বিছিন্ন_ভালোবাসা ৬ষ্ঠ পর্ব

0
555

বিছিন্ন_ভালোবাসা
৬ষ্ঠ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সময়ের স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। আজ ৬ মাস হয়ে গেছে তবুও আকাশ তার প্রিয়তমা কাজলে খুজে পায়নি। অফিস করে সারাদেশের যেখানে যেখানে বন্ধু আছে সেখানে সেখানে কল দিয়ে খোঁজ নেয় কাজল সেখানে আছে কিনা। এরমধ্যে একজন কাজলের খোজ খুব ভালোভাবেই জানে কিন্তু আকাশের কাছে সে বলতে ইচ্ছুক নয় যে কাজল কোথায়। আর সে হলো রাফিদ।
,
এই ৬য় মাস ধরে কাজল রাফিদের বাড়িতেই আছে। আকাশ রাফিদের কাছে বারবার জিজ্ঞাসা করতো কাজল কোথায় আছে সে জানে কিনা কিন্তু রাফিদের বরাবরের মত উত্তর হয় যে, না সে কাজলের খোজ জানেনা।
,
?
,
এই ৬ মাসে সাদের মৃত্যুর শোক বাড়ির সবাই কাটিয়ে উঠলেও সুমনা নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারেনি। সারাক্ষণ সাদের ছবিটা নিয়েই বসে থাকে। সুমনার বাবা এখন সুমনাকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। ওই বাসায় থাকলেই মেয়েটা বেশি কষ্ট পাবে তাই মেয়েকে নিজের বাসায় রাখাটাই বেশি ভালো মনে করছেন আব্দুর রহমান সাহেব।
,
,
আকাশ ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই থাকে। মায়ের সাথে দেখা পর্যন্ত করেনা আকাশ তবে সবার কাছ থেকে মায়ের ঠিক খবর নেয় এবং সবাইকে বলে রেখেছে তার মা যেন একটুও কষ্টে না থাকে।
,
অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফোনটা হাতে নিয়েছে আকাশ। এখন কাজ হলো প্রতিদিনের মত সবাইকে কল দিয়ে খোঁজ নেওয়া। সেভ করা নাম্বার থেকে প্রথম নাম্বারটি বের করে কল বাটনে চাপ দেওয়ার আগেই আকাশের অন্য ফোনটা বেজে ওঠে। কল রিসিব করতেই অপর পাশ থেকে তাদের বাড়ির দারোয়ান কল দিয়ে বলে,
,
– স্যার তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসুন। বড় মেডাম খুব অসুস্থ।
,
আকাশ হাসপাতালের নাম শুনেই গাড়ি নিয়ে সাথে সাথে চলে যায়। সন্তান অসুস্থ থাকলে বাবা মা যেমন সব রাগ ভুলে যায়, সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
,
আকাশ হাসপাতালের রিসিপশনে গিয়ে তার মা কোথায় আছে সেটা জিজ্ঞাসা করে। অপারেশন থিয়েটারের কথা বলতেই আকাশের বুকের মধ্যে হঠাৎ একটা ধাক্কা লাগে। “মায়ের কিছু হয়ে যায়নি তো! নাহলে এমন কি হয়েছে যার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া লাগবে!”
নিজে নিজে হাজার কথা ভাবতে ভাবতে ওটির দিকে পা বাড়ায়।
,
আকাশ দেখে সেখানে বাড়ির দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করে,
,
– চাচা মায়ের কি হয়েছে?
,
– ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলেছে হার্টে ছিদ্র হয়ে গেছে।
,
– হোয়াট! এই রিপোর্ট কবে করা হলো?
,
– গতকালকে।
,
– তাহলে আপনি আজকে কেন জানাচ্ছেন?
,
– ম্যাডামের নিষেধ ছিলো। বারবার সবাইকে বলেছি যেন আপনাকে না জানাই কিছু। কারণ মরার আগে নাকি তার পাপী মুখটা আপনাকে দেখাতে চায়না।
,
চোখের জলের অস্তিত্ব অনুভব করতেই আকাশ উপলব্ধি করতে পারে মায়ের উপর তার সমস্ত রাগ উধাও হয়েগেছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে আসে। আকাশকে জানাই অপারেশন ঠিকঠাক ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। হার্টে রিং পরানো হয়েছে।
,
এবার আকাশ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। ডাক্তার বলে ১ ঘন্টা পর রোগীর সাথে মিট করতে পারবে।
,
আকাশ ওয়েটিং বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে থাকে।
,
?
,
রাফিদ বাসায় ফিরেই কাজলের গজরের দরজায় নক করলো। কাজল দরজা খুলতেই ভিতরে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– কেমন লাগছে কাজল?
,
কাজল মাথা নিচু করে বলল,
,
– জ্বি আমি ভালো আছি। ধন্যবাদ।
,
– কাজল তুমি আমার সাথে এমন পরের মত কথা বলো কেন? এমনভাবে বিহেভ করো যেন তুমি আমাকে চেনোইনা।
,
– জ্বি আমি আপনাকে চিনিনা।
,
– বাহ কাজল বাহ! আমাদের সম্পর্কের কথা তুমি ভুলে গেলে?
,
– হ্যা আমি ভুলে গেছি। আমি পবিত্র সম্পর্কের জন্য আমার অতীত ভুলে গেছি।
,
– হাহাহা, সেই পবিত্র সম্পর্কই তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো!
,
– আমি কতবার বলবো আকাশ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়না। আমার শ্বাশুড়ি এমনটা করেছে।
,
– তোমার কি মনে হয়, তোমার শ্বাশুড়ি সব নিজ ইচ্ছায় করেছে?
,
– আপনি কি বলতে চাইছেন বলুন তো? কাল সকালেই আমি আপনার বাসা থেকে চলে যাবো। আপনি যাতে আকাশের নামে আমার কাছে আর কিছু না বলতে পারেন। একটা কথা বলুনতো রাফিদ, আকাশ আপনার কোনো ক্ষতি করেছে?
,
– ইয়ে মানে না।
,
– তাহলে ওর বদনাম কেন করেন আমার সাথে। আপনি বলতেন না আমাকে ভালোবাসেন! ভালোবাসার মানে বোঝেন আপনি? ভালোবাসার মানে আকাশ বোঝে। যার ভালোবাসায় আমি অন্ধ হয়ে গেছি।
,
– সেজন্যই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরও তার কথা মনে রেখেছো?
,
– এক কথা বারবার বললে সেটার মূল্য বেড়ে যায়না রাফিদ। আপনার কথা আমার মোটেও ভালো লাগছেনা ইদানীং। তাই আমাকে দয়া করে আটকাবেন না।
,
– আমি এই অবস্থায় তোমাকে যেতে দিতে পারিনা কাজল। তোমার এই সময়ে একজনকে তো পাশে লাগবেই কাজল।
,
– আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা না করলেও হবে।
,
– আমার মায়ের কথাও তুমি ফেলে দেবে কাজল।
,
এই একটাই অস্ত্র আছে রাফিদের কাছে। কাজল চলে যেতে চাইলেই রাফিদ নিজের মায়ের কথা বলে আর কাজল চুপ হয়ে যায়। রাফিদ কাজলের ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের ঘরে যায়।
,
– মা আসবো।
,
– হ্যা আয় বাবা।
,
রাফিদ গিয়ে মায়ের কাছে বসে। মা রাফিদকে বলে,
,
– তুই এবার বিয়েটা করে নে বাবা। আর কত অপেক্ষা করবি।
,
– যখন কাজল রাজি হবে তখন বিয়েটা করে নেবো মা।
,
– কিন্তু ও যে অন্যকারো স্ত্রী। অন্যকারো স্ত্রীর দিকে তাকানোও পাপ বাবা। মেয়েটার গর্ভাবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে নিজের ফাদে ফেলিস না বাবা। তাহলে একজন মা হিসেনে আমার মাথা নত হয়ে যাবে।
,
– ঠিক আছে মা। তুমি যা বলবে তাই হবে।
,
রাফিদ মায়ের ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে যায়। আকাশ যে কাজলের খোজ করে এটা রাফিদ কাজলকে জানায়নি। সে এখন কাজলকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। এজন্যই আকাশের নামে বিভিন্ন রকম কথা বলে কাজলের সাথে কিন্তু কাজলের মন থেকে আকাশকে সরাতে পারেনা।
,
?
,
দুইদিন পর মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে আকাশ। মাকে তার ঘরে দিয়ে চলে আসতে পা বাড়াতেই রোজিনা চৌধুরী আকাশকে পিছিন থেকে ডাক দেয়।
,
– শোন বাবা।
,
আকাশ মায়ের কাছে যায়,
,
– বলো মা।
,
– চলে যাবি এই বাড়ি থেকে অসুস্থ মাকে রেখে?
,
– হ্যা মা আমাকে যেতেই হবে। আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভুলে যাইনি মা। কাজলকে বাড়িতে আনবো তারপর এই বাড়িতে থাকবো। তুমি চিন্তা করো না প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করতে আসবো।
,
– একটা কথা শুনবি বাব?
,
– বলো মা।
,
– তোর বিয়ের পর যখন কাজলের কেয়ার করতিস আমি ভিতরে ভিতরে খুব রেগে যেতাম। এই রাগ আস্তে আস্তে আমার মনকে বিষাক্ত করে দেয়। বাকি সব তো জানিস বাবা।
,
এই বলে রোজিনা চৌধুরী মাথা নিচু করে নেই।
,
আকাশ মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
,
– আমার জীবনের গত ছয় মাস ফিরিয়ে দিতে পারবে মা? কাজলকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে মা? যেদিন কাজল তোমাকে মাফ করবে সেদিনই হয়তো আল্লাহ তোমাকে মাফ করবেন। আমার তরফ থেকে আমি কিছুই বলবোনা।
,
আকাশ আর কথা না বলে অফিসে চলে যায়।
,
দুইদিন পর আকাশ অফিসে এসেছে। আকাশকে দুইদিন পর দেখে রাফিদ জিজ্ঞাস্য করে,
,
– স্যার আপনি কি অসুস্থ ছিলেন?
,
– না রাফিদ সাহেব। আমার মায়ের হার্টে রিং পরানো হয়েছে তাই আসতে পারিনি। মা কাজলের জন্য খুব অনুতপ্ত জানেন। আমি মায়ের সামনে একবার কাজলে উপস্থিত করতে চাই রাফিদ সাহেব। যাতে আমার অসুস্থ মা আর কষ্ট না পায় নিজের করা পাপের জন্য। কাজলের সাথে অন্যায় করার শাস্তি হয়তো আল্লাহ দিয়েছেন কিন্তু আমরা আর তাকে কষ্ট দিতে চাইনা।
,
রাফিদ আকাশকে বলে,
,
– স্যার আমি একটু বাড়ি যেতে চাই!
,
– কেন রাফিদ সাহেব।
,
– আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।
,
– আচ্ছা যান।
,
রাফিদ অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আজকেই কাজলকে সে আকাশের হাতে তুলে দেবে। সে কাজলের মন পাবেনা কখনো। তাই অন্যায় ভাবে একজনের নামে আর মিথ্যা বলতে পারবেনা। লোকটার মা অসুস্থ জানার পর তো একেবারেই না।
,
বেল বাজাতেই রাফিদের মা দরজা খুলেই হাপাতে থাকে।
,
-মা হাপাচ্ছো কেন? কি হয়েছে বলো!
,
– বাবা রাফিদ, কাজলকে……………
,
চলবে
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
বিঃদ্রঃ গল্পটির বাস্তবের সাথ কোনো মিল নেই। বাস্তবতা দিয়ে গল্পটাকে বিচার না করার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here