#বলবো_না_ভালোবাসি,#পর্বঃ_২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আরশিরকে ছেলেটা প্রপোজ করেছে। অথচ আমায় বলেছিলো তারা মাত্রই ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। হুট করেই বুকের বা-পাশে একটা চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলাম। আমি শক্ড হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। আমার রক্তিম চক্ষু জোড়া আরশির দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আরশি আমাকে দেখেই যেনো ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা এখনও হাটু গড়ে বসে আছে একটা ফুল হাতে, মুখে তার প্রশারিত হাসি। আরশির দিকে হাস্যজ্যল মুখে তাকিয়ে আছে মনে হয়, আরশির উপর তার এক সাগর পরিমান বিশ্বাস আছে যে, আজ তাকে ফিরিয়ে দেবেনা সে।
আজ আর কিছু বলার নেই আমার। এতোদিন আরশিকে শ্বাসন করতাম নিজের মানুষ ভেবে। আমার ব্যাক্তিগত মানুষ ভেবে সব কিছু থেকে আড়াল করে রাখতাম যেনো কেউ নিয়ে যেতে না পারে।
আমি মানুষটা এমনই। নিজের ব্যক্তিগত জিনিসের উপর কারো নজর সহ্য হয় না আমার।
আমার সহ্য হতোনা বলেই তাকে বকতাম, কথা শুনাতাম এমন কি ওইদিন মেরেছিলাম পর্যন্ত। এতোদিন নিজের মানুষ ভেবে অধিকার খাটাতাম। বাট আমার জানা ছিলো না, সে আমার একার নয়, অথবা কখনো আমার ছিলোই না। দোষটা আমারই, সব কিছুতে জোড় করে করে তাকে এক প্রকার খাচার বন্ধি একটা পাখির মতো করে রাখতে চাইতাম। যাতে কখনো উড়ে যেতে না পারে।
কিন্তু বন্ধি পাখিরাও তো খাচার ফাক দিয়ে ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্য পাখিদের মতো আকাশ ছুতে চায়। ডানা মেলে স্বাধিন ভাবে উড়তে চায়।
আরশিও হয়তো ওই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। ছোট থেকেই আমার অদৃশ্য খাচায় বন্ধি থেকে এখন মুক্ত আকাশে ছারতেই একটা সঙ্গি খুজে নিয়েছে, যাকে নিয়ে ডানা মেলে প্রান খুলে উড়েছে এতোদিন। হয়তো ওই মায়ায় পরে আরশিও আজ দোটানায়। পারছেনা আমার দিকে তাকাতে, আর পারছেনা ওই ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিতে। কলেজে ভর্তি করার পর দুজন ফ্রেন্ড হয়ে একসাথে থাকতো। ওর সাথে কাটানো সময় গুলোতেও বেশ হাসি খুশি থাকতো আরশি। সব মিলিয়ে কিছু মায়া তো অবশ্যই তৈরি হয়েছে। অথচ আমি কখনো চাইতাম না আরশি কোনো ছেলের সাথে মিশুক। কোনো ছেলের মায়ায় পরুক। না, আমি আর এক মিনিটও ওদের সামনে দাড়াতে পারছিলাম না, সহ্য হচ্ছে না আমার। নিজের মানুষ অন্যের পাশে তা সহ্য হতোও না আর আজও হচ্ছে না। হেলমেট টা মাথায় দিয়ে বাইকের স্প্রিডের উপর ভাসিয়ে দিলাম নিজেকে।
বাড়িতে এসে লম্বা একটা শাওয়ার নিলাম। স্বাভাবিক হয়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম আমি। ওদিকে আম্মু বার বার ডাকছে খেতে যেতে। এখন আর ডাক শুনা যাচ্ছে না, পায়ের শব্দ কান অব্দি পৌছাতেই বুঝতে পারলাম তা ক্রমশ বাড়ছেই। হয়তো আম্মু বুঝে গিয়েছে আমার কিছু একটা হয়েছে। এই একটা মানুষই আছে, যার কাছে কিছু লুকাতে পারিনা। ঠিকই বুঝে নেয়, আচ্ছা মায়েরা এমন হয় কেনো?
,
,
রাতের আকাশে অনেক তারার মেলা বসেছে আজ। সেই সাথে চাঁদের আলোয় চার পাশ টা মেতে উঠেছে। ছাদের এক কোনো কানে এয়ারফোন গুজে গিটার হাতে ব্যাস্ত সময় পার করছিলাম আমি। গানের তালে তালে গিটার বাজানো, ব্যাপার টা আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু একদিন মা শুনে ফেলেছিলো আর আমায় বলছিলো, কি সব আবোল তাবোল বাজাস তুই? নেই কোনো সুর, সুধু কিরিং কিরিং শব্দ ছারা আর কিছুই নেই। আসলেই কি সুর নেই? কিন্তু এয়ারফোনের গানের তালে তালে হাত নাড়ালেও আমার কাছে মনে হয় কি সুন্দর সুর সৃষ্টি করে ফেলছি আমি। তাহলে এটা কি শুধু আমার কাছেই মনে হয়? এর পর থেকেই একটু মিলিয়ে বাজানোর চেষ্টা করি। যেমনই হোক, আমার কাছে ব্যাপার টা ভালোই লাগে। বাট আশে পাশে মানুষ গুলোর কাছে কেমন লাগে জানিনা। আর খারাপ লাগলেও আমার কিছু আসে যায় না। আমি এমন এক ঘ্যায়ি প্রকৃতির।
দেখলাম আরশি কিছুক্ষন ধরে আমার পাশে দাড়িয়ে আছে। অথচ আমি খেয়ালই করলাম না বিষয় টা। তার দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলাম সে নিচের দিকে তাকিয়ে হাতের আঙুল গুলো কেমন করছে। হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।
হুট করে মাথা তুলে বলে উঠলো,
– ভাইয়া, আপনি না খুব সুন্দর গিটার বাজান।
আজ পর্যন্ত কেউ আমার গিটারের প্রশংসা করলো না, কিন্তু আজ দেখি প্রশংসা উতলে পরছে। বায় দ্যা ওয়ে, অন্য সময় সে কোনো আকাম করলে আমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বাচতো, আর আজ এত বড় কান্ড ঘটিয়েও আমার সামনে দাড়িয়ে প্রশংসা করছে? নতুন একটা বফ জোগার করে সাহস বেড়ে গেছে কিনা তাও বুঝতে পারছি না।
যাই হোক এই নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কাউকে জোড় করে ধরে রাখতে চাওয়াটা কোনো জেলখানায় বন্ধি কয়েদির মতো। পাখিকে খাচায় না রেখে মুক্ত করে দিলাম, এবার না হয় একটু ডানা মেলে উড়তে থাকুক।
আমি কিছু না বলে গিটার টা হাতে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। আরশি এখনো দাড়িয়ে আছে ছাদে।
তার এই বুক ভরা সাহস নিয়ে আমার সামনে আসারও একটা কারণ ছিলো। সে হয়তো ভেবেছিলো, প্রতি বারের মতো আজকেও তাকে বকাঝকা করে সব উড়িয়ে দিবো। কিন্তু আমি কথা বলা যেখানে বৃথা, সেখানে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলাম।
,
,
রাঙা প্রভাতের আলো চোখে এসে পরতেই ঘুম ভাঙলো আমার। হাত দুটি দুই দিকে মেলে দিয়ে ক্লান্তি ছাড়াতেই খেয়াল করলাম, বিছানার পাশে একটা চায়ের কাপ। আর ওই কাপ থেকে ধোয়া উড়ছে।
ব্যাপার টা বুঝলাম না, যেখানে মায়ের চ্যাচামেচিতে ঘুম ভাঙার পর চা পেতে কম করে হলেও বিশ মিনিট সময় লাগে, সেখানে আজ ঘুম থেকে উঠতেই চায়ের কাপ চোখের সামনে। পাশে তাকিয়ে দেখি আরশি জানালার পর্দা সরিয়ে সোজা হেটে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
মেজাজ টা বিগড়ে গেলো তার অতি ভক্তি দেখে। আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম,
– এই দাড়া, সমস্যা কি তোর? মানে আমায় না মেরে বুঝি তোর শান্তি হবে না? দুরে দুরে থাকতে পারিস না আমার থেকে? চোখের সামনেও পরবি না আমার।
– আচ্ছা আসবো না, এখন চা খেয়ে নিয়েন।
– খাবোনা নিয়ে যা এখনান থেকে।
– আপনি না খেলে আমিও যাবো না, আর চাও নিবো না।
এবার মাথা টা পুরোই গরম হলো আমার। চয়ের কাপ টা নিয়ে তার দিকে ছুরে মারতেই ফ্লোড়ে পরে টুপরো টুকরো হয়ে গেলো ওটা। গরম চা অনেকটা ছিটকে আরশির পা কে স্পর্শ করে ফেলেছে। এবার সিরিয়াস ভাবে নিয়ে কেপে উঠলো আরশি। তেজস্ব গলায় বলে উঠলাম,
– হোয়াই এয়ার ইউ স্টেইল লুকিং? গেট আউট ফ্রেম মাই রুম।
কাপ ভাঙার শব্দের সাথে আমার গলার আওয়াজ আম্মু এবন ফুফুর কানে পৌছাতে সময় লাগলো না। তারা দুজনই ছুটে আসে রুমে।
ফুফি বলে উঠে,
– কি রে বাবা কি হয়েছে,
রাগন্বিত স্বরে বললাম,
– ওকে এখনি আমার রুম থেকে বের হতে বলো ফুফি, আমার সামনেও যেনো না আসে আর।
আম্মু আরশির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
– সকাল সকাল ছেলেটার মাথা শেষ শেষ করলো। কতোবার নিষেধ করছি রিদের কাছে কম আসবি তুই। মাত্র ঘুম থেকে উঠলো আর উঠে না সারতেই,,
আর কিছু বলার আগেই ফুফি রাগে ফুলতে ফুলতে আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। আমি শিউর এখন নির্ঘাত গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা বসিয়ে দিবে।
আজ আর বাধা দিবো না, ওর মতো খারাপ মেয়ের এটাই পাপ্য।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবাও এসেছে রুমে। আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি হয়েছে এখানে? আরুকে বকছো কেনো সবাই?
– কি আর করবে, সকাল সকাল ছেলেটার মাথা নষ্ট করতে এসেছে।
– করেছে টা কি?
আমি শান্ত ভাবে বললাম,
– কিছু করেনি,,
– তাহলে এমন করছো কেন?
– কারণ ওই মেয়েকে এখন আর আমার চোখের সামনেও সহ্য হয় না।
বলেই হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি। কারণ এখানে যতই থাকবো ততোই কথা বাড়বে।
বাবা মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
– এই নিয়ে আর একটা কথাও যেনো আমি না শুনি।
,
,
বাবা সোফায় বসে ছিলো। ফুফি তখন তার পাশে এসে বললো,
– ভাই জান আরুর জন্য ওইদিন একটা সম্বন্ধ এসেছিলো না? ছেলে পুলিশে চাকরি করে?
– হুম, আমি কিছু বলিনি তাদের, তোর মতামত নিয়ে জানাবো বলছি। তাছারা সামান্য পুলিশে জব করে এমন একটা ছেলের কাছে আমি আমার ভাগনি কে তুলে দিবো? আর তুই ই তো বলেছিলি, আরু এখনো ছোট।
– ওদেরকে আসতে বলো ভাইজান। যত তারাতারি সম্ভব আরুর বিয়ে দিতে হবে। ও ছোট নেই, আর ছেলেতো আর বেকার না, দু,বেলা দু মুঠু খাওয়াতে পারলেই হলো। এতিম মেয়ের এতো শখ আহ্লাদের কোনো দরকার নেই।
– দেখ বাজে বকবি না, ও এতিম হবে কেন? ওর সবাই আছে। আর তাছারা আরুর ও তো মত নিতে হবে এ বিষয়ে।
– ওর মত নিতে হবেনা ভাইজান। মুখের উপর না করার সাহস পাবে না সে। আর ও মেয়ে মানুষ, ওর মত নিয়ে যাবো কেনো? আমরা যা ডিসিশন নিবো এটাই ওর ডিসিশন।
– আরু মেয়েটা একটু ভিতু প্রকৃতির। হয়তো তোর ভয়ে কিছু বলবে না। কিন্তু ওর ভেতরের খবর তে আর আমরা জানিনা তাই না?
– ওটা আমি দেখে নিবো ভাইজান। তুমি পাত্র পক্ষকে বলো দেখতে আসতে, ভালো লাগলেই এঙ্গেজমেন্ট সারিয়ে ফেলবো। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হবে, এতো ঢাক ঢোল পিটানোর দরকার নেই।
To be continue….
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?