বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ২৫

0
73

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ২৫

আমবিয়ার সহাস্যে বলা বিরক্তিকর কথাগুলো বিরসবদনে শ্রবণ করছে আয়েশা। সাজিয়ে গুছিয়ে একের পর এক মিথ্যের ঝুড়ি উগলে দিচ্ছেন তিনি। দিনের পর দিন অত্যাচার করতে থাকা মেয়েটার জন্য যেন তার দরদ উতলে উঠছে এমন একটা ভান করছেন। আয়েশা মনে মনে দু’চার কথা শুনিয়ে দিলেও বাইরে তিনি নির্বিকার। সদা বুদ্ধিদীপ্ত আয়েশা জানেন রণকৌশল। কিভাবে রণক্ষেত্রে নিজেকে অক্ষত রেখে জয়ী হতে হয়। কিভাবে শক্তিশালী শত্রুকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাথা উঁচু করে নীড় খুঁজে নিতে হয়। এক্ষেত্রে তো নিজের একমাত্র ছেলের জীবনের প্রশ্ন!
তটিনী তপার কাছে আসার অজুহাতে পিছু পিছু চলে আসে আমবিয়া খাতুন। মুখে তটিনীর খোঁজে এলেও মূল উদ্দেশ্য ইনিয়ে বিনিয়ে রেশমির সাথে প্রান্তর বিয়ের ব্যাপারটা খোলাসা করা। প্রান্ত ফেরার পথেই রেশমির সাথে দেখা হয়। সেখান থেকেই নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে উঠে পড়ে লাগে মা-মেয়ে। মাঝখানে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে তটিনী আর তপার মধ্যকার সুন্দর সম্পর্ককে।

“আপা ছেলে তো গায়ে গতরে ভালোই হইছে। তা বিয়ে টিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু করছেন নাকি? আইজ কাইল তো পোলাপাইন দিয়া বিশ্বাস করন যায় না। থাকে বিদেশ বিভূঁইয়ে। কোন সময় কারে চোখে লাইগা যাইব, তহন কিন্তু কিছু করনের থাকব না আপা। তার আগেই পায়ে শিকল পড়ানোর ব্যবস্থা কইরেন। তাইলে আর এদিক ওদিক তাকানোর সুযোগ পাইব না।”
আমবিয়ার কথা শুনে আয়েশা নিরস হাসেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে সগৌরবে বললেন,
“আমার নাড়ী থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে আপা। পৃথিবী উল্টে যেতে পারে, কিন্তু আমার সন্তানেরা কখনো আমার কথার উপর কিছু করবে না। একটুকু ভরসা, বিশ্বাস করার মত করে মানুষ করেছি ওদের। কিন্তু আপনার কথাও ফেলে দেওয়ার মত না। ছেলে শুধু গায় গতরে না, বয়সে, মস্তিষ্কের পরিপক্কতায়ও বেড়েছে । বিয়ে করার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। আলহামদুলিল্লাহ মেয়েও আমার পছন্দের আছে একজন। খুব তাড়াতাড়িই ওদের চারহাত এক করে দিতে পারলেই আমার শান্তি।”
আমবিয়া খানিক ইতস্তত ও খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বলল,
“কে মেয়েটা? আপনার পরিচিত?”
আয়েশা মৃদু হেসে বলল,
“আপনার ঘরের মেয়েই।”
আমবিয়ার চোখ চকচক করে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই সেখানে একঝাঁক ক্রোধ দেখা দিল। যখন আয়েশা কোমল স্বরে বলল,
“আপনার মেঝো মেয়ে তটিনী কে বউ করে নিয়ে আসতে চাই আমার প্রান্তর জন্য।”
আমবিয়া খাতুন কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ ওঠে দাঁড়িয়ে গলা বাড়িয়ে বলল,
“তটিনী, তটিনী কোথায় তুই? বেরিয়ে আয় এক্ষুণি।”
তটিনী মায়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে প্রশ্নাত্মক ভঙ্গিমায় বলল,
“কি হয়েছে মা?”
আমবিয়া চোখমুখ বিকৃত করে আয়েশার দিকে তাকাল। নিরস গলায় বলল,
“এই বাড়ি থেকে চলে আয়। এখানে তুই নিরাপদ না। তোর মান সম্মানের ভয় আছে এই বাড়িতে।”
তটিনী অবাক হয়ে একবার আমবিয়ার দিকে তাকাল। আবার নজর ঘুরিয়ে আয়েশার দিকে তাকাতেই দেখল আয়েশাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমবিয়ার পানে।
আমবিয়া আয়েশার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। প্রায় টেনে হিঁচড়েই পার করে বাকি পথটুকু। নিজের ঘরের সদর দরজায় পৌঁছতেই ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দেয় আমবিয়া। অতঃপর বেধড়ক মার মেরে রক্তাক্ত করে অল্পবয়সী নরম শরীরটা। কাতর সুরে করা একেকটা বিলাপ বিলীন হয়ে যায় চার দেয়ালের মাঝেই। অশ্রুগুলোও সীমাবদ্ধ হয় ধুলো পড়া রংচটা মেঝেতে।

ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উপলক্ষে প্রায় সব ছাত্রছাত্রীই নিজ উদ্যোগে গাছ লাগাচ্ছে। তপা হাতে ছোট্ট একটা কাঠগোলাপের চারা নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছে। মনমতো একটা জায়গা খুঁজে না পেয়ে ঠোঁট উল্টে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে চারাটির দিকে তাকিয়ে রইল। এহেন সময় পেছন থেকে পরিচিত এক কণ্ঠ বিশ্রী ভঙ্গিমায় বলল,
“নরম ঠোঁটে ওমন দাঁতের আঁচড় দিও না সুন্দরী। দিলে যে বড্ড চোট লাগে।”
তপা পেছন ঘুরে শক্ত গলায় কিছু বলার আগেই একজোড়া কঠিন হাতের কোমল ছোঁয়া অনুভব করে বাহুজু্ড়ে। চোখে শান্ত ভাব অথচ গলায় কঠোরতা ঢেলে গমগমে আওয়াজ তুলে বলল,
“পলক তাজওয়ার নিজের ত্রিসীমানায় বাইরের কুত্তার নজর অ্যালাউ করে না। তুই তার কলিজায় নজর দিচ্ছিস? তোর কলিজার দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত কত বলতো? মেপে দেখতে হবে মনে হচ্ছে।”
স্বাধীন পলকের কণ্ঠের গম্ভীরতা সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষণাৎ জায়গা ত্যাগ করে।
তপা অবাক হয়ে পলকের দিকে তাকাল। কি শান্ত গলায় শাসিয়ে দিল। ছেলেটাও নেড়িকুত্তার মত লেজ গুটিয়ে পালাল।
পলক তপার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায়ই বলল,
“আমার পার্সোনাল প্রোপার্টি তুমি এভাবে কামড়াচ্ছিলে কেন? যদি জখম হয়ে যেতো? যা আমি আজও ছুঁই নি তা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কামড়ে দিলে মেয়ে? এজন্য তোমার জন্য শাস্তি বরাদ্দ হলো। কঠিন শাস্তি!”

চলবে…

নোটঃ পেইজের রিচ ডাউন। সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here