বসন্তের_রঙ_লাল 08,09

0
345

#বসন্তের_রঙ_লাল 08,09
#ফাতেমা_তুজ
#part_8

(১৫)
মন খারাপের বাসা বেঁধেছে ঝিলের মনে। এই বির্দীন হৃদয় নিয়ে আর থাকা যাচ্ছে না। বসার ঘর থেকে উঠে চলে গেল সে। সকলের চোখে মুখে হাহাকার বিরাজ করছে। তবে কেউ কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া করলো না। প্রতি টা ব্যক্তি অপেক্ষায় আছে কখন মেয়েটা একটু স্থির আর স্বাভাবিক হবে। তবে এরা কি কেউ জানে স্বপ্ন পুরুষ নিজ হাতে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন টা ভেঙে দিয়ে চলে গেলে কেমন লাগে। উহু কেউ জানে না!

বিশেষ ধরনের কাগজের তৈরি একটি ডায়েরী ব্যবহার করে ঝিল। ডায়েরী টার বয়স প্রায় এগারো হতে চলেছে। খুব নাম করা ডিজাইনার কে দিয়ে ডিজাইন করা এটা। হিরক খচিত কলম দিয়ে নিজ স্বপ্ন পুরুষের নাম টা কেঁটে দিলো সে। বুক টা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। তবে সে যেন অভিপ্রায় করেই নিয়েছে রাখবে না অভিনব নামক কোনো অস্তিত্ব।
ডয়ারে রাখা একটি ছবির এলবাম। যাঁর পুরো টাই পূর্ন স্বপ্ন পুরুষের ছবি দ্বারা। খুব যত্ন নিয়ে সংগ্রহ করেছিলো সেটা। আজ সেগুলোর অন্ত ঘটাবে। গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। বহু কষ্টে ঝিল বলল
” কেন এতো ব্যথা দিলেন স্বপ্ন পুরুষ। এমন তো কথা ছিলো না। আমি তো স্বপ্নে স্বপ্নে ভেবে নিতাম স্বপ্ন পুরুষ এসে আমার বসন্ত রাঙিয়ে দিবে। চার পাশ হবে র’ক্তের মতো লাল। যেমন টা হয় ভালোবাসার প্রতিকের গাঢ় রঙ। অথচ আপনি আমার জীবনের সমস্ত রঙ এই বসন্তেই মুছে দিলেন। ”

ছবি থেকে কোনো উত্তর আসে না। জড় বস্তু কি করে কথা বলবে! ফায়ার বাকেটে অগ্নিশিখার ঢেউ খেলে যাচ্ছে। বাতাসের বেগ কম। তবু ও আগুন নড়া চড়া করছে। খুবলে খাবে এলবামে থাকা হাজার খানেক ছবি। একটা একটা করে জ্বালাতে লাগলো ঝিল। চোখ থেকে অথৈ সমুদ্রের মতো জল গড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষের অভিমান ভয়ঙ্কর হয়। সেই অভিমান মনের ভেতরে থাকা সুপ্ত অনুভূতি কে ও মুহূর্তেই হারিয়ে দিতে পারে। যাঁর উজ্জল দৃষ্টান্ত স্বপ্ন পুরুষের স্মৃতি মুছে ফেলা ঝিল।

আহনাফ খুব ব্যস্ত। তাই সে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে অবস্থান করছে। রোহনের ও পাত্তা নেই। নিশ্চয়ই বেরিয়ে পরেছে মৌনতা কে নিয়ে। একুশে ফ্রেবুয়ারি আজ। পশ্চিমা আকাশে হালকা হালকা হলুদ আলো। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মাহিন। ভাই বোন দের প্রতি খুব স্ট্রিক তাঁর আচারণ। এমন টা ছিলো না সে। তবে ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলা পোহানোর দরুন এভাবে পরিবর্তণ ঘটেছে তাঁর। হাসি খুশি থাকা টা যাঁর প্রকৃতি ছিলো। সেই মানুষ টাই আজ গুরু গম্ভীর। ট্রেরেস এ এসে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল
” এটা নিলে শরীর বল পাবে ভালো। ”

” আমি চা খাই না। জানো না? ”

” ফুলের চা এটা। ”

” ওহ রাখো টেবিলে পরে খেয়ে নিবো। ”

” আমার সাথে রাগ করেছিস বোন? ”

” রাগ করবো কেন? ”

” না মানে। আচ্ছা শোন না এখন তো খুব ভোর। আমি ছয় টায় বের হবো। তুই রেডি হয়ে থাকিস আমি অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবো তোকে। ”

” ইচ্ছে নেই। তোমরা যাও সবাই। ”

” আশ্চর্য! তুই না গেলে আমরা কি করে যাবো? ”

” সব কিছু কি আমার উপর ডিপেন্ড করে ভাইয়া। ”

থেমে গেল মাহিন। বুকে ভারী কিছুর আস্তরণ অনুভব হয়। ঝিলের মাথায় আদুরে স্পর্শ করে বলল
” অভিমান করে থাকা ভালো তবে অধিক অভিমান ভালো নয় বোন। রেডি হয়ে থাকিস। বিপরীত কিছু দেখলে ভাববো আমার প্রতি তোর ক্ষোভ জমেছে। ”

শর্ত দিয়ে চলে গেল মাহিন। ঝিলের ঠোঁটের কোনো তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। বড্ড ভুল করেছে কি না। জীবন টা ফুলে সাজানো কোনো বিছানা নয়, তা ভুলেই গিয়েছিলো বাবা চাচা আর ভাইদের এতো শত আদরে। তবে আজ খুব করে অনুভব হচ্ছে বড্ড বেশি সময় পার হয়ে গেল।

মাহিনের কাজ কর্ম টাই কেমন অদ্ভুত। অভিনব খুব বেশিই সংঙ্কায়িত। সে কিছু তেই আসতে চায় নি এই অনুষ্ঠানে। তবে মাহিন ছাড়তে নারাজ। ভারসিটি তে পড়া কালীন মাহিনের সাথে এক বার স্বাক্ষাৎ হয়েছিলো তাঁর। না দেখে রাস্তার মাঝ পথ দিয়ে হাটছিলো সে। অভিনব এসে নিয়ে যায় কিনারা তে। যদি ও বিদেশী গাড়ি চলাচল নিয়ে বেশ নিয়মকানুন রয়েছে। তবে মাঝ পথে হাঁটা কোনো ভাবেই উচিত নয়। ঐ এক দিন ই একটু হায় হ্যালো হয়েছিলো। তখন মনে হয়েছিলো মাহিন নামের ছেলেটি খুব ই গম্ভীর। তবে এখন ধারণা বদলে গেছে। মুখমন্ডল আবরণে থাকবে এমন বৃহদাকারের মাক্স পরেছে সে। যাতে করে কারো নজরে না আসে। এমনি তেই সংবাদ মাধ্যম গুলো তে বাংলাদেশে আসার সংবাদ প্রচার হয়ে গেছে।
” মাহিন শোনো না। ”

ফোন কেঁটে চলে এলো মাহিন। চারপাশে তাকিয়ে বলল
” একি অভিনব ভাই। আপনাকে কেউ সফট ড্রিঙ্কস দেয় নি। ওয়েট আমি দেখছি। ”

” মাহিন সেটা নয়। ”

” একটু ওয়েট। রাজিব, এই রাজিব এখানে একটা সফট ড্রিঙ্কস দিয়ে যা তো। হ্যাঁ ভাই তো কি বলছিলেন। ”

” আমি চলে যেতে চাচ্ছি এখন। বুঝতেই পারছো থাকা টা রিক্স। ”

” আরে কিছু হবে না। এই প্রথম বাংলার মাটি তে বাঙালি উৎসবে এসেছেন। আর এখনি চলে যাবেন? উহুহ। পেট পুরে খেয়ে দেয়ে একে বারে ভুরি বানিয়ে দ্যান যাওয়া হবে। ”

কি সব যুক্তি দিয়ে চলে গেল মাহিন। সফট ড্রিঙ্কস এর গ্লাস নাড়াচাড়া করতে করতে চোখ গেল বাইরের গেটের পথে। শাড়ি পরে এসেছে ঝিল। তাঁর পাশেই মৌনতা ব্যস্ত হাসি ঠাট্টা করতে। চোখ নামিয়ে নিলো অভিনব। ঝিলের বলা কথা গুলো কেমন যেন কানে বাজে প্রায় সময়েই। মনে হয় মেয়েটির বলা কথা গুলো প্রতি ক্ষনে ক্ষনে
শেষ করে দেয় ওকে। যা সহ্য করা খুব ই কষ্টকর।

(১৬)

ঘুম থেকে উঠেই চোখ দুটো নিমজ্জিত হলো ঘড়ির কাঁটায়। সময় বারো টা। চোখ দুটো পিট পিট করে তাকিয়ে লাফ দিয়ে উঠলো ফারাবি। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। তবে কোনো রকম ডাক পরে নি। মন খারাপ নিয়ে ছুটে এলো ড্রয়িং রুমে। কেউ নেই বাসাতে। আশে পাশে কারো ছায়া ও দেখা যাচ্ছে না। দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানালেন রিমি দের বাড়ি গিয়েছে সবাই। হঠাৎ এক যোগে সকলের যাওয়া টা হজম হচ্ছে না। তাই একটু ভেবে নিয়ে ছুট লাগালো সেই পথে।
ড্রয়িং রুমে থাকা প্রতি টা মানুষ তাকালো ওর দিকে। সবাই নিজস্ব চেনা অংশ। তবু ও ভরকে গেল ফারাবি। তুতলে গিয়ে বলল
” রিমি, রিমি কোথায়? ”

” উপরে। ”

সবাই আবারো ব্যস্ত হয়ে পরলো। কোনো বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করছে। কেমন যেন সন্দেহের গন্ধ পেল। করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করলেই রিমি এসে নিয়ে গেল ঘরের ভেতর।
” এমন করে নিয়ে আসলি কেন? ”

” তুই কি আমার ভাইয়া কে ভালোবাসিস না? ”

” হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন? ”

” প্রয়োজন আছে বিধায় এমন প্রশ্ন করেছি। বল না ফারাবি তুই কি ভাইয়া কে একটু ও পছন্দ করিস না? ”

” দেখ রিমি। আমি একদম মন থেকে বলতে গেলে ওনার প্রতি আমার কোনো ফিলিং নেই। হ্যাঁ ওনি সম্পর্কে আমার ও ভাইয়া হয়, তাছাড়া মানবতার খাতিরে যতো টুকু মায়া ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই। এর বেশি কিচ্ছু না। বিশ্বাস কর এই পরিবারের বাকি সদস্যদের যতো টা ভালোবাসি আমি, তাঁর এক অংশ ও ওনার প্রতি নেই। এমন কি মাঝে মাঝে আমি অসহ্য হয়ে যাই। ফারহান ভাইয়া কে দেখলে আমার শরীর জ্বালা করে। মনে হয় কোথাও চলে যাই। ”

ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে রিমি। ফারাবি আঁতকে বলল
” তুই কাঁদছিস কেন দোস্ত! ”

” ভাইয়া। ”

” কি হয়েছে? হঠাৎ করেই ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেন। কোথায় তিনি। ”

হাত সামনে ঘুরিয়ে দেখালো রিমি। ব্যলকনির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান। মুখ টা কেমন জীর্ণ শীর্ণ হয়ে আছে। ফারাবি ভয় পেলো এই বুঝি ফারহান নামের অসহ্যকর প্রানী তাকে বকে দিবে।

” ভাইয়া আসলে। ”

” কি হয়েছে রিমি রানী। চোখে জল কেন বোন? ”

আদুরে হাতে রিমির চোখের অশ্রু বিন্দু গুলো মুছে দিলো ফারহান। হাতের আঙুলের সাহায্যে ঠোঁট প্রসারিত করে দিয়ে বলল
” টেইক ইট ইজি ডিয়ার। এমন নয় যে পৃথিবীর সব কিছু আমি পাবো। তাছাড়া এখন তো আমি ও অতিষ্ঠ হয়ে পরেছি। হ্যাঁ এক টা সময় আমার মনে একটা ফিলিং ছিলো কারো জন্য। ”

” ছিলো মানে? আর এখন, এখন নেই কোনো অনুভূতি নেই ভালোবাসা।”

স্মিত হাসলো ফারহান। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে ফারাবি। সব কিছু বোঝার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সে। হতাশা লুকিয়ে ফারহান বলল
” না এখন নেই। আমি শাসন করতে পছন্দ করি। তাই শাসন করতাম কাউ কে। এক টা সময় মনে হয়েছিলো শাসন টা কে আরেকটু প্রশ্রয় দিয়ে একটা নাম দেই। বাট এখন সেটা শুধুই অতীত আমার কাছে। আমি বুঝতে পারি নি আমার করা শাসন গুলো কারো এতো টাই নিকৃষ্ট লাগবে। তাছাড়া কোনো রকম অধিকার তো নেই আমার। সকলের মতো আমি ও চাই এই ভাঙা সম্পর্কের ভিত্তি কে পুরো পুরি ভেঙে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। ”

” ভাইয়া তুমি। ”

ফারহান কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো রিমি। ফারাবির মাথায় এখনো কিছু যাচ্ছে না। সে বিহ্বল হয়ে গেছে ফারহান নামক ভয়ঙ্কর মানবের ভয়হীন আচারনে। রিমি কে বুঝ দিয়ে চলে গেল ফারহান। এই অহেতুক সম্পর্কের ইতি এসে দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ করে যাচ্ছে। শেষ করতেই হবে এই সম্পর্ক টা।

মনিকার সাথে রিফাতের মনোমালিন্য চলে সর্বদা। আজ ও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। তবে দুটো মন ভার হয়ে আছে। সকলের জানা ফারহানের পাগলামি সম্পর্কে। হঠাৎ করেই এভাবে সম্পর্ক ভেঙে দিতে রাজি হবে তা সবার কল্পনার বাহিরে।
” তোমার কি এমনি মনে হয় রিফাত? ”

” কেমন? ”

” ফারহান ভাইয়া সত্যিই ভেঙে দিবে এই সম্পর্ক। ”

” হুম। যা তৈরি হবার নয় তা নিয়ে পরিকল্পনা করা বৃথা সময় নষ্ট মাত্র। ”

” কিন্তু এতো ভালোবাসার সব চেষ্টা বিফলে যাবে। ”

” অবুঝের মতো কথা বলো না মনিকা। এক পাক্ষিক ভালোবাসার পরিণতি খুব সুখের হয় না। ”

” কিন্তু। ”

” আমি আর একটা ও কথা শুনতে চাই না মনিকা। ফারাবির জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখো একবার। বুঝতে পারবে কতো টা যন্ত্রণা। আমরাই ভুল ছিলাম এতো দিন। ”

নিজ ভুল বুঝতে পারে মনিকা। তবে অন্তকর্নে এ কথা জানান দিবে কি করে? মন তো চাচ্ছে না এমন টা। প্রিয় মানুষ গুলোর যন্ত্রণা এমন ভাবেই হাহাকারের জন্ম দেয়।

গিটারের শব্দে করুণার সুর। পাশেই জ্বলন্ত রয়েছে আগুনের বাকেট। হালকা হালকা উষ্ণতায় বেশ মনোরম পরিবেশ। ফারহানের চোখে পানি নেই। অথচ এই অসময়ে প্রচন্ড চিৎকার করার কথা। রাফাজ খুব যত্ন সহকারে ভাই কে অবলেকন করলো। তবে বিশেষ কিছু আন্দাজ হলো না।
” কিছু বলবি ভাই? ”

” হুম বলবো। ”

” এই চেয়ারে না, বেঞ্চে বস। ”

” গিটার বাজানো থামালি কেন? ”

” এমনি তেই ভালো লাগছে। বল না কি বলবি বলে এসেছিস। ”

” তুই কি নিশ্চিত ভাই? ”

” কোন বিষয়ে? ”

” বুঝে ও না বোঝার ভান করিস না ফারহান। ”

গিটার ছেড়ে উঠে গেল ফারহান। একা থাকলে মন হয় ভারী। আর কেউ কাছে এলে বুকে বাঁধে যন্ত্রণার বাসা।

” বলবি না আমায়? ”

” বলার কিছু নেই তো ভাইয়া। দেখ একটা সম্পর্কের ভিত্তি ঠিক না থাকলে সেটা এমনি তেই টিকে না। আমি চাই না একটা সুন্দর সম্পর্ক সারাজীবন ভুলের মাঝে বেঁচে থাকুক। তুই তো বিজ্ঞানের খুব ভালো ছাত্র। আর এই টা জানিস না ভিত্তি ভুল হলে কোনো ভাবেই সেটার সমাধান মিলে না। ”

” তোর সাথে কথায় পারে কে। ”

” এখন বাদ দে তো সেসব। আগে বল তো কফি খাবি কি না। ”

” তুই বানাবি! ”

” অফ কোর্স। আমি অনেক ভালো কফি বানাই। তোর থেকে ও ভালো। ”

” ভাব তাই না! ওয়েল তো হয়ে যাক বেস্ট কফি মেকিং চ্যালেঞ্জ। ”

” অভিয়াসলি। চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড ব্রো। বি রেডি ফর ইনড। গেইম টা আমিই জিতবো। ”

” দেখা যাবে। ”

” হু দেখে নিবেন স্যার। আমি যাবো আর আসবো। ”

উৎফুল্লতা নিয়ে কিচেনের দিকে গেল ফারহান। বেঞ্চ ছেড়ে দোলনায় বসে পরলো রাফাজ। এখান থেকে চাঁদ কে খুব সুন্দর লাগে। এমন টাই যুক্তি ফারহানের। তবে চাঁদ টা কে সেটা নিয়েই যতো প্রশ্ন। সৌর জগতের সেই চাঁদ নাকি বাস্তব জীবনের চাঁদ। যেখান থেকে খুব সুন্দর নজরে আসে মানুষ চাঁদের ঘর।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

চলবে

#বসন্তের_রঙ_লাল
#ফাতেমা_তুজ
#part_9

(১৭)
ফারাবির সম্মুখে ছুটে এলো ফারহান। খুব ব্যস্ত দেখাচ্ছে তাঁকে। কিছু টা রাগ হচ্ছে তাঁর। তবে ফারহান কে বলার মতো কোনো ভাষা অন্তরে থাকা যন্ত্র গুলো খুঁজে পায় না। ফারাবির কথা বলতে হয় না। ফারহান ই শুরু করলো।
” স্যরি ফারাবি। ”

” হঠাৎ! ”

” এতো দিন ধরে তোর স্বাধীনতায় আঘাত করার জন্য। ”

” ও ঠিক আছে। ”

ফারহান তাকিয়ে রইলো প্রিয়তমার পানে। ফারাবি সামান্য বিব্রত হয়ে বলল
” আর কিছু বলবেন ফারহান ভাইয়া? আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। টেস্ট এক্সাম হচ্ছে। ”

” উফস স্যরি। বেশি সময় নিচ্ছি না। দুটো কথা বলবো জাস্ট। ”

” জী বলুন। ”

” আমি সবাই কে বলে দিয়েছি এই অহেতুক সম্পর্ক টা রাখবো না। আর না কখনো কষ্ট দিবো তোকে। আই মিন তোর কাজে বাঁধা দিবো না। ”

” জী। ”

” হুম মূল কথায় আশা যাক। হয়তো তুই ভেবেছিলি আমি তোকে মুক্তি দিলে ও আচারণ আগের মতোই বলিষ্ঠ রাখবো। বাট এখন জানাচ্ছি তোর লাইফে কিঞ্চিত পরিমাণে যাবো না আমি। আর তোর ইচ্ছে মতো চলতে পারিস তুই। কারো সাথে রিলেশনে গেলে ও প্রবলেম নেই আমার। ”

বাক হীন ফারাবি। উক্তি গুলো সত্যি নাকি সেটা বোঝার জন্য আলতো করে চিমটি কাটলো হাতে। ব্যথা অনুভব হয়েছে তাঁর মানে সমস্ত টাই সত্যি। ভেতর থেকে প্রফুল্লতা আসতে চায়। মন চায় সমস্ত কিছু ছড়িয়ে ইচ্ছে মতো নাচতে।তবে ভয় আর ভদ্রতা বলে ও তো একটা কথা আছে তাই না।
” আচ্ছা যাচ্ছি আমি। শুভ কামনা মুক্ত জীবনের জন্য। ”

মাথা ঝাঁকালো ফারাবি। কয়েক পা যেতেই ফারহান বলল
” তুই বোধহয় জানিস না আমি শহর থেকে চলে যাচ্ছি। ”

” মানে? ”

” কক্সবাজারে চলে যাচ্ছি। সেখানে রেস্তরা রয়েছে আমার বন্ধুর। কিছু দিন থেকে বুঝে নিবো বিজনেস টা। দ্যান ইউ কে চলে যাবো। ”

স্তব্ধ হয়ে রইলো ফারাবি। ফারহান বহু পূর্বেই হাঁটা লাগিয়েছে। মন টা কিছু টা মলিন তবে ভেতর থেকে শান্তি অনুভব হলো। এই পৃথিবী তে লড়াই করে বাঁচতে হয়। যদি লড়াই করার ক্ষমতা না থাকে তো পিছিয়ে যাওয়াই উত্তম। ফারহান পিছিয়েই যাবে।

পরীক্ষা দিয়েই কোচিং এ পা বাড়িয়েছে ফারাবি। মন টা ভীষন ভালো আজ।পুরো কোচিং টাইম খুশি তে আত্মহারা হয়ে রইলো। রিমি এখন তাঁর পাশে বসে না। অভিমান হয়েছে খুব। যদি ও অনুচিত এই অভিমান তবে ভাইয়ের কষ্ট টা অনুভব করতে পারে সে। কোচিং শেষে রিমির কাছে গেল। না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে মেয়েটা। পথিমধ্যে বাঁধা হলো ফারাবি। রিমির বাঁকা দৃষ্টি যেন খুব অসহ্য লাগছে তাঁর।
” দোস্ত এমন করছিস কেন? ”

” আমার ভালো লাগছে না। পরে কথা বলি? ”

” এড়িয়ে চলছিস আমায়! ”

” হয়তো। ”

এড়িয়ে চলার প্রশ্নে এতো সহজ জবাব দেওয়ায় ফারাবির চোখ থেকে অশ্রু নির্গত হতে লাগলো। কিছু তেই সেই অশ্রু থামছে না। ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছে একদম। নাক টা অসম্ভব লাল হতে শুরু করেছে। প্রিয় বান্ধবীর এমন প্রত্যাখান মেনে নিতে পারছে না।

কড়া শাসন করা হলো রিমি কে। ফারহান খুব বিচিত্র ধাঁচের মানব। বুঝতে পারে না এই ভাই নামক মানুষ টি কে। ফারাবির প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্তে ও কেন ছেড়ে দিতে হবে অবলীল ভাবে। রিমি অন্ধ বটে। তবে চোখ নেই এমন নয়। ভাইয়ের কষ্টে অন্ধ সে।খুব অভিমান হলো তাঁর। যাওয়ার পূর্বে ঘরে এলো ফারহান। রিমি তখন নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে বাগানে থাকা শিউলি ফুলের দিকে।মনোযোগ পেতে খ্যাক করে শব্দ করলো ফারহান। রিমি জানে আসবে তাঁর ভাই। মনে মনে অনেক কথাই জমিয়ে রেখেছে। তবে এখন কোনো শব্দ নেই মানসপটের শব্দ ভান্ডারে।
” রাগ করেছিস? ”

” না। ”

” জানি কষ্ট পেয়েছিস। বাট বিশ্বাস কর আমি ও দেখতে চাই কতো টা উড়তে পারে আমার ভয়ে কুঁচকে থাকা ফারাবি। ”

” যদি সত্যিই উড়ে যায়। ”

” যাবে না। ”

” যেতে ও তো পারে ভাইয়া। ”

” উহু পারবে না। আমি এখনো অনুভব করি ফারাবি আমার প্রতি দূর্বল। তোর ভাই কি এতোই বোকা রে পাগলী? ”

” আমার মনে হয় তুমি কষ্ট পাবা ভাইয়া। ”

রিমি কাঁদছে। নাক লাল হয়ে গেছে অনেক টাই। হেসে হেসে কথা বলা মেয়েটির মুখে কান্না একদম ই মানায় না। বাঁধা দিলো না ফারহান তবে জানালো ফারাবির প্রতি কড়া নজরদারি রাখবে সে। কিন্তু কোনো কর্মে বাঁধা দিবে না। এসব সান্ত্বনা ছড়িয়ে দিয়ে কোথাও একটা চাপ অনুভব হলো। ভয় নেহাত ই কম নয়। ফারাবি কে নিয়ে আজকাল বড্ড ইনসিকিউর ফিল হয়।

(১৮)
ফারহানের মুখচ্ছবি তে রঙের ইষৎ বদল ঘটেছে বই কি। সামনে থাকা সু পুরুষের দিকে তাকাতে কেমন লজ্জা লাগছে। অভিনব বিচক্ষণ মানুষ বটে। ঘটনায় রস আনার প্রয়োজনে মারাত্মক শব্দ করে হেসে উঠলো। এতে অবশ্য ফারহানের লজ্জা কমলো না একটু ও। বরং আরেকটু নুইয়ে গেল। জীবনে প্রথম বারের মতো নার্ভাস হচ্ছে সে।
” আমার জানা মতে ভ্রমণ পিপাসু তো নন আপনি মিস্টার ফারহান চৌধুরী। ”

” হ্যাঁ সঠিক বলেছেন। তবে ভ্রমণ আমার আত্মার অংশ বিশেষ। ”

” সেটা ও ভুল বললেন বোধহয়! ”

” না মানে আসলে আমি ট্রাভেলিং সম্পর্কে আগ্রহ বোধ করি। সেই কারনেই আসা। ”

” বিষয় টা হজম হচ্ছে না সঠিক। ”

ফোঁস করে দম ফেললো ফারহান। এতো নার্ভাস কখনোই অনুভব হয় নি। তবে বলা বাহুল্য অভিনবর মতো সু পুরুষ আর মিষ্টি ভাষীর কাছে এসে এক ধাপ পিছিয়ে গেছে সে। অথচ বিগত বছর গুলো তে কতো বড় বড় আর্টিস্ট এর সাথে স্বাক্ষাৎ হয়েছে তাঁর। সবাই কে সাবলীল ভাবে গ্রহন করেছে। কিন্তু এবার যেন ঘেঁটে যাচ্ছে সব। ভালোবাসা মানুষ কে কতো দূর্বল করতে পারে সেটা যেন ফারহান কে দেখেই বোঝা যায়।
” ব্যস্ত হবেন না। আমরা লাঞ্চ সেড়ে তারপর আলোচনা করি? আসলে ট্রাভেলার্স তো তাই ক্ষিদে পায় বেশি। ”

শেষোক্ত কথা তে রসিকতায় ভরপুর। ফারহান সহজ হলো। নিজের একটা আলাদা অভিব্যক্তি রয়েছে। যাঁর কারনে সর্ব ক্ষেত্রে উজ্জল হয় তাঁর নাম। কয়েক টা শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হলো সে। হাঁক ছেড়ে ডাকলো কাউকে। গাঁয়ে থাকা কস্টিউম বলে দিচ্ছে পাঁচ তারা হোটলের ম্যানেজার হবেন তিনি। অভিনব খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টি তে দেখলো ফারহান কে। অত্যন্ত রগচটা আর সুদর্শন উপাধি দেওয়া বাহুল্য।
খাবার খাওয়ার সময় এক টা টু শব্দ হলো না দুজনের মাঝে। খাবারের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শেষ করলো তাঁরা। জানালা দিয়ে মৃদু সমীরণ স্পর্শ করে যাচ্ছে দুজন কেই। অভিনব অপেক্ষা করে যাচ্ছে ফারহানের বার্তা শ্রবণের জন্য। তবে ছেলে টা যেন কঠোর কিছু সাজাচ্ছে।

আর ও কিছু টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অভিনব ই শুধালো
” আমরা কি আলোচনায় আসতে পারি মিস্টার ফারহান? ”

” জী অবশ্যই। প্লিজ সিট। ”

কন্ঠে তেজ নেই আর না আছে ভয়। বেশ ভালো করেই নিজেকে সামাল দিয়েছে ফারহান। ওয়েটার এসে ধোঁয়া উঠা কফি রেখে গেল। নিজ হাতের সাহায্যে সামনে কফি এগিয়ে দিলো ফারহান। স্মিতহাস্য অধর কাঁপিয়ে বাহবা দিলো অভিনব।
” খুব ভালো করেই রপ্ত করেছেন নিজের পার্সোনালিটি ধরে রাখার। ”

” ধরে নিতে পারেন তেমন টাই। হয়তো ভাষা খুব সাবলীল নয় আপনার মতো। তবে শতেক মানুষের ভিরে একটু নমনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা থাকে সব সময়। ”

” খুব ভালো বলেছেন। তা এখন কি বলা যায় আমার সাথে জরুরী ভিত্তিতে মিট করার কারন। ”

” এক্সচেলি সমস্যা টা খুব অদ্ভুত। হয়তো এর জন্য আমাকে পাগল প্রেমিক উপাধি দিতেই পারেন। তবে আমি খুব সিরিয়াস।”

” আপনার মুখের রঙ দেখেই বোঝা যায়। সমস্যা নেই সংকোচ হীন ভাবে বলুন সব টা। বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু আপনার ব্যাক গ্রাউন্ড জেনেই এসেছি। ”

সামান্য হাসলো ফারহান। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। অভিনব সোশ্যাল জগতের জনপ্রিয় মুখ। সে যে কারো সাথে দেখা করার পূর্বে শতভাগ না হলে ও অনেকাংশেই জেনে নিবে।
” মূল কথায় আসি? ”

” ইয়া ইয়া সিউর। ”

” আসলে আমি একজন কে ভালোবাসি। বলা যায় খুব বেশিই ভালোবাসি আর সেটা ও বহু পূর্ব থেকেই। তাঁর প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাই আমি। কারণ আমাদের চার পাশ টা ভালো নেই। নানান আঙ্গিকে থাকা লোকজন মুখোশ পরে আছে। সে জন্য শাসন বারণ করি কিছু টা। এর একটাই কারণ তাঁকে আগলে রাখা। ”

” আর সেই কারনেই সে আপনাকে পছন্দ করে না তাই না? ”

” বিষয় টা এমন নয়। আমি শত ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি তাঁর মনে আমার জন্য জায়গা আছে। তবে কিছু তেই সেটা উপলব্ধি হচ্ছে না। তাছাড়া আমি তাঁকে স্বাধীনতা দেই না এটাই সব থেকে বড় সমস্যা। ”

” আচ্ছা এটা তো খুব সহজ বিষয়। তাঁকে সহজ ভাবে আগলে রাখুন। ”

” সমস্যার অন্ত নেই। কারণ সে বিখ্যাত ট্রাভেলার্স অভিনব সরকার ইহান কে স্ব ঘোষিত ভাবে মন প্রাণ দিয়ে দিয়েছে।”

” ওয়াও। অঘোষিত ভাবে আপনাকে পছন্দ করলে ও আমার প্রতি ফিলিং কাজ করে তাঁর? ”

অট্রহাসি তে ফেটে পরলো অভিনব। প্রচন্ড বিরক্ত হলো ফারহান। কিছু টা ইমেজে আঘাত হানলো সেটা। চোখ মুখ শক্ত করে উঠে যেতে নিলেই বাঁধা প্রদান করলো অভিনব।
” সে যে আমাকে ভালোবাসে না মিস্টার ফারহান এটা খুব ভালো করেই জানেন আপনি। নেহাত ই ভয় পাচ্ছেন সেই কারনেই দেখা করতে চলে এসেছেন। বোঝা যায় তাঁকে নিয়ে কতো টা সিরিয়াস আপনি। প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ আপনি। আপনার ব্যাক গ্রাউন্ড তেমন টাই বলে। সহসা কারো সাথে দেখা করেন না। সেই আমি টার কাছে এসে কিছু টা নিচু হয়েছেন শুধু মাত্র প্রণয়ের কারনে। কারণ আপনার অন্তরে ভয় হয়। যা থেকে মুক্তি চান আপনি। ”

” বিষয় টা তেমনি। ”

ফারহানের মুখে দীর্ঘ শ্বাস। অভিনব বুঝতে পারে সবটাই। যদি ও মেয়ে মানুষের মন বোঝা সহজ কথা নয়। তবু ও অভিনব বলল
” আর একটা কথা সব সময় শাসন বারনে ভালোবাসা প্রকাশ হয় না। কিছু সময় ডানা ঝাপটা দেওয়ার সুযোগ দিতে হয়। যা ইতো মধ্যেই করেছেন আপনি। যা আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। ”

ফারহান এবার বসলো। অভিনব খুব সহজ মানুষ। তবে ফারহানের মতো রগচটা মানুষ এসবে অভ্যস্ত নয়। দুজনের মাঝে কিছু কথা হলো। অভিনব খুব ভালো করে লক্ষ্য করলো ফারহানের নিশ্বাস গুলো। ফারাবির কথা বলার সময় অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে তাঁর হাত, আর অধরে মিশে আছে প্রণয়ের গভীরতা। ভালো লাগলো বিষয় টা। তাঁর থেকে ছোট একটা ছেলের মনে এতো এতো আমেজ মিশে আছে। যেন রঙিন বসন্ত তাঁর জন্মগত অধিকার। আর এদিকে ওর মন টা শীতের প্রকোপে ঢেকে যাওয়া গাছ পালার মতো। সজীবতা আছে তবে লুকায়িত বরফের ঢালে। খুব করে ইচ্ছে হলো ফারহান নামক মানুষটির কাছে প্রশ্ন করতে ” প্রণয়ের অনুভূতি কেমন হয়। ”

ইদানিং বেশ ক্লান্ত হয়ে থাকে ঝিল। মন মেজাজ সব টাই থাকে উগ্র। ভাইয়েরা সব টাই লক্ষ্য করেছে। তবে এমন ভাবে গুটিয়ে যাওয়া মানুষ টা কে অচেনা লাগে খুব। রোহন ব্যথিত হয় প্রায়। তবে কিছু করার মতো শক্তি নেই তাঁর। মৌনতার সাথে এক চোট লেগেছে তাঁর। এর বড় অংশ জুড়ে ঝিল। তবে কি করে বোঝাবে ঝিল কে একা ছাড়া মানে খড়স্রোতা নদী তে ভাসিয়ে দেওয়া।

রাতের তারা গুনে চলেছে ঝিল। বিষয় টা খুব ই মজা। এক দুই তিন করে সহস্র তারা গুনে ফেলার পর ও দেখা যায় অন্তরীক্ষে নাম না জানা আরো তারা জমায়েত হয়েছে। এদের অন্ত নেই যেন। বাতাবরণ খুব ঠান্ডা নয়। তবে বাতাসে মিশে আছে ফুলের সুভাস। যা হীম করে যায় লোমকূপ সহ অস্থিমজ্জা অব্দি। হঠাৎ করেই ফিস ফিস করা কন্ঠ ভেসে আসে।
” আপনি কি এমন ভাবেই দুঃখ ছড়াবেন দুঃখবিলাসী। ”

পেছন ঘুরে ঝিল। উহু কেউ নেই আশে পাশে। তবে এতো তাজা ছিলো কেন এই অনুভূতি। কেন মনে হলো স্বপ্ন পুরুষ এসে মাদকতা ছড়িয়ে গেল মানসপটে লুকিয়ে রাখা বসন্তে!

নদীর তীর ঘেঁসে বসেছে ফারহান। পাশেই কতো গুলো কংক্রিটের কনা। এক টা একটা করে ছুঁড়ে যাচ্ছে অদৃশ্য লক্ষ্য তে।
অভিনব এসে বসলো পাশে। দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছে বেশ। যদি ও বয়সের ফারাক তিন বছরের মতো। তবে কথায় আছে মনের মিল থাকলে আশি আট এ ও বন্ধুত্ব গড়ে।
” কথা বলেছো ফারাবির সাথে? ”

” উহু। ”

” বলা উচিত ফারহান। ”

” থাকুক না নিজের স্বাধীনতায়। ”

” স্বাধীনতা মানে এমন নয় যে আকাশ পাতাল দুরুত্ব রাখতে হবে। বন্ধুত্ব গড়ে নিচ্ছো না কেন তাঁর সাথে। ”

দারুণ হাসলো ফারহান। চোখের কোনে জমেছে পানির কনা। অভিনব বুঝতে পারলো ভেঙে পরেছে ছেলেটা। অথচ এমন টা হওয়ার কথা নয়। নারী যেমন সাফল্যের কারণ তদ্রুপ ধ্বংসের মাধ্যম ও বটে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here