বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ০৫

0
111

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ০৫

নিজের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভর বিশিষ্ট একজন পুরুষকে আধো অজ্ঞান অবস্থায় নিজের রুমে টেনে আনতে প্রাণ ওষ্ঠাগত তপার। বিছানায় শুয়িয়ে কোমরে হাত রেখে হা করে শ্বাস ছাড়ল সে। এইটুকুনি বাচ্চা হয়ে পাহাড়সম দেহ টানা যায়! ভাগ্যিস পুরো শরীর ছেড়ে দেয় নি। নইলে তপার ছোট্ট দেহ পিষ্ট হয়ে যেতো এতক্ষণে।

পলক কে রেখে তপা ফোন নিয়ে ব্যস্ত হলো। কাউকে লাগাতার কল করেই যাচ্ছে সে। অপরপ্রান্ত থেকে ভারী কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই হন্তদন্ত হয়ে বলল,
“আংকেল প্লিজ একবার এক্ষুণি আসুন। ইমার্জেন্সি।”

ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি ডাঃ নিয়াজ মাহমুদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
“আয়েশার বাড়াবাড়ি হয়েছে?”

তপা ফোঁত করে শ্বাস ছাড়ল। ধীর গলায় বলল,
“মা ঠিক আছে। অন্য একটা সমস্যা। আপনি প্লিজ আসুন আংকেল। আসার সময় গুলি বের করার প্রিপারেশন নিয়ে আসবেন। আর মারাত্মক জখম হয়েছে হাতে, পায়ে, গলায়। দেরি করবেন না আর প্লিজ।”

নিয়াজ মাহমুদ তপা কে আশ্বস্ত করলেন। যত দ্রুত সম্ভব তিনি আসছেন।

তপা এবার নজর ফেলল পলকের উপর। চোখে মুখে যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে তার। বলিষ্ঠ দেহ যন্ত্রণায় কাতর। তপা মুখ নিচু করে পলকের মুখোমুখি হলো। খানিক ইতস্তত করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ মেলে চাইল সে। তপা বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল,
“খুব কষ্ট হচ্ছে? আর একটু সহ্য করুন। ডাক্তার আংকেল চলে আসবে।”
পলক স্মিত হাসল। দুর্বল গলায় বলল,
“আই’ম ফাইন।”

তপা শব্দ করে শ্বাস ফেলল। বিরবির করে বলল,
“ব্যাটা ভাঙবে তবু মচকাবে না।”

“তিয়াসা!” তপা নিজের ঘরের কোণে বসে পলকের দিকে স্থির দৃষ্টি মেলে থাকা অবস্থায় নরম গলায় নিজের নাম শুনে চমকে উঠল। তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে নরম গলায় বলল,
“মিস্টার তাজওয়ার, কষ্ট হচ্ছে?”

পলক মাথা নাড়াল। মৃদুস্বরে বলল,
“একটা মাস্ক হবে?”

তপা ভ্রুকুটি করে তাকাল। মাস্ক! সেটা দিয়ে কি হবে! কিন্তু প্রশ্ন করল না সে। নিজের বরাদ্দকৃত আলমিরা থেকে মাস্ক এনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“নিন।”

পলক দুর্বল হাত বাড়িয়ে নিল। কিন্তু পরল না।
তপা আড়চোখে একবার দেখে সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অতঃপর অতি বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল,
“এটা নতুন। আমি পড়িনি। আপনি পড়তে পারেন।”

পলকের পায়ের গুলি বের করে হাত, পা, গলায় ব্যান্ডেজ করে নিয়াজ মাহমুদ তপার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“এনাকে তুমি কোথায় পেলে তপা? পলক তাজওয়ার না ইনি? এটা তো পুলিশ কেস। এসব ঝামেলায় জড়াচ্ছো কবে থেকে? প্রান্ত জানে?”

একসাথে এতগুলো প্রশ্ন শুনে বিচলিত হলো তপা। তবে সামলে নিল অতিদ্রুত। নমনীয় গলায় বলল,
“জ্বি আংকেল ; ইনি পলক তাজওয়ার। রাস্তায় উনার উপর অ্যাটাক হয়। ভাগ্যবশত আমি সেখান দিয়েই ফিরছিলাম। ফেলে আসতে পারি নি। ঠিক যে দায়িত্ব বোধ থেকে আপনি পুলিশ কেস জানার পরও বিনা শর্তে উনার চিকিৎসা করলেন। সেই দায়িত্ব বোধ থেকেই আমিও ওভাবে একটা মানুষ কে ফেলে আসতে পারি নি। এটা ঝামেলা হলে ঝামেলা। আমার কিছু যায় আসে না।”

নিয়াজ মাহমুদের চোখে আশ্চর্যান্বিত ভঙ্গি দেখা দিল। মুখে ফুটে উঠল প্রশান্তির ছায়া। তবুও তপার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুখে চিন্তিত ভাব ফুটে উঠল। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
“ক্ষতগুলো বেশ গভীর। পায়ের চোটটা বেশি মারাত্মক। রক্তও গেছে বেশ। প্রপার রেস্টের প্রয়োজন। এখন কড়া ডোজের ইনজেকশনে কয়েক ঘন্টা বেহুশের মত ঘুমাবে। তুমি টেনশন করো না। রাতে জ্বর উঠতে পারে। যদিও ভয়ের কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত হলে পানি পট্টি বা শরীর মুছিয়ে দিতে পারো। কিন্তু সাবধানে কাটা জায়গায় পানি যেন না যায়। তাতে ঘা শুকাতে সময় লাগবে। ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। ঘুম ভাঙলে মেডিসিনগুলো খায়িয়ে দিও। আর পায়ে বেশ কিছুদিন প্রেসার দিতে বারণ করো। হাঁটাচলা প্রায় নিষিদ্ধ।”

তপা বিজ্ঞদের ন্যায় মাথা নাড়াল। নিয়াজ মাহমুদ তপার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
“দায়িত্ব বোধ সুদূরপ্রসারী হোক! ভালো থেকো।”

তপা মুচকি হাসল। আড়চোখে একবার পলকের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল- মাস্ক পরে পাবলিক ফেস রুখতে পারলে মিস্টার কুলক তাজওয়ার? ভং ধরার কি দরকার ছিল!

সাদা পাঞ্জাবির বেহাল অবস্থা দেখে তপা চোখমুখ অন্ধকার করে ফেলল। লাল লাল দাগে ভরে আছে বুক পিঠের পুরোটা জায়গা। লম্বা হাতের সাদা কাপড়েও লাল দাগের কমতি নেই। উঠে দাঁড়াল তপা। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তিনটে রুম পেরিয়ে তালাবন্ধ কক্ষে প্রবেশ করল সে। আলমারি ঘেঁটে কিছু বছর আগের কেনা প্রিয় মানুষটার শুভ্র ধাঁচের পাঞ্জাবি বের করে তৃপ্তির হাসল।

“পাঞ্জাবি তো আনলি, এখন পরাবি কি করে তপা! জাতীয় ক্রাশের ড্রেস চেঞ্জ করালে জাতি কি মানবে? ইজ্জতের লুটোপুটি হবে না! পাছে পাবলিক প্রোপার্টি হলফের দায়ে তোর না যাবজ্জীবন হয়ে যায় রে মেয়ে!”

বিরবির করে এহেন অনেক বাক্য আওড়াল তপা। শেষে বাধ্য হয়ে অবাধ্যতার কর্ম করেই ফেলল। কাঁচি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল রক্তলাল পাঞ্জাবি। নরম কাপড়ের টুকরো পানিতে ভিজিয়ে আলতো হাতে ঘষে ঘষে তুলে ফেলল একেকটা রক্তের ছোপ ছোপ আস্তরণ। পলক তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। পরিষ্কার কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর সরু চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
“খুব মজা লাগছে না? রাজার মত শুয়ে শুয়ে সেবা গ্রহণ করতে!ব্যাটা বেত্তমিজ। ফাজিলের ফাজিল।”

কাক ডাকা ভোরের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে তপার ঘরের লাগোয়া বাথরুমে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের উৎপত্তি ঘটছে। স্নান সেরে নিচ্ছে শ্যামাবরণ কন্যা। নির্ঘুম রজনী অপরিচিত এক আগন্তুকের সেবায় নিয়োজিত থেকে মাথাটা ভারী ঠেকছে তার। যন্ত্রণায় টাসটাস করে ফুটছে মগজগুলো। যন্ত্রণাটুকু সয়ে নিতে না পেরে উষ্ণ-শীতল জলে ধুয়ে নিচ্ছে সূক্ষ্ম ব্যথার তান্ডব।

“মিস্টার তাজওয়ার! শুনতে পাচ্ছেন আমাকে?”

সকালের প্রথম প্রহরে আধো জাগরণে শ্রবণেন্দ্রিয়ে এহেন কিছু শব্দ এসে ধাক্কা মারতেই পলক নড়েচড়ে উঠল। ভ্রু যুগলের মাঝে কিঞ্চিৎ ভাজ পড়ল। তবে চোখ দুটো তখনো বন্ধ তার। টেনে খুলার সামর্থ্য নেই তার। মস্তিষ্ক সজাগ থাকলেও পুনরায় তা তলিয়ে গেল নিদ্রাভারে।

তপা পলকের নিদ্রাভাব দেখে নিচু হয়ে কাঁধের পাশে হালকা হাতে ধাক্কা দিয়ে পুনরায় বলল,
“মিস্টার তাজওয়ার ; শুনতে পাচ্ছেন?”

আধো আধো ঘুমে জড়ানো একজোড়া চোখ থমকে দাঁড়িয়েছে এক গুচ্ছ নিকষকৃষ্ণ কেশরাশির সম্মোহনে। চোখের পর্দায় ভেসে উঠেছে একরাশ মুগ্ধতা! শ্যামাবরণ মুখের আশেপাশে লেপ্টে আছে অসংখ্য খুচরো চুল। সদ্য স্নান সারা অঙ্গে স্নিগ্ধতার রেশ তখনো বিরাজ করছে। লম্বা কেশরাশি কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ বেয়ে নেমে গেছে হাঁটুর নিচ অবধি। অবশেষে তা জমা হয়েছে ঝকঝকে পরিষ্কার মেঝেতে। পলক দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল। এ কি কেশরাশি নাকি মায়াজাল! চুলের গাছি নাকি ভয়ানক ইন্দ্রজাল! নাকি বশীকরণের কোনো শক্তপোক্ত প্রয়াস!

চলবে…

নোটঃ কাদের জন্য লিখছি আমি! একেক পর্বের রেসপন্স দেখে আমি শিহরিত। এভাবে চলতে থাকলে লেখা বন্ধ করে দিতে হবে। অনুপ্রেরণা গিয়ে তলানীতে ঠেকেছে। এভাবে চললে লেখা আগায় না। আগাতে চায় না। এটাই হয়তো প্রথম কোনো লেখা হবে যা মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হবে। পেইজের রিচও কমে গেছে। নিয়মিত পোস্ট করার পরও রিচ ডাউন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here