বায়বীয়(১ম পর্ব)

0
706

#বায়বীয়(১ম পর্ব)
#লাকি রশীদ

ফজরের নামাজ পড়ে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। আগে অবশ্য ঘুমাতাম না। ছোটবেলায় বাবা ও পরে কিছুদিন মামুনের সাথে হাঁটতাম। কিন্তু এখন অনেক বছর ধরে অভ্যাস বদলে গেছে। পরে সাতটার দিকে মা এসে ডেকে দেয়। তখন আমি গোসল করি। শীতগ্ৰীস্ম বারো মাস আমার এই রুটিন চলে। শীতের সময় গিজার অন করতে হয়………. এটাই যা পার্থক্য। অনেক সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে গোসল করে বের হই। আনুর গতরাতে ঠিক করে রাখা পাটভাঙ্গা শাড়ি পরি। ভেজা চুল আঁচড়ানো ঠিক নয় জানি তারপরও এভাবে আমি বের হতে পারি না। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হয়। কানে সোনার ছোট একটি রিং ও গলায় গোলাপ ফুলের লকেট সহ চেইন …
……………..সেই কোন ছোটবেলায় বাবা বানিয়ে দিয়ে ছিল তার সবসময় ই পরা থাকে। মনে আছে একবার রাতে পাশাপাশি দূরত্বের আমার ননাসের বাসা থেকে দাওয়াত খেয়ে আমি ও মামুন ফিরছিলাম। বের হওয়ার আগে থেকেই ও বলছে এসব সোনাদানা খুলে রেখে যাও পরী। আপার কাছে থেকে দিনের বেলা এসে নিবে না হয়। আমি বলি কিচ্ছু হবে না ইনশাআল্লাহ। আমার শাড়ি গায়ে মাথায় এমন ভাবে জড়ানো থাকে, কি পরে আছি কেউ দেখলে না নিবে। এই সামান্য নির্বিষ কথার
কত মানে যে পরে শুনেছিলাম।

যাইহোক সকাল সকাল এসব মনে এনে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবার কোনো মানে নেই। চোখে আইব্রু বুলানো এটুকুই যা সাজসজ্জা। চুড়ি পরার অনেক শখ আমার। কাছের জনেরা খুব ভালো করে জানে সেটা। আনু থেকে ধরে বাবা,আত্মীয় স্বজন,বন্ধুরা, পরিচিত জন এবং অধীনস্থ অনেকের দেয়া নানান রঙ্গের নানান ঢঙ্গের চুড়ির বিশাল এক কালেকশন আমার। একটু আলাদা ইউনিক ডিজাইনের চুড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। কিন্তু তাই বলে কম দামের রেশমী চুড়ি যে নেই তা কিন্তু না। যেমন এই মুহূর্তে রয়েল ব্লু শাড়ি আর টিয়া রঙ্গের পাড়ের সাথে মিলিয়ে ই দুই রঙের চুড়ি বের করেছি। শাড়িতে চওড়া সোনালী পাড় আছে বলে গোল্ডপ্লেটেড দুটো বালাও দুই কর্ণারে পরে নিলাম। এবার রুমে রাখা বেলজিয়ামের বিশাল আয়নায় ৩৫ বছরের আমার এই নির্মেদ, ছিপছিপে দেহটাকে দেখে পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে বের হয়ে আসি।

গলার স্বর কখনো উচ্চগ্ৰামে উঠে না আমার। কিশোরী
বেলার অবুঝ সময়ে উঠতো। ভুল বুঝতে পেরে একদম নীচু কিন্তু পরিস্কার গলায় বলতে শুরু করলাম। পরবর্তী এতগুলো বছরের নানান অভিজ্ঞতায় যা ভীষণ ভাবে কাজে লেগেছে। বাবা মা হাত গুটিয়ে বসে আছে। আমি
বাবার পাশের চেয়ারে বসে বলি প্লেটে এতগুলো ডিম পোচ নিয়েছো যে !!! তিনটে কেন? বাবা কিছু বলার আগেই মা বলছে কতো বাহানা তোর বাবার !!! তার না কি দুর্বল লাগে তাই দুটো খাবে আর একটা তোকে দিবে
আমি বলি সকালে আমি ডিম খাই না কি? আর ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে বাবা। ডিমের সাদা অংশ খেতে পারবেন কিন্তু কুসুম খাবেন না। একটা ডিম আমার প্লেটে নিলাম ও একটা মাকে দিলাম। আমার প্নেটের কুসুমটা রেখে সাদা অংশ টুকু বাবার প্লেটে দিয়ে বলি এখন খাও। বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বললো আর কি খাবো রে? সব ই তো নিয়ে গেলি। গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলি এই যে হাঁটা চলা ফেরা করছো এসব ভালো লাগে না তাইনা? লাঠি নিয়ে মসজিদে যাচ্ছো, ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছো, সাহায্যকারি ছাড়া ওয়াশরুমে যাচ্ছো……এসব একঘেয়ে লাগছে। মেঝচাচার মতো বিছানায় পড়ে পড়ে কোঁকাতে চাও? তাহলে তিনটে কেন? কালকে থেকে পাঁচটা পোচ খেও। কাজ হয়েছে ঘ্যানঘ্যান বন্ধ হয়েছে।

আমি বেড়াল পায়ে প্লেটটা রান্নাঘরে নিয়ে যাই। যা ভেবেছি তাই। আলেয়া নাস্তা করছে। এতটুকু বাচ্চা পিড়িতে বসে কেমন সোনা মুখ করে রুটি আর সব্জি ভাজি চিবুচ্ছে। কুসুমটা ওর প্লেটে রাখতেই নীরব একটা হাসি উপহার দিলো। আনু গজগজ করছে ও কি !!! কুসুমটা ওর পাতে দিয়া দিলা যে !!! বিবিসাব পরে আইয়্যা রাগ অইবো তো। আমি বলি, রাগ যদি করে আমাকে বলবি। এবার আলেয়ার দিকে তাকিয়ে বলি স্কুল ভালো লাগছে সোনা? ও হেসে মাথা নেড়ে বললো খুব ভালো লাগছে। ওর দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম বন্ধু হয়েছে ময়না পাখি? হ্যা তিনটি হয়েছে পরী………. ও বলতেই আনু হাতের কাঠের চামচ দিয়ে মেরে বললো,কত্তোবড় সাহস !!! নাম ধরে ডাকিস? এই মাইয়ার লাইগ্যা আমার এই ঠাঁইও যাইবো গা। আমি ওর হাত থেকে চামচটা নিয়ে বলি,খবরদার আমি যেন আর কোনদিন ওর গায়ে হাত তুলতে না দেখি।ওয়ার্নিং দিলাম বড় খারাপ হবে তাহলে। লঘুপায়ে ডাইনিং এ ফিরতে ফিরতে মনে হচ্ছে আনুরও দোষ নেই। মা এতো
বেশি সামান্য জিনিসে আলেয়ার অপরাধ ধরতে থাকে।

টেবিলে বসতেই শুনি মা গজগজ করছে, কি রে নাস্তা রেখে কোথায় গেলি? সব ঠান্ডা হয়ে গেল যে। আমি ঢাকা দিয়ে রেখেছি। তাড়াতাড়ি খা, রুটি আবার ঠান্ডা খেতে ভালো লাগে না কি? মুখে রুটি পুরে অপেক্ষা করছি ঠিক ই প্রশ্ন ধেয়ে এলো ডিমটা কি আলেয়াকে দিয়ে এলি? তোর বাপু এই আরেক আদিখ্যেতা। ডিমের
ডজনে এখন কত বেড়েছে জানিস সেটা? আমি এবার
স্পষ্টস্বরে বলি,মতিকে বলে দেবো না হয় বাসায় আসার
জন্য। তোমার ইচ্ছে খুশি তা ১০ ডজন হোক আর ১৫ ডজন হোক রেখে দিও। তবুও বাচ্চা মেয়ের ডিম খেতে বাধা দিও না।

মা এবার চটেছে,শুনেছো তোমার মেয়ের কথা !!! বান্দি গোলামের জন্য মাকে খারাপ বলছে। কি হবে এতো আদর ভালবাসা দিয়ে। এদের চোখে কি রক্ত আছে?
ওর মা সব আদর পায়ে মাড়িয়ে সতের জায়গা ঘুরে আসেনি। একই রক্ত তো,চশমখোর সবাই এরা।
আমি বলি মায়ের অপরাধে মেয়েকে তাও ৪ বছরের একটা বাচ্চা কে শাস্তি দেয়া ঠিক না মা। দয়া করে তুমি আনুকে ভালো ভাবে বলবে আলেয়াকে প্রতিদিন একটি ডিম যেন খেতে দেয়। তোমার ভয়ে আমার কথা এখন ওর কানেই ঢুকবে না। বাবা চা খেতে খেতে বলছে দুটো রুটিও খেয়ে শেষ করতে পারিস না? দিন দিন পাখির শরীর হয়ে যাচ্ছে তোর। আমি বলি অনেক কষ্টে বাড়তি
৬ কেজি কমিয়েছি বাবা। সিঙ্গাড়া, পেঁয়াজু পেলে তো লোভ সামলাতে পারি না কি করবো। মায়ের চা খাওয়া শেষ,কাপ হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো তোদের বাবার অভ্যাস ই তোরা পেয়েছিস। তোর বাবা আমার মাকে বলতো আর কিচ্ছু দেয়া লাগবে না। শুধু আপনার হাতের সমুচা ও সিঙ্গাড়া বেশি করে পাঠাবেন।

সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে দেখি জুলহাস মিয়া উঠোন অর্ধেক ঝাড়ু দিয়ে স্তুপাকৃতি ময়লার উপরে শলার ঝাড়ু রেখে উধাও। দেখো অবস্থা !!! এ ফাঁকিবাজ চৌকিদার কে বিদায় করতে হবে। সকাল পৌনে নয়টা বাজে। এখনও ঝাড়ু দেয়া হয়নি। ২/৩বার ডেকেও না পেয়ে নার্সারির দিকে পা বাড়াই। ঢাকা শহরে বেশ আয়োজন করেই বৃক্ষমেলা চলছে। আমার নার্সারিতে হেন কোনো গাছ নেই যা কাষ্টমার খুঁজে পাবে না। বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ফুলের গাছ,ফলের গাছ, ঔষধি গাছ সবকিছু আছে। আজ বৃক্ষমেলার শেষদিন, মৌরির অনুরোধে আজ অন্তত একবার ঢু মারতেই হবে। আরো কিছুটা এগিয়ে দেখি জুলহাস মিয়া মনের আনন্দে বিড়ি ফুঁকছেন। আমাকে দেখে বিড়ি ফেলে দিলেও হঠাৎ করে জোয়ারের মতো ধেয়ে আসা কাশির দমকে কথা বলে কার সাধ্যি। ভয়ে না ধোঁয়া গিলে ফেলেছে কে জানে। বাবা বলে তুই তো গলা তুলিস্ না। তারপরও তোর সামনে এলে এদের পা কাঁপে কেন বলতো? ভয়ার্ত চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু বললাম দয়া করে ঝাড়ু দেয়া শেষ করে এসব ফুকো।

এই বাড়িটা আমার বাবার। দাদা কিনেছিলেন, অনেক বড় বাড়ি। ছোট চাচা প্রবাসে থাকে এবং আমেরিকান এক ভদ্রমহিলা কে বিয়ে করেছেন। অনেক আগে এক বার এসে তার ভাগের বাসার সব জমি বিক্রি করে দিতে চাইলেন। বাবা বললেন বাইরের লোক এখানে ঢুকবে কেন? আমিই কিনে নেবো। আমরা ১ভাই ও ৩ বোন। ভাইয়া পরিবার নিয়ে বাইরে থাকে। বোনেরা যার যার সংসারে। আমারও সংসার ছিল, কিন্তু ১৫ বছর আগে বালির বাঁধের মতো ভেসে যায় সংসার, মেয়ে সবকিছু।
ফিরে আসি এখানে। খেয়ে, বসে আর মায়ের খোটা শুনতে শুনতে মনে হয় এবার না দাঁড়ালে আর কখনো ই
দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। কি করবো ভাবতে ভাবতে মনে
পড়লো বাবার বাগানের বেশ শখ ছিল। মা বছরের সব সময় হাতে পায়ের নখে মেহেদী মাখতো। এখনও মাখে।

কিন্তু কি কারণে যেন বাবার ছোট বাগানে মেহেদীর গাছগুলো বাঁচে না। একবার গাছটি পুঁতে দেবার সময় আমাকে ডাকে। আমি তখন ক্লাশ সেভেন বা এইটে পড়ি। কাছে গিয়ে বলি ডাকছো কেন? বাবা চিন্তামগ্ন স্বরে বললো তোর মায়ের মেহেদীর জন্য প্রতি মাসে মানুষের বাড়িতে ধর্ণা দিতে মন চায় না। কিন্তু একটা মেহেদী গাছ তো বাঁচেও না। তুই তো গাছ ভালবাসিস,
বিসমিল্লাহ্ বলে লাগা তো মা। আমি হেসে তখন গাছটি লাগাই। কাকতালীয় ভাবে গাছটি বেঁচে যায়। বাবার পছন্দ করা হয়তো বা এই জমিটি মেহেদী গাছের জন্য উপযুক্ত ছিল। কিন্তু এরপর বাবা যে কোনো গাছ রোপণ করার সময় আমাকে ডাকতো আয় তো মা। তোর হাত লাগলে ভালো হবে। জানিস তো গাছেরা সব বুঝতে পারে। কেউ গভীর ভালবাসলে তাদের রাডারে ঠিক ই ধরা পড়ে। ছোট আপু হেসে বলতো হ্যা ঝড়ে বক
মরলো আর ফকিরের কেরামতি বাড়লো। খালি অনেক জায়গা যা ছোট চাচার কাছে থেকে বাবা কিনেছে তা পড়ে আছে। চেষ্টা করতে দোষ কি? বাবাকে বললাম নার্সারি বানাবো, ফুল গাছ বিক্রি হবে। ফলের বাগান থাকবে,অর্কিডের আলাদা সেকশন থাকবে। ফল বিক্রি করে বেশ ভালো অংকের টাকা যেন আসে সে ব্যাবস্থা করতে হবে। বলতেই বাবা খুব খুশি হয়ে বললো বেশ তো কোমর বেঁধে লেগে যা। আমি সাথে আছি। কিছুদিন আগে পাওয়া মোহরানার ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে পথচলা শুরু হলো।

আমি বলি তোমার ছেলে মেয়েদের জিজ্ঞেস করে দেখো
বাবা। পরে যদি ঝামেলা বাধে। বাবা চশমা খুলে বললো
প্রথম কথা হলো তিনজনের কেউই অভাবে নেই। আর দ্বিতীয় কথা হলো আমি বেঁচে থাকাকালীন এসব জমি জমা বাসা আমার সম্পদ। আমি কি করবো সেটা তো আমার ব্যাপার। তুই নিশ্চিন্তে শুরু কর্ তো। আমি বেশ জানি আমার মেয়ে যেকোনো জিনিস ধরলে কচ্ছপের মতো কামড়ে ধরে। নাছোড়বান্দা হয়ে হালাল কিছু করলে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন মা। আমি বলি এতো নিশ্চিত ভাবে কিছু বলো না বাবা। নাছোড়বান্দা হয়ে সংসারে টিকে থাকতে চেয়েছিলাম। হলো কিছু? শুধু শুধু ৫টা বছর নষ্ট হলো। মা তখন বলছে তুই তো আমার কোনো কথাই কানে নিস্ না। ২১ বছর একটা বয়স হলো? দেশে বিদেশের কতো ভালো ভালো প্রস্তাব হাতে আছে। দেখ্ না রে মা। ছবি দেখে, সামনাসামনি কথা বলে দেখ্। আমার ঠোঁটে তখন তিক্ত হাসি, আবার ফাঁসি দিতে চাও? একবার তো দিলে মা। শরীর ভালো না, আমি মরে যাবো বলে ১৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে দিলে। জোরাজুরি করলে তো আমার অন্য চিন্তা ভাবনা করতে হবে। বাবা তখন কঠিন স্বরে বলে, এই প্রসঙ্গের এখানেই সমাপ্তি। মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে নিজে থেকেই বলবে। তুমি দয়া করে এই ব্যাপারটা ভুলে যাও। আমি জানি মায়ের জন্য এটা খুবই অসম্ভব একটি জিনিষ। কিছুদিন পর পর চলমান এই অত্যাচার আমার
সহ্য করতেই হবে।

আটঘাট বেঁধে লেগে পড়লাম। পরবর্তী এক সপ্তাহে বেশ
কয়েকটি ঘটনা ঘটলো। আমার মেঝমামার বেশ বড় বাগান আছে। উনার সাথে পুরো একটা দিন কাটিয়ে কিছু আইডিয়া নিয়ে এলাম। নিউজ পেপারে বিজ্ঞাপন দিলাম কিছু ইয়াং ছেলে মেয়ে জন্য যারা গাছ সম্পর্কে মোটামুটি আগ্ৰহী এবং কিছুটা হলেও জ্ঞান আছে……. তাদের চাই। আর কিছু গাছেদের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ তাদেরও চাই। এরা আপাতত পার্টটাইম কাজ করবেন। আমি, বাবা,মেঝ মামা নির্ধারিত দিনে এদের ইন্টারভিউ নিতে শুরু করলাম। মামা গাছ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে, বাবার যা মনে আসছে সেটাই জিজ্ঞেস করছে। আমি চুপচাপ বসে বসে দেখছি।

অবশেষে এখনকার মতো তিনজন ছেলে মেয়ে আর দুজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভদ্রলোক কে রাখা হলো।
আমাদের তিনজনের মধ্যে মামাই একমাত্র চৌকশ মানুষ তাই বেতনের আলোচনা বাবা উনার উপর ই ন্যাস্ত করলো। দেখলাম ভদ্রলোক দুজনকে ভদ্র গোছের
বেতন অফার করা হলেও ছেলে মেয়েগুলোকে একদম
কম বেতনের অফার দিলেন। এরা কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আরো কিছু বাড়ালো। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগলো। এবার মুখ খুললাম, আমি আপনাদের কথা দিলাম যদি এই নার্সারিটি লাভ করে তবে বেতন এমন থাকবে না। লাভ বাড়া মানেই বেতন বাড়া……….
সেটা মনে রাখবেন। নিজের মনে করে কাজ করবেন,
ফ্রেশ ব্রেইন ফ্রেশ আইডিয়া উপহার দিবেন। মোটকথা কি করলে ভালো হয় সেটা মাথায় রাখবেন। আমরা একে একে ফুলের পাশাপাশি সবজি ও ফলের বাগানও করবো ইনশাআল্লাহ। সুতরাং নার্সারির লাভ হওয়া মানে আপনাদের লাভ……… সেটা মনে রাখবেন। তারপর কয়েক জন মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল
এই ছায়াবীথি নার্সারি। পনের বছরের পথ পরিক্রমায়
নিজেকে অনন্য উচ্চতায় যে নিয়ে গেছে। কাগজে একে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। টিভিতে দেখিয়েছে।
অনেক পুরস্কার ঝুলিতে জমা হয়েছে।

অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই বাবার জায়গা আর
মামার সহযোগিতায় সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তা সদয় থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। মামা তো তার মালিকে পর্যন্ত প্রথম ৬ মাস দিয়েছে। একদিন বললাম মামা এতো কষ্ট করছ
বলো কি খাবে? ধম করে বললেন চকলেট কেক খাবো। আমি রুক্ষ স্বরে বলি এটা আমি আর বানাই না। তুমি অন্যকিছু বলো। একগুঁয়েমি করে বলছে না আমি ওটাই
খাবো। বললাম মামা শুধু শুধু মানুষের কষ্টকে খুঁচিয়ে রক্ত বের করো না তো। বৃষ্টিকে বানিয়ে দিতাম বলে এর সাথে অনেক কষ্ট জড়িয়ে আছে। তুমি তো সবই জানো।
মামা এবার গলা খাকারি দিয়ে বললেন জানি বলেই তো বলছি পৃথিবীতে কোনো শোক ই শোক নয়। মেয়ে ভালবাসতো তাই বানিয়ে খাওয়াতাম। মেয়ে মায়ের দুঃখ না বুঝে বাবার কাছে, দাদুর কাছে রয়ে গেল……..
ফাইন। আমি এই মেয়ের জন্য কেক বানানো ছেড়েই দেবো? কেন? এই বিশাল পৃথিবীতে প্রকৃত ভালবাসা দেয়ানেয়ার মতো আর কেউ অবশিষ্ট নেই? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ৪ বছরের একটা বাচ্চার নেয়া সিদ্ধান্তের উপর রাগ করা বুদ্ধিহীনের কাজ মা। এতো
কষ্টের প্রতিদান তুমি ওই জাহানে পাবে ইনশাআল্লাহ।

এখন এই পনের বছর পর মনে হয় মামা জোর না করলে হয়তো আর চকলেট কেক বানানোই হতো না। এখন বছরে বার দুয়েক সর্বোচ্চ বার তিনেক বৃষ্টি আসে এখানে। কি খেতে চাও জিজ্ঞেস করলেই বলবে চকলেট কেক খাবো। মেয়ে পারলে সারাদিন ই কেক খাবে।

৫ বছর পর নার্সারিটা বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে অনেক আলাদা থাকায় কিছুটা নামযশ হয়। এমনি একদিন ভাইয়া দেশে বেড়াতে আসে। পরদিন সকালে বলে তোর
সাথে আমার খুব জরুরী কিছু কথা আছে পরী। আমি ভাবলেশহীন মুখে বলি,বেশ তো কি বলতে চাও বলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here