বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ২৮

0
78

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ২৮

“আর আপনি? শুধুই মায়ের কথা রাখতে?” চোখে মুখে একরাশ উদ্বিগ্নতা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল তটিনী।
প্রান্ত মুচকি হাসল। চোখে মুখে ফুটে উঠল একরাশ মুগ্ধতা। গলা খাকাড়ি দিয়ে আয়েশ করে বসে আবেশিত গলায় বলল,
“দীর্ঘ একটা সময় বাইরে কাটানোর পর আমি প্রফুল্লচিত্তে ছুটে আসছিলাম বাড়ির দিকে। সেদিনটা বেশ অন্যরকম ছিল। হঠাৎ করেই ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে কাল মেঘ করল। একসময় মেঘেরা পরিণত হলো বৃষ্টি ফোঁটায়। আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম ভীষণ। বৃষ্টি ভেজা নোংরা রাস্তায় যখন গা বাঁচাতে টিপে টিপে হাঁটছিলাম ঠিক তখনই নজর কাড়ে এক ষোড়শী তরুণী। যে কি- না ছাতা মাথায় হেলেদুলে আয়েশ করে হেঁটে গেল আমার সামনে দিয়ে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলাম মোহাবিষ্ট হয়ে। সে কিন্তু দেখল না; দিব্যি হেঁটে চলে গেল। বোকা মেয়েটা জানলোই না যাওয়ার সময় আমার শূন্য হৃদয়টা পূর্ণ করে দিয়ে গেল। আমি বাড়ি ফিরে আসি। সেদিনই সন্ধ্যা বেলা সামনের বাড়িটায় আকস্মিক চেঁচামেচির আওয়াজ পাই। অজানা কারণে সেই সময়টায় আমার মায়ের মনটাও খারাপ দেখতে পাই। কারণ জানতে চাইলে মা জানালো এক অবহেলিত রাজকন্যার গল্প। আমি তখনো জানতাম না এই রাজকন্যাই আমার হৃদয়হারিণী। জানলাম তখন যখন বেলকনির আবছা আলোয় তার কান্নারত অবয়বটা চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। সেদিন থেকে রোজ নিয়ম করে চলতে থাকে তার চুপিচুপি দর্শনদারী। একটু একটু করে ডুবতে থাকি আমি। বেশ টের পাচ্ছিলাম নিজের পরিবর্তন। নিজের থেকে বয়সে এত বছরের ছোট এক মোহে আবেশিত হয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে যাচ্ছিলাম। তবুও আমার কিছু করার ছিল না। নিজের কন্ট্রোলই ছিল না। এরমাঝে হঠাৎই একদিন আমারই বোনের সৌজন্যে তাকে নিজের বাড়িতে আবিষ্কার করি। দেখা হয় মুখোমুখি, কথা হয় সামনাসামনি। তার নিভু নিভু চোখ, ভীতু ভীতু চেহারা ; প্রেমে পড়ি আরও একবার। বোকা মেয়েটা টেরই পেল না।”

তটিনী হা করে তাকিয়ে রইল কিঞ্চিৎ সময়। এতকিছু হয়ে গেছে তার অগোচরে, অথচ সে বিন্দুমাত্র টেরও পেল না!
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
“শকট খেলে নাকি? কিছু বলো।”
তটিনী সরু গলায় বলল,
“এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি বলদ কিছুই বুঝিনি! আর আপনি নিজে আধবুড়ো হয়ে কচি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন? লজ্জা করল না, না?”

প্রান্ত হা করে নিজেকে অবলোকন করল। ঈষৎ অহং মিশ্রিত গলায় বলল,
“চোখে ন্যাবা হয়েছে তোমার? দেখেছো কখনো চোখ মেলে? কোন দিক থেকে বুড়া লাগছে আমাকে? আরও দশ বছর পরেও তোমার থেকে দশ বছরের ছোট কাউকে পটিয়ে বিয়ে করে আনতে পারব।”
তটিনী হেসে বলল,
“সে তো গ্রামের চুলদাড়ি পাকা মোড়লও তেরো বছর বয়সী বালিকা বিয়ে করে নিয়ে আসে। তাই কি সে বালক হয়ে যায়? তাছাড়া আমি আপনাকে বুড়ো বলিনি। আধবুড়ো বলেছি। লাইক অর্ধপাকা চালকুমড়া?”

প্রান্ত ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
“যতটা আলাভোলা মনে হয় ততটাও নয়! মেয়ে তো কিঞ্চিৎ চাট মশলাযুক্ত।”

পায়েল তাজওয়ার গত তিনদিন ধরে অনশনে আছেন। সকাল থেকে তা মাত্রারিক্ত রূপ ধারণ করেছে। গত তিনদিন পলক কিংবা রায়হান তাজওয়ার কারো সাথেই কোনোরূপ বাকবিতণ্ডা করেন নি তিনি। এমনকি আজ সকাল থেকে খাওয়া দাওয়াও তুঙ্গে তুলেছেন। তার এক দাবি এক সপ্তাহের মধ্যেই তার ঘরে পুত্রবধূ চাই। পলক কিছুদিন সময় চেয়েছে। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। একটা দিনও আর তপা কে বাইরে রাখতে পারবেন না তিনি। সামনে নির্বাচন। দিন যত এগিয়ে আসছে, পরিবেশের গাম্ভীর্যেতা তত বাড়ছে। তিনি জানেন এরপর পলল নির্বাচনের কাজেই ব্যস্ত সময় কাটাবে। সংসারের কথা তার মাথায়ও আসবে না। তাই তো সময় থাকতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে আঁটকে দিতে চান ছেলে কে। একটাই মাত্র ছেলে তার। এই তো একমাত্র জ্বলতে থাকা কুপি। বড্ড ভয় হয় যে তার। দেশের পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দাঙ্গা; ছেলেটার বড় কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়।

পলক মায়ের ছেলেমানুষী আবদার দেখে বাবার কাছে সাহায্য চায়। তিনি জানান তার সাথেও কথা বলছেন না পায়েল তাজওয়ার। অথচ এই পরিকল্পনায় দু’জনেই যে সমান ভাগীদার তা চতুরতার শীর্ষে অবস্থান করা তুখোড় রাজনীতিবিদ পলক তাজওয়ার ঘূনাক্ষরেও টের পেল না।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here