বাঁক ( ৩২ পর্ব )
মানহা পুরো রাত ঘুমোতে পারেনি। খানিক পর পর বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছে। রাতে কিছু খাওয়াও হয়নি। পুরো রাত কখনও বিছানায় উঠে দুই হাঁটুর মাঝখানে মুখগুজে বসেছে। কখনও মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসা। আবার কখনও বেলকনিতে বসে রাতের আকাশ দেখে সময় কাটিয়েছে৷ কি এক ভীষণ অস্থিরতায় পুরো রাত নির্ঘুম কেটে গেল। ভোরে মনে হলো হয়তো গতকাল দিনে ঘুমিয়েছে তাই ঘুম পাচ্ছে না। ঘুমিয়ে থাকলে হয়তো শান্তি পাবে। তাই নিচে গেল মামার ফর্মেসিতে। কর্মচারী রাতে এখানেই ঘুমায়। দুই হাতে শাটারে আঘাত করতে লাগলো গিয়ে। ছেলেটির ভয়ে হকচকিয়ে উঠে বললো,
– ‘কে?’
– ‘আমি মানহা।’
ছেলেটি শাটার খুলে মানহাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। চোখ দুটো সিঁদুরের মতো লাল হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো। মোটেও তার কাছে মানহাকে স্বাভাবিক মনে হলো না।
– ‘কি হয়েছে আপু? এতো ভোরে ডাকছেন কেন?’
– ‘আমাকে ঘুমের ওষুধ দাও।’
– ‘কি বলছেন আপু? ঘুমের ওষুধ কেন?’
– ‘এতো কথা তুমি জেনে কি করবে? বলছি ঘুমের ওষুধ দিতে সেটা দাও।’
ছেলেটি ইতিউতি করে তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিল। মানহা উপরে এসে ঘুমের ওষুধ খেয়ে সেই ভোরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। দুপুরে কলিংবেলের শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়৷ উঠে এসে দরজা খুলে দেখে ছোট খালা। তার পেছনে মামা আর কর্মচারী।
– ‘খালা তুমি হঠাৎ কোথা থেকে?’
খালা কোনো জবাব না দিয়ে ‘খপ’ করে তার হাত ধরে বললেন আমার সাথে বাড়িতে চল৷
– ‘না আমি যাব না।’
– ‘মানহা বাড়াবাড়ি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।’
তারপর কর্মচারীকে বললেন,
– ‘ভাই আপনি গিয়ে ওর ভ্যানিটিব্যাগ নিয়ে আসুন তো। ওটায় চাবি আছে হয়তো।’
‘আচ্ছা’ বলে ছেলেটি ভেতরে গিয়ে খানিকপর ব্যাগ নিয়ে ফিরে এলো। মানহা কোনো জোরাজুরি না করে খালার কাঁধে মাথা ফেলে শূন্যদৃষ্টিতে দেয়ালে তাকিয়ে আছে।
খালা ছেলেটিকে বললেন,
– ‘চাবিটা বের করে তালা মেরে দিন।’
ছেলেটি তালা মেরে ভ্যানিটিব্যাগ দিলো মানহার হাতে। নেমে এলো তারা নিচে। মামা আর কর্মচারী ফার্মেসিতে চলে গেলেন।
খালা তাকে নিয়ে খানিক এগিয়ে একটা রিকশা ডাকতে গেলেন। তখনই তার মোবাইল বেজে উঠে। ভ্যানিটিব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে ইরফান। মানহা রিসিভ করল।
– ‘হ্যালো মানহা শুনছো আমার কথা।’
– ‘হ্যা বলো।’
– ‘আমার কাছে থানা থেকে কিছুক্ষণ আগে কল এসেছে। পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে মৃদুল ভাই।’
– ‘মানে! কখন, কোথায় আর তুমি জানলে কীভাবে।’
– ‘সিলেট কোতোয়ালি থানায়৷ পুলিশ মৃদুল ভাইয়ের কাছে আত্মীয়-স্বজন কারও নাম্বার চেয়েছিল, তারাই জানিয়েছে।’
– ‘এখন কি করবেন?’
– ‘চিন্তার কিছু নেই মানহা, আমি দেখছি সবকিছু। তোমাকে শুধু জানাতে কল দিয়েছি।’
– ‘ইরফান ভাই আমি এখনই আসছি। তুমি দেখা করতে গেলে আমিও যাব।’
– ‘আরে না তুমি আসতে হবে না।’
– ‘আমি আসবো ভাই, তোমাকে সিলেট এসেই কল দিচ্ছি।’
খালা মানহার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। ফোন রাখতেই বললেন,
– ‘এখন কোথায় যাবি?’
– ‘খালা আমার যেতে হবে।’
– ‘কোথাও যাওয়ার দরকার নাই বাসায় চল।’
মানহা হেঁচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে ছুটে চললো বাস স্টেশনের দিকে। খালা পিছু থেকে ডাকছেন ‘এই মানহা দাঁড়া, মানহা দাঁড়া বলছি’ সে কিছুই শুনছে না। আশেপাশের দোকান থেকে মানুষ দৃশ্যটি গিলছে। পথচারীরা দাঁড়িয়ে দেখছে। ঝামেলা সৃষ্টি হবে দেখে মানহার খালা এবং মামা আর তাকে আঁটকাতে গেলেন না। মানহা বাসে উঠে হাঁপাচ্ছে। ফর্মেসির সিঁড়ি থেকে ছোট খালা দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছেন। মামার রক্তচক্ষু দেখা যাচ্ছে। সবকিছু উপেক্ষা করে মানহা দুই হাতে মুখ ঢেকে সিটে বসে রইল। বাস চলতে শুরু করেছে। মানহার নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। সে জানে মৃদুল তার সঙ্গে প্রচণ্ড অন্যায় করেছে৷ তবুও তার কাছে ছুটে যাচ্ছে। আবার বুঝতে পারছে মামা খালাদের সঙ্গে সেও প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড বাড়াবাড়ি করে যাচ্ছে। তবুও তারা তাকে ফেলে দিচ্ছেন না। কী এক অদ্ভুত সমীকরণ। যাকে ভালোবাসি আমরা তার শত অন্যায়ও মুখবুজে মেনে নিতে চেষ্টা করি। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যে ডালিমের বিচির মতো একত্রে বসবাস করে এই ত্যাগগুলোই হয়তো কারণ। প্রায়ই আমাদের প্রচণ্ড অন্যায়, অবিচার, বাড়াবাড়ি মেনে নিতে হয়। কখনও সন্তানের, কখনও স্ত্রী স্বামীর। কখনও প্রণয়ে একে ওপরের। শত অন্যায়ের পরও এক অদ্ভুত কারণে কেউ কারও দিক থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না।
বেলা দু’টার দিকে মানহা সিলেট এলো। বাসে থাকতেই ইরফানকে কল দেয়ায় তাকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে এসেছে সে। মানহাকে দেখে তার মা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। অনেক দিন পর বান্ধবীর মেয়েকে দেখেছেন। ইরফান এবার আর লুকোচুরি খেলতে চাচ্ছে না। কারণ মৃদুল যেহেতু পুলিশের কাছে ধরা পড়ে গেছে তার জন্য প্রকাশ্য কাজ করতেই হবে। মানহা লতিফা বেগমের পাশে বিছানায় বসা। সে সোফায়। তার স্ত্রী রান্নাঘরে।
ইরফান উঠে মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
– ‘মা আমরা মানিক ভাইয়ের মা আর বোনের সন্ধান পেয়েছি।’
– ‘বলিস কিরে ওরা কোথায়?’
– ‘আছে, কিন্তু সমস্যা হলো আজ মানিক ভাই পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে।’
– ‘সর্বনাশ ছেলেটার জীবন বরবাদ করে দিছে তোর বাপ চাচারা। এরা পশু, জানোয়ার। কিন্তু মানিক তো খুনি না।’
– ‘হ্যাঁ মা, সবকিছু এখন খোলাসা করার সময় এসেছে৷ এই পরিবার ধ্বংসের জন্য তুমিও সমান দায়ী। তুমি আব্বার সাথেই সারাজীবন ছিলে। বুদ্ধি পরামর্শে ছিলে। এখন অন্তত এই মানুষগুলোর পাশে আমাদের দাড়ানো উচিত।’
– ‘আমি এখন কি করবো রে বাপ?’
– ‘আমরা সাক্ষী দিব। সব সত্য প্রকাশ করবো।’
– ‘তা তো দরকার হলে করবোই। তোর বাপ তো আমার সাথেও অন্যায় করেছে।’
ইরফান এবার মানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘মানিক ভাইয়ের খবর পেয়ে ইশি আমাকে একটু আগে আবার নিজ থেকে কল দিয়েছে।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘এখন শোনো, আমার পরিচিত একজন ভালো উকিল আছেন। ইশি আসবে তারপর আমরা তিনজন গিয়ে দেখা করবো।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
– ‘তোমাকে ফ্রেশ লাগছে না। গোসল করে খাওয়া-দাওয়া করে নাও। ইশি এসে কল দিলে আমি তাকে আনতে যাব।’
মানহা সম্মতি জানায়। ইরফানের কল এলো কিছুক্ষণ পর। ইশির নাম্বার দেখে রিসিভ করলো সে। ওরা বন্দর এসে গেছে। ইরফান গিয়ে পেল আফতাবও সাথে এসেছে। দু’জনকে নিয়ে বাসায় ফিরল৷ ততক্ষণে মানহা গোসল করে নিয়েছে৷ আফতাব বসলো সামনের রুমের বিছানায়। মানহা ইশিকে দেখে সবকিছু ভুলে তাকে জড়িয়ে ধরলো। নিয়ে গেল লতিফা বেগমের কাছে। তিনি প্রথমে চিনতে পারলেন না৷ মানহা পরিচয় দিতেই কেঁদে ফেললেন। ইশির মায়ের শরীরের অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। ইরফানের স্ত্রী তাদের নাশতা দিল। সবাই নাশতা করে বের হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় পৌঁছাল এডভোকেট মাহবুবুল আলমের চেম্বারে।
ভদ্রলোকের মাথার সকল চুল সাদা। মুখ ক্লিন সেভ। গায়ের রঙ কালো। তাদেরকে বসতে বললেন সামনের চেয়ারে।
– ‘এবার আমাকে বিস্তারিত বলুন।’
তিনজন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে ইরফান বলতে শুরু করতেই উকিল সাহেব আঁটকালেন।
– ‘এরা তিনজন কে?’
– ‘এখানে দু’জনের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। একজন হচ্ছে গ্রেফতারকৃত মানিকের বোন, নাম ইশি। আর ওর নাম মানহা জান্নাত৷ বলা যায় সেদিন তাকে কেন্দ্র করেই ঘটনাটা ঘটেছিল। এবং সেও আমার মতো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘তাহলে মানহা জান্নাতই বলুন আমাকে বিস্তারিত। আপনি আসামির কী, এবং কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, কী দেখেছিলেন সবকিছু।’
মানহা বলতে শুরু করলো,
‘আমার বাবা ঢাকায় থাকতেন। হঠাৎ দাদির সঙ্গে ঝগড়া করে মা আমাকে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠেছেন। আমার স্কুল ছুটি হয়ে যেতো বারোটায়৷ সুতরাং সারাক্ষণ মা আর আমি একা বাসায় থাকতাম। সন্ধ্যায় মা রান্নাবান্না করতেন আমি পাশে একটা টোলে বই নিয়ে বসতাম। পড়ানোর পাশাপাশি মা নানান গল্প করতেন। বেশিরভাগ গল্প ছোটবেলার। প্রতিটা গল্পেই ইরফান ভাইয়ের মা আসতেন ঘুরেফিরে। তারা ছিলেন বাল্য বান্ধবী। ছোটবেলা থেকে খেলাধূলা পড়ালেখা সবই এক সঙ্গে করেছেন৷ তো একদিন মা বললেন সুন্দর পুর বান্ধবীর বিয়ের পর গিয়েছিলেন। অনেক সুন্দর গ্রাম। ভূতের বাড়ি একটা আছে কেউ যায় না ভয়ে। একজন ওঝাও আছে যে জিন ভূত অন্ধকারে নামিয়ে আনে। জিন না-কি মিষ্টিও দেয় সবাইকে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মতো। বায়না ধরলাম ওই গ্রামে যাব। আম্মুও লতিফা খালাকে ফোনে বললেন, ‘তোর বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার মেয়ে পাগল হয়ে আছে।’
তিনি বললেন, ‘ভালোই তো একদিন নিয়ে আয় না।’
উকিল গলা খাঁকারি দিয়ে মানহাকে থামিয়ে দিলেন।
– ‘আপনি মূল ঘটনাটা বলুন। এতদূর থেকে শুরু করছেন কেন? আপনি কীভাবে সুন্দরপুর গিয়েছিলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ না।’
মানহা লজ্জা পেয়ে বললো,
– ‘আচ্ছা আমি মূল ঘটনা তাহলে বলছি।’
– ‘মায়ের সঙ্গে ঈদের ছুটিতে সুন্দরপুর গেলাম। কিন্তু ভূতের বাড়ি কেউ যেতে দেয় না। রাতে ওঝার ওখানেও যেতে পারছিলাম না। একদিন আমি ইশি, মানিক, ইরফান ভাই সবাই মিলে খেলাধূলা করছিলাম। তখন তাদের বললাম, ‘চলো ভূতের বাড়ি যাই।’
ইশি আর ইরফান ভাই না করল যাবে না। ইশির ভূতে ভয় আর ইরফান ভাইয়ের ভূত থেকেও মা-বাবার ভয় বেশি।
কিন্তু সন্ধ্যায় মানিক এসে ফিসফিস করে বললো ওঝার বাড়ি যাচ্ছে। বৃহস্পতি বার ওঝা ভূত নামায়। আমি তার সাথে গেলাম।’
উকিল আবার থামিয়ে বললেন,
– ‘আপনি এতো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন কেন?’
– ‘শুনুন না, অপ্রাসঙ্গিক না, সেদিন ভূত নামানো দেখে এসে আমি মায়ের বকা খেলাম। সবাই জেনে গেল মানিক আমাকে নিয়ে ওঝার বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু খুব বেশি ঘাটালো না কেউ। পরেরদিন আবার আমাকে নিয়ে গেল সে জঙ্গলের ভেতরে ভূতের বাড়ি।
আমরা বারান্দা পেরিয়ে হলরুমে যেতেই পুরো বাড়ি কেঁপে উঠে ভয়ংকর অলীক হাসিতে। আমাদের দিকে কালো পোশাক পরা কেউ আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে আমি মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। মানিক আমাকে কাঁধে করে নিয়ে দৌড়াতে থাকে। জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে দোকানের সামনে যেতেই লোকজন দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। সে আমতা-আমতা করে বলে ভূতের বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। সবাই বকা দেয় তাকে। তারপর লোকজন আমাকে দোকানের সামনে রেখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই জেগে উঠি। লোকজন পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি বলি চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসেছি। তারা পথ এগিয়ে দেয়। লোকমুখে চেয়ারম্যান খবর পান। চেয়ারম্যান ইরফানেরই বাবা। জানতে পারেন আগের রাতে আমাকে ওঝার বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছিল মানিক। তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
‘তুই ওকে ওঝার বাড়িও নিয়ে গেলি কত বড়ো সাহস তোর।
এদিকে ভূতের বাড়ি যেতে সবাই ভয় পায় তুই ওকে নিয়ে যেতে সাহস করলি কীভাবে?’
উকিল তাকে থামিয়ে বললেন,
– ‘মানিক হচ্ছে যাকে পুলিশ ধরেছে তাই তো?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘সে চেয়ারম্যানের বাড়িতে কেন থাকতো?’
ইরফানই বললো,
– ‘মানিক ভাইয়ের মা স্বামীকে ফেলে চলে এসেছিলেন। স্বামী গাঁজা খেতো আর জোয়া খেলতো সারাদিন। মারধর করতো বাড়িতে এসে। তাই বাপের বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু সেখানেও ভাইয়ের বউদের সাথে বনিবনা না হলে বাবা তাদেরকে আমাদের বাড়িতে কাজে আনেন।’
– ‘ও আচ্ছা বুঝেছি। তারপর বলুন মানহা জান্নাত।’
– ‘হ্যাঁ, যখন মানিককে বললেন সবাই ভয় পায় তুই কোন সাহসে এই মেয়েকে নিয়ে গেলি?
মানিক তখনই বলে ফেললো, ওখানে ভূত নাই আমি জানি তাই সাহস করে নিয়ে গেছি৷
তিনি তখন অসম্ভব রেগে গিয়ে বললেন,
‘শালার পুত ভূত নেই তুই জানলি কি করে?’
সে জবাবে বললো,
ওখানে আমি দেখেছি গাঁজাখোররা যায় আসে। গাঁজার ব্যবসা হয়। আর ওই ওঝা ভণ্ড আগেই জানি। তাই ও যেতে চাইছে দেখে নিয়ে গেছি।
চেয়ারম্যান ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
ওঝা ভণ্ড কীভাবে জানলি?
সে জবাবে বললো, ওঝা যখন সবাইকে ঘরে বন্দি রেখে উদ্ভট আওয়াজ করে নদীর পাড়ে গিয়ে জিন-ভূতের কাছ থেকে তাবিজ আর সবার নাস্তার জন্য মিষ্টি, লিচু আনতে যায় আমি একদিন লুকিয়ে পিছু পিছু গিয়েছি৷ কেউ ভয়ে যায় না। এর আগে যারা পিছু পিছু গিয়েছিল সবার না-কি রাস্তায় ঘাড় মটকে ফেলে রেখেছিল। আমি জানি এগুলো ভণ্ডের সঙ্গীদের কাজ। কিন্তু আমি এমনভাবে গিয়েছি কেউই টেরই পায়নি। আড়াল থেকে দেখেছি ওঝার উদ্ভট আওয়াজ শুনে দূর থেকে নাও একটা অন্ধকারে নদীর কিনারে এসে ব্যাগ দিয়ে যায়।
চেয়ারম্যান রেগে গিয়ে তাকে চড় মারলেন গালে। লাত্থি মেরে ফেললেন দূরে। তারপর ছোট ভাই এমদাদ খানকে বললেন এই শালার পুতকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে সোজা কর। কি সাহসটা না করছে খানকির ছেলে। ওরে বাইরে সারা রাত বেঁধে রাখবি।’
উকিল আবার থামিয়ে বললেন,
– ‘জঙ্গলে ভূত নেই বলায় আর ওঝাকে ভণ্ড বলায় চেয়ারম্যান রেগে যাচ্ছিলেন কেন?’
ইরফান মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘কারণটা আমিই বলবো। আগে ওর কথা শুনে নিন।’
– ‘আচ্ছা, তাহলে বলুন।’
মানহা আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘আপনার এখানে জল নেই? একটু খাব।’
উকিল পানির বোতল এগিয়ে দিলেন৷ মানহা পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করলো,
‘চেয়ারম্যান তারপর চলে গেলেন বাড়ি থেকে। অনেক রাত হয়ে গেছে। বাইরে মশা কামড়াচ্ছে। তা দেখে মানিকের মা নেহারা আন্টি এমদাদকে এসে অনুরোধ করলেন দড়ি খুলে দিতে। কিন্তু তার সোজা কথা ভাইয়ের আদেশ বাইরে বেঁধে রাখা। নেহারা বেগম ফিরে গেলেন। ঘণ্টা খানেক পর আবার ইশি গেল ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করতে।’
উকিল থামিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘এমদাদ কী খুন হওয়া সেই ব্যক্তি?’
– ‘হ্যাঁ, সেইই খুন হয়েছিল।’
– ‘আচ্ছা তারপর বলুন।’
___চলবে___