বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ৩১

0
78

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ৩১

পাঁচ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় অফ হোয়াইট রঙের দেয়াল বিশিষ্ট সুসজ্জিত একটি কামরা। সাজানো গোছানো কামরাটা সৌখিন একজন মানুষের রুচির পরিচয় বয়ে বেড়াচ্ছে। একপাশে বিশালাকার রাজকীয় সোফা। অন্যপাশে কারুকাজ খচিত পালঙ্ক। সেখানেই আয়েসী ভঙ্গিতে ঘুমোচ্ছে তপা। কপালে নেই চিন্তার ভাজ, আর না কোনো ক্লান্তির ছাপ। শ্যামা রাজকন্যা যেন বহুদিন পর পৈতৃক আলোয়ে এসে প্রাণ জুড়িয়ে শ্বাস নিচ্ছে।
কিছুটা দূরে থাকা সোফায় বসে একজন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তপার ঘুমন্ত মুখপানে। অন্তরে কিঞ্চিৎ টান এখনো যে বাকি আছে। মায়া মমতা ছিন্ন করলেও রক্তের টান এড়ানো বোধহয় খুব কঠিন। কোনো পিতাই হয়তো আজীবন এই টান কে অস্বীকার করতে পারে না। আবার হয়তোবা পারে। নয়তো স্বার্থের খাতিরে চেষ্টা করে অস্বীকার করতে… নইলে কি করে পারল আজমল হোসেনের মত কসাই পিতা স্বীয় কন্যা তিয়াসা তপা কে কিডন্যাপ করিয়ে নিয়ে আসতে!

নেশার ঘোর কেটে যেতেই তপা হাত পা নাড়াতে শুরু করে। অক্ষিপল্লবও খানিক নড়ে ওঠে। ঘুম থেকে ওঠার পূর্ব নমুনা বুঝতে পেরে আজমল হোসেন সন্তর্পণে বেরিয়ে যায় কক্ষ ছেড়ে। মিনিট কয়েক পরেই তপা ওঠে বসল। দুইহাতে চোখ কচলে ওঠে বসে নিজেকে সম্পূর্ণ অচেনা জায়গায় আবিষ্কার করতেই হুঁশ ফিরে তার। একে একে শপিংমলে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পড়ে। তৎক্ষণাৎ বিছানা থেকে নেমে এসে দরজা ধাক্কাতে শুরু করে। কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ হওয়ার খুলতে সক্ষম হয় না সে। অগত্যা চেঁচিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে মেঝেতে। চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে তিনটি মুখাবয়ব। জানেনা তাকে না পেয়ে সেই তিনজন মানুষের কি অবস্থা হয়েছে। মনে আসে অনেক কথা..
পলক কি পুরো শহর তোলপাড় করে দিচ্ছে? তবে আসছে না কেন সে এখনো?
তাকে এখানে এভাবে তুলেই-বা কে নিয়ে এলো? কার কি স্বার্থ আছে এখানে? তবে কি পলকের কোনো শত্রু? মূহুর্তেই স্বীয় পিতার হিংস্র মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ ঘৃণা এসে ভীড় করে মনের আঙিনায়। পরক্ষণেই ভাবে একজন রাজনীতিবিদ এমন নিকৃষ্ট আচরণ করতে পারে স্বার্থের জন্য; কিন্তু একজন পিতা কি পারে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে? মনটা একবার হলেও না বোধক ঈঙ্গিত দেয়।
কিন্তু তার ভাবনা কে দু’পায়ে পিষে সঙ্গে সঙ্গে রুমে এসে হাজির হয় সেই পরিচিত মুখটা। বহুবছর আগের সেই পাষণ্ড মুখটা। যে কোর্টে দাঁড়িয়ে তার দায়িত্ব নিতে স্বীকার করলেও এরপর একটাবারের জন্যও তার খোঁজ অবধি নেয় নি। যে তার ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে নিজের মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছে।
তপা কঠিন মুখে বলল,
“আমাকে তুলে আনার কারণ?”
আজমল হোসেন তপার মুখ দেখে খানিক অবাক হলো। সে আশা করেছিল তপা কাঁদবে; আবেগী হয়ে পড়বে। কিন্তু এ তো সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে আমি। মনে মনে বলল- বাহ্ পলক তাজওয়ার নিজের মত করেই গড়ে নিয়েছে তার আশেপাশের লোকজন।
মুখে বলল,
“তোমার কাছে আমাকে দেওয়ার মত কিচ্ছু নেই। আজমল হোসেক কে আল্লাহ এত দিয়েছে যে তার কারো কাছে কিছু চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই।”
তপা রিনরিনে গলায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। পুরো কক্ষ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সেই হাসি। আজমল হোসেন খানিক সময়ের জন্য তপার হাসির মাঝে শেলীর ছাপ দেখতে পেল। কথার পিঠে সে এভাবেই তাকে তাচ্ছিল্য করে হাসত। মাথায় রাগ চড়ে যায় তার। তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে বলল,
“হাসছো কেন পাগলের মত?”
তপা সময় নিয়ে থামল। চোখে মুখে কাঠিন্যতা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“যার ত্রিভুবনে কোনো দোসর নেই। যার মৃত্যুর পর দোয়া করার একজন মানুষ নেই। এমনকি যার মৃত্যুর পর আদৌ কবর দেওয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ তার নাকি সব আছে! তাকে নাকি আল্লাহ সব দিয়েছে। এর চাইতে হাস্যরসাত্মক গল্প আমার জীবনে শোনা হয় নি। থ্যাংকস মিস্টার আজমল হোসেন। বিগড়ে যাওয়া মুডটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য।”
আজমল হোসেন তপার কথায় খানিকটা মিয়িয়ে গেলেও কিঞ্চিৎ সময় পরই পুনরায় আগের তেজে নিয়ে বলল,
“তোমার সাথে অহেতুক কথার দরকার নেই আমার। যা বলছি সেটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। সামনে নির্বাচন সেটা নিশ্চয়ই জানো। পলক কে বলবে আমার পথ থেকে সরে যেতে। নইলে পরিণাম ভয়াবহ হবে। কবে কোথায় মরে পড়ে থাকবে টেরও পাবে না।”
তপা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ভয় পাচ্ছেন আজমল হোসেন? ক্ষমতা হারানোর ভয়?”
আজমল হোসেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। তেজস্বী গলায় বলল,
“আজমল হোসেন কাউকে ভয় পায় না। একটা কেন দশটা পলক তাজওয়ার আসলেও আজমল হোসেন কে কেউ রুখতে পারবে না।”
তপা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হাসল। বলল,
“আমার পলক একাই একশ। সেজন্যই তাকে মাঠে নামতে দেখে আপনার লেজে টান লেগেছে আজমল হোসেন। দম থাকলে মাঠে লড়ে দেখান। এভাবে ভয় দেখিয়ে পলক কে হটানো যায় না। পলকের আশেপাশের লোকজন এতটাও ভীতু নয় যে ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবে। পলক লড়বে। আপনার মত নিকৃষ্ট জীব থেকে এই সমাজ কে, এই দেশকে মুক্ত করতে।”
আজমল হোসেন গম্ভীর গলায় বললেন,
“এত সাহস ভালো নয়। অতি সাহসে সব হারাবে। সাবধান। জেদ কমাও। রাজনীতির ‘র’ ও জানোনা তুমি। কোন মারপ্যাচে কোনদিক দিয়ে উধাও হয়ে যাবে টেরও পাবে না।”
তপা মুচকি হেসে বলল,
” হাসালেন মিস্টার আজমল হোসেন। রাজনীতি আপনার নেশা আর পেশা হলেও রাজনীতি আমার রক্তে। ভুলে যাবেন না ঘৃণ্য হলেও আমার জন্ম কাদের ঔরসে। তাই সাবধান আমাকে নয়, নিজেকে করুন। পলক তাজওয়ারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পাশে একবার তিয়াসা তপা দাঁড়ালে আপনি জাস্ট হাওয়ায় উড়ে যাবেন। মাইন্ড ইট।”

চলবে…

আমার দ্বিতীয় ই-বুক #একা_বিকেলে এখন পাওয়া যাচ্ছে বইটই অ্যাপে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here