বালুকাবেলা (০৩)

0
1150

#বালুকাবেলা (০৩)

নিজের বিয়ে ভেঙে যাবে ব্যপারটাই আমাকে অন্য রকম একটা স্বস্তি দিলো। এর মধ্যে যে আমার ভাবির এতো চাতুরী লুকিয়ে আছে, তা একদমই আমাকে কষ্ট দিচ্ছেনা।

আমি রুমে এসে নামাজ পড়লাম। তারপর চুপচাপ বিছানায় বসলাম। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আমার। এতো এতো ভালো খাবার সামনে রেখেও কেন যে খেলাম না? এখন বাসায় খেতে গেলেও না ভাবি আমাকে কথা শোনায়!

টেবিলে রাখা পদার্থবিজ্ঞান বইটায় চোখ রাখতেই মনে হলো, এটার ভেতরে কিছু টাকা থাকতে পারে। আমি বইটা খুলে সেখানে একটা ১০ টাকার নোট আর একটা ২০ টাকার নোট পেলাম। জানালা দিয়ে রফিক মামার দোকানে তাকিয়ে আমি আর কিছু ভাবলাম না। ভেতরে আমার ভাবিকে শুনছি কি যেন চিল্লাচিল্লি করছে, এদিকে সুযোগে আমি বের হয়ে গেলাম।

আমাকে দেখে রফিক মামা বলে উঠলো,
‘ কিরে তূর্ণা এমন সুন্দর জামাকাপড় পরে আজকে দোকানে এলি যে? তোর ভাবি কিসের জন্য পাঠিয়েছে?

আমি মাথা নেড়ে বললাম,
‘ সুন্দর জামাকাপড় কি আর আমি পরতে পারিনা মামা? আর আজকে আমাকে ভাবি পাঠায়নি, আমিই এসেছি। শোনো মামা, আমার দুইটা কলা আর একটা রুটি দাও।

কিছু না বলে রফিক মামা আমাকে কলা আর রুটি দিলো। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই খেলাম। খাওয়া শেষ হতেই দেখি তিনি কেমন ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি প্রশ্ন করলাম,
‘ কিছু হয়েছে?

তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
‘ বুঝতে পারি রে মা,বড়লোক মেয়ে দেখে ভাইরা যখন বিয়ে করে তারপর যতই নিজে স্বাবলম্বী হোক,বোনদের জন্য আর কিছুই করতে পারে না!

আমি বুঝলাম এভাবে আমাকে খেতে দেখে উনি এসব বলছেন, হয়তো ভাবছেন বাসায় আমাকে আজকে খাবার দেয়নি। আমি উনার আবেগী কথা এড়িয়ে বললাম,
‘ ২০ টাকা হয়েছে না মামা? আচ্ছা আপনার দোকানে ১০ টাকার কোনো আইসক্রিম আছে?

মামা ফ্রিজে একবার তাকালো তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
‘ না ১০ টাকার তো কোনো আইসক্রিম নেই।আইস ললিগুলোও শেষ। পনেরো টাকা দামের একটা আইসক্রিম আছে, দিবো? কম দামী আইসক্রিম আসলে মামা এখন আর রাখিনা।

আমি কিছু না বলে ২০ টাকা মামাকে দিয়ে ১০ টাকার নোটটা হাতেই মুঠো করে লুকিয়ে দোকান থেকে বের হতে হতে বললাম,
‘ লাগবেনা থাক।

তারপর আমি চুপচাপ আবার বাসায় ঢুকে পড়লাম। নিজের রুমে দিকে অগ্রসর হতে হতে শুনছি, ভাবি কি নিয়ে যেন অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে। দু কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে রুমে চলে এলাম।

বিছানায় একটুখানি গা হেলিয়ে দিতেই কলিং বেল বেজে ওঠলো। আমি শোয়া থেকে উঠে হুড়মুড় করে একটু দরজার সামনে দাঁড়ালাম, ভাই ভাবির মধ্যে কেউ বের হয় কিনা তাই দেখছিলাম। তারপর আবার বেল বাজলো, এবার আমি পা বাড়াতেই ভাবি তাদের দরজাটাকে আওয়াজ করে খুলে বললো,
‘ বাড়িতে কি আর কোনো মানুষ নেই? এতো আওয়াজ কি কানে যায়না? সন্ধ্যা যে হচ্ছে, রান্নাবান্নার নামেও তো খবর নেই। বড়লোক ছেলের সাথে ঘুরাফেরা করে নিজেকে আবার মহারাণী ভাবতে শুরু করেছে নাকি?

আমি এবার বের হলাম। ভাবির পেছনে পেছনেই। এর মধ্যে ভাবি গিয়ে দরজা খুললো, কে আসছে দেখতে। আমি রান্নাঘরে চলেই যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে রফিক মামাকে বলতে শুনলাম,
‘ দেখেন দেখি, একলোক আমাদের দোকানের ফ্রিজটাই কিনে ফেললো। বললো আইসক্রিমসহ ফ্রিজটা যত তার দ্বিগুণ দাম দিবে, আরেকটা কিনে নিতে আর এটা আপনাদের বাসায় এসে একদম সেট করে দিয়ে যেতে! আপনাদের এদিকে এখন খালি লাইন থাকলে বলুন, এটাকে আমি বিদ্যুতের সাথে সংযোগ করে দিয়ে যাচ্ছি।

আমার ভাবি চুপ করে শুনছিলো। এবার জোরে জোরে ভাইকে ডাকতে লাগলো। আমার ভাই দৌঁড়ে বের হলো। আমি আমার চুপ চেপে দাঁড়িয়ে আছি। ভাই আসতেই ভাবি বললো,
‘ তুমি আইসক্রিমসহ ফ্রিজ কিনেছো?

ভাই ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘ নাতো।

রফিক মামা হাসতে হাসতে বললো,
‘ আরে মা বললাম না একটা লোক? বাইক নিয়ে আসছিলো । আমি চিনিনা কিন্তু যখন আমার কাছে জানতে চাইলো তূর্ণা এখানে কেন এসেছিলো? তখন আমি বললাম, তার বোধহয় খিদা লেগেছিলো তাই এখানে এসে রুটি কলা খাচ্ছিলো, আর তারপর আইসক্রিমের দাম জিজ্ঞাসা করে চলে গেছে, টাকা নেই বলে হয়তো কিনতে পারেনি। তারপর ওই লোক কাকে যেন ফোন করলো, ওপাশ থেকে বললো পুরো ফ্রিজটাই কিনে ফেলতে। সাথে সাথে টাকা দিয়ে কিনেও ফেললো। কিছু করার ছিলোনা, যেহেতু আমরা ব্যবসাটাই করি লাভের জন্য, সেহেতু এমন ফ্রিজ দশটা দিতেও আপত্তি নেই।

আমার ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি নিচে গিয়েছিলে কখন?

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
‘ কিছুক্ষণ আগে। আমার অনেক খিদা ছিলো, দুপুরে উনার সাথে বসে আমি খেতে পারিনি।

এই কথা বলতে বলতেই খোলা দরজার সামনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে বললো,
‘ ম্যাম আপনাদের খাবার পার্সেল।

ভাবি এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ কে পাঠিয়েছে?

তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তা জানিনা, এখানে দিয়ে যেতে বললো তাই দিতে এলাম। এখন থেকে প্রতিদিনই দিয়ে যাবো।

বলেই ভাবির হাতে তারা কিছু খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে চলে গেলো। রফিক মামাও ফ্রিজ কানেক্ট করে ইতোমধ্যে চলে গেছে।
এবার ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ খিদা লেগেছিল তার জন্য বাইরে যেতে হয়েছে? ঘরে কিছু ছিল না? আর আইসক্রিম তো আমাদের ফ্রিজেই আছে।

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
‘ নির্দিষ্ট সময়ের পর সব খাবারই তো তালা দেওয়া থাকে, ফ্রিজও তো তার ব্যতিক্রম নয়।

ভাবি ধমক দিয়ে বললো,
‘ তো কি আমাকে বলা যেতোনা?

আমি চুপ করে থাকলাম। এরপর ভাবি ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলো, একটা আইসক্রিম খেতে খেতে খাবারের প্যাকেটগুলো খুললো। হাসতে হাসতে বললো,
‘ অবশ্য ভালোই হয়েছে। এখন আর খাবারদাবারের চিন্তা করতে হবে না।

আমার ভাই বেরসিকতার সাথে বলে উঠলো,
‘ কিন্তু এতক্ষণ তো আমাকে বুঝাচ্ছিলে যে তূর্ণাকে এখনি বিয়ে দিচ্ছোনা। তাহলে এখন তামজিদের দেওয়া খাবারদাবার খাবে কেন?

আমার ভাবি আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বললো,
‘ কোনোভাবে সেটার উসুল করে নিলেই হবে। ওর থেকে তো আমার বড় আপুর মেয়ে মারিয়া অনেক সুন্দরী, তামজিদকে বলবো যে তূর্ণাকে নয় মারিয়াকে যেন বিয়ের জন্য দেখে৷ সমস্যা সমাধান!

আমার ভাই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে গেলো। ভাবি আমাকে ইশারা করে বললো,
‘ আরে আসো খাও খাও। এগুলো তো তোমার জন্যই পাঠিয়েছে। তুমি কি করছো না করছো যেভাবে গোয়েন্দার মতো খেয়াল করছে, খাবার আমি একা খেলেও তামজিদ শুনে যাবে। না জানি পরে কি বলে বসে। আর শুনো, নিশ্চিন্ত থাকো বিয়েটিয়ে হবেনা। তুমি লক্ষী মেয়ের মতো পড়াশোনা করবে। এক বছর বাসায় থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে, বরং আমি একটা গল্প করার সঙ্গী পাবো!

আমি তাচ্ছিল্যের সাথে একটু হাসলাম। এরপর পিৎজার বক্সটা থেকে একটা অংশ তুলে নিলাম। এর মধ্যে আমার ভাই এসে ভাবির দিকে ফোনটা দিয়ে বললো,
‘ ফোন আসছিলো তোমার। আর আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

ভাবি ফোনে তাকিয়ে বললো,
‘ আরে তামজিদ ফোন দিয়েছিলো!

ভাবি ফোন ব্যাক করতে যাবে তখনি আবার ফোন এলো। রিসিভ করেই উচ্চকণ্ঠে ভাবি বলে উঠলো,
‘ কিরে তোর কি অনেক টাকাপয়সা? এগুলো কি বাসায় রাখার মতো জায়গা নেই?

কি বলেছে শুনিনি, কিন্তু ভাবি পরের কথার জবাবে বললো,
‘ হুম তাইতো বলি! কবে এতদূর গেলি? কিন্তু তূর্ণা তো তোকে পছন্দই করেনি। ঠিক পছন্দও না, আসলে সে বিয়েই করতে চাচ্ছেনা৷

তারপর অনেক্ষণ ভাবি ওপাশের কথা শুনলো, শেষে বললো,
‘ তূর্ণাকেই জিজ্ঞাসা কর।

ফোন কেটে ভাবি আমাকে বললো,
‘ তামজিদ তোমাকে ফোন দিবে। তুমি কিন্তু বলো যে তুমি পড়ালেখা করতে চাচ্ছো, অন্তত পরিক্ষা দেওয়ার আগে বিয়ে করতে চাও না৷

আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলাম। যতটুকু খাওয়া যায় আমি খেয়ে ফ্রিজ থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে রুমে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সত্যি সত্যিই তামজিদ আমাকে ফোন দিয়েছিলো। ভাবি যা যা বলেছে আমিও যে তাই তাই বলবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। কেনই বা নিবোনা? আমার অনুপস্থিতিতে আমার ব্যাগে উনার হাত দেওয়ার মতো বিশ্রী জিনিসটা আমার মাথায় এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে এরপর আর ফোন এলোনা, আমিও অপেক্ষা করছিলাম উনি কখন আবার ফোন দিবেন!

ফোন এলো কিন্তু রাত এগারোটার দিকে। তখন ফোন আমার হাতেই ছিলো। প্রথমবার কলটাকে আমি রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই বলতে শুনলাম,
‘ তূর্ণা তোমার ভাবি এমন বদলে গেলো কেন? আমাকে কথা দিয়েছিল যত যাই হোক সে তোমাকে আমার করে দিবেই। কিন্তু এসব কি বলছে এখন? তোমাকে নাকি পড়াতে চায়, বিয়ে দিবেনা এগুলো কি? আর আমি কি পড়াবো না? অবশ্যই আমি আমার বউকে পড়াবো, পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন তো দেখি তোমাকে পাওয়ার সম্ভাবনাও শূন্য হয়ে গেছে। তূর্ণা তুমি বলো তুমি আমাকে বিয়ে করবে? তাহলে আমি তোমাকে ওই বাড়ি থেকে আজীবনের জন্য নিয়ে আসবো। বিশ্বাস করো আমি আমার জীবন থাকতে তোমাকে এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবোনা, তোমাকে আমি অনেক ভালো রাখবো তূর্ণা। তুমি শুধু বলো আমার সাথে চলে আসবে?

আমিও ধাঁচের সাথে উত্তর দিলাম,
‘ আপনার কিভাবে মনে হয় একদিনের পরিচয়ে, আর আপনার এসব বড়লোকি কান্ডকারখানা দেখে আমি বিয়েতে রাজী হয়ে যাবো? আমি অভাব অনটনে বড় হয়েছি ঠিকি কিন্তু এতটাও লোভীর কাতারে পৌঁছাইনি। আর আপনি মানুষ হিসেবে এতটাও ভালো না যে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবো!

এরপর যেন তামজিদ কি বলছিলো। আমি না শুনে ফোন কেটে দিলাম। শুধু কাটলাম না একদম ফোন অফ করে দিলাম। আমার অনেক ভয় লাগছে। সাহস করে যে এতকিছু বলে ফেলেছি, এরপর যদি আমাকে ধমকে বলে উঠে,
‘ তোকে আমি দেখে নিবো!

তাহলে আমার অবস্থা আরো কতো ভয়াবহ হতো?

উনার রাগ সম্পর্কে আমার ধারণা তো কম নয়। ভয়ে ভয়ে পুরোটা সময় গেলো। রাতে ভালোমতো ঘুমাতেও পারিনি।

চিন্তার মধ্য দিয়েই ফজরের আজান দিচ্ছে। এদিকে ফোনটা এখনো বন্ধ।
আমি শোয়া থেকে উঠে ব্রাশ হাতে বারান্দায় গেলাম। গিয়েই আবছা আলোতে আমি তামজিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলাম। আমার বারান্দার দিকেই তার দৃষ্টি। আমাকেও দেখেছে! কিন্তু আমি একটুও দাঁড়াইনি, সাথে সাথে ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়েছি।
আমাকে ফোনে না পেয়েই কি বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে? রাত বলে ভেতরে আসেনি?

কিন্তু তখন না হয় রাত বলে বাসায় আসেনি, সকাল হতেই যদি বাসায় চলে আসে? কোনোভাবে ভাবিকে রাজী করিয়ে আমার সাথে কথা বলতে এলে আমি কি বলবো?

ভয়ে ভয়ে ফ্রেশ হলাম, নামাজ পড়লাম। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম এখনো আছে কিনা! সারা শরীর আমার কাঁপছে। সকালের আলো ফুটতেছে। আমি বারবার এদিক ওদিক যাচ্ছি, কখন জানি বেল বেজে ওঠে, আর আমার ভাবি ডেকে বলে তূর্ণা তামজিদ তোর সাথে কথা বলতে এসেছে! তারপর আমার কি হবে? আমি উনাকে এভাবে না বললেও পারতাম, সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা উচিত ছিলো!

আমার পায়চারীর মধ্যে হুট করে আমার মনে হলো যদি আমার সাথে কোনো অঘটন ঘটে যায়? আমাকে জোর করে যদি তুলে নিয়ে যায়? কিংবা মেরে ফেলে? এগুলোকে তার আগে কোথাও নোট করে গেলে কেমন হবে? টেবিলে তাকিয়ে দেখি খাতা আছে কিন্তু কলম নেই। তারপর আমার হাত ব্যাগে তাকিয়ে মনে হলো এখানে কলম আছে। আমি উঠে মধ্যের চেইন খুললাম কিন্তু কোনো কলম পেলাম না, সাইডের চেইনটা খুলে হাত দিতেই কলমের সাথে একটা ভাঁজ করা কাগজ উঠে এলো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, এই কাগজ আমি রাখিনি। দ্রুত খুললাম। খুলেই আমি দ্রুত পড়তেও লাগলাম। আমার হাত প্রথমদিকে কাঁপছিলো খুব, কাগজটা পড়া শেষ হতেই দেখি আমি একদম ঠান্ডা। ভেতরে কেমন যেন একটা ভয়ংকর ব্যপার ছিলো, সেটাও উধাও। প্রচন্ড মাথা ধরাটাও নেই, মুখে এক টুকরো হাসি!

কাগজটা হাতে নিয়েই আমি বিছানায় বসে পড়লাম। তবে কি সেদিন রেস্টুরেন্টে আমার ব্যাগ হাতানোর কারণ এটাই ছিলো? উনি আমার ব্যাগে এটাই রাখার জন্য চোরের মতো ব্যাগ খুলে গোপন জায়গা খুঁজছিলেন?

আমি চোখ বন্ধ করলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। বোধহয় এটা কষ্টের জল নয়।
তার মধ্যে আর আমার হাতে একটা কোমল হাত স্পর্শ করে বলে উঠলো,
‘ আপু!

চোখ খুলে দেখি আমার সামনে অর্ণা। ওকে দেখতে পেয়েই আমি চমকে উঠলাম। কিন্তু কোনো প্রশ্ন না করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কতক্ষণ ওকে বুকে ধরে রেখে তারপর যখন জিজ্ঞাসা করলাম,
‘ এতো সকালে কে নিয়ে এসেছে তোকে?

অর্ণা আমাকে ছেড়ে আমার হাত ধরে টেনে বললো,
‘ আসো তুমি।

তারপর আমাকে বাইরে নিয়ে আঙুল দিয়ে সোফায় বসে থাকা একজনকে দেখালো। আর বললো,
‘ উনি নিয়ে এসেছেন। এখন থেকে আমার দায়িত্ব নাকি উনিই নিবেন।

আমি অবাক হলাম না, কারণ তার আসাটাই কাম্য ছিলো। আমাকে আমার ভাবি দেখলো, আমিও ভাবিকে দেখলাম ঘুম কাতুরে চোখে বসে আছে। ভাবি আমাকে ইশারা করে ডেকে বললো,
‘ তোমার মুখে সরাসরি শুনতে চাচ্ছে যে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছোনা। এসে বলোতো! ওকে কতক্ষণ ধরে বুঝাচ্ছি মারিয়া অনেক সুন্দরী আর লক্ষী, নাহ সে তোমাকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করবেনা। না করলে আমাদের কি?

আমি ধীরে ধীরে গেলাম। তামজিদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে আমাকে বললো,
‘ হ্যাঁ বিয়ে না করলে আহামরি ক্ষতি হবেনা আমার, আর তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে চাইও না। তবে শেষবার প্রশ্ন করছি, উত্তরটা ‘না’ হলে আর কখনো এখানে আসবোনা। বলো তুমি আমাকে বিয়ে করবে তূর্ণা?

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
‘ হ্যাঁ! করবো।

আমার ভাবি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো!

চলবে….

লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here