বাঁক,৬,৭
জবরুল ইসলাম
(৬ষ্ট পর্ব)
মানহা স্মিত হেঁসে পুনরায় বললো,
– ‘কিছু না বলে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? থাকবেন আমার সঙ্গে?’
– ‘এসব কী বলেন আপনি? মাথা কি ঠিক আছে ম্যাডাম?’
মানহা মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘আচ্ছা এগুলো বাদ দিন, এবার বলুন আমার সঙ্গে থাকতে আপনি কত টাকা চান?’
মৃদুলের বিস্ময় এবং ধৈর্যের সীমা একসঙ্গে অতিক্রম হয়ে গেছে। সে বসা থেকে উঠে বললো,
– ‘আপনি কি এসবের জন্য আমাকে ওই চাকরি ছাড়িয়েছেন?’
– ‘এতো অল্পতে উত্তেজিত হয়ে গেলেন কেন? বসুন না, বসে কথা বলুন। আপনাকে আবার কীসবের জন্য আনবো? এনেছি সহকারী হিসেবে কাজ করতে।’
– ‘তাহলে আপনার সঙ্গে থাকার জন্য টাকা অফার করছেন যে।’
– ‘ওমা তাহলে কি আপনি বিনা মূল্যে আমার সঙ্গে থাকবেন?’
– ‘আপনি দয়া করে কথা না প্যাঁচিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন স্পষ্ট করে বলুন।’
মানহা আবার একচোট হেঁসে বললো,
– ‘আপনার নিজেরই আসলে চিন্তাভাবনা ভালো না। আমি কী বলি আর আপনি বুঝেন কী? আমি বলেছি আমার সঙ্গে থেকে যে সহকারীর চাকরি করবেন। তার জন্য কত টাকা বেতন চান। কিন্তু আপনি খারাপ, তাই খারপ ভাবে নিয়েছেন।’
মৃদুল অস্ফুটে বললো,
– ‘আমি বাচ্চা না, সব কথাই বুঝি।’
– ‘কচু বুঝেন আপনি, নাস্তা করেন।’
মৃদুল খানিক্ষণ মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভালোভাবে পরখ করে ডাক্তারনির মতিগতি বুঝতে।
মাথার ভেতর তার ভাবনার ঝড় বইছে। সে ধীরে ধীরে আবার সোফায় বসে একটা মচমচে স্টিক হাতে নিয়ে কামড় দেয়।
– ‘কেমন হয়েছে?’
অবিকৃত চেহারায় স্মিত হেঁসে বলে,
– ‘দারুণ হয়েছে।’
– ‘ধন্যবাদ।’
সে আরেকটা স্টিকে কামড় দেয়। কিছু চিন্তা মাথায় দ্রুত খেলে যাচ্ছে৷ তার ধারণা মানহা শিশুসুলভ দুষ্টামিতে মেতে উঠেছে। তাকে উলটা-পালটা কথা বলে বিপর্যস্ত করে এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছে।
অবশ্য এর দু’টা কারণ থাকতে পারে। একটা হলো মেয়েটি তাকে কোনোভাবে চিনে। কিন্তু সে চিনতে পারছে না। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে মেয়েটি তাকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলেছে। এখন প্রেম করতে চায়। তবে এটা অযুক্তিক ভাবনা হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। মানহার মতো মেয়ে তার প্রেমে পড়ার প্রশ্নই আসে না৷
তৃতীয় কারণ, হয়তো মেয়েটি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে কেবল মজা নিতে চাচ্ছে। যেহেতু মানহা জানে না সে বিবাহিত।
এর যেকোনো একটা কারণও যদি থাকে।তাহলে মানহাকে সে নিজের দু’টা কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
এক, তার মা বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মেয়েটিকে ব্যবহার করতে পারবে। গ্রামে না পেলে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও মানহাকে পাঠিয়ে খোঁজ-খবর নিতে পারবে। এই সহজ কাজগুলোও তার নিজের দ্বারা সম্ভব না।
দুই, ঝুঁকিহীনভাবে এখানে জব করে নিজের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করতে পারবে।
সুতরাং ওর সঙ্গে কোনো প্রকার ঝামেলায় না গিয়ে, রাগারাগি না করে ওর মতোই মিশতে হবে। এই চিন্তাগুলো মুহূর্তেই মৃদুলের আচরণ পালটে দিলো।
– ‘এগুলোর নাম কি যেন বলেছিলেন ম্যাডাম?’
– ‘ব্রেড স্টিকস।’
সে ঈষৎ হেঁসে বললো,
– ‘কি যে মজা লাগছে। ইচ্ছা করতেছে সবগুলো একাই খেয়ে ফেলি।’
মানহা মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘ভালো লাগলে খান। দরকার হয় আরও বানাবো।’
– ‘না আর কষ্ট করতে হবে না।’
– ‘আপনাকে হঠাৎ খুশি খুশি লাগছে কেন বলুন তো?’
– ‘এতো মজার খাবার খেলাম মন ভালো না হয়ে পারে?’
মানহা ম্যাকারনি এক চামুচ মুখে দিতে দিতে বললো,
– ‘বাবা, আপনি প্রশংসাও করতে পারেন?’
– ‘ম্যাডাম গরিব হতে পারি কিন্তু অকৃতজ্ঞ নই।’
হাসতে গিয়ে বিষব খায় মানহা। মৃদুল তাড়াতাড়ি বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিয়ে এক হাতে পিঠ বুলাতে থাকে।
মানহার বিষম কেটে যাওয়ার পর বললো,
– ‘পিঠে হাত দিলেন কেন?’
– ‘ও সরি, আসলে মা বলতেন বিষম খেলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে হয়। তাই বেখেয়ালে দিয়ে দিছি।’
– ‘সেটা না, বলুন সুযোগে হাত দিয়েছেন।’
– ‘আপনি এমন কেন? সব সময় এরকম কথা বলেন কেন?’
মানহা মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘কীভাবে বলি?’
– ‘কিছু না। আপনার সঙ্গে তর্ক করে পারবো না। আচ্ছা আমি দু’জনের জন্য চা জ্বাল দেই?’
– ‘আরে না আমিই একটু পর জ্বাল দেবো।’
– ‘আপনার কষ্ট করতে হবে না ম্যাডাম। এমনিতেই বিষম খেয়ে সুন্দর মুখ লাল হয়ে গেছে।’
– ‘আমি সুন্দর?’
– ‘আপনি সুন্দরী না হলে কে সুন্দরী হবে?’
– ‘তাই?’
– ‘জ্বি তাই, আমি চা জ্বাল দিতে যাচ্ছি।’
মানহাও চেয়ার নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। মৃদুল চা জ্বাল দিচ্ছে। খানিকক্ষণ নিঃশব্দে কেটে যায় তাদের। মানহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
– ‘আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছেন তাই না?’
মৃদুল সচকিত হয়ে বললো,
– ‘খারাপ মেয়ে ভাবতে যাব কেন?’
– ‘এই যে বললাম আমার সঙ্গে রাতে থাকতে।’
মৃদুল মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেড়ে বললো,
– ‘আরে বাদ দিন তো ওসব কথা। এগুলো আপনি দুষ্টামি করে বলেন আমি জানি।’
– ‘কিন্তু আমি তো দুষ্টামি করছি না। আসলেই চাই আমার সঙ্গে থাকুন।’
– ‘মানে?’
– ‘মানে আমরা রাতে জমিয়ে আড্ডা দেবো। লুডু খেলবো। মাঝ রাতে রাস্তায় নেমে ঘুরবো ফিরবো। বাজারের পূবে ঘন্টা খানেক হাঁটলে রেলস্টেশন আছে। সেখানে গিয়ে টং দোকানে চা খাব।
নদীর পারে গিয়ে পানিতে ডুবে কাঁপতে থাকা চাঁদ দেখবো।’
– ‘কি যে বলেন না। এগুলোর জন্য আমাকেই লাগবে কেন?’
– ‘কারণ আপনার সঙ্গে আমার ভালো লাগবে। আপনাকে আমি ভরসা করতে পারি।’
– ‘আপনার বান্ধবী নেই? তাদের নিয়ে দলবেঁধে যান।’
– ‘থাক, যাবেন না সেটা বলুন। লোক দেখিয়ে দিতে হবে না।’
– ‘রাস্তায় লোকজন দেখলে কী বলবে ম্যাডাম সেটা ভেবেছেন একবারও?’
মানহা অবাক হয়ে তাকায়। তারপর অস্ফুটে বললো,
– ‘ঠিকই বলেছেন। আমি এগুলো না ভেবে মানুষকে বিপদে ফালাই।’
– ‘কাউকে ফেলেছেন না-কি?’
– ‘হু।’
– ‘কাকে?’
মানহা খানিক্ষণ মৃদুলের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেঁসে বলে,
– ‘আপনার জানার দরকার নেই।’
– ‘হ্যাঁ তা ঠিক। বসের ব্যক্তিগত বিষয়ে কর্মচারীর নাক না গলানোই ভালো। এবার বলুন আপনার চায়ে চিনি কতটুকু দেবো?’
– ‘আপনি জ্বাল দিয়েছেন যেহেতু আপনার মতোই চিনি দেন।’
– ‘আচ্ছা।’
চামুচ দিয়ে কাপ নাড়তে নাড়তে মৃদুল কাপ বাড়িয়ে বললো,
– ‘নিন ম্যাডাম।’
মানহা কাপ হাতে নিয়ে বললো,
– ‘আমাকে ম্যাডাম না বললেও চলবে। আড়ালে আমরা বন্ধুর মতো। একা থাকলে তুমি করে বলবেন।’
– ‘কেন?’
মানহা হেঁসে বললো,
– ‘কারণ আমার আদেশ। বসের আদেশ মানতে হয়।’
– ‘তাও ঠিক। তাহলে কেউ না থাকলে মানহা ডাকবো?’
– ‘হু, তাই ডাকবেন। আর চা’টা দারুণ হয়েছে।’
– ‘ধন্যবাদ।’
খানিক্ষণ চায়ের চুমুকে চুমুকে কেটে গেল তাদের। মৃদুল নীরবতা ভেঙে বললো,
– ‘শত হলেও তুমি বস। তাই রাতে ঘুরতে নিয়ে যাব। ট্রেন স্টেশনও আমি চিনি নিয়ে যাওয়া যাবে৷’
– ‘মানুষ যে দেখবে?’
– ‘কেউ দেখবে না, আমি আছি তো।’
– ‘সত্যি যাবেন?’
– ‘হ্যাঁ।’
রাত এগারোটা। সহকারী ছেলেটা চলে গেছে। শুধু মানহা আর মৃূদুল বসে আছে চেম্বারে।
– ‘আমার ভয় ভয় করছে মৃূদুল।’
– ‘ভয়ের কিছু নেই, তুমি পাতলা ড্রেস আর ওড়না পরে নাও।’
– ‘আচ্ছা পরে আসি।’
মানহা দ্রুত ড্রেস পরতে চলে গেল। মৃদুল বাইরে উঁকি দেয়। মানুষ এখনও বাজারের এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে৷ কিছু কিছু দোকানও খোলা। খানিক পরই মানহা এলো। মৃদুল বাইরে বের হয়ে বললো,
– ‘আমার পিছু পিছু আসো। আর হ্যাঁ, বাজারে দু’জনের মধ্যখানে দূরত্ব রেখে চলতে হবে। আর একান্তই পরিচিত কেউ যদি সামনে পড়ে যায়, তাহলে বলবে ওজন বেড়ে গেছে। তাই রাতে একটু হাঁটাহাটি করছো।
– ‘আচ্ছা।’
মৃদুল আগে আগে হাঁটতে থাকে। মানহা পিছু পিছু। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা বাজারের বাইরে চলে এলো। পূর্ব দিকে বাজার থেকে একটা রাস্তা গিয়েছে। এই পথ ধরে গেলেই একটা গ্রাম, তারপর রেলস্টেশন।
মৃদুল রাস্তায় গিয়ে বললো,
– ‘আকাশে চাঁদ আছে দেখো। সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমরা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে মাঠ ধরে হাঁটি।’
– ‘আচ্ছা।’
দু’জন মাঠে নামে। হাওরের ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে। চাঁদের আলোয় সবকিছু হলদেটে দেখাচ্ছে।
খানিক পর মৃদুল বললো,
– ‘চলো আস্তে আস্তে দৌড়াই, কিছু পথ গিয়ে আলে বসবো। তারপর আবার দৌড়।’
মানহা হাসতে হাসতে বলল,
– ‘আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু হাওরের পরে তো গ্রাম। আমরা কোনদিকে গিয়ে এই গ্রাম থেকে বের হব। রাস্তা ধরে গেলে তো ডায়রেক্ট রেলস্টেশন পাওয়া যেত।’
– ‘আগে যাই ব্যবস্থা হবে। মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে চুপিসারে চলে যাব। আমি দৌড় দিলাম।’
মৃদুল সত্যিই দৌড় দিলো। মানহা খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে। খানিক পথ যেতেই সে হাঁপাতে হাঁপাতে আল দেখে বসে পড়লো,
– ‘এই দাঁড়াও।’
মৃদুল পিছু ফিরে তাকিয়ে কাছে এসে দু-হাতে হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– ‘কি হলো বসে গেলা কেন?’
– ‘আমাকে ফেলে এতোদূরে চলে গেলা কেন? আস্তে দৌড়াতে পারো না?’
– ‘আচ্ছা এখন আস্তে যাব।’
– ‘আমি আর দৌড়াতে পারবো না। দেখো ঘেমে গেছি।’
– ‘আরে পারবা, আস্তেধীরে দৌড়বো এখন।’
দু’জন আবার দৌড়ে। পাশে কোথাও শেয়াল ডাকছে। ভয়ে মানহা দৌড়ের গতি বাড়িয়ে মৃদুলের কাছাকাছি থাকে।
– ‘আচ্ছা আমরা দৌড়াচ্ছি কেন?’
– ‘হুদাই, রাতে দৌড়াতে ভালো লাগে। তোমার লাগছে না?’
– ‘এভাবে আস্তে আস্তে দৌড়ালে ভালো লাগে।’
– ‘হ্যাঁ আস্তেধীরেই দৌড়াও।’
হঠাৎ খানিকটা উঁচু ঢিবিতে মানহার পা লেগে পড়তে পড়তে আঁটকে গেল। তবুও ব্যথা পেয়ে গেল বুড়ো আঙুলে। বসে পড়লো মাঠে। মৃদুল তাড়াতাড়ি হাঁটু গেঁড়ে বসে আস্তে আস্তে আঙুল টেনে দিয়ে বললো,
– ‘ব্যথা কি বেশি লাগছে?’
– ‘কিছুটা।’
– ‘আমরা তো অনেকদূর চলে এসেছি। এখন ফিরে যেতে হবে না-কি?’
– ‘না তোমাকে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে পারবো।’
– ‘এর চাইতে বরং আমার কাঁধে উঠতে পারো।’
– ‘শিওর?’
– ‘হু।’
মৃদুল পিঠ দিয়ে বসে। মানহা পেছন থেকে তার গলা প্যাঁচিয়ে ধরার পর সে দাঁড়ায়। মানহা দু-হাতে তার গলা প্যাঁচানো। মৃদুল দু’হাতে মানহার দু’পায়ের হাঁটু তার পিঠের দিকে টেনে ধরে হাঁটছে।
– ‘এভাবে হাসছো কেন?’
– ‘আমার কাতুকুতু লাগছে।’
– ‘ভালো লাগছে না?’
– ‘ভীষণ।’
– ‘তাহলে কাতুকুতু লাগছে বললা যে?’
– ‘একটু একটু, কিন্তু তোমার কষ্ট হচ্ছে না।’
– ‘না।’
– ‘পেছনের বাঁ পাশে চাঁদের আলোয় আমাদের ছায়া পড়ছে।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ, কিন্তু বিশ্রী লাগছে দেখতে।’
– ‘কেন?’
– ‘তুমি তো আমাকে কাঁধে নিয়ে একটু বাঁকা হয়ে হাটছো। তাই হাঁটার সময় ছায়াকে দেখে মনে হচ্ছে ব্যাঙ লাফাচ্ছে।’
মৃদুল হেঁসে ফেললো। তারপর বললো,
– ‘আচ্ছা তোমার শ্বাস এতো গরম কেন মানহা?’
– ‘কীভাবে বুঝলে?’
– ‘বুঝবো না? সব শ্বাস তো আমার কানেই ছাড়ছো মনে হচ্ছে।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
আরও খানিকটা পথ এভাবে হাঁটার পর মৃদুল হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– ‘তোমার এতো ওজন বাবা, এখানে একটু বসি, হাঁপিয়ে গেছি, পা’র পেশিতেও ব্যথা শুরু করেছে।’
মানহা ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘আচ্ছা।’
মৃদুল মাঠে লম্বা হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁপাচ্ছে। মানহা পাশে বসে খিলখিল করে হেঁসে চারদিকে তাকায়। নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গ মনে হচ্ছে।
– ‘তোমার কি পা বেশি ব্যথা করছে?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘উপুড় হও।’
– ‘কেন?’
– ‘আরে হও না।’
মৃদুল কিছু বুঝতে না পেরে উপুড় হয়।
মানহা আস্তে আস্তে তার পা টিপা শুরু করে। মৃদুল বিস্মিত হয়ে বলে,
– ‘কি করছো এসব?’
– ‘আরে কিছু হবে না। এখানে কি কেউ আছে?’
মৃদুল আর বাঁধা না দিয়ে কেবল হাসলো।
– ‘তোমার এতো কষ্ট যেহেতু হচ্ছিল নামিয়ে দিতে পারতে।’
– ‘আরে এগুলো সমস্যা না।’
তারপর খানিক্ষণ নিঃশব্দে কেটে যায়। মৃদুল খানিক পর উঠে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘জানো, বৃষ্টির দিনে রাস্তায় কাদা হলে আমার বোনকে এভাবে কাঁধে করে স্কুলে দিয়ে আসতাম। তখন খুব ছোট্ট ছিল। এখন কত বড়ো হয়েছে কে জানে৷ কত বছর হলো তাদের দেখি না৷ বেঁচে থাকলে নিশ্চয় তোমার সমান হয়ে গেছে ইশি।’
মানহার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। দু-চোখ ভরে এলো জলে।
—চলবে—
বাঁক ( ৭ম পর্ব )
_____________
মানহা চোখের জল আড়াল করে বললো,
– ‘বোনকে কতদিন দেখোনি মানে কী? সে কোথায়?’
মৃদুল মাথা তুলে তাকায়। আপন মনে ভাবে তাহলে কী মানহা আমাকে চিনে না? না চিনলে এভাবে মেলা-মেশার কারণ কী? শুরু থেকে এতো উদ্ভট আচরণই বা কেন করছে? মৃদুলও আর নিজের সম্পর্কে জানাতে গেল না। মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘আরে না, এটা একটা মুভির ডায়লগ। পূর্ণিমার রাতে এই কথাগুলো নায়ক এভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেছিল। এখন মনে পড়ায় আমিও অভিনয় করেছি, এই আরকি।’
মানহা অদ্ভুত চাহনিতে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘পাক্কা অভিনেতা তুমি।’
মানহার বলার ভঙ্গিতে মৃদুল দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে,
– ‘আমি কী অভিনয় করলাম?’
– ‘তুমি তো অভিনয়ই করে যাচ্ছ।’
– ‘মানে।’
– ‘তুমি অভিনয় করোনি? তাহলে কি ওইটা মুভির সিন ছিল না? বাস্তবেই কী তোমার বোনকে কতদিন দেখো না?’
– ‘ও আচ্ছা, না ওইটা মুভির সিনই ছিল। কিন্তু তুমি এমনভাবে কথা বলো, দ্বিধায় পড়ে যাই।’
মানহা রহস্য করে আবার হেঁসে উঠে বললো,
– ‘বাবা কী নিখুঁত অভিনয়।’
মৃদুল ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
– ‘এভাবে বলছো কেন?’
– ‘অভিনয় করলে বলা যাবে না কেন?’
– ‘কী অভিনয় করলাম?’
– ‘ওইযে চাঁদের দিকে তাকিয়ে নায়কের মতো অভিনয় করে বললে সেটা।’
– ‘কিন্তু তোমার বলার ভঙ্গি ভিন্ন।’
– ‘চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।’
মৃদুল বিরক্ত হয়ে মানহার দিকে ঘুরে বসে বললো,
– ‘কী সমস্যা বলো তো। তুমি শুরু থেকে আমার সাথে এরকম রহস্য করছো কেন?’
মানহা ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘কী রহস্য করেছি?’
মৃদুল সতর্ক হয়ে যায়। তারপর ব্যস্ত হয়ে বললো,
– ‘আরে আমরা বসে আছি কেন? চলো হাঁটি, এইতো গ্রামের কাছাকাছি চলে এসেছি।’
– ‘আবার কাঁধে নাও।’
মৃদুল বসে পিঠ পেতে আবার তাকে কাঁধে নেয়। হাঁটতে থাকে তারা। খানিক পর মানহা ওর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– ‘আমার রহস্য কি তোমার কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে? না হলে ইনজয় করো। ক্ষতি হলে বলবে৷ এইযে জব পেলে, আমি পরিচয়ের জন্য জেরা করিনি৷ বায়োডাটা, যোগ্যতা কিছুই লাগেনি। এতে তোমার তো ভালোই হচ্ছে তাই না?’
মৃদুল হাঁটতে হাঁটতে বললো,
– ‘তা ঠিক, তবুও মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে কিছু লোকাচ্ছ, সবকিছু খুলে বললেই পারো।’
মানহা ওর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে সুর দিয়ে গাইল ‘সব কথা বলে না হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।’
মৃদুলের কাছে সবকিছু রহস্য লাগছে৷ তবুও সে আগ্রহ দেখাতে গেল না। সময়ের উপর রহস্য ছেড়ে দিল। আজ না হয় কাল সময়ই সকল রহস্যের সমাধান করবে। তবুও অতি উৎসাহী হয়ে নিজ থেকে প্রশ্ন করতে গিয়ে ধরা দিতে চায় না। এর চাইতে মানহার মতোই চলা হোক। তার সঙ্গে ধীরে ধীরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেলে সাহায্য চাইবে। কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হবে। না হয় জীবন জটিল হয়ে যাবে। সে মানহাকে বিশ্বাস করতে চায়। কিছুদিন পর তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলে একদিন সবকিছু খুলে বলে সাহায্য চাইবে। খুঁজে বের করবে তার মা বোনকে। তারপর পুলিশ ধরলে ধরুক। এখন সে যে জীবনকে যাপন করছে এর চাইতে অন্তত খানিক্ষণ মায়ের কোলে মাথা পেতে ঘুমিয়ে হাজতে যাওয়াই ভালো। বোনের মিষ্টি মুখ দেখে ফাসির মঞ্চে উঠা ভালো। এই ফেরারি জীবনে কী আছে? এতো লুকোচুরি ভালো লাগে না। তার জীবনের বাঁকগুলো বড়ো বেদনার। একেকটা বাঁকে কত স্মৃতি, কত আপনজন ফেলে নিরুদ্দেশ হতে হয়। তাকিয়ে দেখে একটা বাড়ির পেছনে চলে এসেছে তারা।
– ‘মানহা নামো এবার। এদিকটা হেঁটে হেঁটে যেতে পারবে না?’
মানহা ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘আমি তো পুরাই সুস্থ, দৌড়াতে পারবো।’
– ‘এটা ঠিক না।’
– ‘কী?’
– ‘সুস্থ হয়েও আরেকজনের কাঁধে চলা।’
– ‘ভালো লাগছিল অনেক তাই।’
আচ্ছা ঠিকাছে চলো আমার পিছু পিছু। মৃদুল কুঁড়েঘরের পাশ দিয়ে উঠানে আসে। তারপর মাথায় একটা দূষ্ট বুদ্ধি উদয় হলো তার।
– ‘তুমি ওই রাস্তা দিয়ে পুকুর পাড়ের মাথায় গিয়ে গাছের আড়ালে দাঁড়াও।’
– ‘কেন?’
– ‘আরে যাও না দেখো কী করি।’
মানহা ইতিউতি করে গেল।
মৃদুল কুঁড়েঘরের দরজায় গিয়ে কয়েকটা নক দিতেই ভেতর থেকে পুরুষালী গলায় বললো,
– ‘এই কেটা এতো রাইতে?’
– ‘দাদা ঘুমাইয়া পড়লেন না-কি, দরজাটা খুইলা দেন আমি আইছি।’
– ‘আমি কেটা?’
– ‘দরজাটা খুইলা তো দেখেন দাদা।’
– ‘খাঁড়াও আইতেছি।’
মৃদুল সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিয়ে উঠোন পেরিয়ে পুকুর পাড়ের মাথায় চলে এলো। মানহা অবাক হয়ে বললো,
– ‘এটা কী হলো?’
চলো এখান থেকে তাড়াতাড়ি। দাদা লাঠি নিয়ে খুঁজবে। মানহা হাসতে হাসতে দৌড়ায় ওর সঙ্গে। খানিক পর পিছু ফিরে দেখে দরজা খুলে লোকটি বলছে,
– ‘এই কেটা, কই গেলা ডাইকা?’
তারপর বকাঝকা করে পুনরায় দরজা বন্ধ করে দিলো।
– ‘তুমি তো অনেক দুষ্ট।’
– ‘আর তুমি?’
– ‘আমি কী করলাম?’
– ‘সুস্থ হয়েও কাঁধে চড়া কী দুষ্টামি না?’
মানহা ওর হাত ধরতে ধরতে হাসলো। তারা উঠে এলো মেইন রাস্তায়। খানিক হাঁটার পর বাঁ দিকে গেল। এ রাস্তায় কাজ চলছে৷ ইট বের হয়ে আছে। একটু পথ যেতেই প্রচুর বালিও পেল। হাঁটতে গিয়ে যেন পা ডুবে যাচ্ছে। বালি পেরিয়েই দেখে পাকা রাস্তার মুখে কয়েকটা কুকুর বসে লেজ নাড়াচ্ছে। তাদের দেখেই ‘ভেউ ভেউ’ করে ধেয়ে আসলো। মানহা ‘আল্লাগো’ বলেই মৃদুলের বুকে মুখে লুকোয়।
– ‘আরে আমাকে ছাড়ো।’
– ‘পারবো না ছাড়তে ভয় লাগে।’
– ‘তুমি পেছনে যাও দেখো কুকুরকে কীভাবে বিদায় করি।’
– ‘আচ্ছা।’
কুকুরগুলো তাদের পাশে এসে ‘ভেউ ভেউ’ করে চক্রাকারে ঘুরছে। মানহা পেছনে যেতেই মৃদুল মাটিতে হাত দিয়ে বললো,
– ‘কুত্তার লাঠি কই রে।’
কুকুরগুলো সঙ্গে সঙ্গে যেদিকে পারে ছুটে পালিয়ে গেল। মানহা মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে গেছে।
– ‘আরে কী হলো এভাবে হাসছো কেন?’
– ‘আমাকে ধরে তুলো আমার পেট ব্যথা করছে।’
মৃূদুল তাকে টেনে তুলতে তুলতে বললো,
– ‘এতো হাসির কী হলো এখানে? তোমরা মেয়ে মানুষ না হুদাই হাসতে পারো।’
– ‘হাসবো না? তুমি মাটিতে হাত দিয়ে কুত্তার লাঠি কই রে এমনভাবে বললে না হেঁসে পারা যায়?’
– ‘ওমা এটা তো সবাইই বলে। মাটিতে হাত দিয়ে এ কথা বললে কুকুর উল্টো দৌড়ে পালায়।’
– ‘তাই বুঝি? কুকুর কী বুঝে কুত্তার লাঠি কী? এ কথা বললে পালাবে কেন?’
– ‘আরে না মাটিতে হাত দিলেই দৌড় দেয়। সঙ্গে একটা কিছু বলা নিয়ম, এই আরকি।’
– ‘কার নিয়ম।’
– ‘মুরব্বিদের।’
‘ও আচ্ছা’ বলেই মানহা আবার হাসতে শুরু করে।
মৃদুল বিরক্ত হয়ে বললো,
– ‘এখন আবার কী হলো? তুমি আবার হাসছো কেন?’
মানহা হাসি থামাতে না পেরে আবার বসে গেল রাস্তায়। কান্না আর হাসি ছোঁয়াচে রোগ কি-না। মৃদুলেরও এখন নিজের অজান্তে হাসি পাচ্ছে। সে হাসতে হাসতে মানহাকে টেনে তুলে বললো ‘তোমরা মেয়েরা না আজব। এই সামান্য ব্যাপারে এতো হাসির কী আছে বুঝি না।’
– ‘হাসবো না? তুমি কিরকম হুট করে মাটিতে হাত দিয়ে বললে ‘কুত্তার লাঠি কই রে’ সেটা আজব না মানুষ হাসলেই আজব হয়ে যায়।’
– ‘খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।’
– ‘জ্বি না স্বাভাবিক না। আপনি এমনভাবে বলছেন গলাই বদলে গেছিল।’
দু’জন অনর্থক তর্ক-বিতর্ক করতে করতে উঠলো এসে পাকা রাস্তায়। আচমকা দেখা গেল রাস্তার মাঝখানে দু’জন মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে করতে গান গাইছে ‘হাওয়ার উপর চলে গাড়ি
লাগেনা পেট্রোল ডিজেল
মানুষ একটা দুই চাকার সাইকেল।’
মানহা বিস্মিত হয়ে বললো,
– ‘আল্লাহ এরা রাস্তার মাঝখানে এসব কী করছে?’
‘মাতাল মনে হয়, আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আসছি’ বলে মৃদুল লোক দু’টার কাছে গিয়ে বললো, ‘কার দমকলের পানি বেশি দূরে যাচ্ছে দাদা?’
একজন বললো ‘আমারটা দূরে যাইতেছে।’
আরেকজন বললো, ‘চুপ কর শালা আমারটা দূরে যাইতেছে।’
– ‘চুপ শালা মাতাল আমার দমকলের পানি দিয়ে দেয়াল লিক করে ফেলান যাইব।’ বলে লোকটি রাস্তার ওপাশের দেয়ালের দিকে মুততে মুততে হাঁটতে লাগলো।
দ্বিতীয়জন বললো ‘শালা তোকে আমি গুলি করতেছি দেখ’ বলে পেছন থেকে ওর উপরে মুতে মুতে হাঁটছে।
একটু পরেই সামনের মাতাল বললো,
– ‘কিরে শালা দমকলের পানি কই গেল?’
– ‘হ তাইতো, আমারও তো আর আইতেছে না।’
মানহা এসব কাণ্ডকারখানা দেখে দূর থেকে মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বারবার নুইয়ে পড়ছে। মৃদুল তাকে নিয়ে আলগোছে মাতালদের পাশ কাটিয়ে স্টেশনে ঢুকে গেল। সামনেই একটা চা’র দোকান। মানুষ বসে গল্প করতে করতে আয়েশ করে চা খাচ্ছে। একটু এগুতেই দেখা গেল ছিন্নমূল মানুষেরা যেখানে-সেখানে কুণ্ডলি পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকজন ঘুমানোর জায়গা নিয়েও তুমুল ঝগড়াঝাটি করে যাচ্ছে।
– ‘মামা দু’টা চা দেন।’
মানহা দুষ্টামি করে বললো,
– ‘লিকার চা লাগান মামা লিকার চা।’
মৃদুল ফিসফিস করে বললো,
– ‘তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?’
– ‘ছেলেদের মতো বলার চেষ্টা করেছি আরকি।’
– ‘কেন?’
– ‘এতো কেন কেন করো না তো।’
মামা চা এনে দিলো। মানহা ইচ্ছা করে শব্দ তুলে চা টান দেয়। বসেছেও ছেলেদের মতো। মৃদুল কেবল মুচকি মুচকি হাসছে। চা শেষে মানহা ফিসফিস করে বললো,
– ‘সুপারি আর সিগারেট আনো।’
– ‘কী বলো। আমি এসব খাই না।’
– ‘ব্যাটা মানুষ এগুলো খাও না কেন?’
– ‘ব্যাটা হলেই খাওয়া লাগবে না-কি?’
– ‘নিয়মিত না খেলেও বিশেষ বিশেষ দিনে খাওয়া নিয়ম।’
– ‘কার নিয়ম?’
– ‘এতো কথা না বলে যাও তো, সিগারেট আর সুপারি নিয়ে আসো।’
মৃদুল ইতিউতি করে সিগারেট আর সুপারি নিয়ে এলো। তারা আবার বের হয়ে গেল রাস্তায়। মানহা জর্দা চুন সহ পান মুখে পুরে বললো,
– ‘সিগারেট আর লাইটার দাও।’
– ‘তুমি কী নিয়মিত খাও?’
– ‘আরে না, তবে ছেলেদের মতো সবকিছু করতে ভালো লাগে। আজকেই প্রথম সুযোগ পেলাম।’
– ‘তাই?’
– ‘হ্যাঁ।’
মানহা পান চিবোতে চিবোতে রাস্তায় ‘ফুরুত’ করে রস ফেলে সিগারেটে কায়দা করে আগুন ধরায়। মৃদুল মুচকি মুচকি হাসছে। সে লুকিয়ে জর্দা আর চুন ফেলে পান মুখে দেয়৷ মানহা তার দিকে লাইটার বাড়িয়ে দিলো। সেও একটা সিগারেট ধরায়। দু’জন টানতে টানতে ইটের রাস্তায় এলো৷ চাঁদের আলো এসে তাদের মুখে সরাসরি আছড়ে পড়ছে। মানহা ঠোঁট দেখিয়ে বললো,
– ‘জর্দা আর চুন দিয়ে খেয়েছি ঠোঁট কি লাল হইছে?’
– ‘হ্যাঁ, হইছে তো।’
– ‘তোমার ঠোঁট তো হয়নি।’
– ‘কী জানি কেন হয়নি।’
– ‘আচ্ছা আমার গরম লাগছে কেন? ঘেমে যাচ্ছি।’
– ‘আর?’
– ‘কান দিয়ে যেন গরম ভাপ বেরুচ্ছে। মাথা চক্কর দিচ্ছে।’
মৃদুল আলগোছে ধরলো মানহাকে।
– ‘তোমার মাথা ঘুরছে। জর্দা দিয়ে পান খেলে এরকম হয়। তাও আবার সিগারেটের টেনেছো৷ তাড়াতাড়ি মুখ থেকে পান ফেলে দাও।’
মানহা বাধ্য মেয়ের মতো মুখ থেকে পান ফেলতে গিয়ে বমি করতে শুরু করলো মাঝ রাস্তায়।
—চলবে—-