বর্ষা দুপুর,পর্ব-৯,১০

0
1144

বর্ষা দুপুর,পর্ব-৯,১০
হালিমা রহমান
পর্ব-৯

সকাল থেকে একটু একটু ঠান্ডা পড়েছে।সূর্যের আলোর ঝাঝালো তাপ নেই।নিস্তেজ তাপে মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন নীরার বাবা, কামরুল হোসেন।এমনিতেই ঠান্ডা তার উপর নদীর পাড়।বেশ ঠান্ডাই লাগছে তার।ভয়ংকর বাতাসে হাঁড়ে কাপন ধরার জোগাড়। এ বাতাস যেন শীতের আগমনী বার্তা।
কামরুল সাহেবের নাজুক স্বাস্থ্য। বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম কোনোটাই তার সহ্য হয় না।চার ভাইয়ের মধ্যে মেজ হলেও সবার আগে বুড়িয়ে গেছেন তিনি।প্রতিদিন নদীর পাড়ে আসতেও ভালো লাগে না।ইচ্ছে করে সারাদিন কাঁথা মুরি দিয়ে অলস সময় কাটাতে।কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়।তার পিছুটান অনেক।দুটো মেয়ে, একটা স্ত্রী। কাজ না করলে তার চলবে কেন?তাই হাজার অসুস্থতা, হাজার শখ – আহ্লাদ মাটি দিয়ে প্রতিদিন চলে আসেন নদীর পাড়ে।একটু আত্মত্যাগে যদি স্ত্রী-সন্তান ভালো থাকে, তবে তাই হোক।
কামরুল সাহেব একটু অমনোযোগী হতেই একজন জেলে ফস করে একটা ঢাউস সাইজের রুই মাছ সরিয়ে ফেলল।এখানে যেই দামে বেচতে হবে বাজারে তারচেয়ে তিনগুন বেশি দামে বেচা যাবে।তবে দৃশ্যটি চোখ এড়ালো না কামরুল সাহেবের।এতো বছরের অভিজ্ঞতায় যদি এতুটুকু চালাকি না ধরতে পারেন, তবে তিনি কীসের মাছ ব্যাপারী?কামরুল সাহেব আসামি জেলেটাকে ডেকে বললেনঃ” মাছটা দিয়া দে।”
মুখের রঙ উবে গেল জেলের।তবুও অস্বস্তি চেপে রেখে বললঃ” সব মাছই তো দিলাম। আবার কীয়ের মাছ চান?”
—” যেই রুই মাছটা বদির পাতিলে লুকাইছোছ ওইটা।”
—” কসম কোনো মাছ লুকাই নাই।”
—” আচ্ছা, ঠিকাছে দিস না।ভাবছিলাম তোরে ওই মাছের লেগা দুইহাজার টাকা বাড়ায়া দিমু।তয় তুই যখন চাস না….
লোভে চকচক করে উঠলো জেলের চোখ।সে তড়িঘড়ি করে বললঃ” এবারের মতো মাফ কইরা দেন ভাই।ভবিষ্যতে আর এমন করুম না।এহনি মাছ আইনা দিতাছি।”
মনে মনে হাসলেন কামরুল সাহেব।ব্যাটার লোভ কত! এই মাছ বাজারে নিলে অনায়াসে চার হাজার টাকা বিক্রি হবে।দুহাজারের লোভেই তাকে দিয়ে দিল।গাধা কোথাকার।

বোধহয় সকাল এগারোটা বাজে। কামরুল সাহেব ও তার বড় ভাই ইদ্রিস আলী আড়তে বসে আছেন।তাদের দুজনের কাজ আপাতত শেষ।তবুও বাড়ি না যেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন চেয়ারম্যান কাশেম খান।কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী অবাক হলেন খুব।তারা সাধারনত উঁচুস্তর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে দূরেই থাকেন।অবাক হলেও তা প্রকাশ করলেন না ইদ্রিস আলী। এগিয়ে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন।
—” আসসালামু আলাইকুম ভাই।কি খবর?”
কাশেম খান এগিয়ে যেয়ে হাত মেলালেন।মুচকি হেসে বললেন,
—” আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনারা,কেমন আছেন?”
—” আমরাও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।হঠাৎ এইদিকে যে? মাছ কিনতে আসছেন নাকি?”
—” না ভাই।আপনাদের কাছে অন্য একটা দরকারে এসেছি।একটু বসে কথা বলার সময় হবে?”
ইদ্রিস আলী অবাক হলেও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে বললেন বাহিরে তিনটে চেয়ার পেতে দিতে।ভিতরে অনেক আঁশটে গন্ধ।ইদ্রিস আলী ও কামরুল সাহেবের সহ্য হলেও কাশেম খানের সহ্য হবে না। তাই এই ব্যবস্থা।
কাশেম খান, কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী বসার পর, কাজের ছেলেটা তিনকাপ চা এনে দিল।কাশেম খান চায়ে লম্বা এক চুমুক দিয়ে কথা শুরু করলেন।
—” আমি আসলে আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের বাড়ির বড় মেয়ে নীরার বিষয়ে কথা বলতে।ওতো কলেজে পড়ে শুনলাম।তার মানে আঠারো বছর হয়েছে।মেয়ের বিয়ে-সাদির চিন্তা – ভাবনা করছেন নাকি?”
ভয়াবহ অবাক হলেন দুই সহোদর। আজ বোধহয় তাদের অবাক হওয়ার দিন।কামরুল সাহেব অবাক কন্ঠেই বললেনঃ” হ, নীরার আঠারো বছর হইছে কিন্তু আমরা এহন তার বিয়া দিতে চাইতাছি না।তার মায়ের ইচ্ছা মাইয়া অনেক পড়ব,তারপর বিয়া দিব।আমারো ওই একই ইচ্ছা।কেন? কিছু হইছে?”
—” না,না কিছু হয়নি।আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলতে চাই।”
ইদ্রিস আলী শশব্যস্ত হয়ে বললেনঃ”অনুমতি নেয়ার কি আছে ভাই? আপনে কন কী কইবেন।”
—” আমি নীরা মাকে আমার মেহরাবের বউ হিসেবে নিতে চাই।”
সহসা কোনো কথা বলতে পারলেন না কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী। এ তাদের কল্পনাতীত।এটা এমন একটা প্রস্তাব, যা মেনে নিতে কষ্ট হবে আবার সরাসরি প্রত্যাখান করাও সম্ভব না।ইদ্রিস আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেনঃ” আপনে চিন্তা-ভাবনা কইরা কইতাছেন? না মানে আমি বুঝাইতে চাইতাছি,আমগো ও আপনাগো মাঝে অনেক তফাৎ। তারউপর মেহরাব বাবা অনেক শিক্ষিত,চাকরি ভালো, অনেক বছর ঢাকা ছিল।আমগো নীরার এইসব কিছুই নাই।হয়তো একটু সুন্দর, এই আরকি।তাই বলতাছিলাম।”

কাশেম খান আশ্বাসের ভঙ্গিতে হাসলেন।
—” আপনি চিন্তা করবেন না।আমি সবকিছু চিন্তা করেই বলেছি।”
কামরুল সাহেব এবার মুখ খুললেন।
—” আপনে মেহরাব বাবার লগে কথা কন।এহনকার দিনে পোলাপানের মতামত না থাকলে সংসারে সুখ হয় না।আগে আমগো সময়ে তো বাপ – মা যেই মাইয়ার কথা কইছে তারেই বিয়া করতে হইছে।এখন আবার দিন-দুনিয়ার ভিন্ন স্বাদ।মেহরাব বাবা তো অনেক বছর ঢাকা ছিল সেখানে তার পছন্দ থাকতেই পারে।আপনে তার সাথে যদি আগে আলোচনা করতেন তাইলে ভালো হইতো আরকি।”
এক্ষেত্রে একটু মিথ্যা বলতে হলো কাশেম খানকে।কারণ,তিনি এখানে এসেছেন তা মেহরাব কেন কমলা বানুও জানে না।কাউকে না জানিয়ে একটা অপ্রিয় কাজ করতে এসেছেন তিনি।তবুও মাথা নেড়ে বললেনঃ” আমি সবার সাথে আলোচনা করেই এসেছি।মেহরাব রাজি না হলে এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ের কথা ভাবতাম না আমরা।আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।এখন আপনাদের ইচ্ছা।মেয়ে আপনাদের, চিন্তা-ভাবনাও আপনাদের।সময় নিন। সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাবেন।আমি অপেক্ষা করব।”
কাশেম খান উঠে গেলে চিন্তায় পরে গেলেন দুই ভাই।কী করা উচিৎ এখন?

***

দুপুর বেলা দেবর,ভাসুর, স্বামী সবাইকে একসাথে বাড়িতে ফিরতে দেখে অবাক হলেন জয়নব বেগম।সাধারণত, তারা একসাথে বাড়িতে ফিরে না।তাছাড়া,কামরুল সাহেবের চেহারাটা কেমন যেন শুকনো শুকনো ঠেকছে।কামরুল সাহেব ঘরে ঢুকে গায়ের ফতুয়া পাল্টানোর সময় জয়নব বেগম জিজ্ঞেস করেই ফেললেনঃ” কী হইছে আপনের? কোনো সমস্যা? ”
—” না। দুপুরের খাবার একটু তাড়াতাড়ি দিও তো।আর তুমিও হাতের কাজ শেষ কইরা রাইখো।জরুরি কথা আছে।”
কি কথা তা আর জিজ্ঞেস করলেন না জয়নব বেগম।সময় হলেই বরং জানা যাবে।
নীরার বিয়ের কথা উঠলো খাওয়ার সময়।নীরা,কুসুম,ইরা,তোহা ছাড়া এখানে বাড়ির সবাই উপস্থিত।ইদ্রিস আলীই প্রথমে কথা পারলেন।
—” জয়নব, আমগো নীরার লেগা একটা সম্বন্ধ আইছে।”
—” মাইয়া বড় হইছে,এইগুলি আইবই।পোলা কে?”
—” চেয়ারম্যান বাড়ির পোলা মেহরাব।”
মেহরাবের নাম শুনে অবাক হলেন সবাই। নীরার সেজ কাকা,জাভেদ ভাত চিবোতে চিবোতে বললেনঃ” মাশাল্লাহ, পোলা তো ভালো।আমগো নীরারে দেখছেনি হেয়?”
পাশ থেকে কথা বলল তওসিফ।
—” ওই ছেলে কয়েকদিন আগে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়িতে উঁকি দিত।আমি নিজের চোখে দেখেছি।এরকম ছেলে ভালো হবে না।নিষেধ করে দিও মেজ কাকা।”
তওসিফকে ভয়ানক এক ধমক দিলেন জাভেদ সাহেব।আঙুল উঁচিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললেনঃ” মাইনষের পোলারে খারাপ কওয়ার আগে নিজের দিকে তাকা হারামজাদা।ওর যেই যোগ্যতা তা আগে তূই পারলে অর্জন কইরা দেখা।তারপর বড় বড় কথা কইছ।”
বাবার কথার দিকে মনোযোগ দিলো না তওসিফ।সবাই বিশ্বাস করলেও তার বাবা এখনো তাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি।তাই কিছু না বলে চুপচাপ ভাত খেতে শুরু করলো।জয়নব বেগম দেখলেন মূল কথা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সবাই।তাই ইদ্রিস আলীর মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেনঃ” ভাইজান আপনেরা কথা-টথা দিছেন নাকি? না দিলে নিষেধ কইরা দেন।এতো তাড়াতাড়ি মাইয়া বিয়া দেয়ার ইচ্ছা নাই আমার।মাইয়ার ব্রেইন ভালো। পড়তাছে, পড়ুক।তাছাড়া, চেয়ারম্যান বাড়িতে গেলে মাইয়া মানায়া নিতে পারব? সম্বন্ধ করতে হয় সমানে সমানে।আমরা তাগো সমান না।এহন আপনেরা কী কন?”
শাহানা বেগম দূরে বসে ছিলেন।তিনি মাথার আঁচল সামনে টেনে দিয়ে বললেনঃ” বুইঝা শুইনা মত দিও ভাবি।মাইয়াগো চাহিদা থাকতে দিয়া দিতে হয়।তারা যহন এতো আগ্রহ করতাছে,তহন এতো ভাইব না।পোলা ভালো,পরিবার ভালো, তারাই কথা উঠাইছে।তাই, আমার মনে হয় অমত না করলেই ভালো হয়।মাইয়া তো বিয়া দিতেই হইব।আজ হোক আর কাল।”
ইদ্রিস আলীও শাহানা বেগমের কথায় তাল মিলিয়ে বললেনঃ”মেজ বউ, দেখ নীরার বিয়া তো দিতেই হইব।এর চেয়ে ভালো সম্বন্ধ আর পাইবা না।তাছাড়া, তারা খুব আগ্রহ করতাছে।স্কুল – কলেজ বন্ধ।পড়ালেখাও তো হইতাছে না।কামরুলের শরীরটাও খারাপ।একটা মাইয়ার যদি গতি করতে পারে তাও ভালো।এখন ভাইবা দেখ,কী করবা।”
জয়নব বেগম কিছু বললেন না।কেবল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন স্বামীর চিন্তিত মুখের দিকে।

***

চেয়ারম্যান বাড়িতে সবাই খেতে বসেছে।সবাই বলতে কেবল মেহরাব,কমলা বানু ও কাশেম খান।কমলা বানু বেছে বেছে মুরগির মাংসগুলো মেহরাবের পাতে দিচ্ছেন।ছেলেটা যে কেন শুকিয়ে যাচ্ছে দিন দিন! কাশেম খান এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে মেহরাবকে উউদ্দেশ্য করে বললেনঃ”তোমার জন্য একটা সু-খবর আছে মেহরাব।”
—” কী বাবা?”
—” আজকে মাছের আড়তে গিয়েছিলাম।ইদ্রিস আলী, কামরুল হোসেনরে বোধহয় তুমি চিনো।চিনো না?”
—” জ্বি চিনি।”
—” ওনাদের সাথে কথা বললাম আজকে।তোমার বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করে আসলাম,ওই বাড়ির বড় মেয়ে নীরার সাথে।”
কমলা বানু প্রথমে অবাক হলেও পরে খুব খুশি হলেন।বউ হিসেবে নীরাকে তার খুব পছন্দ।তিনি সন্তুষ্টির হাসি হেসে বললেনঃ” আলহামদুলিল্লাহ।মাইয়া হিসাবে নীরা খুবই ভালো।কোনো খারাপ রেকর্ড নাই।”
—” এই জন্যই কথা বলে আসলাম আজ।তারা বলেছে চিন্তা-ভাবনা করে জানাবে।
কাশেম খানের কোনো অভিব্যক্তি নেই।তিনি নির্বিকার।এখানে বিয়ে না হলেই তিনি বরং খুশি হতেন।তবে কমলা বানু খুশি হলেন খুব।এরকম একটা ফুটফুটে মেয়ে তার ঘরে সংসার করবে ভাবতেও ভালো লাগছে।
আর মেহরাব? সে কেবল অবাক চোখে বাবা – মায়ের দিকে চেয়ে রইলো।ভাত খাওয়া বন্ধ করে দুবার অস্ফুটস্বরে নীরার নাম জপ করলো।।

( চলবে)

# বর্ষা দুপুর ( পর্ব-১০)
# হালিমা রহমান

আজ নীরার বিয়ে।এক সপ্তাহ আগে ঠিক হয়েছে বিয়ে।জয়নব বেগম প্রথমে খুব নাইনুকুড় করেছিলেন।তিনি কিছুতেই এখন মেয়ে বিয়ে দেবেন না।মেয়ে তার খুব ছোট।তবে তিনি চিল্লাপাল্লা করলেও চুপ ছিলেন কামরুল হোসেন।তার চুপ থাকা ছিল সন্মতির লক্ষন।কামরুল সাহেব দিন দিন বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।শরীরটাও ইদানিং ভালো যায় না।তিনি সবসময়ই মেয়ে দুটো নিয়ে চিন্তায় থাকেন।তার কিছু হয়ে গেলে স্ত্রী -সন্তানের কী হবে?একটা বড় ছেলে নেই যে তার অবর্তমানে ঘর-বাহির সামলে রাখবে।নীরাটাও আহামরি বড় হয়নি।মেহরাবের বাড়ি থেকে প্রস্তাব আসার পর থেকেই তিনি এসবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে ভেবেছেন।তিনি ছাড়া তার পরিবারের অভিভাবক কেউ নেই।তার কিছু হয়ে গেলে ভাইয়েরা ফেলে দেবে না।তবুও, বাবার মন! বাবা যা করতে পারে, অন্যরা হাজার করলেও তার সমান হয়না।তাছাড়া,মেহরাব ভালো ছেলে,নম্র- ভদ্র।এরকম ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো মানেই হয় না।মেয়েতো আজ হোক, কাল হোক বিয়ে দিতেই হবে।এসব কিছু চুলচিড়ে বিশ্লেষণ করে কামরুল সাহেব অবশেষে বিয়েতে মত দিয়েই দিলেন।তার এ সিদ্ধান্তে তিনজন ছাড়া বাড়ির সবাই খুব খুশি। এই তিনজন হলো — জয়নব বেগম,তওসিফ ও কুসুম।কুসম মেহরাবকে দু-চোখে দেখতে পারে না।এই মেহরাবের জন্য সে ও নীরা আগের মতো পুকুর পাড়ে যেতে পারে না,কবরস্থানে যেতে পারে না।নিজের বাডিতে ওই ছেলের দৌরাত্ম। কী ডাকাত ছেলে! ভাবা যায়! তাছাড়া, মেহরাবকে এতোদিন যেখানে দেখেছে সেখানেই কুসুম তাকে গালভর্তি হাসি নিয়ে মামা ডেকেছে।কুসুমের প্রিয় বান্ধবী নূরজাহান,মেহরাবের ভাগ্নী।সেই সুবাদে,কুসুমও তাকে মামা ডাকতো।অথচ, আজকের পর থেকে একই মানুষকে ভাইয়া বলে ডাকতে হবে! ছিঃ! কী বিশ্রি ব্যাপার।মেহরাবকে মেনে না নেওয়ার আরেকটা কারণ অবশ্য আছে।তা হলো রেদোয়ান। কুসুমের অগাধ বিশ্বাস,রেদোয়ান ফিরে আসবে।তারপর ধুমধাম করে নীরাকে বিয়ে করবে।রেদোয়ানকে এখনো অবিশ্বাস করতে পারে না কুসুম।নীরার সাথে অন্যকাউকে ভাবতেও পারে না।কুসুমের মনে হয়,মেহরাব রেদোয়ানের অধিকার হরণ করছে।নীরার পাশের জায়গা শুধু এবং শুধুমাত্র রেদোয়ানের।

***

ভোর সাড়ে পাঁচটা।চেয়ারম্যান বাড়িতে শুরু হয়ে গেছে মানুষের আনাগোনা।এই বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।কাশেম খান সেই কোন সকালে উঠে গেছেন।কিছু মেহমান রয়েছে বাড়িতে। তাদের জন্য সকালের নাস্তা হিসেবে খিচুড়ি চাপানো হয়েছে চুলায়।উঠোনের মাঝে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করা হয়েছে।সেখানে রান্না করছে দুজন বাবুর্চি।তা তদারক করছে কাশেম খান।খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা নেই বিয়েতে।অনেকটা ঘরোয়াভাবেই বিয়ে হচ্ছে।
কমলা বানু ফজরের নামাজ পড়ে একথালা খাবার নিয়ে মেহরাবের ঘরে ঢুকলেন।কেন যেন বিয়ে বাড়ির কোনো আমেজ নেই তার চেহারায়।তিনি যতটা খুশি ছিলেন শুরুতে,আজ ঠিক ততটাই চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে।কমলা বানু ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালালেন।এলোমেলো ঘরের এলোমেলো বিছানায় পরে আছে মেহরাব।এই এক সপ্তাহে তার চুল-দাঁড়ি বেশ বড় হয়েছে।চোয়াল ভেঙে পরেছে,চোখের নিচে কালি জমে গেছে।মেহরাবের সুন্দর চেহারাকে এখন একটা নেতিয়ে যাওয়া ফুলের সাথে তুলনা করা যায়।ছেলের এমন সুন্দর চেহারার এই হাল দেখে ফুঁপিয়ে কেদে উঠলেন কমলা বানু।একটা ভুল! শুধুমাত্র একটা অকল্পনীয় ভুলের পরিনতি যে এতটা ভয়াবহ হতে পারে তা তার জানা ছিল না।কমলা বানু ধীর পায়ে ছেলের বিছানার দিকে এগিয়ে গেলেন। হাতের থালা বিছানার পাশে থাকা টেবিলে রেখে সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিলেন মেহরাবের অযত্নে বেড়ে ওঠা চুলগুলোতে।
—” আব্বা,উঠো।মেহরাব,মেহরাব।উঠো আব্বা,কয়ডা ভাত খাও।কালকে রাইতেও কিছু খাও নাই।মেহরাব।”
মেহরাব হয়তো জেগেই ছিল।মায়ের এমন আদুরে সুরেও উঠলো না সে।বরং, কমলা বানুর হাত সরিয়ে দিলো মাথা থেকে।বিরক্ত কন্ঠে বললঃ” আমাকে কী এখন একটু ঘুমাতেও দিবা না শান্তিতে?আমি এখন খাব না।যাও এখন এখান থেকে।”
ছেলের এরকম বেয়াদবিতে ফুঁসে উঠলেন না কমলা বানু।রাগও করলেন না।কেবল চোখে আসা দু ফোটা পানি শাড়ির আঁচলে মুছে নিলেন।যেভাবে ধীরপায়ে এসেছিলেন, সেভাবেই ধীরপায়ে বেড়িয়ে যেতে উদ্যত হলেন।পিছন থেকে মায়ের আঁচল টেনে ধরলো মেহরাব।মায়ের কোলে এলিয়ে দিলো মাথা।এরপর কমলা বানুকে অবাক করে দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই।কিন্তু, মেহরাব কাঁদছে।কান্নার দমকে বারবার কেঁপে উঠছে তার বলিষ্ঠ শরীর।
—” মা,আরেকবার ভেবে দেখ না প্লিজ।আমার সাথে এরকম কেন করছ?”
—” এইডা হয় না আব্বা।মাইয়াডার কথা একবার ভাব।তুমি এমন করলে মাইয়াডা আর গেরামে টিকতে পারব?সবাই ওর দোষই দিব।তুমি মাইনা নেও।”
—“তোমরা কেন নিজেদের মতো সবকিছু ভেবে নিলে? আমাকে কেন এটাবারের জন্য কোনো প্রশ্ন করলে না?”
—“থাক কাইন্দ না আব্বা।মনে কর, এইডা একটা দূর্ভাগ্য।”
—” এটাকে দূর্ভাগ্য না প্রহসন বলা যায় মা।যাও এখান থেকে,বিরক্ত লাগছে আমার।তোমরা সবসময় নিজেদের দোষের ভার ভাগ্যের উপর চাপিয়ে দেও।”
মেহরাব আবারও বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দিল।এখানে যদি বিয়ে হয় তবে কয়টা জীবন নষ্ট হবে?একটা নাকি দুটো?

***

নীরার গায়ে একটা কমলা রঙের শাড়ি।এটা কাল রাতে গায়ে হলুদের পর গোসল করে পরেছিল।রাতে গায়ে হলুদের একটা ছোট-খাটো অনুষ্ঠান হয়েছিল।হলুদের গন্ধ নীরার ভালো লাগে না।তাই,রাতের বেলায় গোসল করেছে।কাল রাতে কুসুমের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে।রাতে গোসল করে নীরা বিছানায় শুয়েছিল।চোখটাও লেগে এসেছিল প্রায়।এমন সময় কুসুম আসে বিছানায়।বিছানা গা এলিয়ে মাথা এগিয়ে দেয় নীরার দিকে।নাক দিয়ে টেনে নেয় নীরার শরীরের গন্ধ।নীরা মনে মনে হাসে।এটা কুসুমের একটা বাজে স্বভাব।কুসুম নাকি ভিন্ন মানুষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ পায়।নীরা মুচকি হেসে কুসুমকে জড়িয়ে ধরে।
—” কী করছিস?”
—” তোমার গন্ধ নেই।”
—“মানুষের শরীরের গন্ধ হয়?”
—” হয়।তোমার শরীরের গন্ধের সাথে মেজমার শরীরের গন্ধ মিলে না।তোমার থেকে আসে বোন বোন গন্ধ আর মেজমার থেকে আসে মা মা গন্ধ।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে দুজনে।আজকের পরে কোথায় থাকবে নীরা?অন্য কারো ঘরে! ভাবতেও অবাক লাগে।চিরপরিচিত ঘরটা হয়ে যাবে পর।অচেনা একটা ঘরকে আপন করতে হবে।ইশ!কতবড় আত্মত্যাগ। নীরার চোখ ভিজে যায়।বিয়েটা যদি না হতো,অনেক ভালো হতো।
—” নীরাপু,তোমার রেদু ভাইয়ার কথা মনে পরছে না।?”
—” না। ”
—” ইশ,তুমি কত নিষ্ঠুর!রেদু ভাইয়া যদি কখনো ফিরে আসে তখন তোমাকে বিশ্বাসঘাতক বলবে।সেটাই ঠিক হবে।আমি খুব খুশি হব।”
বিরক্ত হয় নীরা। এই কুসুমকে সে বুঝাতেই পারে না,রেদোয়ানের বিষয়টা একপাক্ষিক। একপাক্ষিকভাবে কোনো সম্পর্ক হয় না।নীরা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলেঃ” আমার জন্য তোর কষ্ট হচ্ছে না? সব কষ্ট কী রেদু ভাইয়ার জন্যই হচ্ছে?দেখি, হাত সরা।ঘুমাতে দে।”
কুসুম হাত সরায় না।বরং হাতের বাধন আরো শক্ত করে ফেলে।
নীরার ঘুম ভেঙেছে আজ খুব সকালে।পরনের শাড়িটাকে গুছিয়ে নীরা হাঁটা দেয় পুকুর পাড়ের দিকে।অনেকদিন সকাল দেখা হয় না।আজ বরং দেখা যাক।
পুকুর পাড়ের জামগাছটার পাতা ঝরে গেছে।ঘাস জন্মেছে অনেক।জামগাছে একটা নাম না জানা পাখি বাসা বেধেছে।নীরা চোখ বুলিয়ে সবটা দেখল।আচ্ছা,চেয়ারম্যান বাড়িতে কি এমন পুকুর আছে? সেখান থেকে দাঁড়িয়ে বড় রাস্তা দেখা যায়?একটু বৃষ্টি হলেই কি উঠোনে পানি জমে?বৃষ্টিতে ভিজলে কি টিউবওয়েলের হাতল চকচক করে?জানে না নীরা।নীরা শুনেছে, চেয়ারম্যান বাড়িতে নাকি সব আছে।সবকিছু খুব সুন্দর করে সাজানো।একদম ঢাকার বাড়িগুলোর মতো।নীরা এসব শুনেও খুশি হতে পারে না।এখনই বুঝতে পারে ও বাড়িতে গেলে নিজেকে পুরো বদলে নিতে হবে। নিজের সত্তাকে বদলে খোলসে পুরে নিতে হবে।
নীরা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিল।এমন সময় পিছন থেকে মাথায় চাটি মারে তওসিফ।
—” কিরে নতুন বউ,এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলি কেন?”
—” অভ্যাস করছি।এখন থেকে তো সকাল সকাল উঠতে হবে।তাছাড়া আমি এখনো নতুন বউ হইনি।”
—” হবি তো।আজকের সকালটা গেলেই তো বউ হয়ে যাবি।অনুভূতি কেমন নীরু?”
—” খুব ভয় করছে ভাইয়া।কেমন যেন অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে।”
—” ধুর, টেনশনে এমন হচ্ছে।খারাপ কিছু কেন হবে? তোর নাকি অনেক পছন্দ মেহরাবকে?”
—” ওনার সুন্দর মুখটা আমার খুব ভালো লাগে।তাকে অনেকটা চাঁদ সওদাগরের মতো দেখা যায়।”
—” চাঁদ সওদাগর কে?”
—” ওই যে কয়েক বছর আগে একটা চ্যানেলে একটা নাটক দেখাতো না,বেহুলা নামের।মনে আছে তোমার? আমরা সবাই দেখতাম।”
—” মনে পড়েছে।ওই যে বেহলার শ্বশুর ছিল চাঁদ সওদাগর। খুব সুন্দর ছিল অভিনেতাটা।তোর খুব পছন্দ ছিল।তার কথা বলছিস?”
—” হ্যাঁ, তার মতোই দেখা যায়। তাই আমার খুব ভালো লাগে।তবে একটা জিনিস কি জানো ভাইয়া? আমার মনে হচ্ছে উনি এই বিয়েতে রাজি না।”
খুব অবাক হলো তওসিফ।অবিশ্বাসের সুরে বললঃ” কি বলছিস এসব? তোর কেন মনে হচ্ছে এরকম?”
—” দেখ,উনি এই একসপ্তাহে চাইলেই আমার সাথে দেখা করতে পারতেন।কিন্তু, উনি একবারের জন্যও আমার সাথে দেখা করতে আসেননি।”
—” তো? তাতে কি হয়েছে?”
—” বিষয়টা ভেবে দেখ।উনি নাকি আমাকে লুকিয়ে দেখতো,এটাতো তুমিই বলেছ।আমার চোখেও পরেছে।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর চাইলেই উনি যেকোনো বাহানায় আমার সাথে দেখা করতে পারতেন। কিন্তু, তা তিনি করেন নি।এমনকি আংটি পরানোর দিনও আসেন নি।অথচ,তিনি যেরকম প্রতি বিকেলে আমাদের বাড়িতে উঁকি দিতেন ; আমি ভেবেছিলাম বিয়ে ঠিক করার পর উনি বাহানা দিয়ে প্রায় আমার সাথে দেখা করতে আসবেন।কিন্তু তা করেন নি।আচ্ছা,ভাইয়া এমনকি হতে পারে না তিনি বিয়েতে রাজি নন।আমরা যা দেখতাম আর যা ভাবতাম, তা ভুল ছিল।চোখের দেখা তো অনেক সময় ভুল হয়।”
সহসা নীরার কথার কোনো উত্তর দিতে পারলো না তওসিফ। তার মাথায়ও চিন্তার পোকাগুলো দৌড়াদৌড়ি করছে।

***

দুপুর তিনটের মতো বাজে।নীরা আজ খুব সেজেছে।অবশ্য ও ইচ্ছে করে সাজে নি।কুসুম ও রিমা মিলে জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে।লাল বেনারসি শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে নীরাকে।একদম লাল টুকটুকে একটা পুতুল বউ।নীরা তার ঘরে চুপ করে বসে আছে।তার আশেপাশে গ্রামের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন।সবাই বউ দেখতে এসেছে।নীরার খুব বিরক্ত লাগছে। সে যদি জানতো বিয়ে মানে এতো ঝামেলা,এতো কষ্ট; তবে কখনোই বিয়ে করতো না।এভাবে এতো ভারি শাড়ি পরে বসে থাকা সত্যিই কষ্টের।
কিছুক্ষণ পর মানুষের ভীর ঠেলে ঘরে ঢুকলেন জয়নব বেগম। তার হাতে খাবারের থালা।তিনি ভাত নিয়ে এসেছেন নীরার জন্য।বিয়ের ঝামেলায় আবার কখন মেয়েটা খাবারের মুখ দেখবে কে জানে!নীরা দেখলো,তার কঠিন মায়ের মুখটা ভারি হয়ে আছে।চোখ ফুলে গেছে।এই কয়েকদিনেই যেন আরো বুড়ো হয়ে গেছে তার মা।নীরার ভিতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে এলো।সে কিছুতেই বিয়ে করবে না।বিয়ে অনেক কষ্টের।
জয়নব বেগম নীরার সামনে বসে তার নাকের নোলকটা খুলে দিলেন।ভাত মাখতে মাখতে বললেনঃ” এটা পইরা সমস্যা হইলে,পরছিস কেন?”
—” ওরা পরিয়ে দিয়েছে।”
—” সমস্যা হইলে পরার দরকার নাই।সবার আগে নিজের আরাম দেখতে হয়, বুজছোস?”
নীরা মাথা নেড়ে ভাত মুখে নিল।
—” ভাত খায়া চুপচাপ বইসা থাকবি।আরাম কইরা বসবি।মন চাইলে একটু বালিশে হেলান দিয়া ঘুমায়া থাকিস।কারো কথা শুনার দরকার নাই।বরপক্ষ আসলে তোরে ডাইকা দিমু।ঠিকাছে?”
নীরা তার মায়ের কথা মতো ঘুমিয়ে পরেছিল।আশেপাশের মানুষ এ নিয়ে বাজে কথাও বলেছে।তাতে নীরার কিছু যায় আসে না।ওরা কী করে বুঝবে বউ সেজে বসে থাকার কষ্ট? নীরা ঘুমিয়েছিল।হঠাৎ করে বাহির থেকে অনেক চিৎকারের শব্দ কানে আসায় নীরার ঘুম ভেঙে গেল।নীরা আস্তে করে উঠে বসল।কেউ নেই ঘরে।ঘর একদম খালি।কী ব্যাপার? বর কী চলে এসেছে? নীরা ধীরপায়ে খাট থেকে নামলো।আলুথালু বেশে ঘুমিয়ে থাকার কারণে হাত- পা ব্যাথা করছে খুব।নীরা নিচে নেমে হাত-পা সোজা করে এদিক-ওদিক হাঁটলো।বাহির থেকে আসা শব্দের পরিমাণ বেড়েই চলছে।মনে হচ্ছে সবাই একসাথে চিৎকার করছে।কি ব্যাপার? বিয়ে বাড়িতে কি এতো চেচামেচি হয়?নীরা জানালা দিয়ে উঁকি দিল।নাহ,কিছু দেখা যাচ্ছে না।তবুও নীরা কান পেতে রইলো।যদি কিছু শোনা যায়।হঠাৎ করেই নীরার ঘরের দরজা খুলে গেল।দরজা দিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকলো ইরা।একদৌড়ে নীরার কাছে এসে নীরার আঁচল টেনে বললঃ” নীরাপু,মেহরাব ভাইয়া বিয়ে করতে আসে নাই।সবাই বলতাছে সে নাকি পালায়া গেছে।অনেক ঝামেলা হইতেছে বাইরে।বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে।মা….
নীরার কানে আর কিছু ঢুকলো না।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে।শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে চারপাশে অক্সিজেনের খুব অভাব।নীরা কিছুই বলল না,কিছু শুনলো না।কেবল ঘোলা চোখে চেয়ে রইলো ইরার দিকে।।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here