বসন্তের_রঙ_লাল #part_14

0
408

#বসন্তের_রঙ_লাল
#part_14
#ফাতেমা_তুজ

( ২৭)
হিটার থেকে কবোষ্ণ সমীরন এসে সকল কে উষ্ণতায় আচ্ছাদন করে যাচ্ছে। এতো সময় পর যেন সকলের প্রান সচল হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে কাউচ থেকে উঠে বসলো মনিকা। অন্য দিকে ঘুমে টলে যাচ্ছে রিমি। সকলের মাঝে নিজেকে এক মাত্র নিরামিষ মনে হয়। এতো গুলো জোড়া শালিকের মাঝে নিঃসঙ্গ অবলা সে। অন্তরালে ঈর্ষা জমা হলো। সাথে রাগ ও হলো খুব। তবে বড় ভাইয়ের কাছে নিজ মুখ ফুটে প্রেমের বার্তা কি করে প্রকাশ করবে! এতো দৃঢ় চেতনা নেই তাঁর।
” এই রিমি উঠ। ”

” আরেক টু ঘুমাতে দাও আপু। ”

” সকাল হয়ে গেছে বোন। সেই কখন থেকে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস। রুম পেয়ে গেছি আমরা, ঘরে গিয়ে রেস্ট নিবি। ”

” রুম পেয়ে গেছি? ”

” হু। ”

রিফাত চাবি বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। মনিকা আর রিমি টলমলে শরীর নিয়ে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের পথে অগ্রসর হলো।

ঝিল আর ফারাবি এক রুমেই অবস্থান করেছিলো কাল। দুজনের মাঝের সম্পর্ক টা এখন আরো গাঢ় হয়েছে। নিজেদের বাচ্চা কালের সমস্ত গল্প মেপে নেওয়া শেষ মুহুর্তেই। এই ফাঁকেই অভিনব আর ফারহান বিশেষ প্ল্যান করে মনিকা, রিফাত , রিমি, রোহন আর মৌনতা কে নিয়ে এসেছে রিসোর্ট এ। যা সম্পর্কে ওদের দুজনের কেউ ই অবগত নয়। অভিনব কে ঝিলদের রুমে পাঠিয়ে ফারহান গেল বিশেষ কিছু কার্য সম্পূর্ন করতে। সব কিছু দেখতে হয় তাঁকে।অভিনব বের হলেই সমস্যা। মৌমাছির মতো মানুষেরা এসে ভীর করে।
ঠক ঠক আওয়াজ করার পর ও ঝিল বা ফারাবি রুমের দরজা খুললো না। ফারাবির ফোন থাকলে ও নাম্বার টা নেই। আর ঝিলের ফোন নিয়ে আসা হয় নি। অগত্যা তাঁকে কাউন্টার থেকে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে এসে ভেতরে প্রবেশ করতে হলো। একে অপর কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে দুজন। বিষয় টা তে জেলাস হলো অভিনবর। প্রিয়তমা কে কাছে পাওয়ার বাসনা অপেক্ষায়মান তীর তীর করে বাড়তে শুরু করেছে। কোনো মতে নিজের এডাল্ট অবুঝ মন কে বুঝ দান করে দুজন কে টেনে তুললো।
” এভাবে টেনে তোলার কোনো মানেই নেই অভিনব। ”

” সকাল সাড়ে সাত টা বাজে সে দিকে খেয়াল আছে। ”

” মাত্র? ”

” এই তুমি কি সত্যিই প্রকৃতি প্রেমি! নতুন ইতিহাসের সৃজন করবে দেখছি। ”

” হু। ”

বসে বসে ঘুমাতে লাগলো ঝিল। অন্য দিকে ফারাবি তো কানে বালিশ চেপে আছে। মেয়েটার কান থেকে টেনে বালিশ সরিয়ে দিলো অভিনব। বিরক্তিতে ফারাবির চোখ মুখের রেখার বদল ঘটেছে।
” ছোট বোনের ঘুম ভাঙানোর জন্য স্পেশাল মানুষ দরকার হবে বোধহয়। ”

” বজ্জাত লোক টার কথা বলিয়েন না ভাইয়া। ”

ঝিল চমকে গিয়ে বলল
” ওয়াও এতো উন্নতি হয়েছে। ক্রাশ থেকে ভাই। ”

” হবার ই কথা। না হলে মেয়েটার মাথায় একটা চুল থাকবে নাকি? ”

” আমি মোটে ও তেমন নই। ”

” বোঝা যায়। ”

” বেশি বুঝো তুমি। ”

দুজনের খুনসুটির কারনে ফারাবির ঘুম চলে গেছে। মলিন মুখে হাই তুলে ওয়াসরুমের পথে আগালো সে। সুযোগের সৎ ব্যবহার ভালোই করতে জানে অভিনব। ঝিল কে বোঝার উপায় না দিয়েই মেয়েটির গালে সন্তর্পণে চুমু এঁকে দিলো। ফিস ফিস কন্ঠে বলল
” মর্নিং লাভ সারা দিনের স্ট্রেস সামলাতে সাহায্যে করে। তাই অভ্যেস করে নাও মিস মিসেস। ”

নাস্তার টেবিলে নিজেদের চেনা জানা মুখ গুলো দেখে ঝটকা খেল ফারাবি আর ঝিল। দুজনেই এক সাথে চেঁচিয়ে উঠলো। সকলের সাথে কুশল বিনিময় শেষ করে নাস্তা করতে বসলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে রিমির মন টা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে। এক টুকরো অনথন মুখে পুরে বলল
” সকলের মাঝে আমি নামক নিরামিষ কে নিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিলো বলো তো? ”

” প্রয়োজন ছাড়া ও কিছু মানুষ কে নিয়ে আসা হয় জানিস না। ”

” তোমাদের মাঝে থেকে আমি কি করবো ভাইয়া। ”

” কি করবি মানে ইনজয় করবি। ”

গোমড়া মুখে খাবার খেতে লাগলো রিমি। বেচারির মুখ দেখে ভীষন খারাপ লাগছে ফারাবির। ঘটনাচক্রে কোনো ভাবে যদি ফাহিম এসে পরতো তাহলে কি ভালোই না হতো। তবে সব কিছু কি সম্ভব হয়!

ফারহান সকলের সাথে কথা বলে নিয়েছে। ঐ দিকের পরিস্থিতি সব ঠিক ঠাক। আর ছেলের ভাবনা কে সম্মান প্রদর্শন করে তারা। এতে তাঁদের বিন্দু মাত্র রাগ ক্ষোভ নেই। তবে এদিকে অভিনব চিন্তা গ্রস্ত। মির্জা বাড়ির অবস্থা শোচনীয়। যদি ও তাঁদের আশংকা মেয়ে ভ্রমনের টানে পালিয়েছে। তবে কারন যাই হোক বাসা থেকে পালিয়েছে মানেই প্রচন্ড চিন্তা। রোহন আর আহনাফ কে সমস্ত বিষয় অবগত করেছে অভিনব। সেই কারনেই ছুতো দিয়ে চলে এসেছে রোহন আর মৌনতা। তবে কোনো ভাবে বিষয় টা এদিক সেদিক হলেই ঝামেলা। ছেলেটার চিন্তার অবসান হতে ঝিল সঙ্গী হলো। মেয়েটা কেমন করে যেন সব বুঝে যায়। অভিনবর কাঁধে মাথা রেখে হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে দিলো। আশ্বস্ত ভরা কন্ঠে বলল
” সব ঠিক হয়ে যাবে। ঐ দিক টা সামলে নিবে আহনাফ ভাই। আর তাছাড়া আমাদের উদ্দেশ্যে তো খারাপ নয় অভিনব। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি তোমাকে আমার ফ্যামলি চোখ বুঝে মেনে নিবে। সমস্যা তো পারিবারিক শত্রুতা তাই না। ”

” হুম। তুমি ও চিন্তা করো না ঝিল। ”

” আচ্ছা চলো এবার আমরা ঘুরতে যাবো। এতো এতো ভেজালের মাঝে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে নেওয়াই যায় তাই না? ”

ঘড়ির কাঁটা বলছে সকাল দশ টা বাজে। যেহেতু সূর্য মামা এখনো পুরো পুরো উঁকি দিতে পারে নি সেই কারনে ঘোরাঘুরির জন্য বেস্ট সময় ও বলা যায়। ফারহানের সাথে কথা বললে ফারহান জানালো আশে পাশে আজ না বেরোনোই উত্তম। রাজনৈতিক দল গুলো প্রচারে নেমেছে। কথা টা শোনা মাত্র ই সকলের মন খারাপ হয়ে গেল। পরিশেষে সবাই রিসোর্ট টা ঘোরার প্ল্যান করলো। এমনি তে ও এতো বড় রিসোর্ট ঘুরতে পুরো দিন চোখের পলকেই নেমে যাবে।

গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এ আউটডোর স্পট হিসেবে কয়েক টি সুন্দর মাঠ রয়েছে। যেখানে কোর্ট করা আছে টেনিস বল, বাস্কেটবল আর ব্যাডমিন্টন। সকলে যে যার পছন্দ মতো খেলা শুরু করলো। রিমি কে টানাটানি করতেই মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল
” যাবো না আমি। ভালো লাগছে না সকলের মাঝে। ”

বিষয় টা মনে দাগ কাটলো ফারাবির। পরিশেষে সেসব কে পাত্তা না দিয়ে খেলায় মনোযোগ হলো। রিমির রাগ অভিমান স্বাভাবিক। সবাই কে প্রিয় মানুষের সাথে দেখে নিজের প্রিয় মানুষের কথা ভীষন ভাবে আকর্ষন করছে।

অভিনবর সাথে বাস্কেট বলে কিছু তে পেরে উঠছে না ঝিল। মেয়েটির ধৈর্য্যের প্রশংসা করতেই হয়। অবিলম্বে চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। তবে উচ্চতার কারনে পারছে না। ঝিল কে হেরে যেতে দেখে অভিনবর মন ভার হয়ে গেছে। তাই অভিনব উপায়ে ঝিল কে জিতে যাওয়ার সুযোগ করে দিলো সে। মেয়েটি খুশি তে আত্মহারা হয়ে গেছে। অভিনবর দিকে তাকিয়ে সশব্দে বলে যাচ্ছে
” আমি জিতেছি, আমি জিতেছি, হেরে গেছো তুমি। ”

উপরে উপরে মন খারাপের ভান ধরলো অভিনব। তবে ভেতর টা বসন্তের ফোঁটা ফুলের মতোই হাস্যউজ্জল।

ফারহান আর ফারাবি টক্কা টক্কি খেলে যাচ্ছে। ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন ফারাবি। তাকে হারানো অতো সহজ নয়। তবে ফারহানের ও দম আছে বলতে হয়। এক পর্যায়ে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে গেল। আর পয়েন্ট ও হলো সমান।

ফিল্ড এ সামান্য রোদ উঠা তে খেলা অফ করে দিলো সবাই। সূর্য সবে মুখ তোলার সুযোগ পেয়েছে। খেলার দরুন সকলেই কিছু টা ঘেমে গেছে। রিফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়েটার কে কল করে সকলের জন্য স্মুদি আনালো। রিমির মন খারাপ এতোক্ষন পর লক্ষ্য করলো ফারহান। তবে তেমন কিছু ঠাওর হলো না।

(২৮)

রিসোর্ট এর চারপাশে রয়েছে অত্যাধুনিক জিনিসপত্রের সমাহার। সাথে সবুজে ঘেরা। ঘন্টা খানেক হাঁটাহাটি আর ফটো সেশন করার পর সকলেই আরো ক্লান্ত হয়ে পরলো। এখন বেশ গরম লাগছে শরীরে। মনিকা তো পা বিছিয়ে বসে পরলো। মেয়েটা কে সামলাতে সর্বদা হিম শিম খেতে হয় রিফাতের। মেকি হাসি দিয়ে মনিকার পাশে বসলো।
” তোমার কি কোনো আত্মজ্ঞান নেই? ”

” কি বললে শুনতে পেলাম না তো। ”

” বললাম তোমার কি মাথা নষ্ট। ”

” দেখো রিফাত একদম আমার সাথে ফাজলামি করবে না। ”

” ধ্যাত বসে থাকো তুমি। ”

রিফাত মনিকা কে ফেলেই চলে গেল।
দাঁত কিড়মিড় করতে করতে পিছু নিলো মনিকা। রিফাত তাকে গনায় নিচ্ছে না তাই সে চলে গেল রিমির কাছে। এক পলক তাকিয়ে রিমি বলল
” দম শেষ? ”

” মোটে ও না। আমিই তাকে পাত্তা দেই নি।”

” হু দেখেছি। ”

অপমান বোধ হচ্ছে মনিকার। লাজ লজ্জা সব যেন জেকে ধরেছে ওকে। ছেলেটা সব সময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাঁকে। সময় বুঝে এর শোধ নিশ্চয়ই নিবে সে।

সকলের জন্য কিং ডিলাক্স রুম ভাড়া করা হয়েছে। যেটা সর্বনিম্ন সার্ভিস হিসেবে বিবেচ্য এই রিসোর্ট এর। একেক রুম ভাড়া ২৪ হাজার টাকা। যা শুনে ফারাবির চোখ কোটরে চলে গেছে। কাল থেকে এই রিসোর্ট এর যতো প্রশংসা করেছিলো তা গুনে গুনে তুলে নিচ্ছে সে। রিতিমতো হুমকি জুড়ে দিয়েছে রিসোর্ট এর নামে বদনাম করে ভাইরাল করে দিবে সোশ্যাল সাইট গুলো তে। মেয়েটির কান্ডে সকলে মুখ টিপে হাসছে। এক পর্যায়ে এগুলো বুঝতে পেরে রাগে হনহনিয়ে হাঁটা লাগালো সে। ফারহান গিয়ে আটকে দিলো তাঁকে। কিন্তু মেয়েটির অভিযোগের শেষ নেই। প্রায় পাঁচ মিনিট টানা অভিযোগ করে ক্ষান্ত হলো। ফারহান শুধালো
” এবার কি আমরা সুইমিং পুলে যেতে পারি ম্যাডাম? ”

” হু। তবে আমাকে পিঠে নিয়ে সাঁতার কাঁটতে হবে। ”

অভিনয়ের চোখে তাকিয়ে ফারহান বলল
” যে মোটা শরীর তোর, আমি তো এক দিনেই শেষ হয়ে যাবো। ”

” আমি মোটা? ”

” হ্যাঁ। দেখ দেখ গাল গুলো কেমন টলটলে হয়ে আছে। হাত গুলোর কি ওজন। ”

কথার মাঝে মেয়েটার গাল টেনে দিলো ফারহান। ওর কান্ডে ফিক করে হেসে উঠলো মেয়েটি। ফারহানের সাথে অনেক বেশি ফ্রি হয়ে গেছে কি না। অথচ দুদিন পূর্বে ও এই মানুষ টি কে গালাগাল করেছে সে। আজকাল মানুষের মনের ও বুঝি বিক্রিয়া ঘটে।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত সুইমিং পুল এর ব্যবস্থা রয়েছে। সেই অনুযায়ী পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।সুইমিং পুলে নেমে আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠলো রিমি। এতোক্ষণ পর মেয়ে টির মুখের কোনে হাসি ফুটেছে। বোন কে স্নিগ্ধতায় আলো ছড়াতে দেখে ফারহান ও শান্তি পেল। ফারাবির কাছে এসে পিঠে নিয়ে সাঁতার কাঁটার কথা বলতেই মেয়ে টা সোজা নাকোচ করে দিলো। তখন নাকি মজা করে বলেছিলো। তবে ফারহান তো ফারহান ই। যেমন বলা তেমন ই কাজ। জোড় করে পিঠে নিয়ে সাঁতার কাটতে লাগলো। সবাই তো ও হো বলে চেঁচিয়ে উঠছে। লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে ফারাবি তবে ফারহানের মুখে লজ্জার ল ও দেখা যাচ্ছে না। ওর কাছে সব টাই স্বাভাবিক। ঝিল এক মনে তাকিয়ে হাসছিলো, ওকে পানির মাঝে হালকা হাতে আলিঙ্গন করলো অভিনব। মৃদু শিহরনে গাঁ ছমছম করে উঠলো। কিছু বোঝার পূর্বেই মেয়েটি কে নিয়ে পানি তে ডুব দিলো অভিনব। হঠাৎ এমন করায় বেশ ভয় পেয়ে গেছে ঝিল। চোখ বন্ধ করে অভিনবর গলা জাপটে আছে সে। যাঁর দরুন অভিনবর অধরে ফুটেছে ভেজা হাসি। ছেলেটির উষ্ণ ঠোঁটের ভেজা চুম্বনে কেঁপে উঠলো ঝিল। অভিনব যেন ওর ললাটে লেপ্টে দিয়েছে সমস্ত সুখ। এলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে অভিনব বলল
” তোমার প্রতি টা শিহরনের কারন হতে চাই ঝিল। একশ টা বসন্ত তোমার সাথেই কাটাতে চাই। ”

রোহন আর মৌনতা নিজেদের মাঝে দূরত্ব বজায় রেখেই চলে। কখনোই মনে হয় না এদের মাঝে প্রণয়ের সম্পর্ক বিদ্যমান। মূলত এতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ওরা। ওদের দিকে তাকিয়ে সমস্ত খারাপ লাগা চলে গেছে রিমির। দুজনের হালকা হাসির গুঞ্জন যেন পরিবেশের রস ধরে রেখেছে। তবে আরেক টি চিন্তা মেয়েটির মনে এলো সেটা হলো সব থেকে নিরামিষ কাপল এরা। তবে আমিষ কাপল খুঁজতে গিয়ে হলো গভীর সমস্যা। অভিনব ঝিল আর ফারহান ফারাবি এদের কেউ কারো থেকে কম যায় না। মনের উপর জোড় লাগিয়ে ও প্রথম আমিষ যুগল খুঁজে পেল না সে। পরিশেষে যুগ্ম বিজয়ী ঘোষনা করে আমিষ যুগলের ইতি টেনে দিলো। রিফাত আর মনিকার জন্য বিশেষ ভাবনা রেখেছে সে। আর সেটা হলো বেস্ট ঝগড়াটে জুটি অফ দ্যা ইয়ার। ওর ভাবনা শেষ হলো তখন যখন মৌনতা এসে শুধালো ওর বয়ফ্রেন্ড আছে কি না। ভদ্র মেয়ের মতো দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো নেই।আহা কি সাধুর এই মুখ খানা!

রিসোর্টে থিয়াটারের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই কারনে রাতে সিনেমা দেখবে বলে ঠিক করেছে সবাই। লাঞ্চে রামেন সহ কিছু জাপানিজ ফুড খেলো সবাই। লবস্টার নিলে ও ফারহান আর ফারাবি খেতে পারলো না। কারন তাঁতে মাশরুম দেওয়া হয়েছে। সেই কারনে ওদের জন্য আলাদা করে সি ফুড আইটেম থেকে গ্লোড ফিস নেওয়া হলো। বাট ফারাবির মন খারাপ। ওর সব থেকে ফেবরেট লবস্টার ই ওর কপালে নেই। কে বলেছিলো লবস্টারের সাথে মাশরুম দিতে?

লাঞ্চ শেষে সবাই আবার বিশ্রাম নিলো। একজন লোক কে পরিবেশের খোঁজ নিতে পাঠিয়েছিলো ফারহান। লোক টা চার পাশে খোঁজ নিয়ে জানালো বিকেলের দিকে রাজনৈতিক দলের প্রচার শীমঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাবে। কথা টা শুনে ভালো লাগলো ফারহানের। বিকেল টা আশ পাশ ঘুরাঘুরি করে রাতে সিনেমা দেখা যাবে নিশ্চিন্তে। তাই সকল কে নিয়ে বের হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। অভিনব প্রফেশনাল ট্রাভেলার্স হওয়া সত্তে ও এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে ফারহান। ভ্রমণ প্রিয় ছিলো না কখনোই। তবে গত দু বছরে অভিনবর সাথে মিশে প্রকৃতি মায়ায় পরে গেছে সে নিজে ও। সবাই কে নিয়ে বের হলো ওরা। হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর সাথে কথা বলে তিন টে গাড়ি নেওয়া হলো। অভিনব ঝিল একটা তে ফারহান ফারাবি আরেক টা তে আর বাকি রা সবাই আর একটা তে। অভিনব অবশ্য বলেছিলো মনিকা আর রিফাত কে আলাদা স্পেস দেওয়ার জন্য তবে রিফাত নিজ থেকে বারন করেছে। দুজনে এক সাথে এক সেকেন্ড থাকতে পারে না। সে কারনে সকলের সাথে ঘোরাঘুরি করাতেই ভালো হবে।
গাড়ি তে কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে একে অপর কে আলিঙ্গন করলো অভিনব ফারহান। দুজনের মাঝে কিছু কথা ও হলো কালকের দিন টি কে নিয়ে। মাঝে ফারাবির বা হাত ঢোকাতেই হলো। মেয়েটির মাথায় চাপর মেরে ফারহান বলল
” বড় দের কথা শুনতে নেই। ”

” আপনি সব সময় এমন করেন। ”

” তোর ভালোর জন্য ই এমন করি। না হলে বেশি পেকে যাবি। ”

” আসলেই ফারহান সব সময় তুমি ওর সাথে এমন করো। ”

” তুমি ওকে চিনো না। আস্ত এক গাঁধা, রাম ছাগল আর বলদ মেয়ে। ”

মুখে ভেঙ্চি কেঁটে চলে গেল ফারাবি। অভিনব সে দিকে তাকিয়ে ঠোট টিপে হাসলো। ফারাবির জন্য ফারহান ই বেস্ট।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here