বিছিন্ন_ভালোবাসা ৭ম পর্ব

0
633

বিছিন্ন_ভালোবাসা
৭ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– বাবা রাফিদ, কাজলকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তুই কি জানিস ও কোথায়?
,
– মা তুমি এটা কি বলছো? ও তো বাড়িতেই থাকবে তাইনা?
,
– তুই যাওয়ার পর আমি একটু উপরে গেছিলাম কিন্তু ফিরে এসেই দেখি কাজল নেই।
,
রাফিদ থপ করে সোফায় বসে পড়লো। ইশ আজকে কাজলকে আকাশের কাছ্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই এখানে এসেছিলো কিন্তু কি থেকে কি হয়েগেলো। রাফিদ দৌড়ে রাইসাদের দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেইল বাজাতেই রাইসার মা দরজা খুলে দিলো।
,
ড্রয়িং রুমে কিছু অপরিচিত মানুষের সামনে রাইসা মাথা নিচু করে বসে আছে। রাফিদ আন্টির কাছে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করে ভিতরে কি চলছে। রাইসার মা বলে,
,
– এসো বাবা আগে ভিতরে এসো।
,
– না আন্টি ভিতরে যাবোনা। আসলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে আসলাম। আসলে কাজল নাকি আমাদের বাসায় নেই। আপনাদের এখানে কি ও এসেছে?
,
– না তো বাবা ওতো আমাদের বাড়িতে আসেইনা।
,
রাফিদ রাইসাকে ডাক দিলো। রাইসা সহ বাকিলোক গুলোও রাফিদের দিকে তাকালো। লোকগুলো ভাবলো হয়তো ছেলেটা রাইসার প্রেমিক হবে যে রাইসাকে দেখতে আসা আটকানোর জন্য এসেছে। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে বলল,
,
– রাইসা তুমি কি কাজলকে দেখেছো? ওকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
,
কাজলের নাম শুনতেই রাইসা বিরক্তি নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাফিদ রাইসার এমন আচরণ বুঝতেই পারলোনা। তাই আবার বললো,
,
– রাইসা প্লিজ বলো তুমি কাজলকে দেখেছো কিনা। ওকে না পেলে আমার নিশ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। আমার শেষ কাজটা করা বাকি এখনো।
,
রাইসা ইচ্ছা করছে সবার সামনে রাফিদকে আচ্ছা মত ধোলাই দিতে আর বলতে ইচ্ছা করছে, ‘ কেন রে হনুমান তোর হবু বউ কোথায় আছে আমি কেন জানতে যাবো। আর যদি জানিও তবে তোকে বলবোনা হতচ্ছাড়া। চুলবড়ো হনুমান কোথাকার’।
,
রাইসাকে চুপ থাকতে দেখে রাফিদ বলল,
,
– রাইসা এভাবে চুপ না থেকে কিছু বলো নাহলে আমাকে অন্য কোথাও কাজলে খুজতে যেতে হবে।
,
রাইসা ভাদ্র মেয়ের মত ছোট্ট করে জবাব দিলো,
,
– আমি জানিনা কাজল ভাবি কোথায়।
,
রাফিদ তাড়াহুড়োয় রাইসার মুখে ভাবি শব্দটা ভালোভাবে শুনতে পেলোনা। প্রায় দৌড়ে বাসার নিচে চলে গেলো।
,
লোকগুলোর সন্দেহ এবার দূর হয়।
রাইসার মা দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেয়ে পাশে বসতেই ছেলে পক্ষের একজন জিজ্ঞাসা করে,
,
– ছেলেটার বউকে খুজে পাচ্ছেনা বুঝি? ও চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো ছেলেটা বউকে যথেষ্ট ভালোবাসে।
,
লেকগুলোর কথা শুনে রাইসার ইচ্ছা করছে তাদের চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। ‘আজাইরা লোকগুলা। তোদের কেও বলছে মেয়েটা রাফিদ ভাইয়ার বউ। আন্দাজে কথা বলার জন্য এখন উচিৎ তোদের আচ্ছা রকম ধুয়ে তারপর রোদে শুকাতে দেওয়া।’
,
লোকগুলোর মধ্যে বয়স্কজন রাইসাকে বলে,
,
– মা তুমি এমন অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছো কেন? কিছু কি বলবে?
,
রাইসার এতোক্ষণ যে মনে মনে কথা বলছিলো নিজেই বুঝতে পারেনি। তাই মাথা নিচু করে নিয়ে ‘না’ জানায়।
,
রাইসার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
,
– মেয়ে আমাদের পছন্দ আপনারা কবে আসবেন সেটা জানাবেন।
,
রাইসার মা বলে,
,
– ছেলেকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। আমার তরফ থেকে আর কোনো দেখাদেখির ইচ্ছা নেই। আপনারা চাইলে আরেকবার এসে দিনক্ষণ ঠিকঠাক করে যেতে পারেন।
,
– মেয়ে যেতে আমাদের পছন্দ তাহলে দিনক্ষণ আজকেই ঠিক করে যাওয়া যায়।
,
রাইসা করুন চোখে মায়ের দিকে তাকায়, যেন চোখদুটো বলতে চায়, ‘মা এতো তাড়াতাড়ি কেন? আমি কি বোঝা হয়ে গেলাম তোমার কাছে? আমি তো বিয়ে করতে চাইনা এখন’। মনের কথা মনেই বলা ভালো। তাই রাইসা অন্তরের কান্না বাইরে আর দেখাতে চাচ্ছেনা। মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
,
বালিশে মুখ গুজে চুপচাপ শুয়ে থাকে রাইসা। ওপাশে হয়তো বিয়ের দিনক্ষণ ঠিকঠাক হচ্ছে। আর কয়দিন পর এই বাড়িটা একদম ফাকা হয়ে যাবে। মা একা থাকবে কি করে এটা ভেবেই বড্ড কান্না পাচ্ছে রাইসার। ভাইয়াটা থাকলে কতই না ভালো হতো। ফোন বের করে সুমনাকে কল দেয় রাইসা,
,
– ভাবি কেমন আছো?
,
– আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো রাইসা?
,
– ভাবি এই প্রথম তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকলে। আমি কি আর তোমার ননদিনী নেই ভাবি?
,
– যে সুতটা সবাইকে বেধে রেখেছিলো সেটাই যে ছিড়ে গিয়েছে। এখন এই মিথ্যে নাটকটা করার মানেই হয়না রাইসা।
,
– ভাবি। তুমি আমার ভাবি, আজীবন ভাবিই থাকবে। আর আমি তোমার ননদিনী।
,
– তুমিতো আমার ননদিনী আছোই রাইসা। আজীবন থাকবে। কিন্তু এই ডাকটা আমাকে সেই মানুষটাকে মনে করিয়ে দেয়। যায়হোক সেসন কথা বাদ দাও, এখন বলো ছেলে পক্ষের লোকজন কি বলল?
,
– ওরা আমাকে পছন্দ করেছে। মা আজকেই দিন ফেলার কথা বললো তাই এখন দিন ফেলাফেলি চলছে। তুমি কখন আসবে ভাবি? আমি আমার রাইসা ফুফিকে বড্ড মিস করছি যে।
,
– আমরা আজকে সন্ধ্যায় যাবো। আচ্ছা রাইসা একটা কথা বলো তো, তুমি কি তাকে সব জানিয়েছো?
,
– না ভাবি আর জানাতে চাইও না। আমি চাইনা আমার জন্য আমার মা হাজার ভাগের একভাগও কষ্ট পাক। তাই সব কিছুকে মনের মধ্যেই মাটি চাওয়া দিয়েছি ভাবি। এখন রাখি ভাবি।। সন্ধ্যায় আসো।
,
এরপর রাইসা ফোন রেখে দেয়।
,
,
?
,
রাফিদ সারাদিন কাজলকে খুজতে থাকে কিন্তু কোথাও খুজে পায়না। হঠাৎ মনের মধ্যে কু ডেকে ওঠে তাই তাড়াতাড়ি আকাশের সাথে দেখা করতে তার ঠিকানায় চলে যায়।
,
আকাশ কেবল অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে নিজের ইজি চেয়ারে বসলো আর সাথে সাথে দরজায় টোকা পড়লো। আকাশ দরজা খুলে দেখলো রাফিদ সামনে দাঁড়িয়ে।
,
– রাফিদ সাহেব, আপনি হঠাৎ এখানে? সেই অফিস থেকে গেলেন আর তো খোঁজ পাওয়া গেলো না! কি হয়েছিলো আপনার?
,
রাফিদ কথা না পেচিয়ে সোজাসাপটা বলে দেয়,
,
– স্যার আপনার স্ত্রী কাজল আমাদের বাসাতে ছিলো এতোদিন। আমি নিজ ইচ্ছায় আপনাকে ওর কথা বলতাম না। কিন্তু আজকে আপনার কথা শুনে আমি বাসায় চলে যাই তাকে এনে আপনার হাতে তুলে দিতে কিন্তু আমি বাসায় গিয়ে তাকে আর খুজে পাইনি।
,
কথা বলা শেষ হতে না হতেই রাফিদ লক্ষ্য করলো তার গালে ঠাস করে একটা চড় পড়েছে।
আকাশ রাফিদের কলার ধরে বলল,
,
– আমি জানতাম কাজলের সাথে তোর রিলেশন ছিলো। যেদিন কাজল আর আম কাছাকাছি এসেছিলাম সেদিন সব বলেছে ও আমাকে। আর এটাও বলেছে তোর থেকে ও আমাকে হাজার গুন বেশি ভালোবাসে। তাই আমি এখন কাজলকে আর দোষ দেবোনা। বল কেন ওকে আটকে রেখেছিলি?
,
– স্যার আপনি আমার কথাটা শুনুন।
,
– তুই বের হ আমার চোখের সামনে থেকে। আমার কাজলকে আমি খুজে বের করবো তারপর তোর শাস্তি দেবো আমি।
,
,
রাফিদ বারবার চেষ্টা করেও আকাশের সাথে কথা বলতে পারেনা। তাই শেষমেশ সেখান থেকে চলে যায়।
,
,
রাতে,
,
মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও আজকে রাইসাকে পড়াতে গেলো রাফিদ। কিন্তু আন্টি জানালো রাইসা আর ওর ভাবি শপিং করতে গেছে। রাফিদ তবুও কি মনে করে রাইসার ঘরের প্রবেশ করে।
,
টেবিলের উপর গোলাপি মলাটের একটা ডায়েরি রয়েছে। এটা রাফিদ আজকে প্রথন দেখছে। কোতুহল বশত ডায়েরিটা হাতে নেয় রাফিদ। কয়েক পৃষ্ঠা পড়তেই রাফিদের যারা দেহ দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। এটা কিভাবে সম্ভব….
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
বিঃদ্রঃ গল্পটা কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে মেলাবেননা দয়া করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here