বিছিন্ন_ভালোবাসা ৫ম পর্ব

0
623

বিছিন্ন_ভালোবাসা
৫ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– মা কাজল কোথায়?
,
– সে পালিয়ে গেছে তার প্রেমিকের সাথে।
,
– তুমি মিথ্যা বলছো মা। যে মেয়েটা আমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলো সে আমাকে ছেড়ে কিভাবে চলে যেতে পারে।
,
– আকাশ তুই বাড়িতে এসে একবারো আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা না করে কাজলকে খোজ করছিস! সবাই ঠিক কথায় বলে, ছেলের বিয়ে হয়ে গেলে মা পর হয়ে যায়।
,
– এসব তুমি কি বলছো মা! কাজলের নাম্বারে কল যাওয়ার পরও রিসিভ করছে না তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
,
– সে যদি তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তোর কল কোন খুশিতে রিসিভ করবে শুনি!
,
– মা আমার কাজল এমনটা কিভাবে করতে পারে।
,
রোজিনা চৌধুরী এবার ভিষণ রেগে গেলো,
,
– আমার কাজল আমার কাজল মানে কি! যে মেয়ে প্রেমিকের সাথে চলে যেতে পারে সে কিভাবে তোর থাকে বল আমায়?
,
– কারণ ওর পেটে আমার সন্তান মা।
,
– কিন্তু তোর যে সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা নেই!
,
আকাশ হোহো করে হাসতে থাকে। এটা কোনো সুখের হাসি না বরং মাকে তিরস্কার করে হাসতে থাকে৷ রোজিনা বেগম ছেলের এই হাসি দেখে কিছুটা ভড়কে যায়।
ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে,
,
– তুই এমন ভাবে হেসে চলেছিস কেন? পাগল হয়ে গেলি নাকি?
,
– হাহা হাহা,হ্যা মা আমি পাগল হয়েগেছি। শুধু মাত্র আমার কাজলের জন্য পাগল হয়েগেছি।
,
– যে মেয়েটা তোর ভালোবাসাকে ভুলে অন্যের হাত……।
,
– চুপ করো মা, চুপ করো। এতো মিথ্যা বলোনা। তুমি কি মা নাকি কালনাগিনী! তোমাকে তো খারাপ কথা শোনাতেও পারবোনা। কিভাবে পারলে মা, কিভাবে পারলে?
,
– তুই কি সব বলছিস বাবা, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা!
,
– মা মনে করে দেখো তো হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট কে আনতে গেছিলো।
,
– তোরা সেদিন বেড়াতে গেছিলি তাই আমিই রিপোর্ট আনতে গেছিলাম।
,
– তুমি শুধু রিপোর্ট আনতে যাওনি মা, তুমি সুযোগ বুঝে আসল রিপোর্ট লুকিয়ে নকল রিপোর্ট বানিয়ে এনেছিলে।
,
– এসব তুই কি বলছিস বাবা? আমি তোর মা, মা হয়ে ছেলের রিপোর্ট নকল আনবো কেন?
,
– কারণ তুমি জানতে কাজলের সন্তান দেওয়া ক্ষমতা ছিলো আমারও ছিলো। তুমি আমার রিপোর্টটা নকল করলে যাতে নিজের অক্ষমতার জন্য আমি কাজলকে অন্যের হাতে তুলে দিই তাইতো?
মা একবার বলো তো, মেয়েটার অন্যায় কি ছিলো? কেন তুমি তুমি এমন করলে আমার সাথে।
,
– ইয়ে মানে!
,
– থাক মা আর কথা বলো না। আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি থেকে। তুমি থাকো এখানে, নিজের ইচ্ছামত থাকো। আজীবন থাকো। যে মা নিজের ছেলের সুখ সহ্য করতে পারেনা সে কেমন মা আমার বোঝা হয়েগেছে।
,
আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে পিছন দিকে ঘুরে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। রোজিনা চৌধুরী আকাশের পিছনে আসতে থাকে,
,
– বাবা তুই জাসনা। আমার কথা শোন। তুই নিজের মত সব বলছিস। আমাকে তো কিছুই বলতে দিচ্ছিস না!
,
আকাশ ঘুরে দাঁড়ায়,
,
– জানো মা, আমি এয়ারপোর্টে থেকে নেমে কিছু একটা মনে করে হাসপাতালে যাই। কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো রিপোর্ট মিথ্যা হতে পারে তবে কাজল আমার বিশ্বাসকে নষ্ট করতে পারেনা। ও আমাকে কি বলেছিলো না জানো! ও বলেছিলো আমার যদি কোনো অপুর্ণতা থাকে যেন ওকে জানাই তাও যেন নিজের ব্যার্থতার কথা ওর কাছে না লুকাই। এটাকে বলে ভালোবাসা মা। ও শুধু আমাকে আকড়ে বাচতে চায় যেটা তুমি নষ্ট করে দিচ্ছো।
,
হাসপাতালে গিয়ে পুরোনো রেকর্ড চেক করতে বলি। তারা আমার কাছে রিপোর্ট দেয়। তাতে পরিষ্কারভাবেই লেখা ছিলো আমার বা কাজলের কোনো সমস্যা নেই। তোমার একটা নাটকের জন্য আমি আমার কলিজাকে ছিড়ে অন্য কারো কাছে দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ চাইলে কি না সম্ভব! আমার এই বন্ধন তুমি ভাঙতে পারলে না। সিনেমা দেখে অনেক প্লান করেছিলে কিন্তু এটা ভাবলেনা সিনেমায় শেষের জয়টা নায়ক-নায়িকারই হয়।
,
আকাশ আসল রিপোর্ট মায়ের হাতে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
,
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার সময় এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো আকাশের। যেন কল্পনায় দেখতে পাচ্ছিলো কাজলের পেটের মধ্যে মুখ গুজে দিয়ে আকাশ তার অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলছে। কিন্তু বাড়িতে এসে আকাশ মায়ের সমস্ত অভিনয় ধরতে পারে। মা বারবার চেষ্টা করেও আকাশের মনকে কাজলের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলতে পারেনি। শেষমেশ একটা নোংরা খেলা খেললো। আকাশের একবার মনে হচ্ছে মাকে গিয়ে জানায় যে কেন মা কাজলকে এমন করতো।কেন কাজলের নামে বাজে কথা বলতো! মায়ের এতে লাভ কি ছিলো। কিন্তু আকাশ তার প্রিয়তমাকে ছাড়া ওই বাড়িতে পা রাখবেনা।
,
সমস্ত শহরের সবখানে কল দিয়েছে আকাশ। কেও সন্ধান দিতে পারেনি। পাগলের মত হয়ে গেছে আকাশ। রাস্তায়ই দিন কাটিয়ে দিয়েছে। এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
,
?
,
রাইসার বাড়িতে শোকের ছায়া। মায়ের মুখখানা না দেখেয় তার প্রিয় ভাইয়া সাদ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। সুমনা এখন হাসপাতালে ভর্তি। পিউকে বুকের সাথে জড়িয়ে বসে আছে হাসপাতালের ওয়েটিং জোনে। পোস্ট মর্টাম শেষ হলেই দাফনের ব্যাবস্থা করতে হবে। পোস্ট মর্টাম বললে ভুল হবে। কারণ সাদের শরীর কোনো অংশই একসাথে নেই। সব টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
,
কিছুক্ষণ আগে,
,
– প্লেন থেকে নেমে কাস্টমের সমস্ত কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টের বাইরে বের হয়ে এসে সাদ দেখতে পায় তার পিচ্চি বোনটা অধীর আগ্রহে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য।।
রাইসা সাদকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কাদতে থাকে।
সাদ- এই পাগলি কাদছিস কেন?
,
রাইসা কাদতে কাদতে বলে,
,
– তুই কথা বলবিনা আমার সাথে। এতো দিন পর আসলি কেন?
,
সাদ পিচ্চি বোনটাকে বুকের মধ্যে নিয়েই বলে,
,
– যাতে আজীবিনের জন্য তোদের সাথে থাকতে পারি সে জন্য সব কিছু গুছিয়ে আনতে লেট হলো।
,
পিউকে কোলে নিয়ে আদর করে রাইসা। সুমনা রাইসাকে বলে,
,
– ননদিনী বিয়ের বয়সতো হয়ে গেছে। রাজপুত্রের খোঁজ করবো নাকি তোমার কোনো হিরো আছে?
,
– আমি এখনো পিচ্চি, ভাবি।
,
– আচ্ছা আচ্ছা বড় হও তারপরই নাহয় বিয়ে দেবো। হাহাহা। এখন চলো।
,
রফিদের সাথে হালচাল জিজ্ঞাসা করে বাড়ি দিকে রওনা দেয় সবাই।
,
কিছুদূর যেতেই দেখতে পায় একটা মেয়ে প্রখর রোদে টলমলে পায়ে হেটে চলেছে। রাফিদ রাইসাকে গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে সাহায্য করতে বলে। রাইসা গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে যায়।
,
– আপু কোনো হেল্প লাগবে?
,
– না আমি ঠিক আছি।
,
রাইসা আবার গাড়ির কাছে ফিরে আসে আর রাফিদকে বলে,
,
– এনার হেল্প লাগবেনা বলেছে।
,
সাদ হোহো করে হাসতে থাকে। রাইসা এই হাসির মানেই বুঝতে পারেনা তাই সুমনার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সুমনা রাইসাকে বলে,
,
– ননদিনী কেও স্বইচ্ছায় নাও বলতে পারে তার সাহায্য লাগবে কিনা। তবে ওই মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে ওর সাহায্য লাগবেই।
,
ইতিমধ্যেই রাফিদ গাড়ির দরজা খুলে মেয়েটার কাছে পৌঁছে গেছে। মেয়েটার সামনে যেতেই,
,
– কাজল তুমি?
,
কাজলের মাথা উঁচু করে দেখার ক্ষমতা নেই সামনে কে আছে। কন্ঠটাও চেনা চেনা লাগলো। মনে মনে ভাবলো সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। ভাঙা গলায় বলল,
,
– পানি খাবো।
,
আকাশ রাইসাকে পানি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু গাড়িতে পানি ছিলো না। পাশে পাশেও কোনো দোকান নেই যে পানি কিনবে। শেষমেশ সাদ পিউকে নিয়ে সুমনাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। সুমনা গাড়ি থেকে নামলে সাদ ড্রাইভিং সিটে বসে আশেপাশে পানির দোকান খুজতে চলে যায়।
,
প্রায় দশ মিনিট পর হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনতে পায় সবাই। সুমনা পিউকে রাইসার কোলে দিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। নিজেদের গাড়িতে দাওদাও করে আগুন জ্বলছে। হঠাৎ সাদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে। মুখে যেন কেও তালা লাগিয়ে দেয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের লোক আসে। গাড়ির আগুন নিভিয়ে দগ্ধ লাশ বের করে। সুমনা এটা দেখে ওখানেই জোরে চিৎকার করে সেখানে অজ্ঞান হয়ে যায়। রাইসা ছুটে যায় সেখানে। এরপর সোজা হাসপাতালে নেওয়া হয় সাদের দগ্ধ দেহকে। অজ্ঞান সুমনাকেও ভর্তি করা হয়। কাজলকেও রেস্টে রাখে।
,
,
চলবে…
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
বিঃদ্রঃ গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। সম্পুর্ন কাল্পনিক ঘটনা এটা। বাস্তবতা দিয়ে গল্পটাকে বিশ্লেষণ না করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here