বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ৩০

0
83

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ৩০

তিনদিনের ব্যবধানে বিয়ের তারিখ রাখা হয়। যার ফলশ্রুতিতে মহাব্যস্ততায় কেটে যায় দুটো দিন। বিয়ের কেনাকাটা শেষ হলেও হুট করে নিজের অতিব প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা মনে পড়ে তপার। কাজেই সব রেখে বেরিয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে। কিন্তু সে ঘূণাক্ষরেও টের পায় নি, এই বেরিয়ে আসাই তার জীবনে কাল হয়ে ধরা দেবে…

শপিংমল থেকে বেরিয়ে অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল তপা। আজকাল পলকের ব্যস্ততাও ভীষণ বেড়েছে। সেজন্য একা একাই এসেছে শপিংয়ে। পলক কে জানানো অবধি হয় নি। পলকের নিয়জিত গার্ড দুজনও আজ আসে নি তার সাথে। অটো আসতে দেরি করায় তপা বিরক্ত হয়। ভর দুপুরে রৌদ্রতাপে শ্যামাবরণ বদন হালহা লালচে আভায় রক্তিম আকার ধারণ করে। ওড়নার কোণে কপালের উপর জমা বিন্দু বিন্দু ঘামটুকু মুছে চোখ বুলায় ডান হাতে পড়ে থাকা ঘড়িতে। ঘন্টার কাটা তখন বেলা দু’টোর ঘরে।
হঠাৎ মাস্ক পরা দুজন লোক এসে তপার সামনে দাঁড়াল। তপা খানিকটা ভড়কালেও দৃঢ়তার সাথে বলল,
“কি চাই?”
লোক দুটো একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। তপা বিপদ সংকেত বুঝতে পেরে দু’পা পিছিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। মুখের উপর গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই লুটিয়ে পড়ে সমস্ত শক্তি ত্যাগ করে।

অন্যদিকে তপার ফোনে বারংবার কল দিয়েও সাড়া না পেয়ে প্রান্তর ফোনে কল দেয় পলক। দু’বার রিং হওয়ার পর প্রান্ত ফোন তুলে তড়িঘড়ি করে বলল,
“তাড়াতাড়ি বল কি বলবি।”
পলক দ্বিগুণ তেজে বলল,
“ওই শালা তোর বোন কোথায়?”
প্রান্ত ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“তপা বাসায়ই আছে। আমাকে বিরক্ত করিস না। আমি বাইরে আছি।”
“কিন্তু ও ফোন কেন তুলছে না? তোর বোন তোর মতোই ইরেস্পন্সেবল, কেয়ারলেস।”
প্রান্ত আর দ্বিরুক্তি করল না। সবটাই মেনে নিয়ে বলল,
“মা’কে কল দে। মা ডেকে দেবে। হয়তো ঘুমুচ্ছে ও।”

পলক দ্রুত নাম্বার পাল্টে কল দেয় আয়েশার নাম্বারে। আয়েশা জানায় তপা অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে। এবারে চিন্তিত হয় পলক। এর আগে কখনো এমন হয় নি। এমন কোনো দিন ছিল না যেদিন তপা বাইরে গেছে অথচ পলকের কল আসলে ধরতে পারে নি। বরং কোনো কোনোদিন পলক কল না দিলেই অভিমান করে বসে থাকতো।
আয়েশার কল কেটে দ্রুত তার বলা জায়গায় যেতে শুরু করে পলল। সঙ্গে সমানতালে কল দিয়ে যাচ্ছে তপার নম্বরে। কিন্তু ফলফল শূন্য। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে প্রত্যেকবার। অজানা ভয়ে বারংবার গা শিউরে উঠছে তার। সেই ভয়টাই কি তবে সত্যি হলো? যে ভয়ে আজ অবধি তাকে পড়তে হয় নি। যে ভয়ের জন্য ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়েটিকে জড়াতে চায় নি নিজের ভয়াবহ অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে। সেই ভয়ই কি তবে শেষ করে দেবে সাজানো গোছানো সুন্দর ভবিষ্যৎ?

শপিংমলে পৌঁছে তন্নতন্ন করে খুঁজেও তপার হদিস না পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে রিকোয়েস্ট করে পলক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় নিজের ক্ষমতার জোরে বাধ্য করে তাদের। শান্তশিষ্ট, গম্ভীর মানুষটা আজ যেন ভয়ার্ত হয়ে ধরা দিয়েছে পৃথিবীর বুকে। যার প্রতিটি কথায় কেঁপে কেঁপে উঠছে শপিংমলের প্রতিটি কর্মচারী।

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় তপা কে অজ্ঞান করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দুজন মুখোশধারী লোক। চেহারা তাদের মাস্ক দিয়ে ডাকা। চিন্তিত করার উপায় অবধি নেই। দিশেহারা বোধ করে পলক। একসময়ের ক্যাম্পাস কাঁপানো পুরুষ সিংহ পলক তাজওয়ার হুংকার ছাড়ে আহত বাঘের ন্যায়।

প্রান্ত কে পুনরায় কল দিয়ে নিভে যাওয়া গলায় বলল,
“তিয়াসা কিডন্যাপড।”
প্রান্ত বিস্মিত গলায় বলল,
“কি বললি?”
পলক কম্পনরত গলায় বলল,
“আমি স্পষ্ট দেখেছি ওরা আমার তিয়াসা কে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল।”
পলকের গলা শুনে প্রান্ত টের পায় তার ভেতরকার অস্থিরতা। লোকেশন জেনে দ্রুত ছুটে আসে সেখানে। পলকের কাঁধে হাত রেখে সাহস যুগিয়ে বলল,
“পলক তাজওয়ারের কলিজায় হাত দেওয়ার সাহস কার হতে পারে এই শহরে? তারা কি ভুলে গেছে প্রান্ত শাহরিয়ার আজ পলক তাজওয়ারের সাথে কাঁধ কাঁধ মিলিয়েছে? তারা কি ভুলে গেছে ক্যাম্পাস কাঁপানো সেই দিনগুলোর কথা? যদি ভুলে গিয়েই থাকে তবে এই শহর জানুক আজ আরও একবার তান্ডব হবে। আরও একবার রক্তলাল হবে এই টাঙ্গাইলের রাজপথ। আরও একবার এই পৃথিবী জানবে পলক প্রান্ত এক হলে ঠিক কি কি হতে পারে!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here