বাটারফ্লাই ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা পর্ব : ৭

0
21

গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ৭ ( ❌কপি করা নিষেধ❌)

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয় অন্তরা। ঘড়ির কাটা সাতটা ছুই ছুই। তাকিয়ে দেখে আফনান ঘুমাচ্ছে। একটা কিউট বাচ্চার মতো লাগছে। অন্তরা নিজের ফোন হাতে নিয়ে ঘুমন্ত আফনানের ছবি তুলে নেয় অন্তরা। তারপর সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।

রান্নাঘরের সামনে আসতেই দেখে শাশুড়ি মা আর চারু সবকিছু গুছাচ্ছে। অন্তরাকে দেখেই আফনানের মা একটু হাসি বিনিময় করল। অন্তরা কাছে এসে সালাম দিল।

“দিন মা। আমি করে দিচ্ছি।”
“থাক থাক। লাগবে না। তোমারই তো সংসার। ধীরে ধীরে সব করো। এত তাড়াতাড়ি উঠতে গেলে যে?”
“ভাবলাম একটু কাজে হেল্প করি।”

পাশ থেকে টিটকারির সুরে চারু বলে উঠল,

“ভালোইতো মাথা চালাতে পারো। আসতে না আসতে সবকিছু যে তোমার তা বুঝিয়ে দিচ্ছো।”

আফনানের মা কিছু বলল না। ভাবল মেয়েটা হয়ত বড় ভাবীর সাথে মজা করছে। তবে অন্তরার একটু কেমন যেন লাগল। ইনি আসার পর থেকেই অন্তরার সাথে একটু কেমন যেন করছে। এমন সময় রান্নাঘরে রোদেলা আসল। রোদেলাকে দেখেই আফনানের মা সেখান থেকে চলে যায়।

রোদেলার মুখটা আবার মলিন হয়ে উঠে। বিষয়টা অন্তরার নজরে এলো। রোদেলাকে নিয়ে তার মনে অনেক প্রশ্ন। এত বয়স হয়ে যাচ্ছে অথচ বিয়ে করছে না। আবার তার মায়ের সাথে কোনো কথাও বলে না। দিয়া অন্তরাকে কিছু একটা বলতে নিয়েও কাল রাতে সাজানোর সময় বলেনি। হয়ত নতুন বৌ সেজন্য। হঠাৎ রোদেলার ফোনে একটা ফোন আসে। সে চেচিয়ে বলে,

“কিই? তবে আমিতো ছুটি নিয়েছিলাম।”
“…….”
” আচ্ছা। তবে আর কি করার। আসছি একটু পর।”

অন্তরা রোদেলাকে চিন্তিত দেখে বলে,

“কি হয়েছে আপু?”

“আর বলো না। অফিসে নতুন CEO এসেছে। সে নাকি আজই সবাইকে যেতে বলেছে। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলবে।”

“আপনি ছুটি নেননি আপু?”

“নিয়েছি তো। আর বলোনা। ইনি নাকি কাজের ক্ষেত্রে কোনো কম্প্রমাইজ করেন না। বলেছে যেতে মানে যেতেআ হবে।”

“এখুনি বের হবেন।”

“খেয়ে বের হবো আরকি।”

এদিকে রান্না শেষে সবাই টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। সায়েম, দিয়া, ফারিয়া, আরিফুল ইসলাম সবাই এক এক করে বসে পড়েছে। উপর থেকে পানজাবি পড়ে হাতা ঠিক করতে করতে নামছে আফনান। অন্তরা একবার তাকিয়ে মুখ সরিয়ে নেয়। এ বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী পায়েস রান্না করেছে সে। আফনানেরও নাকি খুব পছন্দ। ভালো লাগবে তো?

টেবিলে এসে আফনান বাবাকে সালাম দিয়ে বসে। অন্তরা আর তার শাশুড়ি সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে থাকে। চারু ভেবেছিল আফনানের পাশে গিয়ে বসবে। তবে তার ছোট্ট মেয়েটা সেখানে গিয়ে বসেছে। আফনানের মুখটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়। যেটা বলবে সেটা শুনে হয়ত এখানে কারোই ভালো লাগবে না। তবুও বলে দেয় কথাটা।

“তা কতদিন পর আসছ?”

” অন্ততপক্ষে দু মাস। এর কমে সম্ভব না।”

আরিফুল নিজের ছেলেকে কিছু বলে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবার খেতে থাকে। সে নিজেও রিটায়ার্ড অফিসার। তাই সে জানে, ছেলেকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ লাইনে কাজ করতে গেলে পরিবার, ভালোবাসা অনেক কিছুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।

এইদিকে নতুন বৌ হওয়ায় সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছিল অন্তরা। রোদেলার প্লেটে খাবার দিয়ে গিয়েই আফনানের কথা শুনে হাতটা থেমে যায়। বুকে চাপা ব্যাথা অনুভব করে। সে কী এত খারাপ? আর দুটো দিন তার সাথে থাকা যেত না। অবুঝ মন বুঝতে পারে না আফনান কেন চলে যাচ্ছে।

সে কোনোভাবে নিজেকে সামলে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়। বিষয়টা অবশ্য রোদেলার চোখ এড়াতে পারে নি। তবে তার কিছু করার ছিল না। এইদিকে অফিসে যাওয়ার জন্য সে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে। অন্তরাও সবাইকে খাবার দিয়ে না উপড়ে চলে যায়। বারবার কানে আফনানের বলা একটা কথাই বাজছে।

“একটু পরই ক্যান্টনমেন্ট এ ব্যাক করব। খুব জরুরি, যেতেই হবে।”
……..

“সেনা অফিসারের বৌ হতে গেলে এত উইক মনোভাব হলে চলে না। একটুতো শক্ত হতেই হয়।”

রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলল আফনান। ড্রেসিং টেবিল থেকে ঘড়িটা নিয়ে হাতে পড়তে পড়তে দেখে অন্তরা খাটে বসে চুপ করে মাথা দিয়ে আছে। শুধু একটু পরপর কান্নার রেশ উঠছে। মেয়েটা কি কাদছে? কেন জানি আফনানের বুকে ব্যাথা অনুভব হলো। নিজেকে আর কতটা আটকে রাখবে সে?

অন্তরার পাশে গিয়ে বসল। তার ছোট নরম হাতটার উপর হাত রাখতে গিয়েও রাখতে পারল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,

“এত কান্নারতো কিছু নেই। দুটো মাসই তো।”

অন্তরার হঠাৎ কি হলো কে জানে। আফনানের দিকে ঘুরে দুহাত দিয়ে কলার টেনে রাগী চোখে ওর দিকে তাকায়। আফনান ভাবছে এই মেয়েটা এত সাহস দেখাচ্ছে কীভাবে? মেজর আফনানের কলার ধরে শাসাচ্ছে? পরক্ষণে খেয়াল হলো, এই অধিকারটা অবশ্য তার আছে।

মেয়েটার চোখ এই অল্প সময়ে কেদেঁ একদম লাল হয়ে গিয়েছে। নাকের ডগাটায় যেন কেউ লাল রং করে দিয়েছে। মেয়ে মানুষ কাদঁলে এত সুন্দর লাগে? তবে নিজের অনুভূতিকে কি করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা আফনান জানে। হুশ ফিরে অন্তরার কাদো কাদো কথায়।

“আচ্ছা আমি কি খুব খারাপ?”

এর উত্তর ঠিক কি দেয়া উচিত আফনান জানে না।

“কি হলো বলুন? আমি খুব খারাপ? এতটা খারাপ যে কয়েকটা দিন এক ছাদের নিচে থাকা যায় না।”

“তুমি একটু বেশিই ভাবছো। আমাকে ডিস্টার্ব করো না এখন। ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।”

কথাটা বলেই উঠে যায় আফনান। আলমারি থেকে কাপড় বের করে লাকেজে ভরে গুছাতে থাকে। মেয়েটাকে সে কীভাবে বুঝাবে তাকে দূরে রাখার কারণ? এখনতো আফনানকে তার পুরো ধ্যান জ্ঞান জুড়ে তার মিশনের চিন্তা রাখতে হবে। অন্তরা এমন এক মেয়ে যার মাঝে একবার ডুবলে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব না।

এদিকে তার ঘরের শত্রু বিভিষণ। তবে কে সে? আসল শত্রুকে চেনার আগে অন্তরার সাথে তার সম্পর্কটা ভালো হতে দেয়া যাবে না। ও যে খুব নাজুক। প্রথম আঘাতটা ওর উপরেই করতে চাইবে। একবার নিজের চোখের সামনে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে আফনান ব্যার্থ হয়েছে। দ্বিতীয় বার এই ভুল করা যাবে না। এক ভুলের মাশুল পুরো পরিবার প্রায় ১২ টা বছর যাবৎ দিচ্ছে। আবার যে সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই।

আফনান দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিচে বেড়িয়ে যায়। তাকে নেয়ার জন্য গাড়িও এসে পড়েছে। সব রেডি। রুম থেকে বের হওয়ার সময় একবারও ফিরে তাকায় না অন্তরার দিকে।
….

নিচে গিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। মা একটু আগে বকাবকি করে এখন থেমেছে। বিয়ের পরদিনই কেউ কাজে যায়? তবে আফনানকে বোঝানোর কোনো ওয়ে নেই।

গাড়িটা স্টার্ট দেয়ার আগে একবার নিজের রুমের জানালার দিকে তাকায়। সাথে সাথে কেউ একজন পর্দার আড়ালে নিজেকে আড়াল করে নেয়। এটা যে অন্তরা তা আফনান জানে। অভিমান জমেছে খুব। আফনান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রাইবারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে।

“চলুন চাচা। আর সময় নেই। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।”

এদিকে রোদেলার অফিসে…..

#চলবে …..

( আসসালামুয়ালাইকুম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করার অনুরোধ রইল।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here