বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ৩২

0
75

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ৩২

সকালের নাস্তায় শুধু আলুভাজি পরোটা দেখতে পেয়ে তপা ঝাঁঝাল গলায় বলল,
“ডাকো তোমাদের মালিক কে। যদি ধরে এনে খেতেই না দিতে পারে, তবে এনেছে কেন? এই নাকি আল্লাহ তাকে এত দিয়েছে যে শেষ হওয়ার নয়; তাহলে এখন এত ঘাটতি কিসের? ডাকো তাকে। এক্ষুণি।”
তপার উচ্চ আওয়াজ শুনে আজমল হোসেন ছুটে আসেন,
“কি হচ্ছে সকাল সকাল? আওয়াজ নিচে। এটা ভদ্রলোকের বাসা। মেয়ে মানুষের গলায় এত তেজ কিসের?” কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ছে।

“আমি আলু পরোটা খাব না। ওদের পোলাও আর কচুর লতি বানিয়ে দিতে বলুন। সঙ্গে চিংড়ি মাছ।” ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল তপা।
“ওহ, হ্যা; দুপুরে কি খাব সেটাও শুনে যেতে বলবেন।” আদেশ ভরা কণ্ঠস্বর তপার।
“তোমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এখানে পিকনিকে আসো নি তুমি। যা দিচ্ছে চুপচাপ গিলে জান বাঁচাও।”
তপা হেসে উঠল। বলল,
“ইয়েস বন্দী! নইলে এই পাপের সাম্রাজ্যে আমার পা ও আসতো না।”
“তাহলে এত জেদ কিসের? যা পাচ্ছো চুপচাপ গেলো। এমনিতেও আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার আজাইরা কান্ডকারখানাগুলো টলারেট করার।
খানিক হাসল তপা।
” করুন করুন। আর কতক্ষণ-ই বা পারবেন করতে! আমার পলক এলো বলে। এইটুকু সময়ে না-হয় নিজের অভিশপ্ত সাম্রাজ্যের একাংশ হালাল কাজে লাগালেন।”

আজমল হোসেন খানিকটা থামলেন। তিনি জানেন পলক তাজওয়ার আসবে। আসতেই হবে। সেজন্যই তো এত তোড়জোড়!
পলক এলো। সত্যি সত্যি-ই এলো। কিন্তু ভেতরে গেল না। সে জানে এই মূহুর্তে ভেতরে যাওয়া মানেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। সঙ্গে এটাও জানে আজমল হোসেন এই মূহুর্তে তপার ক্ষতি করবে না। করতে পারবে না। জেনে বুঝে মেয়ের ক্ষতি করা কোনো নিকৃষ্ট বাবার কর্ম নয়। যদিও আজমল হোসেন একজন কু’পিতা। তার দ্বারা সবই সম্ভব। তবুও একটা অদৃশ্য আস্থায় পলক বাড়ি ফিরে গেল। ব্যাপারটা অন্যভাবে হ্যান্ডেল করার লক্ষ্যে ছুটল আরেক নিষ্ঠুরতম মানবের আলয়ে।

বাসায় ফিরতেই আয়েশার কান্নারত মুখটা দেখে পলকের কলিজায় আঘাত লাগল। মায়ের মত ভালবাসে মানুষটা। পায়েলের দুঃখী মুখ দেখে যেমন ফিল হয় তেমনটাই লাগল। তপা কে না নিয়ে আসায় পলক আয়েশার সঙ্গে কথা বলতে সাহস পেল না পলক। চুপিসারে প্রান্তর রুমের পথ ধরলে আয়েশা দেখতে পেয়ে ডাকল,
“পলক; বাবা, আমার তপা কোথায়? ওকে এনেছো? কোথায় ও? ভেতরে আসে নি? বাইরে দাঁড়িয়ে আছে?”

পায়ে পায়ে এগিয়ে আয়েশার কাছে গেল পলক। হাঁটু মুড়ে হুইলচেয়ারের হাতল ধরে বসল। একহাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে কোমল স্বরে বলল,
“পলকের উপর ভরসা নেই আন্টি?”
চোখে জল নিয়ে মাথা নাড়াল আয়েশা।
পলক পুনরায় বলল,
“একটু ধৈর্য্য ধরো। অপেক্ষা করো। তোমার মেয়ে কে তোমার কাছেই এনে দেব। একটু সময় দাও।”

আয়েশার থেকে বিদায় নিয়ে প্রান্তর রুমে এসে দাঁড়াল পলক। প্রান্ত বারান্দায় ছিল। পলকের শব্দ শুনে রুমে এসে প্রথমেই বলল,
“আমার বোনের কষ্ট স্বচক্ষে দেখে চলে এলি? কি করে?”
“তোর বোন যে ওদিকে পোলাওয়ের সাথে কচুর লতি খাওয়ার জন্য আজমল হোসেনের সাথে ঝগড়া করছে সেটা কি জানিস? এগুলো কষ্ট পাওয়ার নমুনা?”

কষ্টের মধ্যেও খানিকটা স্বস্তি পেল প্রান্ত। মুখে বলল,
“তুই জানলি কি করে?”
“এটা তো বা হাতের খেল। কাল দেখ আর কি কি করি!”
বাঁকা হাসল পলক।

প্রান্ত শান্ত হলো। পলকের এই হাসির অর্থ সে জানে। কাল যে কিছু ঘটতে চলেছে এটা সুস্পষ্ট। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত গুণ ছেলেটার। তাই আর ঘাটাল না প্রান্ত।

কিছু বলার আগেই প্রান্ত পুনরায় বলল,
“চল।”
“কোথায়?”
“শ্বাশুড়ির বাড়ি!”
“সেখানে আবার কি?”

চোখ গরম করে তাকাল পলক। তেজিয়ান সুরে বলল,
“তটিনীর সাথে ঘষাঘষি আজকাল খুব বেশি করছিস মনে হচ্ছে?”
খুকখুক করে কেশে উঠল প্রান্ত। বলল,
“কি হয়েছে?”
“মহিলাদের মত প্রশ্ন করছিস যে!”
দাঁত কেলিয়ে হাসল প্রান্ত। বলল,
“হালাল বউ। ঘষাঘষি, ধরাধরি সবই জায়েজ।”

চলবে..

নোটঃ অনেক দিন পরে লেখা। তালগোল পাকিয়ে কি যেন হয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here