#বলবো_না_ভালোবাসি
#পর্বঃ_১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ইদানিং প্রায়ই খেয়াল করি আরশি একটা ছেলের সাথে খুব করে মেলামেশা করে। ওইদিন দেখলাম দুজন এক সাথে হাটছে, তাদের হাতে একটা করে আইসক্রিম। এর পর আরেকদিন দেখলাম একে অপরের মুখে ফুচকা তুলে দিচ্ছে। বিষয় গুলো হজম হচ্ছিলো না আমার। কারণ, আরশিকে অন্য কোনো ছেলের সাথেই সহ্য হয় না আমার।
ফুফু আর আঙ্কেলের বিয়েটা হয়েছিলো প্রেম করেই। এর পর কোনো কারণে ডিবোর্স হয়ে যায় তাদের। আরশির বয়স ছিলো তখন সবে মাত্র ৮ আর আমার ছিলো ১৩। বয়সে আমার চেয়ে ৫ বছরের ছোট।
ফুফু ফুফার ডিবোর্সের পর থেকেই আরশিকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকে ফুফু।
যদিও তাদের নিয়ে একসাথে থাকায় সন্তুষ্ট ছিলো না আমার মা। আমি প্রায়ই শুনতাম এই বিষয় টা নিয়ে বাবা মায়ের মাঝে মন খারাপি। কিন্তু বাবা এসব বুঝতে দিতো না ফুফুকে। আর মা কেও বলে দিয়েছে,
– আমার বোন আমার বাড়িতে থাকবে বা থাকবেনা, সেটা আমি বুঝবো। তোমার কারণে আমার বোন যদি একটু কষ্ট পায় তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেও হবে না।
মা তাদের নিয়ে অসুন্তুষ্ট থাকলেও বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারতো না। বলতে গেলে আরশিকে সহ্যই করতে পারেনা মা। বিশেষ করে আমার সাথে দেখলেই হয়তো আমাকে ডাক দিয়ে নিয়ে যাবে, নয়তো আরশিকে কোনো একটা কাজের বাহানা করে নিয়ে যাবে।
আরশিকে সব সময় চোখে চোখে রাখতাম আমি। তখন এতো কিছু বুঝতাম না আমি। ওর খেয়াল রাখতাম, ভুল করলে বকতাম, অন্যায় করলে শাসন করতাম। তখন ছোট ছিলো তাই ভয়ে ঠোট ফুলিয়ে কেঁদে দিতো সে। কান ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতো, আর কখনো এমন করবে না সে। ইশ তখন কি মায়াবিই দেখাতো তাকে। ওর ভয়ার্ত চেহারায় ঠোট ফুলিয়ে কাদু কাদু ভাব, সব মিলিয়ে আমারও খুব হাসি পেতো। ভালো লাগতো ওর সব কিছু, সব কান্ড। ওকে প্রাইমারি লাইফ টায় হাত ধরে ধরে স্কুলে দিয়ে আসতাম। হাইস্কুলে উঠার পর সে নিজে নিজেই যেতো, আমি শুধু খেয়াল রাখতাম তার। তার হাইস্কুল জিবনটাও শেষ হলো। কোনো ছেলের সাথে মিশতে দিতাম না তাকে। অন্য সব মেয়েরা ছেলেদের সাথে কথা বলুক, কিন্তু আরশি বলতে পারবে না। এমন টা কেনো করতাম তা আমি নিজেও জানিনা। এটা ছিলো তার জন্য একটা অলিখিত আইন।
আমি আরশির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম ফুফু তাকে বকছিলো। পুরোটা না বুঝলেও মোটামুটি বুঝলাম যে, আরশি ফুফির কাছে নতুন জামা কিনে দেওয়ার বায়না করছিলো। আর ফুফি ওকে বকছে। সোজা সাপ্টা বলছিলো, বাবা হারা এতিম মেয়ের এতো শখ আহ্লাদ মানায় না। যা পাচ্ছা তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে।
আরশি তখন ছিলো ক্লাস ৮ এ।
ফুফি রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর দরজার আড়াল থেকে উকি মেরে দেখলাম, বিছানায় হাটুর মাঝে মুখ গুজে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে আরশি। বুকের ভেতরটায় যেনো অদ্ভুত এক ব্যাথা অনুভব করলাম।
বাবা হাত খরচের টাকা যা অল্প দিতো তার মাঝ থেকে কিছু রেখে দিতাম।
আমি রুমে এসে দেখি ৫ হাজার টাকার মতো জমা আছে আমার কাছে। ইন্টার শেষে ঘুরতে যাবো বলে জমিয়েছিলাম। টাকা হাতে নিয়ে একটা মৃদ হাসি দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই আরশির হাসি মুখটা ভেষে উঠলো সামনে।
রাত তখন ৮ টা বাজে। দরজার আড়াল থেকে উকি দিয়ে দেখলাম আরশি পড়ছে। আমি শপিং ব্যাগ দুটু পছনে লুকিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম।
আরশি আমায় দেখে বলতে শুরু করলো,,
– প্লিজ প্লিজ ভাইয়া আজ আপনার কাছে পড়বো না, আজ স্কুলের অনেক পড়া জমে আছে ওগুলোও কমপ্লিট করতে পারিনি।
আমি একটু হেঁসে বললাম,
– পড়তে হবে না, চোখ বন্ধ কর।
– কেন?
– করলেই দেখবি।
আরশি চোখ বন্ধ করে হাত টা বাড়িয়ে দিলো আমার সামনে। কারণ মাঝে মাঝে ওর জন্য ডেরি মিল্ক নিয়ে আসি আমি। তাই হয়তো ভেবেছে, আজও তার হাতে দুইটা ডেরি মিল্প দিবো।
ব্যাগ দুটু তার হাতে দিলে, সে চোখ খুলে বলে উঠে,
– কি এখানে?
– গিফ্ট, তোর জন্য।
আরশি হাস্যজ্জল মুখে বললো,
– গিফ্ট? আমার জন্য? তাও দুইটা?
– হুম, দেখ পছন্দ হয় কি না?
আরশি জামা গুলো গায়ের উপর মেলে ধরে দেখতে লাগলো।
– ওয়াও অনেক সুন্দর,,,,,,
তার মাঝে কেমন একটা বাচ্চামু জেগে উঠলো। হুট করে আমার জড়িয়ে ধরে বললো,
– থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
সেদিন প্রথম আরশি আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো। আমার সারা শরির জুড়ে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। মুহুর্তেই লক্ষ করলাম আরশির চোখে পানি। আমি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
– তোর কিছু প্রয়োজন হলে কাউকে বলার দরকার নেই, ডিরেক্ট আমায় বলবি।
আরশি কিছু বললো না চুপ করে রইলো, আমি ওর দুই গালে আলতো করে হাত রেখে বললাম,
– হাটতে যাবি বাইরে?
– না আম্মু বকবে,
– কেও কিছু বলবে না চল, ভালো লাগবে। তোর ফেভারিট ফুচকা খাওয়াবো তোকে।
ফেরা যাক গল্পে।।
আজ আরশিকে দেখলাম ওই ছেলেটার সাথে রিক্সায় চড়ে বেড়াচ্ছে। আমার শরিরের সব রক্ত যেনো টগবগ করতে শুরু করলো। ইচ্ছে করছিলো ওই ছেলেকে গিয়ে আরশির সাথে বসার স্বাধ মিটিয়ে দিই। কিন্তু নিজেকে কন্টোল করে বাইক দিয়ে বাসায় চলে আসলাম আমি। আমার বিষণ্ন মুখ দেখে মা আমায় পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো,
– কিরে কি হলো তোর, এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
আমি উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম।
খাটের এক কোনে বসে আছি, দুই পা মেঝেতে ছেড়ে দিয়ে।
আরশিকে ক্লাস টেন পর্যন্ত আমার মতো করে রাখলেও, ইন্টারে উঠার পর থেকে এক বছর যেতেই দেখলাম একটা ছেলের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে তার। আরো দুই দিন দেখলাম ওর সাথে তাকে। জিজ্ঞেস করলেই বলে ফ্রেন্ড।
আরশি কলেজ থেকে ফিরে নিজের রুমে যেতেই দেখে রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। আর খারের উপর বসে আছি আমি।
আরশি জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রুমটা আলোকিত হয়ে গেলো। আমার পাশে এসে হাটুর উপর ভর করে বসে, আমার মুখের দিকে চেয়ে বললো,
– মন খারাপ কেনো ভাইয়া? কি হয়েছে আপনার?
আমি নিরবে নিভৃতে নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম,
– ছেলেটার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
– ভাইয়া বিশ্বাস করেন, রিদোয়ান আমার ফ্রেন্ড আর কিছু না।
প্রচন্ড রাগ থেকেই আরশির গালে একটা থাপ্পর বাসিয়ে দিলাম।
– তোকে বললাম না, তোর লাইফে কোনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকতে পারবে না৷ কোনো ছেলের সাথে মিশতে পারবি না তুই? কোনো ছেলের সাথে কথাও বলবি না? আর কতোবার বলবো, তোর সাথে অন্য কোনো ছেলে সহ্য হয় না আমার?
বলেই আমি উঠে, সেখান থেকে চলে গেলাম। আরশি এখনো ফ্লোড়ে বসে আছে।
,
,
পর দিন কলেজ ছুটির পর দেখলাম। আরশি আর ওই ছেলেটা এক সাথে। আর ছেলেটা একটা গোলাফ হাতে হাটু গড়ে বসে বলে উঠলো,
– আই লাভ ইউ আরশি। তোমার সাথে চলতে চলতে কখন যে তোমার এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। জানিনা আমি মুখে বলে বুঝাতে পারবো কিনা তোমায় আমি কতটুকু ভালোবাসি। সুধু এটাই বলতে চাই, তোমাকে আমার নিজের করে পাশে রাখতে চাই। আগলে রেখে ভালোবাসতে চাই সারাটি জীবন। Do you love me Arshi?
To be continue…………
~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?