#বসন্তের_রঙ_লাল 02,03
#ফাতেমা_তুজ
#part_2
(৩)
বিরতহীন বেজে চলেছে ফোন। ঝিলের তাঁতে কোনো হেল দোল নেই। সে ব্যস্ত পাশে থাকা পুরুষ টির গাঁয়ের সুভাস নিতে। ছেলেটার সৌন্দর্য যেন ওকে ভস্ম্য করেই দিবে। একটা মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে?
” এক্সকিউজ মি, আপনার ফোন রিং হয়ে চলেছে। ”
” হোক। ”
” হোয়াট! ”
” না মানে স্যরি। আসলে আমি বুঝতে পারি নি। ”
মেকি হাসি দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো সে। আহনাফ ভাইয়া নাম টা দেখেই বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো বেশ। অভিনব তাকিয়ে আছে মেয়েটির ভাব ভঙ্গিমা বুঝতে। তবে চাহনি তে ভয় দেখে নিজেই কেমন নুইয়ে গেল। ভেতর থেকে একটি শব্দ ই শুনতে পেল মেয়েটি কি বিপদে আছে?
” হ্যাঁ ভাইয়া বলো। ”
” ফোন রিসিভ করছিলি না কেন? ”
” আসলে আমি ”
” কি আসলে আসলে করছিস? তুই ঠিক আসিছ তো বোন? ”
” হ্যাঁ ভাইয়া আম অল রাইট। তুমি টেনশন করিও না তো। আর শোনো রোহন ভাইয়া কে ও বলে দিও যেন আমাকে নিয়ে টেনশন না করে। ”
” আরে টেনশন কি শুধু শুধু করছি? সবাই খুব রেগে আছে। এবার আর রক্ষে নেই বোধহয়। ”
” সেকি প্লিজ প্লিজ তুমি ম্যানেজ করো সবাই কে। ”
” হুম দেখছি আমি কি করা যায়। বাট তুই সাবধানে থাকিস। ”
” হুম। ”
ফোন কেঁটে দিয়ে পেছন ঘুরতেই অভিনবর সাথে ধাক্কা খায় মেয়েটি। ভয়ে একদম জড়োসড়ো হয়ে যায়। অভিনব কি কিছু শুনেছে?
” এই যে মিস আপনি তো বড্ড বেখেয়ালি! ”
” কেন আমি আবার কি করলাম? ”
একটা পার্স এগিয়ে দেয় অভিনব। জ্বিভ কাঁটে ঝিল। মাথা চুলকিয়ে বলল
” এক্সচেলি আমি না একটা ”
” অদ্ভুত। ”
” হুম তেমনি আর কি। ”
মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলো দুজনে। অভিনব বেশ মজা পাচ্ছে এবার। বাচ্চা একটা মেয়ে, তবে সাহস আছে বেশ।খ্যাক করে কাশলো সে। ঝিল বলল
” পানি খাবেন? ”
” উহু। ”
” আচ্ছা একটা কথা বলবো? ”
” হ্যাঁ বলুন। ”
” আপনি বিডি আসলেন হঠাৎ করে। আমি তো কোনো নিউজ পাই নি। ”
ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকায় অভিনব। বেশ বিপাকে পরে যায় ঝিল। কোন জায়গায় কোন কথা বলে দিলো। এবার তো নিশ্চয়ই এক্সপ্লেনেশন চাইবে অভিনব। ঠিক হলো টা ও তেমনি। অভিনব বলে উঠলো
” আমি কোথায় যাই সেসব নিউজ রাখেন আপনি? ”
” না মানে তেমন কেন হবে? আপনি কোন দেশে ট্রাভেল এর জন্য যাচ্ছেন সেটা তো নিউজ এ দেখানোই হয় তাই না? ”
” হুম তা ঠিক। তবে এবার যে আমি লুকিয়ে এসেছি। ”
” রিয়্যালি? ”
চকচকে কন্ঠে বললো ঝিল। অভিনবর বেশ হাসি পাচ্ছে ওর উত্তেজনা দেখে। তবে সে হাসলো না। বেশ সিরিয়াস অভিব্যক্তি করে বলল
” হুম। কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? ”
” আরে হবে না কেন। আমি তো আপনাকে দেখেই পালিয়ে এসেছি। ”
” স্যরি? ”
” লেটস মি এক্সপ্লেইন। ”
” ইয়াহ ইয়াহ সিওর। ”
বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়ালো ঝিল। কিছু টা মোটিভেশনাল স্পিকারের মতোই। অভিনব ও ধারালো দৃষ্টি মেলে তাকালো। যেন বেশ ভালো শ্রোতা সে। ঝিল কে দেখে মনে হচ্ছে খুব আনন্দ পাচ্ছে কথা বলতে।
” তো বিষয় টা হলো যে আমি তিন বছর পূর্বে একটা নিউজ দেখেছিলাম যেখানে আপনি তথা অভিনব সরকার ইহান নামের এক প্রিয়র বাঙালী আর জন্মগত বিদেশী ছেলে বাসা থেকে পালিয়েছে শুধু মাত্র ভ্রমণের জন্য। আর সেই টা ছিলো আপনার পনেরো তম দেশ ভ্রমণ। বিষয় টা আমাকে এমন ভাবে এট্রাক করলো যে আমি ও আপনার পথে গমন করলাম। বাট আফসোস প্রতি বার কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর ই ধরা খেয়ে যেতাম। তখন তো বেশ অনেক টাই ছোট ছিলাম তাই আমার ভাইয়ারা সাহায্য ও করতো না। ”
” হুম বুঝলাম। বেশ এট্রাকটিভ ম্যাটার। ”
” হুম হুম একদম। দারুণ না বিষয় টা ? ”
” হুম বেশ দারুণ। তো মিস ঝিল আপনি কি এখন বড় হয়ে গেছেন? ”
কথা টা কানে পৌঁছাতে কিছু টা সময় নিলো ঝিলের। উসখুস করতে লাগলো মেয়েটি। ইতোমধ্যেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মুখ। হাত কচলাতে লাগলো। পুরো টা মনোযোগ মাটির দিকে। অভিনব হাসলো, তবে সেই হাসি টা অন্তকর্নেই স্থায়ীত্ব পেল। সহজ হতে অভিনব শুধালো
” বয়স কতো আপনার? ”
” ১৭ বছর। বিশ্বাস করুন এই বয়সে আমাদের পাশের গ্রামের ললিতা বু দুই বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছিলো। সেই হিসেবে আমি নিশ্চয়ই ছোট নই? ”
ভিম্রি খেল অভিনব। ঝিলের নাকের পাটা লাল হয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে ভীষন লজ্জিত সে। চাঁদের আলো তে স্নিগ্ধ মুখ টায় লাল আভা ছড়িয়ে আছে। যেন কোনো চন্দ্রকুমারী অথবা অপ্সরী দাঁড়িয়ে। হঠাৎ বাতাস এসে এলোমেলো করে দিলো চুল। হালকা শীতের মাঝে ও ফুলের গন্ধে ম ম করছে পরিবেশ। অভিনব অনুভব করতে পারে বসন্তের আগমন বার্তা এসেছে তাঁর কাছে। সেই স্নিগ্ধতায় চার পাশ হয়েছে বিমোহিত। ঝিলের শীত লাগছে অধিক। কাঁধের ব্যাগ থেকে জ্যাকেট বের করে দিলো অভিনব। বিস্ফোরিত চোখে ঝিল তাকাতেই মৃদু হেসে অভিনব বলল
” পড়ুন, সমস্যা নেই কোনো। ”
বিনা বাক্যে জ্যাকেট পরে নিলো ঝিল। অভিনব আর ওর মাঝে সামান্য দুরুত্ব বজায় রেখেই এগিয়ে চলেছে। রাতের ম্নিয়মান আলো তে হয়তো ঝিলের লজ্জা মাখা মুখ টা আর দেখতে পেলো না ছেলেটা। তবে ঝিল নুইয়ে যাচ্ছে কেমন। জ্যাকেট খামচে ধরে ঘন ঘন শ্বাস নিলো। যেন প্রিয় পুরুষের সাথে লেপ্টে আছে সে। দারুণ এক সুভাস এসে জড়িয়ে নিয়েছে ওকে। ফুলের সুভাস নয়, এটা প্রিয় পুরুষের গাঁয়ের সুভাস। অভিনব নামক মা’দকময় সুভাস।
(৪)
ঘামে ভেজা শার্টের হাতা গুটিয়ে নিচ্ছে ফারহান। একটু আগেই কড়া রোদ্দুরের মাঝে দৌড়ে এসেছে। মাঝ পথে গাড়ির টায়ার গেল চুপসে। আর সেই কারনেই পনেরো মিনিটের পথ ছুটে আসতে হলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো ফারহান।
যাক এখনো মিনিট খানেক সময় বাকি। কপালের ঘাম টুকু মুছতেই বেল বেজে উঠলো। প্রগাঢ় দৃষ্টি মেলে সামনের দিকে তাকালো ফারহান। দুই বিনুনি করা কাঁধে বেবি পিংক কালার ব্যাগ ঝুলিয়ে আসছে তাঁর প্রেয়সী। স্থির দৃষ্টি মেলে দেখছে তা ফারহান। গেটের কাছে এসে থমকে যায় ফারাবি। বুকের ভেতর ধীম ধীম আওয়াজ হতে লাগলো। এই ভয়ঙ্কর মানব কে দেখলেই ওর হার্ট বিট অদ্ভুত ভাবে থেমে যায়। মনে হয় এই বুঝি প্রাণ পাখি ডানা মেলে উড়ে যাবে।
” ফারাবি ফুচকা খাবি? ”
চমকে দু হাত পিছিয়ে গেল ফারাবি। ফারহান নিজের হাসি চেপে রেখেছে। মেয়েটার সামনে হাসা যাবা না একদম ই। বুকে থু থু দিয়ে ফারাবি বলল
” না না আমি খাবো না ফারহান ভাইয়া। ”
” আরে না আয় আমি তোকে খাওয়াবো। ”
” খাবো না আমি। ”
কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে বিন্দু মাত্র মায়া হলো না ফারহানের। খপ করে মেয়েটির হাত চেপে ধরলো। ফারাবি বুঝতে পারলো আজ ওর দিন শেষ। স্কুলের গেট পেরিয়ে পুকুর পাড়ে অনেক গুলো ফুচকার স্টল। আড়চোখে তাকালো ফারহান। ফারাবি একদম চুপসে গেছে। ফুচকা ওয়ালা মামার উদ্দেশ্যে ফারহান বলল
” বেশ ঝাল দিয়ে ফুচকা বানাবেন মামা। ”
” জী মামা। ”
” মামা শুনেছি পাঁচ মরিচের ফুচকা বানিয়ে দেন। ”
” হুম মামা বানাই তো। ”
” সেটাই দিন। ”
” আচ্ছা। ”
ফুচকা ওয়ালা ফুচকা বানাচ্ছেন। ফারাবি বুঝতে পারলো এই মুহূর্তে পাঁচ মরিচের ফুচকা তাঁর ই জন্য বানানো হচ্ছে। তবে ভয়ঙ্কর মানবের মুখাশ্রির দিকে তাকিয়ে গলায় কথা আটকে গেছে। ফুচকার স্টল এর পাশে লোক সমাগম বাড়তে লাগলো। তাই ফুচকা নিয়ে কিছু টা দূরে এলো ফারহান। শুনশান নীরব সে স্থান। একটা ফুচকা হাতে তুললো ফারহান। বলল
” হা কর। ”
” খাবো না আমি। ”
” হা করতে বলেছি আমি। ”
মাথা ঝাঁকালো ফারাবি। অর্থাৎ কিছু তেই খাবে না সে। জ্বলন্ত আগুনের মতো লাল হয়ে গেল ফারহানের মুখ। জোড় করে একটা ফুচকা মুখে তুলে দিলো। ঝালে শরীর কাঁপছে মেয়েটার। সে দিকে পাত্তা না দিয়ে পর পর ফুচকা মুখে দিতে লাগলো ফারহান। এতো ঝাল মুখে দিচ্ছে দেখে কেঁদে উঠলো মেয়েটি। আড়চোখে সেটা দেখলো ফারহান তবে সে ফুচকা মুখে নিতেই ব্যস্ত। ফারাবির হাত পাঁ কাঁপছে। বারণ করার জন্য যে শব্দ প্রয়োজন তা মেলাতে পারছে না। দশ টা ফুচকা খেয়ে আর খেতে পারলো না ছেলেটা। কান লাল হয়ে গেছে। চোখ দুটো ফেঁটে যাবে যেন। ফারাবির কান্না থামছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। ঝটকা মেরে মেয়েটি কে কাছে টেনে নিলো ফারহান। কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে বলল
” বুঝিস তুই? এই আমি টা কতো টা ভয়ঙ্কর জানিস না তুই? কেন বারন করা সত্তে ও ঝাল দেওয়া ফুচকা খাস রোজ? ”
” আমি আর খাবো না। আর খাবো না ফুচকা। ”
ঝালে মুখ থেকে আর্তনাদ আসতে চায়। প্রতি টা ফুচকা তে পাঁচ টা করে ছোট মরিচ ছিলো। যদি ও অনেক বেশি ঝাল নয়। তবে এতো গুলো মরিচ এক সাথে পেটে যাওয়া তে অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে। ফারহানের অবস্থা দেখে ভেঙে পরলো ফারাবি। চার পাশে কাউ কে দেখতে ও পাচ্ছে না। ছেলেটা যেন মুহূর্তেই জ্ঞান হারাবে। ছুটে এসে জাপটে ধরলো ফারাবি। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে লাগলো
” কেন এমন টা করলেন আপনি? এখন আমি কি করবো। কি করে আপনাকে সুস্থ করবো আমি। কি করবো আমি। ”
অঝোরে কাঁদছে মেয়েটি। ফারহানের চোখের কোন বেয়ে পানি নেমে যাচ্ছে। শরীর গরম হয়ে গেছে। বা হাতে শার্টের দুটো বোতাম খুললো সে। ফারাবি এখনো জড়িয়ে আছে। হিতাহিত জ্ঞান নেই ওর। সর্বদা রাগি মেজাজ নিয়ে চলা মানুষ টার করুণ মুখ ওর সহ্য হচ্ছিলো না যেন। বেশ কিছু টা সময় পর শান্ত হলো ফারহান। ঝাল কমে গেছে। তবে ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি। আলগোছে ফারাবি মাথায় ঠোঁট ছোয়ালো সে। ফারাবির ধ্যান জ্ঞান এখন অন্যত্র। এভাবে কোনো পুরুষ মানুষ কে জাপটে ধরে নি সে। অদ্ভুত এক নেশা লেগে গেছে ওর। এই সময় যেন থমকে যাক এটাই ওর এক মাত্র চাওয়া। অথচ জানা নেই কেউ একজন নিজ পরিকল্পনা পূরণ করতে পারার উল্লাসে মেতে উঠেছে।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে
#বসন্তের_রঙ_লাল
#ফাতেমা_তুজ
#part_3
(৫)
পশ্চিমা আকাশে কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে। ঝিল এখনো চোখ বুঁজে। তবে অভিনব জেগে আছে প্রকৃতির মায়া মোহ তে। কি সুন্দর এই ধরা। সৃষ্টি ও তাঁর সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা যতোই করা হোক না কেন তা নিতান্তই তুচ্ছ এই সৌন্দর্যের কাছে। এই যে আকাশ থেকে নেমে আসা বিন্দু বিন্দু শিশির কনা। ঘাসের উপর লেপ্টে আছে কেমন। কচি পাতা গুলো হালকা বায়ু তেই কেমন মুক্ত আর প্রাণোচ্ছল হয়ে দুলছে। অভিনবর অধরে স্নিগ্ধ এক হাসি। সে যেন ডুবে আছে প্রকৃতির মাঝে। শুষ্ক হাত টা পকেট থেকে বের করে ঘাসের উপর ছোঁয়াতেই এক দলা শিশির এসে ভিজিয়ে দিলো হাত। তাঁতে যেন ছেলে টার অন্তরআত্মা অব্দি শীতলতা নেমে গেলে। এখনো শীতের প্রকোপ রয়েছে বেশ। অথচ দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে বসন্ত। আজ রাত্রী পেরোলেই পহেলা ফাল্গুন। চার পাশে বসন্তের রাঙা ছোঁয়া। স্থির চিত্তে ঘাস থেকে হাত ছড়িয়ে নিলো সে। কাঁধের ব্যাগ টা টেনে নিয়ে তাকালো পাশের বেঞ্চে। ঝিল ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। কাল রাত্রী তে বাস স্টপে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো দুজনে।
মেয়ে টা কে ডাকতে গিয়ে ও ডাকলো না। বরং হাতে থাকা ঘড়ি টা নাড়িয়ে চারিয়ে দেখলো সময়। খুব বেশি নয় সবে মাত্র ভোর পাঁচ টা বেজে কিছু লগ্ন। মোটামুটি সূক্ষ্ম এক আলো ছড়িয়েছে চারপাশে। নেটওয়ার্ক নেই এই রাস্তায়। পাহাড়ি এলাকায় এমন টাই হয় বটে। তবে পাশে থাকা সাইনবোর্ড বলছে ঠিক ছয় টা বাজে বাস এসে থামবে। অপেক্ষা না করে এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলো অভিনব।
খেজুর গাছে রস নেই বললেই চলে। তবু ও এক দল পিপাসু মানব চলে এসেছে কাক ভোরে। আঁধার কাঁটে নি ঠিক ই তবে তাঁরা নিজ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। কয়েক টা বাচ্চা এসে চেঁচামেচি করছে রস নিয়ে। তবে অভিনব কে দেখে হা হয়ে গেল মুখ। বিষয় টা খোলসা করতে অভিনব বলল
” এখানের রসের স্বাদ কেমন হয়? ”
একে অপরের দিকে তাকালো বাচ্চা গুলো। বোধহয় বিশ্বাস হচ্ছে না লম্বা দেহের বিদেশী মানব বাংলায় কথা বলতে পারে। আঞ্চলিক এক ভাষা রয়েছে রাঙামাটি জেলায় বসবাস রত মানুষের। তবে স্কুলের শিক্ষা দান থাকায় বাচ্চা গুলো বেশ শুদ্ধ ভাষা ও রপ্ত করেছে। এক টা ছেলে বলল
” জী খুব ই মিষ্টি। ”
বিষয় টা ভালো লাগলো অভিনবর। দারুণ এক হাসি উপহার দিয়ে বলল
” বিক্রি করবে আমার কাছে? ”
বাচ্চা গুলো যেন চিন্তায় পরে গেল। রস বিক্রি করতে আসে নি তাঁরা। তাই এক আকাশ সমান আড়ষ্ঠতা জড়িয়ে বলল
” না মানে আমরা। ”
” আচ্ছা বিক্রি না করতে চাইলে সমস্যা নেই। ”
” জী করবো। ”
হাসলো অভিনব। বাচ্চা গুলো কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যদি ও খাবারের প্রতি বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে সে তবে প্রকৃতির মাঝে এলে সমস্ত নিয়ম বরফের মতো গলে শেষ হয়ে যায়। পকেটে বেশ অনেক গুলো হাজার টাকার নোট। সেখান থেকেই দুটো নোট নিয়ে ওদের হাতে তুলে দিলো অভিনব। মুখে বলল
” বাকি টা উপহার ভেবে নিও। ”
বাচ্চা গুলো উত্তর দিতে ভুলে গেছে যেন। অভিনব ও আর কথা বাড়ালো না। ফিরতি পথের দিকে অগ্রসর হলো।
ঘুম ভাঙার পর আশে পাশে কাউ কে না দেখে চোখ লাল হয়ে গেছে ঝিলের। পাশে থাকা ব্যাগ টা ও নেই। এই অজানা রাজ্যে কি করবে থাকবে সে? আর অভিনব নামক মানুষ টি ই বা কোথায় গেল। মানুষ টি বুঝি ভ্রম ছিলো ওর?
হাঁটু ভাঁজ করে সেখানে মুখে গুঁজে দিলো সে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। মনে হচ্ছে এই ইহজগতে কেউ নেই। সমস্ত জগতে একা, সম্পূর্ণ একা মানবী সে।
” এই সাহস নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছেন? ”
প্রিয় পুরুষ মানুষের কন্ঠে তাকালো ঝিল। অভিনবর বলা কথা টা তাঁর মস্তিষ্ক ঠিক ঠাক বুঝতে পারে নি। ওর অন্তকর্নে জমেছে অভিমান। যদি ও মানুষ টা কেবলি স্বপ্ন পুরুষ। তবু ও এক টা অজানা অধিকার অনুভব হলো। নাক টানা ভারী কন্ঠে উচ্চারণ করলো
” আমাকে একা ফেলে কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি? এমন টা করে কেউ। জানেন কতো টা ভয় পেয়েছিলাম আমি। ”
” কাল তো একাই এসেছিলেন ঝিল। ”
এবার যেন ওর মন, ধ্যান, জ্ঞান কথা টা শুনতে পেলো। এই বিশেষ বাক্যের কোনো উত্তর নেই এই মুহূর্তে। প্রসঙ্গ বদলানো জরুরি মনে হলো। বিনা সংকোচে বলল
” আমার ব্যাগ টা দিন। ”
” ওয়েট আপনি কি কোনো ভাবে ব্যাগ এর জন্য কান্না করছিলেন? ”
ঝিলের এই এক দোষ। সঠিক জায়গায় ভুল বাক্য প্রেরণ। অভিনব সুচালো দৃষ্টি ফেলে বলল
” কোনো ভাবে আপনি কি আমায় ”
লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার। অভিনব এবার হো হো করে হেসে উঠলো। স্বচ্ছ , প্রাণবন্ত , বসন্ত মুখর সে হাসি। বুকের বা পাশে হাত রেখে আনমনেই বলতে লাগলো ঝিল
” কন্ট্রোল, কন্ট্রোল , কন্ট্রোল। ডোন্ট পাবলিস ইউর ফিলিং আহানা মির্জা ঝিল। কন্ট্রোল ইউরসেলফ। ”
(৬)
বাড়ির পাশেই বসন্তের মেলা। অথচ ফারাবি সেটা তে ও যেতে পারবে না। ফারহান কড়া নির্দেশ দিয়ে গেছে সেই কারনে কারো সম্মুখে কান্না ও করতে পারছে না। বাগানের এক কোনে এসে মন মড়া করে বসে আছে। এদিকে ও কিছু লোক জমায়েত হয়েছে। খুব সম্ভবত বাড়ির পাশে নতুন ফোয়ারা তৈরির কাজ করবে লোক গুলো। বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে গেল ফারাবি। গেট দিয়ে বের হতেই চোখ গেল রোড এর অপর প্রান্তের দেয়ালে থাকা বিশাল নেইম প্লেট বরাবর। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা চৌধুরী প্যালেস। কেন যেন এই বিশাল আকারের নেইম প্লেট টা বার বার মনে করিয়ে দেয় এক বছর আগের কথা। যখন থেকে ফারহান নামক ভয়ঙ্কর মানব ওকে নিজের নামে দলিল করেছে। একদম ই অজানা সেই দিন। আহা কতোই না শান্তি তে কাঁটতো সময় গুলো। ভয়ঙ্কর মানব এসে কি না জল ঘোলা করে দিলো।
এক দল মেয়ে ভীষন সাজগোজ করে নেমেছে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নাচের অনুষ্ঠানে। তাঁর এক অন্যতম সদস্য ফারাবি। সাত দিন পাক্কা সাত দিন নাচের রিহার্সেল করেছে ফারাবি। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে মাঠে নেমেছে সে। গানের সুর বেজেছে মাত্র। দু একটা কলি নেচেছে ওমনি করে গান বন্ধ হয়ে গেল। সকলের দৃষ্টি মিউজিক বক্স এ। মাঝে মাঝে সিস্টেম এর গড়বড় হলে অফ হয়ে যায় গান। তবে আজ এমন টা হয় নি। কেউ ইচ্ছাকৃত গান বন্ধ করে দিয়েছে। বান্ধবী দের সাথে বিরক্ত প্রকাশ করছিলো ফারাবি। ওমনি করে শীতল এক পুরুষ হাত ওকে টেনে নিয়ে গেল মাঠের বাইরে। একটা কাক পক্ষী ও নেই। ফারহান কে দেখে অবাক হয়ে আছে ফারাবি। এক টানে মেয়েটির গলায় থাকা ফুলের গয়না খুলে ফেললো ফারহান। লেপ্টে দিলো চোখের কাজল। লিপস্টিক এর দিকে হাত বাড়িয়ে ও আবার নামিয়ে নিলো। ফারাবি বিহ্বল হয়ে আছে। ওর হাত দুটো টেনে ধরে দাঁত কামড়ে বলল ফারহান
” স্কুলের মাঠে নাচ দেখানো হচ্ছে? ”
বিনা বাক্যে তখনো দাঁড়িয়ে ফারাবি। ফারাবির হাত দুটো দিয়েই লিপস্টিক লেপ্টে দিলো। তবু ও ক্ষান্ত হলো না ফারহান। গাছের সাথে চেপে ধরলো। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি। ফারহানের চোখ জোড়া ভীষণ লাল। ক্রন্দন রত অবস্থায় ফারাবি বলল
” নাচ করা দোষের? ”
” যে মেয়ে নাচের সময় কস্টিউম এর দিকে খেয়াল রাখে না। অন্তত তাঁর কোনো অধিকার নেই নাচ করার। ”
আগ্নেয়গিরির মতো তাকালো ফারাবি। চোখ বন্ধ করে ফারাবির অর্ধ ন’গ্ন পিঠে হাত ছোয়ালো ফারহান। মেয়েটির চিত্ত কেঁপে উঠলো তৎক্ষনাৎ। চোখ দুটো নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। হতাশা ভরা চাহনি তে তাকিয়ে থেকে ফারাবি কে ছেড়ে দিলো ফারহান। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ফারাবির গাল। ফারহান নিজ কর্মের জন্য ব্যথিত তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে গাঁয়ে থাকা জ্যাকেট টা ছুঁড়ে দিলো। জ্যাকেটের স্টিলের বোতাম লেগে লাল হয়ে গেল ঠোঁটের কোন। তবে কোনো শব্দ করলো না ফারাবি।
” জ্যাকেট জড়িয়ে সোজা বাসায় যাবি। আর এক মুহূর্ত যেন এখানে না দেখি। ”
কোনো রকম উত্তর না দিয়ে জ্যাকেট জড়িয়ে হাঁটা লাগালো মেয়েটি।পথিমধ্যে বাঁধা দিলো ফারহান। হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল
” পরে ব্যাগ কালেক্ট করে নিবি। আপাততো রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে যাবি। বুঝেছিস?”
” হুম। ”
ফারাবির ধ্যান ভাঙে গাড়ির হর্নে। এক জোড়া গভীর চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভরকে গিয়ে হাসার চেষ্টা করলো সে। তারপর ই সোজা ছুট লাগালো বাসার ভেতর। ওর কান্ডে ফারহান ভ্রু কুঁচকে রইলো কিয়ৎক্ষন। গেট খুলে দিতেই গাড়ি নিয়ে চলে গেল নিজের বাসায়।
ফাহমিদা আর লাবিব কিছু টা গম্ভীর কন্ঠে মেয়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন
” তুমি কি ফারহান কে পছন্দ করো না?”
বাবা মায়ের এমন প্রশ্নের প্রকোপে জান যায় যায় অবস্থা ওর। লাবিব মেয়ের চোখের ভাষা বুঝতে না পেরে বললেন
” দেখো আমরা জানি ফারহান জেদি। সব সময় আগলে রাখার প্রত্যয় নিয়েই থাকে। অধিক শাসন ও করে। এটা খারাপ কিছু নয়। তবে তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছি আমরা। ফারহানের সাথে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে কিছু টা তবে কঠিন কিছু নয়। তুমি কখনোই বলো নি ফারহান কে পছন্দ করো কিংবা করো না। আর চুপ থাকা কে সম্মতি ধরাই হয়। তবে আজ আমি প্রশ্ন করছি জানার ইচ্ছেয়। বলো মন থেকে, আমরা তোমার কথা তেই মূল্য দিবো। ”
মানুষের মন মস্তিষ্ক সব সময় এক দিকে চলে না। ফারাবির মন বলছে বলে দে ফারহান নামক মানুষ টি কে পছন্দ করিস না তুই। আর মস্তিষ্ক বলছে বলিস না তাহলে তোর ক’ল্লা কাঁ’টা যাবে। ওর ভাবনা দেখে ফাহমিদা স্বামীর মুখ পানে তাকালেন।তিনি কিছু টা সময় স্থির থাকতে বললেন। ফারাবি ঠিক করে নিয়েছে সত্যি টাই বলবে যা হবার হবে পরে দেখা যাবে। ঠিক তখনি ফারহানের আগমন। ফারাবির দিকে না তাকিয়েই বলল
” চাচ্চু তোমাকে বড় চাচ্চু ডাকছে। বললো খুব ই জরুরি কিছু আলোচনা করবে। ”
” ওহ ভাই কি নিচে আছে? ”
” না আমাদের বাসা তে। ”
” আচ্ছা আমি তাহলে যাই। ”
লাবিব চলে গেলেন। ফাহমিদা ফারহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। বললেন
” আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি। ”
ফারহান নিঃশব্দে হেসে সম্মতি জানালো। ফাহমিদার সাথে সাথে ফারাবি ও যেতে নিচ্ছিলো তবে ফারহান হাত দিয়ে আটকে দিলো। ফারাবি শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে আওড়ালো
” শুরু হয়ে গেল অত্যা’চার। ”
ফাহমিদা বের হতেই ফারাবির হাত দুটো মুচরে ধরলো ফারহান। ব্যথা পেয়ে ফারাবি বলল
” আমার লাগছে ফারহান ভাইয়া। ”
” লাগার জন্য ই তো দিচ্ছি তাই না। ”
” সত্যিই ব্যথা পাচ্ছি আমি। ”
” তোর উত্তর টা বল। ”
” কিসের উত্তর? ”
” চাচ্চু কি জানতে চেয়েছেন?”
” জানি না আমি। এখন ছাড়ুন আমায়।”
ফারহান ছেড়ে দিলো। তবে আকড়ে নিলো নিজ বাহু ডোরে। শ্বাস রুদ্ধ কর অবস্থা। ছোড়াছুড়ি করছে ফারাবি। ফারহানের গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পরছে ওর চোখে মুখে। ফারহানের মনের ভেতর তোলপাড় চলছে। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নিজেকে নিয়ে চিন্তিত হলো সে। ছেড়ে দিলো ফারাবি কে। মেয়েটা নিজ কন্ট্রোল হারিয়ে পরলো কাউচের উপর। কোনায় পা লেগে সামান্য কেঁ’টে ও গেল। সেটা দৃশ্যমান হতেই ব্যস্ত হলো ফারহান। মেয়েটার পা হাঁটু তে নিয়ে বলল
” কোনো খেয়াল নেই না? সব সময় এমন ব্যাকুল হয়ে থাকিস কেন? এভাবে হুট হাট ব্যথা পাওয়া কিংবা উল্টো পাল্টা কান্ড করা যেন অভ্যাস হয়ে গেছে। মেয়েলি স্বভাব টা ও নেই একদম। ডাফার একটা।”
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে