#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র
#পর্ব_০৪
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______________
সন্ধ্যার পর, কয়েকটা চুল হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে লা লা লা লা করে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। হঠাৎ অদ্ভুত স্বরে ‘ ভাউ’ বলে চিৎকার দিয়ে কেউ তার সামনে চলে আসলো। ভয়ে ‘আহহহ’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল বর্ষা।
কিয়ৎক্ষণ পর ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকালো। এক হাত কোমড়ে তো আরেক হাত দেয়ালের উপরে রেখে সশব্দে হাসছে অভ্র। তার ওই হাসি দেখে রাগী গলায় চেঁচিয়ে উঠল বর্ষা সে বলল, ‘ অভ্রর বাচ্চা আজকে তোমার খবর আছে! ’
অভ্র খেয়াল করল বর্ষা এখন তার সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নামবে, হাসি কোনো ভাবেই থামছে না। উল্টো পায়ে অভ্র দৌঁড় দিলো পেছন পেছন বর্ষাও দৌঁড়াতে লাগল।
অভ্র দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপরে চলে গেলো, নিজের রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে পিঠ ঠেকালো, বুকের উপর বাম হাত রেখে ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে বর্ষা বার বার অভ্রকে ডেকে যাচ্ছে অভ্র রুমে দাঁড়িয়ে বর্ষাকে ভেংচি কাটছে তা শুনতে পেয়ে বর্ষা রাগে দরজায় জোরে জোরে কয়েকটা লাণ্থি মারলো। ভেতর থেকে অভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ‘ রাগ করে না ময়না লো রাগলে তোমায় লাগে আরও ভালো। ’
বর্ষা কর্কশকন্ঠে বলে উঠে, ‘ আজকে শুধু একবার বের হও তোমার খবর আছে ১২টা থুইয়ে ১৪ টা বাজাবো। ’
হাসতে হাসতে বলে উঠল অভ্র, ‘ এইটুকু তোর সাহস হাহাহা বিড়ালের মতো মেউ মেউ করছিস কেন যা ভিতূর ডিম! ’
বলে আবারও হাসতে লাগল। বর্ষার এবার মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোভে মাথা ফেটে যাচ্ছে, রাগে চেঁচিয়ে বলল, ‘ অভ্রর বাচ্চা! ’
দরজার সাথে গাল লাগিয়ে অভ্র নির্মূল কন্ঠে বলল, ‘ তোর জন্য তিনটা ডাব ডাইনিং টেবিলে রাখা আছে আর কোণ, বাটি, কাপ, চকবার আইসক্রিম ফ্রিজে গিয়ে দেখে নে। আর যদি পারিস খেয়ে আমাকে উদ্ধার করিস। ’
বর্ষা দরজার উপর দুইহাত রেখে উল্লাসিত কণ্ঠে বলল, “ সত্যি? ”
অভ্র ছোট্ট করে জবাবে বলল, ‘ হুম সত্যি! আমার ছোট্ট পরীটা আমার কাছে আবদার করেছে আর আমি সেটা না রেখে কি থাকতে পারি? ’
বর্ষা দরজার পিঠে কয়েকটা শব্দ তুলে বলল, ‘ থ্যাঙ্কিউ অভ্র ভাইয়া! ’
বলেই দরজার সামনে থেকে ছুটে চলে গেলো সে। দরজা হালকা খোলে বাহিরে এক নজর দেখলো অভ্র, বর্ষা নেই সে চলে গেছে। পুরোপুরি দরজা খুলে বাইরে আসলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে ডাব টেবিলের উপরেই রাখা আছে দেখতে পেয়ে ফ্রিজের দিকে পা বাড়ালো।
ফ্রিজ খুলে দেখলো তার রাখা একটা আইসক্রিমও নেই। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে ফ্রিজ বন্ধ করে দেয় অভ্র। চোখ জোড়া চিকচিক করছে এক উষ্ণ হাসির রেখাতে। আঁড়চোখে সিঁড়ির দিকে তাকালো, পরক্ষণে আবার বাড়ির মেইন দরজার দিকে তাকালো, বর্ষার আসার পরপরই সে সিঁড়ি দিয়ে নেমেছে। এরই মধ্যে বর্ষা উপরে গেলে সে নিশ্চয়ই দেখতে পেতো মানে সে উপরে যায়নি। মেইন দরজা খানিক খোলা আছে বৈকি অভ্র নিশ্চিত হল বর্ষা বাহিরে গেছে।
আর কোনো কিছু না ভেবে পা বাড়ালো দরজার দিকে, বাহিরে এসে এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে চলে গেলো বাড়ির পেছনের আঙিনায়।
একটা চেয়ারে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে বর্ষা। টেবিলের উপর আইসক্রিম খোসা ঢাকনা রাখা আছে। বর্ষা এমনভাবে আইসক্রিম খাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে সে একটা বাচ্চা। অভ্রর চোখে মুখে এখনও হাসি ল্যাপ্টে আছে। বর্ষা দুইহাত দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে৷ গালে থুতনিতে আইসক্রিম লেগে গেছে। তা দেখে অভ্র দূর থেকেই ফিক করে হেসে ফেলে।
বর্ষার সামনে এসে অন্য একটা চেয়ার টেনে বসে। প্যান্টের পকেট থেকে একটা সাদা রুমাল বের করলো, বর্ষা ফেলফেল করে অভ্রর দিকে তাকায়। অভ্র বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে রুমাল দিয়ে বর্ষার গালে লেগে থাকা আইসক্রিমের ক্রিম মুছে দিতে লাগে। বর্ষা লজ্জা পেয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়, অভ্র বর্ষার গাল ধরে একটু টান দিলো বর্ষা অস্ফুটস্বরে বলে উঠল আউচ।
চোখ জোড়া গোলগোল করে অভ্রর দিকে তাকালো অভ্র ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে হাসছে। বর্ষা রাগে কটমট করতে করতে অভ্রর সামনে থেকে চলে যেতে লাগল৷ তৎপর অভ্র বর্ষার হাত ধরে টান মারে। বর্ষা পা স্লিপ করে সোজা গিয়ে পরল অভ্রর কোলে অভ্র বাকা হেসে বর্ষাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো।
নেশালো কন্ঠে বলে উঠে, ‘ তুই হবি আমার? ’
বলে একটু একটু করে বর্ষার দিকে এগোতে লাগল, চোখ জোড়া বড়সড় করে বর্ষা তাকিয় আছে হঠাৎ কি জেনো মনে করে অভ্রর হাত ছাড়িয়ে ছিটকে উঠে দাঁড়ায়। মলিনকন্ঠে আমতা আমতা করে বলে, ‘ একদম টাচ করবে না আমায়! ’
বলেই ছুট্টে পালালো ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে অভ্র। টেবিলের উপর কনুই ভোর দিয়ে থুতনিতে হাত রাখলো অভ্র।
.
বলা নেই কওয়া নেই আঘাম কোনো বার্তা নেই এসে উদয় হলো বর্ষা। গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজে মেঘেরা গর্জন করে চলেছে, খানিকক্ষণ বাদ বাদ বিদ্যুৎ চমকিয়ে চারপাশ আলোকিত করে তুলছে।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঠাই বসে আছে অভ্র। এক দৌঁড়ে রুমের মধ্যে চলে আসে বর্ষা৷ বাহিরে বৃষ্টির আওয়াজ কান অব্ধি আসতে তার মনে পরলো বারান্দার রশিতে তার সব থেকে প্রিয় জামাটা শুকাতে দিয়েছিল সে। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি ছিটকে পরলে আবারও ভিজে যাবে ভেবেই বিছানার উপর বসা থেকে নেমে এক দৌঁড় দেয়। বারান্দায় রাখা জামাটা দুইহাত দিয়ে টান দিয়ে নেওয়ার পর, গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে এক নজর তাকালে দেখলো নিচে কেউ বসে আছে, একটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করায় স্পষ্ট অভ্রকে বসা দেখতে পেলো। উপর থেকে বার কয়েক অভ্রকে তার নাম ধরে আওয়াজ দিলো বর্ষা কিন্তু বৃষ্টির গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ও মেঘের গর্জনের কারণে বর্ষার ডাক অভ্রর কান অব্ধি পৌঁছালো না। এভাবে সারারাত ডাকলেও অভ্র শুনতে পারবে না বুঝতে পেরে সে রুমে চলে আসে। জামাটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে উল্টো পায়ে রুম থেকে বের হয়। একটা ছাতা মেলে বর্ষা বাহিরে চলে যায়।
‘ এত বৃষ্টির মধ্যে বসে বসে ভিজছো কেন? ’ অভ্রর থেকে তিন চার হাত দূর থেকে বলল বর্ষা।
অভ্র বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে কানে হাত দিয়ে বলল, ‘ কি বললি শুনতে পাইনি? ’
বর্ষা আরও জোরে চেঁচিয়ে বলল, ‘ এত বৃষ্টির মধ্যে বসে বসে ভিজছো কেনো? ’
অভ্র কানের উপর থেকে হাত নামিয়ে কপালের উপর রেখে শালিন কন্ঠে বলল, ‘ এত চেচাচ্ছিস কেন আমি কি বয়রা নাকি? ’
‘ আমার তো তাই মনে হচ্ছে! ‘ বলল বর্ষা।
‘ অভ্র রাগী গলায় বলল, কি বললি? ’
বর্ষা এই বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আর কোনো কথা বাড়াতে চায় না বলেই বলে উঠল, ‘ কিছু বলিনি এখন চলো বাড়ির ভেতরে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে। ’
কথাগুলো বলতে বলতে বর্ষা অভ্রর একহাত ধরে ফেলে। অভ্র বর্ষার ছাতার নিচে ঢুকে পরলো সম্পূর্ণ ভিজা শরীরে সে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেজা চুল থেকে পানি টপটপ করে গালে বেয়ে বর্ষার উপরে উপচে পরছে। বর্ষা পিছাবার জন্য পেছনের দিকে এক পা বাড়ালো, অভ্র তার একহাত বর্ষার কোমড়ের উপরে রাখলো। স্তব্ধ হয়ে যায় বর্ষা, এক টানে অভ্র বর্ষাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অভ্রর শার্ট-প্যান্ট ভিজা থাকায় বর্ষার জামাও অনেকটা ভিজে যায়। বর্ষার কানের উপরে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, “একদিন দুইদিন বৃষ্টি হলে সেটাকে বৃষ্টি বলে আর অনবরত বৃষ্টি হলে সেটা বর্ষাকাল অর্থাৎ বর্ষা বলে। তাই এটা শুধু বৃষ্টি নয় এটা হচ্ছে বর্ষা আর আমি অভ্র নই, আমি হচ্ছি বর্ষায় ভেজা অভ্র!”
অভ্রর কথাগুলো বলা শেষ হওয়ার পরপরই সে বর্ষার কোমড় আরও শক্ত করে চেপে ধরে। হিচকা টানে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে। দুজনের মধ্যে আর কোনো ফাঁক নেই। অভ্রর প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে ওঠে বর্ষা। একহাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত গালের উপর আসতে করে ছোঁয়ালো পরক্ষণে অভ্র তার অষ্ট জোড়ার সাথে বর্ষার অষ্ট জোড়া মিলন করিয়ে দেয়। দু’জনে এক গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয়।
বর্ষা ওর হাত থেকে ছাতাটা ছেড়ে দেয়। বাতাসে ছাতাটা কিছুটা দূরে গিয়ে পরে। আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি দুজনের উপরে পরছে। মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘেদের গর্জনে কেঁপে উঠে বর্ষা সঙ্গে সঙ্গে অভ্র দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে তাকে। অভ্রর বুকের মধ্যে চুপটি করে মাথা রাখে বর্ষা। দুইহাতে দু’জন দু’জনকে দু’জনের আষ্ঠেপৃষ্ঠের সাথে জড়িয়ে নেয়। একহাত দিয়ে অভ্রর বুকের উপর আঁকি ঝুকি করতে করতে বর্ষা বলল,“একেই বুঝি বলে বর্ষায় ভেজা অভ্র!”
অভ্র উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সাই দিয়ে বলল, “ হুম! আমি বর্ষায় ভেজা অভ্র, আর আমার তুমির অনন্ত অঙ্গনে পরিপূর্ণ! ”
পূরানো স্মৃতির পাতা উল্টাতেই নিঃশব্দে কেঁদে উঠল!কি সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো ভাবতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। বর্ষাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বসে রইল সে।
বর্ষার জ্ঞান ফিরে সন্ধ্যায়। জ্ঞান ফিরে পাগলের মতো করতে লাগে প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে ব্রেইনে আঘাত পায় সে। ডাক্তার নিয়ে আসা হয়, ডাক্তার সকলের থেকে পারমিশন নিয়ে ঘুমের ইনজেকশন দেয় কিছু মেডিসিন লিখে দেয় সাথে বলে সর্বদা তার সাথে জেনো কেউ থাকে। কোনো ভাবেই তাকে একা রাখবেন না। আর উনাকে ওই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেও দিবেন না। রাতে ঘুমের মধ্যে ছটফট করে বর্ষা। বর্ষার মা মেয়ের মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
পরদিন সকালে, বর্ষার সাথে দেখা করতে আসে তার বন্ধু মহল। তাদের সকলকে পেয়ে বর্ষা নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে। বলে,’তোরা সবাই আছিস শুধু তমাই নেই।’
বর্ষার এমন অবস্থা সহ্য করতে পারছিল না অভ্র আর না কাউকে বলতে পারছিল। বর্ষা সে তো তার অনুভূতি সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারছে। কিন্তু অভ্র? তার অনূভুতি তো সকলের থেকে লুকায়িত। না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে কাউকে বলতে। সব কিছু সহ্য সীমানার বাহিরে চলে যাচ্ছে। একটা ছেলে সব সহ্য করতে পারে শুধু পারে না ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে কষ্ট পেতে দেখতে। অভ্রও পারছে না।
বর্ষা আগের মতো কারো সাথে তেমন মেলামেশা করে না। ভাইবোন দের থেকেও যথেষ্ট দূরত্ব বানিয়ে ফেলেছে৷ নিজে একা থাকতেই পছন্দ করে। কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বললে সে নির্বাক্য বসে রয়।
অভ্র বর্ষার সাথে কথা বলতে আসে সে বলল,‘সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক ও হবে। শুধু তুমি একবার….’
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বর্ষা অভ্রর চোখে চোখ রেখে শুষ্ক কণ্ঠে বলল, ‘তাহলে কি তমা ফিরে আসবে?’
অভ্র শানিতকন্ঠে বলল, ‘ ও মারা গেছে বর্ষা। আর একজন মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসে না।’
অভ্রর কথার পিঠে তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসল বর্ষা। অভ্র ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷
সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা হঠাৎ করে বৃষ্টি পরা শুরু হয়। বর্ষাকাল বলে কথা বৃষ্টির কোনো ঠিক ঠিকানা নাই যখন তখন চলে আসে। রুমের দক্ষিণের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। মনে তার একরাশ অভিমান মনে হচ্ছে বৃষ্টির প্রতিটি বৃষ্টিকণা তার বুক ছেয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছু না ভেবে রুম থেকে সোজা বেরিয়ে পরে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে বললে ভুল হবে। বলা যায় ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। বাতাসে অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। বাড়ির পেছন দিকটায় বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। জানালা খোলা থাকায় আকাশ চমকানো বিদ্যুৎে রুম আলোকিত হয়ে উঠছে বর্ষার। ঘন ঘন ব্রজ পাত হচ্ছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টি ঘরে ঢুকে মেঝে ভিজিয়ে দিচ্ছে। কোনো মতে বিছানা থেকে নেমে জানালা পর্যন্ত আসলো বর্ষা। জানালা আটকাতে নিলে দেখতে পায় অভ্রকে সে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে। অভ্র বৃষ্টিতে তেমন ভিজতে পারে না। বৃষ্টিতে ভিজলেই তার জ্বর আসে গতবার চারদিন জ্বরে ভুগেছে। আজ আবারও তাহলে কেন ভিজছে? ভাবান্তর হয়ে ভাবতে লাগে বর্ষা। তার পরই মনে হয়, হয়তো আমারই জন্যই ভিজছে। সত্যিই কি আমার সাথে অভিমান করে বর্ষায় ভেজছে অভ্র?
রুম থেকে দৌঁড়ে বের হলো বর্ষা। বৃষ্টির সময় বাড়ির সকলে নিজ নিজ রুমেই থাকেন। সে জন্য বর্ষাকে বের হতে কেউ দেখেনি। বর্ষায় ভিজে চিপচিপে হয়ে আছে অভ্র। পেছন থেকে দুটি হাত তাকে আবদ্ধ করে নিলো। অভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,‘ তুমি এখানে কেন আসছো?
‘তুমি এখানে আছো তাই!’
‘তোমার এখানে আসা মোটেও উচিত হয়নি। আর আমি এখানে আছি বলে তো আসা একদমই উচিত হয়নি।’
‘কেনো?’
‘তোমার সাথে আমার জোড়া নয় যার জন্য আমি ভিজলে এসে তোমাকেও ভিজতে হবে।’
”বর্ষা রাগী গলায় বল, তাহলে কার সাথে জোড়া?’
‘অভ্র অভিমানী স্বরে বলল, জানি না?’
‘আচ্ছা তাহলে আমি যাই গিয়ে আব্বুকে বলি আমার জন্য জোড়া খুঁজে নিয়ে আসতে!’
বলে বর্ষা অভ্রকে ছেড়ে দেয় এবং সে পেছনে ঘুরে চলে যেতে লাগে। অভ্র চটজলদি বর্ষার হাত ধরে নেয়। একহাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে আর নিজের ভেজা শরীরের সাথে আঁকড়ে ধরে। বর্ষা ছুটবার জন্য নাড়াচাড়া করছে। অভ্র দুইহাতে আরও জোরে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,‘ আমি ছাড়া অন্য কারো চিন্তা ভাবনা মাথায় আনলে একদম গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেবো।’
বর্ষা কর্কশকন্ঠে বলল,‘ তাহলে বললে কেন তোমার সাথে আমার জোড়া নয়?’
অভ্র সরু দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে কিয়ৎক্ষণ চাহিয়া রইল পরক্ষণে বর্ষাকে বিস্মিত করে দিয়ে তার অষ্টদ্বয়ের সাথে নিজের অষ্ট জোড়া মিলিয়ে দেয়। বর্ষা ভাবতেই পারেনি অভ্র এমন কিছু করবে। তার চক্ষু জোড়া চড়কগাছ। দুইমিনিট পর ছেড়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,‘মুখে যদিও বলি দূরে যাও কিন্তু অন্তরে শুধু তোমার নামই কাঁথা। হৃদয় লিখে দিয়েছি তোমার নামে! আমার ময়ূরাক্ষী!’
চলবে?