বাসি_ফুলের_সুবাস #পর্ব_১০,১১

0
220

#বাসি_ফুলের_সুবাস
#পর্ব_১০,১১
#মাসুরা_খাতুন
১০
দেখতে দেখতে কে*টে যায় একটি মাস।আমার হাতের মেহেদীর রং এখন ও ঈষৎ লেগে আছে হাতে কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার হিং*স্র আঘা*তের দাগ ও আমার চামড়ায় বসে গেছে। ও বাড়ি থেকে আর কারোও খোঁজ নেওয়া দেখিনি আমার জন্য। হয়তো পথের কাঁ*টা দূর হয়ে যাওয়ায় উনারাও বেঁচে গেছেন,তবে এর মধ্যে আবির ভাইয়া কিন্তু এসেছিল।পাড়ায় উনার কোন বন্ধুর কাছ থেকে খোঁজ পেয়েছিলেন উনার বাড়ির লোক আমায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। শুনেই ভাইয়া হস্তদস্ত হয়ে ছুটে এসেছিলেন।বাড়িতে এসে যখন জানতে পারেন আমার থেকে বয়সে এতো বড় আর কামলা খাটা মানুষের সাথে এভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, শুনেই উনি প্রচন্ড রেগে যান। উনাকে কেন জানানো হলো না বলে খুব চোটপাট করেন বাড়িতে। খালাম্মা, খালু, ভাবি সবার সাথেই নাকি ভিষণ ঝগড়া করেন। তারপরই কারও কাছে থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে আসেন এখানে। প্রথমে ভাইয়াকে দেখে আমি ভিষণ অবাক হই,আবার খুব লজ্জা ও লাগে। এমন ভাঙাচোরা বাড়ি,তার মধ্যে ঘরে তেমন কিছু নেই যে উনাকে আপ্যায়ন করবো।উনি বাড়িতে ছিলেন না,ভাগ্যিস ছিলেন না! কারণ থাকলে হয়তো ভাইয়া কে কেন্দ্র করে ও কতোগুলো বাজে কথা শুনাতেন যা আমার সহ্য হতো না।ভাইয়া যখন এসেছিল তখন আমি উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলাম হুট করে মানুষ টাকে দেখায় নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারিনি আমি।একমনে তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে।ভাইয়াই প্রথম কথা বলেছিলেন,

“কিরে রাবু,বিয়ে করে ফেললি তাও একটিবার জানালি না আমায়? ”

ভাইয়ার কথায় সম্বিৎ ফিরে আমার, উনার এমন কথা শুনেই কান্না চলে আসে আমার চোখে। অনেক কষ্টে চোখে জল আটকিয়ে বলি,

“ভাইয়া, বাড়ি থেকে যে তোমাকেও জানাবে না,এটা আমি ভাবতে পারিনি। যখন বুঝলাম তোমাদের ছাড়াই বিয়ে হচ্ছে আমার,তখন আমার আর কিছু করার ছিলো না।বাড়ি থেকে বের হওয়া সম্পর্ন নিষেধ ছিলো আমার।কি করে তোমায় বলতাম বলতো।”

আমার এক কথায় ভাইয়া বোধ হয় বুঝে গেলো সব পরিস্থিতি। রাগে মানুষ টার মুখ টা লাল দেখাচ্ছে, কপালের রগ গুলোও যেন ফুলে উঠেছে।

“আমি জানতাম, জানতাম ওরা জোর করেই তোকে বিয়ে টা দিয়েছে। এতোটা নোংরা কেন ওদের মন মানসিকতা, বঝিনা।”বলেই রাগে উনি পাশেই পেয়ারা গাছ টাতে জো*রে লা*থি বসিয়ে দিলেন।বড় ভাবি উনার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।এমন দৃশ্যে উনিও যেন হতবাক! আগ বাড়িয়ে ভাইয়া কে কিছু বলে অপমান করতে আসার সাহস বোধ হয় পেলেন না।তবে এটা নিয়ে যে উনি হাজারটা কথা আমায় শোনাবেন,তা আমি আন্দাজ করতে পারি, আর কথা গুলো যে খুব একটা রুচিসম্মত হবে না সেটাও আমার জানা বুঝিনা মানুষ টার কিসের এতো রাগ আমার ওপর! আমার স্বামী খলিল কেও দেখি উনার সাথে ভিষণ ভালো সম্পর্ক।উনি বাড়িতে আসলেই বড় ভাবি কেমন করে জানি কথা বলে উনার সাথে। ওদের দুজনার কথার মধ্যে নিজেকে উটকো ঝামেলা মনে হয়। বড়ভাবির স্বামী সৌদি আরব আছেন প্রায় চার দুই বছর থেকে।বড় ভাবির চক্ষু লুকাতে আমি ভাইয়া কে বললাম,

“ভাইয়া,ভেতরে যাবে না? বসবে না আমার ঘরে?”করুণ হয়ে আমার বলা কথায় ভাইয়া যেন কিছু টা শান্ত হয়।আমার পিছু পিছু ঘরে গিয়ে বসে।হটাৎ ভাইয়া চুপ থাকতে থাকতে একটা প্রশ্ন করে,

“তুই কেমন আছিস রাবু? ”

ভাইয়ার এ প্রশ্ন টার উত্তর আমার পৃথিবীর সব চাইতে কঠিন মনে হলো।কি উত্তর হতে পারে এর? ভালো আছি? নাকি নেই? কোন রকমে তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিলাম ,

“আআমি ভালো আছি ভাইয়া।খুব ভালো আছি।”

“তুই মিথ্যে ও বলতে পারিস রাবু? এসব মিথ্যে বলাও কি শিখেছিলি তোর রেমি আপুর কাছে থেকে?”

“মিথ্যে কেন বলবো ভাইয়া,ভালো থাকাটা যে ভিষণ দূর্লভ জিনিস। আমার মতো মেয়ের কপালে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি,ভালো থাকা মানে তো এতোটুকুই।সেই ছোট বেলা থেকেই এতোটুকুর বাইরে ভালো থাকাটা কি জুটেছে আমার কপালে? আমার কথা বাদ দাও,তুমি? তোমার তো আর আমার মতো মন্দ ভাগ্য না,তারপরও কি তুমি ভালো আছো? এই প্রশ্নের উত্তরে কি একবাক্যে কোন দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারবে, হ্যাঁ আমি ভালো আছি। ”

“অনেক কথা শিখে গেছিস রাবু।বড্ড বড় হয়ে গেছিস তুই।”

“জীবন মানুষ কে অনেক কিছু শেখায় ভাইয়া।আমার একটা কথা রাখবে?”

“হু,বল”

“ভাবিকে তুমি মেনে নাও ভাইয়া । তুৃৃৃমি যতোই দায়িত্বশীল স্বামীর ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করো,কোথাও না কোথাও তুমি এখনও মানতে পারো নি ভাবিকে।তাই তো ভাবি সবসময় তোমায় হারানোর নিশ্চিতায় ভোগে।সবসময় তোমাকে শুধু তার গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।তুমি তাকে এ বিশ্বাস টা করাও ভাইয়া যে তুৃমি শুধু তার,আর কারও নও।আগে আমি ছিলাম, আমাকে নিয়ে অশান্তি হতো তোমাদের মাঝে, এখন তো আর আমিও নেই। এখন অন্তত মন খুলে সংসারটা করো ভাইয়া।তোমার কাছে সব কিছু আছে,তুমি এসব কিছুর ব্যবহার টা করে সুখি হও ভাইয়া।অসুখী জীবন টা যে বড্ড কষ্টের বড্ড বেদনার। ”

সেদিন আমার কথায় কি বুঝেছিলেন ভাইয়া আর খুব একটা কথা না বলে চলে গেছিলেন । শুধু যাওয়ার আগে উনার মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে, আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,

“জীবনে যেকোন প্রয়োজনে তোর এ ভাইটাকে জানাস রাবু,সবরকম চেষ্টা করবো।ভালো থাকিস এটা বলবো না,কারণ তুই কতোটা ভালো আছিস,থাকবি সেটা আমি জানি।শুধু বলবো নিজের যত্ন নিস,আর যেমন যু*দ্ধ করছিস এভাবেই করে যা।সবসময় নিজের ভালো থাকাটাকে আগে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবি।আমি গেলাম। ”

ভাইয়া যাওয়ার আগে আমি শুধু বলেছিলাম,

“ভাইয়া,তুমি আর এখানে এসো না।”

কথাটা বলার সময় বেশ কয়েক বার গলায় আটকে গিয়েছিল।কিন্তু আমি চাই ভাইয়া এখানে না আসুক,কারণ এখানকার পরিবেশ সত্যিই ভাইয়ার জন্য উপযুক্ত না।এমনি আমি একাই যা সহ্য করার করি,যা শোনার শুনি, কিন্তু ভাইয়ার সামনে এসব আমি শুনতে পারবো না।ভাইয়ার সামনে অপমানিত হওয়ার চেয়ে ম*রে যাওয়া ঢের ভালো।

______

আমার ছেলের বয়স ছ’মাস। দেড় বছর হলো বিয়ে হয়েছে। বিয়ের দুই এক মাসের মধ্যেই আমি বুঝতে পারি আমার মাঝে আরও এক নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।আমি ওর অস্তিত্ব অনুভব করি।বিয়ের পর পর এদের অত্যা*চারের কাছে হার মানতে চেয়েছিলাম, মনে হয়েছিল দু চোখ যেদিক যায় চলে যাবো।আর নয় পরাধীন জীবন। আমার ননদ অবশ্য ভালো মানুষ, কিন্তু উনি আর কতক্ষণ আমাকে র*ক্ষা করবেন,তার ওপর আবার উনার আলাদা সংসার আছে।স্বামী না থাকলেও মারা যাওয়া স্বামীর ভিটে আছে,একটা ছেলে আছে। উনি মাঝে মাঝেই আসেন,আর বড় ভাবির সাথে চোটপাট করে ঝামেলা টা আরও দ্বিগুণ বাঁধিয়ে চলে যান।আপা যে মনে প্রাণে আমায় ভালোবাসেন তা আমি বুঝি,উনি আমার ভালোই চান।কিন্তু আমার পাশে থাকা,আমার ভালো থাকার সবথেকে বড় আপন মানুষ টি যে শুধু আমার একান্ত আপন নয়,সেখানে উনি আমায় ভালো কি করে রাখবেন?

আমার স্বামীর বড় ভাবির ওপর এতো কেন দরদ তা আমি কয়েক মাসের মধ্যেই বুঝে যায়। তাদের মধ্যেকার বিশ্রী নোংরা সম্পর্ক টা মুখে আনতেই আমার ঘৃণা করে।এতো নোংরা মানুষ টা যে প্রতিদিন আমার পাশে ঘুমায়,আমায় ছোঁয় এটা ভাবতেই আমার ঘৃণা করে। প্রথম প্রথম ওসব দেখার পরে উনি আমায় ছুলেও গা গুলিয়ে উঠতো।দু একবার হাতেনাতে ওমন নোংরা পরিস্থিতিতে ধরে প্রতিবাদ ও করেছি,কিন্তু তার বিনিময়ে জুটেছে শরীরে প্রহার।আর যতোদিনে জেনেছি ততদিনে আমি একা ছিলাম না,আরও একটি প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল আমার মাঝে। রেমি আপু একবার এসে উনার ঢাকার বাসার ঠিকানা দিয়েছিল,কিন্তু আমি একা হলে তাও হতো,আমিই ঠিকানাহীন,সাথে আমার বাচ্চা টাকেও ঠিকানা হীন করে নিয়ে গিয়ে কি করতাম আমি? তাই তো মুখ বুজে সহ্য করে যাই।কিন্তু দেড় বছর পরে ও এদের নোংরামি, অত্যা*চার কোনটাই কমেনা।বাচ্চাটার বয়স ছ’মাস। মনে মনে ভাবি আমি যদি ঢাকায় ও যাই,ছ মাসের বাচ্চা কে রেখে কাজে যেতে পারবো না।অন্তত ওর একটু বড় হওয়া উচিত।আমার স্বামী খলিল আমার প্রতি উদাসীন হলেও বাচ্চাটার প্রতি যত্নশীল ছিলেন।উনাদের বংশের প্রথম ছেলে সন্তান হওয়ায় আমার সন্তানের আলাদা সমাদর ছিল।বড় ভাবীও রাশেদ কে ভালো বাসতেন।আমার ছেলের নাম রাশেদ।আমি আবারও সহ্য করতে লাগলাম, অন্তত রাশেদ বড় হওয়া পর্যন্ত।আমি হঁাস মুরগী পালন করা শুরু করি।যতোবার চাইতাম উনার মনের মতো হতে,একটু ভালো থাকতে,ততবারই অবহেলা পেতাম।আমি মাঝে মাঝে বুঝিনা,বড় ভাবিই যদি উনার সকল চাহিদার কেন্দ্র বিন্দু ছিলেন, তবে কেন শুধু শুধু আমাকে বিয়ে করতে গেলেন? এই লোক দেখানো বিয়ের মানে টা কি? ও লোক দেখানো।লোকে যাতে বড়ভাবির নামে বদনাম দিতে না পারে?,উনাদের সম্পর্কের দিকে আঙুল তুলতে না পারে তাই?তাই বুঝি আমার মতো এতিম অনাথ মেয়ে দেখে বিয়ে করেছেন? যাতে প্রতিবাদ করে কোথাও না যেতে পারি।

দেখতে দেখতে আরও কিছু বছর গেলো।রাশেদ এখন তিন বছরের। ছেলেটাকেও কেমন ওরা ওদের করে নিয়েছে। বড় মায় যেন ওর কাছে বেশি প্রিয়।যার জন্য আমি এতোদিন এই কষ্টের মধ্যে অপেক্ষা করলাম সেও বোধহয় আমায় বাড়তি মনে করে।তবে এতে ছেলেরই বা দোষ কোথায়,ছোটবেলা থেকেই শুধু খাওয়ানোর সময় টুকু আমি ছেলে টাকে কাছে পেতাম, বাকি সময় টুকু বড় ভাবী উনার মন জয় করতে বাড়তি দরদ দেখিয়ে নিজের কাছেই রাখতেন।এক দিন খাওয়ানোর জন্য ছেলে টাকে আমার কাছে আনলে আমি খাইয়ে একটু খানি আমার কাছে রাখি,বড়ভাবি পুতুল কে পাঠায় রাশেদ কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি পুতুল কে বলি মাকে গিয়ে বলতে রাশেদ একটু আমার কাছে থাকবে।পুতুল খালি হাতে যাওয়ার সাথে সাথে ভাবি ছুটে আসে।ততক্ষণে রাশেদ আমার কোলে ঘুমিয়ে গেছে। ভাবি এসে ঘুমন্ত ছেলেটাকেই নিয়ে যেতে চাইলে আমি বলি একটু থাকুক না,ঘুমন্ত বাচ্চা কে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার? আর এটায় আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। বড় ভাবী অনুয়ে বিনিয়ে কান্না শুরু করে, আর উনি আসলেই বলে দেন যে আমি নাকি বাচ্চা নিতে আসলে উনাকে অপমান করেছি,নিজের ছেলে নাই,তাই পরের ছেলে কেড়ে নিতে চায় এসব বলেছি।এসব কথা শুনে উনি তো প্রচন্ড রেগে যান। সেদিন ও বেদম আ*ঘাত সহ্য করতে হয়েছিল আমাকে।তারপর থেকে সে বিষয়েও আর কিছু বলতে পারিনা।লড়াই আমিও করতে পারতাম যদি আমার স্বামী নামক মানুষ টা আমার হতো,লড়াই আমিও করতাম যদি আমার একটা স্থায়ী ঠিকানা, স্থায়ী পরিচয় থাকতো।মাথার ওপর বাবা নামক একটা ছাদ থাকতো,অথবা পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করার মতো একজন কেউ থাকতো।কিন্তু কোন দিকটায় নেই আমার, না জানি একাডেমিক কোন পড়াশোনা! কি নিয়ে এই সমাজের সাথে লড়বো আমি? এই ছেলেটাকে নিয়েই বা কোথায় দাঁড়াব? আবির ভাইয়া আছেন,রেমি আপু আছেন, কিন্তু কতো,কতো আর উনাদের দয়ায় বাঁচব? কতো আর সমস্যার ঝুলি নিয়ে উনাদের সুন্দর জীবনে বাড়তি ঝামেলা হবো?পায়েল ভাবি সহ্য করতে পারে না আমায়,আমাকে নিয়ে আবির ভাইয়ার সংসারে ঝামেলা হয়,রেমি আপু! সেতো পরের ঘরে।

কিন্তু এতো সহ্যের পরেও এবার আমার জীবনে সত্যিই নতুন মোড় এলো।আমি সত্যিই এবার একটু সাহস দেখিয়ে ফেললাম। সাহস নিয়ে নিজের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদ করলাম, কারণ এখন আমার ছেলেটাও যথেষ্ট বড় হয়েছে।কিন্তু এ সাহস দেখানোর জন্যই আমায় হতে হলো ছেলের কাছে থেকে আলাদা,ছাড়তে হলো মিথ্যে সংসার নামক বন্ধন,,,,,

চলবে,,,,

#বাসি_ফুলের_সুবাস

#পর্ব_১১

#মাসুরা_খাতুন

“প্রতিবাদ”শব্দ টা ঠিক যতোটা সহজ, ঠিক ততোটাই কঠিন প্রতিবাদ করে টিকে থাকা।এ জগতে দূর্বলদের প্রতিবাদ করতে নেই।চারদিকে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কতো স্লোগান শুনি,কিন্তু এর বাস্তবায়ন সত্যিই অসম্ভব! ততোদিন নারী পুরুষের সমান অধিকার সম্ভব নয়,যতোদিন না পুরুষ জাতীর বিবেক জাগ্রত হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরেই নারীরা লা*ঞ্ছিত, কখনো বা পুরুষের থেকে, আবার কখনও বা কিছু নিকৃষ্টমনা নারীর থেকেই। নারীর প্রকৃত শত্রু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপর আরেক টি নারীই হয়ে থাকে।কি হতো বড়ভাবি যদি নিজের আপন দেবরের সাথে এমন বাজে সম্পর্কে না জড়াতেন! একটা পুরুষ মানুষ অবশ্যই চাইবে একটি নারীকে যেকোন ভাবেই হোক বিছানায় পেতে।কিন্তু আমি নারী,আমার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে শুধু মাত্র আমার স্বামীর হক,আমার সব থেকে দামী সম্পদ আমার ইজ্জত। তাই যেকোনো মূল্যেই হোক নিজের সবথেকে দামী সম্পদের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে।একজন নিকৃষ্টমনা পুরুষ তার কৌশলে আমায় চাইলো,আর আমিও নিজেকে সপে দিলাম,তাহলে তো মাঝখান থেকে ঠকে গেলাম আমিই।এমন কিছু নোংরা নারীদের জন্যই আরও কিছু নির্দোষ নারী নির্যাতিত হচ্ছে, সমাজে পর*কীয়া বেড়ে যাচ্ছে, কিছু নিষ্পাপ নারী ধ*র্ষিত হচ্ছে। সমাজে কিছু বি*কৃত মস্তিষ্কের নারী পুরুষের জন্যই আমাদের সমাজ টা পঁ*চে যাচ্ছে। আচ্ছা, বড় ভাবিও তো নারী,তার কি একটি বারের জন্য ও মনে হয়নি,আমি তার ছোট বোনের মতো। এতোদিন যা পা*প করার করেছে,এখন অন্তত আমি আসার পর উনার এমন নোংরামি ছাড়া উচিত। একটি বারের জন্য “না”বলা উচিত। আচ্ছা যে মানুষ টা উনার জন্য, উনার সন্তানের জন্য দিনের পর দিন,বছরের পর বছর বিদেশে পরে আছেন,ঐ সব অপ*কর্ম করার সময় কি তার মুখ টাও একটিবারের জন্যও ভেসে ওঠে না চক্ষু স্পটে? আর আমার স্বামী, সে তো আরেক পি*শাচ,নিজের ভাইয়ের বিশ্বাস করে রেখে যাওয়া স্ত্রী কে ও ভোগ করতে তার দ্বিধা নেই। ঘরে বউ রেখে আরেক নারীর সাথে রাত কাটায়।রোজ রাতে আমি দরজা খুলে রেখেই ঘুমায়, হয়তো উনি আসবেন এই আশায়।আবছা মতো ঘুমায় আমি পুরো রাত,হয়তো উনি আসবেন, আমায় ডাকবেন।কিন্তু আমার আশা পূর্ণ হয় না,কখনও উনি আসেন আমার ঘরে আবার কখনও আসেন না।রাত যখন দুটো তিনটা হয় তখন আমি বুঝতে পারি,উনি আর আসবেন না।তখন উঠে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি,কিন্তু ঘুম আসেনা,অনেক ক্ষণ ঘুম আসেনা।শুধু বুকের ভেতর ব্যথা হয়,যে মানুষ টা আমার পাশে ঘুমোনোর কথা,সে হয়তো এখন লেপ্টে আছে পরনারীর শরীরে।

কিন্তু এতোদিনে এসে যেন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।এতোদিন এসব বিষয়ে বহুবার বলেছি,আর মা*র ও খেয়েছি।আজ যখন রাত বারোটা,পাশ ফিরে দেখি উনি নেই। অনেক পিপাসা পেল,তাই উঠলাম পানি খেতে। মাটির কলস টায় গিয়ে দেখলাম পানি নেই। তাই তো গ্লাস হাতে পানি নিতে কলপাড়ে গেলাম। কল পাড়ের পাশেই ভাবির ঘর,ভাবির ঘর ডিঙিয়ে কল পাড়ে যেতে হয়।কিন্তু যখন আমি ভাবির ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম,তখন না চাইতেও কিছু অদ্ভুত শব্দ আমার কানে এলো।রাত হওয়ায় ধীরে শব্দ ও অনেক দূর পৌঁছায়। পা দুটো থেমে গেলো আমার।গভীর নিশ্বাসের শব্দ কান ভে*দ করে যেন আমার মস্তিষ্কে আ*,ঘাত করেছিল। চাপা গোঙানির শব্দ টা বুঝতে খুব একটা দেরি হয়নি আমার।আর আমি নিশ্চিত ও দেওয়ালের ওপারেই অবৈ*ধ খেলায় মত্ত পুরুষ নারী আর কেউ নয় আমার স্বামী আর বড় ভাবি। এতোদিন সহ্য করলেও আজ আর চুপ থাকতে পারলাম না।বড় ভাবির দরজায় গিয়ে জোর জোরে ধা*ক্কা দিতে থাকলাম। হাতের স্টিলের গ্লাস টা জোরে আছাড় মে*রে ফেলে দিলাম। পানির তেষ্টাটা দ্বিগুন পেলেও পানি খাওয়ার ইচ্ছে টা ম*রে গেলো।আমি দরজা ধা*ক্কা দিলাম আর জোরে জোরে ডাকতে থাকলাম,

“কি হচ্ছে এখানে,দরজা খোলো।বড় ভাবি তোমার ঘরে কে? তাড়াতাড়ি দরজা খোল বলছি,আমি কিন্তু চিল্লাচিল্লি করে মানুষ জড়ো করবো।”

আমার এমন ডাকাডাকিতে ওরাও খানিকটা ঘাবড়ে গেলো,পাছে আমি সত্যিই মানুষ জড়ো করছি নাকি এই ভয়ে।কিছু ক্ষণ ধা*ক্কা দিতেই আমার স্বামী নিজে দরজা খুললো,

“কি ব্যাপার, ভাবির ঘরে তুমি? তাও আবার এতো রাতে? কি করছিলে তোমরা? ছিহ্ তোমার লজ্জা করে না,ঘরে বউ রেখে নিজের বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে এমন নোংরামি করতে?”

“দ্যাখ রাবু,চুপ কর কইতাছি,আমারে চেতাস না।এই রাত দুপুরে নাটক না কইরা ঘরে যা।”

“নাটক! নাটক আমি করছি না,তোমারা যে দেবর ভাবির সম্পর্কের আড়ালে কি নোংরা খেলা খেলছো তার বেলা? আমি অনেক সহ্য করছি,আর না।এখনই আমি মানুষ ডাকব,আজ একটা কিছু হেস্তনেস্ত হবেই।”ওদের কে এমন পরিস্থিতিতে দেখে আমার মাথায় ও র*ক্ত উঠে গেছিল,তাই তো সকল ভয় জড়তা কা*টিয়ে আমি চিৎকার করি,

“কে আছেন, কে কোথায় আছেন, আসুন আপনারা, এরা কি নোংরামি করছে দেখে যান।ও চাচা,চাচী , শাপলার মা চাচী, যায়দা ভাবী কই তোমরা এসো,এসে দেখে যাও এরা কি করছে।এতোরাতে এরা এক ঘরে কি নোংরামি করছে এসে দেখে যাও তোমরা।অনেক সহ্য করছি আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”

আমিও জোরে জোরে চিল্লিয়ে লোকজন কে ডাকতে শুরু করি। বড়ভাবি তাড়াহুড়ো করে নিজের কাপড় ঠিক করছে,আর আমার স্বামী হতভম্ব হয়ে যায় আমার এমন কাজে। সেও হয়তো ভাবে নি আমি এমন কিছু করবো,রাগে দিশা হারিয়ে আমায় মা*রতে শুরু করে সে,পারে তো ঐ একটায় কাজ।কিন্তু আমিও আজ থামি না,মা*র খেতে খেতেই জোরে জোরে চিল্লাতে থাকি।কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির উঠোন ভরে যায় কৌতুহলী মানুষের ভিড়ে।গ্রামের মানুষ পাশের বাড়িতে কিছু একটা হওয়ার আন্দাজ করতে পারলেই উপস্থিত হতে বিলম্ব করে না।দুই একজন মহিলা এসে আমায় ছাড়িয়ে নেয়।অনেকে ছিহ্ ছিহ্ ও করতে থাকে গভীর রাতে এভাবে বউকে মা*রা দেখে।আর বেশির ভাগই উৎসুক হয়ে আছে কি হয়েছে ব্যাপারটা জানার জন্য। আমার স্বামীর মুখের নোংরা গাল শুনে ও দু একজন ছিহ ছিহ করে।আমিও কাঁদতে কাঁদতেই পুরো ঘটনা টা খুলে বলি।এটাও বলি বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই ওদের এ নোংরা সম্পর্ক দেখে আসছি।কিছু কিছু ভাবিরা আমায় সমবেদনা জানায়,আর কিছু কিছু বয়ষ্ক চাচী তো একেবারে বড় ভাবিকেই ওর মা সহো নোংরা বাজে চরিত্রের বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু এতোক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে নাটকের প্রধান রচয়িতা বড় ভাবি। চোখে নাকিকান্না ঝুলিয়ে নিজের মিথ্যে কথার পসরা সাজায়।

“আইজ মিমের আব্বায় বাড়িত না থাকায় ছোড বউ তুমি এগ্লান কথা কইতে পারতাছো।সক্কাল থাইকা মাইয়াডার জ্বর,কিছু খাইতেও পারে নি।সাঝ রাইতে তোমাগো ঘরে যাইয়া কইলাম ছোড বউ, তুমি আইজ এট্টু আমার ঘরে থাকো না,আমার কেমন জানি ডর করতাছে,মাইয়াডা ভুল বকতাছে।তুমি মুখের ওপরই না কইয়া দিলা।একটু আগে মাইয়া টা আরও বেশি আবোল তাবোল বকলে বেহায়া হইয়া আবার তোমগো ঘরে গেলাম।তুমি না আসায় খলিল আসলো,ডাক্তারের কাছে লেওন লাগবো নাকি দেখতে।আর এতেই তোমার এতো রাগ? সোয়ামি ঘর থাইকা একটু আইছে বইলা তুমি আমার মান সম্মানের ওপর এমন কইরা কালি লাগাইলা? ছিহ্ ছোডবউ ছিহ্! তুমি এমন করবা জানলে আমার মাইয়া মই*রা গেলেও তোমাগোরে ডাকতাম না।আমারই ভুল হয়ছে।”

এমন ভাবে গুছিয়ে মিথ্যে গুলো বলেই উনি জোরে জোরে কান্না শুরু করলেন। এতোক্ষণে মানুষ গুলো ও যেন আসল সত্য জানতে পেরেছে এমন ভাব করে ছিহ্ ছিহ্ করতে লাগলো।বড়ভাবির এমন উপস্থাপনে যেন সত্যিই সব দোষ আমার হয়ে দাঁড়ালো। এতোক্ষণ বড় ভাবির মা পর্যন্ত তুলে বাজে আখ্যা দেওয়া মহিলা গুলোও আমাকে ছিহ্ ছিহ্ করতে লাগলেন,আমার মন যে কতোটা সংকীর্ণ, তা উনারা উনাদের চোখের ভাষাতেই বুঝিয়ে দিলেন।

আমি নিজেও অবাক! একটা মানুষ এতোটা গুছিয়ে কথা বলতে পারে কি করে? উনার বলা প্রতিটি কথায় যে মিথ্যে দিয়ে মোড়ানো, তা আমি এখন এই সব লোকদের বোঝাবো কি করে?

“বড় ভাবি,তুমি এসব মিথ্যে কেন বলছো? সত্যি টা বলার সাহস কেন নেই তোমার? অ*পকর্ম করবে,আর তা স্বীকার করতে এতো লজ্জা! পুতুলের জ্বর এতোটাও ছিলো না যে ভুল বকবে।আর বিকেলেই তো উনি বাজার থেকে ঔষুধ এনে দিলেন। আমিও গিয়ে সন্ধ্যার সময় দেখে আসলাম মেয়ে টা একদম ভালো। আর তুমি কি বলছো এসব? অনেক আগে থেকেই এসব নোংরামি করো তোমরা,এটা স্বীকার করতে পারছো না কেন?”

সর্বশেষে দোষী আমিই হলাম। মিথ্যে নাটকের কাছে হার মানলো সত্য।তবে আমার কথা ও যে লোকে বিশ্বাস করে নি এমন টি না,কিন্তু তার সংখ্যা কম।সারারাত বাইরেই পড়ে থাকলাম আমি।যেসব লোকজন এসেছিলো তারাও একজন দুজন করতে করতে চলে গেলো।

পরদিন সকাল বেলায় আবারও লোকজনের আনাগোনা শুরু হলো।আমার স্বামী একটু পর ঘর থেকে বেরিয়েই কোথায় যেন গেল।রাশেদকেও বড় ভাবি আমার কাছে আসতে দিলেন না।আমি উঠে ঘরের দিকে যেতে লাগলে দেখি দরজায় তালা দেওয়া। বড়ভাবির কাছে গিয়ে তালার চাবী আছে নাকি জানতে চাইলে উমি সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন আমায় ঘর খুলে দেওয়া নিষেধ। রাশেদ কে আমার কাছে ডাকলে উনি বলেন ছেলেকে যাতে না ধরি।আমি জোর করে আমার রাশেদকে কোলে নিতে গেলে উনি ওখান থেকে রাশেদ কে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন।ছেলেটা আমার কাঁদছিল,আর দরজার এপারে কাঁদছিলাম আমি।কিছু ক্ষন বাদেই বুঝতে পারলাম উনি সকাল সকাল বেরিয়ে মানুষ ডাকতে গেছেন।সমাজ লোকজন কে জানিয়ে এসেছেন আমার মতো বেয়াদব, হিং*সুক মেয়ের সাথে উনি ঘর করতে চান না।আমি নাকি সব কিছুতে উনাকে সন্দে*হ করি,কয়টা বছর থেকে একটু ও সুখ দেইনি।তাই তো উনি আর পারছেন না আমার সাথে সংসার করতে।

বেলা দশটার দিকে লোকজন সব বসলে সবার সামনেই উনি আমায় মুখে মুখেই তিন তালাক দিয়ে ফেলেন।কলিজা কেঁ*পে উঠে আমার, উনার মুখ থেকে তিনটি শব্দের তালাক কথাটি শুনে।এ শব্দ টা যে কতোটা হৃদয়বি*দারক তা একটি মেয়েই জানে।অনেক গুরুজনে অবশ্য বুঝিয়েছিলো উনাকে,আর একটিবার আমায় সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।কিন্তু উনি উনার সিদ্ধান্তে অটল।উনি কিছুতেই চান না আমার মতো ছোট মনের মেয়ের সাথে সংসার করতে,যে বাচ্চার অসুখের জন্য তার বড় ভাবির ঘরে যাওয়ায় এতো বড় বদ*নাম দিয়েছে উনার সতি সাবিত্রী ভাবিকে।

এবার প্রসঙ্গ আসলো রাশেদ কে নিয়ে।আমি বললাম আমার কিচ্ছু চাই না, শুধু আমার ছেলেকে চাই।ছেলেকে দিলেই আমি উনাদের জীবন থেকে চলে যাবো।কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি নন ছেলেকে আমায় দেওয়ায়।উনার যুক্তি হলো,আমিই পরের বাড়িতে কাজ করে মানুষ, উনি চান না উনার ছেলেকেও আমার মতো পরিচয় হীন হয়ে পরের বাড়ির কাজ করাতে।আমারই থাকার জায়গা নেই, উনার ছেলেকে রাখবো কোথায়? এমন হাজারটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে আমায় একায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো।ছেলেটাকে উনাদের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত দিলেন পাড়ার কিছু মহামান্য ব্যক্তিবর্গ।আমি অসহায়, নিঃস্ব।শেষ সম্বল হিসেবে নিজের ছেলেটাকেও পেলাম না।অনেক কাঁদলাম উনাদের কাছে,কিন্তু উনারাও আমায় বোঝাতে থাকলেন,ছেলেকে নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াব! তার থেকে একাই নিজের জীবন শুরু করি।আর আমায় বিশ হাজার টাকা নগদ দিতে বললেন উনারা,এটা নাকি আমার প্রাপ্য। আমি তো এসব কিছু চাই নি,আমি একটা সুন্দর পরিবার নিয়ে, স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে একটা সংসার চেয়েছিলাম।কিন্তু কি পেলাম আমি, আমার জীবনে কি পুরোটায় দুঃখ দিয়ে লেখা!

ছেলেকে একটিবারের জন্যও আমার কাছে দেওয়া হলোনা।অনেক বলার পরেও ভাবি ওকে ঘর থেকে বের করলেন না।ঘরের মধ্যে রাশেদের কান্না আমি শুনছিলাম, কিন্তু আমাকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলা হলো।এক কাপড়েই কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে এলাম আমি,রাশেদ কে ছেড়ে আসতে যে কতোটা কষ্টের তা শুধু একজন মা ই জানে।,,,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here