#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ২৪
অফ হোয়াইট রঙের চকচকে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁপানি রোগীর মত বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে তপা। নিশ্বাসের তালে তালে বুকের হাপর উঠানামা করছে। খিঁচে বন্ধ করে রাখা চোখদুটো আরও আঁটসাঁট করে টেনে ধরল পাপড়িযুগল। মুখের উপর পড়তে থাকা গরম নিশ্বাস জানান দিচ্ছে আরও একজনের উপস্থিতি। ইঞ্চি কয়েক দুরত্বে যার অবস্থান তার নাম পলক তাজওয়ার। যার এক হাতের বেপরোয়া ছোঁয়ায় নিজেকে দেয়ালের সাথে লেপ্টে দিয়েছে তপা। একহাত দেয়ালে রেখে অন্য হাতে মসৃণ কোমরে আলতো স্পর্শ করতেই কেঁপে ওঠে কোমলমতি শরীর। তিরতির করে কাঁপতে থাকে উষ্ঠযুগল। পলক মুচকি হাসে। গলার স্বর খাদে নামিয়ে ঘন গলায় শুধালো,
“আমায় চাও?”
মিটিমিটি আঁখি মেলে সরাসরি চক্ষুযুগলে তাকাল তপা। দেখতে পেল এক প্রেমিকের মাতাল করা দৃষ্টি। মাদকতাময় চাহনি। তপা চোখ নামিয়ে নেয়। ওই চোখ যে সর্বনাশা। পলক ঠোঁট কামড়ে হাসল। ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে আনল তপার মুখ বরাবর। ফিসফিস করে বলল,
“যদি বাড়াবাড়ি করি তুমি কি রেগে যাবে?”
পুনরায় তাকায় তপা। কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় স্থির থাকতে পারে না। তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যায় প্রেমিক পুরুষটির বেহায়া অভিলাষে।
তপা যখন কৌতুহলী দৃষ্টিতে চোখ মেলে তাকিয়েছিল পলক লাজ হীন প্রেমিকের মত বলল,
“একটি বার ওই অমৃত সাগরে নিমজ্জিত হয়ে অমৃত সুধা পান করার অনুমতি পেতে পারি?”
এমন বেহায়া আবদারে তপা নিজেকে লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আড়াল করতে চেষ্টা করে ওই নির্লজ্জ দৃষ্টি থেকে।
পলক তপার লাজে টুইটম্বুর রূপ দেখে মুগ্ধ হয় আরও একবার। বন্ধ চোখ জোড়ার উপর ছুঁয়ে দেয় নিজের তপ্ত উষ্ঠযুগল। কেঁপে ওঠে তপা। আঁকড়ে ধরে কোমরে বিদ্যমান পলকের পুরুষালী শক্ত হাতের বাহু। পলক থামে না। পুরু ঠোঁট যুগল চেপে ধরে কপালের ঠিক মধ্যিখানটায়। সুখের আবেশে ভাসে তপা। চেহারায় ফুটে উঠে সুখ সুখ ভাব।
ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপ হাতে ড্রয়িংরুমে আসতেই তটিনী যারপরনাই অবাক হলো। নিজের বড় বোনকে কোনো ক্রমেই আশা করে নি সে এই বাসায়। যে মেয়েটা কস্মিনকালেও এ বাসায় পা মাড়ায় নি তার হঠাৎ আগমন অবাক করেই বটে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে প্রান্তর দিকে কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে স্থির গলায় বলল,
“আপনার চা।”
প্রান্ত সৌজন্যসূচক হেসে বলল,
“উনার জন্যও নিয়ে এসো।”
তটিনী এবার বিরক্তই হলো। ও কি এই বাড়ির টি-মেকার নাকি? নাকি চায়ের কেটলি; যে কাত করবে আর গড়গড় গড়গড় করে গড়গড়িয়ে চা পড়বে! আশ্চর্য। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। তার আগেই রেশমি বলল,
“আমি আসলে নর্মাল টি খাই না। আমার জন্য বাসায় গ্রীন টি রাখা আছে।”
প্রান্ত হেসে বলল,
“তাহলে তো অতিথির আপ্যায়ণে ব্যর্থ এ মানব।”
তটিনী নিজের মত বিরবির করতে করতে দরজার পথ ধরল। রেশমি মৃদুস্বরে ডেকে বলল,
“তনু.. বাড়ি যাচ্ছিস?”
তটিনী পিছু ফিরে হা মুখে তাকাল। এ কেমন মিষ্টি সুরে ডাকল তার চেনা কর্কশ কণ্ঠী বোন। এ তো কাকের গলায় কোকিলের সুর। চোখ কচলে কানে আঙুল দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
“আমাকে কিছু বললে?”
রেশমি মুচকি হেসে বলল,
“তোকেই তো বললাম। বাড়ি যাচ্ছিস?”
তটিনী অবাক হয়েই মাথা নাড়াল। বলল,
“হ্যা। বাড়ি গিয়ে রান্না সামলাতে হবে। কলেজেও যেতে হবে আজ তাড়াতাড়ি। তুমি গেলে এসো।”
রেশমি প্রান্তর দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,
“ও আসলে মজা করছে। রান্নার একটা রিয়েলিটি শো দেখবে এখন। তাই বলছে রান্না সামলাতে হবে।”
প্রান্ত ততক্ষণে তটিনীর পশ্চাৎ গমনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। রেশমির সবে সাজিয়ে গুছিয়ে বলা মিথ্যেটা তার হাতের চায়ের কাপের স্বাদই বলে দিচ্ছে। দেখিয়ে দিচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে। প্রান্ত তাকিয়ে রয় দরজার দিকেই। থেকে থেকে চুমুক দিচ্ছে ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপে। সম্মুখে হাত পা নাড়িয়ে ক্রমাগত নিজের গুনগান গেয়ে চলেছে রেশমি।
বাগান পেরিয়ে গেইটের সামনে এসে তপা পায়ের চলার গতি থামিয়ে দিল। পলকের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বলল,
“একটা কথা বলতে পারি?”
পলক একগাল হেসে বলল,
“একটা কেন? দশটা বলো।”
“যদি কখনো জানতে পারেন আমার রক্তের সম্পর্কের কেউই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু। সেদিনও কি আমার কাছেই ফিরবেন আপনি?”
পলক অমায়িক হাসল। চোখেমুখে হাসি ফুটিয়েই বলল,
“শ্বশুর মশাইয়ের উপর রেগে কি বউ ভুলে যেতে পারি!”
তপা বিস্ময় ভরা নেত্রে তাকালে পলক আরও একটু বিস্ময় বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি কি ভেবেছো, আমার ওপর অ্যাটাক; তোমার কিডন্যাপ হওয়ার পেছনে যে আজমল হোসেনের হাত রয়েছে সেটা আমি জানি না? সবটাই টের পেয়েছি আমি। এসব নিয়ে ভেবো না। কোনো অমানুষের কালো ছায়া আমি আমার ভালবাসার উপর অ্যালাউ করব না।”
চলবে…