বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায় #পর্ব_১৫,১৬,১৭

0
665

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১৫,১৬,১৭
#সুমাইয়া মনি
১৫

দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর অতিবাহিত হতে হতে দেখতে দেখতে কেঁটে যায় ছয়’টি বছর। পরিবর্তন আসে অনেক কিছুর।
একটা মানুষ পরিবর্তন হতে পারে কয়েক মিনিটে, আবার অনেকেই মাস, বছর পেরিয়ে যায় তবুও রয়ে যায় সেই একই রকম। বিভাকে এক বছরে অনেক স্থানে খোঁজা হয়েছে। পাওয়া যায় নি তাকে। তার বিরহ আবির এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিরহজনিত অন্তর্বেদনা নিয়ে প্রতিনিয়ত সময় পার করেছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস বিভা কোথাও না কোথাও ঠিকিই আছে। আবির এক সময় পাগলামি করা বন্ধ করে দেয়। আফিনের বাক্যাটি মেনে নেয়, যে নিজ থেকে হারিয়ে যায়, তাকে খোঁজা কষ্টকর। তবুও সে হাল ছাড়েনি। খুঁজেছে! এখনো খুঁজছে। সে এখন আগের মতো নেই। নেই তার মধ্যে আনলিমিডেট দুষ্টু ভাব। সে এখন নিরব, জনশূন্য স্থানে থাকতে পছন্দ করে। আগের তেমন বাক্যবিনিময় করে না কারো সঙ্গে। বেশ গম্ভীর হয়ে উঠেছে সে। সবই তাকে পরিস্থিতি শিখিয়েছে।
নিজের চেম্বারের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আঁখিযুগল বন্ধ করে কথা গুলো ভাবছিল আবির। বিভা নিঁখোজ হবার এক বছরের মাথায় আবিরের বাবা মারা যায়। বাবার ওপর জমে থাকা অভিমান, অভিযোগ গুলো তার মনেই রয়ে যায়। বলা হয়তা তাকে আর। যার ফলে আইরিন বেগম দু ভাইকে বাবার বিজনেস সামলাতে বলেন। আফিন দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে আবিরকে ফোস করে। আবিরের ইচ্ছে না থাকা শর্তেও বাধ্য হয়ে বাবার বিজনেস সামলে আসতে পাঁচটি বছর ধরে। আফিন সেই আগের মতো জীবন কাঁটাচ্ছে।

ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভেঙে যায় আবিরের। স্ক্রিনে মায়ের নামটি দেখে দ্রুত পীক করে,
‘বলো আম্মু।’
‘দুপুরে কি বাড়িতে আসবে?’
‘নাহ!’
‘খাবার পাঠাবো?’
‘দেও।’
‘কি করছো?’
‘নাথিং। তুমি?’
‘রান্না সেরে আসলাম।’
‘ভাইয়া কোথায়?’
‘এখনো বাড়িতে আসেনি।’
‘আর কিছু বলবে?’
‘নাহ!’
‘রাখছি।’ বলে ফোন রেখে দেয় আবির। আবার সেই ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায়। আইরিন বেগম ভারী নিশ্বাস টেনে ফোন বিছানার উপর রেখে দেয়। এখন সে অবসর। শিক্ষিকা পদবি ছেড়েছে স্বামী মারা যাওয়ার পর। এখন দুই ছেলেকে নিয়েই তার জীবন। তবে মাঝেমধ্যে সে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। আফিন এখনো বিয়ে করেনি। ববির স্মৃতিকে আঁটকে ধরে বেঁচে থাকতে চায় সে। আর আবির বিভাকে পাওয়ার আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রহর গুনছে। একজন শিক্ষিকা হয়ে অনেক কেই বুঝিয়েছে জীবন সম্পর্কে। কিন্তু তার দুই ছেলেকে এখনো জীবনের সম্পর্কে বোঝাতে পারেনি। বার বার ছেলেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে। কঁপালে স্নান গতিতে আঙুল বুলায়। ছেলেদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পেশার বেড়ে যায় তার। তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় ছেলেদের ভবিষ্যৎ রঙিন ভাবে সাজিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব হবে জানা নেই তার।
.
‘আবির অফিসিয়াল পার্টির জন্য যদি আমরা কোনো মডেলকে ইনভাইট করি কেমন হবে?’ সামিম কথাটি আবিরের উদ্দেশ্যে বলল। সামিম আবিরের পি,এ হিসাবে কাজ করছে তিন বছর আগে থেকে। অবশ্য এই পদবি সে নিজ থেকেই সামিমকে অফার করেছিল। সামিমও রাজি হয় বন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে। মারুফ অন্য একটি কোম্পানির মেনেজার হিসেবে কাজ করছে। সেই কোম্পানির সঙ্গে প্রজেক্ট ফাইনাল হওয়ায় তারা একটি পার্টির আয়োজন করতে চলেছে। সামিম মোহনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তারা খুব শীঘ্রই বিয়ে করবে। পার্টির বিষয়ে কথা বলতে এসেছে সামিম।
‘এটা অফিসিয়াল পার্টি। মডেল দিয়ে কি হবে?’
‘এতে আমাদের কোম্পানির র্যাংক বৃদ্ধি পাবে।’
‘র্যাংকের সঙ্গে মেডেলের কি সংযোগ?’
‘আরে বুঝিস না কেন। আমাদের পার্টিতে অনেক প্রভাবশালী লোক আসবে। তাদের মধ্যে যদি একজন মডেলও উপস্থিত থাকে, পার্টি আরো জমে যাবে।’
‘আমার মাথায় এসব উদ্ভট জিনির ঢুকবে না। তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর।’
‘আচ্ছা, তাহলে মডেল’কে ইনভাইট করা হোক।’
‘এস ইউ উইশ।’
‘ওকে।’
‘তবে, কোনো গন্ডগোল হলে, তুই শেষ।’
‘হবে না, ভরসা রাখ।’
‘হুম।’
________
আফিন সবে মাত্র ক্লাস শেষ করে বেরোয়। হঠাৎ একজন ছাত্রী ওঁকে পিছন থেকে ‘স্যার’ বলে ডাক দেয়। আফিন ঘুরে তাকিয়ে বলল,
‘কিছু বলবে সিমা?’
‘জি স্যার।’ কথাটা বলেই সিমা মাথা নত করে ফেলে।
‘বলো?’
‘দেখেন স্যার! আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার অভ্যেস আমার নেই।’ মাথা নত রেখেই জোরে জোরে কথা গুলো বলল।
‘খুব ভালো। বলে ফেলো কি বলতে চাও।’
‘আমি..আমি আপনাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি।’
আফিন অবাক হয় না। স্থির ভঙ্গিতে তাকায় সিমার দিকে। সিমা ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রথম থেকেই আফিন লক্ষ্য করেছে সিমা তার উপর একটু দূর্বল। ক্লাস চলাকালীন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হঠাৎ করে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। চুপিচুপি চুরি করে বিভিন্ন স্থান থেকে ওঁকে লুকিয়ে দেখে।
যত প্রকার পাগলামি আছে সব কিছুর সীমা সে অতিক্রম করেছে। আফিন কয়েকবার বলতে চেয়েও পারেনি। সিমা জিদ্দি একটা মেয়ে। যদি রাগের বশে ভুল কিছু করে ফেলে এই ভেবে চুপ ছিল। কিন্তু আজ আর মেনে নিতে পারে না। সিমার হাত ধরে মাঠের কোণায় এনে দাঁড় করায়। তারপর স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
‘আমার বয়স কত তুমি জানো?’
‘কত আর হবে, ২৯-৩০।’
‘আর তোমার?’
‘১৮।’
‘কত বছরের পার্থক্য দেখেছো?’
‘তাতে কি? আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা বসয়, জাত-ধর্ম এগুলো দেখে হয় না।’
‘এসব আমাকে বুঝাচ্ছো? আমি তোমার টিচার, তুমি নও।’
‘আমি তো আপনাকে বুঝাচ্ছি না। শুধু বললাম। এ যাবত কয়জন মেয়ের চুল ছিঁড়েছি আপনার জন্য, সেটা জানেন না। আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে চাই ব্যস!’
আফিন সিমার পাগলামি কথাবার্তা শুনে রেগে যায়। কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলল,
‘এখন আমার কি উচিত জানো?’
‘নিশ্চয়! চড় দেওয়া উচিত। দেন, তবুও আমি আপনার উপর থেকে মুভ অন করব না। আর আমাকে বুঝাতে আসবেন না। উত্তর পরে দিয়েন, চললাম।’ বলেই এক প্রকার দৌঁড়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করল সিমা। আফিন অবাক হয়ে শুধু চেয়ে আসে। সিমার সাহসের তারিফ করলে কম হবে। মাথাটা কেমন হ্যাং হয়ে গেছে। চোখের চশমা জোড়া খুলে চোখ কচলিয়ে পুনোরায় পড়ে নেয়।
.
রাতে….

আবির রাত বারোটার বাড়ি ফিরে। আইরিন বেগম তখনো জেগেছিল। আফিন অনেক আগেই খাবার খেয়ে শুতে গিয়েছে। আবির মা’কে খাবার বাড়তে দেখে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
‘তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো কেন আম্মু? ঘুমিয়ে যেতে পারো না। আমি তো নিজেও খাবার বেড়ে নিতে পারি।’
‘ধুর পাগল! আমি থাকতে তুই কেন খাবার বেড়ে নিবি। আমি যে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাই না, সেটা তুই তো জানিস।’
‘হুম জানি। ভাইয়া খেয়েছে?’
‘খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছে।’
‘বিয়ের বিষয় কিছু বললে?’
‘নাহ! আফিন বিয়ে করতে চায় না।’ সরু নিশ্বাস ফেলে বলল।
আবির কিছু বলে না। আইরিন বেগম আবার বললেন,
‘আমি বলি কি। তুই বিয়ে করে নে না। আর কতদিন অপেক্ষা করবি বিভার জন্য। আদৌও বেঁচে আছে না মারা গেছে সেটাও তো জানা নেই।’
আবিরের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। মলিন সুরে বলে,
‘আম্মু পরবর্তী এই কথাটি আর বলবে না। ভাল্লাগে না, খাব না।’ বলে হাত ধুয়ে উঠে যায়। আইরিন বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে মনঃক্ষুণ্ন করে চেয়ে রয়। দুই ছেলের করুণ অবস্থা দেখে তার মন অশান্ত সাগরে ভাসছে। তিনি জানেন না মা হয়ে এখন তার কি করা উচিত ছেলেদের জন্য। কী করলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
.
.
.
#চলবে?

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১৬
#সুমাইয়া_মনি

পূর্ণিমার মেঘহীন আকাশে তারাদের ফুলঝুরি ফোটেছে। চাঁদ বিহীন ভুবন কেমন অন্ধকার ছেঁয়ে আছে। একটি তারা জ্বলজ্বল করছে। সেটির দিকে আবিরের দৃষ্টি নিবদ্ধ। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। কয়েক বছর হলো সঙ্গী করে নিয়েছে তাকে। হাতের ফোনটিতে শাড়ি পড়া বিভার সেই ছবিটি রয়েছে। স্মৃতি হিসাবে আপাতত এতটুকুই রয়ে গেছে। বিরহের দহনে পুড়ে পুুড়ে অঙ্গার সে। মাঝেমধ্যেই প্রিয়তমার স্মৃতি তাকে ভীষণ রকম তাড়া করে বেড়ায়। তখন মনের জ্বালা কমাতে সিগারেট তার সঙ্গী হয়।
চার-পাঁচটি শেষ করে চেয়ারে এসে বসে। ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। একটা বাজে। ভোর হতে এখনো ঢের দেরি। ঘুমহীন চোখজোড়ায় ক্লান্ত ছাপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তাকে ঘুমাতে হবে। বেলকনি থেকে বিছানায় এসে শোয়। ঘুমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।

সকালের এলার্ম ঘড়ির শব্দে ঘুম ভাঙে। মিটিং থাকায় নাস্তা বাদে জুস খেয়েই বেরোয়। আইরিন বেগম খাইয়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও শুনে না।
___
‘সিমা তার সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। কেবল, আফিন স্যারের জন্য হুহ্!’ ভাব নিয়ে বান্ধবীদের বলল সিমা।
ওর বান্ধবী জিনি বলল,
‘স্যার তো তোকে পাত্তাই দেয় না।’
‘এক সময় ঠিকিই দিবে। ক’দিন? এক দিন, দু দিন আমাকে এড়িয়ে চলবে। তারপর নিজ থেকেই আমার পিছনে ঘুরঘুর করবে।’
‘গাছে কাঁঠাল দেখে, গোঁফে তেল দেওয়ার মতো বিষয়টি হলো না।’
‘তোর এই স্বপ্ন পূরণ হবে না দেখিস।’ আমিনা বলল।
সিমা রাশভারী কণ্ঠে বলল,
‘তোরা আমার বান্ধবী না। একেকটা ডাইনি। আমাকে সার্পোট না দিয়ে উল্টো গীত গাইছিস।’
‘উচিত কথা বললেই দোষ।’
‘উদ্ধার করেছিস আমায় উচিত কথা বলে।’ ক্রোধ নিয়ে বলল সিমা।
‘এই স্যার এসেছে…’ আমিনা কথাটা বলেই ঘুরে বসে।
ওরাও আফিন’কে দেখে ঠিকঠাক বসে।
আফিন ওদের ক্লাস নিতে এসেছে। একটি অংক বুঝাতে আরম্ভ করে। হঠাৎ আফিনের সঙ্গে সিমার চোখাচোখি হতেই চোখ টিপ দেয় সিমা। আফিনের বলা থেমে যায়। নজর সরিয়ে নেয়। সিমা মুচকি হাসে। হঠাৎ আফিন থেমে যাওয়ার ফলে ছাত্র-ছাত্রী’রা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আফিন কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে সিমা’কে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলল। সিমা হাসিমুখে আফিনের আদেশ মেনে নেয়। যাওয়ার সময় আরেকটি চোখ টিপ দিয়ে যায়। আফিন রাগ নিয়ে সরু নিশ্বাস ফেলে। এই মেয়ে চরম লেভেলের ফাজিল!
____________
রাতে….

‘ভাইয়া কাল পার্টিতে তুমিও থাকবে। ‘
‘আমি কেন থাকবো?’
‘আমি কিন্তু একা মালিক নই এই কোম্পানির। তুমিও আছো।’
‘তাতে কি। তোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা করার তুই করিস।’
‘তুমি থাকবে ব্যস! আর আম্মুকেও আমি সঙ্গে নিয়ে যাব।’
‘আমারও যেতে হবে।’
‘তোমরা এমন বিহেভ করছো কেন? শুধু তো পার্টিতে থাকতে বলেছি, অফিস তো আর সামলাতে বলিনি।’
‘আচ্ছা থাকবো।’ আফিন বলল।
‘পার্টি কখন?’
‘রাতে।’
আবির কোম্পানির আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করে। আলাপের মাধ্যমে খাওয়া শেষ হয় তাদের। আবির উঠে যেতে নিলে আফিন পিছুডাকে,
‘আবির শোন।’
‘বলো ভাইয়া।’
আফিন কিছুটা মলিন স্বরে বলে,
‘এত বছরেও আমি তোর প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। স্যরি!’
আবির বুঝতে পারে আফিন কিসের প্রতিশ্রুতির কথা বলছে। দৃষ্টি নত করে ফেলে। পরক্ষণে নজর তুলে বলল,
‘কিছু প্রতিশ্রুতি পূর্ণতা পায়না ভাইয়া। ভুলে যাও!’ বলেই আবির প্রস্থান করে।
আফিন হতাশ জড়িত নিশ্বাস টেনে নেয়। আইরিন বেগম কিছু বলে না। তার ছেলেদের কষ্টে মনটা অস্থির হয়ে উঠে। হঠাৎ আফিনের ফোনে সিমার একটি মেসেজ আসে। সেখানে ‘আই লাভ ইউ’ বাক্যটি লিখা। আফিন সেটি দেখে এক প্রকার রাগ নিয়ে কক্ষে ফিরে। রেগে সিমাকে কল দেয়। প্রথম রিং হতেই সিমা রিসিভ করে বলে,
‘আপনার কলের অপেক্ষা করছিলাম।’
‘এসব কোন ধরনের পাগলামি সিমা।’
‘আপনি আমার কল ধরছেন না দেখেই তো এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলো।’
আফিন বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। পুনোরায় বলে,
‘বুঝেছি, তোমার বাবা-মা’কে বলতে হবে।’
‘আম্মু অলরেডি জানে। আব্বু’কে আপনি যদি জানিয়ে দেন তো আমার লাইন ক্লিয়ার।’ খুশি মুডে বলল।
‘তুমি আসলে…’
‘বলুন বলুন আমি কী?’
‘কাল কলেজে এসে বলব ওয়েট।’
‘না স্যার, আমাকে মারবেন না। এখনই বলে দিন। না হলে সারারাত ঘুম হবে না।’
‘রাখো ফোন!’ ঝাড়ি মেরে ফোন রেখে দেয়।
সিমা কান থেকে ফোন সরিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
______
পার্টির আয়োজন করা হবে ফালগুনি কমিউনিটি সেন্টারে। ডেকোরেশনের কাজ চলছে। দায়িত্ব সব সামিমের কাঁধে রয়েছে। একটু পর পরই আবির কল দিয়ে খবরা-খবর নিচ্ছে। পরিপূর্ণ কাজ শেষ হয় একটার দিকে। কাজ শেষের বার্তা জানিয়ে সামিম বাড়িতে ফিরে আসে। আবির ল্যাপটপে প্রজেক্টের বিষয় কাজ করছিল। তখন জামিলা কল দেয়। অনেকক্ষণ কথা বলে তারা। এই পার্টিতে জামিলা’কেও ইনভাইট করা হয়েছে। এত বছরেও ওদের বন্ধুত্ব অটুট আছে। তারা এখনো যোগাযোগ রেখেছে একে অপরের সঙ্গে।

সন্ধ্যার দিকে আবির রেডি হয়ে আগেই সেন্টারে উপস্থিত হয়।
আজ সে কালো রঙটি ম্যাচিং করে সব কিছু পরিধান করেছে। বেশ মানিয়েছে তাকে। আইরিন বেগম ও আফিন এক সঙ্গে আসবে বলে জানায় তাকে। সামিম গেস্টদের ওয়েলকাম জানাচ্ছে। আফিন, আইরিন বেগমও চলে আসে তখন। কিছুক্ষণ বাদে রূপা কোম্পানির মালিক হাজির হয়। মারুফ’কে দেখে খুশি হয় আবির, সামিম। জামিলাও উপস্থিত হয় তার হাসবেন্ড’কে নিয়ে। এক বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। চার বন্ধু মিলে আগের দিনের খুনসুটি গুলো একে একে আওড়াতে থাকে।
আবির কয়েকবার জামিলা’কে ‘ঝামেলা’ বলে রাগায়। জামিলাও এতে রেগে কয়েক ঘা কিল -ঘুষি মেরে দেয় আবির’কে।
‘ফাজলামো অফ। সামিম তোর মডেল কোথায়?’
‘আর পাঁচ মিনিট ওয়েট কর। চলে আসবে।’
‘তুই কোন মডেল’কে ইনভাইট করেছিস বল তো।’
‘আমি ইনভাইট করিনি। এর দায়িত্ব রতন বোস’কে দিয়েছি। তিনি একজন নতুন মডেল’কে ইনভাইট করেছে।’
‘নাম?’ আবির জিজ্ঞেস করে।
‘সেটা তো জানি না। জিজ্ঞেস করা হয়নি।’
‘কি আজব কথা বলছিস তুই। রতন বোস’কে ডাক।’ আবির মেকি রাগ নিয়ে বলল।
‘ওয়েট।’
সামিম রতন’কে ফোন দিয়ে তাদের এখানে ডাকে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
‘আপনার মডেল কখন আসবে?’
‘এই তো আসলো বলে।’
‘তার নাম কী?’
রতন বোস মুখ থেকে ‘জা’ উচ্চারণ শেষ করার আগেই দু’জন গার্ড সহ দু’টি মেয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তিনি হাতের ইশারায় বলল,
‘ঐতো জারা, জেরিন এসেছে।’
সকলে সেদিকে তাকিয়ে থ হয়ে যায়। আবির যেন সেখানেই জমে গেছে। সে বাকরূদ্ধ, হতবাক। সে-ই আগের বিভা’কে দেখছে। পড়নে কালো রঙের লং গাউন। গর্জিয়াছ সাজ। স্ট্রেট চুলগুলো নিচ থেকে গোল্ডেন কালার করা।
হাই হিল জুতোর খঠখঠ আওয়াজ তুলে ক্রমশে এগিয়ে আসছে তাদের নিকট। সঙ্গে আরো একটি মেয়ে রয়েছে। সে-ও একই সাজে সজ্জিত। বিভা’কে শুধু তারা দেখছে, এমনটা নয়। আফিন, আইরিন বেগমের নজরেও পড়েছে।তারাও হতভম্ব! আবিরের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠে।
অব্যক্ত স্বরে ‘বিভা’ নামটি উচ্চারণ করে সে।
.
.
.
#চলবে?

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১৭
#সুমাইয়া মনি

রতন বোস সকলের সঙ্গে বিভার পরিচয় করিয়ে, পরিশেষে আবিরের সঙ্গে পরিচয় করাতে এগিয়ে আসে।
‘ওনি হচ্ছেন আমাদের কোম্পানির মালিকের ছোট ছেলে আবির আহমেদ। বর্তমানে তিনিই এখন আমাদের কোম্পানির মালিক।’
বিভা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
‘হ্যালো! মি.আবির আহমেদ।’ বলে হাত বাড়িয়ে দেয়।
আবির কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বাঁকা হেসে হাত এগিয়ে বলল,
‘হাই!’
‘তো? কেমন আছেন?’
‘যেমন রেখে গিয়েছিলে?’
‘হোয়াট?’ ভ্রু কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে বলল।
‘নাথিং।’ মৃদু হেসে বলল আবির।
বিভা কিছুটা বিরক্ত বোধ করে অন্য পাশে এগিয়ে যায়। একজন গার্ড চেয়ার এগিয়ে দেয় বসতে। বিভা বসে। ওর পাশে জিনি নামের মেয়েটিও বসেছে। আবির এক দৃষ্টিতে বিভাকে দেখছে। চোখের পলক ফেলার কোনো চান্স নেই।
এত বছর পর প্রিয়তমা’কে দেখে চোখ জুরিয়ে নিচ্ছে। তবে বিভার অদ্ভুত আচরণে তার মনে সন্দেহর বীজ তৈরী হয়েছে। জামিলা আশ্চর্যজনক কণ্ঠে বলে উঠে,
‘এ আমি কাকে দেখছি। এটা কি সেই বিভা…!’
‘যার ছিল না কোনো সাজসজ্জা, ড্রেসআপ..।’ মারুফ জামিলার সঙ্গে তাল মিলায়।
আবির পকেটে হাত পুরে বলল,
‘সময় যদি বদলাতে পারে। মানুষ কেন বদলাবে না?’
‘নিজেকে জারা বলে কেন পরিচয় দিচ্ছে। ওর নাম তো বিভা।’ জামিলা কুর্নিশ করে বলল।
‘নিজের সঙ্গে, পরিচয়ও পাল্টে নিয়েছে হয়তো।’ আবির স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে।
জামিলা রাগ নিয়ে আবির’কে বলল,
‘তুই এত স্বাভাবিক আছিস কিভাবে? তোর রাগ হচ্ছে না বিভার ওপর? এই মেয়েটার জন্য তুই এত বছর কত যন্ত্রণায় ছিলি।’
ফিক করে হেসে দেয় আবির। নেতিবাচক মাথা দুলিয়ে বলল,
‘কিছু অভিমান উড়িয়ে দিতে হয়। মনে রাখতে নেই। আমি জানি এটাই আমার বিভা।’
‘এক দেখাতেই চিনে নিলি?’ সামিম এতক্ষণ পর মুখ খুলল।
আবির সামিম’কে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে পিঠে চাপড় মেরে বলল,
‘তোকে ধন্যবাদ সামিম। তোর জন্যই বিভা’কে আমি পুনোরায় পেয়েছি।’
সামিম সহ সকলে বিস্মিত চোখে তাকায়। আবির পুনোরায় বলল,
‘রতন বোসের স্যালারি বাড়িয়ে দিবি।’
আবিরের এমন উদ্ভট কথা শুনে কেউ অবাক না হয়ে পারছে না। আইরিন বেগম, আফিন দূর থেকে আবিরের পাগলামি দেখছে। তারা এখনো কনফিউজড! এটা সত্যি কি বিভা নাকি জারা জেরিন? আইরিন বেগম বিভার নিকট এগিয়ে যায়। বিভা আইরিন বেগম’কে দেখে সালাম দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
‘কেমন আছেন আন্টি?’
‘ভালো। আমাকে চিনতে পেরেছো বিভা?’
‘নিশ্চয়, আবির আহমেদের মাম্মি আপনি।’
‘হুম।’
‘এতদিন কোথায় ছিল তুমি?’
‘নিজের বাড়িতে ছিলাম।’ হেসে হেসে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে বিভা।
‘আমার ছেলে….’
পুরো কথা বলার আগেই বিভার ফোন বেজে উঠে। বিভা শাহাদাত আঙুল তুলে ‘জাস্ট এ মিনিট’ বলে সেখান থেকে জনশূন্য স্থানে চলে আসে। সেখানে আসার পর পরই বিভার কন্ঠ চেঞ্জ হয়ে যায়। হাতের পার্সটি পাশের টেবিলের উপর রেখে গম্ভীর কণ্ঠে কাউকে বলল,
‘বলো, কোনো খবর পেলে?’
‘হ্যাঁ! একবার আসতে হবে।’
‘আসবো।’ বলে বিভা ফোন রেখে ঘুরে তাকায়। তখনই আবিরের সম্মুখীন হয় সে। হাত পকেটে পুরে ক্ষোভিত চোখে বিভা’কে দেখছে। বিভা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে। এত দিন যেই মানুষটার কাছ থেকে আড়াল ছিল। আজ তার সামনে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করছে বিভা। আবির ভাবছে, প্রচুর ভাবছে! এই মেয়েটির জন্য কত বছর অপেক্ষার প্রহর সে গুনেছে। কতোই না পাগলামি করেছে। এখনো হাতের মধ্যখানে সেই কাঁটা দাগটি রয়েছে। কিছু দাগ সহজে মুছে না। রয়ে যায় অনন্তকাল!
আবিরের চোখের মাঝে ঝেকে দেখার সাধ্য তার নেই। না মুখোমুখি দাঁড়ানোর কোনো অধিকার আছে! পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিলে আবির বিভার বাহু ধরে টেনে একই স্থানে এনে দাঁড় করায়। হাত সরিয়ে একটু কাছে এসে বলল,
‘এতদিন কোথায় ছিলে? প্রশ্ন করব না। শুধু বলব, তোমার বিরহে প্রতিটা ক্লেদাক্ত দিন গুলো ফিরিয়ে দেও। ফিরিয়ে দেও আমার চোখের অশ্রু! পারবে না তুমি। কেননা তুমি একজন হৃদয়হীন, পাষানী মেয়ে। যার মধ্যে ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই।’
অনাড়ম্বর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিভা। বলার মতো কোনো বাক্য নেই। আবির এবার ক্রোধ নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেসে ধরে বলল,
‘আমার কাছ থেকে তুমি এত সহজে মুক্তি পাবে না বিভা। নিজের পরিচয় অন্যের কাছে গোপন করলেও, আমি জানি তুমি আমার বিভা। তোমাকে আমার হৃদয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি। এবার আর হারাতে দেবো না।’
‘পাগলামি করবেন না মি.আবির। আমি এখন আপনার বিভা নই।’ আবির’কে সরিয়ে বলল।
‘কে তুমি জারা?’ তাচ্ছিল্য হেসে বলল আবির।
বিভা উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আবির আবার বলে,
‘তুমি আমার বিভা ছিলে, আছো, থাকবে সারাজীবন। আর রইলো পাগলামি! এখন থেকে তুমি আমার পাগলামি দেখবে। ভয়াবহ পাগলামি!’ পুরো কথা শেষ করে বিভা’কে শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় আবির। বিভা দম নিতে পারছে না। আবির বুঝতে পেরে ছেড়ে দেয়। তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রস্থান করে। বিভা চোখমুখ ঘুচে তাকায়। এটা কোন ধরনের পাগলামি দেখিয়ে গেল বুঝতে পারছে না বিভা। ফোনে আবার একটি মেসেজ আসে। ওপেন করে বুঝতে পারে তাকে এখনই যেতে হবে। ফিরে যায় হল রুমে। দশ মিনিট সময় ব্যয় করে বিভা চলে যাওয়ার জন্য বিদায় নেয় সবার কাছে। প্রথমে তো সকলে ভেবেছিল বিভা’কে আবির যেতে দিবে না। কিন্তু সবার ধারণা পাল্টে যায়৷ আবির কোনো প্রকার পাগলামি করে না। বরং হাসিমুখে বিভাকে বিদায় দেয়। এতে বিভাও কিছুটা বিস্মিত! আপাতত সে এসব নিয়ে কিছু ভাবে না। তাকে যেতে হবে।
‘আবির, তুই ঠিক আছিস?’
আবির ভাবলেশহীন হয়ে বলল,
‘আমার কি হবে?’
সামিম তৎক্ষনাৎ বিভার কথা উল্লেখ করে না ৷ সে কিছুটা কনফিউজড হয়ে পড়ে। আবির হেসে অন্য পাশে এগিয়ে যায়। আফিন এগিয়ে আসে আবিরের নিকট।
.
‘থ্যাংক’স জারা! একদিনের জন্য আমাকে তোমার পদবি দিয়েছো।’ বিভা হাসিমুখে জিনি মানের মেয়েটিকে বলল। মেয়েটির আসল নাম জারা জেরিন। একজন নতুন মডেল। যার কারণে সে সবার কাছে এতটা পরিচিত নয়। তার পদবিটা বিভা একদিনের জন্য নিয়েছিল। সবাইকে চমকে দেওয়ার জন্য। এখানেও বড়ো রহস্য লুকিয়ে আছে।
‘না মেডাম! আপনার উপকার করতে পেরে আমি খুশি।’
‘আমি কিন্তু তোমাকে মাঝেমধ্যে জ্বালাব।’
‘সমস্যা নেই মেডাম। আমি আপনার সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।’
বিভা মৃদু হাসে। ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে,
‘সামনের গলিতে নামিয়ে দেও আমাকে।’
ড্রাইভার বিভার কথা অনুযায়ী সামনের নিরব গলিটির মুখে বিভাকে মানিয়ে দেয়। বিভা গাড়ি থেকে নেমে জারার কাছে বিদায় নিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে। হাতের সিল্কের ওড়নাটি গায়ে পেঁচিয়ে নেয়। বিভা এমন একটি গলি ধরে হাঁটছে সেখানে মানুষজনের আনাগোনা একদমই নেই। পাশে বাড়িঘর আছে। কিন্তু কেউ বসবাস করে না। দু পাশে বড়ো বড়ো গাছপালা রয়েছে। এড়িয়াটা ভূতুড়ে পরিবেশের মতো। কিছু ল্যাম্পপোস্টের বাতি নিভু নিভু করে জ্বরছে।
বিভা নির্ভয়ে হেঁটে চলেছে। হঠাৎ ফিল করে তার পিছনে কেউ আছে। ঘুরে তাকায়। তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে আগে ন্যায় হাঁটতে নিলে কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছনে সরে যায়। কঁপাল কুঁচকে ফেলে। আবির’কে দেখে বিভা ভড়কে যায়। আবিরের নজর গম্ভীর! পরনে এখন আর কোট নেই কালো শার্ট রয়েছে। দু’হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। গলায় কালো রঙের টাইটি ঢিলা করে রাখা। যেটা মৃদু বাতাসে উড়ছে। আরাম করে পকেটে হাত গুঁজে বিভাকে ক্ষীণ নজরে দেখছে।
বিভা আবির’কে এখানে দেখে বিস্মিত! তবে স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি এখানে?’
প্রশ্নটি শুনে আবির কিঞ্চিৎ বিরক্ত বোধ করল। বলল,
‘এরূপ প্রশ্ন আমার করা উচিত।’
‘মোটেও না। আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন? এখানে কিভাবে পৌঁছালেন?’
আবির বিভার হাতের পার্সটি নিয়ে নেয়ে। দু’টি সাদা পাথরের বোতাম চাপ দিতেই খুলে যায়। তার ভেতর থেকে নিজের ফোনটি বের করে নেয়। বিভার দিকে ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘এবার নিশ্চয় বুঝেছো।’
বিভা চোয়াল জোড়া রাগে শক্ত করে ফেলে। এবার সে বুঝতে পেরেছে বিদায় নেওয়ার পরও আবির তাকে কেন আটকায় নি। আর তখন শক্ত করে জড়িয়ে কেন ধরেছিল। এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে তার পার্সের মধ্যে ওর ফোনটি রেখে দিয়েছিল। ফোন সর্বক্ষণ হাতে থাকার ধরুন পার্সটি খোলা হয়নি। এবং সে বুঝতেও পারে তা তার পার্সটিয়ে আবিরের ফোন রয়েছে। যেটা তার অগোচরে রাখা হয়েছিল। আবির ফোনের লোকেশন অন করে রেখেছিল। তাই খুব সহজেই জানতে পারে বিভা এখন কোথায় রয়েছে। এবং চুপিচুপি বাইক নিয়ে এখানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
‘অবশেষে বুঝতে পেরেছো তাহলে।’ এক ভ্রু উঁচু করে বলল আবির।
বিভা কিছুটা রাগী কণ্ঠে শুধালো,
‘পিছু কেন করছেন?’
‘তুমি এদিকে কোথায় যাচ্ছো?’
‘বাড়িতে।’
‘আজকাল ভূতুড়ে এড়িয়ায় থাকছো নাকি?’
‘থাকছি, তাতে আপনার কি।’ বলেই বিভা হাঁটতে আরম্ভ করে। আবির ফোন পকেটে রেখে ওর পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে। বিভা সেটি দেখে রেগে বলে,
‘আমার পিছু কেন আসছেন। চলে যান।’
‘উঁহু! তোমাকে বাড়িতে যাব।’
‘আমি অচেনা কাউকে বাড়িতে নিবো না।’
‘কে নিতে বলল তোমাকে।’
‘তাহলে আমার পিছু হাঁটছেন কেন?’ ক্রোধ নিয়ে বলল।
‘বাড়িতে যাওয়ার জন্য।’
‘মেজাজ খারাপ করবেন না। চলে যান বলছি।’
‘নাহ!’
বিভা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে থেমে যায়। আবির বিভার থেমে যাওয়া দেখে সামনে এসে দাঁড়ায়। বিভা ওর পার্স থেকে একটি রুমাল বের করে। আবির বলল,
‘আমাকে দিবে নাকি?’
‘নিন।’ বলে আবিরের নাকমুখের উপর চেপে ধরে রুমালটি। আবির এক ঝটকায় বিভার হাত সরিয়ে ফেলে। ওর হাত থেকে রুমালটি মাটিয়ে পড়ে যায়। হঠাৎ আবির বিভার দিকে তাকিয়ে থাকাকালীন অনুভব করে তার মাথা ঘুরছে। চোখ জোড়া ক্রমশে বন্ধ হয়ে আসছে। এক বার মাথা ঝাকিয়ে হাতের তর্জনী উঁচু করে মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই বিভার গায়ে এলিয়ে পড়ে। বিভা আবির’কে ধরে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে দেয়। আবির জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মুখের উপর একবার হাত দিয়ে চেক করে। পুরোপুরি কনফার্ম হবার পর মুচকি হাসে। তার কাজ হয়েছে। ক্লোরোফর্ম মাখা রুমালটি পরিশেষে কাজে দিয়েছে। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতিতে আবিবের স্নিগ্ধ মাখা আদল দেখে বিভার মায়া হয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে কাউকে কল দেয়। এক মিনিট কথা বলে আবির’কে সেভাবে রেখেই বিভা তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে।
.
.
.
#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here