#বসন্তের_রঙ_লাল
#part_16 [ সমাপ্তি পার্ট ]
#ফাতেমা_তুজ
(৩১)
মুহুর্তেই বিয়ে সম্পূর্ন হয়ে গেল। কেউ দ্বিমত পোষণ করে নি। কারণ ও ছিলো না দ্বিমত পোষণ করার। ভিডিও কলে অংশগ্রহণ করেছে ফারহান ফারাবির পুরো পরিবার সহ ফ্রেন্ড সার্কেল। তবে খারাপ লাগা একটাই ঝিলের পরিবার ছিলো না এতে। অভিনব অবশ্য নিজ বাবা মার সম্মতি তেই এমন টা করেছে। আয়োজনে কোনো ত্রুটি নেই। তবে আছে সামান্য লুকানো ভাব। কারন কোনো মতে মির্জা বাড়িতে অথবা মামা বাড়ি তে এই খবর চলে গেলে অনর্থ ঘটে যাবে। যা কিছু তেই চায় না ওরা। ফারাবি কাঁদছে, কেন কাঁদছে জানা নেই হয়তো বিগত দিন গুলোর কথাই স্মরণ হচ্ছে। যাকে চায় নি তাকেই চেয়েছে। যাকে পাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না তাকেই পেয়েছে।মূলত অন্তরে ছিলো প্রণয় তবে তা অনুভব করা হয় নি। আশে পাশে সবার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টানা। লাজ লজ্জা সব কিছু কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফারাবি কে জড়িয়ে নিলো ফারহান। মেয়ে টি ও আজ খুব শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। নিজ কাঠিন্য কে হারিয়ে ফারহানের চোখে ও নেমেছে জলের ধারা। মেয়েটির বাহু তে হাত বুলিয়ে নিয়ে গেল আড়ালে।
টিসু পেপারের মেলা বসিয়েছে ফারাবি। একটার পর একটা টিসু দিয়ে নাক মুছে চলেছে। আরেক টা টিসু এগিয়ে দিয়ে দাঁত কামড়ে হাসলো ফারহান।
” হাসবেন না বলে দিলাম। ”
” স্যরি, স্যরি আর হাসবো না। ”
” আপনি খারাপ। ”
” হু খারাপ। ”
” অনেক খারাপ। ”
” আচ্ছা অনেক খারাপ। ”
” আপনি, আপনি একটা বদ লোক। আমার থেকে জোড় করে ভালোবাসা নিয়েছেন। ”
” সত্যি? ”
” শত ভাগ সত্যি। ”
এমন কথা তে দুষ্টু হাসলো ফারহান। এখন পরিপূর্ণ ভাবে এই মেয়েটি ওর ব্যক্তিগত মানুষ। কিছু টা এগিয়ে আসতেই হাত উঁচিয়ে বাঁধা দিলো ফারাবি।
” এখন ভয় পাচ্ছিস কেন জান? জোড় করে নেই না ভালোবাসা। ”
” দেখুন আপনি। ”
” হু দেখা কি দেখাবি। ”
” আরে ধ্যাত আপনি একটা অশ্লীল মানুষ। ”
ফারহান কে পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিলেই এক হাতে আটকে নিলো ফারহান। মেয়েটির শ্বাস প্রশ্বাস গুলো কেমন বুকের ভেতর আন্দোলন সৃষ্টি করেছে। অসময়ে আসা প্রেম কে পাত্তা দিলো না ফারহান। ক্লান্ত হয়ে আছে মেয়েটা। তাই ছেড়ে দিয়ে আলতো করে অধরে স্পর্শ করলো।
” রেস্ট নিবি আজ। ”
ছেলেটার এহেন কথা তে অবাক হলো ফারাবি। সমস্ত ভাবনার যেন বদল ঘটে গেল। মুখের ভঙ্গিমা দেখে চোখ নাচালো। লজ্জা পেয়ে বিনা বাক্য ব্যয়ে হাঁটা লাগালো ফারাবি। পেছন থেকে শিস বাজাচ্ছে ফারহান। পেছন ঘুরতেই চোখ টিপে বলল
” জোড় আছে তাহলে ম্যাডামের? ”
” এই না। আগামী দশ দিন নিরামিষ থাকতে হবে বলে দিলাম। ”
কথা শেষ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো ফারাবি। নিজের বুদ্ধি দেখে নিজেই অবাক হলো। ফারহান বিহ্বল হয়ে গেছে বোধহয়। পরক্ষণেই দরজার কাছে এসে বলল
” জান পাখি, প্রথমে তো ভেবেছিলাম সারদিনের ধকলে তোর রেস্ট প্রয়োজন। বাট তুই তো দেখি দ্বিগুণ বেগে দুষ্টুমি শুরু করেছিস। এখন আর ছাড় দিবো না। ”
” আগে তো রুমে প্রবেশ করুন। ”
অধর কোনে ফিচেল হাসি রাখলো ফারহান। পকেট থেকে চাবি বের করে ঝনঝনে শব্দ তুললো। ওপাশ থেকে ফারাবি বুঝে গেল নিজের বোকামি। কপালে হাত দিয়ে বেডে এসে বসলো। আজ আর রক্ষে নেই!
ফারহান তো বউ নিয়ে ভেগেছে। তবে অভিনব পরেছে মহাবিপাকে। টাকা ছাড়া এক পা ও যেতে দিবে না সামনে থাকা পাষান মানুষ গুলো। তবে সমস্যা হচ্ছে পকেটে ক্যাশ পরে আছে হাজার পাঁচেক। এই অসময়ে কার্ড থেকে টাকা তুলবেই বা কি করে। রোহনের পাশ ঘেষে দাঁড়ালো অভিনব। মিনমিনে কন্ঠে বলল
” বড় শ্যালক হেল্প করো। কাল ই টাকা পেয়ে যাবা। তবে আজ ছেড়ে দাও প্লিজ। ”
” সেটা তো হচ্ছে না অভিনব ভাই। আগে টাকা তারপর কথা। ”
” রিফাত তুমি অন্তত বুঝো। ”
” আরে না। কি যে বলেন ভাই। আমি এসব কিছুই বুঝি না। ”
” বুঝে শুধু ঝগড়া। ”
মনিকার দেওয়া ফোঁরনে তেতে উঠলো রিফাত। তবে তাঁকে থামিয়ে দিলো রিমি। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। খুব মজা করেছে সবাই। অথচ ওর প্রিয় মানুষ পরে আছে বহু থেকে বহু দূর।
” এই রিমি কি ভাবছিস তুই? ”
” প্রতিশোধ। ”
” হোয়াট! ”
” আমাদের দাবি যেন কতো ছিলো মনিকা আপু? ”
” পঞ্চাশ। ”
” না এখন এক লাখ। যতো সময় ততো বেশি টাকা। ”
” আরে বোন দিবো তো। এবার আমার বউ কে নিয়ে যেতে দাও প্লিজ। ”
” শুকনো কথায় তো চিরে ভিজে না অভিনব ভাইয়া। ”
হায় হতাশ হয়ে বসে পরলো অভিনব। ঝিল খুব উপভোগ করছে। সব ই তো তাঁর খেলা। তবে বেশ ক্ষিদে পেয়েছে ওর। সেই কারনে পাশের টেবিলে বসে খেয়ে যাচ্ছে অবিলম্বে।অভিনব তাকাতেই আধ খাওয়া বার্গার টা বাড়িয়ে দিলো। বিরক্তি নিয়ে অভিনব বলল
” খাও তুমি। আমি আছি বিপদে আর ওনি খেয়ে চলেছে। ”
” বুদ্ধি জ্ঞান না থাকলে তো হবেই এমন।”
” কেন!কেন? এখানে বুদ্ধি জ্ঞান কোথায় থেকে এলো। ”
বার্গার রেখে এক ঢোক কোল্ড ড্রিংঙ্কস মুখে দিলো ঝিল। তারপর কিছু টা নিচু হয়ে বলল
” আমার ডায়েরীর একাংশ পড়েছো তুমি।বোধহয় দেখো নি আমার স্বপ্ন পুরুষ যখন আমাকে কিড’ন্যাপ করে বিয়ে করবে তখন বাসর রাতের সময় আমার সহোচর রা গ’লা চেপে ধরবে তার। আর তারপর প্রচুর মা’রবে আর শেষে অনেক গুলো টাকা নিয়ে ছেড়ে দিবে। ”
” এটা লিখা ছিলো? ”
” হ্যাঁ। তুমি সত্যিই পড়ো নি!”
অভিনব ভাবনায় পরে গেল। এমন কিছুই পড়ে নি সে। ওর ভাবনায় হারিয়ে যাওয়া দেখে ফিক করে হেসে উঠলো ঝিল। বেচারার সাথে সবাই মজা নিচ্ছে। চট করেই মাথায় বুদ্ধি এলো। সবাই কে ঠেলে বেরিয়ে গেল সে। রিমি তো মহা খুশি হয়ে বলেই দিলো অভিনব বাসর বিরহে দুঃখ বিলাশ করতে গিয়েছে।
” আপনার ধারনা ভুল শালিকা। ”
পেছন থেকে বলাতে ভরকে গেল রিমি। দু পা পিছিয়ে বলল
” বিরহ শেষ? ”
” তোমাদের বিরহ শুরু এখন। ”
” মানে।”
সকলের এক যোগে বলা দেখে কানে হাত দিলো অভিনব। ঝিল উৎসুখ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে এখন। অভিনব রহস্য হেসে দুটো বান্ডিল এগিয়ে দিলো। সবার চক্ষু চড়কগাছ। ভাব নিয়ে ঝিলের কাছে এলো অভিনব। চোখ টিপে বলল
” ভবিষ্যদ্বাণী বদলে গেছে মিসেস। ”
” কি হলো এটা? ”
” একটু ম্যাজিক। ”
” ঠকালো আমাদের। আমরা তো রিসোর্টের সবার সাথে কথা বলেই রেখেছিলাম। যাতে করে কার্ড থেকে টাকা না দেওয়া হয়। ”
হো হো করে হাসলো অভিনব। মন মড়া হয়ে গেছে সকলের। ঘটনা টা একটু পজ করলো। মূলত রিসোর্টের স্পেশাল রুম বুকিং এর জন্য ক্যাশ টাকা গুলো সরিয়ে রেখেছিলো সে। আর সেটা ভুলেই গিয়েছিলো। হঠাৎ ই মনে হওয়া তেই গেইম পাল্টে যায়। আর সকল কে কলা গাছ দেখিয়ে দেয় মুহূর্তেই। ফাঁকা ঢোক গিললো ঝিল। শুধু ফারাবি নয় আর তাঁর ও রক্ষে নেই! ভবিষ্যদ্বাণী এমন ভাবে বদল ঘটলো যে কেঁদে কুল কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না।
(৩২)
বিগত কিছু দিন গুলো তে বহু স্মৃতি বদ্ধ হয়েছে অন্তরালে। তবে সব থেকে সুন্দর মুহূর্ত গুলোর সৃজন হয়েছে বিয়ের পরের সময় টুকু তে। এই মুহূর্ত গুলো তে সাবলীলভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভালোবাসা। অনুভূতি গুলো একদম ই সতেজ আর ভেজা। ক্ষনে ক্ষনে অনুভব করিয়েছে ভালোবাসা ঠিক কতো টা সুন্দর। বসন্তের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। কফি কাঁপে চুমুক দিতেই শিহরণ এসে ভিজিয়ে যায় সব। চারপাশে তাজা ফুলের সুবাস এসে ধরা দেয়। ঘুম টা খুব সুন্দর হয়েছে ঝিলের।দুই বছর আগের সেই হারিয়ে ফেলা বসন্ত আজ শত গুন হয়ে ফিরে এসেছে। পাশে কখন যে এলো অভিনব সেটা খেয়াল ই হলো না। ছেলেটা কে দেখে মৃদু হাসলো।
” ঘুম কেমন হলো? ”
” প্রতিনিয়ত নতুন ভাবে জাগরণ হয়। ”
” এতো রোমান্টিক হইয়ো না। ”
” বউয়ের কাছে সব পুরুষ ই অতিব রোমান্টিক। বুঝলে মিসেস? ”
মেয়েটি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাক সকাল টা উপভোগ করলো অভিনব। এই মাতাল করা গন্ধে পাগল হয়েছে কতো বার। তবু ও সব নতুন মনে হয়। এই যে কতো বার কতো ভাবে ভালোবাসা দিয়েছে ঝিল তবু ও মনে হয় এই তো আরেক রূপে সেজেছে মেয়েটি। এতো রকমের ভালোবাসা পেয়েছে যার ভাষার ব্যবহার গুলো তুচ্ছ কেবল। এই অনুভূতি শুধু অনুভব করতে হয়।
বরাবর ই ঘুম কাতুরে ফারাবি। তবে ওর সাথে সাথে ফারহান ও ঘুমের রাজ্যে হারিয়েছে। মেয়েটির মুখে লেপ্টে আছে এক গাছি এলো চুল। নিশ্বাস গুলো একে অপরের মুখে আঁচড়ে পরছে। তবে বেশিক্ষণ এই অনুভূতি গ্রহন করা হলো না। তাঁর পূর্বেই ঢং ঢং শব্দ করে ঘড়ির কাঁটা জানান দিলো সকাল হয়ে গেছে। চোখ কচলে উঠতে নিলেই শরীরে টান অনুভব হলো। কেমন করে ঘুমিয়ে আছে ফারাবি। একদম ই বুকের ভেতর ঢুকে যাবে যেন। মাথা টা বুক পাঁজর থেকে সরিয়ে যত্ন নিয়ে হাত বুলিয়ে দিলো। নেশাক্ত চাহনি ফেলে বলল
” জান, ঘুম হয় নি এখনো। ”
” উহু।”
” যেতে হবে তো আমাদের। ”
” উম আরেক টু। ”
ছেলে টার গলা জড়িয়ে ধরলো এবার। অজান্তেই কি সব করে যাচ্ছে মেয়েটি। বাঁধা দিলো না ফারহান। বরং সে নিজেও উপভোগ করতে লাগলো প্রেয়সীর এলো মেলো আচারন।
সবাই কে লাল রঙের কস্টিউমে দেখে হা হয়ে আছে কিছু মানুষের হতভম্ব চোখ মুখ। সেসব কে পিছে ফেলে হেসে যাচ্ছে এক দল কপোত কপোতি। বসন্ত উৎসব আজ। সাথে রয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সকলে মিলে ঠিক করেছে এক বিশেষ স্থানে যাবে। তাই এতো সকাল সকাল সেজে গুঁজে রওনা হয়েছে। অভিনব কখনো পাঞ্জাবি পরে নি। তবে লাল রঙের সাথে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে তৈরি মিহি সুতোর কাজ করা কুর্তা পরেছে আজ। বিদেশীর গাঁয়ে রঙ টা যেন খেয়ে ফেলেছে একদম। এই সমস্ত রঙ যেন ওর জন্যই সৃষ্টি। সকাল সকাল ই নজর টিকা লাগিয়েছে ঝিল। সেটা অভিনবর অজান্তে। এই ছেলের মাঝে কতো বার হারিয়েছে তাঁর হিসেব রাখা হয় নি। প্রতি টা স্ত্রী এর মতোই ঝিল ও চায় তাঁর প্রেমিক পুরুষ কে কেউ যেন নজর না করে।
লাজুক হাসি নিয়ে বসে আছে ফারাবি। গত দিন গুলোর কথা বার বার মনে পরে যাচ্ছে। ফারহানের দেওয়া প্রতি টা শিহরণ এখনো বয়ে চলেছে প্রতি টি শিরা উপশিরা। আর এর অন্ত যেন না ঘটে সেটাই চায় মন প্রান দিয়ে। ফারহানের ইশারায় চট করেই ফোনের স্ক্রিনে তাকালো ফারাবি। মুহূর্তেই লাল হয়ে গেল মুখমন্ডল। ফারহান আবার ম্যাসেজ পাঠালো
” পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিকর্ম আমি তোর মাঝেই দেখতে পাই জান। আচ্ছা বল তো আর কি করে ভালোবাসলে তৃপ্ত হবে ব্যাকুল হওয়া প্রান। ”
আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ফারাবি। বলতে ইচ্ছে করলো ‘ আপনি ভয়ঙ্কর প্রেমিক। শুধু স্পর্শেই নয় আপনি কথা তে ও মে’রে ফেলবেন আমায়।’
সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। সুনামগঞ্জের একটি বিশেষ পর্যটন স্থান এটি। শীত কালের শেষ তথা বসন্ত কালে এর পরিপূর্ণ রূপ দেখা যায়। হাওরের সৌন্দর্য্যে যেমন সবাই কে পাগল করে দেয় ঠিক তেমনি ভাবে শিমুলের সমাহার বিমোহিত করে দেয়। মন চায় এই স্থানেই যেন অন্ত হয় জীবনের। ভালোবাসার রঙ খুঁজতে সেই শিমুলের দেশেই চলছে ওরা।
প্রায় ছয় ঘন্টা পর কাঙ্খিত স্থানে এলো ওরা। হাত পা অবশ হয়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থেকে চলতে ও অসুবিধা হলো খুব। চারপাশে মানুষে কিলকিল করছে। বিস্মিত হয়ে রিমি বলল
” এতো এতো শিমুল গাছ? ”
” হু প্রায় তিন হাজার গাছ রয়েছে। ”
ফারহানের কথা তে হা হয়ে গেল মৌনতার মুখ। রোহন হালকা কেশে বলল
” মশা ঢুকে পরবে তো। ”
প্রায় শ বিঘা জমি তে গড়ে তোলা হয়েছে এই শিমুল বাগান। ২০০৩ সালের দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এই বাগান শুরু করেন। তাঁর নাম অনুযায়ীই এই স্থান টি পরিচিত।
সকলের জন্য টিকেট কাটলো রিফাত। প্রবেশ মূল্য ত্রিশ টাকা করে। আশে পাশে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে লাঞ্চ করা হলো। সময় সাড়ে তিন টে বাজে। সবাই শিমুল বাগানে প্রবেশ করলো। যতো দূর চোখ যায় লালে ঘেরাও করা। ফারাবি উপরে দিকে তাকালো সেখানে ও লালের বিস্তার। বিস্ময়ে কেঁদে ফেলার উপক্রম। এতো এতো শিমুল ফুল এক সাথে কখনোই দেখা হয় নি। আশে পাশে তাকিয়ে ফারহান কে দেখতে পেলো না। পরমুহূর্তেই পেছনে তাকালো। চোখ দুটো জলে চিক চিক করে উঠলো। ওর দিকেই ছুটে আসছে ফারহান। হাতে এক গাছি লাল টকটকে শিমুল ফুলের গুচ্ছ। ওর নিকটে এসেই হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।
ঠোটের কোন টায় স্বস্তি। ফুলের গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে পর পর শ্বাস নিলো। হাঁপিয়ে গেছে একদম! মেয়েটার গাল বেয়ে নোনা জলের স্রোত নেমেছে। কেউ কেউ তো ছবি তোলা শুরু করেছে। কিছু টা স্থির হয়ে চেঁচিয়ে বললো ফারহান।
” ভালোবাসি জান, খুব ভালোবাসি, আজ ও বাসি, কাল ও বাসি, এখনো বাসি। শুধু জানি আমি তোকে ভালোবাসি জান। তোকে ভালোবাসি। ”
” আমি ও বাসি। খুব ভালোবাসি আপনাকে। নিজের থেকে ও বেশি। ”
মেয়েটি কে বুকে জাপটে ধরেছে ফারহান। সবাই কড় তালি দিয়ে চলেছে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ একদম।দুজনের চোখ থেকেই অশ্রু ঝরছে। এই অশ্রু প্রাপ্তির। এই অশ্রু সুখের। এক বার নয় শত বার এমন অশ্রু ঝরাতে রাজি এই প্রেমিক প্রেমিকা যুগল।
পা মেলে দিয়ে শিমুলের পাপরি তে বসে আছে ঝিল। চার পাশ টা লাল টকটকে পাপড়ি তে পরিপূর্ন। দেখে মনে হয় কেউ যেন লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। অভিনব একের পর এক ফুল তুলে দিচ্ছে মেয়েটির আঁচলে। সব টাই লালে ভরপুর। হাসতে হাসতে গড়িয়ে যাচ্ছে সে। অভিনব ভীষণ দুষ্টুমি করতে শুরু করলো। এলো মেলো ভাবে মেয়ে টি কে স্পর্শ করতেই বলল
” ছিই অভিনব! একদম ই লজ্জা নেই তোমার। ”
” আমার বউ আমি স্পর্শ করেছি। তাঁতে কার কি হু? ”
” লাজ লজ্জা হীন পুরুষ!”
” একদম ঠিক। ”
কথা শেষ করেই মেয়েটির অধরে উষ্ণতা লেপন করলো অভিনব। এই দিক টায় জনমানব নেই তেমন। তবু ও লজ্জায় ছেলেটার বুকে মুখ লুকালো ঝিল।
সবাই ভালোবাসায় সিক্ত। এর মাঝে থেকে রিমির অন্তকর্নে চিন চিন ব্যথা শুরু হয়েছে। ও তো মানুষ। সবার ভালোবাসা দেখে খুব হিংসে হচ্ছে। চোখ থেকে ঝরছে পানি কনা। ঠিক তখনি পেছন থেকে শীতল এক হাতের স্পর্শ এলো। এই স্পর্শ বড্ড চেনা ওর। পেছন না ঘুরেই ঝমঝমে কেঁদে উঠলো। মেয়েটি কে আলগা হাতে জড়িয়ে ধরলো ফাহিম। রিমি কাঁদছে, একটু ও বাঁধা দিলো না সে। শুধু বলল
” আজকের পর থেকে আর কখনো কাঁদতে দিবো না তোমায়। ”
ওদের ভালোবাসা দেখে সবাই খুশি হলো। বহু পূর্বেই ফাহিম সম্পর্কে জেনেছে ফারহান। তবে চাইছিলো রিমি মুখ ফুটে বলুক। কিন্তু পাগলি মেয়ে টা বলে নি কিছুই। তাই এভাবে চমকে দেওয়া।
রিফাত আর মনিকার মাঝে আজ বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য হলো। দুজনে ঝগড়া করে নি একবার ও। বরং একে অপর কে খুব করে অনুভব করছে আজ। এতেই বোঝা যায় ঝগড়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা।
মৌনতা আর রোহন নিজেদের ভালোবাসার বীজ বপন করে চলেছে একটু একটু করে। প্রেমের রঙ মাখছে সর্বাঙ্গে।
সকলে এক সাথে হলো। কোনো দুঃখ নেই কারো চোখে। আজ শুধু সুখ আর সুখ। বাতাসে ফুলের গন্ধ সাথে ভেসে আছে চির চেনা গান
আকাশে বহিছে প্রেম,নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে
গানের সুর ধরে আকাশের পানে তাকালো সব গুলো প্রেমময় চোখ। ফুল গুলো যেন ভালোবাসার নিদর্শন বহন করছে। ফুলে ঘেরা হাজারো সুবাস প্রমান করে চলেছে সত্যিই তো বসন্ত এসে গেছে। আর তাঁর গাঢ় টকটকে লাল রঙ গুলো বলে দেয় প্রেম নয় শুধু বরং বসন্তের রঙ লাল।
সমাপ্ত