বায়বীয়(৩য় পর্ব)

0
699

#বায়বীয়(৩য় পর্ব)
#লাকি রশীদ

মৌরির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি এজন্যই আমাকে এতো ডাকাডাকি তোমার তা তো বুঝিনি। ক্রেতা রাগ করবে তারপর তুমি আমাকে দিয়ে মানাবে
……….. এসব মনে ছিল তোমার? অনেক দিন ধরে ও এখানে আছে। সেজন্যই হয়তো অন্যদের মতো এতো ভয় পায় না। হাসিমুখে বললো আমার কপালটা খারাপ ম্যাম। কতকিছু ভেবে রেখেছিলাম আপনি আসলে দেখাবো। কি এক যন্ত্রণা এই ভদ্রমহিলা বাধিয়ে দিলেন
বলুন তো? সামান্য বিষয় নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি এর কোনো মানে হয়? এতো টুকু জায়গায় কতকিছু রাখা।এর মধ্যে প্লাষ্টিকের একটা চেয়ার টেনে বললো বসেন। তারপর মৃদু স্বরে বাক্যালাপ চালাচ্ছে, এই খাতাটা প্লিজ একটু দেখেন। এই কয়দিনে কত টাকা আমরা পেয়েছি বুঝতে পারবেন।

আমি খাতা না দেখে ওর মুখে জমে থাকা ঘামের দিকে তাকিয়ে বলি, বৃক্ষমেলা শেষ হবে কখন? জবাব এলো এইতো ঘন্টা খানেক পর। কোনো সমস্যা ম্যাম? আমি তার হাতে খাতা ফিরিয়ে দিয়ে বলি এসব দেখতে তো আমি আসিনি। এসব আগামীকাল দেখাবে। আমি তোমাদের দুজনকে দেখতে এসেছি। মৌরি বললো কিন্তু আপনাকে তো আমি অনুরোধ করেছিলাম যেন সবুজ শাড়ী পরে আসেন। আমার তো মনেই ছিলনা এখন বলি কি করে সেটা? শাড়ীর পাড়টা দেখিয়ে বললাম বারে !!! এই তো সবুজ। চালাকি ধরে ফেলেছে এমন মুখ করে বললো এটা তো টিয়া রং। তাছাড়া এটা তো পাড়। বললাম ঠিক আছে আজ কথা দিলাম শোভার সামনে তোমার বিয়ের দিন সুন্দর একটা সবুজ শাড়ী পরবো। চারদিক সচকিত করে এবার শোভা জোরে হেসে উঠলো।

মানুষ আগের ই ঠিক করা আছে যে বাকি চারাগাছ,
বীজ এসব নিয়ে নার্সারিতে রেখে আসবে। ওরা দুজনও
চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেন যেন এই বিকেলবেলা
টাই আমার কাছে বড্ড বিষন্ন মনে হয়। কিসের তরে মনটা আকুলিবিকুলি করতে থাকে। বললাম সমস্যা না
হলে চলো কিছু একটা খাই। সাধারণত খিদে না পেলে আমি খাই না। আজ মনে হচ্ছে খাওয়ার ওসীলায় মেয়ে
দুটোর সংস্পর্শে আরো কিছুটা সময় থাকি না হয়। ওরা
ফোন করে বাসার জানানোর পর তিনজন রেষ্টুরেন্টে বসে কোল্ড কফি খেলাম। হঠাৎ মৌরি হাত ধরে বললো
আজ আপনার মনটা খুব খারাপ। তাই না ম্যাম? আমি তো আর আমিই, নিজের ভেতরের দেউলিয়া নিঃস্ব ভাব তোমাকে দেখাতে যাবো কেন এটা ভেবেই বলি যা বাবা !!! এতো ভীষণ সমস্যা। কাউকে খাওয়াতে নিয়ে এলেই বুঝি তার মন খারাপ হয়? তোমাদের আমি আর কোনো দিন ই খাওয়ার জন্য আনবো না। শোভা এতো ঘোরপ্যাচ বুঝে না, বললো ভবিষ্যতে যা একটু খেতে পারতাম তাও বুঝি তোমার জন্য নস্যাৎ হলো মৌরি আপু। বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠবো দেখি মায়ের ফোন।
কি রে কখন ফিরবি? দেরি হবে না কি? আমি নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলি, এই তো মা চলে আসছি।

ড্রাইভারকে গাড়ি গ্যারেজ এ তুলে চাবি দিয়ে যেতে বলি। লম্বা পথটুকু পার হয়ে বাসার সামনে আসতেই মেজাজ বিগড়ে যায়। দেখো অবস্থা !!! কখন সন্ধ্যা গড়িয়েছে এখনও উঠোনের,বারান্দার লাইট জ্বালায়নি
মা কি আর এমনি এমনি আনুকে বকে? ওর স্বামী বৌ বাচ্চা ছেড়ে চলে গেছেন বলে অন্য কোনো দিকে কি মন থাকবে না? এসব কোন ধরনের ফাজলামি? এখন আর পার্স থেকে মোবাইল বের করতে ইচ্ছে করছে না। চোখের আন্দাজে হাতড়ে হাতড়ে কলাপসিবল গেট টানি। ওমা !!! ঠিক সেই মুহূর্তে বারান্দা ও উঠোনের বেশি পাওয়ারের দুটো লাইট জ্বলে ওঠে। চারদিক যেন একদম দিনের আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। অবাক হয়ে দেখি গেটের প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি। পাশে মা,আনু আর আলেয়া। হাসিমুখে বলছে ওয়েলকাম হোম মা। সেই মুহূর্তে অনুভব করি হৃদয়টা আনন্দে এমন লাফ দিয়েছে বুকের ধকধক শব্দটা যেন আমি শুনতে পাচ্ছি। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে ফেলি, মন
কে বলি এতো খুশি হয়ো না। তাহলে দুঃখ ই পাবে শুধু।

স্বাভাবিক স্বরে বললাম তুমি কখন এলে? বললো বিকেলে, এবার ফ্লাইটে এসেছি মা। স্যান্ডেল খুলে বলি চলো সবাই ঘরে চলো। সোফায় বসে দেখি মেয়ে পায়ে পায়ে পাশে এসে বসেছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কি যে দেখছে আল্লাহ মালুম।
নিজের মনে বলে উঠলো তুমি এতো শুকিয়ে গেছ কেন মা? আমি হেসে বলি মাত্র ৬ কেজি কমিয়েছি।তোমরাই
তো বলো বাপু ওভারওয়েট ভালো নয় মোটেই। এসবে কান না দিয়ে বললো, তোমার কি ব্যবসায় খুব প্রেসার যাচ্ছে মা? এতো শুকালে কেন? সব আলগা পিরিত !!!
যেন মা শুকিয়েছে সেই দুঃখে উনি মনোবেদনায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন। ন মাসে ছ মাসে মাকে একবার মনে পড়ে। দেখলেই যত আহ্লাদ। মনকে বুঝাই এসবে গলে যেও না পরী। মুখে বলি কিসের প্রেসার? আমি কি কিছু করি না
কি। দুই জায়গার জন্য কত লোক রেখেছি দেখো না?

বাবা এসে রুমে ঢুকে বললো আরে শুকাবে না তো কি?
হাতে গড়া পাতলা দুটো রুটিও খেতে চায় না। দেড়খানা
খেয়ে বলবে পেট ভরে গেছে বাবা। আমার বিরক্ত লাগে বলি অনেক হয়েছে। এ প্রসঙ্গ দয়া করে বাদ দাও তো। মাকে বলি তুমি আমাকে ফোনে বলবে না ও এসেছে? ঘরে তো কোকা পাউডার, বেকিং সোডা কিছুই নেই। চকলেট কেক বানাবো কি করে? উত্তর এলো কি করে বলবো তোকে? তোর মেয়ে এসে কড়া হুকুম ঝেড়েছে।
নানু তুমি কিন্তু ফোনে বলবে না। মাকে সারপ্রাইজ দিব।
আমার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে মায়ের জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। চাইলেও এখন আর বেশি অবাক হতে পারি না। তারপরও অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু দূরত্বের বেড়াজাল যেন অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তাই গলায় সুর ই ফুটলো না। মেয়ে বুঝি আমার মনের কথা টা ধরতে পেরেছে, মৃদু স্বরে বললো পরশু
ফার্ষ্ট ফ্লাইটে চলে যাবো মা। তক্ষুনি আনু মাকে তাড়া দিলো বিবিসাব আসেন বিরিয়ানি টা বসাই দেই। মা গা
তুললো আর বাবার কাছে কে এসেছে বলে বাইরে গেল

আমি বৃষ্টিকে কি একটা বলতে যাচ্ছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তে আলেয়া দৌড়ে আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রতিদিন আসার পর এটাই ওর রুটিন। আমাকে হাত ধোয়ার সময় দিতেও সে নারাজ। কোলে উঠে বুকের কাছে মুখ রেখে দুইহাতে জড়িয়ে রাখবে আমায়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আবার নেমে যাবে। আজ মনে হয়
রেগে যাচ্ছিল, কি ব্যাপার আমার সাথে পরী কথা বলে না কেন? মেয়ে নিয়ে আদ্যিখ্যেতা হচ্ছে খুব। বৃষ্টি ভীষণ অবাক হয়ে বলে ও কি সবসময় তোমার কোলে উঠে না কি? আমি বলি হ্যা কিছুক্ষন পর নিজে থেকেই নেমে যাবে। দেখি কি রকম কঠিন দৃষ্টিতে বাচ্চাটাকে দেখছে।

হঠাৎ আমার পরা চুড়িগুলো নাড়িয়ে বলে উঠলো চুড়ির মতো তোমার শাড়ির কালেকশনও ভীষণ সুন্দর মা। আমি দ্বিমত পোষণ করি ধ্যাত, চুড়ির ব্যাপারে বলতে পারো কিন্তু শাড়ি তো সুতির টাঙ্গাইল শাড়িই বেশি। মেয়ে মাথা নাড়ছে সুতি হোক তুমি এতো সুন্দর করে সবকিছু মিলিয়ে পরো তখন দেখতে ভীষণ ভীষণ রুচিশীল মনে হয়। এবার ঈদে ছোটফুপু আন্টিকে সুতি শাড়ি দিয়েছিল। আন্টি ঈদের দিন পরেনি বলে মনে হয় ফুপু রেগে বাবাকে অভিযোগ করেছিল। বাবা তখন অন্যমনস্ক দৃষ্টিতে হঠাৎ বলে উঠে কি সুন্দর সুন্দর সুতি শাড়ি পরী পরতো। আসলেই তখন একটা পরী লাগতো ওকে। একবার ম্যাচিং চুড়ি আংটি পাচ্ছে না বলে ঝাড়া ৩ ঘন্টা আমাকে নিয়ে দুই মার্কেট খুঁজতে খুঁজতে কাবার করে দিলো। হঠাৎ চেয়ে দেখেছে সবাই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ব্যাস চুপ করে গেছে। বাবা হয়তো তোমাকে এখনও খুব মিস্ করে মা। আমি হেসে বলি দূর বোকা মেয়ে !!! তোমার বাবা কেন আমাকে মিস্ করবে? তার বৌ, বাচ্চা, তুমি আছো না !!!

আলেয়া এবার গা মুচড়িয়ে আমাকে বলছে আমাকে নিচে নামাও পরী। আমার হোমওয়ার্ক করতে হবে। সাথে সাথেই অগ্নুৎপাত,এ কি মা !!! ও তোমাকে নাম ধরে ডাকছে কেন? তার কন্ঠের রুক্ষতায় বাচ্চা মেয়েটা পর্যন্ত স্থির নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আলেয়ার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলি, কি হোমওয়ার্ক দিয়েছে সোনা? ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একবার বৃষ্টির দিকে চকিত চেয়ে
বলছে একটা Apple এঁকে দিয়ে বলেছে এটা A দিয়ে ফিলআপ করে আনার জন্য। আমি বলি ঠিক আছে চটজলদি করে ফেলো। না হয় মা বকবে। চকাস্ করে চুমু খেয়ে দৌড় দিল সে। বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে বলি,নাম ধরলে কোনো ক্ষতি আছে? তবে ডাকুক না। আমার তো খারাপ লাগে না। মেয়ের মেজাজের পারদ এবার চড়ছে, তোমার মনে হয় না মা একে নিয়ে তুমি একটু বেশি বেশি করছো? বুয়ার মেয়ে কাউকে নাম ধরে ডাকে, কোলে উঠে বসে থাকে………… কখনো শুনিনি কিন্তু। হেসে ফেলি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে কোলে নিতে সমস্যা কি? ডাক্তারদের এতো বাতিকগ্ৰস্ত হলে চলে নাকি?

এবার চোখ বড় বড় করে বললো ডাক্তার হতে হলেই কি
যার তার গা ঘেঁষতে হবে না কি? তোমার কি ধারণা ডাক্তারদের ঘেন্না পিত্তি থাকে না? আমি বলি থাকে না বলবো না, থাকা উচিত নয় বলবো। তোমার জন্মের সময় লেবার রুমে আমার অভিজ্ঞতা দুই রকমের ই হয়েছে। ব্যথায় কষ্ট পেয়ে চিৎকার দিচ্ছি তখন ডাক্তার কে আয়া ডাকছে। কেন কে জানে উনি আসছেন না। মনে হয়েছিল পাথর পাশে থাকলে ছুড়ে মারতাম। ঠিক তক্ষুনি আরেক ডাক্তার দৌড়ে এসে বলছেন বাহ্ এই তো আর বেশিক্ষণ আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।মাসি তখন বলছে সারাজীবনের টয়লেট মনে হয় আজকে করছে। পরিষ্কার করতে করতে আমার জান শেষ। ছোটখাটো ডাক্তার মেয়েটার বিরক্তিমাখা কন্ঠ ভেসে এলো,আহ্ মাসি তার মানে হলো বাচ্চা ঠিকমত নামছে।
মেয়ে এবার চকিত আনমনা। বললো সেজন্যই তো বলি হাজবেন্ডদের লেবার রুমে এলাও করা উচিত।

আমি এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। আলেয়া কে নিয়ে এতো ধারালো ধারালো কথাবার্তা শুনতে আসলে আমার ভালো লাগে না। বাচ্চা মেয়েটাকে নানী নাতনি কেউই দেখতে পারে না কেন বুঝিনা। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটা পরশু ভোরেই চলে যাবে। হাতে আছে শুধু কালকের দিনটা। কেক বানাবো কখন আর খাবে কখন? এমন কি রাত হয়েছে, পাড়ার দোকানে এসব পাবো না কিন্তু দুই পা এগোলেই তো ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর। বড় পার্সটা হাতড়ে টাকা বের করে ছোট পার্সে চালান করে বলি তোমার নানুকে বলো আমি সামনের দোকান থেকে আসছি। মেয়ে এবার দাঁড়িয়ে বলছে আমি তোমার সঙ্গে আসি মা? আমি অবাক হয়ে তাকাই কারণ ও কক্ষণো
এভাবে যাবার বায়না ধরে না। বললাম যাবে? বেশ তো
চলো। আমি এগুচ্ছি তুমি নানুকে বলে আসো।

আজ মনে হয় আমার অবাক হওয়ার ই দিন। মেয়ে পাশাপাশি হাঁটার সময় আমার কনুই এ তার হাত গলিয়ে দেখি খুব সুন্দর হাঁটছে। সাথে সাথেই অনুভব করলাম আমার বুকের ভেতরের রক্তনালীগুলো মুহূর্তেই
টগবগ করে ফুটছে যেন। শিরা উপশিরা গুলো ফেটে হৃদযন্ত্রকে তড়িৎ গতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়ে একমনে বলে যাচ্ছে হাঁটতে খুব ভালো লাগছে তাই না মা? আমি কোনোমতে হ্যা বলতেই বলছে জানো মা আজ পূর্ণিমা। দেখো না আমাদের সাথে কত বড় একটা চাঁদও সঙ্গী হয়েছে। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি
মাঝারি গোলগাল থালার মতো চাঁদ আমাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আড়চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি
আলেয়ার কোলে উঠা, আদর খাওয়া এসব নিয়েই কি মেয়েটা জেলাস ফিল করছে? না মনে হয় বাবার আদর
পেয়ে সম্পুর্ণা সে, মাকে নিয়ে এতো ভাবার দরকার কি আছে তার। মনকে বশে আনতে চাই, হয়েছে পরী তুমি স্বাভাবিক থাকো। বেশি বেশি আশা করলেই কষ্ট পাবে।

ষ্টোরে ঢুকে এবার একে একে ময়দা,কোকা পাউডার,
আইসিং সুগার,কর্ণ ফ্লাওয়ার ও বেকিং সোডা নিলাম। বৃষ্টিকে বললাম তুমি কিছু খেতে চাইলে নিয়ে নাও। ও বিরাট বড় চকবার একটা নিয়ে বলছে মা তোমার জন্য একটা নেই। আমি বলি না আমি রাতে এসব খাই না। টাকা মেটাতে যাবো হঠাৎ দেখি চকলেট রাখা। মনে পড়ে গেল আলেয়ার জন্য কেনা দুটো চকলেটের একটা
মৌরির রাগী ক্রেতাকে দিয়ে এসেছি। তাই আরো ২টা নিয়ে যাই। সেলসম্যান কে ২টা দেয়ার জন্য বলতেই বৃষ্টি পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে বললো চকলেট কার জন্য নিচ্ছ? বললাম আলেয়ার জন্য। এবার চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি ছড়িয়ে বললো আমার জন্যও ২টা দিতে বলো। আমি হুকুম তামিল করতেই দেখি ঠৌট চেপে
এবার হাসছে।

বাসায় এসে আগে কাপড় পাল্টালাম। এশার নামাজ পড়ে কেক বানানো শেষ করে ডাইনিং টেবিলে বসে দেখি এলাহি কারবার। বিরিয়ানি কাবাব ডিমভুনা এবং সালাদ। নাতনি এলে মা স্পেশাল আইটেমগুলো নিজের
হাতে রান্না করে। আমি দুপুর ছাড়া কোনো বেলাতেই ভাত খাই না। আর রাতে বিরিয়ানি খেলে তো গ্যাসের সমস্যা করবে। তাই পাতে রুটি তুলে নিই। বাবা ভয় পাচ্ছে যদি তাকেও বিরিয়ানি খেতে না দেই সেজন্য আগে আগেই প্লেটে তুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।হাসি পেলো, দিন দিন বাবা যেন ছোট বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে
হঠাৎ বৃষ্টি এক কান্ড করে। রুটি অন্য প্লেটে চালান করে বলছে মা তুমি আমাদের সাথে বিরিয়ানি খাও তো। আজকে আর রুটি খেতে হবে না। সবার সাথে খেলে কিচ্ছু হবে না দেখো। আমি না না করছি, বুঝিয়ে বলছি
কাল দুপুরে খাবো ইনশাআল্লাহ। মেয়ের সাথে সাথে আমার মাও ধুয়ো তুলছেন,আরে খা তো। আমরা বুড়ো
বুড়ি ই খাচ্ছি আর মেয়ে হয়েও তোর গ্যাসের চিন্তা।
কিচ্ছু হবে না, অগত্যা কি আর করা !!! নিলাম তুলে।

বাসায় রুমের অভাব নেই। বড় বড় সব রুমগুলো ই খালি পড়ে থাকে। আমার বেডরুমের পাশের রুমে ই বৃষ্টি এলে প্রতিবার থাকে। এবারো আনু পুরনো পিলো কভার ও বেডকভার বদলিয়ে দিয়েছে। আমরা মশারী ব্যবহার করলেও ওর নাকি মশারিতে দম বন্ধ লাগে। তাই অন্য ব্যবস্থা করা হলো। আমি বসে আছি, একটু পর শোবো ভাবছি। এতো গুরুপাক খাবার খেয়ে সাথে সাথে বিছানায় যাওয়া ঠিক হবে না। হঠাৎ দেখি বালিশ কাঁথা বগলদাবা করে বৃষ্টি আমার রুমে এসে দাঁড়িয়েছে চোখ তুলে জিজ্ঞাসু নেত্রে বললাম কি ব্যাপার কোনো সমস্যা? ধপ করে আমার পাশে বসে বললো আমি যদি
তোমার পাশে শুই তোমার কি অসুবিধা হবে মা? মাথা নেড়ে বলি কিসের অসুবিধা? জায়গা আছে চলে এসো। এবার দুড়দাড় শব্দে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম বলে খুব তাড়াতাড়ি দুজনেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।

রাত তখন কয়টা কে জানে !!! অসম্ভব অস্বস্তিতে উঠে পড়ি হঠাৎ। বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে যেন। দমচাপা এক
অনুভূতি বিরাজ করছে সর্বদেহে। হাত বাড়িয়ে পানির বোতল টেনে এনে একসাথে অনেক ঢোক পানি খাই। বিরিয়ানি খাওয়ার শাস্তি এটা জানি। মেয়ে বললো আর
জোর করলো ওমনি খেয়ে নিতে হবে? সায় দেয়া ঠিক হয়নি। মুখ কঠিন করে না বলা উচিত ছিল। হাঁটবো কি না ভাবছি এরমধ্যে ই বৃষ্টি উঠে বসে জিজ্ঞেস করছে কি
হয়েছে মা? খারাপ লাগছে তোমার? আমি আশ্বস্ত করি
তেমন কিছু না। গ্যাস হয়ে গেছে মনে হয়। তুমি ঘুমাও।ও ঠিক হয়ে যাবে।

দেখি তড়াক করে বিছানা থেকে নেমেছে। টিউবলাইট জ্বালিয়ে নিজের রুমে গিয়ে আবার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফিরেছে। হাতে এক প্যাকেট ইনো এনে কিছু পানির সাথে গুলিয়ে বলছে খাও। ইতস্তত ভাব দেখে বলছে, আমি বলছি তুমি খেয়ে দেখো। কিছুক্ষনের মধ্যে অনেক আরাম পাবে। কষ্ট চলে যাবে। বিড়বিড় করছে
সব আমার দোষ, আমি জোর করে তোমাকে বিরিয়ানি
খাইয়ে এই অবস্থা করেছি। হেসে বলি আমি ঠিক আছি
তুমি শোও তো। এসব না শুনে বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এতো আদর পাবার অভ্যাস তো আমার নেই।তাই ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেছি। ঠিক তক্ষুনি বুঝতে পারি আমার তো অনেক ভালোও লাগছে। দীর্ঘ তপ্ত দিনের পর হঠাৎ যেন ক্লান্তিহরণের বৃষ্টি ধরায় নেমেছে।

(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here