বর্ষায়_ভেজা_অভ্র #পর্ব_০৭

0
1642

#বর্ষায়_ভেজা_অভ্র
#পর্ব_০৭
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
__________________
খোলা আকাশের নিচে একাকী বসে প্রাণ উজাড় করে দিয়ে অভ্র বলল,- “তোমারো বিরহে আমি রহিবো বিলীন।”
কেউ তার পিঠের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে মেয়েলিকণ্ঠে বলল,
-ও আচ্ছা! তো কার বিরহে আপনি রহিবেন বিলীন?
অভ্র তার বসার স্থান থেকে অন্য দিকে ঘুরে বসল। মেয়েটার শরীরের সমস্ত ভার সে অভ্রর উপর দিয়ে বসেছিল বৈকি অভ্র সরে যেতে সেও পেছন দিকে পরে যেতে নেয়। অভ্র দুই হাত দিয়ে মেয়েটাকে ধরে নেশালো কণ্ঠে বলল,
– বললাম তো তোমারো।
– হুম হইছে বহুত বলেছেন। আমি কি আকাশে উড়ে যাচ্ছি নাকি?
– যেতেও তো পারো।
– অনেক ফাউ কথা বলছেন এখন চলুন বাড়ি ফিরতে হবে।
– জি ম্যাডাম চলুন।
ঝরঝরে রোদ্দুরে ঘামে ভিজে চিপচিপে হয়ে বাড়ি ফিরল দু’জনে। তৎপর বাড়িতে ঢুকতেই দুজনে খেয়াল করল ওদের দাদাজান একা একা বসে আছে। মুখে তার গাম্ভীর্যের আভাস। বর্ষা আর অভ্র দু’জনে গিয়ে তার দাদার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, ‘ দাদাজান! আপনাকে এত টেনসড দেখাচ্ছে কেন?’
নূর ইসলাম নাতি নাতনীর দিকে তাকিয়ে হতাশাজনক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,‘ আর বলিস না। পুলিশ ইন্সপেক্টর সাদিকুল সাদি কল দিয়েছিলেন। তিনি বললেন আহিল তার অপরাধ কবুল করেছে।’
অভ্র শানিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,‘ আহিল ভাবির সাথে কি অন্যয় করছে শিকার করছে?’

নূর ইসলাম কিংকর্তব্যবিমুঢ় নিরব থেকে বললেন,‘ আহিল পুলিশের কাছে বলেছে, গত পরশু দিন রাতে ও ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে, ওর আসার কথা ছিল দুইদিন পর। কাজ তারাতাড়ি শেষ হওয়ায় দুইদিন আগেই চলে আসে। বউকে সারপ্রাইজ দিবে ভেবে আগে থেকে আসার খবর জানায় না। বাড়ির এক্সট্রা চাবি ছিল বৈকি সেটা দিয়েই বাড়িতে ঢোকে। তখন প্রায় ভোর চারটা বাজে। বাড়িতে ঢুকে রুমের দিকে যেতে যায়। রুমের লাইট অন করা, দেখে ভ্রু কুঁচকায় আহিল। দরজা ঢেলে ভেতরে যেতে দেখে, বিছানার মধ্যখানে একটা পুরুষ অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে। পুরুষটার দুইপাশে দু’জন মেয়ে শুধু টাওয়াল পেঁচিয়ে পুরুষটার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে আহিল নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ও তখন কাঁধ থেকে ব্যাগ নিচে ফেলে দেয়। মেয়ে দু’টোর মধ্যে একজন হচ্ছে, আহিলের স্ত্রী যাকে সে অনেক বিশ্বাস ও ভালোবাসতো। আরেকজন হচ্ছে আহিলের আদরের ছোট্ট বোন।
আহিল তেড়ে গিয়ে ছেলেটা সহ ওদের দু’জনকে বিছানা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামায়৷ আহিলকে দেখে রীতিমতো চমকে উঠে তার স্ত্রী ও বোন। আহিল ছেলেটাকে মারতে যাবে তখন ওর স্ত্রী সামনে চলে আসে ছেলেটাকে বাঁচাতে। আর আহিলের বোন আহানা ছেলেটাকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করে। মাত্রাতিরিক্ত রাগের কারণে সে ভোরেই আহিল নিজ হাতে ওর বউ ও বোনকে খুন করার চেষ্টা করে। এতটুকুই বলেছে অফিসার।’

বিস্ময় নিয়ে বর্ষা অভ্র একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। দোষ তাহলে নয়না ভাবীর ছিল। তবে সে নিজেও তো আহিলকে কত ভালোবাসতো। অথচ তারই অনুপস্থিতিতে পর পুরুষে আসক্ত ছিল নয়না। ভাবতেই ঘৃনায় শরীর শিরশিরিয়ে উঠছে বর্ষার।
_____________
এক সপ্তাহ পর, বাসস্ট্যান্ডের সামনে একা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো বাস থামছে না। অটো আর রিক্সা তো খালিই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটা রিক্সায় এক না এক জন বসে আছে। রাগের চটে দুইহাত উপরে তুলে মুঠ করে রেখেছে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। মনে হচ্ছে রাগের চটে নাক দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এমন সময় বর্ষার সামনে এসে থামলো একটা বাইক। ভ্রু কুঁচকে তাকায় বর্ষা। সন্দিহান কণ্ঠে বাইকের ছেলেটা বলল,
‘আমার মনে হচ্ছে আপনার কোথাও যাওয়ার জন্যে অনেক তাড়া। কোথায় যাবেন বলুন আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।’

বর্ষা ক্ষীণকণ্ঠে বলল,‘ আমার গাড়ির টায়ার পাম্চার হয়ে গেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কলেজে পৌঁছাতে হবে।’ বলেই চুপ করে রইল।
ছেলেটা বলল,‘আচ্ছা পেছনে উঠে বসুন।’
বর্ষা বাইকের পেছনে বসতে ছেলেটা বাইক স্টার্ট দেয়। কিয়ৎক্ষণ পর ছেলেটা বলল,‘আপনাকে দেখে অনেক সাদাসিধে ও ভদ্র মেয়ে মনে হচ্ছে। দয়া করে ভয় পাবেন না। আমি আপনাকে ফেলে দিবো না। যদিও আমি এই প্রথমবার বাইক চালাচ্ছি।’

ছেলেটার কথা কর্নপাত হতে বর্ষা চেচিয়ে বলল,‘ এই এই প্রথম বার বাইক চালাচ্ছি মানে কি?’
‘ ইয়ে বাইক চালানো শিখছি। ’
‘ব্রেক কষেন। এখুনি ব্রেক কষেন। আপনার বাইকে উঠে মরবো নাকি? আপনার বাইক আপনি একাই চালান। আমাকে নামিয়ে দিন।’

কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে বলায় লোকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। হঠাৎ ব্রেক কষে বর্ষার উদ্দেশ্য বলল,‘ নামুন তো আমার বাইক থেকে আপনি। আমি কোথায় ভালো বুঝে আপনার হেল্প করতে চাইলাম। আর আপনি উল্টো চেঁচিয়ে আমার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছেন?’
বর্ষা বাইক থেকে তারাহুরো করে নামল। ছেলেটার সামনে আঙুল তুলে বলল,‘ আপনার সাথে এটাই করা উচিত ফাজিল লোক। আর একটু হলেই উপরে উঠে যেতাম এই বয়সে। এখনও তো আমার বিয়েই হয় নাই।’
ছেলেটা দাঁত বের করে কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল,‘ আমারও হয়নি!’
বর্ষা রাগী গলায় বলল,‘ তাতে আমার কি? যান এখান থেকে?’
হেলমেট পরা থাকায় ছেলেটাকে চিনতে পারছে না বর্ষা। ছেলেটা পিছু ডেকে চেঁচিয়ে বলল,‘ চাইলে সঙ্গে নিতে পারেন ম্যাডাম।’
বর্ষা একহাত ঝাঁকিয়ে বলল,‘ মার খাইছেন বজ্জাত ব্যাটা।’

বর্ষা ছেলেটার চোখের আড়ালে যেতেই। ছেলেটা শব্দ করে হেসে উঠল। পেছন থেকে কয়েকটা ছেলে এসে বাইকে বসা ছেলেটার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল,‘ পাখি খাঁচায় বসেছে দোস্ত!’
ছেলেটা ধমকের স্বরে বলল,‘ ঠিক করে কথা বল হবু ভাবী তোদের।’
পাশ থেকে আরেকটি ছেলে বলল,‘ তোর মতো রোমিও আমি কমই দেখেছি। দুই বছর পাড় করে দিলি এক তরফা ভালোবেসে। তা কবে সামনা সামনি প্রপোজ করবি? ভাবছিস কিছু?’
ছেলেটা হতাশাজনক কণ্ঠে বলল,‘ আপাতত ভাবিনি তবে ভাববো। এখন চল যাই।’
___________________
‘কি হয়েছে মুখটা ওমন বাংলার পাঁচের মতো করে রাখছিস কেন?’

বর্ষার পাশে বসতে বসতে বলল আহিতা। বর্ষা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলল,‘ আর বলিস না আজকে কলেজে আসার সময় ফাউল একটা ঘটনা ঘটছে।’
নিশি প্রশ্ন ছুঁড়ল,‘ কি ঘটনা?’
বর্ষা ওদেরকে সবটা বলল কি হয়েছিল। সব শোনার পর ওরা দুইজনে হাসতে হাসতে একে অপরের উপর পরে যাচ্ছে।
তা দেখে বর্ষা রাগে কটমট করছে। শাহাদাত আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্ছে শুনতে পায়।
চোখের পলকে তুমুল বৃষ্টি পড়তে লাগল। চারপাশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিকমতো সবকিছুই ধোয়াসা ও আবছা আবছা নজরে আসছে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বর্ষা রাণী বলল,‘ এই বৃষ্টি তুই আসার আর সময় পেলি না? আমার যে বাড়ি ফেরার বড্ড তাড়া।’

আহিতা শানিতকন্ঠে বলল,‘ তাড়া কিসের?’
‘ তোদের সব কিছু বলতে হবে নাকি?’ বলেই ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে ভেংচি কাটল বর্ষা।
নিশি দুই তলা থেকে নিচে কলেজের গেইটের সামনে ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে। দুই এক মিনিট পর ধীর কন্ঠে বলল,‘ বর্ষা আমার মনে হচ্ছে ওইইই ওটা তোর অভ্র ভাইয়া। দেখ কলেজ গেইটের সামনে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আষাঢ় মাসের বর্ষায় কেমনে ভিজছে।’

উক্ত কথায় আহিতা ও বর্ষা দু’জনে একসাথে পেছনে ঘুরে তাকালো। চোখজোড়া ছোট্ট ছোট্ট করে তাকায় বর্ষা। তৎপর ক্ষীণ কন্ঠে বলল,‘ ও ওমন ভাবে ভিজতাছে কেন?’
আহিতা ভেঙ্গ করে বলল,‘ আমরা কি জানি?’
‘আমার একটা ছাতা লাগবে। একটা ছাতা জোগাড় করে দে তোরা। ওইভাবে ভিজলে যে ওর ঠান্ডা লাগবে।’
নিশি বলল,‘ আচ্ছা তুই ওয়েট কর। আমি দেখছি ক্লাসের মধ্যে কেউ ছাতা এনেছে কি না।’

বলে নিশি চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পর একটা ছাতে হাতে দৌঁড়ে আসে। নিশির হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে বর্ষা এলোপাথাড়ি পা ফেলে দৌঁড়াতে লাগল। স্তব্ধা হয়ে যায় নিশি। অস্ফুটস্বরে বলল,‘ এত কষ্ট করে ম্যানেজ করে ছাতাটা আনলাম। অসভ্য ছেড়ি থ্যাঙ্কস পর্যন্ত দিলো না।’
আহিতা নিশির কাঁধের উপর একহাত রেখে মুচকি হেসে বলল,‘ ওর এখন সময় কোথায় তোকে থ্যাঙ্কস বলার। দেখছিস না ওর সাইয়া এখন বর্ষায় ভেজা অভ্র হয়ে গেছে।’
বলে শব্দ করে হাসতে লাগল আহিতা৷ নিশি বিরক্তিতে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী গলায় বলল,‘ অভ্র ভাইয়ার সামনে ও জেনো আমাদের চোখেই দেখে না।’

বলেই নিশি হাঁটতে শুরু করল। পেছন থেকে আহিতা চেঁচিয়ে উঠল,‘ নিশু আমার জন্য দাঁড়া। বৃষ্টি কমলে দু’জনে একসাথে যাবোনি।’

ছাতা হাতে বর্ষা অভ্রর সামনে এসে দাঁড়ালো। অভ্র তীক্ষ্ণ চোখে বর্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে বাইকে উঠে বসে বাইক স্টার্ট দেয়। অভ্রর চোখ জোড়া রাগে রক্তবীজ হয়ে আছে। হঠাৎ তার এত রাগের উৎস কিসের জানা নেই বর্ষার। অপলকভাবে তাকিয়ে বলল,‘ এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছো কেন? ঠান্ডা লাগবে জ্বর আসবে!’
গুরুগম্ভীর কণ্ঠে অভ্র বলল,‘ বেশি কথা না বলে তারাতাড়ি ওঠ!’
__________________
বাইক গ্যারেজে সাইড করে রেখে তিরতির করে অভ্র বর্ষার সামনে থেকে চলে গেলো। বর্ষা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি এমন হয়েছে যার জন্য তার সাথে এমন ব্যবহার করছে?
বাড়িতে ঢুকতেই কয়েকজন জিজ্ঞেস করে বসল বৃষ্টি তে ভিজেছে কেনো?
তাদেরকে কোনো কিছু না বলেই হনহনিয়ে অভ্র তার রুমের দিকে চলে যায়। এমন একটা ভাব নেয় জেনো সে কানেই শোনেনি কে কি বলেছে।
বর্ষা কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল। অভ্রর মা বর্ষার উদ্দেশ্য বলল,‘ তোদের দু’জনের মধ্যে কি হয়েছে? দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন? তোদের মধ্যে কি আবার মনমালিন্য হয়েছে নাকি?’

বর্ষা কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে বর্ষার ছোট ফুপি ধারালো কণ্ঠে বলল,‘ এক মাস পর বিয়া আর দুইজনে এহনই বাইরের থেইকা ঝগড়া কইরা ঘরে আহে কি যে হইবো ওগো ভবিষ্যতে আল্লাহ মাবুদ জানে।’
বর্ষা রাগী গলায় বলল,‘ ফুপু তুমি চুপ করবা? না জেনে এত বেস্তি কথা বলো কেন?’
পর পর বর্ষা তার বড় আম্মুর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুণ কণ্ঠে বলল,‘ বড় আম্মু আমি নিজেও জানি না ওর কি হইছে। হঠাৎ কেমন জেনো অদ্ভুত ব্যবহার করছে।’
‘আচ্ছা যা রুমে গিয়ে জামা ছেড়ে নে৷ ভেজা জামায় থাকলে আবার সর্দি-জ্বর বাঁধবে।’
রুমে এসে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে জামা কাপড় পাল্টাতে ওয়াশরুমে চলে যায় বর্ষা।

ঘন্টা খানেক পর!

কি হয়েছে অভ্রর আজ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেনো জানার জন্য ওর রুমে আসে বর্ষা। তাকে দেখা মাত্রই অভ্র ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বর্ষা দৌঁড়ে অভ্রর সামনে যায়। তার একহাত ধরে বলল,‘ কি হয়েছে? এমন ব্যবহার কেন করছো আমার সাথে? কি করেছি আমি?’

অভ্র বর্ষার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। রাগে কটমট করতে করতে বলল,‘ সাহস হয় কি করে তোর। আমি ব্যতিত অন্য ছেলের বাইকে উঠার?’

বর্ষার চক্ষু জোড়া চড়কগাছ। অভ্র কিভাবে জানলো কে বলেছে তাকে? নাকি তখন সে আশেপাশে কোথাও ছিল? ভেবে পাচ্ছে না বর্ষা।
অভ্র বর্ষার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,‘ উত্তর দে।’

ধমক শুনে কেঁপে উঠল বর্ষা। নির্মূলকণ্ঠে সকালের ঘটনা উপলব্ধি করল। অভ্র কর্কশকন্ঠে বলল,‘ আর যদি কখনো দেখি কোনো ছেলের বাইকে উঠতে বা কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলতে তাহলে দেখিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। সেদিনই হবে তোর বাড়ি থেকে বের হওয়ার শেষ দিন। মাথায় রাখিস।’

মাথা নিচু করা কথাগুলো হজম করল বর্ষা। ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,‘ আর কখনো হবে না।’

বলে বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। অভ্র বর্ষার একহাত ধরে সরু কন্ঠে বলে,‘ আমি যেতে বলেছি তোকে?’

বর্ষা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রয়। অভ্র বর্ষার হাত ধরে আবারও টান মারে। আগের ন্যায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। বর্ষা অশ্রুসিক্ত নয়নে অভ্রর চোখে চোখ রাখল। অভ্র বর্ষার কপাল ছুঁইয়ে আঙুলি করতে করতে আঙুল থুতনিতে নামিয়ে আনে। বর্ষার একহাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে অভ্র মির্জা নেশালো কন্ঠে বলল,‘ শোনো ময়ূরাক্ষী! আমি ব্যতিত তুমি অন্য কারো নও। তোমারো ওই মায়াবী অখল নয়নে আমি শুধু আমার প্রতিবিম্ব দেখতে চাই। তুমি শুধু আমার। আমি সহ্য করতে পারি না তোমার আশেপাশে কোনো ছেলেকে।’

বর্ষা অভ্রর হাত সরিয়ে ওর কাছ থেকে ছুটার চেষ্টা করছে। তাতে অবশ্য কোনো লাভ হচ্ছে না। অভ্র বর্ষাকে আরও শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল।
বর্ষা অস্ফুটস্বরে বলল,‘ আহহ। আমার লাগছে।’
‘আমারও অনেক লেগেছে ঠিক বুকের বা পাশটায়। যখন দেখেছি তুমি অন্য একটা ছেলের বাইকের পেছনে বসে আছো।’
রাগান্বিত কণ্ঠে কথাটি বলল অভ্র। এবার বর্ষাও কিছুটা ক্ষেপে গেলো। নিজের কিছু শক্তি প্রয়োগ করল সে অভ্রর হাত থেকে ছুটার জন্য কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হল।
অভ্র বর্ষাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসল। একহাতে বর্ষার চুল মুঠি বন্ধ করে ধরল। আরেক হাত বর্ষার কোমড়ের উপরে রেখে চেপে ধরে তাকে নিজের দিকে এগিয়ে আনলো। বর্ষা চোখ জোড়া বড়সড় করে তাকাতেই অভ্র তার ঠোঁট জোড়ার সাথে বর্ষার ঠোঁট জোড়ার মিলন করিয়ে দিলো। বর্ষা খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। অভ্র বর্ষার কোমড় ধরে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসল। দু’জনেই দু’জনকে দু’জনার আষ্ঠেপৃষ্ঠের সাথে জড়িয়ে নেয়।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here