বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায় #পর্ব_২০,২১ অন্তিম পর্ব

0
1133

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_২০,২১ অন্তিম পর্ব
#সুমাইয়া মনি
২০

সকাল থেকে একজন ব্যক্তির খুনের নিউস টিভিতে প্রচার হচ্ছে। তার নাম আকবর আলি। তিনি মাহাথির নামের এক গার্মেন্টসের ম্যানেজার ছিলেন। আকবর আলির মৃতদেহটি তারই বাড়ির আম গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ অনুমান করছে, গলায় ফাঁশি দেওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। এক বছর আগে তিনি বিবাহিত একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তিনমাস হলো মেয়েটিকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন। আপাতত তিনি এ বাড়িতে একাই থাকতেন।
লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। টিভিতে খবরটি প্রচার হতে দেখে বিভার ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে।
রিমোট পাশে রেখে এক মুহূর্তের জন্য ভাবনার জগতে ডুব দেয়। চলে যায় কাল রাতের ঘটনায়৷ একটা কাজের বাহানায় আকবর আলির বাড়িতে আসে রাত এগারোটার দিকে।
প্রথমে আকবর আলির মনে সন্দেহ ঝেঁকে বসলেও পরমুহূর্তে বিভার সৌন্দর্যে সে মুগ্ধ হয়। বিভা আকর্ষণীয় ভাবে সেজেছিল। দু’জনার মাঝে কথপোকথন হয় বেশ কিছুক্ষণ।
কাজের মহিলা না থাকায় তাকেই চা-নাস্তার জোগাড় করতে হয়। রান্না ঘরে পা রাখতেই বিভা তার আসল রূপে দেখায়। কৌশলে অজ্ঞান করে হাত-পে বেঁধে ফেলে। পানির ঝাঁপটা দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর পর বিভা জিজ্ঞাসাবাদ চালায়।
তিনি মুখ খুলতে প্রস্তুত ছিলেন না৷ বিভা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তার মুখ থেকে গার্মেন্টসের কিছু রহস্য জানতে পারে। বিভার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। শেষে নিজের পরিচয় দিয়ে বিভা সামিম’কে ফোন করে এখানে আসতে বলে। সামিম আসার পরপরই বিভা এখান থেকে বেরোয়। বাকি কাজ সামিম পূর্ণ করে।
এক ধাপ এগিয়েছে। উদঘাটন হয়েছে কিছু আসল রহস্যের।

কলিং বেল বেজে উঠে। ভাবনায় ছেদ পড়ে। রিমোট হাতে নিয়েই এগিয়ে যায়। ছিটকিনি খুলে আবির’কে গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসা অবস্থায় দেখে। বিভা অবাক হয় না। বরঞ্চ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
‘হোয়াট?’
‘উইল ইউ ম্যারি মি?’
‘ইয়েস!’ চটপট উত্তর দিয়ে ফুলটি হাতে নেয়।
আবির মুচকি হেসে উঠে বলল,
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ!’
‘অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে। পারলে ক্ষমা করে দিবেন।’
আবিরের মুখের হাসি চওড়া হয়। বিভাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে। দীর্ঘশ্বাস টেনে পরম যত্নে চোখ বন্ধ করে নেয় আবির। বলল,
‘ক্ষমা চাইতে নেই। আমাকে একটু ভালোবাসা দিও। দেখবে পুরোনো অতীত সব ভুলে যাব।’
‘হুম।’ উচ্চারণ করে আবির’কে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তখনই সেখানে মোহনার আগমন ঘটে। ‘এহেম এহেম’ কাঁশি দিতেই দু’জন দু’জনকে ছেড়ে দেয়। কিছুটা ইতস্তত বোধ করে তারা। মোহনা মৃদু হেসে বলল,
‘আমি না হয় পরে আসি।’
‘নাহ! তুমি থাকো। আমি চলে যাচ্ছি। অফিসে জরুরী মিটিং আছে।’
‘হাহ! সেটা তো দেখেই বুঝতে পারছি।’
আবির দ্রুত প্রস্থান করে। মোহনা হেসে ফেলে। বিভা ওঁকে ভেতরে আসতে বলে। দু’জনে পাশাপাশি বসে।
‘আজ এত প্রেম কেন জাগল তোর মনে? ঘটনা কি?’
‘আর কষ্ট দিতে চাই না ওঁকে। আমরা শীঘ্রই বিয়ে করব।’
‘বাহ! ভালো কথা। আমার আগে তোদের বিয়ে হবে নাকি?’
‘হতে পারে।’
‘এত তাড়াতাড়ি কেন?’
‘সেটা আবির জানে।’
‘যাক এক দিক থেকে ভালো হবে। অন্তত ভাইয়ার কষ্টটা একটু হলেও কমবে। এমনেতেই অনেক দুঃক্ষে ভুগেছে সে।’
বিভা উত্তর দেয় না। মোহনা বের বলে,
‘কিছু জানতে পারলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘কি জানলি?’
বিভা রহস্যময় হাসি দেয়। এ হাসি বলে দিচ্ছে লুকানো কোনো রহস্যের বার্তা।
______
দুপুরের দিকে আবির অফিস থেকে দ্রুত বাড়িতে ফিরে। আজ আফিনও বাড়িতেই ছিল। খাওয়ার টেবিলে বলে আবির তাদের উদ্দেশ্যে বিভা’কে বিয়ে করার প্রস্তাব জানায়।
‘ও সত্যিই কি বিভা? নাকি অন্য কেউ?’
‘বিভাই আম্মু।’
‘তাহলে প্রথম দিন এমন অভিনয় করল কেন?’
‘সেটা বিভাই ভালো জানে।’
‘এতদিন কোথায় ছিল জিজ্ঞেস করেছিলি?’ আফিন প্রশ্ন করে।
‘নাহ! করিনি।’
‘কেন?’
‘এক সময় ও নিজ থেকেই সব বলবে এই আশায়।’
‘বিভা কি বিয়েতে রাজি আছে?’
‘হ্যাঁ! আছে। আমি দ্রুত বিয়ে করতে চাই ওঁকে ভাইয়া।’
‘এটা কীভাবে হয়? আফিনের আগে তুই বিয়ে করবি।’
‘তো মেয়ে দেখো। আমি ভাইয়া এক সঙ্গে বিয়ে করব।’
‘আমি বিয়ে করব না। আর কি হবে আবির আগে বিয়ে করলে? এমন অনেক আছে আম্মু, বড়ো ভাইকে ডিঙিয়ে ছোট ভাই পালিয়ে বিয়ে করে।’
‘জানি। এটা ভালো দেখায় না। বিয়ে যদি করতে হয় আগে তুই বিয়ে করবি। তারপর আবিরের বিয়ে হবে। এটা আমার শেষ কথা।’
‘তাহলে আমার আর বিভার কাবিন সেরে ফেলি?’
‘নাহ! আফিনের বিয়ে পর তোর বিয়ে হবে।’
‘দু ভাইয়ের এক সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে দেও আম্মু?’ হেসে বলে আবির।
‘এটাও করা যায়। আফিন, এবার আমি তোমার নিষেধাজ্ঞা শুনবো না।’
‘যা ভালো মনে হয় করো।’ বলেই আফিন হাত ধুয়ে উঠে যায়।
আবির, আইরিন বেগম কিছুটা খুশি হয়। এবার আফিনের জন্য মেয়ে দেখার পালা।
__
আজ সিমা সুমনা’কে ধাক্কা মেরে সিঁড়ির ওপর থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লাস্ট পর্যায় আফিন এসে তাকে ধরে ফেলে। এবং সবার অগোচরে নিয়ে কষিয়ে চড় দেয় সিমার গালে।
‘অনেক পাগলামি করেছো। আর দেখতে চাই না তোমার পাগলামি। তৃতীয় বার এমন কর্মকান্ড করলে কলেজ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো।’ এতটুকু বলে সুমনা’কে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সিমা গালে হাত রেখে আফিনের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়। তার আদল দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ হতবিহ্বল হয়ে আছে। বান্ধবী’রা তার কাছে এসে দাঁড়ায়। জুঁই দুঃখপ্রকাশ করে বলল,
‘এবার তো পাগলামি ছেড়ে দে। চড় পর্যন্ত খেতে হলো স্যারের হাতে।’
‘আমরাও তাই বলি সিমা।’
‘এ্যাহ! তোরা কি ভেবেছিস একটা চড় খেয়ে আমি ঠিক হয়ে যাব। মোটেও না। আমি স্যার’কে ভালোবাসি। এবং সারাজীবন ভালোবাসবো হুহ্!’
‘আজাইরা মাইয়া।’ বিড়বিড় করে বলল জুঁই।
.
‘সিমা মেবি আপনাকে ভালোবাসে। ওঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না কেন?’
‘আমি ওঁকে পছন্দ করি না সুমনা।’ আফিন বলল।
‘ও খুব ভালো মেয়ে। হয়তো একটু পাগলি টাইপের তবুও মনটা ভালো। আপনি চাইলে রিলেশন করতে পারেন।’
‘সিমার এমন পাগলামি ভবিষ্যতে খারাপ ইফেক্ট পড়তে পারে। আর আমি যদি সায় দেই, ও আরো বিগড়ে যাবে। আমি চাই না ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট হোক আমার জন্য।’
‘আপনার কথা ঠিক আছে। তবে একটু বুঝিয়ে বলবেন। আপনার সঙ্গে আমাকে দেখে সিমা সহ্য করতে পারছে না। তাই আমার ওপর ক্ষেপে আছে।’
‘জানি! তাই তো চড় দিলাম।’
‘এনিওয়ে, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, আমি চললাম।’
‘আচ্ছা।’
___
আবির বিভার বাড়ি থেকে রাত এগারোটা নাগাদ চলে যায়। আজ এক সঙ্গে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছে দু’জনে।
বিভা কিছু লোকদের সঙ্গে ফোনালাপ চালায়। তারপর তৈরী হয় দ্বিতীয় মিশনের জন্য। আজ সে একাই যাবে। সামিম’কে প্রয়োজন পড়বে না। বারোটার দিকে বিভা তৈরী হয়ে বের হয়। সুনসান রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। চাঁদের আলোয় ঝকমক করছে রাস্তাঘাট। বিভার পরনে কালো প্যান্ট ও হুডিওয়ালা জ্যাকেট। নিজেকে লুকানোর জন্য পরিধান করেছে। মুখে ছিল মাস্ক। অনেকটা পথ পাড়ি দেবার পর চলে আসে মাহাথির গার্মেন্টসের সামনে। গার্মেন্টসের অপজিট রাস্তায় ফার্মেসীর একটি দোকান এখনো খোলা ছিল। দোকানে একজন মধ্যবয়স্ক লোকছিলেন। নাম মকবুল কালাম। সম্ভবত তিনি দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় করছেন। তার কর্মচারী অনেক আগেই চলে গেছে।
শাটার লাগাতে যাবে তখনই বিভা তার নিকট এসে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ইয়াবা, ড্রাগস হবে?’
লোকটি শাটারে হাত রাখা অবস্থায বিভার পানে তাকায়। চোখেমুখে তার বিস্ময়কর ভাব। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘আমি এগুলো বিক্রি করি না।’
‘আকবর আঙ্কেল আপনার এড্রেস দিয়েছিল কাল সকালে।’
‘তুমি তার কাস্টোমার?’
‘ছিলাম। আজ তো তিনি মারা গেছেন। তাই আপনার কাছে এসেছি।’
‘ব্যাগে আছে। আমার সঙ্গে চলো, পথিমধ্যে দিয়ে দিবো।’
‘হুম।’ মকবুল একটি কালো রঙের ব্যাগ বের করে শাটার লাগিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তিনি আগে আগে হাঁটছেন, বিভা তার পিছনে পিছনে হাঁটছে। প্রায় আধাঘন্টা হাঁটার পর তিনি একটি নির্জন এড়িয়ায় এসে থেমে যায়৷ জায়গাটা একটু জঙ্গলের মাঝপথে বলা যায়। এটা একটি পার্ক। বাড়িঘর তেমন একটা নেই এদিকটায়। ভোর বেলায় অনেকেই পার্কে হাঁটতে আসে। ল্যাম্পপোস্টের সোনালী আলোয় চারদিক ফকফকা।
লোকটি ঘুরে তাকায়। হাতে তার কালো রঙের Walther P99 পিস্তলটি চকচক করছে। পিস্তলের ওপরের অংশে সাইলেন্সসার লাগান। মকবুল নামের লোকটি গম্ভীর কণ্ঠে বিভার উদ্দেশ্যে বলল,
‘আকবরের এমন কোনো কাস্টোমার নেই, যার কথা আমি জানি না। আমার বন্ধু ছিল আকবর। আমি নিশ্চিত ওর খুনের পিছনে তোর হাত রয়েছে। কে তুই? পরিচয় কি তোর?’
বিভা মাথা নিচের দিকে নামিয়ে তাচ্ছিল্য হাসে। পকেটে এক হাত গুঁজে বলল,
‘ববির কথা মনে আছে?’
‘ওও! তুই ববির ছোট বোন বিভা। এই বার পরিষ্কার হলো আসল ঘটনা। তাহলে তুই মেরেছিস আকবর’কে।’
বিভা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
‘আমার বোনের খুনের পিছনে তোরও হাত রয়েছে।’
‘হ্যাঁ! আমিও জড়িত। মরার ক’দিন আগে তোর বোন এসেছিল আমার কাছে। সঙ্গে করে কিছু কাগজ নিয়ে।’
‘মাহাথির গার্মেন্টসের মেডিকেল রিপোর্ট ছিল সেগুলো। আর তুই তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে দিয়েছিলি সেদিন।’
‘হ্যাঁ! আমরা চাইছিলাম না গার্মেন্টসের গোপন রহস্য কেউ জানুক। তোর বোন উঠেপড়ে লেগেছিল সত্য জানার জন্য। এই জন্য মরতে হলো।’
‘আমার বোন চলে যাওয়ার পর খবরটা নিশ্চয় মাহাথির’কে দিয়েছিলি তুই?’
‘দিয়েছিলাম। যাতে তোর বোন’কে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।’
বিভা চোখ বন্ধ রেখে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। পরপরই চোখ খুলে বলল,
‘পড়ালেখা না জানা অশিক্ষিত ছিল আমার আপু। সরল, উদার মনের মানুষ ছিল। তার স্বপ্ন পূরণ হবার আগেই তোরা তাকে মেরে ফেলেছিস। ভালো করিস নি।’ কথাটা বলার পর পরই চোখের পলকের মধ্যেই পাশ কেঁটে লাফিরে মকবুলের সামনে চলে আসে বিভা। হাত থেকে ছোঁ মেরে পিস্তলটি নিজের আয়ত্তে করে নেয়। ঘুরেই বুকের মাঝখান বরাবর গুলি করে দেয়। এক, দু বার ঝাঁকুনি দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মাহবুব। অনবরত শরীর কাঁপছে তার। বুক থেকে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। হাঁটু গেড়ে তাম মাথার সামনে বসে। পকেট থেকে রুমাল বের করে পিস্তলটি সযত্নে মুছতে থাকে। গাম্ভীর্য স্বরে বলল,
‘তোদের মতো চার-পাঁচটে জা*নো*য়া*র’কে মেরে ফেললে সমাজের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং আরো লাভ হবে।’ কথাটা পুরো শেষ করার পূর্বেই মকবুল মারা যায়। বিভা তার হাতের মধ্যে পিস্তলটি গুঁজে দেয়। পকেট থেকে ফোনটি বের করে নিয়ে ‘আলবিদা’ শব্দটি উচ্চারণ করে এগিয়ে যায় তার গন্তব্যের দিকে। মনের উপর থেকে সরু পাথরটি সরে গেছে। এখন বড়ো পাথরটি সরানোর পালা। সেটাও একদিন সরবে, গাছের মূল শিকড় উপ্রে ফেললে।
______
সকালে টিভিতে মকবুলের মৃত্যুর নিউস দেখাচ্ছে। তার ব্যাগের মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য পাওয়া গেছে। তার ফোনটি গায়েব ছিল। পুলিশ’রা সরাসরি এটাকে সুইসাইড বলতে পারছে না। বিভা আরাম করে কফি খাচ্ছে আর নিউস দেখছে। ফোনে সামিমের একটি ম্যাসেজ আসে। সেখানে লিখা ছিল ‘গুড জব বিভা’। সেটি দেখে বিভা স্মিত হাসে।
.
নয়টার দিকে বিভার সঙ্গে কথা বলতে বলতে অফিসে পৌঁছায় আবির। একটি মিটিং সেরে আবির মারুফের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেবিনে উপস্থিত হয়। গায়ের কোটটি খুলে সোফার উপর রাখে। হেলান দিয়ে ল্যাপটপ অন করে।
‘মারুফ এই প্রজেক্টটি লাভবান হবে আমাদের জন্য। তুই শুধু…’
‘শুনুন।’ বিভার কণ্ঠের স্বর শুনে আবির অবশিষ্ট কথা থামিয়ে চোখ তুলে তাকায়। সে চমকিত! মুখ হা হয়ে গেছে বিভা’কে দেখে। এক নজরে পরিদর্শন করতে ব্যস্ত তাকে। মারুফ হ্যালো, হ্যালো করছে। আবির উঠে দাঁড়িয়ে ‘পরে কথা বলছি’ বলে ফোন কেঁটে দেয়। স্লো গতিতে একবার চোখের পলক ফেলে মোহময় দৃষ্টি নিক্ষেপ রাখে। একি বাস্তবে দেখছে? নাকি স্বপ্ন?
লাল কাতান শাড়ি, লাল চুড়ি, ম্যাচিং গহনা সঙ্গে গর্জিয়াছ সাজ। নতুন বউয়ের মতো লাগছে বিভা’কে। যে কেউ তাকে দেখে ভাববে আজ তার বিয়ে। আবিরের মোহজনিত ভ্রান্তি কিছুতেই কাটছে না। বিভা এগিয়ে আসে আবিরের নিকট। মৃদু হেসে দু’কাঁধের উপর হাত রেখে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘চলেন বিয়ে করি। হৃদয়ের বাঁধন মজবুত করি দু’জনার। মিস থেকে মিসেস.আবির হতে চাই আমি।’ পুরো কথা বলে আবিরের চোখে চোখ রাখে বিভা। এই মুহূর্তে আবির নিজেকে ভাগ্যবান বলে দাবী করছে। এতদিনের কষ্ট আজ অবসান হলো। এক চিতলে হাসি ফুটে উঠে তার ওষ্ঠদ্বয়। আবির আলতো স্পর্শে পেটের ওপর হাত রেখে বিভা’কে আরো একটু কাছে টেনে নেয়। নাকে নাক ঘষে নরম স্বরে বলল,
‘অবশ্যই! আজ আর কারো বাঁধা মানছি না। নিজের করে নেবো তোমায়।’ বাক্যটি শেষ করে আবির তার ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নেয়। দু’জন কপোত-কপোতীর ওষ্ঠদ্বয় মিলিত হয়।
.
.
.
#চলবে?

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_২১ ( অন্তিম পর্ব )
#সুমাইয়া মনি

ঘরোয়া ভাবে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হবে। আবির ওর আম্মু’কে মানিয়ে নিয়েছে। আফিনের কোনো সমস্যা নেই। রাতে বিয়ে। হঠাৎ এভাবে বিয়ে হবে কে-ই বা জানতো! আইরিম বেগম হাতেগোনা ক’জন আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। সামিম, মারুফ ঘরের সাজসজ্জায় ব্যস্ত। মোহনা এসেছে। আফিন প্রিন্সিপাল ও সুমনা মেডাম’কে নিমন্ত্রণ করেছে। সুমনা আসার সময় সিমা’কে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। আফিন সিমা’কে দেখে কোনো রিয়াকশন করে না। বিয়ের তোড়জোড় করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে।
বিভা’কে সাজানো শেষ। অতি সিম্পল একটি লেহেঙ্গা পড়েছে। ভারী লেহেঙ্গা কিনতে নিষেধ করেছিল আবির’কে। মার্কেটে গিয়ে ভিডিও কলে নিজেই লেহেঙ্গা চয়েস করেছে।আজ তার জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হবে। সঙ্গে বাকি কাজ গুলোর সমাধান করবে। গেস্ট সকলে উপস্থিত আছে। সামিমের চারজন কাজিন এসেছে। ইতিমধ্যে কাজি সাহেব সেখানে উপস্থিত হয়েছে। মেহমানদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ। বিভা’কে হল রুমে নিয়ে আসা হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাঁটাতে কাঁটাতে রাত নয়টা বেজে যায়। বিয়ের কাজ শুরু করা হয়। আবির আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনবার কবুল বলে সাইন করে দেয়।
বিভাও কবুল বলে সাইন করে। সাক্ষী হিসাবে দু’জনার পক্ষ থেকে মারুফ, সামিম, আফিন দের সাইন করতে হবে। তারা দু’জন সাইন করে ঠিকিই। কাজী যখন আফিনের নাম জিজ্ঞেস করে, তখন আফিন তার নাম উচ্চারণ করার পূর্বেই বিভা বলে উঠে,
‘মাহাথির মুনির।’
নামটি শুনে সকলে বিভার পানে তাকায়। আফিনের ভ্রু সরু হয়ে আসে। বিভা সকলের চাহনি দেখে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন আপনারা। আফিন ভাইয়ার আসল নামই তো বলেছি।’
‘ফাজলামো বন্ধ করো বিভা। এটা ভাইয়ার নাম না।’ আবির কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলল।
উপস্থিত সকলে একবার আফিনের দিকে তাকায় তো একবার বিভার দিকে। কনফিউজড হয়ে আছে সবাই।
‘এটাই আফিন ভাইয়ার আসল নাম। জিজ্ঞেস করো ভাইয়া’কে।’
‘কি বলছো এসব। থামো বলছি।’ আবির ক্ষুব্ধ স্বরে বলল। বিভা উঠে দাঁড়ায়। আফিনের দিকে আঙুল তাক করে বলল,
‘কিছু বলছেন না কেন মাহাথির ভাইয়া। নিজের আসল নামটি সকলকে বলুন?’
আফিনের আদলে জড়ো হয় এক রাশ রাগের আভা। দাঁতে দাঁত চেপে এক হাত মুঠোবন্দী করে রাখে। আবির সহ বাকিরাও উঠে দাঁড়ায়। কেউ বুঝতে পারছে না বিভা কি বলতে চাইছে। ওদের দিকে দ্বিধান্বিত নজরে তাকিয়ে আছে সকলে। আবির বিভা’কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তেজী কণ্ঠে বলল,
‘এখন কিন্তু বেশি হচ্ছে বিভা।’
‘মোটেও বেশি হচ্ছে না। তাকেই নিজের মুখে বলতে বলুন না সত্যিটা।’
আবির আফিনের দিকে তাকায়। শান্ত, গম্ভীর নজর আফিনের। না কিছু বলতে পারছে, না আবির কিছু জিজ্ঞেস করছে তাকে। বিভা হেঁটে আফিনের নিকট এসে তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘আপনি ধরা পড়ে গেছেন মাহাথির ভাইয়া। এবার সকলকে নিজের আসল পরিচয় দেন। বলুন নিজেক কুকর্মের কথা।’
‘বিভা!’ চিল্লিয়ে উঠে আবির।
‘চুপ!’ চেঁচিয়ে মুখে আঙুল রেখে বলল বিভা।
পুরো হল রুম নিস্তব্ধ! বিন্দুমাত্র আওয়াজ নেই। বিভা আঙুলের ইশারা করে কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে,
‘আজ আমি বলব, সবাই দেখবে, শুনবে একজন সৎ মানুষের আড়ালে লুকানো কুকর্মের কথা।’ আফিনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘আপনার সময় শেষ মাহাথির মুনির।’ আফিন ক্রুদ্ধ চোখে বিভার দিকে তাকায়। রাগে মাথার রগ দপদপ করছে। বিভা এক কদম এগোতেই সামিমের কাজিন নামে পরিচিত চারজন লোক কয়েকটি কাগজ বিভার হাতে তুলে দেয়।
বিভা কাগজ গুলো খুলে দেখতে দেখতে বলল,
‘দশ বছর আগে শিলন নামের গার্মেন্টসটি কিনে মাহাথির নাম দিয়েছিলেন। গার্মেন্টসটি কাপড় তৈরীর জন্য হলেও সেটা অবৈধ ব্যবসা চালাতেন। তিনি কি করতেন জানেন? গার্মেন্টসের নিরীহ কর্মচারীদের অসুস্থতার বাহানা দিয়ে কিডনি বের করে নিতেন। তারপর সেই কিডনি গুলো বাহিরের দেশ গুলোতে বিক্রি করে দিতেন। তারা শুধু মেয়েদেরই বেশি টার্গেট করতেন। এমন অনেক কর্মচারী আছেন, যারা একটি মাত্র কিডনি নিয়ে বেঁচে আছে। অথচ তারা জানেনও না এটা। ওনি হলো সেই গার্মেন্টসে মালিক মাহাথির মুনির। এ বাড়ির বড়ো ছেলে আফিন নামে পরিচিত।’ লাস্টের কথা টুকু চিল্লিয়ে বলল বিভা।
সকলে বাকরূদ্ধ। হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আবির বিশ্বাস করে না। তার ফেরেস্তার মতো ভাইয়ের এমন কুকর্ম, সে মেনে নিতে পারছে না। মনে পড়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে কাটান অতীত। খুনসুটি গুলো। বিশ্বাস করতে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। সব কিছু কেমন ঘোলাটে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। প্রায় সময় আফিন না বলে কোথায় চলে যেত। মাঝেমধ্যে ফোনও বন্ধ রাখতো। তবে কী এটাই ছিল ফোন বন্ধের কারণ? ভাবতে পারছে না সে। মাথাটা ভার অনুভব হচ্ছে। প্রিন্সিপাল স্যার ও সিমার মুখ ঘৃণায় থমথমে হয়ে আছে।

বিভা কিছু কাগজ আবিরের পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
‘এই তার প্রমাণ। তিন বছর লেগেছে আসল রহস্য উদঘাটন করতে।’
‘তুমি সি..’ বাকিটুকু আবিরকে বলতে না দিয়ে বিভা বলে উঠে।
‘হ্যাঁ! আমি একজন সি,আই,ডি কর্মকর্তা। আমার সহপাঠী সুমনা। যাকে আমি টিচার বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম সেই কলেজে। সমাজে নিজেকে সৎ, মার্জিত দেখান তিনি। সামাজিকতা পালন করেন। অথচ, তিনি একজন জঘন্যতম খুনি। আমার ববি আপুকে খুন করেছেন তিনি। শুধু আমার আপুকেই নই, নিজের বাবারও খুনি।’
আবির অনুভব করছে সে শূন্যে ভাসছে। পায়ের তলায় মাটির অংশ ফাঁকা ফাঁকা অনুভব হচ্ছে। বিভার প্রতিটা কথা বুকে আঘাত এনেছে। আইরিন বেগম রীতিমতো কাঁদতে আরম্ভ করেছে। বিভা তার কাছে এসে হাত ধরে টেনে আফিনের সামনে এনে দাঁড় করায়। বলল,
‘এনারা আপনার আপন মা, ভাই না। আপনি এতদিন ভুল জেনেছেন। এরা শুধু আপনার উপর এতদিন দয়া করেছেন দয়া। আপনাকে জন্ম দেওয়ার সময়ই আপনার মা মারা যান। তারপর তাকে বিয়ে করে এ বাড়িতে আনে। তখন তার ছেলের বয়স ছিল তিন বছর। আপনাকে অবহেলায়, অযত্নে বড়ো করেছেন ওনি। আর যাকে আপন ভাই ফেরেস্তা ভাবছেন তিনি আপনাকে সহ্য করতে পারত না।’ বিভা আইরিন বেগমের দিকে তাকায়। বলে,
‘এসব কীভাবে জানলাম জানেন? জরিনাকে তো চিনেন। এ বাড়িতে কাজ করতো।’ আইরিন বেগম ভয়তে শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে পারে জরিনার মাধ্যমেই এসব জানতে পেরেছে বিভা।
‘এবার বলুন বাকি গুলো।’ কাঠিন্য কণ্ঠে বলল বিভা।
আইরিন বেগম কান্না থামিয়ে চেহারায় রাগের রেশ ফুটিয়ে বললেন,
‘আবির আমার আপন ছেলে না। মাহাথিরই আমার একমাত্র ছেলে। আমি ওঁকে কখনোই নিজের আপন ছেলে হিসাবে দেখি নি। কক্ষণো না!’
আবিরের চোখ ছলছল করছে। মায়া ভরা কণ্ঠে বলল,
‘আম্মু…’
‘আমি তোর আম্মু নই। জন্মের সময় তুই তোর নিজের মা’কে খেয়েছিস। যখন তোর তিন বছর হলো। তখনই তোর বাবা সব সম্পত্তি তোর নামে করে দিলো। আমরা কি পেলাম? কিচ্ছু না। ভাস্যমান হয়ে রয়ে গেলাম এ বাড়িতে। নিজের গহনা বিক্রি করে, টাকা পয়সা হাতিয়ে মাহাথির’কে আমি ঐ গার্মেন্টসটি কিনতে সাহায্য করেছি। তিন বছরের মাথায় যখন তোর বাবা আমাদের গোপন রহস্যের কথা জানতে পারলো। মাহাথির’কে নির্দেশ দেই তাকে মেরে ফেলতে। অতিরিক্ত ড্রাগস দেওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়। আমরা দু’জনে হার্ট অ্যাটাক বলে চালিয়ে দেই।’ তিনি থেমে পুনোরায় বললেন,
‘তোর বোন’কে মাহাথিরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা ছিল একটা বাহানা মাত্র। আর এসব ভালোবাসা, আবেক এগুলো অভিনয় ছিল। আমাদের পথে যে এসেছে তাকেই মারতে হয়েছে।’
আবির দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। সামিম, মারুফ দের পাশে সরিয়ে চেয়ারে বসে যায়। তার চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। কথা বলার শক্তিটুকু যেন হারিয়ে ফেলে। কিছু পরিস্থিতি মানুষকে বোবাতে পরিনত করে। আবির বোবা হয়ে গেছে। বলার অনেক কিছু থাকলেও, শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে । মানুষ এমন নিখুঁতভাবে কীভাবে অভিনয় করতে পারে। নিঃসন্দেহে তারা অভিনেত্রী – অভিনেতা! সবাই যেন পাথরে পরিনত হয়েছে। আবিরের মতো তারাও বাক্‌শক্তিহীন হারিয়ে ফেলতে বসেছে। সিমা এক ধ্যানে আফিন’কে দেখছে। এই মানুষটার জন্য এতটা পাগলামি করেছে। ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে তার। বিভা আইরিন বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আপনি তো একজন শিক্ষিকা ছিলেন। স্টুডেন্টদের সুনির্দিষ্ট শিক্ষা দিতেন। অথচ নিজের জ্ঞানের ভান্ডার খালি। শিক্ষক জগতে থেকেও বিন্দুমাত্র জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নি। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। আপনি আপনার নিজের ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারেন নি। অন্যের ছেলেকে কীভাবে ভালোবাসবেন? শুধু মাত্র সম্পত্তির, টাকা পয়সার লোভে নিজের ছেলে আর অন্যের জীবন নষ্ট করেছেন। আপনি মা নামের কলংক।’
মায়ের নামে এসব শুনে মাহাথির বিভার দিকে রেগে এগিয়ে আসতে নিলে সামিমের কাজিনরা তাকে ধরে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে মাহাথির। বিভা মাহাথিরের কাছে এসে আস্তেধীরে বলল,
‘এরাও সি.আই.ডি-এর লোক। আর তোর দুই সঙ্গীকে আমিই মেরেছি।’
মাহাথির যেন আরো ক্ষেপে গেল। নিজেকে ছাড়ানোর অধিক চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভা নরম স্বরে বলল,
‘তোকে আমি বড়ো ভাই হিসাবে মানতাম। খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু তুই তো একটা নরপশুর থেকেও খারাপ। অনেক কষ্ট দিয়ে আমার বোনকে মেরেছিস। কলিজা একবারও কাঁপেনি তোর। দেখ আবির’কে! ফেরেস্তার আসনে বসিয়েছিল তোকে। কিন্তু তুই তো দাজ্জালের সমতুল্য। ভাই নামের অভিশাপ।’
‘আমার কোনো ভাই নেই। আমি কারো ভাই না।’ চিৎকার করে বলে মাহাথির।
‘তোর ভাই হবার কোনো যোগ্যতা নেই। নিয়ে যান তাদের।’ বিভার নির্দেশে তাদের থানাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আবির মাঝপথে থামিয়ে দেয়। তাদের দু’জনার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
‘এসব করার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল আম্মু? একবার বলে দেখতে আমায়। সব কিছু দিয়ে দিতাম। আমি শুধু তোমাদের চেয়েছি। সম্পত্তি চাই নি।’ কথা গুলো বলে আবির ঘুরে দাঁড়ায়। তার ঘৃণা লাগছে। আইরিন বেগম মাথা নত করে রাখে। মাহাথিরের আদলে অনুশোচনার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। বিভা সকল আত্মীয়দের নিকট বলল,
‘আপনারা আমাদের বিয়েতে এসেছেন খুশি হয়েছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আপনারা এখন আসতে পারেন।’ সবাই আবিরকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যায়। রয়ে যায় সামিম, মারুফ, মোহনা, সিমা। বিভা সিমাকে যাওয়ার সময় আটকায়। ওঁকে মোটেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। বিভা সিমাকে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
‘কিছু মানুষের ভাগ্যে এমন কিছু লিখা থাকে যেটা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তোমাকে এখানে আনার জন্য আমিই সুমনা’কে বলেছিলাম। সত্যিটা জানানোর খুব প্রয়োজন ছিল তোমায়। মানুষের জীবনে সঠিক সময়ে ভালোবাসা আসে। হয়তো দেরিতে, নয়তো আগে। আশা করি এখন থেকে তুমি পাগলামি করবে না সিমা।’ সিমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলল। সিমা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়।
‘মারুফ ভাইয়া সিমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবেন।’
হ্যাঁ সূচক জবাব দেয় মারুফ। বিভা সামিমের উদ্দেশ্যে বলল,
‘অনেক সাহায্য করেছেন আমায়। আপনার কাছে আমি ঋণী ভাইয়া।’
‘এমন করে বোলো না বিভা। তুমি শুধু আমার প্রিশ বন্ধু’কে আগলে রেখো। এখন তুমি ছাড়া ওর কেউ নেই।’
‘অবশ্যই! ভাইয়া। আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।’
সামিম বিভার মাথায় হাত রেখে মোহনাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোয়। মারুফও চলে যায় সিমা’কে নিয়ে। আপাতত আবির’কে বিভার কাছে একা ছেড়ে দেয়। আবির স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবাড়িতে তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।
বিভা আবিরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। হাত ধরে সোফায় বসিয়ে মাথাটা নিজের কোলের ওপর রাখে। আবির নির্মল কণ্ঠে বলল,
‘আপন বলতে আমার আর কেউ রইলো না বিভা। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। আমি বড্ড একা হয়ে গেছি বিভা, বড্ড একা।’
‘উঁহু! আমি আপনার জীবনে আছি। শেষ অব্দি থাকবো।’
আবির উঠে বিভার হাত ধরে বলল,
‘কথা দেও আমাকে ছেড়ে যাবে না।’
বিভার আবিরের কঁপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
‘নিজের স্বামীকে ছেড়ে কোথায় যাব? আপনিই তো আমার সব।’
আবির বিভাকে ঝাপটে ধরে। গালে চুমু দিয়ে বলল,
‘আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই বিভা। যেখানে থাকবে না প্রতিহিংসার ভালোবাসা, লোভ-লালসা। শুধু থাকবে ভালোবাসা।’
‘আমিও তোমাকে ভালোবেসে হৃদয়ে বেঁধে রাখতে চাই আবির। ঠিক যেমন তুমি বলেছিলে বাঁধিব হৃদয়ে তোমায়!’ অতি কষ্টের মাঝেও আবিরের ঠোঁটে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠে।
প্রিয়তমকে বুকের মাঝে টেনে নেয়। দু’টি হৃদয় এক হয়। বেঁধে রাখার বাঁধন অটুট হয়েছে। তাদের হৃদয়ের বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হোক। এভাবেই বেঁচে থাকুক, ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসার বাঁধন।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here