বাসি_ফুলের_সুবাস #পর্ব_৪,০৫

0
235

#বাসি_ফুলের_সুবাস
#পর্ব_৪,০৫
#মাসুরা_খাতুন
০৪

আজ প্রায় ছ’মাস হলো আবির ভাইয়া বাড়ি আসে না।খালাম্মা অনেক বলে,মাঝে মাঝে কাঁদে, তাও ভাইয়া আসেনা। ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয়, প্রতি নিয়ত ভালোবেসে যাওয়া মানুষগুলো ও একটা সময় থমকে যায়।তখন সব কিছু কেমন বিশ্রী মনে হয়,নিজের কাছে নিজেকেই অসহ্য লাগে। সবথেকে কষ্ট বুঝি বুকে অগাধ ভালোবাসা নিয়েও বলতে না পারার কষ্ট। তিলে তিলে বুকের ভেতর যত্ন করে গড়া ভালোবাসা কে কবর দিতে হয়।আবির ভাইয়ার ও তাই হয়েছে। সবসময় হাসি খুশি থাকা প্রতিবাদি ছেলেটা একেবারে চুপসে গেছে। তার সকল উচ্ছাস যেন কেউ খুব যত্ন করে শুষে নিয়েছে।

রেমি আপুর বিয়ের ও ছ’মাস। সেবার আপু কে ভয় দেখানোর পর আপু আর ভাইয়ার প্রচুর মা*রামা*রি হয়।বরাবরই ওদের এসব লেগেই থাকে। কয়েদিন ভাইয়া থেকে আবার ঢাকায় চলে যায়। ভাইয়া শহরে ভালো একটা কলেজে অনার্স পড়ে।আমার দিনও তেমন কা*টছিল,যেমন গত আট বছর কেটেছে। এরই মধ্যে একদিন রেমি আপুর জন্য সম্বন্ধ আসে বিয়ের।পাত্র অনেক বড় ব্যবসায়ী ঢাকায়।নিজেদের গার্মেন্টস আছে ঢাকায়। রেমি আপুর বাবার এক বন্ধুর ছেলে।সবার খুব পছন্দ হয় পাত্র সহো পরিবার কে।তাই তো সবাই মিলে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে। বিয়ের তারিখ জানিয়ে আবির ভাইয়া কেও বাড়িতে আসতে বলা হয়।আপুর বিয়ে শুনে আবির ভাইয়া প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় না,পরে যখন বুঝতে পারে সত্যিই বিয়ে তখন তাড়াতাড়ি চলে আসে।

ভাইয়া সেদিন বাড়িতে এসেই সোজা ব্যাগ টা ছুড়ে ফেলে সোফায়, তারপর আমি খালাম্মা কারো সাথে কথা না বলেই বাইরে চলে যায় দৌড়ে। ভাইয়ার এহেন কান্ডে আমি খালাম্মা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। ভাইয়া সোজা রেমি আপুর বাড়িতে যায়,তারপর আপুকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাগানে নিয়ে যায়।

“কি ব্যাপার আবির,আমায় এমন টেনে আনলি কেন?”

“টেনে আনলি কেন মানে? তুই বিয়ে করছিস? ”

“হ্যাঁআআ।আর কতোদিন তোদের ঘাড়ে বসে বসে খাবো বল? এবার একটু জামাইয়ের ঘাড়ে বসেও খাই।”

“সিরিয়াসলি! তুই নিজের মতেই বিয়ে করছিস রেমি?”

“আরে বোকা হ্যাঁ তে।ছেলে ভালো,পরিবার ভালো,আর তাছাড়া ও বাবা মা সকলের পছন্দ তাহলে এখানে না করার কি আছে? ”

“তুই সবটা জেনে বুঝেও কি করে আমায় এতোটা ঠকাতে পারিস রেমি? তুই কেন এমন মজা করছিস আমার সাথে? তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে না বলে দে,আর বাকি সব ব্যবস্থা আমি করছি।”

“তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আবির? কি বলছিস এগুলো? আর আমি কি জেনে তোর সাথে মজা করছি? ”

“কেন তুই কিচ্ছু জানিস না? আমি যে তোকে ভালোবাসি জানিস না তুই? ”

“তুই আমায় ভালোবাসিস? কই কখনও তো বলিস নি? তুই না বললে আমি জানবো কি করে আবির? ”

“কেন আমি যে তোকে প্রতিবার এসে এসে একটা করে চিঠি দিতাম,সেগুলো তুই পড়িস নি?”

অবাক হয় রেমি আপু। বিস্ময় নিয়ে বলে,

“চিঠি! তুই আমায় কবে চিঠি দিলি আবির? কই আমি তো কখনও পাই নি।তুই আমায় বই দিতিস,কিন্তু চিঠি তো না।”

এবার ভাইয়া সত্যি সত্যি ভেঙে পড়ে। হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে বলে,

“বই দিতাম,কিন্তু বইয়ের সাথে যে আমি একটা করে চিঠি ও দিতাম সেগুলো পাসনি তুই?”

“না আবির,আমি কখনও কোন চিঠি পাই নি।কোথায় চিঠি? ”

“প্রতিটি বইয়ের মলাটের নিচে নিচে আমি একটা করে চিঠি তোকে দিতাম রেমি।তুই কেন খেয়াল করিস নি? আমার প্রত্যেকটা চিঠিতে তোকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছি।আমার সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম অনূভুতি গুলো যে কতোটা বিশাল ভালোবাসার সাগরে রুপান্তরিত হয়েছে সেই কথা গুলো তোকে জানিয়েছি।তোর প্রতি আমার সকল ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে এক একটি পত্র রচনা করেছি আমি রেমি,আর তুই সেগুলো পাস নি?”

“তুই বিশ্বাস কর আবির,আমি কখনও সেভাবে খেয়ালই করি নি।বই দিয়েছিস পড়েছি,কিন্তু মলাটের নিচে যে চিঠি খানা দিয়েছিস তা কখন ও খেয়াল করি নি আমি। তুই আমায় ক্ষমা করে দিস আবির।”

এতোক্ষণে আবির ভাইয়ার দুচোখ ভরা অশ্রু। পাগলের মতো হয়ে যায় ভাইয়া।আপুকে ধরে কাঁদতে থাকে। রেমি আপুও স্বান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা খুঁজে পায় না।

“আমি তোকে ভালোবাসি রেমি। খুব ভালোবাসি। তুই সত্যি করে বল,আমার জন্য তোর মনে কিছু নেই? এতোটুকু অনূভুতি ও তৈরি হয় নি?”

“আবির তুই শান্ত হো প্লিজ। এমন পাগলামি করিস না।তোর সাথে আমার সবসময় বন্ধুর মতো সম্পর্ক,তুই আমার কাজিন ভাই।এর বেশি আমি কখনও ভাবিনি।আর তুই যেমন সবসময় আমার পেছনে লাগিস,আমি কখনও ভাবিনি তোর মনে এসব ছিল,আমি ভাবতাম সবটায় তোর দুষ্টুমি। ”

ভাইয়া কাঁদে, খুব করে কাঁদে। রেমি আপুও সামলাতে পারে না ভাইয়া কে।

“রেমি তুই বাড়িতে না বলে দে রেমি।তুই শুধু চাচ্চুকে একবার না বল,বাকি সবাই কে আমি বোঝাবো।আমার তোকে চাই রেমি।”

“পাগল হোস না আবির।সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে,আত্মীয় স্বজনদের ও দাওয়াত করা হয়ে গেছে। আর তাছাড়াও এটা আমাদের পরিবারের সম্মানের প্রশ্ন। বড়আব্বু ও ভিষণ রাগী মানুষ। এসব জানলে তোকে ঘরছাড়া করবে।আর বড়আম্মু ও আমায় পছন্দ করেন না।এতোকিছুর মাঝে তুই যা চাইছিস তা হয় না আবির।প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।”

সেদিন আবির ভাইয়া কেঁদেছিল,খুব করে কেঁদেছিল।ভাইয়া বাড়িতে এসেই ওভাবে রেমি আপুদের বাসায় চলে যাওয়ায় আমি ও খুঁজতে খুঁজতে রেমি আপুর বাসায় যায়।চাচি তখন বাড়ি ঘর পরিষ্কার করছিল।ভাইয়ার খোঁজ করতেই চাচি বলেন রেমি আপুকে নিয়ে বাগানের দিকে গেলেন।বরাবরই ভাইয়া এমন,তাই চাচি ও স্বাভাবিক ভেবে নিজের কাজ করছিলেন। আমিও বাগানে গিয়ে ভাইয়া কে কাঁদতে দেখলাম। জীবনে কখনও মানুষটার চোখে পানি দেখিনি। এই প্রথম ভাইয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখছি। ভাইয়ার কান্না দেখে আমার ও চোখে কান্না চলে আসে।আমি দৌড়ে ভাইয়ার কাছে যাই।দুহাত দিয়ে আগলে ধরি ভাইয়াকে।আমায় ধরে ভাইয়া সেদিন খুব কাঁদে, কাঁদে রেমি আপুও,আর অনবরত অশ্রু ঝরে আমার চোখ থেকেও।

“রাবু,রাবু তুই একবার রেমি কে বল না,আমি ওকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি ওকে আমি।তুই বলনা।”

“ভাইয়া তুমি অবুঝ হইয়ো না।বাসায় চলো ভাইয়া।খালাম্মা চিন্তা করছেন। ”

রেমি আপুর মুখে কোন কথা নেই, আপু শুধু কাঁদছে। হয়তো ভাইয়ার এ অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে কাঁদছে। আমি আপুকে ও বললাম থামতে।

“রাবু তুই ঐ পেত্নী কে বলে দে,ও যেন সুখী হয়,খুব সুখী হয়।আর যদি সুখী না হয় তবে কিন্তু ওকে আমি তুলে নিয়ে আসবো।কারো বাঁধা মানবো না।”

সেদিন অনেক কষ্টে ভাইয়াকে সামলিয়ে বাড়িতে আনি।বাড়ি আসার পর থেকেই একদম নিজের ঘরে ব*ন্দীর মতো থাকতে লাগে ভাইয়া।কারো সাথে কথা বলে না,বাইরে যায় না।একদম চুপচাপ মনমরা হয়ে যায়। তার ঠিক দুদিন পর রেমি আপু হলুদের দিন ভাইয়া ব্যাগ গুছিয়ে শহরে চলে যায়। রেমি আপুও কেমন মনমরা হয়ে বিয়ে করে,বিয়ের সব আনন্দ উবে যায় আপুর।

সেবারের মতো রেমি আপুর বিয়ে টা মিটে গেলেও ভাইয়ার মন টা ঠিক হয় না।বাড়ি আসা ছেড়ে দেয়, কথা বলা কমিয়ে দেয়।বড় ভাইয়াও দেশে আসেন।ভালো চাকরি হয় উনার।খালাম্মা খালু মিলে ভাইয়ার বিয়ের ব্যবস্থা করে। খুব ভালো একটা বাড়ির সুন্দর টুকটুকে মেয়ে। আবির ভাইয়া কে আহির ভাইয়া অনেক বুঝিয়ে, বলে বাড়ি আনে।ভাইয়াও আর না করেন না।হাজার হলেও একটা মাত্র ভাই, এতোদিন পরে বিদেশ থেকে এসেছে, আর তার বিয়ে।

আহির ভাইয়ার বিয়ের কয়টা দিন বাড়িতে অনেক মেহমান আসে,সবার আপ্যায়ন,রান্নাবান্না,বিয়ের ঝামেলা সবটা মিলে অনেক ব্যস্ততায় কেরে যায়।কোথায়ও দু দন্ড বসার ফুরসুৎ নেই। অনেক অনেক মেহমান আসেন,বিয়ে বাড়ির রান্নার জন্য যদিও বাবুর্চি এসেছিল, কিন্তু অন্যান্য যোগাড় যন্ত্রের জন্য দুজন মহিলাকে কাজে নেওয়া হয়।এটা অবশ্য আবির ভাইয়ার কারসাজি, এতে আমার ওপর চাপ অন্তত অনেক টা কমেছে। আমার জন্য এ বাড়ি থেকে নতুন একটা জামাও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিপত্তি বাঁধে যখন ভাইয়া দেখে জামাটা।বিয়ের অনুষ্ঠানে ও এতো কমদামী জামা দেওয়ায় দু চারটে কথা শুনিয়ে দেয় বাবা মাকে।অবশেষে নিজে ও আরেকটা জামা এনে দেয় আমায়।এ একটা মানুষ মনে হয় চাই আমার পরিচয় বদলে দিতে, হয়তো সবটা উনার হাতে থাকলে আমার পরিচয় টা কাজের লোক নয় এ বাড়ির মেয়ের মতোই হতো।আহির ভাইয়ার বিয়েতে রেমি আপু ও নিজের বরের সঙ্গে আসে।অনেক দিন পর আমায় দেখে আপু জড়িয়ে ধরে কাঁদে আমায়।আমিও অনেক দিন পর কারও বুকের ছায়াতল পাই।এ মানুষ টা ছাড়া একটু বুকে নেওয়ার মানুষ নেই তো আমার।রেমি আপু যতক্ষণ বাড়িতে ছিল আবির ভাইয়া আসেনি। রেমি আপু কে অবশ্য অনেক সুখীই মনে হলে।কতো ঝলমলে পোশাক, শাড়ি,গয়না গায়ে চড়ানো।আসার সময় রেমি আপু সবার জন্য কেনাকাটা করে এনেছে। আমার কথা ও আপু ভোলেনি, খুব সুন্দর একটা পোশাক এনেছে আপু।আবির ভাইয়ার জন্য ও একটা পাঞ্জাবী এনেছে আপু। ভাইয়া কে দেওয়ার সাহস না হওয়ায় আমায় দেয়,আমি যেন ভাইয়াক দেই।দিয়েছিলাম ভাইয়াকে,প্রথমে তাচ্ছিল্যে হেসেছিল ভাইয়া।পরে আমি অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়ের দিনে ভাইয়া ঐ পাঞ্জাবী টায় পড়ে।

অবশেষে আহির ভাইয়ার বিয়ে মিটে যায়। একে একে আত্মীয় স্বজনরা ও চলে যেতে থাকে। নতুন বউয়ের কাছেও আমার পরিচয় হয় কাজের মেয়ে। তা অবশ্য কারো মুখে বলে দিতে হয়নি।সকলের আচরণ, কাজের ফরমায়েশ দেওয়া, আর আমার কাজ করা দেখেই বোঝা যায়। বৌভাতের দিন ভাইয়া দেওয়া জামাটা পড়তে চেয়েও পারিনি।সারাদিন প্রচুর কাজ কখন অতো সুন্দর জামাটা পড়ব? ওমন জামা পড়ে কাজ করা যায় না।ভাইয়া কি বোঝে না,বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা দিয়ে লাভ নেই, আমার জন্য বাড়ি থেকে দেওয়া সুতির কমদামি জামাটায় যথেষ্ট ছিল! কতো মেয়ে দের দেখছি আমার সমবয়সী। কতো সুন্দর সেজেগুজে ঘুরছে তারা,কি সুন্দর লাগছে তাদের। কিন্তু আমি ওদের সমবয়সী হলেও ওদের সাথে তুলনা করলে চলে না তো!আমি যে এতিম,পরিচয়হীন!তা ভুললে হবে কি করে।বিনা বেতনে খেয়ে পড়ে বছরজুড়ে কাজের লোক আমি,হয়তো সারাজীবনই আমার এটায় পরিচয়।

আহির ভাইয়ার বউ মানে সোনিয়া ভাবি যেমন মিষ্টি দেখতে তেমন আচরণ ও ভিষণ ভালো।মাত্র কয়দিনেই আমার সাথে খুব সুন্দর ভাবে মেশে।আমাকে কাজের লোক নয়,বাড়ির সদস্যর মতোই আচরণ করে।ভাবি আসায় আমারও দিন একটু ভালো যেতে লাগল,সারাদিন কাজ করার সময় একটা সুন্দর করে কথা বলার মানুষ তো পেলাম! কিন্তু ভাইয়া চাকরির সূত্রে রাজশাহী থাকেন,তাইতো ভাবিকেও কিছুদিনের মধ্যে নিয়ে চলে গেলেন।আমার দিন আগের মতোই কাটতে লাগলো।আবির ভাইয়াও বিয়ের পর পরই চলে গেছেন।

হটাৎ একদিন আবির ভাইয়া খালাম্মার ফোনে কল দিলেন। খালাম্মা নামাজে থাকায় আমি কল ধরলাম। কিন্তু ফোন ধরেই আমি অবাক হয়ে যায়, আবির ভাইয়া এই কথা বলছে বলে।

ফোন ধরতেই আবির ভাইয়া আমায় বলে,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,

#বাসি_ফুলের_সুবাস

#পর্ব_৫

#মাসুরা_খাতুন

আবির ভাইয়া ফোনে আমায় জানালেন উনি নাকি বিয়ে করেছেন।উনার পছন্দের কোন এক মেয়ে কে দুইদিন আগেই বিয়ে করে নিয়েছেন।আমি যেন বাড়িতে খালাম্মা খালুকে বলি।যদি উনারা মেনে নেন তো ভাইয়া নতুন বউকে নিয়ে বাসায় আসবে। নয়তো বাড়িতেই আসবে না।ভাইয়ার কথা শুনে আনন্দ পাবো নাকি কষ্ট পাবো বুঝলাম না।তবে বুকের ভেতর কোথাও একটা কষ্ট অনুভব করলাম তা ঠিক বুঝতে পারছি।কিন্তু কেন? উত্তর জানা নেই। হয় তো এতোদিন ধরে আমায় আগলে রেখে, পাশে থাকা মানুষ টা আর এমন থাকবে কিনা এই ভেবে? আবার ভয় ও হচ্ছে, খালু যেমন রাগী মানুষ, যদি রাগ করে ভাইয়া কে একেবারেই বাড়ি আসা না করে দেয়! তাহলে কি হবে? অজানা ভয়ে ছেয়ে গেল মন।কোন রকমে ফোন টা হাত থেকে রেখেই খালাম্মার কাছে গেলাম। খালাম্মা সবে নামাজ শেষ করে উঠেছেন।আমায় এমন উদ্ভ্রান্তের মতো আসতে দেখে উনিই বললেন

“কি হয়েছে রে রাবু? তুই এমন মুখ করে আছিস কেন?”

“খালাম্মা, আবির ভাইয়া ফোন করেছিল।ভাইয়া বলল,ভাইয়া নাকি উনার পছন্দের কোন এক মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলেছেন।এবার তোমাদের বলতে বললেন। ”

“কিহ্! আবির বিয়ে করেছে? তুই মজা করছিস না তো?”

“না খালাম্মা, আমি মজা করছি না।ভাইয়া এই মাত্র কথা বলল।তুমি কল করে দেখ।”

খালাম্মা ও ফোন দিয়ে কথা বললেন।কথা শেষে উনি ও হতভম্ব! আমায় ধরে বললেন,

“এই রাবু,তোর খালু শুনলে না জানি কি করে। আমার তো ভয় করতেছে।এই ছেলেটা সারাজীবন আমায় জ্বা*লিয়ে মা*রল।আল্লাহই জানেন,উনি বাড়িতে আসলে কি বলবেন”

“তুমি চিন্তা করো না খালাম্মা, অবশ্যই যা হবে ভালোই হবে।তবে খালু কে নিয়ে সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। ”

অবশেষে খালু বাসায় আসলেন। অবাক করার বিষয় সবটা শুনে খালু কোন রাগ বা উচ্চবাচ্য না করে সাবলীল ভাবেই ভাইয়া কে বাড়িতে আসতে বললেন, যেন তিনি আগে থেকেই সবটা জানতেন।খালাম্মা ও খানিকটা অবাক হলেন খালুর এহেন কান্ডে।তবে কারণ টা যাই হোক, উনি যে ভাইয়ার ওপর রাগ করে বাড়ি আসা বন্ধ করেন নি এতেই আমি মহা খুশি।

মনটা মুখিয়ে আছে পরিবারের নতুন সদস্য আমার প্রিয় আবির ভাইয়ার বউ দেখার জন্য। আর কিছুক্ষণ বাদেই ভাইয়া নতুন ভাবিকে নিয়ে বাড়িতে আসবেন।যাক তাও এতোদিনে ভাইয়া রেমি আপুর জন্য পাগলামি গুলো ভুলে নতুন করে শুরু করবেন এটায় অনেক। আমি আর খালাম্মা মিলে ভাইয়ার পছন্দের রান্নাগুলো করলাম। নতুন ভাবির পছন্দ তো জানি না,তাই আন্দাজ মতোই রান্না করলাম। ভাইয়ার ঘর গোছগাছ করে নিজেও একটা ভালো জামা পড়লাম। হাজার হলেও নতুন মানুষ আসছে,এসেই আমায় এমন অগোছালো দেখলে কি না কি ভাববে।চুল গুলো আঁচড়ে বেনী করে নিলাম।

অপেক্ষা করতে করতে একসময় ভাইয়া এলেন নতুন ভাবিকে নিয়ে। মাশাআল্লাহ! এই ভাবিও দেখতে সুন্দরী।গায়ের রঙ কিছু টা চাপা হলেও মুখটা যথেষ্ট মায়াবী। নতুন ভাবিকে দেখে আমার ভিষণ আনন্দ লাগছিল,এ আমার আবির ভাইয়ার বউ,যে মানুষ টা আমায় সব থেকে বেশি সম্মান করে।ভাইয়া আমায় ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ডাক দিলেন। আমি ও শরবতের গ্লাস নিয়ে গেলাম।

“হ্যাঁ রাবু তুই এসেছিস।আয় তোর ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

আমি এগিয়ে গিয়ে ভাবিকে সালাম দিলাম।

“এই পায়েল এ রাবু।ছোটবেলা থেকেই ও আমাদের বাড়িতেই থাকে,আমার ছোট বোনই মনে করো।রাবু সবসময় তোমায় সময় দেবে,ভিষণ মজার মেয়ে। ভূত প্রেতে প্রচুর বিশ্বাস। ”

ভাইয়ার বলার ধরন দেখে আমারই হাসি পাচ্ছিল,কিন্তু ভাবির ঠিক কতোটা ভালো লাগলো বুঝলাম না। ভাইয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু আমার দিকে একবার তাকালেন, আগাগোড়া একবার পরখ করে নিয়ে হ্যাঁ বললেন। ভাইয়াও বোধহয় কিছুটা আশাহত হলেন এমন পরিস্থিতিতে।

“রাবু শোন,তোর ভাবি একটু কম কথা বলে,তুই কথা শিখাস ওকে।আর খুব ক্ষুধা লাগছে,কি কি খাবার আছে তাড়াতাড়ি রেডি কর।আমি খেয়ে একটু বাইরে যাব।”

“আচ্ছা ভাইয়া,তুমি চিন্তা করো না,ভাবি নতুন তো তায় একটু এমন হচ্ছে। আস্তে আস্তেই ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার রেডি করছি।”

বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম। মন কে বোঝালাম ভাবি নতুন মানুষ, কি দরকার ছিল ভাইয়ার এখনই এতো পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। নতুন নতুন তো এমনই হয়।আমি হলে হয় তো কারও সাথে কথাই বলতাম না।মনে মনে ভাবতেই একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরলো আমায়।ছিহ! কি সব বলছি আমি?

খাবার টেবিলে ও ভাইয়া একায় বকবক করে গেল,ভাবি শুধু প্রয়োজনে একটু আধটু কথা বললেন। খাওয়া দাওয়া শেষে ভাইয়া বাইরে গেলেন। ভাবি কে খালাম্মার ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।কিন্তু আমি অবাক হলাম,ভাবিকে খালাম্মার সাথে কথা বলা দেখে কেউ বলবেই না যে উনি নতুন মানুষ!খুব সুন্দর করে হেসে হেসে খালাম্মার সাথে কথা বলছেন।একসময় খালাম্মা কিছু শাড়ি গয়না ভাবিকে দিয়ে আমায় বললেন এগুলো ভাবিকে পড়িয়ে দিতে।আশেপাশের সব মানুষরা জেনে গেছেন ভাইয়া বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় এসেছে। তাই তো অনেকেই আসছে বউ দেখতে।আমি ভাবিকে বললাম খালাম্মার দেওয়া ভালো একটা শাড়ি পড়তে।যেই শাড়িটা এখন পরে আছেন ওটার একটা পিন আমি খুলে দিতেই ভাবি আমার হাত থেকে খালাম্মার শাড়ি টি নিয়ে বললেন আমায় বাইরে যেতে, উনি নাকি কারও সামনে শাড়ি পড়েন না।তাই আমি যেন বাইরে যায়।মলিন হেসে আমি বাইরে আসতেই ভাবি তাড়াতাড়ি এসে ধরাস করে দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।বাইরেই আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ভাবির শাড়ি পরা হয়,কিন্তু অনেক ক্ষণ যাবত অপেক্ষা করেও ভাবি দরজা খুললেন না।অবশেষে ভাবি যখন দরজা খুলে বেরোলেন,তখম উনার সব সাজগোজ কমপ্লিট। কিছু টা অবাক হলাম আমি,ভাবির শাড়ি পড়তে অসুবিধা, কিন্তু আমি বাইরে অপেক্ষা করছি জেনে ও ভাবি দরজা বন্ধ রেখেই সাজলেন! উনি কি আমায় পছন্দ করছেন না? নাকি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন?অবচেতন মন থেকেই উত্তর এলো,” তুই এবাড়ির কাজের লোক,তা ভুললে চলবে না।সবাই আবির ভাইয়া হয় না,রেমি আপু হয় না।তাই সবার কাছে সব আশা করা তোর বৃথা।”

মুখে প্লাস্টিকের একটা হাসি ঝুলিয়ে নিয়ে ভাবিকে নিয়ে বাইরে এলাম।অনেকেই আসছে বউ দেখতে, আমি ভাবিকে বসিয়ে রেখে উনাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গেলাম। ট্রে হাতে এসে দেখি ভাবি সুন্দর করে উনাদের সাথে আলাপ করছেন।কথার এক পর্যায়ে বুঝলাম ভাবির ও বাবা মা নেই। চাচা চাচীর কাছে মানুষ। এক মূহুর্তে ভাবির প্রতি এতোক্ষণে জমা সব অভিমান গলে জল হয়ে গেল।”আহারে! ভাবির ও বাবা মা নেই! আমার মতোই এতিম! একটা এতিমই জানে আরেকটা এতিমের কষ্ট। ”

ভাইয়া কিছু দিন থেকে ভাবীকে রেখেই চলে গেলেন। ভাইয়া ভাবীর সামনে বারবার বোঝাতে লাগলেন আমি এ বাড়ির কাজের লোক নই,উনি আমায় বোনের মতো দেখেন। ভাবিও ভাইয়ার সামনে আমার সাথে অনেক টা হেসেই কথা বলতো,কিন্তু ঐ হাসিটা আমার আসল মন থেকে হাসি মনে হতো না।কেমন যেন সৌজন্য মূলক দায় কাটানো মনে হতো।ভাবির আমার দিকে তাকিয়ে এমন মিথ্যে হাসি দেখে আমার নিজেকে কার্টুন কার্টুন মনে হতো।

ভাইয়া চলে গেলেন, খালাম্মার সাথে ভাবির সম্পর্ক ভালোই।আমি একা একাই রয়ে গেলাম।সারাদিন ভর কার কি লাগবে ফরমায়েশ খাটি,কারও কোন প্রয়োজন পড়লে বা কিছু দরকার পড়লে বলে, করে দেই।এর বাইরে খুব একটা কথা হয়ে ওঠে না।ওহ্ হ্যাঁ,কাজে ভুল হলে বাঁকা কথাও শুনি।কেউ আধিপত্য নিয়ে জোরে গলায় ঝাড়ি দিয়ে যায়, আবার কেউ আনাড়ি হওয়ায় ধীর গলায় শান্ত ভাবে কথার ছু*রি চালিয়ে যায়।

বড়ভাবি মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলেন। এর মাঝে একবার এসেছিলেনও আবির ভাইয়ার বউ দেখতে। ভাবি থাকা কয় টা দিন সত্যিই আমার ভালো কা*টে।কিন্তু ক্ষনিকের জন্য মাত্র, কারণ দুই থেকে তিনদিন থেকেই উনারা চলে যান।

রেমি আপু আসে বাবার বাড়ি বেড়াতে।ওদের বাড়ির কাজের লোকের মাধ্যমে আমার কাছে খবর পাঠায়।আপু এসেছে শুনে থেকেই আমার মন টা ছটফট করছিল কখন যাবো,একটু আপুকে দেখব বলে।তাড়াতাড়ি করে সব কাজ করে ফেলি।সবকিছু ঠিকঠাক করে খুব ভয়ে ভয়ে খালাম্মার কাছে কথাটা পাড়ি,

“খালাম্মা, বলছিলাম যে রেমি আপু নাকি এসেছে, সব কাজ শেষ করেছি।আমি কি একটু যাবো আপুকে দেখতে? একদম দেরি করবো না, শুধু যাব আর আসব।”

আজ খালাম্মা কি বুঝলেন জানিনা,এককথায় যেতে দিলেন আমাকে।

“ঠিক আছে যাবি যা,কিন্তু সন্ধ্যা যেন লাগাস না।”

আচ্ছা ঠিক আছে খালাম্মা বলেই আমি চলে গেলাম। আহির ভাইয়ার বিয়ের পর থেকে একটা বছর পর আজ আপুর সাথে আমার দেখা হবে। খুশিতে আত্মহারা লাগছে আমার।চুল গুলো আঁচড়ে জামা টা বদলিয়ে আমি আপুর বাড়ির উদ্দেশ্য গেলাম। আজকাল খুব আপন মানুষ দের কাছেও ছেঁড়া মলিন রংচটা কাপড়ে যেতে লজ্জা লাগে।

আপুর বাড়িতে যেতেই দেখলাম আপু বসে বসে আমড়ার আচার বানাচ্ছে। আমায় দেখেই আপু জড়িয়ে ধরলো,আমি ও মিশে গেলাম মানুষটির বুকে।কি পরম মায়া ছিল এই স্পর্শে তা বোঝানোর নয়।আমি প্রায় কেঁদেই ফেললাম আপুকে দেখে।আপু ও কিছু টা আবেগ প্রবন হয়ে গেছে বুঝতে পারছি।

“বারে আপু,কতো পর করে দিয়েছো আমাদের! এতোদিন পরে এলে? একটু ও মনে পরে না বুঝি?”

“কি করব বল,তোর ভাইয়ারই সময় হয়না,সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ! ওম্মা রাবু,তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস? আর সুন্দর ও হয়েছিস খুব! ”

আপুর কথায় আমি কিছু টা লজ্জ পেলাম, কাঁদতে কাঁদতেই হেসে দিলাম।

“এই মেয়ে, আজকেই জড়িয়ে ধরে এতো কেঁদে চোখের পানি ফুরিয়ে ফেললে বিয়ের দিন কি করবি? নাকি কান্না টান্না রেখে সোজা বরকে নিয়ে হাঁটা ধরবি?”

আপুর এমন কথায় এবার আমি সত্যিই লজ্জা পেলাম। কান্না মুছে লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম।

“হয়েছে হয়েছে, এতো লজ্জা পেতে হবে না।জানিস,তোর ভাইয়ার কোম্পানি তে একটা ছেলে আছে, ভালো বেতনে চাকরি করে। অনেক ভদ্র ব্যবহার।আমি তোর ভাইয়া কে বলে রেখেছি তোর কথা বলতে।ছেলেটা ও নাকি বিয়ে করবে শুনলাম, আর তোর ভাইয়া বললে না করতে পারবে না।আর রাবু পাখি,তুই ও যে সুন্দর হয়েছিস,দেখলে তো না বলতেই পারবে না।”

লজ্জায় আর কিছু মরিচীকার মতো স্বপ্নে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।আমার মতো অনাথ মেয়ের ও যে একটা সংসার হবে তা তো ভাবতেই পারিনা আমি।অথচ রেমি আপু কতো কি ভেবে রেখেছে!

“আচ্ছা, শুনলাম ঐ বাঁদর টাও নাকি বিয়ে করেছে? এতোদিনে সুবুদ্ধি টা হলো।তা বউ কি খুব সুন্দরী? ”

“সুন্দরী, কিন্তু তোমার মতো না।”

“ধ্যাত পাগলি,এমন তুলনা করতে হয়না।আল্লাহর সৃষ্টি সবই সুন্দর। তা বউ কি তোকে বাঁদর টাী মতোই আদর করে?”

“সবাই আবির ভাইয়া রেমি আপু হয় না আপু।তবে জানো,বড় ভাবি না আমায় খুব আদর করে।যখনই আসে সুন্দর করে কথা বলে।”

আমার কথায় হয়তো রেমি আপু কিছু বুঝল,তাই এই বিষয়ে আর কিছু বলল না।শুধু একটা হালকা নিঃশ্বাস ছেড়ে বুকের ভেতরের গুমর টা বের করল।

আপুর সাথে আর কিছু ক্ষণ কথা বলেই বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসেই মুখোমুখি হলাম ছোট ভাবির,

“এই বিকেল বিকেল কোথায় বেরিয়েছিলে শুনি? ”

“এএইতো,চাচীদের বাড়িতে গিয়েছিলাম ভাবি।আমি খালাম্মা কে বলেই গেছি।”

“তোমার প্রাণের রেমি আপু এসেছে তাই দেখা করতে বুঝি? তা ছাদে যে কাপড় গুলো আছে, ওগুলো কে তুলবে শুনি? আর হাতে কি ওসব?”

অবাক হলাম আমি, ভাবি রেমি আপুর সম্পর্কে এমন ভাবে বলছে কেন? তারমানে কি ভাবি সব কিছু জানে?

“আমি এক্ষুনি তুলছি ভাবি।আর এগুলো আমড়ার আচার, আর কিছু চকলেট দিয়েছে আপু।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তোমায় তো খেতে দেই না,তাই তো লোকেদের বাড়ি থেকে থেকে সব জোগাড় করে আনছো।”

“না না ভাবি,আপু এমনই।প্রতিবার আসলেই আমার জন্য কিছু না কিছু আনে।আর আমড়ার আচার টা আপু খুব ভালো বানায় এটা খালাম্মার জন্য দিলো।উনিও আপুর হাতের আচার পছন্দ করেন।”

এমন সময়ই হটাৎ করে আবির ভাইয়া ব্যাগ নিয়ে চলে এলেন।হুট করে ভাইয়া কে দেখে আমি আর ভাবি দুজনেই অবাক হলাম।ভাবি মনে হয় কিছু টা হোঁচটই খেল,উনার এতোক্ষণের কথা ভাইয়া শুনেছে কি না তায় জেনে। ভাইয়া আমার মাথায় চাটি মে*রে হাতে থাকা আচারের বক্সটা নিয়ে সোফায় বসে পড়লেন,আর ঢাকনা সরিয়ে আচার খাওয়া শুরু করলেন কোথায় পেয়েছি না জেনেই। ভাবি বিরক্তিতে মুখটা আরও খানিকটা কুচিয়ে নিলেন এহেন কান্ড দেখে।

“এই রাবু,এত্তো মজার আচার টা কে বানিয়েছে রে? এমন আচার তো তুই বানাতে পারিস না,নাকি শিখেছিলি তেনাদের গুরুমার কাছ থেকে। “,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here