে গিয়েছিলে হ্যাঁ বা না?’
আমতা আমতা করে বর্ষা বলল,‘ হ্যাঁ!’
কোনো কিছুর প্রতিক্ষা না করে সাগর খান সজোড়ে বর্ষার গালে চড় মারলেন। বর্ষা তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে মাথা তুলে অভ্রর দিকে দৃষ্টি স্থির করল। ক্ষীণকণ্ঠে বলল,‘ আমি কিছু করিনি অভ্র।’
বর্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় অভ্র। মেঝেতে বসে শব্দ করে কাঁদছে বর্ষা। মন আজ বিষণ দক্ষ। যাকে সে ছোট্ট থেকে ভালোবাসে তার সাথে আজ ওর বিয়ে ছিল। আর আজই ওর সাথে এটা হল? এই রকম জঘন্য অপরাধ ছিহ লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না বর্ষা। অন্য দিকে পাড়া প্রতিবেশীরা কানাফুসি করছে৷ থুতু ফেলছে এই বাড়ির পর। নূর ইসলাম তীক্ষ্ণতার সাথে বললেন, ‘তোকে আমরা এত আদর দিয়ে বড় করেছি। আর তুই আজ আমাদের মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলি। মর গিয়ে কোথাও তোর চেহারা আমরা আর দেখতে চাই না। গলায় দড়ি দে নয়তো কলসি নিয়ে পানিতে ডুবে যা।’
বর্ষার কান্নার শব্দ কমে আসলো। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। আজ এই বিপদের দিনে ওর পরিবার ওর পাশে দাঁড়াবে। তা না উল্টো মরে যেতে বলছে। অথচ বর্ষা নির্দোষ।
সবার মাঝখান থেকে একটি সুঠাম দেহের পুরুষ বেরিয়ে আসল৷ বর্ষার বাবার উদ্দেশ্য বলল,‘ আপনাদের অনুমতি থাকলে আপনাদের মেয়েকে আমি বিবাহ করে তাকে এই বদনাম থেকে মুক্তি দিতে চাই।’
এই ছেলেটি আর কেউ নয় স্বয়ং রিসার্ভ। অন্ধকারে আলোর রশ্মির মতো উদয় হয় রিসার্ভ। তার এমন প্রস্তাবে ঝটপট রাজি হয়ে যায় বর্ষার পরিবার কিন্তু রিসার্ভের মা রাজি হন না। বলে তিনি বিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। অভ্রর প্রত্যাখান, ছেড়ে চলে যাওয়া, তাকে অবিশ্বাস করা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না বর্ষা। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যায়। জীবন্ত লাশ হয়ে গেছে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে অভ্রর যাওয়ার পথের দিকে। মা’য়ের অনুপস্থিতিতে বিয়ে করে রিসার্ভ বর্ষাকে। পরিবারের সবাই মান সম্মান বাঁচাতে বর্ষাকে বিয়েটা করতে বাধ্য করে। বিয়েতে অমত করবে তারও কোনো উপায় নেই। যার জন্য করবে সে তো ভুল বুঝে চলেই গেছে। মরার মতো তব্দা খেয়ে বসে আছে বর্ষা। কাজী যা বলছে মুখে মুখে তা উচ্চারণ করছে শুধু। ইচ্ছে? সে তো তখনই মরে গেছে।
বিয়ে সম্পূর্ণ হলে রিসার্ভের সাথে তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। পাড়া প্রতিবেশীদের মুখ তখনও চলছিল। আশ্চর্য বিষয় হল, কোনো কিছুই বর্ষার কান অব্ধি পৌঁছাচ্ছে না।
_____________________________
শায়েলা বর্ষার কাঁধের উপর হাত রেখে ত্রস্তকণ্ঠে জানতে চেয়ে বলল,‘তারপর কি হল?’
‘এ বাড়িতে আসার পর কি হয়েছে সেটা তো তুমি জানোই!’ বলল বর্ষা।
‘ না আমি ওইটা বলছি না। বলছিলাম যে,তারপর কি অভ্র নামক ছেলেটার সাথে তোমার আর দেখা হয়নি?’
বর্ষা রাগী গলায় বলল,‘ নাহ! আর আমি চাইও না কখনো দেখা হোক। আল্লাহ’র রহমতে আমি এখন অনেক সুখে আছি। চাইনা আমার অতীতের কেউ আমার বর্তমানে ফিরে আসুক।’
বলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় বর্ষা। কিছু একটা ভেবে পেছনে ঘুরে তাকায়। নির্মূলকণ্ঠে বলল,‘বিকেলে উনার সাথে মার্কেটে যাবো। তোমাদের সবার জন্য টুকটাক শপিং করবো। তুমি চাইলে যেতে পারো।’
‘ঠিক আছে! যাওয়ার দশ মিনিট আগে বলো আমি রেডি হয়ে থাকবো।’
.
.
.
শপিংমলের ভেতর থেকে দুই হাত ভর্তি শপিংব্যাগ নিয়ে বের হল বর্ষা, শায়েলা ও রিসার্ভ। তিনজনের মধ্যে হাসির ঢল নেমেছে। তাদের হাসির শব্দ শুনে সকলে ঘুরেঘুরে তাদেরকে পরক্ষ করছে। রিসার্ভ এমন মজার মজার কথা বলছে যা শুনে হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না বর্ষা ও শায়েলা।
দূর থেকে দু’টি চোখ বর্ষাকে এমন ভাবে হাসতে দেখে রাগে অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করছে।
ব্যাগঢালায় শপিংব্যাগ গুলো রেখে গাড়ির ডোর খুলে উঠতে যাবে তখন হুট করে বর্ষা বলে উঠল,‘ একটা জিনিস তো নিতেই ভুলে গেছি। তোমরা বসো আমি এখুনি নিয়ে আসছি।’
বলে বর্ষা যেতে যাবে তখন রিসার্ভ বলে উঠল,‘ কি লাগবে আমায় বলো আমি নিয়ে আসছি। তোমার শুধু শুধু যেতে হবে না।’
‘মেয়েদের জিনিস মেয়েদেরকে কিনতে হয়। তুমি বসো তো চুপ করে পাঁচ মিনিট লাগবে।’ সরু কন্ঠে কথাটি বলে শপিংমলের ভেতরে চলে যায় বর্ষা।
এত এত মানুষগুলোর মধ্য থেকে একটা মেয়ে কিডনেপ হয়ে গেলো চোখের নিমিষে। পেছন থেকে দু’টি হাত বর্ষার দিকে ধেয়ে আসছে। একহাত দিয়ে বর্ষার দু’টি হাত পেছনে নিয়ে শক্ত করে ধরেছে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে সে। কিন্তু লাভ নেই মুখ দিয়ে টু শব্দ টাও বের হচ্ছে না।
রিসার্ভ’র গাড়ির পেছন দিয়ে বর্ষাকে নিয়ে চলে গেলো। অথচ সে জানতেই পারল না। বর্ষা রিসার্ভ’র গাড়ির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে হয়তো বলছে,‘ রিসার্ভ বাঁচান আমাকে।’
হাইওয়ে রোডের এক সাইডে গাড়িটা থামল। হাত দু’টো পেছনে শক্ত রশি দিয়ে বাঁধা চোখের উপর কাপড় বাঁধা। গাড়ি থামতে বর্ষা কর্কশভাবে বলল,‘ আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসছো অভ্র? কি ভাবছিলা তোমার স্পর্শ আমি চিনবো না? চোখ হাজারও কাপড়ের আড়ালে থাকলেও আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে তোমাকে চিনে ফেলতে পারবো।’
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে পাশ ফিরে তাকালো বর্ষা। অভ্র বর্ষার একহাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে। ক্ষীণকণ্ঠে বলে,‘ চিনবে না-ই বা কেনো? অধিক বেশি ভালোবাসো যে আমায়!’
চোখ হাত বাঁধা অবস্থাতেই চেঁচিয়ে উঠল বর্ষা। ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল,‘ ভুল বলছো তুমি। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।’
অভ্র বর্ষার দুই বাহু চেপে ধরে বলল,‘ তুমি আমাকে ভালোবাসে ময়ূরাক্ষী!’
‘বর্ষা হুংকার দিয়ে বলল, এই জীবনে আর নয়। এক ভুল দ্বিতীয় বার বর্ষা করে না। আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসছো? আমার স্বামী আমার জন্য দুশ্চিন্তা করবে আমাকে তার কাছে পৌঁছে দাও।’
অভ্র রাগ সামলাতে না পেরে গাড়ির দরজা লাণ্থি মেরে বলল,‘ কিসের স্বামী? ও তোমার কেউ না?’
‘উনি আমার স্বামী বিয়ে হয়েছে আমাদের।’
‘আমি এই বিয়ে মানি না!’
‘আপনি না মানার কে? আমি মেনে নিয়েছি।’
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি ময়ূরাক্ষী তুমি শুধু আমার।’
‘কোথায় ছিল আপনার এই ভালোবাসা? অবিশ্বাস করে বিয়ে করবেন না বলে চলে গিয়ে ছিলেন। আর আজ তিন মাস পর আপনার মনে পরেছে আপনার ভালোবাসার কথা? আমায় ভালোয় ভালোয় যেতে দিন মি.অভ্র নয়তো। ’
‘নয়তো কি বর্ষা?’
‘আমি আপনার নামে কেস করবো।’
‘শুধু আমার নামে করবে? তোমার স্বামী রিসার্ভ এর নামে করবে না?’
‘মানে?’
অভ্র বর্ষার চোখের বাঁধন খুলে দেয়। হাতের বাঁধন ও খুলে দেয়। তৎপর বলল,‘ আমাদের বিয়ের দিন রাতের ঘটনা মনে আছে? সব কিছু আগে থেকে প্লান করা ছিল বর্ষা। তোমার ছাঁদে যাওয়া, তারপর কাজীর আসা। তোমাকে আনতে আমার ছাঁদে যাওয়া।তোমাকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখা নিচে এসে আমার বন্ধু ও তার সাথে কয়েকজনের তোমার বিরুদ্ধে কথা বলা। সব কিছু আগে থেকে প্লান করা ছিল। আর এই প্লানের মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে রিসার্ভ৷ যে কি-না তোমাকে পাওয়ার জন্য এত কিছু করেছে। সবার সামনে তোমাকে খারাপ বানিয়ে বিয়ে করছে৷ ওইদিন মনে আছে একটা ছেলে তোমায় বাইকে লিফ্ট দিয়ে ছিল। সেটা আর কেউ নয় রিসার্ভ ছিল। এই তিন মাসে আমি সব খোঁজ নিয়েছি বর্ষা। সব কিছু রিসার্ভ করেছে। তোমার একবারও মনে হয়নি। যেখানে তোমার নিজের পরিবার তোমার বিপক্ষে চলে গেছে সেখানে একজন অপরিচিত ছেলে ও তার পরিবার এতবড় বদনাম শোনার পরও কেনো তোমাকে মেনে নিলো? কেনো বিয়ে করলো? একবার ও কি ভেবেছো এই কথাটা?’
বর্ষা অভ্রর হাত ধরে তাকে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,‘ ও তাহলে আজ আপনি আমাকে সত্যি টা বলে সত্যর উপর থেকে পর্দা সরাতে এসেছেন। বাহ অভ্র মির্জা বাহ। এখন যখন আপনি জানলেন ওই রাতে আমি নির্দোষ ছিলাম তখন আপনার ভালোবাসার দাবী নিয়ে চলে আসছেন। আসলে কি আপনারা সবাই সার্থ্যবাদী। সবাই আমাকে ঠকিয়েছেন। আর আমি বোকা তিনমাস ধরে এক চিটারের সংসার করছি। ছিহ ঘৃণা আসছে আমার নিজের প্রতি মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আসলে আমি বেঁচেই কেনো আছি?’
‘বর্ষা কান্না থামা আমার কথা শোনো।’ সরু কন্ঠে বলল অভ্র।
বর্ষা একহাত তুলে অভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলল,‘একদম আমার কাছে আসবেন না। আমি সহ্য করতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। সবাই কেনো আমায় ব্যবহার করে? কেনো সবাই আমার অনূভুতির সাথে খেলা করে? আমি কি দোষ করেছি যারজন্য সকলের সামনে আমাকে খারাপ বানানো হল। আমি সত্যিই বোকা। ভালোবাসার ভেড়া জালে এমন ভাবে ফেঁসে গিয়েছিলাম। কোনো কিছু বোধগম্যই হয়নি। ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছেন আপনারা দুজন আমাকে।’
বলতে বলতে বর্ষা রোডে নেমে পরে। এক সেকেন্ডে জীবন উলট পালট হয়ে যায় বর্ষার। চলন্ত একটা মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। পুড়ন্ত বিকেলের আকাশটা হঠাৎ ঘন কালো আকাশে ছেয়ে যায়। স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রয় অভ্র চোখের পলকে কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝা দ্বায়। রাস্তায় মানুষের কোলাহল পরে গেলো। চারদিকের মানুষ ছুটাছুটি করছে। আকাশে মেঘেরা গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজে গর্জন করছে। রাস্তা চিপচিপে হয়ে যাচ্ছে বর্ষার রক্তে। তার নিস্তেজ দেহটা রাস্তার এক পাশে পরে আছে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কত শত লোকজন। পৃথিবীর বুকে নেমে পরল বৃষ্টিকণা। দাঁড়িয়ে রয়েছে অভ্র দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে তার কি থেকে কি হয়েগেলো? অভ্র বর্ষায় ভিজে এগিয়ে আসল বর্ষার কাছে। বৃষ্টির জলের সাথে বর্ষার রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে। বর্ষার মাথার কাছে বসল। দুইহাত দিয়ে শেষ বারের মতো তাকে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আর্তচিৎকার দেয় অভ্র। বৃষ্টিকণার সাথে অশ্রুকণা যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
বর্ষাকে বুকের মধ্য খানে জড়িয়ে ধরে।
উৎকণ্ঠ বলল,“ আমি আজও বর্ষায় ভেজা অভ্র আজীবন থাকবো যতদিন বাঁচবো।
ভালোবাসা থেকেই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় ময়ূরাক্ষী!
আর ভুল বুঝাবুঝির কারণেই গল্পের শেষ
বিচ্ছেদ হয়।”
#সমাপ্ত
Somapti koster… But ajagay Ovror vul ase kisota ?